তরুণদের নবজাগরণ ও কিছু তাৎপর্যপূর্ণ অর্জন
[তরুণ প্রজন্মের নবজাগরণ নিয়ে একটা ফেসবুক নোট লিখেছিলাম "প্রিয় তরুণ প্রজন্মের প্রতি : ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না..." শিরোনামে। লেখাটি এই ব্লগে পোস্ট করেছিলেন রন। খুবই সম্মানিত বোধ করেছি আমি, সন্দেহ নেই। খুব তাৎক্ষণিকভাবে রচিত ওই লেখায় কিছু ভুলভ্রান্তি ছিল, যেগুলো পরে ঠিক করা হয়েছে। ইচ্ছে ছিল, সংশোধন করার পর নিজেই লেখাটি পোস্ট করবো। কিন্তু একই লেখা দুবার পোস্ট করার ব্যাপারে মন সায় দেয়নি। তাই একই বিষয়ে নতুন একটি লেখা নিয়ে এলাম। ]
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ দাবিতে নতুন প্রজন্মের তরুণরা শুধু নিজেরাই জেগে ওঠেননি, জাগিয়ে তুলেছেন সমগ্র জাতিকে। আন্দোলনের চূড়ান্ত সাফল্য এখনো আসেনি বটে, তবে এ পর্যন্ত অর্জন ঘটেছে বহুবিধ। কয়েকটি উল্লেখ করি :
১. রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম বলে পরিচিত হয়ে ওঠা এই তরুণরা দেখিয়ে দিলেন, তাদের রাজনীতি-সচেতনতা বড়ো বড়ো বুলি আউরানো বুদ্ধিজীবীদের চেয়ে বেশি। কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর বুদ্ধিজীবীরা হতভম্ব হয়ে বসেছিলেন, আর তরুণরা সংগঠিত করেছেন তীব্র প্রতিবাদ।
২. মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগানগুলো ফের ফিরে এলো মানুষের মুখে মুখে, এই আন্দোলনের সুবাদে।
৩. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম নিয়ে যারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতেন, তাদের সব সংশয় ও দ্বিধা দূর হতে শুরু করেছে, কারণ তারা জানেন - এ দেশের তরুণরা কখনো কোনো আন্দোলনে পরাজিত হয়নি।
৪. অতীতের বিভিন্ন আন্দোলনের মতো এবারও তরুণদের ডাকে সাড়া দিয়ে শ্রেণী-পেশা-বয়স নির্বিশেষে লক্ষ মানুষ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, রাত-দিন তাদের সঙ্গে থেকে সমর্থন জানিয়েছেন। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো, তরুণদের প্রতি এ দেশের মানুষের আস্থা এখনো অটুট আছে। জনগণের কাছে এখনো তরুণরা সততা ও আপসহীনতার প্রতীক।
৫. এই আন্দোলন শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, খুব অল্প সময়ের ভেতরে ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এর মানে হলো, মানুষের মনে যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ছিল তারই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশের একটা সুযোগ এনে দিয়েছে এই আন্দোলন।
৬. শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যেসব কর্মসূচি ঘোষিত হচ্ছে, সেগুলো সারা দেশব্যাপি পালিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় তিন মিনিটের নীরবতা কর্মসূচি পালন করেছে দেশবাসী। কী যে অভাবনীয় এই নীরবতার শক্তি সেটি বুঝিয়ে দিলেন এই তরুণরাই। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয়েছে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের কর্মসূচি। আর ১৮ ফেব্রুয়ারি জামাত-শিবিরের সন্ত্রাসী হরতালকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছে দেশের মানুষ, তরুণদের আহবানেই। এই ঘাতক দলের হরতালকে কেউ কোনোদিনই সমর্থন করেনি, কিন্তু তাদের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড, ভয়ভীতি প্রদর্শন, নির্বিচার জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুর ইত্যাদির কারণে মানুষ ভয়েই ঘর থেকে বেরুতে চাইতো না। তরুণদের উদাত্ত আহ্বান মানুষকে শুধু সেই ভয় জয় করতেই শেখায়নি, শিখিয়েছে প্রতিরোধ করতেও। হরতাল ডেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে ঘাতক দল।
