এখনো তাই... আমরা বেঁচে থাকি!
আবার পড়ে শেষ করলাম বদরুদ্দীন ওমরের নির্বাচিত প্রবন্ধ- দুই খন্ড। অনেকেই বদরুদ্দীন ওমরকে সহ্য করতে পারেন না, অনেকে তাঁর হিপোক্রেসী নিয়ে ব্যাখা বিশ্লেষন করেন। কিন্তু আমার উনাকে ভালো লাগে কারন উনার সমাসাময়িকতার জন্য। দীর্ঘ জীবনে অনেকদিন ধরে পত্রিকায় কলাম লেখার কারনে নানান কিছু নিয়েই উনার একই কথা ও চর্বিত চর্বণ লেখা পড়তে পড়তে মনে হলো, বাংলাদেশের সব সমস্যাই ঐতিহাসিক। মানে অতীতেও এমন ছিল, এখনও হচ্ছে, সামনেও হবে। বাহাত্তর সালে উনি যে দুর্নীতি নিয়ে লিখছেন তা ২০১৪তেও প্রায় একইরকম, সাতাত্তরেও তিনি শিক্ষার মান নিয়ে লিখছেন, এখনো আমরা তাই নিয়ে মাথা ঘাবড়াচ্ছি, আশি সালে উনি জামাতের উত্থান নিয়ে প্রশ্ন করছেন এখন সেই উত্থানের বড় রূপ আমাদের সামনে। শুধু এসবে না সব ক্ষেত্রেই আমাদের সমস্যাগুলো ঐতিহাসিক ভাবেই জটিল, যা ভবিষ্যতেও শাখা প্রশাখা নিয়ে অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যেই আমরা সবাই বলবো, আমাদের সময়ে ঐটা ভালো ছিল, তখন তো সেটার সোনালী সময়, আগের দিনই ভালো। আমার কাছে কখনোই মনে হয় না, যে আমার যে সময়কাল খুব ভালো ছিল, আমাদের বাল্যকিশোর বেলা খুব আনন্দে ছিল, আমরা সব ভালো ভালো জিনিসে বড় হয়েছি, এমন ডায়লগ শুধু কথার কথাই। আমাদের সময় তো দূরে থাক এই রাষ্ট্রের কোনো সময়ই ভালো ছিল না, আমরা সবাই শুধু ভালো থাকার ভান করেছি আর বসে বসে আমার সময়ের জয়গান করছি। হুমায়ূন আহমেদের দারুন একটা কথা আছে, 'আমার বন্ধুরা সবাই বলে ষাটের দশকের ছাত্ররাজনীতি খুব সোনালী সময়ের ছিল, আমি মোটেও তা মনে করি না। এই হলকেন্দ্রিক মারামারি, রাষ্ট্রীয় দলের ক্ষমতার প্রদর্শন, অস্ত্রের ব্যাবহার, সব ছিল তখনও। খালি মাত্রা কম আর বেশী। তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি-- আত্মপ্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া আত্মতুষ্টিতে দিবস রজনী যাপন করিবার কোনো কারন নাই!
