হায়রে মানুষ, রঙ্গীন ফানুশ
স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টি করার পর বলেছেন, মানুষ তার সৃষ্টির সেরা জীব। সেই মানুষ আমরা। আশরাফুল মাখলুকাত। কত নিচ আর জঘন্য মানসিকতার প্রকাশ ঘটাই আমরা। হিংসা-বিদ্বেষ-কুটিলতায় ভরপুর আমাদের এক একজনের ভেতর জগত। কোনো না কোনো সময় সেটা বেরিয়ে আসে আমাদের আচারণে।
একটা প্রবাদ আছে, কাউকে ভালো বলার আগে নিশ্চিত হয়ে নাও, তুমি তার সাথে দুটো কাজ করেছো কি না ? এক: একই খাটে/রুমে তার সাথে রাত্রীযাপন। দুই: তার সাথে ভ্রমণ। কেউ কেউ আবার তিন নম্বর একটা কথাও বলেন। সেটা হচ্ছে: আর্থিক লেনদেন করা। তাহলে নাকী মানুষ চেনা যায়। বলা যায়, মানুষটা খারাপ না ভালো ? আদতে কি তাই ? এত্ত সহজ উপায়ে কাউকে বলা যায় যে, সে ভালো বা সে খারাপ ! নাকী বলা উচিত ?
আমরা যেখানে বছরের পর বছর ধরে সংসার করেও বুঝতে পারি না বউ বা জামাইকে। সেখানে কেবল কারো সাথে ঘুরে, রাত কাটিয়ে বা টাকা লোন দিলেই বোঝা যাবে, মানুষটা কেমন ! সবচেয়ে সত্যি কথা হলো, আমরা আসলে কি নিজে 'নিজেকে' চিনি ? বুকে হাত দিয়ে কি বলতে পারবো- আমি এমন বা তেমন ! বুঝতে চাইবার জন্যে মানব চরিত্রের মত জটিল বোধ করি আর কিছু নেই।
অনেক শক্ত শক্ত কথা লিখে ফেলেছি। এত কঠিন টাইপ লেখা আমার সাথে যায় না। তারপরও লিখে ফেললাম। দেখলেনতো, আপনি বা আপনারা আমাকে যেভাবে চিনেন- আমার এ লেখাটা কি 'সেই আমি' কে রিপ্রেজেন্ট করে ? মোট্টেও না। তাহলে আপনাদের কেউ যদি বলেন, আমাকে চেনেন- সেটা কি ঠিক হবে ?
সত্যি বলতে কী, প্রতিটা মানুষের মধ্যেই কিন্তু একাধিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট বিরাজমান। ভালো আর মন্দের মিশেল হচ্ছে মানব চরিত্র। মানব চরিত্র হচ্ছে বেজায় রহস্যময়। তার মধ্যে নারী চরিত্রতো আরো অনেক অনেক বেশি রহস্যময় (নারীকূল ক্ষমা করবেন)। এনারা আচার-অচরণ-বৈশিষ্টের দিক থেকে মাশাল্লাহ। সকাল-দুপুর-বিকেল-সাঁঝবেলা-রাতে সময়ের সাথে সাথে এনাদের আচরণগত এত বেশি ভিন্নতা যে, মাঝে মাঝে এনারা নিজেরাই অবাক হয়ে যান।এর জন্য এনারা যতটা দায়ী, পাশাপাশি ঈশ্বরও কম দায়ী নন। নারীদের কিন্তু একই অঙ্গে অনেক রুপ খোদ স্রষ্টাই করে দিয়েছেন। কথায় বলে না, নারী মানে হচ্ছে, কন্যা-জায়া-জননী।
নাহ মেলা ভারী কথা হলো। আর নয়। এবার নিজের গল্প বলি। অফিসে আমার বসার রুমটি বেশ সুন্দর। ছয় তলার এক্কেবারে কোনার রুম। নিচে তাকালে দেখা যাচ্ছে, সারি সারি দামী গাড়ি ছুটে চলছে। কোনোটা বনানীর দিকে। আবার কোনোটা গুলশান দুই নম্বর গোল চক্কর হয়ে ডানে (গুলশান এক), বাঁয়ে (বারিধারা), সোজা (আমেরিকান অ্যাম্বাসি) ছুটছে। বৃষ্টি হলে রুমের বিশাল গ্লাস দিয়ে দেখতে পাই। এই যেমন এখন টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। আহ, গ্লাস না হয়ে যদি এটা বারান্দার রেলিং হতো ! বৃষ্টির ছোঁয়া নেওয়া যেত। রুমের ভেতর যা যা থাকার মোটামুটি সবই আছে। শুধু একটাই সমস্যা... সিগারেট খেতে পারি না। সেই নিচে নেমে আরও ১০০ গজ হেঁটে তারপর সিগারেট খেতে হয়। সে কারণেই বোধ করি সিগারেট খাওয়া কমেছে ক্ষাণিকটা।
এই যা, সিগারেটের কথা বলতে গিয়ে মনে পড়লো, দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে এখনও সিগারেট খাইনি। এইটা কোনো কথা হলো ? যাই, মুখাগ্নী করে আসি। তার আগে শেষ কথাটা বলে যাই। ওই যে বললাম, প্রতিটা মানুষের ভেতরই একাধিক জনের বাস। আমিই বা এর ব্যতিক্রম হবো কেনো ? আমিও তো মানুষ ! তবে আমি জানি আমার ভেতরে কাদের বাস। এই জানা নিয়ে আরেকটি মূল্যবান কথা মনে পড়লো। কোনো এক জ্ঞানী বলে গেছেন- " আমি জানি যে, আমি জানি না। তিনি জানেন না যে, তিনি জানেন না।"
সবশেষে আমার ভেতরের দুটি চরিত্রকে বের করে আনি আজ, সবার সামনে। এই ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে...
'হিমু' এবং 'মিসির আলি'
আমার ভেতর বাস,
দিনে দিনে দুজন আমার
করছে সর্বনাষ !!
ভুলে ভরা চিঠি আর
ঝুলে ভরা কুঠি
পেন্টুশ নামে ছিল
এক সহপাঠী,
স্কুলে।
বড় বড় চোখ আর
খুব বেশি রোখ
তবু তার সাথে ছিল
বেশ ভাবজোক,
ভুলে।
আজ দূর থেকে দূরে
গিয়ে খুব সরে
নস্টালজিয়া
ফিল করে,
হুদাহুদি।
জানি অপচয় করা
কোনো ভাল কাজ না
তাও করে ফেলি ঠিকই
সময় ধরা দেয় না,
ওরে খেদি।
আয় চুলে ধরে মুঠে
দিয়ে কিল তোর পিঠে
জামার কলারটা টেনে
কাছে এনে তোর ঠোঁটে
চুমু দি।
সর্বনাষে হয়েছে বানানের সর্বনাশ!
মন্তব্য করুন