৭. একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় - তরুণদের কর্মসূচিগুলো শুধু সাধারণ মানুষই পালন করছে না, সরকারী কর্মচারি-কর্মকর্তারাও পালন করছেন। ১২ ফেব্রুয়ারির নীরবতা পালন কর্মসূচি পালন করেছেন সচিবালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ দেশের প্রায় সব সরকারি অফিসের কর্মচারি-কর্মকর্তারা। এটি অভূতপূর্ব। এমনকি নব্বইয়ের স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনেও এমনটি ঘটতে দেখিনি। সরকারি চাকরিজীবীদের নানারকম সীমাবদ্ধতা থাকে, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই সবকিছু উপেক্ষা করেই তারা সাড়া দিয়েছেন তরুণদের আহবানে। তরুণদের ডাক কত তীব্র হলে ঘটনাটি ঘটতে পারে, সেটি সহজেই অনুমান করা যায়। এরকম ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর মাত্র একবার ঘটেছিল। ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে অধিকাংশ সরকারি চাকরিজীবী কাজকর্ম থেকে বিরত ছিলেন।
৮. তরুণদের আন্দোলন শুধুমাত্র তাদের প্রজন্মের ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছে সর্বস্তরে। প্রতিদিন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যোগ দিচ্ছেন নানা বয়সের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হলো - শ্রমজীবী মানুষদের অংশগ্রহণ। একদিন কাজ না করলে যাদের ঘরে চুলা জ্বলে না, তারাও সারাদিনমান বসে থাকছেন প্রজন্ম চত্বরে। শ্লোগান দিচ্ছেন বজ্রকণ্ঠে, শরিক হচ্ছেন নানা কর্মসূচিতে, প্রকাশ্য সমর্থন জানাচ্ছেন তরুণদের প্রতিটি কথায়। যেন ফিরে এসেছে আরেকটি একাত্তর, আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। যে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল দেশের সর্বস্তরের মানুষ, নির্দ্বিধায়, নির্বিকল্পভাবে।
৯. তরুণরা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে, অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের কাছেও পৌঁছে দিতে পেরেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় আখ্যান এবং ঘাতক রাজাকারদের বিচার করতে না পারার গ্লানি ও বেদনাময় অধ্যায়। এখন প্রতিটি ঘরের প্রতিটি কিশোর-কিশোরী জানে, কী ঘটেছিল একাত্তরে; তারাও সোচ্চার হয়েছে ঘাতকদের বিচারের দাবিতে। একটি আন্দোলনকে তখনই সফল বলা যায় যখন সেটির চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ে।
১০. এই আন্দোলনের আরেকটি বড়ো প্রাপ্তি হচ্ছে - আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের ঘুম ভাঙানো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামাত ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তি, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করেছে, দেদারসে বিনিয়োগ করেছে, বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে, এবং তারই প্রভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের নামকরা সংবাদ মাধ্যমগুলো যুদ্ধাপরাধীদেরকে 'যাজক', 'প্রধান বিরোধী দলের নেতা', 'ইসলামী চিন্তাবিদ' ইত্যাদি বিশেষণে অভিহিত করে এই বিচারকে সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট একটা রাজনৈতিক ইচ্ছাপূরণ হিসেবে এতদিন ধরে প্রচার করে আসছিল। তারুণ্যের এই জাগরণ তাদেরকে বাধ্য করেছে ব্যাপারটার ভেতরে ঢুকতে এবং নতুন করে ভাবতে। প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলো এই গণজাগরণের পটভূমি হিসেবে একাত্তরের গণহত্যার কথা প্রচার করেছে এবং যুদ্ধাপরাধীদেরকে 'যুদ্ধাপরাধী' হিসেবে উল্লেখ করতে বাধ্য হয়েছে। এটি এক বিরাট অর্জন। জামাতের কোটি কোটি ডলার ব্যয়ের বিপরীতে তরুণরা কেবলমাত্র তাদের প্রতিবাদী অবস্থান দিয়েই আন্তর্জাতিক অপপ্রচারকে রুদ্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে। (এই লেখাটি তৈরি করার সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়টি আমার নজরে এনেছিলেন অনুজপ্রতিম তরুণ লেখক দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। এই সুযোগে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।)
