এম্নেই ১০
মেঘদলের গান আমার অনেক পছন্দের। প্রথম এ্যালবাম যেই সময় বের হয় সেই সময় একজন আমাকে ওদের দুইটা গান শুনতে দিছিল, আমি তখন ডিসেম্বর মাসে ওয়েলস্-এর হাড়কাঁপানো শীতে ভয়াবহ একটা সময় পার করতেছিলাম। ঐ সময় এই গান শুনে মাথা খারাপ মত অবস্থা। পরে দেশে ফিরে এ্যালবাম কিনলাম। অনেকদিন কোন খোঁজ খবর নাই, মাঝেমাঝে খবর শুনতাম চারুকলায় শো করছে..কিন্তু আমার কপাল বাড়াবাড়ি রকমের ভালো বলে সবসময় কনসার্টের খবর পাই শেষ হবার দুই তিন দিন পরে, অর্ণব আর বাংলার কনসার্ট দেখার জন্য একসময় পাগল ছিলাম, কিন্তু সেই একই অবস্থা, কনসার্ট শেষ হয়, মানুষজন দেখে আইসা উল্লসিত হইয়া জানান দেয়, তারপর আমি জানতে পারি। এখন আর অর্ণবের প্রতি সেই মোহ নাই, বাংলা তো মনে হয় টুকরা টুকরা। যাই হোক, মেঘদলের কথা। তো অনেক দিন এদের কোনো খোঁজ পাইনাই, আমি ভেবে নিছিলাম ওরা মনে হয় ভেঙ্গে গেছে, হঠাত শুনি মেঘদলের নতুন এ্যালবাম, এবং কোনো এক আজব কারণে এই সময়েও আমি আবার বিলাতে। নতুন এ্যালবাম শুনে আমার মাথা আবার খারাপ হয়ে গেল, লোকজনরে পারলে ডাইকা ডাইকা শুনাই। একই গান শুনতে শুনতে শেষ পর্যন্ত আমার দুই বন্ধুও মেঘদলের পাংখা হইয়া গেল। তো এদের দুইজনের একজনের কনসার্ট খুব পছন্দের জিনিস, দেশে আসার পর থেকে আমাকে সপ্তাহে একবার একটা কনসার্টের নাম বলে আর জিজ্ঞেস করে যাব কিনা, বেশিরভাগই আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের কনসার্ট, এদের গানের সাথে আমার তেমন একটা পরিচয় নাই তাই কখনই আগ্রহ পাইনাই। দুইদিন আগে হঠাৎ করে একটা পিচ্চি বন্ধু জানাইল মেঘদলের কনসার্টের কথা, চারুকলাতে। আমি প্রথমে ভাবলাম ভুয়া, মেঘদলের কনসার্ট হবে আর আমি দুই দিন আগে সেইটা জানতে পারব এইটা হইতেই পারেনা। কিন্তু সে আমাকে অনেক চেষ্টা চরিত্র কইরা বুঝাইল যে এইটা সত্যি , ফেইসবুকে ইভেন্ট পেইজটা দেখানো হইল। এইবার আমি মহা খুশি, ফেইসবুকে আমার বন্ধুও এই ইভেন্ট দেখতে পাইছে, সে মোটামুটি আগের দিন থেকে আমি যেন পরের দিন তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠি সেই বিষয়ক লেকচার দেয়া শুরু করলো। তো এতবড় সূচনা লিখতে লিখতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি এখন একটু ঘুরে আসি। পরে বাকিটুকু লিখব।
ব্যাক! কনসার্ট ছিল গতকালকে। সময় দেয়া ছিল বিকাল ৩টা, স্থান চারুকলা বকুলতলা। আমি সকাল ৮টার দিকে ঘুমাতে গেলাম ২টার এ্যালার্ম দিয়ে। আমার গত ৩ বছর ধরে ব্যবহার করা ফোন কয়েকদিন আগে ইন্তেকাল ফরমাইয়াছেন, তাই আমি নতুন একটা কাজ চালাবার মতন ফোন কিনছি সপ্তাদুয়েক আগে। এমনিতে আমার ফোনের আসল কাজ সময় দেখা আর এ্যালার্ম দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ, গত