ইউজার লগইন

সাহিত্যিকের মৃত্যু এবং আমাদের গদগদে আবেগ

মৃত্যু একটি অনিবার্য ঘটনা। তারপরও সৃজনশীল ব্যক্তিদের মৃত্যু একটু বেশি দুঃখজনক বৈকি। হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে গোটা জাতি কষ্ট পেয়েছে এবং সেটাই স্বাভাবিক। আমিও কিঞ্ছিৎ পেয়েছি। যদিও জীবনের অনিবার্য কোন ঘটনা নিয়ে আমার মধ্যে হাহাকার নেই। হাহাকার করে লাভও নেই।
কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো হুমায়ূন আহমেদের ছাড়াও অনেক সৃজনশীল কবি সাহিত্যেকের মৃত্যুতে জাতি এতোটা কষ্ট পায়নি। কষ্ট বা স্মৃতি বিলাসের প্রচারণাও পায় নি। অনেককে দেখছি, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ করে তাকে নানা বিশেষণে ভূষিত করছেন। কিন্তু অনেক সৃজনশীল লেখকদের সে সৌভাগ্য জোটে নি। জীবননান্দকে চিনতে আমাদের অনেকদিন লেগেছে। কারন আমাদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত শিক্ষিতদের (তথাকথিত) রুচির স্তর একটা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থেকেছে। এর মানে এই নয় যে, বাংলা সাহিত্যে হুমায়ূন আহমেদের অবদান কম। তাঁর গল্প উপস্থাপনের ঢং আকর্ষণীয়। খুব সহজেই পড়ে ফেলা যায়। তাকে একটা বিশেষণেই ভূষিত করা যায় , সেটা হলো, তিনি জনপ্রিয় লেখক। তবে তাঁর কোথাও কেউ নেই, নক্ষত্রের রাত, এইসব দিনরাত্রি নাটকগুলো নিঃসন্দেহে অসাধারণ। যদিও পরে তিনি শুধুই চকোলেট নাটক বানিয়েছেন।
উপন্যাসের ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ বিগত কয়েক বছর ধরে একই চরিত্রের জাবর কেটে গেছেন। কোনো এক চরিত্রের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে একই জিনিসের জাবর কেটেছেন ব্যবসার জন্য। মজাদার চকোলেটের মতো পাবলিক তা খেয়েছেও বেশ। খাওয়ার পরই আবার ভুলে গেছে। কিন্তু তঁার জনপ্রিয়তা আকাশ ছুয়েছে। তবে জনপ্রিয়তাই সাহিত্যিকের বিচারের একমাত্র মাপাকাঠি নয়। আমাদের মমতাজ যত মানুষের কাছে পরিচিত। কয়েকটি দেশ মিলিয়েও গজল শিল্পী মেহেদী হাসান ততটা জনপ্রিয় নন।
কৈশরে আমি হুমায়ূন আহমেদের অনেক উপন্যাস পড়েছি। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে মনে রাখার মতো কিছুই পাই নাই। নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, পেন্সিলে আঁকা পরী এ জাতীয় কিছু উপন্যাস ভাল লেগেছিল। তাই নাম মনে আছে। তবে তীব্রভাবে মনে কোনো দাগ কাটে নি। দাগ কাটার জন্য তিনি কিছু লেখেন ও না। যা তিনি নিজেই বলে গেছেন।