১১. গণজাগরণ মঞ্চ থেকেই জামাত শিবিরের আর্থিক শক্তির উৎসগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের অর্থায়নে পরিচালিত ব্যাংক-বিমা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-কোচিং সেন্টার, মেডিকেল সেন্টার ও হাসপাতাল, গণমাধ্যম (টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা, ব্লগ ইত্যাদি), গৃহায়ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির তালিকা প্রকাশ করে এগুলোকে বর্জনের আহ্বান জানানো হয়েছে। জনগণ ইতিমধ্যেই সেই ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেছে। এই চিহ্নিতকরণের কাজটি অবশ্য বেশ আগেই করেছিলেন সাংবাদিক ও ব্লগার শওকত হোসেন মাসুম তাঁর একটি ব্লপোস্টের মাধ্যমে, যেটির শিরোনাম ছিল - 'জামাত শিবিরের প্রতিষ্ঠান : আসুন চিনে রাখি ও বয়কট করি', প্রকাশিত হয়েছিল 'আমরা বন্ধু' ব্লগে, জুলাই ১৭, ২০১০-এ। এই সুযোগে তাঁকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখি, আগে থেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে রাখার জন্য।
১২. এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড়ো অর্জন - আদালতের রায় প্রত্যাখান করার সাহস প্রদর্শন এবং রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করা। আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলার রায় প্রত্যাখান না করে এবং 'আদালতের রায় শিরোধার্য' এই আপ্তবাক্য মেনে নিয়ে ভুল করেছিলাম। আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শরীক হয়ে 'মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি'র কাছ থেকে তথাকথিত রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা আদায় করে নিয়েছিল জামাত, এবং পরবর্তীকালে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ২০০১ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল ঘাতক দলটি। এবার সেটি হতে দেননি তরুণরা। আদালতের রায় মাথা পেতে নেননি তারা, বরং গড়ে তুলেছেন দুর্বার প্রতিরোধ। রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছে তাদের দাবির কাছে মাথা নত করতে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনে যে ত্রুটি ছিল - (রায়ের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র অপরাধীর উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ রাখা হয়েছিল, রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিল না) - সেটি সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষের অপিলের সুযোগ তৈরি করে সংশোধিত আইন প্রণয়ন করেছে জাতীয় সংসদ। একইসঙ্গে যুদ্ধাপরাধের দায়ে শুধু ব্যক্তি নয়, সংগঠনেরও বিচারের বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। এই আইন প্রণয়নের ফলে জামাত ও অন্যান্য সংগঠন, যারা ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনার রাষ্ট্রীয় সুযোগ তৈরি হলো।
অনেক অর্জন সত্ত্বেও এই অসামান্য আন্দোলনটির চূড়ান্ত সাফল্য এখনো আসেনি। সেটি তখনই আসবে, যখন ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে এবং ঘাতকদের দল হিসেবে জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে। তরুণদের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে অন্তত তিনটি দাবি উত্থাপন করে সেগুলো পূরণের জন্য সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দেয়ার সময় এসেছে। দাবিগুলো হতে পারে এরকম :
১. ঘাতক রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে; ট্রাইবুন্যাল সেটি না দিলে সরকারপ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে; এবং সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করার সংবিধান-প্রদত্ত যে ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে, সংবিধান সংশোধন করে সেটি রদ করতে হবে, যেন কোনোভাবেই এই অপারাধীরা পার না পেতে পারে।
২. ঘাতল দল জামাত এবং এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. জামাত পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিতে হবে।
আশা করি জাগ্রত তরুণ প্রজন্ম তাদের প্রতিবাদী অবস্থানটি ধরে রেখে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তিকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অনড় থাকবেন, এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের নানামাত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন ।
[ফেসবুকে এ বিষয়ে লেখা আগের নোটটি এখানে : প্রিয় তরুণ প্রজন্মের প্রতি : ও আলোর পথযাত্রী, এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না...
