শহরের উষ্ণতম সব দিনগুলোতে!
এই তীব্র তাপদাহ নিয়ে নতুন করে আর কি বলবো, ভুক্তভোগী তো সবাই। এমন কি যাদের এসিতে থাকার ব্যাবস্থা আছে তাদেরও এই গরমে রক্ষে নাই খুব একটা। কারন বাইরে বের হলেই এসিতে থাকা আরামের বাদামী চামড়া, ছ্যাত ছ্যাত করে উঠে গরমে। এই এক্সপিরিয়েন্স আমার বেশী হয় শান্ত ভাইয়ের বাসা থেকে যখন বাইরে বের হই। মনে হয় ডাইরেক্ট আগুনে নেমে গেছি। দশ মিনিট লাগে বাইরের গরমে ধাতস্থ হতে। এত আরামে যে থাকে শান্ত ভাই তার মুখেও শুনতে হয় গরমের কেচ্ছা প্রলাপ। আমার হাসি পায়, কাকে কি বলে মানুষ? নিজেই থাকি গরমের ফ্যাক্টরীতে আর আমাকে শোনায় গরমের কষ্ট। সম্ভব হলে প্রিয় ব্লগার ভাই বোনদের বাসায় এনে দেখানো যেত, যে কি দুর্বিষহ অবস্থায় থাকি। তার ভেতরে চার পাঁচ ঘন্টা করে কারেন্ট থাকে না, ঘামতে ঘামতে প্রায় গোসল অবস্থা। তাও কানে হেডফোন গুজে বসে থাকি, ছাদে বাসা কিন্তু একফোটা বাতাসও নাই। আমার দুঃখ আমারই থাক, এইসব নিয়ে ভাবি না। দিন পার হলেই হলো। শীত গ্রীষ্ম গরম ঠান্ডায় শরীরটা ঠিকঠাক রাখতে পারলেই যথেষ্ট।
আগেও অনেক পোষ্টে বলেছিলাম আবার বলি গরম জিনিসটা আমার খুব একটা অপছন্দের না। খালি বাসাটার কারনে যা একটু মেজাজ বিগড়ায়, এছাড়া এইসব গ্রীস্মদিন আমার খারাপ লাগে না। তবে এই গরমে সেরকম উপভোগই করতে পারলাম কই? বাইরে বের হই, হাটি আড্ডা মারি, ক্লাসে যাই কিন্তু সেই আগের মতো উদ্দেশ্যবিহীন গরমে হেটে বেড়াতে পারি না। এমন কি রাতে আগে লোডশেডিংয়ের ভেতরে তীব্র গরমেও ব্লগ লিখতে পারতাম। এখন সেরকম জিহাদী জোশ পাই না। গত তিন দিন ট্রাই করে ব্লগ লিখতে পারি নাই, কারন শেষবারের মতো কারেন্ট যায় একটার দিকে আসে দুটোয়। আমার ব্লগ লেখার প্রাইমটাইমই তখন,নোটবুকের সামনে বসে ইউটিউবে গান শুনতে থাকি আর বেয়ে বেয়ে খালি ঘামাই। তার ভেতরে আর লেখার শক্তি সাহস পাই না। এমন কি এই লেখাটাও যখন লিখতে বসলাম তখন বিদ্যুতের পাখা বাতি চলছিলো, এই মুহূর্তে কারেন্ট নেই ঘন্টার লোডশেডিংয়ে, তাও অন্ধকারে লিখছি নোটবুকে, জানি না পোষ্ট টা দিতে পারবো কিনা?
গরমে বই পড়ায় সব চেয়ে বেশী খামতি দেখা দিচ্ছে। পড়তেই পারি না, ধৈর্য হারিয়ে যায় পড়ার আর পড়া শেষে ভুলে যাই কি জানি পড়লাম। তাই বই শেষ হচ্ছে না। ৪৩৮ পেজের হৃদকলমের টানে পড়তে লাগিয়ে দিলাম প্রায় তিন সপ্তাহ। তারপরেও অনেক পেজ আনমনে উল্টিয়ে দু চারটা লাইনে চোখ বুলালে মনে হয় পড়াই হয় নাই বইটা। এরচেয়ে এই মাসের শুরুতেই বই পড়ার স্পিড ও সময় ভালো ছিল। কামাল ভাইয়ের বাংলা গল্পের উত্তরাধিকার, সতীনাথ সমগ্র দুই খন্ড পড়ে শেষ করে ফেললাম। খুব মন দিয়েই শুধু পড়ে গেছি। এখন এই গরমে সেই মনটাই নাই, মনোযোগ দিয়ে পড়তে পারি না আর পড়ার সময় যে কখন তাই বুঝি না। শুধু বুয়ার এইসব জঘন্য রান্না খেতে খেতে ভুড়ি বাড়ছে আর চায়ের দোকানে একা একাই সময় কাটছে। যদিও আগের সামারে যে হারে চা খেতাম- এখন তা অনেক কমিয়েছি। দিনে চার কাপ কিংবা পাঁচ কাপের বেশী চা পান এখন আর করাই হয় না। বরং টকদই মিস্টি আইসক্রিম এইসব খেতেই সুখ!