হুমায়ুন তাঁর একই ধরনের গল্পের জাবর না কাটলেও সাহিত্যের কোনো ক্ষতি হতো না। তবে ব্যবসার ক্ষতি হতো। হিমু নিয়ে তিনি প্রথম যে গ্রন্থ রচনা করেছেন তারপর তিনি ওটা নিয়ে আর না লিখলেও পারতেন। যদিও অনেকের ধারণা, হিমু চরিত্রটা শীর্ষেন্দুর কাগজের বৌ উপন্যাস থেকে নেওয়া। যাইহোক মূল কথা হলো, একই জিনিস অনেক বেশি প্রসব করলেই সাহিত্যে তঁার অবদান বিরাট হয়ে দাড়ায় না।
বিভূতি, মানিক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আহমদ ছফা ...... এরা ব্যবসার জন্য কখনোই একই জিনিসের জাবর কাটেন নি। তাই তাদের গ্রন্থের সংখ্যা হাতেগোনা। তাদেরকে মূল্য দেওয়া শিখতে হবে।
'কিংবদন্তী' বিশেষণ আমরা এই মুহুর্তে কাউকেই দিতে পারি না। আজ থেকে ২০০ বা ৩০০ বছর যেসব সাহিত্যিকদের রচনা বেঁচে থাকবে শুধুমাত্র তারাই কিংবদন্তী। আমরা যেহেতু জানি না ওই সময়ে কাদের সাহিত্য বেঁচে থাকবে, সেহেতু আমরা অতিরিক্ত আবেগের বশবর্তী হয়ে কাউকেই এখনই কিংবদন্তী বিশেষণে ভূষিত করতে পারি না। আর ভূষিত করলেও সেটা স্থায়ী কোনো উপাধি হবে না। জীবিত থাকলে এসব উপাধি দেখলে হুমায়ূন আহমেদ নিজেও লজ্জিত হতেন।
হুমায়ূন আহমেদের রচনাগুলো ভালো ব্যবসা করলেও ব্যবসায়ীক মানসিকতার লোক তিনি ছিলেন না। কারন তিনি তাঁর কামানো অর্থের বৃহৎ অংশ বিলাসিতার পাশাপাশি তিনি সমাজসেবামূলক কাজে ব্যয় করেছেন। আমার লেখার যে অংশগুলো সমালোচনা বলে মনে হচ্ছে, তা মোটেই সমালোচনা নয়। অনেক গাধা লোকজন বোঝার অভাবের কারনে তারা সমালোচনা ভাবছেন। আমি সমালোচনা করছি না, কারন আমি যা বলেছি হুমায়ূন আহমেদ নিজেই এসব কথা স্বীকার করে গেছেন। হুমায়ূন আহমেদ নির্দ্বিধায় বলেছেন, তিনি নগদ চান। এসব নিয়ে তাঁর মধ্যে কোনো ভণ্ডামি ছিল না।
তিনি উচ্চমার্গীয় সাহিত্য রচনার পক্ষপাতী ছিলেন না। তাঁর কিছু লেখায় মধ্যবিত্তের সমস্যা উঠে এসেছে। সমস্যা গুলোর মধ্যেও তিনি মজা করে গেছেন সমানে। সমাজের পরিবর্তন বা মঙ্গল নিয়ে ভাবিত হওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি তিনি। পাঠকদেরকেও ভাবান নি, রেখেছেন মজার জগতে। কলুষিত ও বৈষম্যের সমাজকে মেনে নিয়ে তিনি মজা খুঁজেছেন। কারন সমাজকে মেনে নিলে ভাল থাকার পথ পরিস্কার হয়। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতসহ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক বিরুপ হয় নি কোনোদিনই। ভাল থেকেছেন তিনি।
হুমায়ূন নিজের যৌক্তিক মূল্যায়ন নিজেই করে গেছেন। যে কথা তিনি নিজেই নিজের সম্পর্কে বলে গেছেন তাহলে আমি আর নতুন করে কি সমালোচনা করলাম? অবাঞ্ছিত আবেগকে আমি প্রশ্রয় দেই না। আমার অতি প্রিয় লেখককেও আমি কিংবদন্তী বিশেষণে ভূষিত করি না। তবে করতে ইচ্ছে করে। অতিরিক্ত আবেগের অনেক সমস্যা আছে। আবেগের মাত্রা বেশি হলে মানুষ মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে তুলনা করে বসেন। সেটা মোটেই কাম্য নয়।
