ইউজার লগইন

চন্দ্রালোকের ছায়া-৪

images[9].jpgচন্দ্রালোকের ছায়া-১

চন্দ্রালোকের ছায়া-২

চন্দ্রালোকের ছায়া-৩

আমিও হাতে নেড়ে বিদায় জানিয়ে, দৌড়ে বাড়ির দিকে রওনা হলাম। উরারা’র এভাবে আসাটা আসলে বড় অদ্ভূত লাগছিল আমার কাছে, আর আমাকে যা সে বলল, তার বিন্দুমাত্র আমি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু যেভাবেই হোক, এটুকু অন্তত্ত আমি বুঝতে পারছিলাম যে, এই মেয়ে আট দশ জনের মত সাধারণ কেউ নয়। আমার প্রতিটা পদক্ষেপেই কেমন অস্বস্তিটা বাড়ছিল, কিছুতেই পেছনে ফিরে তাকানো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলাম না। আমি পিছু ফিরে তাকালাম এবং দেখলাম, উরারা আগের মতই ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এক ঝলক তাকে দেখে বুঝতে পারলাম, সে নিবিষ্ট মনে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে।
বিষয়টা আমাকে খুবই নাড়া দিল, অপরিচিত একজন আমার সাথে কথা বলেছে সেই জন্য নয়, আমি আসলে আগে কখনই অন্যকারও অবয়বে অনুভূতির এ্মন তীব্র প্রকাশ দেখিনি।
উরারা আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, উজ্জ্বল হেসে আবার আমার উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল। খুব দ্বিধার সাথে আমিও হাত নাড়লাম, তারপর আবার দৌড়াতে শুরু করলাম।
ঈশ্বরের দিব্যি দিয়ে বলছি, আমার সমস্ত ভাবনা জুড়ে এখন শুধু উরারা। আমি খুব গভীরভাবে ভাবছি, “কে হতে পারে?” ঘুরেফিরে একটা ভাবনাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সকালের সূর্যের আলোয় দেখা সেই রহস্যময়ি উরারা’র বিশেষ ভঙ্গী এবং তার রহস্যময়তা, শুধু আমার জাগরণেই নয়, একান্ত গভীর সমস্যার মত, দামি স্বর্ণালংকারের অপরূপ কারূকাজের মত উরারা আমার ঘুমন্ত মগজের ভেতর ও সেঁধিয়ে রইল।


হিতোশির ছোট ভাইটা দেখতে খুব একটা হিতোশির মত নয়। এমন কি ওকে অন্য কারো সাথে মেলানোও ভার। ও একেবারেই অন্যরকম। ওর চিন্তাভাবনা, কোন বিষয়ের প্রতি ওর সাড়া দেবার ভঙ্গি, সব সব আলাদা। কোন কিছু জানার প্রতি ওর রয়েছে প্রবল আগ্রহ, তেমনি কৌতুহল প্রবণও বটে। ওর জীবন যাপন, চলাফেরা, জানা-শোনা সবই যেন ভিন্ন মাত্রায় সাজানো। মোদ্দা কথা, হিতোশির ভাইকে প্রথম দেখেই আমার যে কথাটি মনে হয়েছিল, সেটা হল-“এ ছেলে তার নিজস্ব জগত থেকে ছিটকে পড়লেও, অন্যের সাহায্য ছাড়াই নিজেকে সে রক্ষা করতে পারবে। আবার শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারবে। এতে কোন সন্দেহ নেই।“ ওর নাম, হিরাগি। এ মাসে ও ১৮ তে পা দেবে।

আমি আর হিরাগি, দেখা করব বলে, ঠিক করেছিলাম। স্কুল শেষ করে, পাশের একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের চারতলার কফি শপে ওর আসবার কথা। হিরাগি আমার সঙ্গে দেখে করতে এল। ওর পরনে ছিল, অনেকটা নাবিকদের পোষাকের মত দেখতে, হাই স্কুলের মেয়েদের ইউনিফর্ম । কোমর পর্যন্ত ছোট ব্লাউজ এর সাথে স্কার্ট পরা।
সত্যি বলতে কি, ওকে দেখে আমি বেশ বিব্রত এবং লজ্জা বোধ করছিলাম। কিন্তু ও এতই স্বাভাবিক ছিল যে, আমি সব কিছু ভালভাবেই সামলে নিলাম। মুখোমুখি বসতে বসতে এক নিঃশ্বাসে বলল, “অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করে ছিলে?” আমি না বোধক মাথা নাড়তেই, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বিনিময়ে আমাকে একটা ঝকঝকে হাসি উপহার দিল।
খাবারের ওর্ডার নিতে এসে, ওয়েট্রেস তার দিকে আপাদমস্তক একবার তাকিয়ে, কোন রকমে ফিসফিসিয়ে বলল, “ইয়েস স্যার।“ ওয়েট্রসের স্পষ্ট ধাঁধায় পড়ে গেছে বুঝতে পারি।