অসামান্য একটি লেখা। আবারো পড়লাম।
অনেক ধন্যবাদ তানবীরা।
আমাদের অগ্রজেরা যখন এরকম লেখা লিখেন বলেই আমরাও ইনস্পিরেশন পাই...
বয়সে অগ্রজ হলেও এখন আপনাদের মতো তরুণ হয়েই আছি আপনাদের সঙ্গে।
ফেসবুকেই পড়লাম!
দারুন!
হ্যাঁ, এটা ফেসবুকে আমার দ্বিতীয় নোট। এবির নীতিমালায় ফেসবুকের ব্যাপারে বোধহয় কোনো আপত্তি নেই।
অসাধারণ লেখা।
ধন্যবাদ।
আবারো পড়লাম। আবারো বলি,তরুন প্রজন্মের দেশের প্রতি তীব্র ভালোবাসার আবেগ সমগ্র বাংগালীকে আবার এক করেছে। এটা ভাবতে যে কি ভীষণ ভালো লাগে!
আজ যে কর্মসূচী ঘোষণা করলো, সরকারকে যে আল্টিমেটাম দিলো। দেখা যাক, কি হয়। আমরা আশাবাদী। সমগ্র বাংগালী জাতিকে আমরা তো দেখিনি এভাবে জেগে উঠতে। তাই খুব আশাবাদী যে দাবী আদায় হবে।
জয় হোক তারুণ্যের।
দারুণ লেখা কামাল ভাই। আর অনেকদিন পর ব্লগে লেখা দিলেন, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
তরুণরা জেগে থাকলে জয় আসবেই। কোনো আন্দোলনেই সাফল্য ব্যাপারটা অল্প সময়ে ধরা দেয় না। এর জন্য প্রয়োজন হবে দীর্ঘ মেয়াদে রাজপথে আনদোলন চালিয়ে যাবার মতো ধৈর্য ও সাহস।
---
হ্যাঁ, অনেকদিন পর ব্লগে লিখলাম। আমার ব্যস্ততার ধরনটি তো জানেনই। নিয়মিত ব্লগিং করা খুবই কঠিন কাজ আমার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, জয়িতা।
অর্জন গুলো মনে রেখে সর্বোচ্চ সাফল্য আশা করি
সাফল্য আসবেই যদি ধৈর্য আর সাহসটি ধরে রাখা যায়।
আপনার লেখা আমি বরাবরই আগ্রহ নিয়ে পড়ি। আজ এই লেখাটি পড়লাম। ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ শফিক।
এই আন্দোলন নিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ লেখা লিখেছি আজকের 'কালের কন্ঠ'-এর সাহিত্য সাময়িকী 'শিলালিপি'-তে। এখানে লিংকটা রেখে যাচ্ছি। প্রজন্মের নবজাগরণ : অর্জন ও প্রত্যাশা
অস্বীকার করবো না যে হতাশা এক্টুর জন্যে হলেও ছুঁয়ে গিয়েছিল মনের কিনারা, তবে আশা একবারের জন্যেও ম্লান হয়নি!
অর্জন আসলেই কম নয়, চেনা শকুনের জ্বলজ্বলে চোখ চাক্ষুষ করা কিবা ভেড়া সেজে থাকা নেকড়ের ছাল খষে পড়া কি না হয়েছে এইক'দিনে, সর্বোপরি নিজেদের চিনেছি, নিজের মাঝে থাকা বারুদকে শিখায় প্রজ্জ্বলিত হতে দেখেছি! মুখচোরা এই আমিও যখনতখন চিৎকার দিয়ে স্লোগান আওড়াবো ভেবেছিলাম কি কখনো!