দুই বছর ধরে ফোন আসলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আর আমি নিজেও সচরাচর কাউকে ফোনটোন করিনা খুব দরকার না পড়লে, তাই দোকানে গিয়ে সবথেকে সস্তা ফোনটাই কিনে নিয়ে আসছি। তবে এই ফোন সস্তা বলেই কিনা কে জানে, এই পর্যন্ত একদিনও এর এ্যালার্মে আমার ঘুম ভাঙ্গে নাই। আমি জানিনা কি হয়, নির্ধারিত সময়ের দুই তিন ঘন্টা পর আমার ঘুম ভাঙ্গে কোনরকমের এ্যালার্ম টোন ছাড়াই। যাই হোক, গতকাল-ও এর ব্যতিক্রম না, বন্ধু ৩টার সময় আমার বাসায় এসে দরজায় দুড়ুমদ্রাম করে আমাকে ঘুম থেকে তুলল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তৈরী হবার চেষ্টার পরেও বের হতে হতে বাজলো ৪টা, অনেকগুলা ব্যান্ডের গান গাওয়ার কথা, তাই আমরা দুইজনেই মনে মনে প্রস্তুত গিয়ে দেখব মেঘদল এর মধ্যে গেয়ে ফেলছে। মাঝপথে মনে হইল পিচ্চিটাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, আবিষ্কার করলাম ফোনবাবাজিকে বাসায় ফেলে আসছি। কি আর করা! পৌনে পাঁচটায় পৌছলাম। চারুকলায় কোনো কনসার্টের নামগন্ধ নাই। আমার বন্ধু একটু সন্দিহান বকুলতলাটা আমি আসলে চিনি কিনা, আমি তাকে পোস্টার দেখালাম, 'বকুলতলা, চারুকলা অনুষদ', বকুলতলা আমি যেটাকে ভাবি সেইটা যদি নাও হয়, চারুকলা অনুষদের এইখানে ছাড়া অন্য কোথাও থাকার কোনো সম্ভাবনা নাই। কি করব বুঝতে না পেরে বিমর্ষ মুখে দুইজন মিলে হেঁটে হেঁটে গেলাম কলাভবন সেইখান থেকে হাটতে হাটতে আবার চারুকলা। এইবার বিল্ডিং-এ দুইজন মামা বসা ছিল, তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, এইখানে যে কনসার্ট হবার কথা ছিল ঐটার কি হইল? তারা জানাইল কনসার্ট বাতিল করে দিছে। প্রশ্ন করলাম ক্যান? তাদের উদাসীন উত্তর 'আজকে করবেনা বলে ঠিক করছে'। আমার ৫ বছরের ক্যাম্পাস জীবনের অভিজ্ঞতায় জানি সবথেকে অকম্মা মামারা থাকে এই চারুকলায়, তাই তাদের কথায় বিশেষ ভরসা করতে পারতেছিলাম না। যাই হোক, আমরা ঠিক করলাম চারুকলায় একটা বিড়ি খেয়ে বইমেলায় যাব, তারপর চলে যাব বাসায়, আমাদের কপালে কনসার্ট নাই এই বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হইল। চারুকলা থেকে বের হওয়ার মুহুর্তে বন্ধু কয় সে চা খাইতে চায়, তাই রাস্তা পার হইয়া গেলাম ছবির হাটে। এবং ছবির হাটে গিয়ে দেখি ঐখানে স্পিকার টিকার বসায়ে বেশ আয়োজন চলতেছে। এইটা কিভাবে বকুলতলা সেইটা বুঝতে আমি বারবার আশেপাশের গাছ দেখতে লাগলাম, কোন গাছটা এইখানে বকুল? আর সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের অংশই বা কবে চারুকলা অনুষদের অংশ হয়ে গেল। যাই হোক, কনসার্ট খুঁজে পাইছি এতেই আমরা আনন্দিত, টিউনিং ইত্যাদি ইত্যাদিতে প্রচুর সময় লাগবে তাই আমরা ঘোরাঘুরি করতে লাগলাম...