ইউজার লগইন

সুমনামির ভেতরে!

ফেসবুকে না থাকার সুবিধে অসুবিধা হলো ভাইরাল জিনিস নিয়ে জানা বোঝা যায় একটু পরে। যেমন আজ দুপুরে সোহানকে ফোন দিয়ে জানলাম বেগুন নিয়ে আগুন মাখা ইস্যু হয়ে গেছে। পরে রাতে জেমসের মুখে শুনলাম ঘটনা। ব্যাপারটা বিস্ময়কর ও হাস্যকর দুটোই লাগলো। এমনিতেই বারেকে বসলে আমি দেশের রাজনীতি নিয়ে হালচাল জানতে পারি। বিএনপি ফ্যান সবাই বারেক সাহেবকে ঘিরে ধরে, বারেক সাহেব রাহুল দ্রাবিড়ের মত ব্যাটিং করেন আওয়ামীলীগ নিয়ে। সেখানে দল করতে গিয়ে অনেক কথাই ভুল ঠিকের বাইরে গায়ের জোরের। তবে আমি ভাবি সাধারণ মানুষের এই তেল, কোনো দলই তাদের দু চার আনা উপকার করে নাই তাও কি কঠিন ভক্তি দলের প্রতি। আমরা লীগ বিএনপি না করলেও আমাদেরও আছে নানান এজেন্ডা। এই যে যেমন সুমন বাংলাদেশে গান গাইলো, তাই নিয়ে আমরা দুই পক্ষ হয়ে গেলাম ফেসবুকে। কেউ কেউ সুমনের বাংলা গানের জীবন্ত ইতিহাস কিংবা ব্লগার হত্যার সময় সুমন কি বলেছিল এসব নিয়ে। আমি এখানেও মধ্যপন্থী। আমার সুমনের গান খুব ভালো লাগে, কিন্তু তাই বলে তার পক্ষে লড়বো এরকম ভরসা নাই। বয়স হলে মানুষ অনেক ভুলবাল বকে। ওনাকে ডিফেন্ড করার লোকও আছে। গালাগাল দেয়ার লোকও আছে। আমার চুপচাপ গানটাই ভালো লাগে।

সুমনকে নিয়ে সবচেয়ে সুন্দর কথা শুনেছিলাম, নবারুণ ভট্টাচার্যের লেখায়। তিনি জানিয়েছেন, 'সুমন বাংলা গানের জন্য একটা ইভেন্ট। তাঁকে সেলিব্রেট না করে পারা যায় না।' আমিও বিশ্বাস করি। যদিও আমার এই বিশ্বাসের জায়গা এসেছে অনেক পরে। সুমনের অল্প কয়েকটা গানই আমি জানতাম। শুনেছিলাম ২০০১ সালে ভাইয়া পিসি আনলো বাসায় তখন। তারপর নিজের যখন পিসি হলো, ঢাকায় জীবন, কিছুটা বড় বড় হয়ে গেছি, তখন সুমন মন প্রাণ ঢেলে শোনা শুরু। তখন দেখা গেল সুমনের বেশির ভাগ গানই আমার শোনা শেষ। কিন্তু বারবার শোনা হয় নাই। বারবার শোনা এবং সুমনকেই শুনতে হবে এটা আমার শুরু হয় আজ থেকে বারো বছর আগে। যখন আমি বাসায় একা থাকি। ততদিনে একেকটা গানের বয়স ১৫-২০ বছর আগের গান হয়েছে। কিন্তু এখনও যখন শুনি মনে হয় এতো আমার সময়। আমার সুমন নিয়ে ভালো ভালো দুটো লেখা আছে বিডিনিউজে। কারো পড়তে মনে চাইলে খুঁজে পড়তে পারেন। এখনও আমি যখন সুমন শুনি একটা মোহে থাকি। সব গান শুনতেই থাকি ও শুনতেই থাকি। অনেক বিষুদবারের রাত আমার যায় খালি সুমন শুনে শুনেই। আমার বান্ধবীর এক বন্ধু ছিল তার সুমনের সব গান মুখস্থ। আমার তেমন না। সুমনের শত শত গান, আমি মুখস্থের চেষ্টা করি না। সুরে ও কথায় আচ্ছন্ন থাকি।

