ইউজার লগইন

চেনা বাস চেনা রুট, চেনা রুটি বিস্কুট, চেনা চেনা চায়ের গেলাস!

কবীর সুমনের গান আমার সাংঘাতিক প্রিয়। এইটা নতুন কথা না। অনেক বার বলা কথা। কিন্তু কবীর সুমন কেন প্রিয় তার উত্তর আমার জানা নাই। তার অতি সাধারন সুরে অসাধারণ কথার সব গান যখনি শুনি মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কোন গানই আর মুখস্থ হয় না। বড়জোর প্রথম দুই চার লাইনই মনে থাকে। তারপর আর মনে নাই। শুনলে মনে পড়ে। অথচ আগে গান মুখস্থ করার প্রতিভা কত দারুন ছিলো। অজস্র গান এক দুইবার শুনেই হুবহু বলে দিতে পারতাম। এখন তা পারি না। তার ধারে কাছেও পারি না । তাই গান এখন স্রেফ শুনার জিনিস। কিছুই আর মনে করতে পারি না তেমন। খালি হেড়ে গলায় সুরটা মনে পড়ে কষ্ট বাড়াতে। এরকম সবারই হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয় আমারটা আগে ভাগেই শুরু হলো। যাই হোক ব্যাপারটা জটিল কিছু না। এখনো যে শুনতে পারতেছি, ইউটিউব টা খোলা, ওলোর স্পিড দারুন তাতেই শুকরিয়া। জগজিৎ সিং গান গেয়ে গেছেন সেই কবেই ' বেশি কিছু আশা করা ভুল!'

আজ মনটা খুব ফুরফুরে। ফুরফুরে হবার প্রধান কারন একটু আগে ভাগে হলেও বিনা পরিশ্রমে ট্রেনের টিকেট প্রাপ্তি। গতকাল রাতে পোষ্ট লিখে তো আর ঘুমাইনি। ফজরের পরেও ঘুম আসে না। ঘুম আসার জন্য কিছুক্ষণ শাহনাজ রহমাতুল্লাহর গান শুনলাম। তাতেও ঘুম আসে না। চোখের সামনে গোটা একটা ভোর হয়ে গেলো গান শুনতে শুনতে। সকাল প্রায় হচ্ছে হচ্ছে যখন সাতটার দিকে তখনই আল্লাহর বিশেষ রহমতে ঘুমটা আসলো। ভুলে গেছিলাম যে আজ সকালে আমার টিকেট কাটার কথা। ১০ টা পঞ্চাশের দিকে উঠে উঠলাম। মোবাইলে ব্লগ দেখলাম। আমার মোবাইলের স্ক্রীন অতি ছোটো। খালি কমেন্ট দেখা যায়। কিন্তু সেইটা যে আরেক কমেন্টের জবাব, তা বুঝা যায় না। ঘুম ঘুম চোখেই মোবাইলে কমেন্টের জবাব দিলাম। কারন আজ সময় নাই। গোসল না করেই বের হয়ে গেলাম সেই ঘুমানোর সময় যে পাঞ্জাবী জিন্স পড়েছিলাম তা পড়েই। বেরিয়েই বাসে চড়া। বাসের নাম রাজধানী। তার নাম দেয়া উচিত ছিলো ঘোলা পানি। এরকম আজাইরা মুড়ির টিন মার্কা বাস ঢাকা শহরে নাই। চলে রিকশার গতিতে আর পুরো রাস্তা জুড়েই তাদের স্টপেজ। ধরেন কেউ ১০০ মিটার দুর থেকেও যদি বাসটা থামাতে বলে এবং হেল্পার যদি তা দেখে তাতেও বাস থামাবে। এখন ১০০-২০০ মিটার আসতে যদি সেই ব্যাক্তি ৫-১০ মিনিটও লাগায় তাও বাস থেমে থাকবে উনার জন্যে। মেয়েরাও শিখে গেছে এই চালাকী। রিকশায় করে আসতে আসতেই হাত নাড়ায় বাস থামে। তারপর রিকশা ধীরে সুস্থে বাসের কাছে আসে। ভাড়া নিয়ে দেনদরবার চলে। মাঝে মাঝে তা কন্ডাকটরকেই দিতে হয় ভাংতি নাই বলে। শেষে উনার বাসে উঠা। এরকম স্লথ গতির এক বাসে উঠে সংযম রাখাই কঠিন। আমি তা রাখার জন্য হেডফোনকে বেছে নিলাম। সমানে গান চলছে। ওয়ারফেইজ শুনতে থাকলাম শুধু। দেড় ঘন্টা বসে থেকে ঘেমে শরীর ভিজিয়ে আরামবাগে নামা। তারপর রাস্তা পার হয়ে সোজা হেটে কমলাপুর। দেখলাম তেমন ভীড় নেই। সেই লাইনও নেই। নর্মাল দিনেও যে লাইনে অভ্যস্ত তাও নেই। আমার সামনে শুধু মাত্র দুইজন আর পিছন থেকে আরো দুইজন ধাক্কাধাক্কি করছে। গরমে হট মুডে ছিলাম। ধমক দিবো তখনি দেখি জামালপুরের টানে কথা। নিজের দেশ না হতে পারে, বাপ মায়ের দেশ তো তাই কিছুই বললাম না। দুইজনকেই আগে জায়গা দিলাম যান আপনারা ইফতারী খাওয়ার তাড়া নিয়ে আসছেন, আগে যান। আমার ব্যাবহারে তারা কিছুটা অবাক। তবে অবাক ভাবটা চলে গেলো কয়েক সেকেন্ডেই। তখন চাহনী হলো এমন যে ইহা তার অধিকার। মনে মনে হাসলাম। তিন তারিখের টিকেট নাই, দুই তারিখের টিকেট অবলীলায় পেয়ে গেলাম। শোভন চেয়ারের টিকেট কাটলাম। নামকাওয়াস্তের ফাস্ট ক্লাসে উঠে ৬০ টাকা বেশী দেয়ার দরকার নাই। আর রোজার দিন, রোজা রেখে জার্নি তাই আয়েশে চা খাওয়ার স্বপ্ন দুরাশা। টিকেট পেয়ে আনন্দিত হয়ে বাসে উঠলাম চলে এলাম এক বন্ধুর কাছে। অনেক দিন পরে দারুন আড্ডা দিলাম লম্বা সময় নিয়ে। রোজার দিনে এই ধরনের আড্ডা কতোদিন দেই না। যে ঘামে জপজপে হয়ে বন্ধুর কাছে গিয়েছিলাম। সব কষ্ট মুছে গেলো। ইফতারীর আগে আগে বাসায় ফিরলাম রিক্সায়। রিক্সাওয়ালার দাবী তিনি রোজাদার। তাই তাকে ১৫ টাকা বাড়িয়ে দিলাম। জানি না সত্য কিনা। সত্য তো হলে ভালো। না হলেও ভালো। কারন রাষ্ট্রই যেখানে ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা করে, সেখানে সাধারণ রিক্সাওয়ালাও তা করতে পারে। টিস্যু পেপারের মতো ইউজের অধিকার সবার। চায়ের দোকানে গেলাম। চা খেতে না, পুলকের সাথে আরো কিছু সময় আড্ডা মারতে। এসে দেখি দুই রোজাদার ছোটভাই বসে চা খায়। আমি বললাম সন্ধ্যায় জিগেষ করলে তো বলেন মুখ শুকনা করে যে আমি রোজা রাখছি। আর বিকালে চা খাওয়ার মানে কি? রোজা না রাখলে বুক ফুলিয়ে খাবেন আর তা বলবেন। মিথ্যার কি মানে? পরে মনে হলো এইভাবে বলা ঠিক হয় নাই। সরি বলে বাসায় এসে গোসল দিলাম।

