কিছুটা ভাবনার খোড়াক...
সোবাহান সাহেব, তার স্ত্রী, দুই কন্যা, অবিবাহিত এক শ্যালক, ভাড়াটিয়া বিপত্নীক ভদ্রলোক এবং তার দুই সন্তান, আর ঘরের দুজন কাজের লোক নিয়ে একটি পাগলাটে পরিবার। যে সমাজে ঘরে বিবাহযোগ্যতো দূরের কথা, কন্যা সন্তান থাকলে সে পরিবারের পুত্র সন্তানের বয়স যাই হোক আগে মেয়ের বিয়ে দিতে হবে তার পরেই ছেলের বিয়ে এবং কন্যা সন্তান মানেই যেন এক ধরণের দায়, এমন মতবাদের সমাজে বড় মেয়ে রেখে ছোট মেয়ের বিয়ে দেয়ার মত দৃষ্টান্ত স্থাপণ করে এই পরিবার তাও আবার নব্বইয়ের দশকে। এই সমাজে পুরুষদের যতই বয়স হোক না কেন বিয়ের বাজারে তারা সব সময়ই দামী। অপরদিকে মেয়েদের বয়স বিশ পার হলেই সমাজে তথা আত্মীয় স্বজনদের মাঝে শুরু হয় কানা ঘুষা। কিন্তু এই পরিবার ব্যতিক্রম, তারা এমনটি ভাবেন না।
পরিবারের সবাই এতটাই উদার এবং বিশাল হৃদয়ের যে ততকালীন নয় শুধু বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গিতেও এক কথায় তাদের পাগল বলে আখ্যা দিতে দ্বিতীয়বার ভাববে না বেশীর ভাগ মানুষ। তারা কাজের লোককে নিয়ে একই টেবিলে বসে খায়, নিজেদের পাশে বসায়, ভাড়াটিয়ার অভাবের কারণে ভাড়া না নিয়ে উল্টো দুই শিশু সন্তানকে নিজেদের বাসায় রেখে খাওয়ায়।
একদিন গ্রাম থেকে তাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় হাজির হয় তাদের বাসায় তার সদ্য স্কুল পাশ পালিত নাতনীকে নিয়ে। উদ্দেশ্য শহরে যদি ভাল পাত্রী দেখে বিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু এই পরিবারের সদস্যরা এই বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সকল পরিকল্পনাকে ভন্ডুল করে দিয়ে তাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়। দাদার ধারণা ছিল, এই পরিবারের সবাই পাগল এবং তাদের যা ধন সম্পত্তি তা অবৈধ উপায়ে অর্জিত। আর তাই সামনাসামনি সবাইকে তোষামোদ করলেও পেছনে তাদের নামে কটুক্তি করতে এতটুকু চিন্তা করতো না। তার নাতনীর কাছে এই পরিবারের সবার নামে বিষাদগার করার কোন সুযোগই সে হাতছাড়া করতো না। পরিবারের সবাই তার কর্মকান্ডে বিরক্ত হলেও সবকিছু সহ্য করে ভাল ব্যবহার করে। একদিন সে নিজেই তার ভুল বুঝতে পেরে তীব্র অনুশোচনায় ভোগে।
সোবাহান সাহেব সমাজ এবং দেশের যাবতীয় সমস্যা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করেন। সারাক্ষণ তিনি বিভিন্ন সমস্যার কথা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে অন্যদের বিরক্ত করতে থাকেন। মনে মনে খুঁজতে থাকেন এমন একটি কাজ যা এই বয়সে শুরু করলেও তাকে ব্যস্ত রাখবে বাকীটা জীবন। ভাড়াটিয়া আনিস ছেলেটা তাকে এমন একটি কাজের বুদ্ধি দেয়। সোবাহান সাহেবের খুব পছন্দ হয় সেই আইডিয়া। মনস্থির করেন, বাকি জীবনটুকু সেই কাজেই ব্যয় করবেন।
সোবাহান সাহেবের শ্যালকের বয়স যখন সাত বছর তখন থেকেই তিনি এই পরিবারের সাথে। মৃত্যুকালীন সময়ে তার বাবা বেশ কিছু টাকা রেখে যান তার জন্য তার দুলাভাইয়ের কাছে। পাগলাটে শ্যালককে তার পাওনা বুঝিয়ে দিতে ভয় পাচ্ছিলেন সোবাহান সাহেব, পাছে সে অনর্থক অপচয় করে শেষ করে ফেলে সব টাকা। তবুও যার পাওনা তাকেতো বুঝিয়ে দিতেই হবে। সময় এসেছে প্রকৃত মালিকের হাতে তার পাওনা হস্তান্তরের। সোবাহান সাহেব তার শ্যালক ফরিদের হাতে তার পাওনা টাকার চেক তুলে দিলে টাকার অঙ্ক দেখে সে বিশ্বাস করতে পারছিলো না এত টাকার মালিক সে।
সাদাসিধে পাগলাটে ফরিদের এত টাকা পেয়ে মাথা খারাপ। পরিবারের সবাইকে জনে জনে জিজ্ঞেস করতে থাকে কারো কোন অপূর্ণ ইচ্ছে আছে কিনা। বাড়ির কাজের লোক ইচ্ছে পোষণ করে দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়ার, তিনি সাথে সাথে তা পূরণ করে। গ্রাম থেকে আসা সেই দাদার নাতনী প্রতিদিন হেঁটে কলেজে যায় তাই তার জন্য নতুন রিকশা কিনে দেন ফরিদ সাহেব।
এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল তাদের। হঠাৎ একদিন খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন সোবাহান সাহেব। পরিবারের সবার সেবায় মৃত্যু পথযাত্রী সোবাহান সাহেব আবারো ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেন। সুস্থ হয়ে তিনি বাকী জীবন কাটিয়ে দেয়া সেই কাজ আবার শুরু করেন ১৯৮৯ সালের ২৬শে মার্চ। বাংলার গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটতে শুরু করেন। লক্ষ্য ১৯৭১ সালের ত্রিশ লক্ষ শহীদের নামের তালিকা তৈরী। অপরদিকে ফরিক সাহেব তার অর্থ কাজে লাগানোর একটি উপায় খুঁজে পান। তিনি একটি চলচিত্র নির্মাণ করবেন। যার নাম হবে, "তুই রাজাকার।"
গত তিনদিন যাবত একটানা দেখলাম প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ স্যারের রচিত ধারাবাহিক নাটক "বহুব্রীহি"। প্রথমে নিতান্তই হাসির নাটক দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে নাটকটি দেখতে বসে, পরবর্তীতে নাটকের প্রতিটি সংলাপে মধ্যে ডুবে যেতে লাগলাম। হারিয়ে যেতে লাগলাম কোন এক স্বপ্নের ভূবনে। ভাবতে শুরু করলাম এই যে, নব্বইয়ের দশকে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে এভাবে কৌশলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। প্রচন্ড হাস্যরসের মাঝে একাধিকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন আমাদের জাতির সবচেয়ে গৌরবের অধ্যায়টুকু, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কথা। একটি সংলাপে, ভাড়াটিয়া আনিস ছেলেটা সোবাহান সাহেবকে বলে, "এই দেশে একটু খুন করলে তার শাস্তি হয়, কিন্তু ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করলে সে সমাজের উঁচুস্তরে বসবাস করে।" স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে আজও এই কথাটি সত্য, যা হুমায়ুন আহমেদ স্যার লিখে গেছেন আরো ২৫ বছর আগে। ভারতীয় সকল সিরিয়ালের চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিয়ে এই ধরণের নাটকগুলোই প্রচার করা উচিত দেশী বিভিন্ন চ্যানেলে বার বার।
"এই দেশে একটু খুন করলে তার শাস্তি হয়, কিন্তু ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করলে সে সমাজের উঁচুস্তরে বসবাস করে।"
"এই দেশে একটু খুন করলে তার শাস্তি হয়, কিন্তু ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করলে সে সমাজের উঁচুস্তরে বসবাস করে।" ঠিক ! ১০০% ঠিক !
ব্যবসায়ী হ্মায়ুন জহিরকে হত্যা করিয়েছিলেন যে আক্তারুজ্জামান বাবু, পাঁচ বছ্র গা ডাকা দিয়ে থেকে শেষ প্র্যন্ত আ লী 'র আম্লে বেক্সুর খালাস পেয়ে জীবনের শেষ ক'বছ্র প্রব্ল প্রতাপের সাথে জাপ্ন ক্রেন !
মানুষ হত্যাকারী ২০ ফাঁসির আসামিকে আমাদের মহামান্য সাবেক রাষটপ্তি নিরদ্বিধায় মাফ ক্রে দেন !
ঢাকা ভারসিটির চাঞ্চল্যক্র সাত হত্যাকান্ডের আসামিরাও জিয়ার কারণে মুক্তি পেয়ে আবারো রাজনীতিতে প্রতিষ্টিত !
লেখার জন্য ধ্ন্যবাদ ! ভাল থাকুন "এই দেশে একটু খুন করলে তার শাস্তি হয়, কিন্তু ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করলে সে সমাজের উঁচুস্তরে বসবাস করে।" ঠিক ! ১০০% ঠিক !
ব্যবসায়ী হ্মায়ুন জহিরকে হত্যা করিয়েছিলেন যে আক্তারুজ্জামান বাবু, পাঁচ বছ্র গা ডাকা দিয়ে থেকে শেষ প্র্যন্ত আ লী 'র আম্লে বেক্সুর খালাস পেয়ে জীবনের শেষ ক'বছ্র প্রব্ল প্রতাপের সাথে জাপ্ন ক্রেন !
মানুষ হত্যাকারী ২০ ফাঁসির আসামিকে আমাদের মহামান্য সাবেক রাষটপ্তি নিরদ্বিধায় মাফ ক্রে দেন !
ঢাকা ভারসিটির চাঞ্চল্যক্র সাত হত্যাকান্ডের আসামিরাও জিয়ার কারণে মুক্তি পেয়ে আবারো রাজনীতিতে প্রতিষ্টিত !
লেখার জন্য ধ্ন্যবাদ ! ভাল থাকুন !
ভাল লাগলো লেখা।
মন্তব্য করুন