ভিতরে একটা লালন চর্চা কেন্দ্র আছে, এইখানে নাকি প্রতি বৃহস্পতিবার শিরনি বিতরণ করা হয়, ভাবছি একদিন যাইতে হবে এই শিরনি খাইতে। আগের রাতে দেখছিলাম এইখানে লোকজন মশারি খাটায় ঘুমায় থাকে, আজকে দেখি জমজমাট অবস্থা, বেশ কয়েকজন মিলে গান গাইতেছে...অনেকক্ষণ দাঁড়ায় দাঁড়ায় শুনলাম, বন্ধু বলে ওর বেসুরা লাগছে, আমার ভালই লাগলো। স্পিকারে আকাশ বাতাস কাপায়ে বন জোভির গান বাজানো শুরু হওয়ার পর বুঝলাম এর মধ্যে লালন শোনা সম্ভব না, হাঁটা দিলাম ঐদিকে। একটা চলনসই স্টেজ তৈরী করা হইছে, তার সামনে রশি দিয়ে ঘেরা একটা চারকোনা জায়গা, সেইটার এইপাড়ে এক কোনায় আমরা দুইজন বসলাম। ক্রমিক শুনে বুঝা গেল মেঘদল আসবে তিন নম্বরে, মেঘদল শুনেই চলে যাব ঠিক করলাম, বন্ধুর বাসায় আবার দেরী হলে প্রবলেম। প্রথমে আসলো ফিউড ৮৬ নামক এক ব্যান্ড...বাংলাদেশে প্রতিবাদী লিরিক লেখা শুরু হইছে এখন, অনেক ব্যান্ড-ই দেখি গ্রাঞ্জ মার্কা লিরিক লেখে, কিন্তু গানগুলার ধরন সেই হার্ড রক ঘরানার। তো এই ফিউড ৮৬ এর গানের সময়েই আমরা দুই বাট্টু যেহেতু কিছু দেখতে পাইতেছিলাম না, তাই রশি পার হয়ে একদম স্টেজের সামনে চারকোনা জায়গায় বসে গেলাম। জায়গাটাতে বেশ কাদা, কিন্তু প্রিয় ব্যান্ডের জন্য একটু কাদায় বসে থাকা কোনো ব্যাপার না। এরপর আসলো প্রবর রিপনের ব্যান্ড মনোসরণী। ব্যান্ডের নামটা সুন্দর, প্রবর রিপন নিজেও দেখতে বেশ কবি কবি দাড়িগোঁফের জঙ্গল নিয়ে, তারপর তিনি আবার নিজেই বললেন তার কবিতার বই বের হয়েছে এই মেলায়। দেখতে চলে, কবি, গাতক, গুনের অভাব নাই। দুই দিন আগে এই লোককে চিনেনা বলে তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ইগনোর করছে আমার বন্ধু, আমরা দুজন সেইটা নিয়ে কিছুক্ষণ হাসাহাসি করলাম। মনোসরণী গান গাইল চারটা। চারটা গানেই 'নাকি' শব্দের ব্যাপক ব্যবহার, গীতিকার নিজেকে নিয়ে বিভ্রান্ত, এক গানে শুনলাম 'আমি কি যুবক নাকি রোবট' আরেক গানে শুনি 'আমি কি মানুষ নাকি ক্রীতদাস' 'সভ্যতা নাকি সব ভোঁতা' এইরকম কিছু। তবে গান আমার ভালই লাগছে, এ্যালবাম বাইর হইলে কিনাও ফেলতে পারি, তবে ভোকাল প্রবর রিপন গিমিক করা বাদ দিয়ে ভোকালে মনোনিবেশ করলে আরেকটু ভালো হত মনে হয়...তার প্রত্যেকটা মুভ আশরাফুলের নৃত্যের মত প্র্যাকটিস করা মনে হচ্ছিল, এক পর্যায়ে এক গানের মাঝে সে সিগ্রেট ধরাইল, বুঝাই যাচ্ছিল একদম মাপা জিনিস, এই পর্যায়ে এসে আমি বিড়িটা ঠোঁটে তুলব, তার আধা মিনিট পর আমি লাইটার দিয়ে বিড়িটা ধরাবো...সব একদম মেপে মেপে ঠিক করা..তবে মনে হয় কনসার্টে এইসব গিমিকের দরকার আছে...গানের সাথে সার্কাস দেখতে তো মজাই লাগে :)।