তবুও আমি সুমনের প্রোগ্রামে যেতে চাইনি কারন টিকেটের দাম আর সেকেন্ড হলো গান লাইভ শোনার চেয়ে একা একা নিজের রুমে শোনাও আমার কাছে কম উপভোগের না। আর সুমন নিয়ে মানুষের এত কৈফিয়ত ও কল্পিত শত্রুর সাথে যুদ্ধ, আমার ভালো লাগে না। তবুও আমাদের আড্ডার সবাই গেল, তাই আমারও যেতে হলো। বিশেষ করে আমরা সবাই মিলে শুনবো, এই ব্যাপারে আফজাল ভাই ও জেমস খুবই উৎসাহিত ছিল। তো অবশেষে গেলাম একুশে অক্টোবর। আমরাই ছিলাম ১২-্১৩ জন। চেনা ও পরিচিত মানুষের মুখ দেখলাম, কারো সাথেই তেমন আলাপ করি নাই। আমাদের লক্ষ্য উপরে গিয়ে সিট দখল। দখল করার পর দেখি বাজে মাত্র চারটা। এই নিজেরা নিজেদের ভেতর আড্ডা দিচ্ছিলাম। অবশেষে সুমন আসলেন। গান শুরু করলেন। আমি সুদীপ্ত আর সুমু এক সাথে ছিলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো একটা অন্য জগতের কিছু ঘটছে। প্রবাসী বাঙ্গালীর গান যেটা আমি অনেকদিন আগে আমরা বন্ধুতে লিখেছিলাম। গল্প গুলো নতুন না। আমরা যারা সুমনের গান শুনি তাদের কাছে আসলে নতুন কিছু নাই। ইন্টারনেটে প্রাপ্ত সুমনের গান ও সাক্ষাৎকার বেশিরভাগই শোনা। আমি খালি গান শুনছিলাম। আর কোনোদিন হয়তো শোনাও হবে না সামনাসামনি। কয়েকটা গান সুমন একটু সাধারণ গেয়েছে। কয়েকটা গান হয়েছে এত সুন্দর, সারারাত জ্বলেছে নিবিড়, তোমার তুলনা, এক মুহূর্তে ফিরিয়ে দিলে, তুমি ছিলে হাফিজের, বাশুরিয়া, আমাদের জন্য। এত ভালো লেগেছে শুনতে আরো ভালো লাগতো যদি গাইতেন, কাঙ্গালপনা, নবাব, সাড়া দাও, সে চলে গেলেও। তোমাকে চাই দিয়ে শেষ হয়েছে আরো দু চারটা গান গাইলে ভালোই লাগতো। তবে সুমনের নতুন কথা নাই, যা বলেছেন ওসব আমার আগেই জানা আর বাংলাদেশকে নিয়ে বাড়িয়ে বলা। তবে সুমন যখন গাইতে শুরু করেন, আমি যাকে ভালোবাসি। আহ! আমার শোনা সুমনের অন্যতম সুন্দর একটা গান। আমার চোখ দিয়ে পানি এসে পড়েছিল। মনে হচ্ছিলো এই গান সুমন গাইছে খালি আমার জন্যই। এই একটা গানের উসিলাতেই টিকেটের অতিমুল্য মাফ করে দেয়া যায়। ফেরার সময় সবাই সবার চেনা মানুষ নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। আমি চুপচাপ এক চায়ের দোকানে বসে ছিলাম। প্রবর রিপনের মত স্টার আমাদের সাথে আড্ডা দিল, সুমনের ঘোরটাই কাটছে না যেন। রিকশায় ফিরতে ফিরতে আমি শুভ ভাইকে বলছিলাম, কি অসুমনীয় আমাদের যাপন ও বেঁচে থাকা। চায়ের দোকানে ফিরে সেদিন খুবই উচ্ছসিত ছিলাম। সুমনের আনন্দে মনে হচ্ছিল সব তুচ্ছ। এরপরের দুই তিন দিন ল্যাপটপ নিয়ে বসলেই খালি সুমনের গান। এভাবে চলে গেল অক্টোবরের শেষ দিন গুলো।

পোস্টটি ৪ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


ইশ, তুমি তোমার আনন্দটা এত সুন্দর করে লিখলা, পড়েই কি চমৎকার লাগলো। যাইতে পারলে ভালো হইতো অনেক। যাই হোক, কিছু আফসোস থাকা ভালো।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!