আহমদ ছফা তাঁর প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকের' পান্ডুলিপি পড়ে মুগ্ধ হন এবং তা প্রকাশের উদ্যেগ নেন। পরবর্তীতে তিনিই হুমায়ূন আহমেদকে বর্ননা করেন 'নষ্ট প্রতিভা' বলে। আর একটা বিষয় হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদের জাবর কাটা সাহিত্যগুলো কিশোর-কিশোরীদের সাহিত্যপাঠে উদ্বুদ্ধ করে। এটা বিশাল একটা ব্যাপার। তবে কৈশর পার হওয়ার পরও হুমায়ূন আহমেদে বন্দী হয়ে পড়া মোটেই কাম্য নয়। হুমায়ূন আহমেদ যা দিয়েছেন তার মূল্যও জীবদ্দশাতেই তিনি পেয়েছেন। তা অর্থ হোক আর সম্মানই হোক। তবে এই বঙ্গদেশে অনেক গুণী সাহিত্যিক জীবদ্দশাতে কিছুই পান নি আমাদের অজ্ঞতার কারনে। কারন আমরা মূল্য দিতে পারি নি। বা মূল্য দেওয়ার মতো উচ্চ পর্যায়ে উঠি নি। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে কলকাতায় যতটা মূল্য দেওয়া হয় আমরা সেটাও দিতে পারি নি। কলকাতার খ্যাতিমান এক লেখিকা (নামটা মনে আসছে না) বলেছিলেন, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের নখের সমান যোগ্যতাও যদি তাঁর থাকতো, তাহলেও তিনি নিজেকে লেখক হিসেবে দাবি করতেন।
আমার কৈশর কেটেছে হুমায়ূন আহমেদ পড়ে। তার উপন্যাস দিয়েই একাডেমকি জগতের বাইরে আমার প্রবেশ। এবং এটা ভেবেও আমি খুশী যে, আমি তাঁর গন্ডী থেকে বের হতে পেরেছি। কিশোর-কিশোরীদেরকে হুমায়ূন আহমেদের লেখা আকৃষ্ট করে। চকোলেট খুব সহজেই মজা করে চেটেপুটে খাওয়া যায়। ওই বয়সে খাবারের পুষ্টিমান কেমন তা যাচাই করার বুদ্ধি থাকে না। যাচাই করার প্রয়োজনও নেই। প্রয়োজন হলো খাওয়া শেখা।
আমি কোনো বাড়িতে বেড়াতে গেলে সময় কাটানোর জন্য বই বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদকেই বেছে নেই। কারন আমি জানি অল্প সময়ের মধ্যে তাঁর বই শেষ করা সম্ভব। অথবা শেষ করতে না পারলেও কোনো আফসোসের ব্যাপার নেই। আগে যেমন প্রথম আলোর আলপিন পড়তাম।
অসাধারণ কোনো খাবার খেতে হয় তাড়িয়ে তাড়িয়ে। তাতে সময় বেশি লাগে। এবং খাবারটা শেষ করতে না পারলে বিরাট অতৃপ্তি থেকে যায়।
আজ তরুণদের হুমায়ূন আহমেদ বা কিশোরদের জন্য রচিত অ্ন্যান্য রচনা দিয়ে সাহিত্যপাঠ শুরু হোক। কিন্তু তারা যেন চকোলেট সাহিত্যে বন্দী হয়ে না পড়েন সেটাই কাম্য। ধীরে ধীরে তারা উচ্চমার্গীয় সাহিত্য রস আস্বাদনের যোগ্যতা অর্জন করবে সেটাই প্রত্যাশা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: হুমায়নী গন্ডী থেকে যারা বের হতে পারেন নি, এবং যারা আবেগে গদগদ হয়ে আছেন, তাদেরকে মন্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানাই।

