হন্তারক
একটা গল্প শুনবে?
এটাই আপনার বিশেষ কথা? এর জন্য আমাকে এতদূর আনলেন? যুথি নির্বিকার ভঙ্গিতে কথাগুলো তারেককে বলে।
কেন নৌকায় ঘুরতে তোমার ভালো লাগে না?
তা লাগবে না কেন? খুবই ভালো লাগে। কিন্তু আপনি যে কারণে আমাকে এখানে ডেকেছেন, তা একটা পুরোন কৌশল।
তারেক একটু বিষ্মিত হয়ে যুথির দিকে তাকায়; তোমাকে নিয়ে নৌকায় ঘুরব এটার মধ্যে কৌশলের কি দেখলে তুমি?
যুথি বিজ্ঞের হাসি হাসে। “প্রেমে পড়লে ছেলেগুলো কেন যে এত বোকা হয়ে যায়, বুঝিনা। ‘ভালোবাসি’ এই কথাটা বলতে আমাকে আশুলিয়ায় আনতে হল, এটা কৌশল না?
তারেক তথমত খায়।
আপনি কিন্তু আমার ভালো প্রেমে পড়েছেন?
এভাবে বলছ কেন? তুমি পড়নি?
পড়েছি কিন্তু আপনাকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না।
তারেক যুথির দিকে আহত চোখে তাকায়। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না!
না ঠিক তা নয়, আপনি আসলে প্রেম করার জন্য অনেক বেশী পারফেক্ট আবার আপনার গল্প অনুযায়ী প্রেম করার জন্য একেবারেই আপনি বাতিলের দলে।
এটা কি ধরণের কথা বলছ, তুমি কি কোন কারণে আমার উপর বিরক্ত? সম্পর্কটা রাখতে চাও না? তারেক সরাসরি প্রশ্ন করে যুথিকে।
না, আমি মোটেও বিরক্ত নই। আমি যুক্তির কথা বলছি। আপনি দেখতে বেশ রূপবান। কথা বার্তায় মার্জিত, শিল্পমনা, অতি শিক্ষিত এবং রোমান্টিক। এতসব গুণ একজন মানুষের মধ্যে বিশেষ করে ছেলেদের মধ্যে দেখা যায় না বললেই চলে। সেই হিসেবে প্রেম করার জন্য আপনি আদর্শ পুরুষ। যদিও বয়স টা আমার চেয়ে একটু বেশি তবে ৩৬ ছেলেদের জন্য কোন বয়সই নয়।
আবার আপনি পেশায় একজন স্থাপত্যবিদ হয়ে দিনে দুপুরে আমাকে ভূতের ভয় দেখান, সে হিসেবে হয় আপনি পাগল অথবা ভূতের ভয়ে কাতর একজন মানুষ। তাহলে তো আপনাকে প্রেমিক হিসেবে এক কথায় বাতিল করাই যেতে পারে।
তানাকা’র ঘটনাটা মোটেও ভূতের গল্প নয় যুথি। তারেকের চোখ-মুখ শক্ত হয়ে আসে।
এবং আপনার কথামত মিলি এবং ফারিয়ার ঘটনাটাও রহস্যময়, তাই তো! তারেকের কথাটা টেনে নিয়ে যুথি মোক্ষম তীরটা ছুঁড়ে দেয়।
তারেক বিষন্ন ভঙ্গিতে দূরের জলরাশির দিকে তাকিয়ে থাকে, কিছু বলে না।
শরতের এই মেঘ মুক্ত পড়ন্ত বিকেলে, নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে, খুব মায়া হয় যুথির তারেকের জন্য। এমন সুন্দর সোনা ঝরা আবছায়া বিকেলে যুথি অনুভব করে- “এই ছেলেটা শুধু ভালো নয়, বাড়াবাড়ি রকমের ভালো। সৎ। সহজে মিথ্যা বলে না। গত এক বছরে যুথি তার যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছে। যুথির ইচ্ছা করে, তারেকের হাতটা ধরে শান্ত্বনা দিতে, আরো ইচ্ছা করে নৌকার পাটাতনে গা ঘেঁষে বসে, তারেকের গায়ের মৃদু সুগন্ধ নিতে। রিক্সায় তারেকের পাশে বসলে মৃদু অথচ গাঢ় সুন্দর গন্ধের সাথে দামী সিগারেটের গন্ধ মাখামাখি হয়ে অদ্ভূত একটা গন্ধ টের পায় যুথি, গন্ধটা মাঝে মাঝে ওকে পাগল করে তোলে। এখন যেমন হচ্ছে।“
