ইউজার লগইন

ঘুমিয়ে থাকাই ভালো!

রোজা উপলক্ষে ব্যাপক ঘুমাচ্ছি। বন্ধু আদনান আমার এই ঘুমের ফর্ম দেখে ইর্ষা করে বলে 'আছ তো মিয়া সুখে। সকাল আটটায় অফিসে যেতে হয় না। মোহাম্মদপুর থেকে বাড্ডা গেলে বুঝতা ঠেলা কারে কয়।' আমিও জবাব দিতে ভুলি না। 'মাস শেষে যে পচিশ ত্রিশের মতো বেতন পান সেই টাকা তো আর আমি পাই না। আমি তো ঘুমাবোই- বেকার ভাতায় চালাই মাস'। তবে আমি মোটেও ঘুম ভালোবাসি না। প্রয়োজনের চেয়েও কম ঘুমিয়ে দিন কাটাতেই ভালো লাগে। কাজ না থাকলে ঘুমের চেয়ে জেগে থাকাই আমার কাছে ভালো। বসে থাকতেও ভালো লাগে চুপচাপ। কিন্তু রোজা এসে সব ভন্ডুল করে দিলো। সেহেরীর পর ঘুম আসে না, ঘুম আসে পাচটায় উঠি ১টা-২টায়। দশটা পর্যন্ত গভীর ঘুম, তারপর ক্রমাগত ঝিমাতে থাকি। অর্ধ জাগ্রত অবস্থায় অনেক ভাবনা মাথায় আসে সাথে হালকা স্বপ্ন টপ্ন। স্বপ্ন গুলোও দিনলিপির মতোই সাধারণ। ওতো ভয়াবহ স্বপ্ন বা খুব সুখের স্বপ্ন কেন জানি দেখাই হয় না অনেকদিন। তবে ঘুমিয়েই চলছি। রোজা বলে এরকম একেকটা দিন শুধু ঘুমিয়ে কাটাতে কি অসস্তি লাগে তা উঠার পরে বুঝি। কেমন জানি পিঠে ব্যাথা ব্যাথা করে। ঘুমানোটাও তো কম পরিশ্রমের কাজ না । ছোটোবেলায় ঘুম থেকে উঠলেই আমার খিদে পেতো প্রচন্ড। এখনো সেই অভ্যাস আছে, ঘুম থেকে উঠেই দুনিয়ার সব খাবার একা একা খেতে ইচ্ছা করি। কিন্তু রোজার দিন এমনিতেই তো ঘুম দিয়ে হালকা করি তাই খাবারের চিন্তা মাথা থেকে বিদায় করে দেই নিমিষেই। আর কয়টা দিন তারপরই তো অফুরন্ত খাবার আর পানাহারের সময়!

আজ অবশ্য অস্বাভাবিক মাত্রায় ঘুমালাম। এতো ঘুম আমার কোথা থেকে কিভাবে আসলো তা বুঝে পেলাম না। একজনের সাথে সকালে কাজ ছিলো ফোনই ধরলাম না ঘুম ভেঙ্গে গেলেও। খালি শুয়ে শুয়ে এসেমেসের রিপ্লাই দিলাম এক বন্ধুর। আধা ঘুম নিয়েই দারুন খুদেবার্তা বিনিময় হলো। আরেকদিকে আবার আমার বন্ধু সমানে ফোন দিতেছে। সে আবার ফোন দিতেছে অফিস থেকে আমি ধরছি না অনেক কলেও। ভালো লাগতেছিলো না কথা বলতে এই সাত সকালে। মন মর্জি মতো আমি চলি। যখন ইচ্ছা হয় ধরি - না হলে মরে গেলেও সেই কল আমি রিসিভ করি না। এক বন্ধু আমাকে দুই তিন ঘন্টা বসিয়ে রেখে সংসদের সামনে, আসে নাই এই জন্য আমি তার ফোনই ধরছি না ইদানিং। বেশী ফোন দেয় বলে ফেসবুক থেকেও ডিলেট করছি। তবে বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না আমি যে খুব রাগ করছি এইটা নিয়ে- তা না। তাও ফোন ধরি না। এও জানি একবার মুখোমুখি হলেই আমার সব রাগ পানি হয়ে যাবে, কারন বস্তুত আমি আবেগ নিয়ে চলা মাটির মানুষই। ওতো রাগ আমার শত্রুর জন্যেও বরাদ্দ নাই। আর আমার তেমন বলার মতো শত্রুও নাই।

