হেমন্তের গল্প
চাঙ্খারপুলের ঐ বাড়িটিতে আমি আগে কোনোদিন যাইনি। ওইদিন আমাদের কোথা থেকে কি শুরু হয়েছিল জানি না। আমি, পদু, গনেশ, রাখাল, অমিতাভ, রঞ্জন, গৌতম মিলে কিছু একটা শুরু করেছিলাম। সেই কিছু একটার শুরু হয়েছিল গাঁজা খাওয়া থেকেই। এরপর চান্দা তুলে মাল খাইতে খাইতে আমরা আরও এক লেভেল উপরে ওঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করলাম।
সেই অনুভবের বশবর্তী হয়ে দলেবলে পৌঁছে গেলাম চাঙ্খারপুলের ঐ বাড়িটিতে। তিনতলা। একটা অপ্রশস্ত করিডোর চলে গেছে ফ্ল্যাটের দরজা থেকে পেছনের দিকের ওয়াশ রুম পর্যন্ত। এটি একটি নটিপাড়া। ম্যানেজারটি দেখতে ঠিক নটিপাড়ার ম্যানেজারদের মতো নয়। আমাদের জেনারেশনের ছেলেদের মতো মুখে দাড়ি। বেশ ভদ্র গোছের মনে হল। আমরা বললাম- আমাদের কাছে কাউকে পাঠিয়ে দিতে।
ম্যানেজার যে ঘরটিতে আমাদের বসতে দিল সেটি ফ্ল্যাটের সবচে বড় ঘর। ঘরে একটি মেগা সাইজের বিছানা। আমিরিকার পর্ণ মুভিতে যে ধরণের বিছানা দেখতে পাওয়া যায় সেরকম। আমরা সাতজন সেই বিছানা দখল করে বসলাম। নটির জন্য অপেক্ষা। গনেশ গাঁজা বাছতে শুরু করে দিল। গৌতম পকেট থেকে ফোন বের করে কিছু একটা করতে লাগলো। পদু আর রঞ্জন কি একটা নিয়ে মিছেমিছি তর্ক করতে লাগলো। আমি আর অমিতাভ কল্পনা করতে লাগলাম নটি কেমন হবে- কচি না বুড়ি, মোটা না চিকন- ইত্যাদি। পদু মেজাজ খিচড়ে যাবার মতো মুখভঙ্গি করে চেঁচিয়ে উঠলো- এখনই আর এক বোতল মাল দরকার শালা!
নটি আসলো। বাঁকানো সিঁড়ি বেয়ে নেমে। নটির পায়ে নুপুর। নুপুরের মায়াবী রুনুঝুনু সবকিছু বদলে দিলো। আমাদের সাত জোয়ানের নিজস্ব তেজ বলে যা কিছু ছিল- যা কিছু এতক্ষন ধরে রেখেছিলাম তার সবই মুহূর্তে বাতাসে মিলিয়ে গেল।
নটির পরনে ফ্রক। গায়ে টি-শার্ট ধরণের জামা। ঠিক যেন কোনো পুরনো বান্ধবীর বাসায় গেছি দল বেঁধে আর বান্ধবী বুঝি বেরিয়ে এলো শোবার ঘর থেকে। যাইহোক- নটি আর নটি থাকলো না- হয়ে গেল বান্ধবী- অন্তত আমার কাছে; অন্যরা তখন কি ভেবেছিল জানি না। তবে বান্ধবীর খোলাচুল আর কোমল মুখের চাউনিতে আমরা সকলে কাবু হয়েছিলাম নির্ঘাত। উপর্যুপরি গঞ্জিকাসেবন আর মদ্যপানের এই পর্যায়ের রাত গভীরে আমাদের বোধহয় নটির চেয়ে প্রেমিকার প্রয়োজন বেশি ছিল।
মেয়েটি এসে খাটের উপর পা তুলে বসে বলল- আপাতত আমিই আপনাদের সাথে থাকবো। জানতে পারলাম সে এখানকার সত্ত্বাধিকারী। আমাদের মত দস্যুদলের উপস্থিতি বুঝে ঠাওর করেছে যে অন্য মেয়েদের দিয়ে ক্রেতা সন্তোষ অর্জন করা অসম্ভব।