আচ্ছা নিজেকে খামোখা কেন দোষী ভাবেন বলুন তো! খুব লজিক্যালি বললে, আপনি একজন দূর্ভাগা মানুষ। মিলির হৃদপিণ্ডে একটা বড় ফুটো ছিল। সেটা সে আপনার কাছে লুকিয়েছিল। তারপর অকস্মাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বেশ কিছুদিন হসপিটালে থাকার পর মারা যায়। আপনার মুখে যতটা শুনেছি এবং ভুলে যাবেন না, মিলি আমার কাজিন। আমি আপনার চেয়ে ভালো ওর সম্পর্কে জানতাম। এতে আপনার তো কোন দোষ দেখি না।
মিলি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার আগের দিন রাতে ওরা এসেছিল, যুথি! মিলি মারা যাবার আগের রাতেও। এটা তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে। তারেক যুথির দিকে না তাকিয়েই দৃঢ় গলায় কথাগুলো বলে। আর তাছাড়া ফারিয়ার কথা তুমি কি ভাবে ব্যাখ্যা করবে?
ভার্সিটি পড়ুয়া একটা মেয়ে, ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিল। ফেরার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। আমাদের দেশে তো এমন হরহামেশাই হচ্ছে। সব কিছু কেন নিজের করে নিচ্ছেন?
যত সহজভাবে তুমি কথা গুলো বলছ, বিষয়টা কিন্তু তত সহজ নয়। ফারিয়া মারা যাবার আগের দিন রাতে ওরা এসেছিল, ওরা আমাকে বলেছে, আমি যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি ফারিয়ার সাথে, বলতে চেয়েছি, আজ রওনা করো না। কিন্তু ও তখন রাস্তায়। আমার ফোন রিসিভ করতে পারেনি। তারেকের গলা ভেঙ্গে আসে।
এবার যুথি সত্যি সত্যিই তারেকের হাতটা নিজের মুঠোয় নেয়। দেখে, তারেকের হাতটা মৃদু কাঁপছে। আরেক হাতে তারেকের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিতেই দেখতে পায় তারেকের চোখ দুটো জলে ভরে গেছে।
ঠিক এভাবে কি যে সুন্দর লাগছে, তারেককে দেখতে! একদম দেব-পুরুষের মত। খুব কোমল গলায় যুথি বলে, দেখুন একজন ডাক্তার হিসেবে আমি গত এক বছর আপনার সাথে আঠার মত লেগে আছি, আপনার কোন মনোবৈকল্য নেই, আপনার আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ পাগল কিম্বা সাইকোপ্যাথ নেই। সেটা নিশ্চিত করেছেন আপনার মনোচিকিৎকসক। আপনার ব্লাড-প্রেশার ভালো, বড় কোন শারীরিক জটিলতা নেই। আপনি খুব যত্নের সাথে নিজস্ব পেশায় ভালো করছেন উত্তরোত্তর। আপনার লজিক ঠিক আছে। আপনার বিরুদ্ধে কোন ক্রিমিনাল কেইস নেই। তাহলে কেন একটা অধিভৌতিক ব্যাপার নিয়ে নিজের সাথে নিজে লড়াই করছেন?
তানাকা ছিল আমার ল্যাবমেইট। আমি পি এইচ ডি করবার জন্য প্রথম যেদিন জাপানে নামি, প্রফেসরের হয়ে তানাকাই প্রথম এসেছিল, আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে। মেয়েটার পুরো নাম তানাকা সুযুকি।
পুরো গল্পটা কোন দিন কাউকে বলা হয়নি, এমনকি পুরো গল্পটা আমি আমার সাইকিয়াট্রিস্টকেও বলিনি। গল্পটা শোনাব বলেই তোমাকে ডেকেছিলাম যুথি। প্লীজ পুরোটা মন দিয়ে শোন, তারপর তোমার লজিক গুলো খাটিও।
তার আগে বলুন, গল্পটা কেন আমাকেই শোনাতে হবে?