পোস্টটি ৪ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


টিপ সই

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


বুঝলাম না, কি বলতে চাচ্ছেন।

মর্ম's picture


আমার লেখার যে অংশগুলো সমালোচনা বলে মনে হচ্ছে, তা মোটেই সমালোচনা নয়। অনেক গাধা লোকজন বোঝার অভাবের কারনে তারা সমালোচনা ভাবছেন।

যেখানে এসে কথা বলাটা গুরুত্বপূর্ণ ঠেকছে সেখানেই লেখায় সম্ভাব্য বিরোধী মতধারীদের অপমানটুকু না করলেও হয়ত হত!

'গাধা'র চেঁচানীর জন্য আগাম তুলো দিয়েছেন কানে, কাজেই 'মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!'

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


ধন্যবাদ।

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


এই লেখাটি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর লিখেছিলাম। আবেগে গদগদ গাধাদের মন্তব্য শুনতে শুনতে ক্লান্ত। বিশেষ দ্রষ্টব্যতেও উল্লেখ করেছি বিষয়টা।

মর্ম's picture


হুমায়নী গন্ডী থেকে যারা বের হতে পারেন নি, এবং যারা আবেগে গদগদ হয়ে আছেন, তাদেরকে মন্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহবান জানাই।

জানি না কেন, আপনার লেখায় প্রচন্ড আত্মাম্ভরীতার ছাপ পাচ্ছি! তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, যে কোন একজন পাঠক শুধু হুমায়ূন আহমেদই পড়েন এবং তাঁর ভক্ত, তাহলে আপনি তার বিবেচনাবোধ নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তার কথা শুনতে অপারগতা জানাচ্ছেন!

সেটাও নিজের ব্লগে নয়, করছেন একটা কমিউনিটি ব্লগে এসে! যেখানে আপনার বিরুদ্ধ মত থাকাই স্বাভাবিক!

হুমায়ূন নিয়ে অনেক মতামত আছে, থাকবে- আপনি যা লিখেছেন তা নতুন কিছু না- কিন্তু নিজের পাঠকদের এভাবে খাটো করাটা এই প্রথম দেখলাম!

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


লেখাটার অনেকটা অংশই ভীষনরকম আপত্তিকর। এবির মত সেল্ফ মডারেটেড ব্লগ না হলে এই লেখা প্রথম পাতাতে আসতো না। আসলেও, মন্তব্যবাণে এতক্ষনে ঝাঝড়া হয়ে যেতেন।

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


সমালোচনা করুন না? নিষেধ তো করিনি। কোন জায়গায় আপনার আপত্তি যুক্তি দিয়ে তুলে ধরুন।

শওকত মাসুম's picture


এইটা গতবছরের সামুর পোস্ট

১০

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


এই পোস্টটির প্রাসাঙ্গিকতা আর কয়েক বছর থাকবে মাত্র। তাই মেরে দিলাম এখানেও। ধন্যবাদ।

১১

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


গদগদে আবেগ বেশিদিনে টেকে না। নাকি বলেন শওকত মাসুম ভাই?। আর লেখাটাতো নকল করি নাই। আমার নিজের লেখাইতো। প্রাসাঙ্গিকতা থাকলে আগের পোস্ট দিলে কি কার কি ক্ষতি হলো তা ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না।

১২

মডারেটর's picture


গ. "আমরা বন্ধু" তে শুধু নতুন লেখাই প্রকাশিত হবে। পুরনো লেখা রিপোস্ট করা যাবে না। অন্য কোনো কম্যুনিটি ব্লগে প্রকাশিত লেখা এবিতে প্রকাশ নিষিদ্ধ। এবিতে প্রকাশিত কোন লেখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্য কোনো কমিউনিটি ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না। ব্যক্তিগত ব্লগ এবং পত্রিকা এই নিয়মের আওতার বাইরে।

উপরোক্ত নীতিমালা ভঙ্গের কারনে লেখাটি ব্লগের প্রথম পাতা থেকে সরানো হইলো! লেখকের প্রতি অনুরোধ, ব্লগ নীতিমালা মেনে লেখালেখির করার জন্য!