আমি এখন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হই না বাসা থেকে। সারাদিন পড়ি- ঘুমাই- টিভি দেখি, পিসিতে বসি। রাতের দিকে বন্ধুরা ডাকলে বের হই, না হলে নাই। সারাদিন বাসায়। ওলোর ইন্টারনেট নেয়ার মত টাকা ছিল না এই তেইশ তারিখের পর থেকে, তাই গ্রামীনের মডেম দিয়ে নেট চালাই টুজি। এই থ্রিজির আমলে আমি চালাই টুজি টাকা নাই বলে। যা দিয়ে শুধু ফেসবুক- ব্লগ আর পত্রিকার সহজ পেইজগুলা নামে। ইউটিউবের একটা ভিডিও দেখতে সময় লাগে এক ঘন্টা, তাই দেখা হয় না। এখন পকেটে পকেটে বন্ধুদের স্মার্টফোনে থ্রিজি প্যাকেজ নেয়া,গান বাজনা- ট্রেলার কিছু দেখতে মনে হলো তখনই দেখে খায়েশ মিটাই। তবে সব সময় তা ভালো লাগে না। যাত্রাবাড়ীতে এক ইউনির বন্ধুর বাসায় গেলাম। তার দুই এমবিপিএসের স্পিডের নেট চালায়। দেখি তাঁর হার্ডডিস্ক ভর্তি সব পর্ন, টরেন্টে সব নামায়, ঘা গিনগিন করলো, আমি মনে মনে বললাম এরচেয়ে মাছিওয়ালা চায়ের দোকানই ভালো, আর মোবাইলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেটই আনন্দের। এত স্পিড পেলে আমি কত সিরিয়াল আর কত ডকুমেন্টারী দেখে ফেলতাম আর এরা কি দেখে? বয়স সাতাশ আটাশ হয়ে গেল আমরা পড়ে রইলাম সেই পর্ন যুগেই। যাত্রাবাড়ীর নাম আগামীতে হবে হারবাল অঞ্চল, কত প্রতিষ্ঠান,কত দেশী বিদেশী শহর বন্দরের নামে- ইউনানী হোমিওপ্যাথী হারবাল প্রতিষ্ঠান, কত দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময়ের চ্যালেঞ্জ, তা দেখে দেখে শুধু অবাক হতে হয়। কামরুল এসেছিল চিটাগাং থেকে তাঁর কাজিনের বিয়ে, রিকশায় ব্যাপক ঘুরছি যাত্রাবাড়ী রায়েরবাগ মাতুয়াইল দনিয়া অঞ্চল, দুই জনের কেউই এই অঞ্চল চিনি না। কামরুল তাও আমার চেয়ে এগিয়ে আছে সে চিনে শনির আখড়া। শনির আখড়ার নাম যে শনি মন্দিরের কারনে সেখানে ঢূকলাম, দারুন শান্তশিষ্ট একটা জায়গা। তবে অবাক হলাম সেখানে অনেক হিজাবী মেয়ে বন্ধুর সাথে বসে আলাপ করছে ও ডেট মারছে, কেউ কেউ মারছে আড্ডা, এরকম উদ্ভট অবস্থান দেখে অবাক হলাম। আমাদের মসজিদে কোনো হিন্দু ছেলেমানুষই যদি ঢূকে তবে আমরা কত ফতোয়া- কত হালাল হারাম বাছবিচারে নেমে পড়বো। মোহাম্মদবাগ নামে একটা জায়গা সেখান থেকে সামনে গেলে একটা বটতলা আছে, পাশে ওয়াসার প্রজেক্ট। ওই জায়গাটা খুব সুন্দর। বর্ষাকালে নাকি আরো সুন্দর হয় হয়। ব্লক ব্লক করে দেয়াল তোলা, সেই দেয়ালের উপর দিয়ে হাটলে নিজেকে কেমন জানি শুন্য শুন্য মনে হয়। তবে সন্ধ্যার পর ঐ জায়গা এত নীরব হয়ে যায়, যেন র্যাব এসে এখনই ক্রসফায়ার করতে আনবে কাউকে। যার সাথে কামরুলের ভাইয়ের বিয়ে হবে সেই মেয়ের বাসায় লাগেজ নিয়ে গিয়েছিলাম। মেয়ের বাসা এমন এক জায়গায় যেখানে আন্ডারগ্রাউন্ড থাকলে কারো সাধ্য নাই আপনাকে উদ্ধার করে। আর সব মসজিদের নামে এলাকার পরিচয় আর এত গিঞ্জি যে দুটো রিকশা এক সাথে যেতে পারে না, প্রথমে থামাতে হয় তারপর মানুষের বাড়ীর গেট ঘেঁষে রিকশা আগাতে হয়। আর প্রতি রাস্তায় রাস্তায় বিশাল বিশাল মসজিদ যার কারনে জ্যাম আরো ঘনিভুত। নাম গুলাও প্রতিষ্ঠাতার