অদৃশ্য দানব (প্রথম পর্ব)
১৯৯১ সালের ৩রা মার্চ, সকাল ৯টা বেজে ৪০ মিনিট। ২০ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রু নিয়ে বিমানটি ডেনভার থেকে ১৭ মিনিটের যাত্রা শেষে ইউনাইডেড এয়ারলাইন্স ফ্লাইট ৫৮৫ বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি কলোরাডো স্প্রিংসে অবতরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। জ্বালানী সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিমান হিসেবে বোয়িং ৭৩৭ একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় যাত্রীবাহী বিমান হিসেবে সুপরিচিত। সারা পৃথিবীতে এই জাতীয় বিমান বছরে ১২ বিলিয়নেরও বেশী যাত্রী পরিবহন করে থাকে।
পরিস্কার ঝকঝকে আলোকোজ্জ্বল দিনটি বিমান ভ্রমণের জন্য দিনটি দৃশ্যতঃ আদর্শ হলেও বাতাস বলছিলো অন্য কথা। সেদিন স্বাভাবিকের চাইতে বাতাসের বেগ অনেক বেশী ছিলো, বিমানটি থেকে থেকে দুলে উঠছিলো উত্তাল সাগরের মাঝে ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকার মত।
"এমন একটা সুন্দর দিনেও আবহাওয়ার এমন অবস্থা, ভাবা যায়?" - কো-পাইলট প্যাট্রিসা আইডসনকে বললেন ক্যাপ্টেন হ্যারল্ড গ্রীন। "কলোরাডো স্প্রিংস কি আমাদের অসুস্থ করে ফেলবে নাকি এবার?"
৫২ বছর বয়স্ক ক্যাপ্টেন গ্রীন গত ২০ বছর থেকে বিমান চালনায় নিজের দক্ষতার প্রমান দিয়ে আসছেন। কো-পাইলট প্যাট্রিসা আইডসন ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের প্রথম সারির একজন মহিলা পাইলট।
কলোরাডো স্প্রিংস মিউনিসিপাল এয়ারপোর্টে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার জেমস রেইফিল্ড ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ৫৮৫ কে অবতরনে সাহায্য করতে তৈরী হলেন। "ইউনাইটেড ৫৮৫, তোমাদের রানওয়ে ৩৫'এ অবতরনের অনুমতি দেয়া হলো" রেডিওতে বললেন জেমস। ক্যাপ্টেন গ্রীন তখন তার সহকারীকে ল্যান্ডিং গিয়ার নামিয়ে দেবার সংকেত দিলেন, প্যাট্রিসা ব্যাস্ত হলেন তার কাজে।
রানওয়েতে অবতরনের জন্য বিমানটি যতই নীচে নামছিলো ততই ঝাঁকি বেড়ে যাচ্ছিলো। তাই প্যাট্রিসা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের কাছে জানতে চাইলেন অন্য বিমানগুলোও ল্যান্ডিংয়ের সময় এই ধরনের সমস্যায় পড়েছে কি না। জেমস জানালেন ৫০০ ফিট উচ্চতায় ৫০ নট গতি কমে গেছিলো, ৪০০ ফিট উচ্চতায় ৫০ নট গতি বেড়ে গেছিলো আর ১৫০ ফিট উচ্চতায় ২০ নট গতি বেড়ে গিয়েছিলো কোন কোন বিমানের।
"এডভেঞ্চারাস লাগছে - কি বলেন?" হাসিমুখে ক্যাপ্টেনকে বললেন প্যাট্রিসা।
এয়ারপোর্ট থেকে ৩ কিলোমিটারের মত দূরে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার হ্যারল্ড ডোনাল্ড তার গাড়ীতে করে কাছের বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এক কিলোমিটার ওপরে থাকা ইউনাইটেড ৫৮৫ বিমানের ক্রুরা বাতাসের বেগ সামলে বিমানের গতি স্থিতিশীল রাখার চেষ্টায় ব্যাস্ত ছিলেন। "বাতাসের বেগ আগের মতই আছে দেখছি" ক্যাপ্টেনের দিকে তাকিয়ে বললেন প্যাট্রিসা। "হুম ... আমি জানি। তাই ইঞ্জিনের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছি" - অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন থ্রোটলটা সামনে ঠেলে দিলেন একটু।
