তারকাঁটা ওরফে হিন্দি ভাষায় চুল কাটা!
শিরোনামটা সরাসরি লিখতে পারলে আরো ভালো হতো। কিন্তু এক শীর্ষস্থানীয় ব্লগের ফ্রন্ট পেইজে একটা পোষ্ট অশ্লীল নামে ঝুলবে, ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। তাই একি কথা একটু অন্যভাবে বললাম। আরো বেশী কিছু বলা উচিত। কারন এই সিনেমার প্রিমিয়ার থেকেই আমার মেজাজ খারাপ। আর সেই মেজাজ খারাপের কারনেই ছবিটা এত শর্ট নোটিসে দেখতে গেলাম। মেজাজ খারাপ করার কারন এর প্রিমিয়ার নিয়ে। এর প্রিমিয়ারে এক সাংবাদিক গিয়ে তাঁর পত্রিকায় সিনেমাটার এক রিভিউয়ে হালকা সমালোচনা করেছিল। এই সামান্য সমালোচনাই আমাদের মান্যবর সিনেমার পরিচালক ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা সইতে পারেন নাই। ব্যাক্তি আক্রমনের চুড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েছে ফেসবুকে। বলা হয়েছে, প্রিমিয়ারের ফ্রি টিকেটে পেয়ে চ্যাটাং চ্যাটাং কথা ঝাড়ে সাংবাদিকেরা, নিজেরা কয়টা নাটক বানাইছে,সেই সাংবাদিকের লেখা গান নেয় নাই তাই তাঁর এত রাগ। হাবিজাবি কত কথা দেখলাম ফেসবুকে। আমি ডিমের গন্ধ শুনলেই বুঝবো যে ডিম পচা না আসল, এরজন্য আমাকে মুরগী হবার দরকার নেই। আর আমি মুরগী না তাই মানুষ বলে ডিমের সমালোচনা করতে পারবো না এইটা কোনো কথা হলো না। একটা ফেসবুক স্ট্যাটাসও ঝেড়েছিলাম এই ইস্যুতে
দেশে এক বিশাল সমস্যা কারোর নির্মাণ নিয়ে কিছু বলা যাবে না ভালো মন্দ। সৈয়দ শামসুল হক একবার বলছিলেন, ভালো সমালোচক নেই এই বেদনা একজন লেখক ছাড়া আর কেউ বুঝে না। আমাদের এইখানে সমালোচনা আলোচনা কিছুই হয় না তেমন, যাও দু একটা হয় তাঁদের বিপক্ষে গেলে তেলে বেগুনে জ্বলে যান নির্মাতারা। এত বিগার থাকলে নাটক সিনেমা বানান কেন দর্শকদের জন্য ? এটিএম শামসুজ্জামান একটা সিনেমায় অভিনয় করছিল এফডিসিতে, পরিচালক বললো শট ওকে। এক দর্শনার্থী বলে বসলো, হয় নাই আপনার অভিনয়। তখন সেই শট আবার দিলো এটিএম শামসুজ্জমান। সেই লোককে ডেকে গল্পগুজব করলো। এই কালচার আমাদের কই গেল?
তাই দেখার ইচ্ছা ছিল বিখ্যাত নাটক নির্মাতা মোস্তফা কামাল রাজ কোনো রাজ কার্য সম্পাদন করেছেন তাঁর মুভি তারকাঁটায়। আমার এমনিতেই দুপুর থেকে মন মেজাজ ভালো না। বুয়া আসে নাই। ইচ্ছে করেই কিছু খাই নি। বসে বসে ইউটিউবে নিজের ভালোলাগার গান গুলো শুনছিলাম। পুলক কোর্টে যাই নি, আবীর অফিসে। তাই প্রস্তাব দিলাম চলেন আবীর আসুক তিনজনে মিলে দেখে আসি। সবাইকে যোগার যন্ত্র করে শ্যামলীতে পৌছতে দেরী হয়ে গেল। শো শুরু হয়েছে তার ২০ মিনিট আগেই। টিকেট কাটলাম ডিলাক্সের, কারন ধারনা ছিল ছবি খুব আহামরি কিছু হবে না। তাই দেড়শো টাকার টিকেট কাটাই ভালো। দুইশো দেয়ার কি দরকার? তিন বন্ধু একটা ভালো জায়গায়ই পেলাম। দেখি গান চলে। মৌসুমি আর আরেফিন শুভ গান গাইছে রাগাশ্রয়ী। গান লিপ নেয়ার কি ছিরি, তা দেখতেই দেখতেই শুরু হলো। সিনেমার প্রিন্ট দারুন, প্রচলিত এফডিসি মার্কা