তবু আশা বেঁধে রাখি.....
দেশে ফিরেছি, মার্চের ১১ তারিখে। তখন দেশ জুড়ে চলছে হরতাল। কোথাও যেতে পারি না। ঘরে বসে বসে মুরগীর মত ঝিমাই। এর মধ্যেই একদিন কথা হল, ব্লগার শান্তর সাথে। অবশ্যই অনলাইনে। এর আগে কোন দিন ওর সাথে কথা বা যোগাযোগ কিচ্ছু হয় নি। আসলে বাঙ্গালীরদের “ভাগ্য” বলে, একটা বিশেষ কথা আছে। আমার ভাগ্যে শিকা ছিঁড়ল কারণ শান্তর আমার একটা লেখা বেশ পছন্দ হল- তার পর তিনি নিজে থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করে সেটা জানালেন। এক দু কথায় প্রকাশ পেল, তিনি আমার খুব কাছাকাছি থাকেন। আর যায় কোথায়? তারে প্রস্তাব দিলাম- 'আমি তারে দেখতে চাই' সেও রাজী কিন্তু চিনব কি করে? তিনি মধুর কণ্ঠে বললেন, আমার খোমা দেখেন- “তাইলেই আমার চেহারা মোবারক দেখতে পাইবেন”।
যাক সে এক ব্রাট ইতিহাস, শান্ত এলেন আমাকে দেখা দিতে----- ভীষণ ব্যাস্ত তিনি। দুই পকেটে দুই মোবাইল। সারাক্ষণ টুন টুন করে বাজতেছে। এরে তারে তিনি ফোনে এইটা সেইটা বলতেছেন, সে এক ব্রাট অবস্থা। তবে ছেলে ব্যাস্ত হলে কি হবে, ছেলে বেজায় ভালো। আমার জন্য খালি হাতে আসে নাই।
তিনি আমার জন্য একটা বই এনেছেন। বইটার নাম like a diamond in the sky. লেখক সাযিয়া ওমর। আরো এনেছেন প্যাপিরাসের হ্যাণ্ডমেইড পেপারের একটা দারুণ নোটবুক। নোটবুকটা দেখেই খুব ভালো লেগেছে আর সাথে একটা কলম। উপহারটা পেয়ে শান্তকে কিছু বলিনি, ভাব দেখিয়েছি- এটা আর এমন কি? কিন্তু আজ বলি, বাচ্চা, দেশে ফিরে ওটাই ছিল কারো কাছে থেকে পাওয়া আমার প্রথম উপহার। তাছাড়াও আমি কৃতজ্ঞ ছেলেটার কাছে নানা বিষয়ে। হরতাল মাথায় নিয়ে ছেলেটা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছে।
যাই হোক শান্ত কাহিনী শেষ করি, আসি আসল কথায়। পড়ে শেষ করলাম সাযিয়া ওমরের “like a diamond in the sky.”