তবে তার গিমিকবাজির অভ্যাসের ব্যাপারে নিশ্চিত হইলাম আজকে বইমেলায় গিয়ে, শুনলাম তার কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হইছে কনসার্টের দিনেই, তবে সে যেইভাবে ব্যাপারটা করতে চাইছিল সেইটা সে করতে পারেনাই, তার ইচ্ছা ছিল গান হবে, কবিতা আবৃত্তি হবে তারপর আগুন জ্বালিয়ে তার বই পুড়ানোর মাধ্যমে উন্মোচিত হবে তার বই...কিন্তু হৃদয়হীন বাংলা একাডেমি কতৃপক্ষ এইটাতে রাজি হয়নাই, মেলা প্রাঙ্গনে আগুন জ্বালানো নিষিদ্ধ। বইটা কিনলো একজন, তার কাছ থেকে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলাম, অন্যরকম বই দেখলে ভালো লাগে, গিমিকবাজি আমার পছন্দ আবার না-পছন্দ-ও, কিছু পছন্দ হয়, কিছু হয়না। এবাদুর রহমানের দাস ক্যাপিটাল গিমিকে গিমিকে ভরা একটা বই, আমার বইটা খারাপ লাগেনাই। প্রবর রিপনের বইটাও ভালো লাগলো ঐরকমভাবেই...সুন্দর হালকা সবুজ রঙের পৃষ্ঠায় ছাপা, উৎসর্গ করা হইছে মালা পড়ানো ফ্রেমে বাঁধানো এক কমবয়েসী ছেলেকে, যার নাম মো: আবু আশরাফ সিদ্দিক রিপন, নিচে লেখা এই লোক আসলে মৃত, কিছু সরকারী কাগজের দস্তখতে শুধু বেঁচে আছে এখনো। বুঝলাম এইটা রিপন মিয়ার আসল নাম, বুইঝা মজাও পাইলাম। কবিতা পড়িনাই একটাও, তাই বলতে পারতেছিনা বইটা কেমন, তবে গিমিক্গুলা আমার অনেক পছন্দ হইছে। আজকে মেলায় পাঠক সমাবেশে ঢুকছিলাম একটা বই কেনার জন্য, আমার চেহারায় কি আছে জানিনা, ফোর্স সেল করা পাবলিকরা সবসময় টের পায় আমাকে ভালমত ধরলে আমি তার হাত থেইকা রক্ষা পাইতেই তাড়াতাড়ি বইটা কিনা ফেলবো। নিরীহভাবে যেই বই কিনব ঐটা দেখতেছিলাম, এক লোক হঠাৎ করে পাশ থেকে সবুজ কাভারের একটা বই আগায় দিল আমার দিকে, 'আপু, আমার এই কবিতার বইটা পাবলিশ হইছে এবার, একটু দেখতে পারেন', মুখের সামনে বই ধরে থাকলে সেইটাকে এড়ানো কঠিন, আমি বললাম 'ভাই আমি কবিতা পড়িনা, বুঝিওনা', লোক বলে 'জ্বী, আমার বইটা এইরকম মানুষদেরই লক্ষ্য করে লেখা, যাদের পড়ার অভ্যাস আছে, কিন্তু কবিতা পড়েনা! আপনি শুধু একটু দেখেন বইটা', আমি মোটামুটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এই মেলাতেই একটা কবিতার বই কিনছি এইরকম ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে, তবে সেইটা ছিল ক্লাসমেটের বউ, তাই সমস্যা নাই, কিন্তু অচেনা লোকের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলে আমি কিছুতেই ভুলবনা এই সংকল্পে অটল হয়ে আমি বইটা হাতে নিলাম। তারপর একটু উল্টে পাল্টে দেখে নিষ্ঠুরের মত 'থ্যান্ক ইউ' বলে ফেরত দিয়ে দিলাম। লোকটার মুখটা কালো হয়ে গেল, দেখে একটু মায়া লাগলো, কিন্তু আমি আমার প্রতিজ্ঞা কিছুতেই ভাংবনা, তাই মুখের কঠোরতা বজায় রেখে যেই বইটা প্রথমে নিছিলাম ঐটা বিল করতে দিলাম। বিল করতে সময় নিচ্ছিল, অনেক লোক স্টলে, এর মধ্যে কবি আবার আলাপ শুরু করলেন 'বুঝলেন, কবিতা খুব কম লোক পড়ে, আমার বইটা লেখার উদ্দেশ্য আসলে এটাই ছিল, যারা সাহিত্য পছন্দ করে কিন্তু কবিতা পড়তে চায়না, তাদেরকে কবিতার সৌন্দর্যটা উপভোগ করানো'...