সিনেমা দেখছি সমানে সব টাইম পাস টাইপ মুভি। এই সপ্তাহ গেল জুলিয়া রবার্টস সপ্তাহ, এই ভদ্রমহিলার অভিনয় আমার আগেও ভালো লাগতো এখনো দেখি তা অটুট আছে ঠিকমতোই। এই পাঁচ ছয়দিনে উনার ধারনা করি ১৫ টার মতো সিনেমা দেখে ফেলেছি। বেছে বেছে রোমান্টিক কমেডি মুভি গুলাই অনলাইনে দেখি। সব কটার নামও মনে নাই, মাই বেস্ট ফ্রেন্ড ওয়েডিং থেকে শুরু করে ল্যারি ক্রাউনি, রানওয়ে ব্রাইড থেকে মোনালিসা স্মাইল, ক্লোজার, মেক্সিকান থেকে ইট প্রে লাভ সব গিললাম। তবে এই জেনারের ভিতরে আমার সব চাইতে পছন্দের সিনেমা হলো নটিং হিল, অনেকবার দেখছি ডায়লগও কিছু মুখস্থ। এমনকি এক বন্ধু বলছিল এই সিনেমার এক বাংলা টেলিফিল্ম ভার্সন আছে অপূর্ব ও তারিনের অভিনীত। সেইটাও দেখছি। সস্তা টাইপের গল্প, প্রেডিক্টেবল এন্ডিং তাও সিনেমাটা আমার খুব মনে ধরে আছে অনেকদিন ধরেই। আসলে আমার অবস্থা সেই ওয়েক আপ সিডের নায়িকার মতো। তাকে জিগেষ করে -তোমার কি ভালো লাগে? সে বলে উঠে পুরানো হিন্দী গান। পাল্টা প্রশ্নে বলে, আজ জ্যাজ শুনলা কেমন লাগলো? নায়িকা উত্তর দেয় ভালো তবে আনন্দ পাই নাই। আমাদের আনন্দ জিনিসটার বড়ই ঘাটতি। তাই কত কিছুতেই আনন্দ খুঁজি। আজ আগোরায় গেলাম এক বন্ধুর সাথে, এক ভদ্রলোককে আমি ফলো করলাম। তিনি যাই দেখছেন তা শুধু কিনেই চলছেন। বেশীর ভাগই খাদ্য দ্রব্য। আমি শিউর তার ঘরে এত খাবার কেনার কোনো দরকারই নাই। তাও তিনি হয়তো আনন্দ খুজছেন যে এত এত খাবারের ভিতরে হয়তো কোনোটা তার ভালো লাগবে। গতকাল ভার্সিটি আসার সময় এক লোককে বাসে দেখলাম, সম্ভবত তার বিবাহবার্ষিকী সেদিন, বাসে অফিসে ফিরছিল। হাতে এক গাধা খেলনা তা নিয়ে দাড়াতে কষ্ট, আরেক হাতে গোলাপ আর বেলী ফুলের মালা। আমি উঠে জায়গা দিলাম তিনি বসতে রাজী নন। আমি বললাম বসেন আজ আপনার আনন্দের দিন। তিনি দারুন একটা হাসি দিলেন। ভদ্রলোকের হাসিতে আমি মুগ্ধ হলাম। অনেকদিন পর এমন অন্তর থেকে কাউকে হাসতে দেখলাম। শ্যামলী নেমে সেখান থেকে রিকশা নিয়ে আমি ভাবছিলাম সেই লোকটার কথা। আহ কি দারুন কিছু মুহূর্তের জন্য এত আয়োজন। এইভাবে যদি সবাই সুখে থাকতো কি ভালো হতো, কিন্তু এই দেশে সুখ তো দূরে থাক, অনেকের জীবনেই শুধু বেদনা আর অশ্রুর গল্প। অনেককেই দেখলাম রানা প্লাজা নিয়ে শোকের মাতম করতে। আমি চেষ্টা করেছি তা যত পারি ভুলে থাকতে। কারন বারশো মানুষ যারা মারা গিয়েছে তাঁদের অন্তহীন বেদনার কাছে আমার শোকের মাতম কিছুই না। যার যা হারায় সেই বুঝে কত দামি ছিল মানুষটা। সৈয়দ হককে এক রিকশাওয়ালা একবার বলেছিল, এই দেশ থেকে শান্তির মা বাবা তো অনেকদিন ধরেই গত হয়েছে। তা শুনে পাশের রিক্সাওয়ালা বলে ছিল' হ মরনের কালে থুইয়া গেছে তার দুই ভাতিজা জোর আর জুলুম কে'। বিশ বছর পরেও এই দেশে সেই দুই ভাতিজারই নিষ্ঠুর আমল চলছে তো চলছেই। তার ভেতরে বিজিএমইএ করে মিলাদ, মিলাদ শেষে সেখানেই রাতে বাজে হিন্দী গান। এই শহরের সব কিছুই নষ্টদের দখলে!
চলেন, একেকদিন একেকটা আবেগকে সেলিব্রেট করি। আনন্দ, দুঃখ, রাগ, ঘৃণা, ভয় এরকম আরো অনেক ধরনের আবেগ। তা না হলে তো কষ্ট আমাদের সবাইকে গ্রাস করে ফেলছে।
ভালো আইডিয়া!
শেষ দিকটা বড় মন খারাপিয়া
না চাইতেই হয়ে গেছে!
পড়লাম!
থ্যাঙ্কস!
মন্তব্য করুন