১৩

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


সমস্যাটা কি ঠিক বুঝলাম না। অন্যের লেখা তো আর নয়। আমার নিজেরই লেখা। আর প্রাসাঙ্গিক হলে পোস্ট দিলে ক্ষতি কি সেটা ঠিক ঠাওর করতে পারলাম না।
ভণ্ড ভণ্ড ভণ্ড শিরোনামে পোস্ট দুটিও অন্য ব্লগে লিখেছিলাম। সেটিতো প্রথম পেজ থেকে সরানো হয় নি।নীতিমালা পাল্টান। দ্বৈত নীতি পরিহার করুন। ধন্যবাদ।

১৪

অতিথি's picture


নব্বইয়ের দশকে বিচিত্রার কোন এক সংখ্যাতে হুমায়ূন ও সৈয়দ হক এর এক মনোজ্ঞ সাহিত্যিক বিতর্ক পড়ার সময় প্রথম জেনেছিলাম হুমায়ূন নিজের আনন্দের জন্য লিখে থাকেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সাহিত্য টেকসই হকে কি-না, সে বিষয়ে তিনি মোটেই চিন্তিত নন। পরবর্তীতে দেখলাম- হুমায়ূনের সাহিত্য ব্যাপক ব্যবসা সফল। আনন্দের প্রধান উপকরণ হিসেবে তিনি অর্থ, যশ, সম্মান, প্রতিপত্তি পেয়েছেন তাঁর জীবদ্দশায়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সাহিত্য সময়ের স্রোতে এগুবে নাকি হারিয়ে যাবে, সেটা সময়ের হাতে ছেড়ে দেয়াই ভাল। হুমায়ূন স্বীকার করেছেন তিনি জনপ্রিয় ধারার লেখক, তিনি বিনোদনধর্মী লেখা লেখেন, সেটাও তিনি অস্বীকার করেন নি, উচ্চমার্গের সাহিত্য রচনার পক্ষপাতী তিনি ছিলেন না, তাঁর সাহিত্যে সমাজ পরিবর্তন, রাজনীতি, দেশ প্রেমের প্রগাঢ়তা নেই, সবই সত্য। এত কিছুর পরও মানুষ তাঁর সাহিত্য কিনেছে, পড়েছে, প্রশংসা করেছে এবং তাঁকে মাথায় তুলে রেখেছে। হুমায়ূনকে কেন্দ্র করে সৃজনশীল বইয়ের বাজারে, টিভি নাটকে, সিনেমায়, পত্রিকায় প্রচুর বাণিজ্য হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর এই বাণিজ্য ততদিন চলবে, যতদিন মানুষ হুমায়ূনের স্মৃতিতে মগ্ন থাকবে। বিষয়টি আরো কিছুকাল চলবে নাকি চট করে থেমে যাবে সেটা মিডিয়া জগতের উপর নির্ভর করবে।যতদিন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া জনপ্রিয় ধারার সাহিত্য খাতে নতুন কাউকে না পাবে, ততদিন বাণিজ্যিক কারণেই হুমায়ূন গুরুত্ব পেতে থাকবেন। বস্তুনিষ্ঠ লেখার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

১৫

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


ধন্যবাদ। আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
তবে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্যের ক্ষেত্রে অসততা করেছেন। হিমু একটা লিখলেই চলে। একই জিনিসের জাবর কাটা শুধুই ব্যবসার জন্য। এটা বাস্তবতা। একজন প্রকৃত অর্থেই সাহিত্যিক কখনোই এই অসততা করবেন না। সাহিত্য হলো সৃষ্টি। একই সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি নয়।

১৬

আইরিন সুলতানা's picture


আবেগ বিষয়টা বহতা। একবার বেগ পেয়ে গেলে সব কিছু ছাপিয়ে চলে যাবে।

আপনার পোস্টের সব কথাই সত্য। আপনার পোস্টের সব কথাই ভ্রান্তি। হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফা এদের সাথে হুমায়ুন আহমেদের তুলনা চলে না। আবার হুমায়ুন আহমেদ এর আজাদ, ছফার তুলনা চলে না। আমিও এমনকি হিমু পড়া ছেড়েছি বহু বছর। আবার আমিও হিমুতে ডুবে থেকেছি বহু বছর।