ধন্যবাদ কামালভাই, লেখাটা সেই আগের নোটটার মতোই দারুন হয়েছে। (আপনি দিবেন ভেবে রন মনে হয় সরিয়ে ফেলেছে এবি থেকে লেখাটা)
হ্যাঁ, অর্জন কম নয়, কিন্তু চ্যালেঞ্জটাও অনেক বেশি। একবার রাজপথে নেমে এলে বিজয় পাওয়ার আগে ঘরে ফেরার উপায় থাকে না। অনেক বড়ো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। আশা করি, তরুণরা এই ব্যাপারটা অনুভব করতে পারবেন। তারা জাতিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তনের মুখে। অপেক্ষা করছে আলোকিত রাজপথ, যদি তারা সেই পথের সন্ধান দিতে পারেন।
অনেক ধন্যবাদ জেবীন, সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আন্তর্জাতিক দুনিয়া ভেবেছিল এটি নিছক মৃত্যুদন্ডের আন্দোলন। সেদিন আমাদের অফিসে এসেছিলেন বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তিনিও এটিকে প্রথমে ফাঁসি চাই আন্দোলনের কথা বলেছিলেন। পরে আনিস ভাই (আনিসুল হক), ফারুক ওয়াসিফ, বেলার রেজওয়ানা আর টিআইবির ইফতেখারুজ্জামান নানা যুক্তি দিয়ে বোঝালেন বিষয়টি নিছক ফাঁসির আন্দোলন না। এই মেয়ে কি বুঝলো জানি না।
আমার কাছে কারণগুলো এরকম মনে হয়।
১. তরুণদের সরকার সম্বন্ধে আস্থা ছিল না। তারা মনে করেছিল আতাত করা হয়েছে। এই অর্থে এটা প্রথমে আওয়ামী লীগের আন্দোলন ছিল না। বরং প্রচ্ছনভাবে বিরোধী আন্দোলন। প্রথম দিন আওয়ামী সমর্থক কারো কারো স্ট্যাটাস পড়লে এর প্রমানও পাওয়া যাবে। পরে তারা বুঝতে পেরেছিল। এসব নিয়ে আলোচনা আরও পরে হবে।
২. এটা বিচার বিভাগের প্রতিও অনাস্থা। তরুণেরা মনে করেছে বিচার বিভাগ সরকারের নির্দেশে রায় বদলে দিয়েছে। সুতরাং এটি প্রতিষ্ঠান বিরোধী একটা আন্দোলন ছিলো বলা যায়। সবগুলো প্রতিষ্ঠান ধংস করার কুফল এটি।
৩. যদি তরুণেরা মনে করতো যে, কাদের মোল্লা ৩০ বছরেই জেল খাটবে, বের হতে পারবে না, তাহলে হয়তো আন্দোলন হতো না। কিন্তু সংশয় সবার মধ্যে ছিল। হয়তো রাজনীতির কারণে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেবেন। সুতরাং এটা এক অর্থে রাজনীতি বিরোধী আন্দোলনও বটে।
৪. এটা মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলন। তরুণেরা শিক্ষালয় ও কর্মক্ষেত্রে ঢুকে দেখছে তারা যে ধরণের উদারমনা, প্রগতিশীল, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী ও ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ বা সমাজ চায় সেটি হতে পারছে না শিবির বা ধর্ম ভিত্তিক দলে বিশ্বাসী চারপাশের কিছু মানুষের কারণে। এ কারণেও জীবনে প্রথম বারের মতো হলেও আন্দোলনে যোগ দিয়েছে অনেক তরুণ, কর্পোরেট তরুণেরাও।
আর অর্জন। যেদিন রাষ্ট্র, দেশ, সরকার বুঝতে পারবে, তরুণদের কোনো আস্থা নেই তাদের উপর, বদলাতে হবে-তাহলেই এটি হবে আসল অর্জন।
পাদটিকা: যে তরুণের সংশয় ছিল, মনে করেছিল আর ভোট দিতে যাবে না, কারণ সব রাজনৈতিক দলই এক, তারা আবার ভোট দিতে যাবে। কারণ তারা জানে, যদি ভোট দিতে না যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ পারবে না। জয় হবে বিএনপি-জামাতের। এটি হতে দেওয়া যাবে না।
সুতরাং আওয়ামী লীগ যদি এখন সব দাবি মেনে নেয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়, তাহলে আওয়ামী লীগই লাভবান হবে বলে আমার ধারণা। কিন্তু এই আস্থা কি আওয়ামী লীগের আছে?