এবার তারেক ব্যাকুল হয়ে, যুথির দুহাত জড়িয়ে বুকের কাছে নিয়ে বলে, আমি তোমাকে ভালোবাসি যুথি। ভীষণ। মিলি এবং ফারিয়ার সাথে আমার পরিচয় ছিল, কিছুটা ঘনিষ্ঠতাও হয়েছিল। কারণ আমিই ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিলাম, তানাকাকে ভুলে বাঁচতে চেয়েছিলাম। ওদের সাথে হয়ত কোন একটা সম্পর্ক দাঁড়াত কিন্তু প্রথমে মিলি চলে গেল এবং তার দুবছর পর ফারিয়ার সাথে পরিচয় এবং সেও চলে গেল। আমি বাঁচতে চাই যুথি, তোমাকে আর হারাতে চাই না।
২
প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, “মিস্টার তারেক।“
সেটা ধরে এগিয়ে যেতেই ফর্সা সরু একটা হাত এগিয়ে দিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে মেয়েটি বলল, “আই এম তানাকা সুযুকি। নাইস টু মিট ইউ মিস্টার তারেক। আই এম ফ্রম টোকিও ইউনিভার্সিটি।“
মেয়েটা গড়পরতা জাপানিজ মেয়েদের চেয়ে যথেষ্টই লম্বা। কালো বিজনেস কোট আর কালো মিনিস্কার্টে ওকে যথেষ্ঠ আকর্ষণীয়া লাগছিল। সাধারণতঃ জাপানিজ মেয়েদের মধ্যে এরকম সৌন্দর্য বিরল। তারেকের অন্তত তাই মনে হল। চোখ জোড়া এশিয়ানদের মত কালো নয়, একটু বাদামী। চুল গুলো কুচকুচে কালো নয়। আর অপেক্ষাকৃত ভারী নিতম্ব আর সুডৌল আকৃতির স্তন জোড়া নিমেষেই যে কোন জাপানিজ মেয়ের চেয়ে তানাকাকে আলাদা করে ফেলেছিল।
তারেক পরে শুনেছে, তানাকার বাবা জাপানিজ এবং মা রাশিয়ান। সেই প্রথমদিন থেকে তানাকাই ছিল তারেকের গাইড, বন্ধু, ল্যাব মেইট সব সব।
রাস্তা-ঘাট দোকান-পাট চেনানো, জরুরী চিঠি পড়ে দেয়া কিম্বা তারেকের হয়ে প্রফেসরের সাথে লড়াই করত তানাকা। কোথাও ঘুরতে যাওয়া, কোন কোন রাতে পার্টি আর মদ খেয়ে মাতাল হওয়া, সব সব কিছুর সঙ্গি ছিল তানাকা।
তারেক বলে চলে,
পি এইচ ডি প্রোগ্রামের প্রথম বছর শেষ করবার পরপরই কোন এক বসন্তের শুরুতে আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। তিন দিন হসপিটালে থেকে যখন হোস্টেলে ফিরে এলাম, তার সাথে সাথে এক কথায় বলা চলে তানাকাও উঠে এল আমার রুমে। অফিসিয়ালি এক রুমে দুজন থাকা যায় না বলেই হয়ত একেবারে থাকল না কিন্তু সেখান থেকেই শুরু হল আমাদের এক সঙ্গে থাকা ।
যুথি, তুমি কি শুনে কষ্ট পাচ্ছ?
যুথি না সূচক মাথা নাড়ে কিন্তু ওর বুকের ভেতরটায় কোথায় যেন একটু মুচড়ে ওঠে। অচেনা তানাকে কি একটু হিংসে হয়?
