ভাবনা পড়ে আছে খুচরো হয়ে, কুড়িয়ে নেবে সময়
শরীরটা কিছুদিন যাবৎ ভাল না। পিঠের ব্যাথাটা বড্ড ভোগাচ্ছে। মেরুদণ্ডের ভেতর চিনচিনে এই ব্যাথাটা আমার সবসময়ের সংগী। কখনো কম কখনো বা বেশী। ইদানীং ব্যাথা বেশী। তাই শারীরিক কষ্ট থেকে আক্রান্ত হচ্ছে মন আর মন থেকে মস্তিষ্ক। “মন” বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব মানব শরীরে নাই, “মন” নামক যন্ত্রের সব কাজ করে মস্তিষ্ক। অথচ এই অস্তিত্বহীন বস্তুটির কাছেই আমরা সবসময় পরাজিত হই। কোন কারণে কষ্ট পেলে মনে হয় বুকের ভেতরে কেউ মন নামক বস্তুটিকে চিপড়ে ধরে আছে যার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মন ভাল না থাকলে মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে আর খুব বেশিদিন এই বিষণ্ণতা চলতে থাকলে অনেক সময় জীবনের কাছে আত্নসমর্পণ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি নামী- দামী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে “জেণ্ডার কো-অর্ডিনেটর” হিসেবে আমার নামে অফার লেটার এসেছে। তারা চাচ্ছে, আমি আগামী ছয় বছর তাদের সাথে কাজ করি। নিঃসন্দেহে লোভনীয় একটি প্রস্তাব এবং আমি আগ-পাশ কিছু চিন্তা না করেই চুক্তিবদ্ধ হলাম। কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম, যতটুকু খুশী আমার হওয়ার কথা ছিল ততটুকু হতে পারছিনা। আমি সবসময় খুশী থাকার চেষ্টা করি। অকারণ বা অল্প কারণেই উচ্চস্বরে হাসি। সবসময় যে অভিনয়টা ভাল হয় তাও না। মাঝে মাঝে ধরা খেয়ে যাই। তাও সবার কাছে না একান্ত কাছের কিছু মানুষজনের কাছে, যারা আমার নাড়ী-নক্ষত্র সব জানে। কালকে যেমন ধরা খেলাম দুনিয়া আপার কাছে। একটা কথায় আমি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হাসছিলাম দেখে সে হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করে বসে, “মন কি বেশি খারাপ”? আমি ওর কথা শুনে চুপ মেরে যাই।
“ভালবাসা” কত যে সুন্দর কালকে আরেকবার বুঝতে পারলাম। দুনিয়া’পার জন্মদিন ছিল গতকাল। জন্মদিন উপলক্ষ্যে তার হাজবেন্ড তাকে সারপ্রাইজ দিতে চাচ্ছিল। তাই দুপুরে আমাকে ফোন করে বললো, “তোমার আপার বার্থডে আজকে। চলো ওকে সারপ্রাইজ দেই”। আমি বললাম, কীভাবে? সে বললো, “জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিব বলে ইচ্ছে করেই ওর সাথে কালকে আমি খুব ঝগড়া করেছি। এখন পর্যন্ত উইশও করিনি। ও আমার উপর খুব রাগ করে আছে। তোমার একটা মাত্র কাজ হল, তুমি ওকে যেকোনভাবে অফিস ছুটির পরে ক্যাপ্টেইন্স ওয়ার্ল্ডে নিয়ে আসবা। পারবানা?” আমি বললাম, “খুব পারবো”।