আমি বললাম 'হুমম, আমি বুঝিনা বলে পড়িনা' (আসল কারণ যে চারপাশে লাখে লাখে কবি দেখে দেখে আমি কবিতার উপর বিরক্ত হয়ে গেছি, সেইটা আর বললাম না)। এর মধ্যে আমার বইটা কেনা শেষ, আমি স্টল থেকে বের হয়ে যাব, লোকটা নাছোড়বান্দা, সে বলে চলেন স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলি...আমি বিরস বদনে তার সাথে স্টলের বাইরে দাঁড়াইলাম..সে ব্যাপক উৎসাহের সাথে জিজ্ঞেস করলো 'ঠিক কি আপনি বুঝেননা আমাকে বলেন তো?' আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে বললাম 'ছন্দের প্রয়োজনীয়তা' (গাধার মত উত্তর, কিন্তু এর কাছে আমার বুদ্ধিমান হবার কোনো ইচ্ছা নাই)....ব্যাটা বলে 'ছন্দ তো বোঝার দরকার নাই...ব্লা ব্লা ব্লা...অক্ষরবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ব্লা ব্লা ...' আরো কি কি জানি বলতে লাগলো, আমি অর্ধেক শুনি আর অর্ধেক শুনিনা, ক্যামনে এর হাত থেকে ছাড়া পাওয়া যায় এইটা ভাবা শুরু করলাম। আরো কিছু কথাবার্তার পর (আমার মনে নাই কি কি) সে আবারো আমাকে অনুরোধ জানালো তার বইটা পড়ে দেখতে, বইটা কেনার জন্য নাকি নাকি উনি বলছেন না, উনি আন্তরিকভাবেই একজন কবিতা না পড়া পাঠকের মতামত জানতে চান তার কবিতা বিষয়ে, যেহেতু বইটি এইসব পাঠকদের জন্যই লেখা। আমি মনে মনে কইলাম 'ব্যাটা তোর যদি বই কিনানো উদ্দেশ্য না হয় তাইলে আমারে ফ্রি দিয়া দে, রিভিউ করে দিবনে', আর মুখে একটা অসহায় আর বিভ্রান্ত হাসি ঝুলায়ে দাঁড়ায় থাকলাম। উনি আবার যখন কবিতা বিষয়ক ভাববাদী কথাবার্তা শুরু করলেন তখন আমি আমার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাটা ভাঙলাম, টুকরা টুকরা করে। তারপর তারে বললাম, আচ্ছা চলেন আপনার বইটা কিনি। বইটা কেনার পরেও উনি দুইবার আমাকে অনুরোধ করলেন যাতে আমি তাকে ফেইসবুকে (নাম ধরে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে তাকে) একটা মেসেজ দেই আমার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে। বইয়ের দাম বেশিনা, কিন্তু এইভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং আমার চরম অপছন্দ, আর এইসবে ধরাও খাই আমি-ই সবসময়। যাই হোক, প্রবর রিপনের বই দেইখা মনে হইল ওই ব্যাটা এত কষ্ট করে শিকার ধরার মত ক্রেতা না ধরে কিছু গিমিক রাখলে হয়ত বই কয়েকটা এমনেই বিক্রি হইত। আমিও বাঁচতাম তাইলে।