তারেক আবার শুরু করে-
তানাকা খুব দুঃখি একটা মেয়ে। ছোটবেলা ওকে ছেড়ে ওর মা রাশিয়া চলে যায়। আর ফেরেননি তিনি। তানাকা যখন হাই স্কুলে তখন ওর বাবা, ওদের একটা নিজস্ব বাংলোর বাথটাবে ডুবে মারা যান। সেই থেকে তানাকা ভীষণ একা। আত্মীয় বলতে শুধু দাদার সাথে যোগাযোগ আছে। মাঝে মধ্যে তাকে দেখতে যেত। বাবা মারা যাবার পর থেকে, তানাকা পানিকে ভীষণ ভয় পেত। তাই ও সাঁতার জানা সত্ত্বেও আবার নতুন করে সুইমিং পুলে যাওয়া শুরু করে। এবার ওর সঙ্গী হই আমি। আমরা দুজনে কত যে সাঁতার কেটেছি পুলে।
চমৎকার ব্যালে জানত তানাকা। ওকে আমি তানি বলেই ডাকতাম। প্রতিবার আদরের আগে তানির সাথে আমাকে ব্যালেতে যোগ দিতে হত। ওর সে কি ভীষণ চেষ্টা! আমার সাথে ও যুগল নাচবে। এটা কেমন যেন একটা অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আরেকটা অলিখিত নিয়ম ছিল, তানাকা যখন যেখানেই যেত ওর সাথে থাকত ওর মায়ের দেয়া, একটা ম্যাট্রিয়শকা ডল। ডিম্বাকৃতি একটা ডলের ভেতর ছিল, আরো পাঁচটা ডল। মোট ছ’টা । এগুলো নাকি ওর বাবা যেদিন মারা যায় সেদিন বাবার বাথটাবের পাশে পড়ে ছিল। তানি তাই বাবার স্মৃতি হিসেবে ওগুলোকে কখনো হাত ছাড়া করত না।
আর বলা যায়, এখান থেকেই কিছু অদ্ভূত ঘটনার শুরু। তানি যখন আমার সাথে ঘুমাত কিম্বা ওকে যেদিন আমি আদর করতাম সব সময় মনে হত, ঘরের ভেতর আরো মানুষ আছে। কেউ যেন আমাদের দেখছে। আমার এই অনুভূতির কথা একদিন তানিকে বলতেই, সে অদ্ভূতভাবে হেসেছিল। বলেছিল, হ্যাঁ ওই পুতুল ছয়টা আমাকে পাহারা দেয়।
ওর কথা শুনে আমি হাসি। বুঝতে পারি মজা করছে। আমাদের দিন গুলো ভালোই কাটছিল। আমিও পি এইচ ডি শেষ করি। দেশে ফিরে আসব কিন্তু তানাকা বেঁকে বসল, না তাকে নিয়েই ফিরতে হবে। তাকে অনেক বোঝাই যে, আমি পোস্ট ডকের অফার পেয়েছি। ফিরব মাস দুয়েক বাদেই। এর মধ্যে আমি আমার পরিবারকে রাজী করিয়ে তার পর তোমাকে খবর দেব, তুমি চলে আসবে। আমরা বিয়ে করে তারপর দুজন এক সঙ্গে ফিরব।
প্রথমে খুব জেদ করলেও পরে তানি সব মেনে নিল। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম কিন্তু ওকে ছেড়ে আমার কিছুতেই ফিরতে ইচ্ছা করছিল না। একদিন তানি আমার বুকে মাথা রেখে বলল, সে কাল তার দাদাকে দেখতে যাবে, ফিরবে পরশু দিন।
চিচিবুর এক পাহাড়ের উপরে নির্জন বাংলো বাড়িতে যেখানে তানির বাবা থাকতেন, সেইখানেই তানির দাদাও থাকেন। বাড়িটা অদ্ভূত। জায়গাটা আরো অদ্ভুত। আমি গিয়েছিলাম দুবার তানির সাথে বেড়াতে। বিশাল তিন তলা বাড়িতে, রান্না ঘর এবং বাথরুম নীচ তলায় আর বাকী দুই তলা মিলে থাকবার জায়গা। জায়গাটার কয়েক মাইলের মধ্যে বাড়ি-ঘর বা দোকান পাট নেই। ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। ভীষণ নির্জন আর ভূতুড়ে জায়গা।
