আনন্দগুলো যেন অতীতের সম্পত্তি, আর যন্ত্রণাগুলো বর্তমানের...
ইদানিং নানা অদ্ভুত চিন্তা মাথায় ভর করে। এই যেমন, কয়েকদিন ধরে কেবলই মনে হচ্ছে - 'ভালো আছি' কথাটা চিরকালের জন্যে পাস্ট টেন্সের অধিকারে চলে গেছে; প্রতিটি মধুর ঘটনাই যেমন যায়! নিশ্চয়ই ভাবছেন - শুধু মধুর ঘটনাই কেন অতীত হতে যাবে? অতীত তো হয়ে যায় সব ঘটনাই - আজকের বর্তমান, আগামীকাল হয়ে যাবে অতীত, এমনকি এই মুহূর্তের বর্তমান একটু পরই চলে যাবে অতীত কালের দখলে! হ্যাঁ, আপনাদের মতো আমিও সেটা জানি - এই ধরনের চিন্তার প্যাটার্নের সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কিন্তু কিছু সত্য যেন কখনো-কখনো সবার চোখের আড়ালে থাকে, যেগুলো নিয়ে সম্ভবত খুব বেশি ভাবি না আমরা। অন্তত আমার সেরকমই মনে হচ্ছে আজকাল! মনে হচ্ছে - সব ঘটনাই অতীত-কালের সম্পত্তি হয়ে যায় না, কিছু ঘটনা চিরকাল ধরে ঘটমান থাকে। সে-সব ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো অতীত থাকে না, ভবিষ্যতও থাকে না - 'কাল' হয়ে ওঠে মাত্র একটি, সেটি বর্তমান কাল - তা-ও 'ঘটমান বর্তমান।' মানে ঘটেই চলেছে, বিরামহীনভাবে। এই যেমন, আমাদের জীবনের নানাবিধ দুর্ভোগ। একটা কাটিয়ে উঠতে-না-উঠতে আরেকটা। ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে, পেশাগত জীবনে, সামাজিক জীবনে, জাতীয় জীবনে কেবলই দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ। একটার পর একটা। স্বস্তি নেই এতটুকু, কোথাও। এগুলোর যেন কোনো অতীত-ভবিষ্যৎ নেই, আছে শুধু বর্তমান। একবারে সুনির্দিষ্ট উদাহরণ চান? না, আমার পক্ষ থেকে উদাহরণ না দিলেও চলবে। একটু চোখ ও মন খুলে আপনার চারপাশে একটু তাকান, দেখবেন - কিছু মানুষ সারাজীবন ধরে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মার খেয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনকে বলা যায় - মার খাওয়া জীবন! গ্লানি-দুঃখ-বেদনা-অপমান ইত্যাদিই হচ্ছে তাদের একমাত্র-অনিবার্য প্রাপ্য - তাদের যেন আর কোনো প্রাপ্তি নেই! তাদের জীবনে এই মার খাওয়ার ব্যাপারটা কখনো অতীত হয়ে যায় না! আরো উদাহরণ? তাহলে বলি - দেখবেন, কিছু মানুষ কেবলই ভোগান্তির শিকার হয়ে চলেছে। কোনো কাজই তারা সহজ-সুন্দরভাবে শেষ করতে পারছে না। হাজার-হাজার বাধা আসছে, সেই পাহাড়সম বাধা পেরোতেও পারছে না তারা। ফলে সব কাজে অনিবার্য ব্যর্থতাই তাদের নিয়তি। এই ধরনের মানুষদের জন্য ব্যর্থতা ব্যাপারটা চিরকাল ঘটমান-বর্তমান, কখনোই অতীত নয়! আর এই সবকিছু দেখে আজকাল আমার এই ধারণা হতে শুরু করেছে - অতীত কালটা খুব চুজি, বর্তমানের সব ঘটনাকে সে নিজের অঞ্চলে প্রবেশাধিকার দেয় না; দেয় শুধু মধুর-সুন্দর-কাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোকে। আর অতীত-অঞ্চলে প্রবেশের ফলে এই মধুর ঘটনাগুলো তখন হয়ে ওঠে স্মৃতির অংশ, হয়ে ওঠে আরো মধুর, আরো কাঙ্ক্ষিত। এবং বেদনারও - যেহেতু এগুলোকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না, সেই অর্থে! ( যেমন, এই 'ভালো আছি' শব্দবন্ধটি। যেন স্মৃতির অংশই ওটা। আর তাই, যথার্থ কারণেই ,মধুর ও কাঙ্ক্ষিত। একই সঙ্গে বেদনারও - ফিরে পাওয়া যাচ্ছে না বলে!) বর্তমানের যে ঘটনাগুলোকে নিজের দখলে নিতে অস্বীকার করে অতীত, বা প্রত্যাখান করে প্রবেশাধিকার, সেগুলো বর্তমানেই থেকে যায়! অতীতে যেতে পারে না বলে সেগুলো চির-বর্তমান। ঘটমান-বর্তমান। যেমন... যেমন. কতোগুলো বলবো? বলে তো শেষ করা যাবে না। মন চাইলে আপনারাও বলতে পারেন, প্রিয় পাঠক।
একটা কবিতার কথা মনে পড়ছে খুব, এই প্রসঙ্গে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দ ভৈরবী -
আজ সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি
এমন ছিলো না আষাঢ় শেষের বেলা
উদ্যানে ছিলো বরষা-পীড়িত ফুল
আনন্দ ভৈরবী
পুরোটা টাইপ করার ধৈর্য নেই। পরে, কখনো হয়তো এই কবিতাটি নিয়ে কথা বলবো।
কে জানে, আমার অতীতের বেশীর ভাগ ঘটনাই বেদনার...