যা বলছিলাম অফিস থেকে বন্ধু ফোন দিচ্ছে ধরছিনা। ইফতারের ঠিক আগে আগে ধরলাম। কারন শুনে মাথা হলো গরম। বন্ধুর মাকে কে জানি ফোন দিয়ে বলছে আমি শান্ত আমাকে চিনতেছো না? আন্টি তো পড়ছে ফাপড়ে। কারন শান্ত নাম উনার অতি পরিচিত। আর আমার গল্প বন্ধুদের সবাই ঘরে ঘরে করে। হয়তো আমি গল্প করার মতোই লোক। তাই বন্ধু আমাকে সারাদিন ফোন দিলো যে আমার ফোন থেকে কেউ কল করছে কিনা? আমার মেজাজ গেলো চটে। আমাকে কি এতোই উজবুক ভাবে লোকজন। চুপচাপ হজম করলাম, পরে ধরবো বলে। এই বাগড়া দেয়া ছাড়া ঘুমাইছি আজ শুধু শুধু এতো। দুপুরে উঠি একটু নেটে পত্রিকায় চোখ বুলালাম। মাওলা ভারসেস দরবেশ কাহিনী জানলাম খেলা, বিনোদন আর সম্পাদকীয় পড়লাম। গোসল ও নামায শেষ করে বই নিয়ে বসলাম। 'কেশে আঁড়ে পাহাড়' বইটা শেষ করলাম। কারেন্ট গেলো আমি টুপ করে ঘুমিয়ে পড়লাম আবার। বুয়া এসে রান্না করে দিলো তাও টের পেলাম না। ছয়টা বিশে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অভিসম্পাত দিলাম খানিকটা। কি আজাইরা একটা রোজার দিন গেলো। দশ বারো ঘন্টা এই শুয়ে ঘুমিয়েই। এগুলান করলে কি রোজা হবে নাকি কে জানে? তড়িগড়ি করে আছর নামায পড়ে চলে গেলাম ভাইয়ার অফিসে। অফিসে যেতে যেতে লেট। আজান পড়ে গেছে। গোগ্রাসে ইফতারী গিললাম। অনেকদিন পর অফিসে জামালের হাতে বানানো চা খেলাম। লেবু চা খেতেই অসহ্য লাগে তাও খেলাম। এক ভাইয়া ধর্ম নিয়ে সংশয়ী অবিশ্বাসের বয়ান দিলো। খুব একটা ভালো লাগে নাই। সব কিছুরই উত্তর বা মতামত ছিলো আমার কাছে কিন্তু আমি বাহাসে যাই না। কারন তর্ক করার কোনো মানে নাই। তার ভেতরে আমি হলাম ছোটো মানুষ বুঝি কি? এই বুঝ নিজেকে দিয়েই চলি সব সময়।

শিরোনামের ঘুমিয়ে থাকা ভালো এইটা রুপক অর্থে বুঝাচ্ছি। এই অনলাইন অফলাইনের জগতে অনেক আলাপ, সম্পর্ক, গসিপ আমি বুঝি না বুঝতেও চাই না তাই ঘুমিয়ে থাকাই ভালো। চুপ থাকাই ভালো। সবাই যার যার মতো থাকুক। আমি থাকি আমার মতোই। যাদের ভালো লাগে মিশি না মিশলে নাই। কেউ বললে শুনি- না বললে শুনতেও চাই না। ইশারা ইংগিতের আলাপ বুঝি না। তাই টিউব লাইটই থেকে গেলাম আজন্ম। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি আমার কখনোই ছিলো না। সেইটা অর্জন করার আশাতেও থাকি না। এই বেশ ভালো আছি অবুঝের দুনিয়ায়। তবে খুব বেশী যে অবুঝ তাও না। তবে তা এই বুর্জোয়াদের প্যাচের দুনিয়ায় চলার মতো না। মন যা চায় বলে ফেলি, তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবি না কখনোই। এইটার ভালো দিক হলো আমি সবার সাথেই মিশতে পারি আর খারাপ দিক হলো পরিচিত বন্ধু ছাড়া কারোর খুব কাছের মানুষ হতে পারি নাই। চায়ের দোকানে আমরা যারা আসি তাদের সবারই একজন একজন করে আপন থেকে আপনতর লোক আছে। আমার পুলক আর আদনান বাদে কেউ নাই। এদের সাথেই মিশামিশি, এদের গল্পই হজম করা। কতো আসলো বড় ভাই-ছোট ভাই কারোরই আমি আপন হতে পারি নাই, চাইও নাই। পুলকের কোর্টকাচারীর আলাপ আর আদনানের ব্যাংক জব ও নব্য বিবাহিত জীবন নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করেই সময় কাটে। এভাবেই চলুক ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই। আরেকটা কথা সারাদিন যে বন্ধু ফোন দিয়েই যাচ্ছিলো ধরি নাই ও একটু আগে ফেসবুকে জানালো ওর এক বছর প্রবেশন পিরিয়ড শেষে এমটিওর আজ কনফার্ম হইছে আজ। চিন্তায় ছিলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করা নিয়ে। বিপদ কেটে গেছে। বন্ধুদের সুখ দেখেও অনেক শান্তি।

অঞ্জন দত্তের এই নতুন মুভির এই গানটা মিলে যায় পোস্টের বিষয়ের সাথে!

http://bengalifunz.wapka.mobi/music/view/1174144

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সামছা আকিদা জাহান's picture


কি যে সুখ। আড্ডা আর ঘুম। ঘুম আর আড্ডা। মজার জীবন।
বেচে থাক আড্ডা,ঘুম আর গান শোনা।

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস এ লট আপু!

রাতিফ's picture


"এই বেশ ভালো আছি অবুঝের দুনিয়ায়। "

আরাফাত শান্ত's picture


Smile

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


আহা! সুখী মানুষের সুখী জীবন!
ভাল থেকো আরও অনেক।

আরাফাত শান্ত's picture


Big smile

পাভেল's picture


বেশী ঘুম কিন্তু ভালো না!

আরাফাত শান্ত's picture


হুমম!

তানবীরা's picture


কবি এখানে বিশেষ কি জানি কইতে চাইলেন, ধরতে পারলাম না Puzzled

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!