খুঁজে পেতে দাও আমায় সেই ভোর আমি যার গন্ধ নিতে চাই আলোয় আলোয়!
বিশ্রী রকমের রাত জাগার অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। ঘুম আসেই না। ঘুম আসে চারটার দিকে। তখন আমার ঘুমোতে ভালো লাগে না। তাহাজ্জুদের নামায পড়ি, ফজর পড়ি তারপর আলো ফোটার আগে বের হয়ে যাই। পকেটে মোবাইল টাকা পয়সা কিছুই রাখি না। হয়তো ২০-৩০ টাকা থাকে, না থাকলে নাই। বের হয়েই ব্যাংকের বুথ বা দোকানপাটের সিকিউরিটি গার্ডদের দেখলে খুব মায়া লাগে। পেপার বিছিয়ে তারা তাঁদের কর্মস্থলের গেটেই ঘুমোচ্ছে। বুট খোলা কিন্তু পায়ে মোজা ইউনিফর্ম অটুট। চেয়ে থাকলে কষ্ট লাগে। এরচেয়ে খারাপ অবস্থা তরমুজ বিক্রেতা বারো তেরো বছরের ছেলেটার। তরমুজ সরালে হয়তো পজিশন চলে যাবে, তাই মুড়ায় বসে তরমুজে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। জগিং আঙ্কেল রা পেরোনোর সময় বলছে, দেখছেন নি পোলার কারবারডা! হোটেলগুলো সাটার খুলে ঝাড়পোছ করছে। সবই দেখতে ভালো লাগে এইসব ভোর বেলায়। ভালো লাগে না শুধু ফকিরদের। আমি গুনে ছিলাম গত পরশু, যে আমার বাসা থেকে জিয়া উদ্যানের এমপি হোস্টেলের এই মোড় পর্যন্ত ৬৪টা ফকির বসে। সাত সকালে ফকির মিসকিনদের ভালো লাগে না। তবে যারা সকালে জগিংয়ের ফাকে বাজার করে তারাই হয়তো ফকিরদের ভরসা। আমি কিছুই দেই না। আমি আতংকে থাকি কুকুরে। এত কুকুর রাস্তায় দেখতে হয় ভয় লাগে। তবে সকাল বেলা নূরজাহান রোডের জন্ডিসের ডাবের মালা পড়ায় ঝাড় ফুক করে, তাঁর ব্যাবসা বাম্পার। অনেক মানুষ দেখি ছোট মুড়ায় বসে থাকে। এক বছর আগে যাদের দেখতাম হাটতে, তাঁদের আর দেখি না। শুধু মিল পেলাম এক লাস্যময়ী মেয়েরই, সে এখনো সাদা গেঞ্জী পড়ে জগিংয়ে আসে, আর ষাটোর্ধ আংকেলরা তাকিয়ে থাকে। আমি কোনো স্পেশাল জামা কাপড় পড়ে যাই না, যে পাঞ্জাবী জিন্স পড়ে নামায পড়লাম তাই পড়েই হাঁটা দেই, সবাই তাকিয়ে থাকে। যে এই ছেলেটা পাঞ্জাবী ভিজিয়ে শুধু হাটছে কেন? সাতটার দিকে বাসায় ফিরে, গোসল করে ঘুমাই। দিনে ঘুমানো যায় না। সাড়ে এগারোটার দিকেই উঠে পড়ি। এই আমার ভোরের ফিরিস্থি।
গতকাল মানে আজ শুক্রবার হাঁটা হয় নি। বন্ধু আসছিলো দুপুর বেলা, সকালে তাঁর বুয়েটে ইপিজিসির এক্সাম। সেলারী অনেক, ৬৮ হাজার ছুই ছুই, ইউরোপে ট্রেনিং জয়েনের পরে। ব্যাপক ভাবের চাকরী। এখন সে আবুল খায়েরের এক পাওয়ার প্ল্যান্টের মেইটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার। প্রায় বছর খানেক বাদে দেখলাম, ভুড়ি ব্যাপক বেড়েছে। আকদ হয়ে গেছে, বিয়ে ঈদের পরে। আমার এই বন্ধুটা যে বিয়ে করবে তা কখনো ভাবিই নি। কারন কিছু ছেলে থাকে না প্রেমিক পুরুষ তেমন ছেলে সে। রুয়েটে