মোবারকঃ শেখার সুযোগ খালেদা-হাসিনার
আনোয়ার সাদাতের দল এনডিপি অনেকটা সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি এর মতো গঠিত হয়েছিল ।ক্ষমতায় থেকে মসনদি হাতিয়ারের তেলেসমাতিতে জন্মে যায় এনডিপি । রাষ্ট্র আর দল যেন একই জিনিস বরং দ্বিতীয়টার গুরুত্ব বেশি, রাষ্ট্র যেন এক সম্ভ্রম হারানো আসহায় নারী । ১৯৭৮ সালে দলের প্রতিষ্ঠা করে ১৯৮১ তে আনোয়ার আল সাদাতের করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়। দলটা দাঁড়িয়ে যায়, দাঁড়াবেই তো , অনেক অর্থ প্রাচুর্যের দল যে ওটা, সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মানো দল যে ওটা ।এনডিপি কেবল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টিই নয় এই দল তাত্ত্বিক ভাবে মিশরীয় জাতীয়তাবাদের প্রচার প্রসার আর অন্তরে ধারণের প্রধান বাহক। আমাদের বিএনপিও মসনদি মমতায় গড়ে উঠে ১৯৭৮ এ আর ১৯৮১ তে মহান প্রতিষ্ঠাতার দুঃখজনক পরলোক গমন, কিন্তু দলটির শক্তিশালী অবস্থান যথারীতি আর দাবীর বলে তারাও আমাদের জাতীয়তাবাদের অভিভাবক ।
যা হোক বিকেলে শুনলাম হোসনে মোবারক কোটি জনতার দাবী উপেক্ষা, অবজ্ঞার সাধ্য আর টিকিয়ে রাখতে পারেননি।যেতে হল, ১৭ দিনের মাথায় ৩০ বছরের বাস্তবতা কেবলই স্মৃতি। প্রিয় মিত্র আমেরিকা আর ইজরাইল তৃ্তীয় দিন থেকেই মোবারককে এতিম করে ফেলেছিল । মুসলিম ব্রাদার হুডকে নিয়ে পশ্চিমাদের রিসার্চে সময় লাগায় ১৭ দিনের মাথায় বরফ গলেছে । কার্যত পশ্চিমারা মোবারককে জোর করে ধরে ছিল এ ১৭ টা দিন বিকল্পের খোঁজে । আমার এ লেখার উদ্দেশ্য এগুলো নয়। এনডিপি নিয়ে ভাবতে চাইছি মাত্র । বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতোও এ দলও মিশরের প্রত্যেকটি অঞ্চলে কম বেশি শক্তিশালী, এ দলেরও হাজার হাজার নেতা কর্মী রয়েছে । কিন্তু ঠিক বাংলাদেশের মতোই এই দলটির বিন্যাসে বৈচিত্রে কোন সংস্কার নাই, কর্মীদের মধ্যে অব্যাহত হতাশা বিদ্যমান । রাজনৈতিক আদর্শ কাগজে লেখা কিছু বাক্য মাত্র । প্রতিপক্ষ ঘায়েল,জুলুম, হয়রানি করা দলটির কর্মীদের প্রধানতম কাজ। দেশটির সিংহ ভাগ মানুষই অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জনে আগ্রহী ।ওখানেও গামাল মোবারক ছিলেন জয়-তারেকের বেশে ।যা হোক এ লেখার উদ্দেশ্য এমন লঘু-গুরু বিশ্লেষণ নয়, ভাবছি বিগত ৩০ বছরের রাজনৈতিক সাধারণ কর্মীদের নিয়ে।
এনডিপি এর সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের যে অংশটা আদর্শের মধ্যে থেকে রাজনীতি করেছে, দেশকে ভালোবাসাছে মায়ের মতো,মানুষকে শ্রদ্ধা করেছে দেবতার মতো আজ মোবারক তাদের কোন জায়গায়, কোন অবস্থানে, কোন পরিস্থিতিতে ফেলে গেলো। একটা মানুষের জন্য তাদের ভালোটুকুর মূল্য কোথায় যাবে ? জাতীয়তাবাদকে দাস বানিয়ে যে ব্যক্তি উন্মত্ত হয়ে ৩০ বছর খেলেছে আজ তার জন্য তাদের কি হবে যারা দলীয় আদর্শে জাতোয়তাবাদকে ধর্ম মেনেছে ? আজকের মিশরবাসী কি তাদের জাতীয়তাবাদ প্রেমকে স্বীকার করে নেবে ? করবে না, তারা সবাই সধারণের চোখে এক একটা মোবারক। এক মোবারক দিনের পর দিন কিভাবে ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক বিকাশকে পঙ্গুত্বে পরিনত করেছে । একটি দলের ৩০ বছর হতে পারে এক ব্যক্তির হতে পারে না , আজকের পৃ্থিবীর জন্য এটাই বড় শিক্ষা ।
আমার এক সহকর্মীকে ফোন দিলাম বিকেলেই যে তাহরীর স্কয়ারে আছে গত ৯ দিন থেকে।ছুটি নিয়ে যাবার সময় বলেছিল-- মোবারক টিকে গেলে আমি আর বেঁচে থাকার লোভ করব না। মাঝে একদিন ফোন করে জানতে চাইলাম-- কি করে আছো খোলা মাঠে ? খুব কৌতুহলী ছিলাম, সে চটপট করে বলল-- কেন? আমি মিশরের গর্বিত সন্তান আমি মহান পতাকা গায়ে জড়িয়েই মরব। আমি তার এ নির্ভয় ক্রোধের মানে খুঁজে পেতাম না । আজ তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বললাম - আচ্ছা মোবারকের দলের কর্মীদের কী অবস্থা ?- তার উত্তর- মিশরের আজকের পবিত্র ইতিহাস আমাদের রক্তে লেখা হচ্ছে, জালেমদের কোন জায়গা নেই এখানে, আমরা বেঈমান্দের ঘৃ্না করি । আমি ফোন রেখে ভাবলাম কী দরকার ছিল এই জার্মানীতে লেখাপড়া করা ৩২ বছরের তরুণের চাকুরী ছুটি নিয়ে মোবারকের পিছে লেগে যাওয়ার ! শখের স্পোর্টস কার চালিয়ে মোটা মাইনের বেতনে মিশর থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে তো সে ভালোই ছিল ! মোবারক তার কি করেছে ???