সেট না, প্রডাকশন আয়োজনে ভিন্নতা আছে। ভিন্নতা আছে চরিত্রে অভিনেতা অভিনেত্রীতেও, কারন সব খানেই নাটকের লোকজন বিদ্যমান। চেষ্টা ছিল মেইনস্ট্রিম সিনেমা বানানোর, তাও হয় নাই। কি যে হয়েছে আল্লাহ মালুম! আশা ইউনিভার্সিটির এক গাদা পোলাপান আমাদের চারিদিকে বসা, গ্যাং ধরে আসছে। তাঁরা বেশী হতাশ। দেড়শো টাকা কিভাবে উদ্ধার করা যায় তা নিয়ে আলাপ করছে। কে তাঁদের সিনেমা দেখতে বেশী জোর করেছিলো তাকে সমানো পচানো, এইসব আরকি।
সিনেমার কাহিনী আর কি, আশিকী টুয়ের গ্যাংস্টার ভার্শন সাথে ঋত্বিকের অগ্নীপথের হালকা মিক্সার। ৬০ বছরের বাংলা সিনেমার ট্রাডিশন মেনে নায়ক আরেফীন শুভ সুবোধ বালক। গার্লফ্রেন্ডের খপ্পরে পড়ে বিয়ে করতে হবে, আহমদ শরীফ সেই মেয়ের বাবা। তাঁর কুট চালাকিতে আরেফীন শুভ জবের ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে হয় সাজানো খুনী। তাঁর বোন, গার্লফ্রেন্ড সবাই তাকে খুনী বলে ছেড়ে চলে যায়। এমন সময় আসে এজাজ, অগ্নীপথের ঋষি কাপুরের লূক নিয়ে। বিহারীদেরে এক্সেন্টে বাংলা বলতে যায়। হয় না বালটাও। এজাজের আশ্রয়ে আরেফীন শুভ হয় বিশাল গ্যাংস্টার। কিন্তু তাঁর মন থাকে সব সময় উদাস। তাঁর শুধু মনে পড়ে বোন মৌসুমি আর তাঁর ভাতিজির কথা। একটা বারে গিয়ে বিদ্যা সিনহা মীমকে তাঁর ভালো লাগে গান শুনে। এক ভালো লাগায় সে মীমকে বিশাল শিল্পী বানিয়ে দেয়। দেশ সেরা সুরকারকে মীমের জন্য ভাড়া করে। হাসান মাসুদ দেশ সেরা সুরকার, সিনেমাতে তা বিশ্বাসই হয় না। এদিকে কার্টুনের মত ভিলেন ফারুক খালি কিডন্যাপ করে। তাঁর ভাই হত্যার প্রতিশোধ নিতে। কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয় নায়কের মারপিটের গুনে। শেষে সফল হয় তাঁর বোনকে বাচানোর বিনিময়ে সে নিজে গুলি খায় ভিলেনের হাতে তাতেই মরে যায়। তার আগে নায়িকা মীমের মন পাওয়ার জন্য সে চেষ্টা চালায়, তার পিএর চাকরী নেয়। কিন্তু মরার আগে রঞ্জিত মল্লিক থিউরীতে তাকে এজাজ জানিয়ে দেয় মীম কে বিখ্যাত করার পেছনে সব অবদান নায়ক বাবাজীর, ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে দেখে- নায়ক বোনকে বাচাতে গিয়ে খুন। শেষ সিনে আশিকী টুয়ের ঢংয়েই নায়িকা বিশাল স্টেডিয়াম+ মঞ্চে গান গায়, মৌসুমি অনুপ্রেরনা দেয় তাতে, আর অশরীরি সাদা শার্ট আরেফীন শুভ থাকে, মীমের সাথে গান গায়।
এবার মেইন পয়েন্টে আসি। কেন সিনেমাকে 'বালকাটা' বলবো? প্রথমেই আসে গান, একটা গানও আমার ভালো লাগে নাই, কাউকেই ভালো লাগতে দেখলাম না। সেই গান গুলোর অযথা ইউস বারবার আর বারবার। আমার পাশের অল্পবয়সী ছেলের দলটা বলে উঠে, মাফ চাই দাদা আর গান শুনতে চাই না। কিন্তু সিনেমায় ভর্তি বোরিং সব গান। কার্টুনের মত সব ভিলেনের অভিনয়। ফাউল এক স্টোরী লাইন। নায়ক আরেফীন শুভ বাদে কারোর অভিনয়ই মনে লাগে না। ভুল বললাম আরেফিন শুভর এক পাইটু ছিল তোতলা সে, তাঁর তোতলামীতে দর্শক হাসে। আমি বুঝি না মানুষের একটা