আমার ফাকুন্দা মার্কা জীবনেতো আর আনন্দের কোন বিষয় নাই, তাই মানুষের আনন্দের ভাগীদার হতে পারাটাও আমার জন্য অন্নেক। তাই অফিস ছুটির পর আপাকে ধরে বেঁধে নিয়ে গেলাম আগে থেকেই ঠিক করে রাখা জায়গাটাতে। ভাইয়া আগেই আমাকে বলে রেখেছিল, ওখানে জায়গা রিজার্ভ করা আছে। তাই আমি ওকে নিয়ে রিজার্ভেশনের জায়গাটাতে যেতেই রামধমক খেলাম। আপা বলছে, “তুই ওখানে কেন যাচ্ছিস? দেখছিসনা, ওইটা কেউ রিজার্ভ করে রেখেছে?” সে চিন্তাই করে নাই, রিজার্ভেশনটা তার জন্যও হতে পারে। এই অবস্থায় ভাইয়া সেখানে এসে রীতিমত তাকে জোর করেই ঐ রিজার্ভেশনের জায়গাটাতে ঢুকানো মাত্র আমি আর আপা “থ”! পুরাটা জায়গা খুব সুন্দর করে ফুল, মোম আর বেলুন দিয়ে সাজানো। সেখানে আপার একটা ছবিও লাগানো আছে। ততক্ষণে আপা সব বুঝে গেছে। এরপর ভাইয়া একটা ভিডিও দেখালো, যেটা সে নিজে তৈরী করেছে। আপা আর ভাইয়ার কিছু সুন্দর মুহুর্তের ছবি দিয়ে তৈরী ভিডিওটার ব্যাকগ্রাউন্ডে “এভরিথিং আই ডু, আই ডু ইট ফর ইউ” গানটা বাজছিল। এক কথায় অসাম! ভিডিও দেখতে দেখতে আমার চোখে যথারীতি পানি চলে এলো আর আপা ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দিল। আমার ঐখানে নিজেকে “কাবাব মে হাড্ডি” মনে হচ্ছিল। এরপর কেক আনা হল। সেখানেও কেক এর উপর আপার একটা সুন্দর ছবি। কেক কাটার পর খাওয়া- দাওয়া এবং তারপর আমি বাসায় চলে এলাম। ফেরার পথে মনে হচ্ছিল, সত্যিই ভালবাসা কত সুন্দর! খুব কি বেশি কিছু লাগে সেটা প্রকাশ করতে? খুব কি টাকা- পয়সার প্রয়োজন হয়? একটু “ভালবাসি” কথাটাইতো দিতে পারে অপরিসীম আনন্দ। শুধু দরকার একটু মনোযোগ বা যত্নের। এই সারপ্রাইজটা পেয়ে আপা যে পরিমাণ খুশী হয়েছে, একটা বাড়ি বা একটা গাড়ি পেলে কি সেরকম খুশী হত? সৃষ্টিকর্তা যেন আমার প্রিয় মানুষগুলোকে সবসময় খুশী রাখেন। তারা যেন এরকম আনন্দেই থাকে প্রতিটা ক্ষণ, প্রতিটা মুহুর্ত। আমি আমার জীবনে যা কখনো পাই নাই ওরা যেন সেটা পায়। ওদের পাওয়ার মধ্য দিয়েই আমার না পাওয়াগুলো চলে যাবে।
ব্লগ লিখতে এখন আর ইচ্ছে করেনা। কালকের এই ঘটনাটা লিখার দুইটা উদ্দেশ্য রয়েছে। এক, আমার যখন অনেক বয়স হয়ে যাবে তখন হয়তো পুরনো লেখা পড়তে গেলে হঠাত করে এই ঘটনাটার কথা মনে করে ভাল লাগবে আর দুই, সবাইকে একবার চিন্তার সুযোগ করে দেওয়া যে, আমরা কি আমাদের সম্পর্কগুলোর ব্যাপারে মনোযোগী? যত্নশীল? যদি তা না হই তবে সেটা হওয়া। কারণ, অযত্নে বেড়ে উঠা কোন গাছ যেমন খুব বেশিদিন বাচঁতে পারেনা, অযত্নে বড় হওয়া কোন বাচ্চা যেমন বড় হয়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনা, ঠিক তেমনি সম্পর্কের মধ্যে অমনোযোগ বা অযত্ন চলে আসলে সেই সম্পর্কটাও খুব বেশীদিন ধরে রাখা সম্ভব হয়না। জীবনতো একটাই। এই একটা ছোট্ট জীবনে যদি ভালোই না থাকলাম তবে তো জন্মটাই বৃথা।