করেছে । ৩০ বছর জাতীয়তাবাদী খেল খেলেছে ।প্রিয় খালেদা-হাসিনা আপনারা শিখে নিন মোবারক আর মিশরকে দেখে, আপনাদেরও নেতা কর্মী আছে, বিকশিত হতে দিন রাজনীতিকে ।
কারণ আমার মতো দূর্বল মানুষও আব্দুল্লাহ হোসেন রাফাতের কাছ থেকে উৎসাহ পায়---------
(লেখাটিকে কোন কারণে যদি মনে হয় যে তা ব্লগের নীতি লংঘন করেছে তবে ক্ষমা করবেন)
চমৎকার বিশ্লেষণের জন্য ধন্যবাদ লেখককে। আমার মিশরী বন্ধুরাও আনন্দে আত্মহারা। তবে আমাদের দেশে মুবারকের মতো একনায়কের সম্ভাবনার কবর রচিত হয়েছে এরশাদের পতনের মধ্য দিয়েই। আমাদের মূল সমস্যা হলো আম-জনতার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনার অভাব, এবং সচেতনদের মধ্যে সক্রিয়তা, দিকনির্দেশন্ নেতৃত্বগুণের অভাব। স্বাধীনতার পর থেকে নব্য ধনিক শ্রেনীর উত্থান এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ দেশটিকে ক্রমশ কৃষ্ণ গহবরের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। খালেদা-হাসিনার বিষয়ে একটা কথাই প্রযোজ্য-- ইউ ক্যান্ট টিচ অ্যান ওল্ড ডগ নিউ ট্রিকস।
মামুন ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে ।
আমাদের দেশে এক নায়ক নাই সত্য তবে দেশকে যতোই খারাপ জায়গায় নিয়ে যাক না কেন দুই দলই তো একের পর এক দেশ শাসন করছে । আমরাও মিশরের মতো একটা পরিস্থিতিতে আছি ।আমাদের ধনী দরিদ্রের ফারাক মিশরের চাইতে বেশি, কেবন সামাজিক
বন্ধন জোরালো তাই টিকে আছে গরীবেরা।
খুবই সত্য কথা এটা ।
সহমত।
ধন্যবাদ
পোষ্টটি ভালো লাগলো। কামনা করি আমাদের মতো মিশরীয়দের গণতন্ত্রায়নে হতাশ হতে না হয়।
মিশরের গনতন্ত্রের ডিজাইন ইজরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র করে দেবে কারণ ওখানে রাজনৈতিক কোন শক্তি নাই। বাংলাদেশের চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায়না । আমরা গণতন্ত্রায়নে দুনিয়ায় খুব বাজে উদাহরণ, মুক্ত বাজারের এ বিশ্বে নতুন করে এ পথে হাঁটা এতো সহজ নয় ।
পোস্ট ভালো লেগেছে বলে ধন্যবাদ ।
গত বছর মিশর গিয়েছিলাম। সেখানে ধনী আর দরিদ্র্যদের বৈষম্য এতো প্রকট দেখে অবাক হয়েছিলাম। মানুষজনও দেখেছিলাম বিরক্ত।
কিন্তু আমাদের নেতারা শিক্ষা নেবেন? সেই প্রত্যাশা এখন আর করি না।
মাসুম ভাই তা হলে আমরা কিসের প্রত্যাশা করব এখন ?
আমাদের বর্তমান ক্ষমতায় থাকাদের অনুসারীদের অনেক সময় (মোবারকের বিদায়ের আগে) বলতে শুনেছি, মোবারকের বিদায় হবে না। আরো কত কথা!
এখন তাদের মুখ কালো হয়ে আছে। ইতিহাস থেকে আমরা শিক্ষা নেই না, আমাদের মুখে কালো কালি লাগলেই বুঝি, লেগেছে! এই দুজন ও বুঝে নাই!
আমার মনে হয় এরা আগামীতে প্রধানমন্ত্রী নয়, রাষ্ট্রপতি হবার স্বপ্ন দেখছে!
হা হা হা হা হা
বরাবরের মতো মজার কমেন্ট তবে শক্তি আছে ।
ধন্যবাদ
এই জয় সাধারণ মানুষেরই জয়। আমার ভালো লাগছে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পেরে।
ধন্যবাদ
মন্তব্য করুন