এই প্রথম তানি যাবার সময় ম্যাট্রিয়শকা ডলটা আমার জিম্মায় রেখে তার দাদাকে দেখতে গেল। এমন কি আমাকে সঙ্গে যাবার জন্যো সাধল না। যেদিন তানি চলে গেল, খুব একা লাগছিল আমার। সে রাতে র’ হুইস্কি খেয়েছিলাম বেশ কয়েক পেগ এবং এক সময় সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ মাঝ রাতে কান্নার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। অন্ধকার ঘরের আলো আঁধারিতে দেখি আমার কম্পিউটাররে টেবিলে রাখা কাঠের পুতুলটা আমার মাথার কাছে এসে আছে। ওটার চোখ জ্বলজ্বল করছে জীবিত মানুষের মত। তার পর ওটা ঘুরে ঘুরে কাঁদতে শুরু করল মানে কাঁদতে কাঁদতেই চক্রাকারে ঘুরতে লাগল। আর ওটার পেটের অংশটা ফাঁকা হতেই আরো পাঁচজন বেরিয়ে এল এবং কাঁদতে শুরু করল। সবগুলো পুতুলের চোখ ছিল জীবিত মানুষের।
সবগুলো পুতুল এক সঙ্গে একটা লাইন তৈরী করল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে রওনা হল, বাথরুমের দিকে। আমারো যেন কি হল, ঘোরে পাওয়া মানুষের মত ওদের পেছনে পেছনে চললাম। সব চেয়ে ছোট পুতুলটা এক সময় ঝাঁপ দিল বাথটাবে। আমি দেখলাম কোন কারণ ছাড়াই আমার বাথটাবটা পানিতে টইটুম্বুর হয়ে আছে। আর বাকী পাঁচটা পুতুল অট্টহাসি জুড়ে দিল। তারপর আবার বিলাপ করে কাঁদল, পুরো ঘর জিনিশ-পত্র ফেলে লণ্ড-ভণ্ড করল।
আমার ভয়ে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিলাম। হাতড়ে হাতড়ে ঘরের আর বাথরুমের আলো জ্বালতে যেয়ে দেখি, ওগুলো জ্বলছে না। দরোজা খুলতে গিয়ে দেখি, পারছি না। খুলছে না ওগুলো। প্রাণপণে চিৎকার করতে চাইলাম, গলা দিয়ে কোন শব্দ বেরুল না। কতক্ষণ ওভাবে গেছে জানি না তারপর কোন এক সময় ভোরের আলো ফুটতেই দেখি, পুতুলটা আমার কম্পিউটারের টেবিলেই রাখা আছে। ঘর দোর সব ঠিক আছে। বাথটাবে পানি নেই। বুঝলাম এলকোহল বেশী খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। হ্যাঙ্গ ওভার কাটাতে সারাদিন শুয়ে শুয়ে কাটালাম। সন্ধ্যায় ল্যাবে গিয়ে শুনলাম, তানাকাদের বাংলো বাড়িতে- ছেলে এবং মেয়েদের দুটো বাথটাবে তানাকা এবং তার দাদার মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
৩
চারিদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে। আশুলিয়ার এই জায়গাটা সন্ধ্যাবেলা কেমন ছমছমে নির্জন হয়ে যায়। ঝুপ করে কেমন যেন রাত নেমে গেছে যুথি টের পায়নি। আজ বোধ হয় অমাবস্যা। অন্ধকারটা একটু বেশীই কালো। দু হাত দূরের জিনিসো ঠিক মত দেখা যাচ্ছ না।
যুথি তারেকের গা ঘেঁষে বসে। বলে, চলেন আজ ফিরে যাই।
তারেক খুব স্বাভাবিক গলায় বলে, তোমার লজিক কি বলে যুথি?
যথেষ্ট ভয় পেলেও যুথি স্বভাবিক থাকার চেষ্টা করে। সাহস করে উত্তর দেয়, আমার তো মনে হচ্ছে সব নষ্টের গোড়া ঐ পুতুলটা। কয়টা পুতুল যেন আছে মোট? ছয়টা বলেছিলেন তাই না?
তানাকার বাবা হলেন প্রথম, তারপর তানাকা এবং তার দাদা। দেশে ফিরে মিলি এবং ফারিয়া মোট পাঁচজন। যুথি খুব চমকে ওঠে নিজের অজান্তেই, বলে ফেলে- এবার কার পালা তারেক? পুতুল টা কি আপনি দেশে নিয়ে এসেছেন নাকি? আমাকে দেখাবেন একদিন পুতুলটা?