আমার বন্ধু সংখ্যা খুব কম। অল্পসংখ্যক কিছু বন্ধুর মধ্যে একজন হচ্ছে বিপুল। ওর সাথে আমি খুব বেশিদিন মিশি নাই। কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ও আমার খুব ভাল একজন বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। বিপুল কোনদিনও প্রেম করতে পারে নাই। আরেকদিন ওরে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে, খুব উদাস ভাবে উত্তর দিল, “তোরে খুঁজছি সবসময়। তোর মতো কাউরে পাই নাই। এইজন্য আমার আর প্রেম করা হয়নাই”। আমি বলি, “আমার মতো কি লাগবে তোর”? বলে, “এই যে তোর মত খিলখিলানি হাসি দেয়না, ফাটা বাঁশের মত কারো গলা না, এরকম চিৎকার দিয়া কোন মাইয়া ঝগড়া করেনা, পাগলামি করতে পারে না, আর তোর মতো কেউ ইনোসেন্ট না”। আমি বলি, “এগুলার মধ্যে একটাওতো প্রশংসা না। ইনোসেন্ট ব্যাপারটাকেও আমি প্রশংসা মনে করিনা। কারন আমার মনে হয়, আমার বুদ্ধিবৃত্তি অনেক নিম্নপর্যায়ের। তোরা তো ভদ্রতার খাতিরে আর সেটা বলতে পারিসনা, তাই তোরা বলিস ইনোসেন্ট। এই কারনে, আমারে ইনোসেন্ট মনে করা লোকের সংখ্যা দিন কে দিন বাড়তেসে। যেটারে আমি একরকম অপমান বলেই মনে করি”। উত্তরে সে বললো, “এইতো চমৎকার ধরতে পারছিস। তোর দিন দিন উন্নতি হচ্ছে”।
জীবন বহমান নদীর মত ক্রমাগত বয়ে চলে। প্রতিনিয়ত চলে ভাঙ্গা- গড়ার খেলা। এক তীর ভাঙ্গে তো আরেক তীর গড়ে। এখানে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা এক সময় শুধুই স্মৃতি হয়ে যায়। মাঝে মাঝে শুধু মনে পড়ে,
এই হাতটা ধরেছি কি কখনো?
ছেড়ে কি এসেছি এ হাতটাই?
উত্তর জানে, শুধু বিষণ্ণতা
শহরে সন্ধ্যে গড়ায়।
ছিল যা কিছু ছোট- খাটো কথা
তোমাকে বলা হবেনা বোধ হয়
গলির ভেতর হাঁটে নীরবতা
যে তোমাকে মনে পড়ায়।
ইনোসেন্টের এই ব্যাখা আমার পছন্দ হয় নাই। ইনোসেন্ট ব্যাপারটাকে আমি পজেটিভ ভাবেই দেখি।
লেখা দারুন হয়েছে। অনেকদিন পরে তোমার লেখা পড়ে শান্তি পেলাম, যদিও পোষ্ট পড়ে মন খারাপ হইছে। এইসব প্রেম ভালোবাসাবাসি ভালো লাগে না আমার আর। যেমন আছো তেমনই থাকো। মনে ফুর্তি রাখো!
ইনোসেন্ট এর ব্যাখাটা ঠিকই আছে এবং একদম যুতসই আছে।
সবাই খালি আমাকে মনে ফুর্তি রাখতে বলে আর নিজেরা ফাস্ট ফুড খাওয়া চিরতরে বন্ধ করে দেয়।
বুঝছোনা ব্যাপারটা?
লোকজনের কথা তো তুমি শোনো সবসময়, তাই সব কথাই শুনবা। প্যারাসুট নারকেল তেল দিবা, শখের মতো মনে ফুর্তি থাকবে, চুলে পুষ্টিও থাকবে
আমার কাজী নজরুল ইসলামের মত বাবরী চুলই ভাল লাগে। শখের চুল চাইনা।
চুল কেটে ফেলসি একদম ছোট্ট করে। সো প্যারাসুট আর লাগানো লাগবেনা।
সাব্বাশ। সমস্যা হইলো আগামীতে তোমার চুল লইয়া লোকজন কবিতা লিখবে কেমনে এবারের মত?
হাহাহাহাহাহাহা। তখন বয়কাট চুলের সৌন্দর্য নিয়া লেখপে।
দারুণ একটা লেখা। মানুষের অনুভূতিগুলোকে তুমি খুব সুন্দর করে লিখতে পারো আপু। তুমি করে বলায় কিছু মনে কোর না। কেন যেন তোমাকে আপনি করে বলতে ইচ্ছে হল না।
থ্যাঙ্ক ইউ
চমৎকার সাবলীল লেখা। চলুক।
থ্যাঙ্ক ইউ ভাইয়া
ইনোসেন্সের ব্যাপারে শান্ত ভাই এর সাথে সহমত।
লেখাটা অনেক কিউট।
নতুন জীবনে শুভকামনা।
ভালোবাসায় ভরে থাকুক সকল প্রাণ।
শান্তর সাথে সহমত করে কুনো লাভ নাই। আমি আমার বক্তব্য এবং যুক্তিতে অনড়।
পাত্থরহৃদয় মহিলা!
ইয়েস! আই অ্যাম। এ্যান্ড আই লাভ টু বি।
মন্তব্য করুন