ইউনাইটেড ৫৮৫ রানওয়ের যখন রানওয়ের ওপর, তখন নীচে গাড়ীতে থাকা হ্যারল্ড ডোনাল্ড অনুভব করলেন প্রচন্ড বাতাসের ধাক্কায় তার গাড়ী রাস্তা থেকে ছিটকে পড়ে যাবে যেন "এত বাতাস কোথা থেকে এলো হঠাৎ?"। দ্রুত ব্রেক কষে গাড়ীটি থামিয়ে ফেললেন তিনি।
কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে জেমস রেইফিল্ড বাইনোকুলার দিয়ে বিমানটিকে দেখছিলেন। তার দৃষ্টিতে স্বাভাবিক ভাবেই বিমানটি এগিয়ে আসছিলো রানওয়েতে অবতরণের জন্য। কিন্তু বিমানটি যতই নীচে নামছিলো, ঝাঁকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছিলো ততই। তারপর হঠাৎ করেই বিমানটি ডান দিকে কাত হয়ে যেতে লাগলো। পাইলট প্রানপণে বিমানের নিয়ন্ত্রন ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তির টানে বিমানটি কয়েক পাক ঘুরে সোজা মাটির দিকে নেমে এলো ও বিধ্বস্ত হলো।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার জেমস রেইফিল্ডের চোখে তখনও বাইনোকুলার, তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন - "ক্রাশ ক্রাশ!!!" তার গাড়ি থেকে কিছু দূরেহ্যারল্ড
ডোনাল্ড প্রত্যক্ষ করলেন একটি প্লেন ক্রাশ।
উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেলেন দ্রুতই। কিন্তু মাটিতে বিমানের
কাঠামোর তেমন কোন বড় খন্ড তখন আর চোখে পড়ছিলো না। ৩৮ টন ওজনের বিমানটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই। ২০ জন যাত্রী ও ৫ জন ক্রুর সকলেই নিহত হয়েছিলেন সংঘর্ষ এবং জেট ফুয়েলের বিষ্ফোরনে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননায় বেড়িয়ে আসে দুর্ঘটনার ভায়াবহ চিত্র। তারা বলেন - বিমানটি খাড়া ভাবে আকাশ থেকে নীচে নেমে আসে এবং বিধ্বস্ত হয়।
মাত্র ১০ সেকেন্ডের ব্যাবধানে কলোরাডো স্প্রিংস বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসের একটি রহস্যময় স্থানে পরিনত হয়।
{ ক্রমশ ... }
====================================
ন্যাশনাল জিওগ্রাফী চ্যানেলের জনপ্রিয় সিরিজ "এয়ার ক্র্যাশ ইনভেষ্টিগেশনের" একটি পর্বের ধারাবর্ননা।
ভয়ঙ্কর আর রহস্যময়
জ্বি স্যার
এগুলো ভিডিও ফুটেজ ছাড়া শুধু বর্ননায় পুরোপুরি ফুটিয়েতোলা বেশ কষ্টসাধ্য
জ্বি জনাবা
জনাব এর স্ত্রী লিঙ্গ বেগম; জনাবা মানে মহিলা শুয়োর
চলুক
তেল নাই
কঠিন কাজে হাত দিলেন
ধাক্কাইতে থাকেন, নিশ্চই পার হইয়া যাব
থেঙ্কু
...ওয়াহ, ওয়াহ, কাগু দেখি পাংখা জিনিষ বাইর করলা...বাচ্চালোগ, তালিয়া...
আইচ্ছা, এত্ত বড় বিমান টায় মাত্র ২০ জন নিয়া ফ্লাইট চালাইলো? কেমন জানি, না?
থ্যাঙ্কু ভাতিজা
বিমানটাতে ৩৮টা সিট ছিলো ... বড় বিমান না।
পপকর্ণ না থাকায় বাদাম লৈয়া বৈলাম
ঘুম পাইলে ঘুমাইয়া যাইয়েন, সমস্যা নাই
চলুক
ক্যামনে চলবো? তৈল নাই
ভিড্যু দেখতাম চাই।
সবডা একসাথে পড়ুম ...
পড়তে চাই না আসলে। যতোবার প্লেনে চাপি মনে হয়, এ যাত্রায় শেষ নয়তো? সড়ক বা নৌ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়ার কোন আশা থাকলেও আকাশ পথে তা নাইই বল্লেই চলে
এই লেখাটা চোখ এড়ায় গেল কিভাবে? দেরিতে হলেও পড়ছি।
আমি একটা সময় এই 'এয়ার ক্রাশ ইনভেস্টগেশন'-এর নিয়মিত দর্শক ছিলাম। কিন্তু নিয়মত দেখতে দেখতে একটা অনুভূতি মাথায় ঢুকে গেল যে, প্লেন জার্নি মানেই অ্যাক্সিডেন্ট। শেষমেশ জোর করে দেখা বাদ দিয়েছিলাম, কারণ জানতাম কিছুদিন পর নিজেকেও বিমানে উঠতে হতে পারে।
মন্তব্য করুন