প্যাঁচকলে গণতন্ত্র
বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রথম জাতীয় পে-স্কেল দিয়েছিলেন । আমার শিক্ষক চৌধুরি সাহেব ওটার নাম দিয়েছিলেন জাতীয় প্যাঁচকল ! ওই প্যাঁচকলে পড়ে অনেকের অর্থনৈতিক ডিমোশন হয়েছিল । একজন কেরানী আর ড্রাইভারের বেতন ছিল সমান । উপ-সহকারী প্রকৌশলী আর তার ড্রাইভারের বেতনের ফারাক ছিল মাত্র একশ টাকা । তৎকালীন সরকারি চাকুরেরা এগুলো অনিচ্ছার সাথে হজম করতে বাধ্য ছিল । তো এর সাথে গণতন্ত্রের সম্পর্কটা কি ! চৌধুরি সাহেব বলতেন সবকিছুই গন্তন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত, যারা পে-স্কেল করেছেন তারা গণতান্ত্রিক হলে এমন গুরুতর ব্যবধান হওয়ার কথা ছিলনা ।
পঁচন ধরেছিল মাথায়
’৭২ এ চট্টগ্রাম বারে পিপি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হল । যথারীতি ইন্টার্ভিউ হল । ফল প্রকাশের পর দেখা গেল নির্বাচিত সবাই সরকারি দলের সমর্থক । মেধাবী হওয়া সত্বেও অন্যরা কেউ নির্বাচিত হননি । এ বিষয়ে এক সদস্য প্রশ্ন উঠালে বোর্ড প্রধান আবুল কাসেম সাবজজ বলেছিলেন,‘ এখন থেকে আ লীগ সদস্যরাই শুধু নিয়োগ পাবেন, এমন নির্দেশনা আছে উপরের’ ।
’৭২ এর সংবিধানকে পৃ্থিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট সংবিধান বলা হয় । শ্রেষ্ট এই সংবিধানটির শ্লীললতাও কিন্তু লুঠ হয়েছিল রচিয়তাকারী বঙ্গবন্ধুর সরকারের হাতে । সমস্ত ক্ষমতা ক্ষুক্ষিগত করার জন্য সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রী থেকে বিনা নির্বাচনে আজীবন রাষ্টপতি হন বঙ্গবন্ধু । জবাব দেহিতার বালাইবোধ বোধ করেনি কেউ । আজ যে তারেক রহমানের মতো “অর্বাচিন” [আ লীগের মতে] ও আঙ্গুল তুলে সে সময়ের সরকারের অন্যায় অনিয়মগুলো নির্দেশ করছেন তার মাঝে আর কিছু থাক বা না থাক মিথ্যাতো নাই । জনমতের তোয়াক্কা না করে কোন নির্বাচিত সরকার এমনটা করার নজির কোথাও পাওয়া যাবেনা । তাইতো বি এন পি গলার রগ ফুলিয়ে বলতে পারছে জিয়াই প্রথম নির্বাচিত রাষ্টপতি ।
৪র্থ সংশোধনীর প্যাঁচকলে পড়ে গণতন্ত্র সে যে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল, আজ অবধি আর মাজা সোজা করে দাঁড়ানো হয়নি তার । সরকার পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক/ স্বাভাবিক সব পথ রুদ্ধ হয়েছিল সে সময় । ফল হয়েছিল জঘন্য ! চৌধুরি সাহেব দিব্বি চোখে দেখতে পেয়েছিলেন কি ঘটতে যাচ্ছিল । তিনি বলেছিলেন, ‘হিজ [শেখ সাহেবের] ডেজ আর নাম্বার্ড, তাঁর দিন শেষ ’ !