হিরাগি দেখতে মোটেও হিতোশির মত না। তবুও কখনো কখনো ওর মুখের একটুখানি আদল, আঙ্গুল নাড়নোর ভঙ্গি- আমাকে বার বার হিতোশির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি আমার হৃদস্পন্দন থেমে যাবে।
যতবারই হিরাগিকে দেখে আমার হিতোশির কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল, আমি ইচ্ছে করেই “উফ!” করে উঠছিলাম। আমার কণ্ঠে বিষ্ময়। হিরাগি হিতোশির মত করলেই,যেন আমি এটা করবই-এরকমই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।।
দুহাতে কফির কাপ ধরে, হিরাগি আমার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল, কি হয়েছে? এমন করছ কেন?
তুমি বার বার আমাকে হিতোশির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছ। “দেব ই তো! দাঁড়াও আমি হিতোশির মত করছি। হিরাগি ইচ্ছা করেই আবার হিতোশির অনুকরণ করে।‘
আমরা দুজনেই হাসতে থাকি। এভাবেই আমরা দুজন দুজনের অন্ধকার এবং আহত হৃদয়ে একটু আলো জ্বালি।


আমি তো শুধু হিতোশিকে হারিয়েছি। কিন্তু হিরাগি এক সঙ্গে দুজনকে হারিয়েছে। সে হারিয়েছে ভাই আর তার ভালোবাসার মানুষটিকে। ইউমিকোকে ভালোবাসতো হিরাগি। ছোটখাটো সুন্দর মত মেয়েটা হিরাগির সমবয়সী ছিল। দারুণ টেনিস খেলত। আমরা ৪ জনই কাছাকাছি বয়সের ছিলাম। ভালোই চলছিল সব কিছু। প্রায় প্রায়ই আমরা চারজন এক সঙ্গে হতাম। আমি প্রায়ই হিতোশির সঙ্গে ওদের বাড়ি যেতাম, আর ইউমিকো আসত হিরাগির সাথে। কতশতবার যে আমরা চারজন সারারাত আড্ডা দিয়ে আর গেম খেলে পার করেছি, তার ইয়ত্তা নেই।
যে রাতে ঘটনাটা ঘটেছিল, সেই রাতে হিতোশি ইউমিকোকে ওরা বাসা থেকে স্টেশনে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল। হিরাগি ইউমিকোর জন্য স্টেশনে অপেক্ষা করছিল। পথে যেতে হঠাত দূর্ঘটানার কবলে পড়ে ওরা। হিতোশির দোষে ঘটনাটা ঘটেনি তবুও ওরা দুজন সাথে সাথেই মারা যায়।

চলবে

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টুটুল's picture


চলুক...
পড়লাম... সুন্দর... পরের পর্বের অপেক্ষায়

শাপলা's picture


ধন্যবাদ টুটুল ভাই।

রাসেল আশরাফ's picture


আপনার স্মৃতিশক্তি বিরাট প্রখর। Crazy
সেই কবেকার সিরিজ আবার চালু করছেন।

চলছে চলুক।

শাপলা's picture


হে হে কেনু, ভালও লাগছে না? পুরানওগুলও পরা আস, ভালু লাগবে।

মীর's picture


এতদিন পর???? আগের গুলা তো ভুলেই গেছি। ও শাপলাপু এখন কি হবে?

শাপলা's picture


আগের গুলও ভুললে চলবে না। লিন্ক দিছি, নতুন করে পড়বে কিন্তু।

শওকত মাসুম's picture


চলুক

জ্যোতি's picture


আগেরগুলা ভুলেই গেছিলাম। যাক্ লিংকু দিছেন। এবার পরের পর্ব দেন। এত বড় বিরতি প্রাণে সয় না।

শাপলা's picture


ধন্যবাদ জ্যোতি।
ভালো থাকুন।

১০

রায়েহাত শুভ's picture


আগের পর্বগুলো রিভাইস দিয়া আসি Smile

১১

শাপলা's picture


ধন্যবাদ শুভ।
হন্তনি আরিগাতো গোজাইমাশিতা।

১২

তানবীরা's picture


চলুক...
পড়লাম... সুন্দর... পরের পর্বের অপেক্ষায়

১৩

শাপলা's picture


জ্বি আফা, পরের পর্ব আজ দিমু ভাবছি।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

শাপলা's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি ভালোবাসি, মা, মাটি, আমার আত্মজা এবং আমার বন্ধুদের যারা আমাকে প্রকৃতই বুঝতে পারেন।