বইটা নিয়ে বলার আগে, সাজিয়া ওমরকে নিয়ে একটু বলি, অবশ্য তার সম্পর্কে জানিও আমি খুব অল্প। তিনি একজন সমাজ মনোবিদ। তিনি তার ব্যাচেলর ডিগ্রী দেশের বাইরে মানে আমেরিকার হ্যানওভার এর ডারমাউথে শেষ করেছেন। তারপর তিনি আমেরিকায় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসেবে বছর খানেক কাজ করেন। সেখান থেকে বছর তিনেক ঘুরে বেড়ান। সে সময়টাতে তিনি আশ্রমে কিছু দিন কাটান, শেখেন ইয়োগা। তারপর লণ্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে মাস্টার্স করেন।
নিঃসন্দেহে বলা যায় ইংরেজী ভাষাটায় তার দখল দারুণ, তাই তিনি বইটি লিখেছেন ইংরেজীতে। ভাষার কথা যখন উঠল- তখন একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে, সাযিয়ার গদ্যরীতি বা পরিবেশনা বেশ সহজপাঠ্য এবং বোধগম্য। বোধগম্য এ জন্য বলছি যে খুব বেশী উপমা বা অলংকার ব্যাবহার করে তিনি তার লেখাকে অযথাই নৈর্ব্যাক্তিক করে তোলেননি। যেটা আমি পেয়েছি অরুন্ধুতি রায়ের লেখায় কিম্বা ঝুম্পা লাহিড়ীর লেখায়। অবশ্য সেটার জন্য ওঁদের লেখার জটিলতার চেয়ে আমার মূর্খতাও দায়ী হতে পারে। আমি নিশ্চিত নই
The god of small things মূল বইটা পড়তে আমার খুব একটা ভালো লাগেনি।
যাই হোক এবার সাযিয়ার বইয়ের কথা বলি,
পুরো বইটি সাযিয়ার এক ধরণের অভিজ্ঞতার প্রতিফলণ বলা চলে। দীন এবং আজিকে নিয়ে ঘটনার শুরু। দুজনই অন্ধকার জগতের বাসিন্দা, নেশাগ্রস্ত। নেশার যোগান দিতে চুরি ছিনতাই করে। আজি নিজেও স্মাগ্লিং এর সাথে জড়িত। সামজিক অবক্ষয়ের গল্প এটি।
ঢাকা শহরের মাফিয়া রাজ গোপাল। সে অনেক অপরাধের হোতা কিন্তু সমাজে তার ভীষণ প্রতিপত্তি। সে থাকে সব ধরা ছোঁওয়ার বাইরে। তার রক্ষিতা সুন্দরী হল, আজি’র ভালোবাসার মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দীন জড়িয়ে যায় মারিয়া নামের এক তরুণীর সাথে। ঘটনা এগুতে থাকে, খুব ঢিমা তেতালে। মূলতঃ বইটা পড়ে আমার যেটা মনে হল, সাযিয়া গুরুত্ব দিয়েছেন- সাবস্টেন্স এবিউজারদের উপর। উচ্চবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েরা সামান্য কারণে কিম্বা শখের বশে কি করে নেশায় জড়িয়ে পড়ছে—তার খুঁটিনাটি বর্ণনা। দীন, আজি কিম্বা পারভেজকে নেশা করতে সাহায্য করছে কালা বা ফ্যালানি। তাদের কাছে গেলেই পাওয়া যায় ইয়াবা, গাঁজা অথবা পেথিড্রিন।
কিন্তু সাযিয়া দেখাবার চেষ্টা করেছেন, এরা এসবের যোগান ছেলেমেয়েদের দিলেও -এর মূল হোতারা রয়ে যায় ধরা- ছোঁওয়ার বাইরে।
পুলিশ নেশাগ্রস্তদের ধরছে এবং টর্চার করছে কিন্তু সাযিয়া মেসেজ দেবার চেষ্টা করেছেন, “নেশা গ্রস্ততা কোন অপরাধ নয় বরং এটা অসুস্থতা” এদের শাস্তি দেবার বদলে এদের রিহ্যাবিলিটেশন প্রয়োজন অথবা পাকিস্তান, ভারত এবং আফগানিস্তানে গাঁজা কিম্বা আফিমের চাষ হওয়াতে বাংলাদেশ খুব সহজেই এই ড্রাগস এর শিকার। সবচেয়ে বড় যে মেসেজটি তিনি দিতে চেষ্টা করেছেন সেটা হল পলিটিক্যাল আনরেস্টনেস এবং করাপটেড সিস্টেম অথবা হাই অথরিটির করাপশন এর কারণেই বাংলাদেশের আজ এই অবস্থা।
সব মিলিয়ে একটি গল্পের মূল রস বা চমক আমি খুব একটা পাইনি। চরিত্র গুলো দানা বাঁধতে গিয়েও যেন দানা বেঁধে ওঠেনি।
তারপরেও বলব- সাযিয়ার এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ কারণ এই গল্পের মধ্য দিয়ে নিজের দেশ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ, কি কারণে এই সামাজিক অবক্ষয় এবং তার ভাষার দক্ষতা এসব হয়ত ইংরেজী ভাষাভাষীদের কাছে বাংলাদেশকে অন্যভাবে রিপ্রেজেন্ট করবে।
একটা জায়গায় গিয়ে সাযিয়ার গল্পের একটি চরিত্র বাংলাদেশ সম্পর্কে বলছে
“Not so simple…… but still there is hope”.