এই অর্থে এ আন্দোলন রাজনৈতিকও।
আপনার এই মন্তব্য দিয়েই একটা লেখা তৈরি করা সম্ভব মাসুম ভাই।
সরকারের প্রতি অনাস্থা, আদালতের রায়ের প্রতি অনাস্থা, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার সম্ভাবনা (এটাও তাঁর প্রতি অনাস্থা) এবং মৌলবাদ বিরোধী অবস্থান সম্বন্ধে যা বললেন সবই সত্য। এবং শেষ কথাটি আরো গুরুত্বপূর্ণ। তবে, তরুণদের সংশয় এখনো কাটেনি। সরকার সত্যিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় নাকি এটাকে রাজনৈতিক গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চয় সেটা তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে। না করতে পারলে তাদেরই বিপদ। সরকার এবং আওয়ামী লীগ কি আদৌ সেটা বোঝে!?
যদি না বোঝে তাহলে বলবো তরুণেরা মাঠে নামলো, তারপর সেই সব তরুণদের রাস্তায় রেখে সরে গেল আওয়ামী লীগ। এখন নিরাপত্তা একটা বড় প্রশ্ন। এই নিরাপত্তা এখন সরকারকেই দিতে হবে। এটা যদি দলটি মনে না রাখে তাহলে সেটি হবে সব চেয়ে বড় পরাজয়।
তরুণদেরকে নিরাপত্তাহীনভাবে রাস্তায় রেখে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার বিশ্বাস প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।
ব্লগ-ফেসবুক-এ কয়েকদিন ধরে না আসতে পারলেও পত্রিকা পড়তে পেরেছিলাম। 'কালের কণ্ঠে' এই লেখাটা পড়ে গর্ব লেগেছে। যখন নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে লেখকদের মুখে কুলুপ আটকে বসে থাকতে দেখি তখন আপনার যৌক্তিক অবস্থান সবসময় শক্তভাবে চোখে পড়েছে। অসাধারণ একটি চিন্তাশীল লেখার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ লীনা। মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলে হয়তো নিরাপদ থাকা যায়, কিন্তু নিজের কাছে ছোট হয়ে যেতে হয়। সময়ের ডাকে কি সাড়া না দিয়ে পারা যায়? আমি তো এ-সবকিছুরই অংশ।
পড়তে একটু দেরি হয়ে যাবার পরও চমৎকার লাগলো পড়তে।
এর আগের লেখাটাও এবিতে আপনার নিজের পাতায় অন্তত স্থান পাওয়া উচিৎ।
আগের লেখাটিও অসম্পূর্ণ ছিল। আবার পত্রিকায় যে পূর্ণাঙ্গ লেখাটি লিখেছি, সেটি অনেক বড়ো। মানে, ঠিক ব্লগ উপযোগী নয়। তবু, নিজের পাতায় সেটি রেখে দেয়া যেতে পারে। পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। এবং পড়ার জন্য তো বটেই।
কালের কন্ঠ পড়ে আমার বউ ব্যাপক ভয় পাইছে। আপনার খবর আছে। ভাবছিলাম পার্টিটা বাসায় হবে। কিন্তু এখন তো হইল না....
এইটা বিশুদ্ধ চাপাবাজির একটা নমুনা। রিপোর্ট করে দুনিয়া 'ফাডালাইতেছেন' তাতে ভাবী ভয় পায় না, আর আমার লেখায় আপনার নাম দেখে ভয় পাইছে!? হুঁহ!

লেখনীতে চমৎকারভাবে তারুণ্যের গনজাগরণের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। লেখক কে এমন একটি অসাধারণ লেখনীর জন্য অভিবাদন, সালাম।
মন্তব্য করুন