শারিরীক সমস্যা নিয়ে কেন এই ধরনের ফান হবে? মৌসুমি, মীম কারো অভিনয়ই মনে ধরে না। আরেফীন রুমি মানুষও নিম্নমানের তাঁর মিউজিক ডিরেকশনও নিম্নমানের। গান গুলো সব কেমন জানি, আইটেম গান মিস করেছি তা ইউটিউবে কিছুটা দেখলাম থার্ডক্লাশ। ফাইটিং ডিজাইন জসিম আমলের। আর সব জায়গায় খাপছাড়া। পুরো সিনেমা জুড়ে ডিসকন্টিনিউশনের আখড়া। সিনেমায় আমার ভালো লাগছে একটাই সেটা হলো আরেফীন শুভর গেট আপ ও লুক আর অভিনয়টা। তবে অভিনয় ভালো করতে গিয়ে নায়ক বেচারা এত অতিঅভিনয় করেছে যা চোখে লাগে। সিনেমার প্রডাকশন ডিজাইন ভালো। গতানুগতিক বাংলা সিনেমার বাইরের সব সেট। প্রচলিত যে সিনেমার লোকেশন ও সেট আপ আমরা দেখি তার থেকে বেরুনোর চেষ্টা ছিল। সিনেমাটোগ্রাফীও এফডিসির সিনেমার তুলনায় ভালো। এছাড়া আর কিছুই ভালো বলার উপায় নাই, তারকাঁটা একটি ভালো বাজেটের চিরচেনা হিন্দি কাহিনী ও মাসালায় ঠাসা বিরক্তিকর সিনেমা। না দেখাই ভালো। রেটিং করলে পাঁচে এক দিবো!
সবাই বলবেন শাকিব খানের সিনেমা বা অন্য সিনেমা গুলোও তো যুতের কিছু না। সেগুলার সমালোচনা করেন না কেন। সেই সব নিয়ে আলোচনা সবাই করে আমার নতুন করে বলার কিছু নাই। এখন সবাই অধম কেউ উত্তম হইবেনা এইটা কোনো যুক্তিতেই পড়ে না। যাদের সিনেমা নিয়ে সুশীল সমাজের ভদ্রলোকেরা আশাভরসা করে, তাঁরা এইসব বালছাল বানাবে আর তাকে ভালো বলতে হবে। এর কোনো মানে হয় না। তাহলে আপনার শাকিব, আমিন খান, মারুফদের সিনেমাকেও ভালো বলে রায় দিতে হবে! আর কিছুদিন আগে দেখা 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়; সেই তুলনা করলে ক্লাসিক মর্যাদা পায়!
সিনেমা ভালো না মন্দ এইটা কইতে সিনেমা বানাইতে হইবো? দ্যাশে ছাগলের সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে দেখা যাইতাছে। এগুলারে ভালোভাবে লালনপালন করা প্রয়োজন... সামনে কোরবানীর ঈদ
মিয়া আগে মুরগী হও। তারপরে ডিম পারো। তারপরে সেই ডিম পচা না ভালো কইতে আইসো।
সেটাই করতে হবে মনে হয়!
আরেফিন শুভও নায়ক!!!!
তো এরম সিনেমা তুমি ধৈর্য্য ধরে দেখে এত বর্ণসা করে রিভিউ লিখলা, তোমারে তো আরো ২ টা টিকেট গিফট দেওয়া দরকার
আপনার মতো করে কেউ বুঝে না আপু!
সিনেমাটা দেখলে আপনিও সেইম কথা বলবেন আপু!
গান যেটা দিসিলা সেটাইতো পসা। তুমি আবার ওই সিনেমা দেখতে গেলা ক্যান পয়সা খরচ কইরা? পয়সায় কি কামড়ায়?
হ কামড়ায়ই তো। টেকা লাগলে তুমি তো আছোই!
তুমি সিনেমা না বানিয়ে সিনেমার সমালোচনা করছ কেন? তোমাকে দোররা মারা হোক
মোস্তফা কামাল রাজকে পরিচালক হওয়ার আগে একটু-আধটু চিনতাম। ও তখনও মুই কি হনুরে টাইপ ছিল।
তুমি তো স্টার, কতোজনের সাথে পরিচয়! মনে আছে সেই বৈকুণ্ঠের সাথে পরিচয় নিয়ে আলাপ সালাপ। সময় কত দ্রুত যায় সেই পাঁচ ছয় বছরের আগের গল্পকে সেদিন বলে মনে হয়, ভালো আছো চাঙ্কু ভাই?
এফডিসিতে ঢুইকা মুরগী হৈয়া যান। কি আছে জীবনে!
হ আগামীতে তাই করিতে হইবে মনে হয়!
মন্তব্য করুন