আবোলতাবোল চিন্তা থেকে লেখা শুভ, মনটা অবসন্ন হয়ে ছিল। সত্যিই তো আর ব্যাপারটা ওরকম নয়! বর্তমানের সবকিছুই নিজের গর্ভে নিয়েই অতীতকাল সৃষ্টি নয়! তবে, যে ঘটনাগুলো কেবল ঘটতেই থাকে সেগুলোকে নিয়ে আমার সন্দেহ হয়!
'মার খাওয়া জীবন' সুনির্দিষ্টভাবে কারো কারোকে কেবল অনুসরণ করেই যায়... এমন দুঃখীদের জন্য গভীর মমতা অনুভব করি।
আপনার লেখাগুলো পড়লে বোঝা যায়, একটা মমতাময়ী মন লুকিয়ে আছে আপনার মধ্যে।
অতীত বর্ত্তমান কোনোটাই তেমন আনন্দের না
কিছু বলার নেই...
লেখাটা আমার খুবই ভালো লেগেছে।
থ্যাংকস মীর।
একটা অদ্ভুত ঘটনা বলি। কয়েকদিন আগে (১০/১২ দিন হবে হয়তো) আপনাকে নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। মনে হলো খুব বড়ো কোনো ঝড়ের মুখে পড়েছেন, অনেক ধুলোবালি, নদীতে বিশাল বিশাল ঢেউ, আর এসবের মধ্যে আপনি একা, নিজেকে বাঁচাবার চেষ্টা করছেন - এইরকম অনেকটা। আমি এমনিতেই খুব ঘুমের সমস্যায় ভুগি, প্রচুর স্বপ্ন-দুঃস্বপ্ন দেখি, অল্পতেই ঘুম ভেঙে যায়। সেদিন আপনাকে দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। যাকে চিনিই না, তাকে নিয়ে আবার দুঃস্বপ্ন! অদ্ভুত না? ঘুম ভাঙার পরও চিন্তা হচ্ছিল। যোগাযোগের কোনো উপায় নেই বলে জানা হয় নি। ভালো আছেন তো?
হ্যাঁ ভালো আছি কামাল ভাই। জানামতে তেমন কোনো ঝামেলায় পড়ি নাই। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, কখনো পড়লেও কোনো সমস্যা হবে না। এমন শুভাকাঙ্খী বন্ধু থাকলে অজস্র ঝামেলার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায়।
প্রতিটি মুহূর্তই তো নিমেষে অতীত হয়ে যাচ্ছে । চিন্তা করি, থাক এই এখন যা খারাপ ঘটছে তা কি আর থাকবে? সব অতীত হয়ে যাবে । কিন্তু বর্তমানেই যে সেটার মুখোমুখি হতে হচ্ছে । বর্তমান বেশি কঠিন
বর্তমান তো সবসময়ই কঠিন। কিন্তু দুঃসময়গুলো যখন দীর্ঘায়িত হতে থাকে, দুর্যোগগুলো যখন শেষ হতে চায় না, তখন কি মনে হয় না - এই দুর্যোগ আর যাবে না, এটা থেকেই যাবে!?
স্পর্শ করেও কেমন ছুটে গেল। মন থেকে কথা শুরু করে, মাথা দিয়ে শেষ করলে যা হয়। কমন কিছু অবলোকন ছিল; লিখতে পারি না, তাই লেখকদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকি। প্রিয় লেখক প্রিয় বন্ধু কামালের কলমের দিকে তাকিয়ে থাকি। লেখ বন্ধু, সমাত্ম জীবনী লেখ। তোমার লেখায় অমর হয়ে থাকি।
অতিথি! নাম-টাম যেহেতু লেখেননি, চেনার প্রশ্নও ওঠে না!
'মন থেকে শুরু করে, মাথা দিয়ে শেষ' করেছি বলে মনে হয়েছে? হতেও পারে! তবে লেখার সময় মন আর মাথা আলাদা কিছু ছিল না। অবসন্ন মন নিয়ে খানিকটা ঘোরগ্রস্থ অবস্থায় লিখেছিলাম। যদি আলাদা হয়ে গিয়ে থাকে সচেতনভাবে সেটা করিনি। হয়ে গেছে আর কি!
সুন্দর একটা কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। তবে চিনতে পারছি না বলে একটু খুঁতখুঁত রয়েই গেল!
কামালভাই, কি যে সুন্দর করে মনের কথাগুলো বললেন!