ধ্বসে যাওয়া রানা প্লাজা থেকে ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হল জীবিত রেশমাকে। কেউ কি আশা করেছিল? না কোন আশা ছিল না। তারপরও রেশমার গলার আওয়াজ পেয়ে সবাই আশায় বুক বেঁধেছিলেন- যেন রেশমা এ লড়াইয়ে হেরে না যান!! এভাবেই বাংলাদেশ কোন না কোন ভাবে আশায় বুক বেঁধে থাকে......লড়াই করে জিতে যায়।
অভিবাদন হে দূর্ভাগা দেশ তোমাকে।
তবু আশা বেধে রাখি.. <3
শান্ত ভাই আসলেই সিরাম একটা মানুষ!
নিওয়ে এখন যাই,
একটা লিস্ট বানাই।
অনেক দিন ভাই এর কাছ থিকা কোন গিফ্ট নেই নাই!
কথা সইত্য
শান্তর উচিত প্রতি সপ্তাহে আপনাকে একটা কইরা বই উপহার দেয়া... তাইলে সপ্তাহান্তে এরম মুড়মুড়ে লেখা পাওয়া যাইতো
কিরাম আছেন?
কথায় যুক্তি হ্যাজ!
টুটুল ভাইয়ের কথার উপর কোন কথা হয় না।
নিওয়ে
এই অস্থির সময়ে এসেও
যে আর ফিরে যান নাই
সেইজন্য
বিশাল একটা থ্যান্কুস, আপু।
ধন্যবাদ বিনয়ের সাথে গৃহীত হইল।
অনেকদিন পর আপনার ঝরঝরে লেখাটা পড়ে বেশ ভাল লাগলো, বইয়ের রিভিউ ভাল পাইলাম।
ধন্যবাদ নিভৃত।
দেশে স্বাগতম।
অনেক অনেক অনেক ভাল। হরতাল মার্কা অফিস,তাই অফিসেই পড়েছি। আপনাদের লেখালেখির গভীরতা এত বেশী যে মন্তব্য করার কিছু নেই থাকে শুধু শেখার। ভাল থাকবেন। সাবধানে থাকবেন।
পোষ্টটা পড়ে হইলাম অবাক সেই দুই তিন মাস আগের কথা কতো দারুন ভাবে লিখলেন। লেখা সেই রকম লিখছেন। আমি ওতো উত্তম কিছু না তাও চেষ্টা করি আপনাদের মতো উত্তম মানুষদের সাথে মিশতে। এতো দিন লাগলো বইটা পড়ে লিখতে? নিয়মিত লিখেন এ পাড়ায়। দেশেই মন্দে ভালো টিকে বেচে বরতে সবাই কে নিয়ে দিন যাক আনন্দে। একবার আনন্দ পেয়ে গেলে দেখবেন কতো দারুন এখানে বেচে থাকাটাই। রাজেশ্বরী মামনি জন্য অনেক শুভকামনা। ভালো থাকেন আপু!
আপনি এতো দেরি করে লেখেন কেন? নিন্দা জানাইলাম
ভাল লাগল লেখাটা পড়ে
সেম হিয়ার কিনতু আমার ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। প্যাচাইয়া প্যাচাইয়া মেয়েদের চেহারা শরীর হেনা তেনার বিরাট বিবরন আমাকে বিরকত করে। আমি অবশ্য এতো পেসেনস এমনিতেও রাখি না। ভাল লাগলো তোমার লেখাটা
শান্ত বন্দনা কইরা আসলেই একটা পোষ্ট লিখে ফেলা যায়! তবে আপ্নে তো বোনাস হিসেবে বই নিয়েও লিখলেন।
লেখা আছে কত কি, লেখেন না কেন?
খুব সুন্দর লিখেন
মন্তব্য করুন