আচ্ছা কনসার্টে ফেরত যাই। মেঘদল আসলো এরপর। ওদের গান নিয়া কিছু বলার নাই...যাই গাইবে সেইটাই আমি মুগ্ধ হয়ে শুনব তাই কিছু বললে সেইটা একটা অন্ধ ভক্তের কথা হইয়া যাবে। তবে লিড গিটারিস্ট শোয়েবরে আমার ফাটাফাটি লাগছে, লোকটা দারুন বাজায়! শুনলাম সে নাকি বাঁশি আর কিবোর্ড-ও বাজায়, আরো কি কি বাজায় কে জানে! লোকটারে আমার ব্যাপক পছন্দ হইছে। আর এদের কোন কাইতালি ছিলনা, স্বাভাবিকভাবেই গাইল...একবার শিবু গায় একবার গায় সুমন। আমরা কয়েকজন কয়েকবার চিল্লাইলাম 'ওঁ' গাইবার জন্য, শোয়েব এক পর্যায়ে বলে 'মাইর খাওয়ার ইচ্ছা নাই ভাই!' ওদের কাছে থেকেই জানতে পারলাম কনসার্ট চারুকলা থেকে এইখানে আনতে হইছে কারণ চারুকলা কতৃপক্ষ বলছে এইসব 'সংস্কৃতি-বিরোধী কর্মকান্ড' তারা চারুকলায় হইতে দিবেনা। এরা কিভাবে সংস্কৃতি বিরোধী হইল ঠিক মাথায় ঢুকলোনা, চারুকলা বেশ বাউল সংস্কৃতিতে ঢুকছে অনেক বছর ধরেই, হয়ত গিটার আর ড্রামস এখন সংস্কৃতি-বিরোধী হয়ে গেছে আমাদের এলিট ক্লাসের বাউল উন্মাদনার কাছে। যাই হোক, বকুলতলা চারুকলাতেই এইটা জাইনা আমি নিশ্চিন্ত হইলাম। 'ওঁ' গাইলনা তাই 'নির্বাণ' গাওয়ার অনুরোধ করলো অনেকেই, কিন্তু এর মধ্যেই ওদের গানের কোটা শেষ, তাই দুই লাইন গাইয়া শেষ কইরা দিল। ছয়টা গান গাইছে, 'আমার শহর' দিয়ে শুরু আর 'পাথুরে দেবী' দিয়ে শেষ। 'চেনা অচেনা' গাইল, এইটা ওদের সবথেকে জনপ্রিয় গান, সেইটা বুঝাও গেল যখন সবাই ওদের সাথে গলা মিলাইয়া গানটা গাইল। আমার পাশেই একটা অল্পবয়স্ক ছেলে বসে ছিল, কলেজে পড়ে এইরকম হবে, 'রোদের ফোঁটা' গানটা যখন হচ্ছিল তখন সে কাকে জানি ফোন করে গান শুনাচ্ছিল...এত কিউট লাগলো আমার ব্যাপারটা ..
মেঘদলের গান শেষ হবার পরেই বের হয়ে আসলাম, রাত হয়ে গেছিল, আমাদের জামায় কাদা, জুতায় কাদা, ব্যাগে কাদা, কিন্তু কোনো সমস্যা নাই, আমরা মেঘদলের গান শুনছি আজকে ...যাইতে যাইতে দেখি বইমেলা শেষ লোকজন সবাই বাড়ি ফিরতেছে, মনে পড়ল মেলার আর মাত্র দুই দিন বাকি, মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এই কয়দিন একটা যাওয়ার জায়গা তৈরী হইছিল...পরশু থেকে আবার বাসায় বন্দী..কোথাও যাওয়ার থাকবেনা। আবার বাইরে যাওয়া মানে কোনো ক্যাফেতে গিয়ে আড্ডা, আর ভালো লাগেনা এইসব।
মেঘদল নামটা সুন্দর, গান এখনো শুনিনি।
আপাতত এইটা শুনতে থাকেন, পরে নিজ দায়িত্বে খুঁজে বের করেন অন্যগুলা
http://www.esnips.com/doc/c03f6a91-5171-4d10-a183-3ca41dbd6cf4/MeghDoL---Ommm
যখন মেঘদল মাত্র একটা শো করছে পৃথিবীতে, কোনো অ্যালবাম বের হয় নাই, কেউ চিনে না, তখন একবার সারারাত ব্যাপী এক ঘরোয়া আড্ডায় মিঠু মামা পরিচয় করায়ে দিলো শিবুর সাথে- এ হলো শিবু, গান টান গায়, একটা ব্যান্ড আছে।
আমি কইলাম আপনি কি মেঘদলের শিবু?
সে তো পুরা অবাক। কয় আপনি কীভাবে চিনেন?