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর মোস্তাক-খালেদ মোশারফ-সায়েম হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন জিয়া । তার সময়ে পঞ্চম সংশোধনী বলে গ্যাঁড়াকলে পড়া গণতন্ত্র সীমিতভাবে হলেও আলোতে আসতে সক্ষম হয় । এই সুবাদে বাকশাল আমলে নিষিদ্ধ হওয়া সব দল পুনঃজন্ম লাভ করে । আজকে প্রধান মন্ত্রী যতই আস্ফালন করুন, বর্তমান আ লীগের জন্ম কিন্তু সে অবৈধ [বচারপতি খায়রুল হক ও আওয়ামী লীগের মতে] সেনা সরকারের ঔরসে ! বৈধ অবৈধের কথা যখন আসে তখন বিশ্ববেহায়া এরশাদের কথা অবশ্যই আসে । দীর্ঘ নয় বছর তিনি আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্রের মানস কন্যা আর প্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারী আ স ম রবের সহায়তায় গণতন্ত্রের উপর পা তুলে ঝেঁকে বসে থাকতে সক্ষম হয়েছিলেন । আজো যে তিনি দাপটের সাথে মাঠ দাবড়ে বেড়াতে পারছেন, তার পেছনে ওই সব নীতিহীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ক্ষমাতার লিপ্সা ।
এরশাদ পতনের পর পালাক্রমে আসে বি এন পি আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক সরকার । এরা দেশকে উপহার দেয় গুম খুন ধর্ষণ লুঠপাট নকল দখল নির্যাতন দলীয়করন জালাও পোড়াও ভাঙচুর আর সীমাহীন দুর্নীতি ! সব কিছুই হচ্ছে কিন্তু গণমানুষের নামে, গণতন্ত্রের নামে । এইযে অপশাসন, প্রতিনিয়ত মানুষের অপমান, গণতন্ত্রের লেবাসে সৈরতন্ত্র, এর থেকে থেকে মুক্তি পাবে দেশ ? মানুষ ? কবে ???
হুম
আপনার পোস্টটি পড়লাম, সরকারের সমালোচনা করুন, উচ্চ কন্ঠে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়, কিন্তু তারেক জিয়া যা বলছে তা ভুল বলছে না এইটা কি বললেন? কৌশলে দেখি জিয়াকে প্রথম নির্বাচিত রাষ্টপতি হিসেবে বলে গেলেন।
আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ । অসুস্থ ছিলাম, ১ হপ্তাহ নেটে বসতে পারিনি । তাই সময় মতো প্রত্ত্বোত্তর দে'য়া হয়নি । দূুঃখিত ।
এটা একটা অহেতুক বিতর্ক । কে প্রথম রাষ্টপতি ছিলেন তাতে দেশ বা গণমানুষের কিছু যায় আসেনা । ইতিহাসের এই দুই কূশীলব চিরকাল সন্মানের সাথে স্মরণীয় থাকবেন ।
তারেক জিয়া যা বলেছেন তা এক অর্থে সঠিক । জিয়ার পূর্বে যে ছয়জন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তারা কেউ ওই পদে নির্বাচিত ছিলেন না । সে সব সরকারগুলোও প্রেসিডেন্টশিয়াল ফরম অব গভর্ণমেন্ট ছিলনা । যুদ্ধকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট মনোনীত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, ওটা ছিল তার প্রতি গণমানুষের বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালবাসার নিদর্শন । ১০ জানুয়ারী '৭২ ফিরে এসে তিনি প্রধান মন্ত্রীই হয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নন ।
'৭৮ এ জিয়াই প্রথম প্রেসিডেন্টশিয়াল নির্বাচণ করেন এবং নির্বাচিত হন । সে অর্থে তাকে ১ম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলার মধ্যে ভুল আছে বলে আমার মনে হয়না । আবেগ নয় যুক্তি দিয়েই সবকিছু বিবেচিত হওয়া উচিত ।
আমাদের দেশে এখন যে কালচার চলছে তার ৫০% আবেগ আর বাকি ৫০% জবরদস্তি । আমি এর কোনটার সমর্থক নই । আবারো ধন্যবাদ ।