অফিসে প্রতিদিন ব্যাপক ইফতারী খাই। কোনো সুস্থ রোজাদার এই ধরনেই ইফতারী খায় কিনা, তা আমার জানা নাই। খেতে বসলে আর সংযম মনে থাকে না। খালি খাচ্ছি আর খাচ্ছি। খাওয়ার পরে আর নড়াচড়া করতে পারি না। নামায পড়তে বসলে আর সেজদা থেকে উঠতে পারি না। এরকম রাক্ষসের মতো প্রতিদিন খাচ্ছি। বাড়িতে গেলে আম্মু এতো দারুন ইফতারী বানাবে, মনে হয় না খেয়ে সাইজ মিটবে! কারন এক্সট্রিম পর্যায়ের বেশি খাই। এই বেশী খাওয়ার ঘটনা বন্ধু এহতেশামকে বললাম। সে বললো রোযায় খাওয়ার হিসাব নাই, খাবেন যতখুশি। আমি বললাম তাই বলে তিন চার জনের খাবার একা খাওয়ার কোনো মানে নাই। এই ধরনের ইসলামী লজিক শুনলে আমার মেজাজ খারাপ হয়। খাওয়ার হিসাব নাই দেখে কুকুরের মতো খালি খাবো আর ঢেঁকুর তুলবো ঐ টাইপের মুমীন হতে এখনো পারি নাই। খেয়ে দেয়ে ভাইয়ার বন্ধুদের সাথে দারুন আড্ডা জমলো অফিসের পাশে চায়ের দোকানে। কিন্তু দাঁড়িয়ে আর থাকতে পারি না। মন চায় খালি হেলান দিয়ে বসতে। কিন্তু সেরকম বসার জায়গা আর কই? তাই রিক্সা দিয়ে যাই নান্নুর দোকান। ২০ টাকা লাগে ভাড়া, বাসায় ফিরতে ১৫। আজ ৩৫ টাকার রিক্সা ভাড়া দিয়ে ৬ টাকার চা খেয়ে আসলাম। আমি পারিও। এই ধরনের পাগল দিয়া কি হবে? বাসায় এসে পড়ি আজ অনেক আগেই। দোকানে ভালো লাগছিলো না। সুমনের গান শুনি, হেমন্তের গান শুনি, মোহম্মদ রফির গান শুনতে শুনতে এগারোটা বেজে যায়। মামা আসে আরেক নাটক গেট নাকি তালা দেয়া। কিন্তু সেই তালার চাবি শুধু বাড়ীওয়ালার কাছে। কি আর করার নীচ তালায় যাই চাবি নাই, দোতালায় যেয়ে বাড়ীওয়ালার পুত্রবধুর কাছ থেকে যে চাহনী পেলাম তাতেই অবাক। উনার চেহারায় কেমন জানি করে তাকায় মনে হয় মিসকীন খেদাইতেছে। ঢাকা শহরের বেশীর ভাগ বাড়ীওয়ালার অন্তরে ব্রিটিশ সাহেবদের ভাব। আর পাকিস্তানী সাহেবদের সাচ্চা মুসলমানী। এইভাবের কারন বুঝি না। চিটাগাংয়ে তা মানা যায়, কারন ওখানে স্থানীয় বাড়িওয়ালারা ওতো বিদ্যে বুদ্ধিতে এগিয়ে নাই। কিন্তু সাবেক আমলা যেখানে বাড়ীওয়ালা, তার পুত্রবধুর চোখে আমার প্রতি চাকর বাকর সুলভ চাহনী দেখে আমার মেজাজ খারাপ হলো না। কারন হুমায়ুন আহমেদ কুত্তাওয়ালী বাড়ীওয়ালা দেখাইছে, আমি দেখলাম কুত্তা ছাড়া বাড়ীওয়ালার একমাত্র পুত্রবধুকে। আমাদের মতো কাঙ্গাল বাঙ্গাল ভাড়াটিয়ার দিকে তারা তো এইভাবেই তাকাবে! ব্যাপারনা! শীট হ্যাপেন্স!