কেন জানি লাগে, জীবনের যেটুকু আনন্দ সব এসে গেছে, সামনে র দিনগুলো যাবে কেবল বেচেঁ থাকার জন্যে কাটিয়ে যাওয়া। মন ছুয়েঁ যাওয়া আনন্দের দেখা পাবো না, - যেটা পাবার আগে উত্তেজনা আসবে, হোক না সামান্যই তবুও তার পরিসীমা বিস্তৃত থাকবে। সেই আনন্দটা আর যেন আসবে না।
থ্যাংকস জেবীন।
সব আনন্দ আমরা ফেলে এসেছি পেছনে, বর্তমানটা যন্ত্রণাদায়ক, আর ভবিষ্যৎ? ওটা নিয়ে কিছু ভাবতেও ভয় হয়...
সান্ত্বনা একটাই। অতীতও কখনো না কখনো বর্তমান ছিল।
চমৎকার বলেছেন...
কি হলো জ্যোতি?
এক বন্ধুর লিংক থেকে লেখাটা পড়লাম। আপনার অনেক লেখাই পড়েছি। ঈদসংখ্যায় যে উপন্যাসটা লিখেছেন সেটি কি বই আকারে বের করবেন? ভিষণ ভাল লেগেছিল সেটি। আপনার অশ্রু“ ও রক্তপাতের গল্প পড়ে আমার অশ্রুপাত হয়েছিল। এতো সুন্দর লেখেন আপনি, আপনার জন্য আমার সর্বসময়ের শুভকামনা প্রিয় লেখক।
এবার আসি এটি নিয়ে। মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত। বিধাতা কেন যে এত কষ্ট দিয়ে মানব পাঠিয়েছে তা তিনিই ভাল জানবেন। সহ্য যে করতে পারি এটিই বড়, তাইনা?
অনেক ধন্যবাদ রাহবার। অচেনা পাঠকের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দারুণ প্রেরণা দেয়।
জীবন তো এমনই। ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখ মিলিয়ে। নানা কারণে আমাদের ভালো থাকার হার কমে যাচ্ছে সেটাই যা দুঃখজনক!
আজকের বর্তমান তো কাল অতীত হয়ে যাবে। তখন কি সেই অতীতে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যাবে?
হ্যাঁ, যায় তো! আপনি পান না? শৈশবের কথা ভাবুন তো, পান কী না।
শৈশবের কথা বলি নাই ভাইয়া
আজকের বর্তমানের কথা বলছি। যেখানে যন্ত্রণা আছে। সাথে নিশ্চয়ই কিছু আনন্দও আছে।
আনন্দ যদি থাকে তাহলে সেটা অতীতে চলে যাওয়ার পরও খুঁজে পাবেন, তবে স্মৃতি হিসেবে।
ভাবছি কি বলবো ।
বুঝে নিয়েছি...
অতীত বা বর্তমান কোনটাই যেমন আনন্দের ছিলনা, তেমনি ভবিষ্যত আনন্দের হবে সেটাও কখনো মনে হয় না।
আপনারও মন খারাপ?
সবকিছুর জন্যে নিজেকে রেডি রাখলাম।
বিনা যুদধে নাহি দিব .....।
আপনার কাছ থেকে আশা - ভরসা জাগানো লেখার আশা রাখি মিয়া ভাই
বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদেনী - যে বলতে পারে, জীবনে তার হেরে যাবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
কিন্তু আশা-জাগানিয়া বা ভরসা-জাগানিয়া লেখা কিভাবে লেখে?
তাদের বা তার জীবন ভর্তি শুধু যুদ্ধই চলে, একটা শেষ হলে অন্যটা
আনন্দ ভৈরবী
-- শক্তি চট্টোপাধ্যায়
আজ সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি
এমন ছিলো না আষাঢ় শেষের বেলা
উদ্যানে ছিল বরষা-পীড়িত ফুল
আনন্দ-ভৈরবী।
আজ সেই মাঠে আসে না রাখাল ছেলে
কাঁদে না মোহনবাঁশিতে বটের মূল
এখনো বরষা কোদালে মেঘের ফাঁকে
বিদ্যুত্-রেখা মেলে।
সে কি জানিত না এমনি দু:সময়
লাফ মেরে ধরে মোরগের লাল ঝুঁটি
সে কি জানিত না হদৃয়ের অপচয়
কৃপণের বামমুঠি
সে কি জানিত না যত বড়ো রাজধানী
তত বিখ্যাত নয় এ হদৃয়পুর
সে কি জানিত না আমি তারে যত জানি
আনন্দ-সমুদ্দুর
আজ সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি
এমন ছিলো না আষাঢ় শেষের বেলা
উদ্যানে ছিল বরষা-পীড়িত ফুল
আনন্দ-ভৈরবী।
অনেক অনেক ধন্যবাদ মাসুম ভাই। এই কবিতাটি নিয়ে কিছু লেখার শখ অনেকদিনের। টাইপ করার কষ্টটা কমিয়ে দিলেন আপনি।
মন্তব্য করুন