নামে- হোসেন আলী মসজিদ, চানভানু মসজিদ, হাজী সাব মসজিদ, মেয়ের বাসায় যখন গেলাম নানান পদের মিষ্টি আর সন্দেশ দেখে মন জুড়ে গেল। কামরুল ভদ্রতা করে কিছুই খায় না। আমার ভাইয়ের তো আর বিয়ে না তাই সব মিষ্টি ঝটপট গিললাম। আর রাতে যাত্রাবাড়ীর এক চায়নিজে বিয়ে সেখানেও ব্যাপক খানা দিলাম। তবে আমরা বসার আগেই খাবার শেষ, দুশো লোকের আসার কথা,খেয়ে ফেলছে অলরেডি সাড়ে তিনশো, কামরুল আর আমি অপেক্ষা করে বরের সাথে বসলাম। খেয়েদেয়ে সিএঞ্জি দিয়ে ডাইরেক্ট বাসায়। সিএঞ্জি চালককে বললাম ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যান মামা, রাত এগারোটা বলেই তিনি কথা রাখলেন। দারুন ফ্লাইওভার, আলোতে চকচক করছে, এর আগে আমি গাড়ীতে এই ফ্লাইওভার পার হয়েছি তেমন সিগনিফিকেন্ট কিছু লাগে নাই। একা একা যখন যাচ্ছি তখন দারুন লাগলো। মনে হচ্ছিলো ব্যাটারী চালিত রিকশায় গেলে আরো মজা পেতাম।
গোলাম আজমের মরনে যথেষ্ট শান্তি পেয়েছি। আরো শান্তি পেয়েছি বাধনের জুতা নিক্ষেপে। আজকে শান্তি পেলাম নুরুল কবীরের এক টকশো ব্যাখায়, 'যে বাধনের জুতো শুধু গোলাম আযমের লাশের দিকে শুধু নয়, এই সরকারের চেয়ে সুবিধাবাদী আতাতের বিচার ও ৪৩ বছরের যে বিচারহীনতার কালচার তাও নিয়ে।' নুরুল কবীরকে অনেকে বলে বিএনপি জামাতের লোক, কিন্তু আমি টিভিতে টকশোতে যখনই দেখি না কেন, উনাকে কখনও বিএনপির সাফাই গাইতে শুনি না। জামাতকেও উনি তীব্র ভৎসনা জানাচ্ছেন আমার দেখা অনেক অনুষ্ঠানে। হয়তো বার্গ্ম্যান তাঁর পত্রিকাতে ফ্রীল্যান্সিং করে বলেই এই ধারনা। কাল নিজামীর রায় হবে, ধারনা করি আরেকটা আরাম আয়েশ দন্ডের ব্যাবস্থা হবে, বাসা কিংবা জেল থেকে আসা তাঁর জন্যেও ৩০ পদের খাবার থাকবে। আর যদি তা না হয় তবে চিন্তায় পড়বো আপিলে হয়তো আবার আরামদন্ডের ব্যাবস্থা আসবে। কারন যে সরকার বিদেশীদের সার্টিফিকেট পাওয়ায় এত মত্ত তারা দেশীয় দলের সাথে একটা বোঝাপড়ায় যাবে না- তা কিভাবে হয়। আর জামাত এত চুপ, তাঁদের নানান নেতারা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় কিসের ইঙ্গিত এগুলো তাতো বুঝাই যায়। কিছুদিন আগে ট্রেনে বসে ছিলাম, আমার পাশের যাত্রীকে কেন জানি মনে হলো এই লোক জামাতী। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই কিছু মনে করবেন না আর আমি পুলিশেরও লোক না, আপনি কি সংগঠন করেন? সে বললো হ্যা, আর সেই কাজের জন্যই ঢাকা যাবে সেখান থেকে যাবে চাঁদপুর। কি পরিমান ডেডিকেশন এদের, আর আমাদের ডেডিকেশন শুধু ফেসবুকে আর সরকারের দয়ায় উপর নির্ভরশীল। আর আমাদের ডায়লগ সেই শাহারিয়ার কবীরের মতোই, 'আওয়ামীলীগকে চাপ দিলে কাজ হয়, বিএনপিকে চাপ দিলে কাজ হয় না, চাপ না দিলে আওয়ামীলীগ আর বিএনপি একই। তাই আমরা আওয়ামীলীগের সাথে থাকি। কারন আওয়ামীলীগ আমাদের কথা শুনে।' এরকম সীমানাহীন মন্দের ভালো রাজনীতির আর কতদিন। তাও এই সমস্যা আছে- থাকবে চলবে, সামনে বিএনপি আসবে, আবার আওয়ামীলীগ আসবে, এইসব কুরাজনীতি নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। এখনো যেমন আছি!