আবছা অন্ধকারে তারেক হাতটা বাড়িয়ে দেয়- এই যে সেই পুতুল।
যুথি চমকে ওঠে ভীষন। চিৎকার করে বলে, তারেক ফেলে দিন, ওটাকে এখনই এই পানিতে ফেলে দিন। তারেকের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখটা কেমন ধ্বক ধ্বক করে জ্বলছে। পুতুলটারও তাই। যুথি পুতুলটা ফেলে দেবার জন্য তারেকের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে দেয়।
এই প্রথম মাঝি চিৎকার করে ওঠে- এত লইড়েন না, নাও ডুবব। পানিতে পড়বেন কইলাম।
হঠাৎ ঝুপ করে একটা শব্দ হয়, যুথি হতবিহ্বল হয়ে দেখে, তারেক পুতুলটা সহ পানিতে পড়েছে।
যুথি জানে, তারেক সাঁতার জানে। তবুও মাঝিকে বলে, মাঝি ভাই ওনারে বাঁচান। নইলে আমরা দুজনই বিপদে পড়ব।
তারেক উঠছে না দেখে, খানিক বাদে মাঝি ঝাঁপিয়ে পড়ে পানিতে এবং তাকে অনুসরণ করে, একটু পর যুথিও লাফিয়ে পড়ে পানিতে। তারেককে তার বাঁচাতেই হবে।
তারেক পানিতে পড়া মাত্রই এক ঝটকায় পুতুলটাকে হাত থেকে ফেলে দিয়ে, উঠে আসতে চায় নৌকায় কিন্তু কে যেন তার পা’টা ভীষন ভাবে টেনে রেখেছে...কিছুতেই সে সাঁতরাতে পারছে না। ২০০ মিটার সাঁতরে অনায়াসে পার হওয়া তারেক কেন যেন কিছুতেই নৌকায় উঠতে পারছে না।
হাল ছেড়ে দিয়ে এবার তারেক তীরের দিকে ওথার চেষ্টা করল কিন্তু তাও সফোল হলো না।শুধু বুঝতে পারছে কে কারা যেন ওকে মানে অনেক গুলো হাত ওকে জাপ্টে ধরে জলের নীচে টানছে। ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে সে।তারেক ধরেই নিয়েছিল, মাঝি এবং যুথি তাকে বাঁচাবার চেষ্টা কোরে যাচ্ছে।
সেও প্রাণপন চেষ্টা করছিল, মাঝির হাত ধরে উঠে পড়তে কিন্তু অনেক চেষ্টার পর, সে কি যেন একটা আঁকড়ে ধরতে সফল হলো, শেষবারের মত চোখ বন্ধ করতে যেয়ে দেখল সেটও একটা হাত। তবে কোমল ফর্সা। হাতটা ধরেই বুঝতে পারে, এটা আর কারো নয় তানাকার হাত।
পানির নীচে যুথির দম বন্ধ হয়ে আসছে, অক্সিজেনের অভাবে ভেসে ওঠার তাগিদ অনুভব করছে খুব। ভেসে ওঠার আগে যুথি অনুভব করে, তারেক ক্রমশ ধীরে ধীরে তলিয়ে যাছে জলের অতল গহ্বরে।
হ্যাটস্ অফ শাপলা'পু। শুভেচ্ছা। লেখাটা দূর্দান্ত হইসে। অতি দূর্দান্ত।
আর দুইবার আসছে। এইটা একটু ঠিক করে দেন।
মীর অদ্ভূত বলব না ভূতুড়ে বলব জানিনা। এডিটে দেখাচ্ছে লেখা একবারই আছে , কিন্তু প্রকাশ করলে দুবার হয়ে যাচ্ছে। কি করব বুঝতে পারছি না।
পরে আরেকবার চেষ্টা করব।
ভুতুড়েই বলতে হবে। নাহলে আর কোনো লেখায় এরকম সমস্যা হয় নি, এই লেখাতে এসেই কেন সমস্যাটা হলো? বলেন।
টেকনোলজি ঘাঁটতে ঘাঁটতে আমরা বড় বেশি শেকড়-ছাড়া হয়ে যাচ্ছি আসলে। বুঝলেন? এই ভুত-প্রেত যে আমাদের সমাজ-সংস্কৃতির একটা অন্যতম অনুষঙ্গ ছিলো একসময়, সেটা যেন আজ আর কেউ মানতেই চাই না। হিহি
ঠিক বলেছ মীর। তোমার কথার সাথে সহমত।
তবে আমি যে কি প্রতিভা, মানে ভূতের গল্প লেখতারি... সেটা শুধু তুমিই বুঝলা

বুঝেন্না, এইটাকে বলে ভাই-বোনের মিল
ভাল লাগলো গল্পটা।
এক জিনিষ দুইবার পোস্ট হয়েছে। ঠিক করে দিয়েন।
ধন্যবাদ শর্মি পড়ার জন্য।
ঠিক করে দিয়েছি।
অনেক ভালো লাগসে গল্পটা। আরেকবার বলতে ইচ্ছা হইলো আরকি।
গল্প জোস হইছে...