হুমায়ুন আজাদ তার আর হুমায়ুন আহমেদের বই এক সাথে দেখতে পছন্দ করতেন না বলে শুনেছি। মানদণ্ডের বিচার যার যার। আবার সবার।

মগজকে নাড়ানো যেমন সহজ নয়, তেমননি আবেগকে নাড়ানো কিন্তু কঠিন। পৃথিবীর সব পাঠক মগজ খাটানোতে আগ্রহী হবে না। পৃথিবীর সব পাঠক আবেগকে গুরুত্ব দেবে না। তাই আজাদ, ছফা, আহমেদ - আলাদা আলাদা সত্তারূপে বিরাজ করবে।

আমি দুপক্ষকেই গ্রহণ করলে তাতে পাঠক হিসেবে আমার ক্ষতি তো নেই।

১৭

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture


আমি কিন্তু হুমায়ূন আজাদ বা ছফার সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের কোনো তূলনা করিনি অন্তত ছোটোবড় অর্থে । হুমায়ূন আহমেদ নিজেই বলেছেন, তিনি উচুঁ স্তরের পাঠকও না। এটাকে অনেকে বিনয় হিসেবে ধরে। কিন্তু সেটা ঠিক নয়। আবেগকে নাড়ানোর বিষয় অস্বীকার করছি না। আমার পোস্টেও হুমায়ূন আহমেদের যথাযথ মূল্যায়ন রয়েছে।
আপনাকে আমি আবারও বলছি, আমার লেখায় কোথাও খাটো করা অর্থে তূলনা দেওয়া হয়নি।
তবে হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্যের ক্ষেত্রে অসততা করেছেন। হিমু একটা লিখলেই চলে। একই জিনিসের জাবর কাটা শুধুই ব্যবসার জন্য। এটা বাস্তবতা। একজন প্রকৃত অর্থেই সাহিত্যিক কখনোই এই অসততা করবেন না। সাহিত্য হলো সৃষ্টি। একই সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি নয়।
আর একটা ব্যাপার হুমায়ূন আহমেদের এমন অনেক পাঠক রয়েছে যারা হুমায়ূনীয় গন্ডী থেকে বের হতে পারেননি। তাঁদেরও অবশ্যই জানা উচিত, হুমায়ূনই একমাত্র সাহিত্যিক নয়।
আপনার আর একটা কথায় আমি দ্বিমত পোষণ করছি।
হুমায়ূন আজাদ, আহমেদ ছফা বা আখতারুজ্জামানের লেখা শুধুই মগজকে নাড়া দেয় না, আবেগকেও নাড়া দেয়। তারা একই আবেগের পুনরাবৃত্তিও ঘটাননি।
কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ শুধুই আবেগকে নাড়া দিয়েছেন এবং একই আবেগের পুনরাবৃত্তি করে ব্যবসা করেছেন। শীর্ষেন্দু কাগজের বৌ ১০টা লেখেননি। একটাই লিখেছেন।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন's picture

নিজের সম্পর্কে

মধ্যবিত্তের তথাকথিত ভদ্দরনোকি আমার মধ্যে নাই। আমি কটূবাক্য বর্ষণ করতে পছন্দ করি। আমার কোনো পোস্টে মন্তব্য দেওয়ার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা করার আহবান জানাই। অবান্তর মন্তব্য করে আমাকে কটূশব্দ ও বাক্য টাইপ করতে বাধ্য করবেন না। আমার কাছে ভদ্দরনোক শব্দের অর্থ হলো আপোষকামী। মধ্যবিত্ত শ্রেনীটিকে আপোষ করে চলতে গিয়ে ভদ্দরনোক হতে হয়। এই শ্রেণীর অংশ হিসেবে বাধ্য হয়ে সমাজে আমাকেও আপোষ করে চলতে হয়। তাই আমি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্য পরাজিতদের মধ্যে একজন, যারা আপোষকামী নয়, কিন্তু বাধ্য হয়ে যাদেরকে আপোষ করে চলতে হয়।