আজ নাকি এবির জন্মদিন। মানে এবির যে ইয়াহু গ্রুপ সেখান থেকে এই ব্লগ তার জন্মদিন, আমি এই ব্লগেও এক্টিভ এর যৌবন শেষে, তাও অনেকে আমাকে এবির দালাল মনে করে। আমি আসলে দালাল কিনা জানি না তবে, এবির কারো সাথে সেরকম যোগাযোগও নাই এখন, তাও এখানেই লিখতে ভালো লাগে। এই ব্লগের সবার নিস্ক্রিয়তা, লোকজনের খুব কম উপস্থিতি, বেশির ভাগ পুরোনো মা্নুষের চলে যাওয়া সব আমাকেও হতাশ করে। তাও লিখি কারন আমার কাছে এরকম ব্লগ লেখার চিরচেনা জায়গা নাই। আর অন্যসব জায়গা গুলোতে চেষ্টা করলেই লেখা যাবে কিন্তু আমার ইচ্ছা নাই। এই ব্লগে আগে যখন সবাই ছিল, তখন সবাই আমাকে বলতো- শান্ত লেখো না কেন? এখন আমি লিখি কেউ লিখে না। তবে আমি শিউর থাকি তারা আমার লেখা পড়েই হয়তো তাঁদের সময় সুযোগ অনুসারে। কতিপয় মানুষের অনুপ্রেরনায় আমি এই ব্লগে এত লিখি। যারা এখনো আমার পোষ্টে আসে কমেন্ট করে। তাঁদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হই। আর যারা এখন এই ব্লগেই নাই আসবেও না হয়তো কোনোদিন তাঁদের কথাও প্রতি পোষ্টেই মনে আসে। তাঁদের মধ্যে লীনা আপু আর কামাল ভাইয়ের নাম আসবে সবার আগে। একটা সময় আমাকে দিয়ে লেখানোর জন্য, আমাকে ক্রমাগত উৎসাহ দেয়ার জন্য, এই দুইজন মানুষের ঋণ কখনোই শোধ হবে না।
ফার্স্ট কমেন্ট।
এজন্যই বলে মক্কার মানুষ হজ্ব পায়না। তুমি একদিন যাত্রাবাড়ি এসেই কত কিছু দেখে ফেললা। আর আমার জন্ম এই জায়গাটাতে অথচ আমি এখনো কোন কিছুই চিনিনা শুধু আমার বাসা থেকে মেইন রোডে যাওয়ার জায়গাটা ছাড়া।
বাই দ্যা ওয়ে, হ্যাপী বার্থডে টু প্রিয় ব্লগ।
তুমি যা যা চিনো আমি চিনিনা। ফ্রি সময় ছিল, প্রিয় বন্ধু ছিল, তাই ঘুরেছি, নয়তো আমিও তোমার মতো।
হ্যাপি বাড্ডে টু আস অল!
দুপুর থিকাই জম্মদিনের লেখা পড়তে মন চাইতাছিল, এখন আপনেরে দেইখা ভাল্লাগতাছে।
রাজনীতির খেলা নিয়া কথাবার্তা আর ভাল্লাগে না। সরকার এত কিছু নিয়ন্ত্রন করে, পর্ন ইন্ডাস্ট্রিটারে শক্ত একটা ঝাঁকি দিতে পারলে ভালো হইত অনেক। এফবি যদি একদিনের নোটিশে বন্ধ করার সিস্টেম থাকে, টরেন্টে কি কোন কিছু করার মত ব্যাবস্থা করা যায় না?!
তুমি সচলায়তনে ট্রাই দাও আবার। এবার হবে! এই ব্লগের কোনোকিছুই নাই!
আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু!
আই গেস,
আই এম জাস্ট এনাদার
ওয়ান লাইফ ওয়ান ব্লগ
কাইন্ড অফ বয়।
এত প্রেম আমাদের, তবুও এই ব্লগে কিছুই হবে না
কিছু একটা হতেই হবে,
এমন তো কোন কথা নেই।
কেবল লেখার আনন্দে লেখার,
কথকতার খেলার আনন্দ কি কিছু কম?
সেই জন্যেই তো এখনও আছি!
সেটাই!
মন্তব্য করুন