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সামছা আকিদা জাহান's picture


আজ না ডাকতেই চলে এলাম,কোন ভাড়া লাগেনি। রিক্সাওয়ালারা রোজা রাখে না কারন যে কায়িক পরিশ্রম তাদের করতে হয় তা তে রোজা সম্ভব না। আজ আমার রাজকুমার কে যানে কোন খেয়ালে সারাদিন শুনল ' জলকণা উড়ে যায় ' আর গাইল গলা ছেড়ে। কি ব্যাপার জিজ্ঞাসা করে জানলাম দাদাবাড়ি গেলে সেখানকার অনুষ্ঠানে সে গান গাইবে তাই এই গান সে প্রাক্টিস করছে।চরন কঠিন গান সারাদিন শুনে আমার কান ঝালাপালা।যেহেতু হেডফোন ব্যাবহার আমার বাসায় নিসিদ্ধ তাই এ যন্ত্রনা সহ্য করতেই হয়। কিসের অনুষ্ঠান?ফুপি বলেছে এরপর যেদিন দাদাবাড়ি যাব সেদিন গান নাচ নাটকের অনুষ্ঠান করবে।ফুপি নাকি নাটক লেখা শুরু করে দিয়েছে।

নিজের পছন্দে গান শেষ কবে শুনেছি মনে নেই। মোবাইলের গানও তো বাচ্চারাই আপলোড করে।

বাড়িওয়ালির পুত্রবধুতো বাড়ি বানায় নি তাই এমন।সূর্যের চেয়ে বালির তাপ বেশি।
একথা অনেকেই বলে যে রোজার সময় কোন হিসাব নেয়া নাকি হবে না তাইতো এত্ত খরচ করে মুসলমানেরা।

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস আপু। কষ্ট করে এসে পড়ে কমেন্ট করে তাতে ধন্য!
হেডফোন নিষিদ্ধ কেন বাসায়? নিজের পছন্দে গান শুনতে অসুবিধা কোথায়?
ভালো থাকেন আপু। আনন্দে দিন কাটান!

মীর's picture


কাল এখানে শীট হ্যাপেন্স ডায়লগটা পড়ার পর থেকে আমিও বিভিন্ন জায়গায় দিয়ে বেড়াচ্ছি Big smile

আরাফাত শান্ত's picture


Tongue

জ্যোতি's picture


গানও শুনি না । আবার শুরু করব সবই । রোজা যে কেমনে রাখতেছি! তোমার দিনলিপি পড়ে এমন দিন কাটাতে মন্চায়।

আরাফাত শান্ত's picture


তাই নাকি? সুস্থ হন, ভালো থাকেন আপু!
আমি সাধারন অলস সময় কাটিয়েই দিন চালাই।

তানবীরা's picture


কারন রাষ্ট্রই যেখানে ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা করে, সেখানে সাধারণ রিক্সাওয়ালাও তা করতে পারে। টিস্যু পেপারের মতো ইউজের অধিকার সবার।

Big smile Big smile Big smile

সে বললো রোযায় খাওয়ার হিসাব নাই, খাবেন যতখুশি।

এটার নাম সংযম Tongue

আরাফাত শান্ত's picture


কই থেকে তুলে আনলেন এই পোষ্ট Glasses

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!