তানাকার পুতুলের মতো, দুইবার গল্প আসছিলো কিন্তু লেখক এডিট করতে পারতেছিলেন না...
তারমানে কি প্রথম দুই কমেন্ট কারী???
আমি কি নতুন সাইকেল শুরু করতেছি!!!
ধন্যবাদ শুভ। অনেক অনেক শুভ কামনা।
চমৎকার গল্প।

তানাকার পুতুলগুলোকে তো ভয়ই পেলাম।
ধন্যবাদ ঝর্ণা। গল্পটা ভালো লেগেছে জেনে, ভালো লাগছে।
অসাধারণ গলপ পড়েছি শাপলা। সিমপলি অসাধারণ। অনেকদিন বাদে এবিতে এমন একটা লেখা পড়লাম। কেন যে তোমরা এতো কম লেখো না?
বস কি যে বলেন, খামোখা এই অধমরে লজ্জা দেন।
পড়ছিলাম আগেই তখন আর কমেন্ট করা হয় নাই।
চমৎকার গল্প!
ধন্যবাদ শান্ত পড়ার জন্য এবং আপনার মন্তব্যের জন্য।
হেহে, বুঝিনাই! কিন্তু পড়ে ভাল লাগছে।
ও বুঝছি, দারুন গল্প!
বাপরে নরাধমের আগমন

শুভেচ্ছা স্বাগতম
.. আমি এখনও গল্পটার ভিতরে ঢুইক্যা আছি ... বাইর হওনের জায়গা খুইজা পাইতাছি না.... তাই কমেন্ট টা আপাতত (মাথা চুলকিয়ে) ... ... ... হায় হায় গা টা কেমুন জানি শিরশির করতাছে ....
রাতের শহর এমন করে বললেন, তাতে তো খুশীতে আমার স্কুলের বাচ্চাদের মত লাফাইতে ইচ্ছা করছে।
জানি যতটা বলেছেন, ততটা সফল গল্পকার হয়ত আমি নই তবে আমার ব হু বহু দিনের ইচ্ছা ছিল একটা ভূতের গল্প বা রহস্য গল্প লিখব...সেটা আপনারা পড়ছেন, আমার কহুব ভালো লাগছে।
আমার মেয়ের খুব শখ সে স্মাইলি দেবে।
তাই সে এগুলো আমাকে দিয়েছে।
সে শুনেছে এটা ভূতের গল্প তাই সে এগুলো দিয়েছে।
আপনি অনেক ভাল গল্প লিখতে পারেন।
এতদিন পরে পরে আসলে ক্যাম্নে কি?
কেমন আছেন? দিনকাল কেমন যায়?
ধন্যবাদ বিষণ্ন বাউণ্ডুলে।
এমন করে বললেন, মন ভরে গেল।
আমি পর পর কয়টা শয়তান নিয়া মুভি দেখলাম। এরমধ্যেই পড়লাম গল্পটা। দারুণ।
থ্যান্কু বস!!!!!!
বেশ অনেক দিন পর আসলেন আজ। ভাল আছেন তো?
নতুন লেখা দেন না একটা। আপনেরে প্লিজ লাগে।
মন্তব্য করুন