আমরা আর কি করি? আড্ডা মারছিলাম যেমন- তেমনই মারতে লাগলাম। তাছাড়া কেউ তখন মেয়েটিকে নগ্ন করে ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ার মতলবে ছিল না। মেয়েটিও কোনো তাড়া না দিয়ে আমাদের সাথে পর্যায়ক্রমে আড্ডা মারতে লাগলো। কখনো পদুকে আদর করে দিচ্ছিল, কখনো গনেশকে বকে দিচ্ছিল, রঞ্জনের সাথে বেয়াইনসুলভ তামাশা করছিল, কখনো আমার আর অমিতাভের মাঝখানে বসে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছিলো। এর মাঝেই কখন যে আমরা জানতে পেরেছি এ পাড়ায় মদিরা আছে- কখন যে ম্যানেজার এসে একটা বোতল দিয়ে গেছে- আর কখন যে মেয়েটিও একটু একটু মাতাল হয়েছে- কিছুই আমি টের পাইনি।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঐ রাতে রতিক্রিয়া নিশ্চয়ই কারো করা হয়নি। তবু আমরা বান্ধবীকে যথেষ্ট টাকা দিতে চাইলাম। বান্ধবী শুধু বোতলটার দামই রাখলো। আর সবাইকে ব্যক্তিগত নিমন্ত্রন জানালো।
অবধারিতভাবে পরের দিন আমার ভালো লাগছিলো না। মনের ভিতর একটা কিছু সক্রিয় হয়ে গেল। যেতে হবে। সেই বাড়িতে। আজই। আমি লাপাত্তা হয়ে গেলাম।
আজ আর ফেইল করলাম না। বন্ধ কামরায় শুধু আমি আর বান্ধবী। আমার বুকের ভিতরে চীড় চীড় করে উঠছিল। একটানে বান্ধবীকে জাপটে নিলাম। ও স্নান করে নেবার সময় চাইল। আমি বললাম- কুছ পরোয়া নেহি।
কিন্তু আমি ওকে বিছানায় আছড়ে ফেলে ওর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারলাম না। ওকে বুকে জড়িয়েই রাখলাম। চুমু খাবার আগে একবার মনে হয়েছিল এই ঠোঁট জড়িয়ে নিয়েছে কতো পুরুষের শিশ্নাগ্র, চুমু না খাই। কিন্তু পারলাম না সামাল দিতে। আবেগ সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল। আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল বান্ধবীর ঠোঁটের স্রোত, বুকের সুবাস।
আমি রসের অতলে তলালাম- যে রস আমি কোনোদিন ছুঁয়ে দেখতে পারিনি। বান্ধবী আমাকে নিয়ে গেল দুর্গম পাহাড়ে ঘেরা সেই অনাবিষ্কৃত হ্রদে। সাঁতরে-ডুবে ফুরোবার পর শরীরের সবটুকু অশান্তি; আমরা গিয়ে দাঁড়ালাম ব্যালকনিতে। আশপাশের বাড়ির জানালা থেকে দৃষ্টি এসে পড়ছিল আমাদের শরীরে। ওর গায়ে জামা নেই। ওকে আমার বুকে টেনে নিলাম।
ওর প্রেমিকের কথা আমাকে জানালো। আমি ওদের ভালো চাইলাম। চাইলাম ওরা নতুন স্বপ্ন খুঁজে পাক। আমার সাথে বন্ধুত্ব হবার পর ছেলেটা ড্রাগ ডিলিং ছেড়ে দিয়েছিলো। আজ ওরা পেয়েছে নতুন স্বপ্ন। নতুন পরিচয়পত্র।
আমি এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছি।
শুরুটা তো বেশ ভালো। বলা যায় চমৎকার। এগোচ্ছিল ভালোই, টেনে নিচ্ছিল তরতর করে কিন্তু শেষের দিকে এসে যেন খেই হারিয়ে গেল। ...ধন্যবাদ সনৎ।
গল্পের শেষের দিকে ঠিক কোন যায়গাটায় খেই হারিয়ে গেলো?
আমি সহজ পাঠক, বালিকার রূপকথা পাঠের কথা বলা যেতে পারে, মনে হলো লেখাটা একটু আগেই শেষ হয়ে গেছে। অারেকটা সময় হেমন্তের গল্পে লেপ্টে থাকা যেতো!
গল্পের শেষের লাইনের আগের লাইন শেষ করে ভেবে পাচ্ছিলাম না এরপর আর কি লেখা যায়। তখন গল্পকার নিরুপায়, নিকোটিনে আশ্রয়। আশ্রয় পেতেই অনুভুতি-চেতনা-ভাবনা সব অলস হয়ে শুয়ে পড়ল হেমন্তের হলুদ বিকেলে। তখন শেষ লাইনটাই জোরেশোরে ভাবনাকে প্রভাবিত করছিলো। আমিও হাল ছেড়ে দিলাম।
আমিও যদি আরেকটু সময় গল্পে লেপ্টে থাকতে পারতাম-
মন্তব্য করুন