আমি কইলাম আপনাদের প্রথম শো দেখেই আমি মুগ্ধ। ওঁ গানটার মতো গান আমি খুব বেশি শুনি নাই।
শোয়েবরে মেঘদলেরও আগে থেকে চিনতাম, জগন্নাথ হলের আড্ডায়।
তবে মেঘদলের সবচেয়ে বেশি পছন্দ ছিলো উজ্জ্বল। দারুণ পড়াশোনাবাজ একটা ছেলে। ও এখন নাটক বানায়, মেঘদল ছেড়ে দিছে।
কনসার্টের দিন মেলাতেই ছিলাম, কনসার্টের আগেই একটা দাওয়াতে চলে গেছি, তাই যাওয়া হয় নাই
মেঘদলের বেশকিছু গান ভালো লাগে, তবে তারচেয়ে ভালো লাগতো তাদের গান বিষয়ক চিন্তাগুলো, যেগুলো এখন আর তারা তেমন ধারণ করে না বলেই জানি।
আপনি মনে হয় মেসবাউর সুমনের কথা বলতে চাইছেন। সে এখনো মেঘদলের সাথেই আছে...এখনো গান লিখে, গান গায়...উজ্জ্বল কখনো মেঘদলের সাথে ছিলো না।
না, সুমন তো আগেও ছিলো এখনো আছে। কিন্তু মাসুদ হাসান উজ্জ্বলও মেঘদলের ফাউন্ডার মেম্বার। ড্রাম বাজাইতো। একবছর হয় মেঘদল ছাড়ছে
আমার ভুল হইছে...উজ্জ্বল ছিলো মেঘদলের সাথে। সে গীটার বাজাইতো, গানও গাইতো। সে দল আরো আগেই ছাড়ছে...দুঃখিত ভুল তথ্য দেয়ার জন্য। শিবু আর সুমনের ওজনে তার কথা আমার মাথা থেইকা উইবা গেছে পুরা...
আমারও

আমার জামাই হুদাই আমারে এত্ত সুন্দর একটা মোবাইল গিফট করলো, বেচারা
ইস! যতবার আপনার লেখা পড়ি কেবল মনে হয়, আপনার মত যদি এরকম বিন্দাস ঘুরতে পারতাম
চলো শুক্কুরবার ঘুরি। কি আছে জীবনে?টুটুল ঋহানরে রাখপে।
ঋহান আর টুটুল ছাড়া নাজ অচল
আর, ছাড়া, অচল শব্দগুলা বাদ দিয়া ' +' বসায়ে দেও তো... আহা!
নাজ, তাইলে সবাই মিলেই চলো।
দেখি
মেঘদলের গান শুনি নাই ... কয়েকজনের কাছ থেকি এই কনসার্টটার খবর শুঞ্ছিলাম ক'দিন যাবত...
লেখাটা পড়তে মজা লাগছে... প্রবর রিপন'রে দেখার সাধ জাগিলো!...

আমি আগে মনে করতাম হুজুরেরা কাউরে দান করতে উৎসাহিত করার জন্যে বলে বলে মানুষের ধৈর্য্যরে শেষ সীমায় নিয়া যায়, তারা তো মানলাম ভাবে দ্বীনের কাজ করতাছে, সোয়াবের আশায় করেন। কিন্তু এইসব আৎকা লেখকেরা যেটা করেন... আর কইলাম না...
আজকে শেষ আড্ডা বই মেলায়... বিকেলে চইলা আইসো
মনে হচ্ছে আজ একটা চরম আড্ডা হবে!
আমার সবচাইতে প্রিয় ব্যান্ড। একটাও কনসার্ট দেখতে পারলাম না। সব দোষ মুক্তবয়ানদার
জ্যোতির্ময় টাইপ কিছু নাম নাকি পাঠক সমাবেশের লোকটার ? আমারেও ধরছিলো......কিন্তু আমি সাকসেসফুললি বের হয়ে আসছি না কিনে
প্রবর রিপনের সাথের সাঈদ জুবেরি আর মুয়ীজ মাহফুজের লেখা জটিল লাগে। ওদের লিটলম্যাগটাও বেশ ভালো মানের। কিন্তু গান ভালো লাগে না একেবারেই মনোসরণির।
আমিও মেঘদলের পাঙখা
মন্তব্য করুন