সিঙ্গারা, বেলা বিস্কুট আর ভূনা কালো গোশতের গপ্পো
কোনো একটা সময় চট্টগ্রাম শহরের পাশাপাশি দুটি পার্বত্য জেলায় কাজ করতাম। হাটহাজারি, নাজির হাট, দিঘি নালা, মাটিরাঙ্গা, খাগড়াছড়ি, লিচু বাগান, কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গামাটি... এসব এলাকায় ছিলো আমার কাজ। সে এক সময় ছিলো। পাহাড়ে তখন শান্তিবাহিনীর রাজত্ব। তাদেরকে দমানোর জন্য ছিলো সেনাবাহিনী। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছিলো না। তারপরও চাকরীর প্রয়োজনে আমাকে সপ্তাহে একবার পাহাড়ে রাত্রিযাপন করতে হতো। সারা রাত ভয়ে থাকতাম। ঠিকমত ঘুম হতো না। তবু যেতে হতো সে এলাকায়। চাকর বলে কথা।
চট্টগ্রাম শহরের কয়েকটা উল্লেখযোগ্য স্থান ছিলো। সুযোগ পেলে সেখানে সময় কাটাতাম আমি। এর মধ্যে বাটালি হিল ছিলো প্রধান পছন্দের জায়গা। চুপ চাপ বসে থাকতাম বাটালি হিলের উপর। এতটাই উপর যে, শহরের প্রায় পুরোটাই দেখা যেতো। আমার আবাস ছিলো, স্টেডিয়ামের উল্টোদিকে। বাংলা হোটেলে থাকতাম একটা রুম মাসিক ভাড়া নিয়ে। নিউমার্কেটের দ্বোতলায ছিলো একটা রেস্টুরেন্ট। ডায়মন্ড হোটেল টাইপ নাম। সেখানকার সিঙ্গারা ছিলো দারুন। নিউমার্কেটের উল্টোদিকে বিএনপি নগর কার্যালয়। তার পাশেই ছিলো 'ক্যাফে জামান'। এই হোটেলের দুটি খাবার বেশ সুস্বাদু ছিলো। কাচ্চি বিরিয়ানি আর গরুর ভূনা গোশত বা কালো গোশত যাকে বলা হতো। স্রেফ অসাধারণ ছিলো রান্না। সম্প্রতি শুনেছি, ক্যাফে জামানের অনেকগুলো শাখা হয়েছে চট্টগ্রাম শহরে। যেমনটি আমাদের ঢাকার স্টার কাবাব। এবং সবচেয়ে দুঃখের বিষয় সেই কালো ভূনা গরুর গোশত নাকি এখন আর পাওয়া যায় না ক্যাফে জামানে।
চিটাগাং ছেড়ে যতবার বাসায় আসতাম, দুটো জিনিস আনতামই। এক: গনি বেকারির বেলা বিস্কুট। দুই: লইট্যা/ছুরি/রুপচান্দা শুটকি। হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ পেরিয়ে আসলে মোড়ে ছিলো গনি বেকারি। বিশাল দোকান।
বহদ্দার হাট থেকে চবি যেতে আতুরার ডিপো নামে একটা জায়গা ছিলো। যেখানে ছিলো ফাতেমা আপাদের বাসা। সেই বাসায় কত আড্ডা মেরেছি। ফাতেমা আপার মেয়ে মুন্না। কিছুদিন আগে তার সাথে দেখা শ্রীমঙ্গলে। কুটুম বাড়ি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে। সেই মুন্না এখন রীতিমত মহিলা। ওকালতি করে শুনলাম। সময় কত দ্রুত পাল্টে যায়।
চবি থেকে একটা সার্টিফিকেট তোলার দরকার ছিলো। সেটা আনতে গিয়ে ২/৩ দিন ছিলাম চট্টগ্রামে। বায়েজিদের বাসায়। সে তখন চবিতে পড়ে। ভালো সংগঠক ছিলো। বায়েজিদ নাঈম। আরটিভিতে কাজ করে এখন। আমার বড় বোনের ছেলে তূর্য ও পড়তো চবিতে। চবিতে গেলে মনটা খুব ভালো হয়ে যেতো। এত্ত সুন্দর পরিবেশ ছিলো। প্রকৃতি, পাহাড়, টিলা, সমতল ভূমির এত চমৎকার কম্বিনেশন ! শুধু জামায়াত-শিবির মানে রাজাকারের ছানা পোনাদের জ্বালায় ক্যাম্পাসে কেমন একটা ভুতুড়ে পরিবেশ থাকতো সব সময়। চবিতে আরো পড়তো- মাইনুল এইচ সিরাজী আর সোনালী চাকমা। সোনালী পাহাড়ি মেয়ে। খাগড়াছড়ির বাসিন্দা। আমার প্রথম পাহাড়ি বন্ধু।
বাটালি হিল যেতে প্রায়ই একটা দোকান থেকে টুকটাক জিনিসপত্র কিনতাম। অন্য কারোনে নয়, দোকানটার নামই আমাকে টানতো। লালখান বাজারের 'ফুলেশ্বরী'- সে দোকানের নাম। এখনো কি আছে সেটি ?
বাইরের জেলা থেকে গিয়ে দুটি ছেলে থিতু হয়ে যায় চিটাগাংয়ে। দুজনের বাড়িই সিলেট। একজন তানভীর শাহরিয়ার রিমন। অন্যজন আসিফ মনি। রিপন হাউজিং কোম্পানিতে আর আসিফ শিপিং লাইনে। চাটগাঁর একটি ছেলের কথা না বললেই নয়। এই ছেলেটির জীবনের সোনালী দিনের বেশির ভাগটাই কেটেছে খুলনায়। পড়তো খুলনা মেডিকেলে। তারপর একসময় ঢ়রের ছেলে ঘরে ফিরে যায়। ডা.এনামুল হক এনাম।
চট্টগ্রাম বেড়াতে যাই না কতদিন। চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন কত্ত জায়গায় যাই... কিন্তু চট্টগ্রাম আর নামা হয় না। কত মানুষের কত অভিযোগ, অনুযোগ, অভিমান... কী করে বলি তাদের, সময় হয় নারে বন্ধু। সময় পেলে সুযোগ হয় না... তোদের খুব মিস করি প্রিয় চট্টলাবাসী। মিস করি, ডায়মন্ড হোটেলের সিঙ্গারা, ক্যাফে জামানের ভুনা কালো গরুর গোশত, গনি বেকারির বেলা বিস্কুট, রিয়াজুদ্দিন বাজার (অামতলা) থেকে কেনা লইট্যা/রুপচান্দা আর ছুরি শুটকি...
রোজার দিনে এত খাওয়ার গল্প কেন? খুধা লাগছিলো? আমার তো দুইদিন ধরে ক্ষুধা লেগে যায়, এখন পোষ্ট পড়ে পেটের ভেতর মোচড়াইতেছে।
মন্তব্য করুন