যখন যেতাম আমি দেখতাম কত মেয়ে দিওয়ানা তাঁর। চিটাগাংয়ে চাকরী শুরু করলো কত মেয়ের সাথে খাতির পরে বন্ধুত্বের আলাপ। আমার অনেক ক্লাস মেটরাই তাকে হিংসে করতো কারন তাঁদের আকাঙ্ক্ষিত রমনীদের সাথে আমার বন্ধুরই বেশি খাতির। টাইম পাস প্রেমে সে অদ্বিতীয়। বন্ধুকে জিগেষ করলাম বিয়ের পরে চলবি কেমনি? সে বললো এখন আর সেই বয়স নাই, সঙ্গী দরকার তাই একজনকে না একজনকেতো বিয়ে তো করতেই হবে। রাত জেগে দুই বন্ধুর কত গল্প, পুরানো দিনের আড্ডাময় দিন গুলোর স্মৃতি রোমান্থন। ইন্টারমিডিয়েট এক্সাম শেষ, মাঠের পাশে বেঞ্চি ছিল তাতে বসে থাকতাম সারা সন্ধ্যে বিকেল। তখন আমার বন্ধুটি খুব হুমায়ূন আহমেদ ভক্ত, ভক্তি রসের কত আলাপ শুনতাম। আর বই ধার দিতো সমানে। ওর কাছ থেকে নেয়া বই কত লোক পড়তো। আরেক ভক্তি ছিল ওর জীবনানন্দে, সেই বয়সের কলেজ পড়ুয়া স কোনো ছেলের মুখ জীবনানন্দের বিষণ্ণ সব কবিতা শুনে অবাক হতাম। যাই হোক, এখন আর জীবনানন্দের নামই শুনি না ওর মুখে। পড়তে দেখি খালি চাকরীর অংক।
সকাল সকাল বুয়েটে যেতে খুব ভালো লাগে। হালকা রোদ, রিকশায় যাচ্ছি তো যাচ্ছি। শুক্রবারের সকাল ফাঁকা ফাঁকা সবই। যে সকালে আসছি তখন দোকানপাটই খুলে নাই। ক্যান্ডিডেট আছে টুকটাক। চেহারা দেখলেই বুঝে যাই এরা এক্সাম নিয়ে চিন্তিত। বন্ধুর আরো বন্ধু আসছে, সবার একি প্রশ্ন সবার কাছে তুই এখানে কেন? তুই না ভালো জব করোছ, আমার বন্ধু রসিক, সবার কাছেই তাঁর এন্সার, আসলাম তোদের দেখতে, ঢাকায় তো আসা হয় না। তবে আমি আশাবাদী হলাম, আমার মতো কাঠ বেকার কম নাই, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে তিন চার বছর ধরে বসে আছে এমন ছেলের সংখ্যা কম না। বন্ধু বললো এরাই আছে সুখে, বাপ মাকে বলছে সরকারী চাকরীর চেষ্টায় আছি, আর বাসা থেকে প্রতিমাসে টাকা আসে। আমার এক পরিচিত ছেলের সাথে দেখা হলো, স্কুলের জুনিয়র। তাঁর জিগেষ হলো কমার্সের বড় ভাই এখানে কি? আমিও দেখলাম এখানে দুই ক্যাটাগরির লোক ক্যান্ডিডেটদের সাথে আসছে, হয় বয়ফ্রেন্ড নয়তো বাবা। আমার মতো ফাও বন্ধু নাই। হলে চলে গেল আমিও রিকশা নিয়ে ডাইরেক্ট মোহাম্মদপুর এসে পড়লাম।
মোহাম্মদপুর বয়েজ স্কুলের মাঠে আমাদের টিমের ম্যাচ, আমি দর্শক। শেষের দিকে খেলা, জিতে গেলাম আমরা। ১০০০ টাকার ম্যাচ। কাছেই ক্যাম্পে বোবার বিরিয়ানী। আসলো সেই টাকায় প্যাকেটে প্যাকেটে। খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু সবার চাপাচাপিতে খেতে হলো। আমি আবীর আর পুলক ছাড়া সবাই ছোটভাই। ব্যাপক রেসপেক্ট করে আমাদের। এদের সাথে মিশতে আমার খুব ভালো লাগে। নিজেকে ইয়াং ইয়াং লাগে। এরা এখনো বিকেল বেলা ফূটবল খেলে, শুক্রবারে ম্যাচ খেলে। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে আসে। আবীর তো এদের স্টার প্লেয়ার। বিকেলে যাই মাঝে মধ্যেই, বালুময় মাঠ, অনেক টিম খেলছে। দেখতে ভালো লাগে। কিশোর বেলায় ফিরে যাই। কারন খেলা পারি না কিন্তু মাঠই ছিল আমার পছন্দের জায়গা। এই কারনে আমি খেলা না পেরেই অনেক খেলাতেই চান্স পেতাম। কারন ওতো বিকেলে মাঠে কে আসে, আমি এসে বসে থাকতাম। তখন মোবাইল ছিল না। আমাকে ডাকতে হলে আমার কলোনীতে আমার বাসার নিচে এসে ডাকতো নাম ধরে চিল্লায়া। প্রথমে বারান্দায় মুখ দেখাতে হতো, তারপর নামতে হতো। ঐ ডাক গুলো শুনতে কি যে ভালো লাগতো। এখন কত মোবাইলে ফেসবুকে কত ডাকাডাকি তবুও সেই বিকেলে খেলতে আসার ডাকের চেয়ে মধু নাই। সেই মাঠে যেতে যেতে বিহারীদের উর্দু হিন্দি মিক্সড ভাষা শিখে গেছি। আমার সেই স্কিল সবাইকে আনন্দ দেয়। তবে শব্দ না শিখে আমি শিখেছি আসলে তাঁদের কথাবলার টোন। তাঁদের কথা বলার টোন কেমন জানি, হেলানো হেলানো। সব চেয়ে মজা লাগে বিহারী পোলাপানদের সাথে কোনো বাঙ্গালী একই দলে খেললে, বাঙ্গাল কো ছোড়, বাঙ্গাল কো ছোড়। বল মিস করলে, আপ মজাক কার রাহে ভাই। শুনতে মন্দ লাগে না। মাঠে বসে আছি এক পিচ্চি মেয়ে আসছে। আধো বাংলা আধো বিহারী ভাষায় কথা বলছে তাঁর ভাইয়ের সাথে। সুপার কিউট। মাঠে বসলে খুব নষ্টালজিক হয়ে যাই। মনে হয় সব কিছুই আগের মতো মাঝখান দিয়ে ৮ টা বছর চলে গেল!
বড্ড নস্টালজিক ! কিছুতেই সে সোনালী-রুপালী দিনগুলো আর ফিরে পাওয়া যাবেনা । কখন যে বুড়ো হয়ে গেছি টের পাইনি । '৬৭ সালে রাতে 'আজাদী' তে চাকুরি করতাম । রাত ১টায় ছুটি । হেঁটে হেঁটে কলেজিয়েট স্কুলের পাশে বড়দা [ কাজ্বিন ] 'র বাসায় ফিরতাম । শীতের রাতে ছুটা দোকানী, ফুটপাতের হকাররা দখল হারানোর ভয়ে চটের বিছানায় ছেঁড়া কাঁথা গায়ে জড়িয়ে কুন্ডুলি পাকিয়ে ঘুমাত । বড় কষ্ট হতো ! আজ কি সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে ? জানিনা !
পরিবর্তন তেমন আর হয় নাই, অবস্থা ঘুরে ফিরে সেই একি রকম!
অনেকদিন পর তোমার দিনলিপি পড়লাম। ভালো লাগলো।
কুকুর ভীতি আমারও আছে, এখনও রাস্তায় কুকুর দেখলে বেশ দূরত্ব বজায় রেখে পাশ কাটানোর চেষ্টা করি
আপনাকে দেখলে ভাইয়া ভালো লাগে!
নিয়মিত আসা শুরু করেন আবার!
চেষ্টা করবো। সময় বড় নির্দয়!
আসলেই
ঠিকাছে
কি ঠিক থাকলো?
লেখা
ভালোলাগা গুলো সব'ই অতীত হয়ে যায়। শুধু কষ্টগুলোই বর্তমান রয়।
ঠিক বলেছেন ভ্রাতা!
তোমার লেখাগুলো পড়তে ভালো লাগে।
কেমন আছো শান্ত?
আপু, ভালো আছেন? শরীর মন ভালো?
আমি ভালোই, দিন চলে যাচ্ছে!
আমনে কিবা আছুইন? শইলডা বালা? মনডা বালা?
আমি ভালাই আছি। শুনলাম তুমিও নাকি ভালোই আছ?
মন্তব্য করুন