বেশ কিছুদিন ভেবে চিন্তে জবাব দেয়ার জন্য অসুখের বাহানাটি বেশ ভাল। আমি মন্তব্য করার পরে অন্তত তিনদিন পর পর ব্লগে চোখ রেখেছিলাম আপনার জবাবের জন্য। আপনি অন্য পোস্টে ঠিকই কমেন্ট করেছেন আমি দেখেছি, কিন্তু নিজের পোস্টের মন্তব্যএর জবাব দেন নি। আপনার বঙ্গবন্ধুবিরোধী মনোভাব অনেক আগেই প্রকাশ পেয়েছে। দয়া করে ব্লগের যেখানে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন সেখান থেকে "মুক্তিযোদ্ধা" পরিচয়টা মুছে দিবেন। কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এভাবে ঢোল পিটিয়ে গলায় সাইনবোর্ড ঝুলায় না। তারাই ঝুলায় যাদের কাছে নিজেদের মনগড়া কথাকে সত্য প্রমাণের আর কোন হাতিয়ার থাকে না। ধন্যবাদ।
যে মহাগ্রন্তের মাধ্যমে অহি নাজেল হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব- সরকারের অনৈতিক/অগণতান্ত্রিক কার্যাবলীর মূল্যায়ন স্থগিত করা হয়েছে তা আজো আমার পড়া হয়নি ভা'য়া ! বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে সে সময়ের তারুণ্য প্রতিবাদ করেছিল "ভাত দে হারামজাদা" আর "ধরা যাবেনা ছোঁয়া যাবেনা বলা যাবেনা কথা, রক্ত দিয়ে কিনলাম শালার এমন স্বাধীনতা " বলে । সে সময়ের প্ত্র-পত্রিকাগুলো সম্ভব হলে একটু ঘেঁটে দেখার কষ্ট করুন । বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকতে তাঁর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানানোর খায়েশ হয়েছিল যার সে মতিয়া এখন বঙ্গবন্ধু তনয়ার হেভিওয়েট মন্ত্রী । এই নিরেট সত্যগুলো বললে কারো কারো কলিজা উথাল-পাথাল করে ।
জানেনই যদি এ অভাজন বঙ্গবন্ধু বিরোধী, তো তার পোষ্টে শুভদৃষ্টি ফেলার অহেতুক কষ্টটুক না করলেইতো ল্যাঠা চুকে যায় ।
আমার ষ্ট্যাটাসে লেখা 'মুক্তিযোদ্ধা' শব্দটা মুছে দে'য়ার কথা বলেছেন । দূঃখিত বন্ধু ! ওটা অনঅপেনীয় কালিতে কপালে সেঁটে গেছে । এক মাত্র মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ই পারে ওটা ডিপাঞ্ছ করে দিতে । ওনাদের অনুরোধো করে দেখুন । শুধু শব্দটা মুছে দিতে বলেছেন, রাজাকারতো আর বলেননি ! এ বদান্যতার জন্য হৃার্দিক ধন্যবাদ !
অনেক মন্তব্যেরইতো জওয়াব দে'য়া হয়না, আপনারটাও এড়িয়ে গেলে এমন কি হতো ! বাহানা করার কি প্রয়োজন ছিল লেখকের ! বাহানার প্রয়োজনতো পড়ে তাদের যারা মূল প্রসঙ্গ এড়িয়ে মন্তব্য করতে অভ্যস্থ ।
কোন মনগড়া তথ্যটি সত্য প্রমাণের চেষ্টা করেছি দয়া করে ডিনোট করুন ।
আরেক প্রস্ত ধন্যবাদ !
আসলে ভালো মন্দ নিয়েই মানুষ। পৃথিবীতে সেরকম মানুষ পাওয়া দুষ্কর যার খারাপ দিক এটুকু নেই। মানুষকে বিচার করা উচিত কাজ দিয়ে। সেখানেও তার কিছু ভুল থাকবে, ত্রুটি থাকবে আর এমন কিছু কাজ থাকবে যা সামগ্রীক ভাবে আমাদেরকে ভালোর দিকে নিয়ে যাবে।
আমাদের রহমত চ্যায়ারম্যান নামে একজন লোক ছিলেন। বাবা তার কথা বলতেন, তিনি নাকি ৪ বারের চ্যায়ারম্যান ছিলেন শোভনপুরে ব হুআগে। লোকে বলতো সে নাকি গ্রামের জন্য সামগ্রীকভাবে ভালো কিছু করতে পারেননি, না রাস্তা ঘাট, পুল কালভার্ট বা হাটের উন্নয়ন, অথবা ভালো কোনো স্কুল। লোক তারপরও তাকে ভোট দিতো, কারন শুধু এ কারনেই যে তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্হ হয়নি। সে কখনো ক্ষমতার অপব্যাব হার করেননি। শেষবার চ্যায়ারম্যান হতে পারেননি কারন তিনি নিজের দাড়াননি। তার বড় ছেলে সেবার খুনের আসামী হয়ে হয়েছিলো। খুনটা সে নিজেই করেছিলো, রহমত চাচা বলতো সে নাকি ভালো বাবা হতে পারেননি। ছেলের যাবজ্জীবন হবার আগেই মারা যান।
এর পর ব হু চ্যায়ার ম্যান এমপি আসলো, গ্রামে রাস্তা ঘাট হলো, গ্রাম থেকে পৌরসভা, উপজেলা, স্কুল কলেজ, সেরকম জমাটি অবস্হা। রাতের আঁধারে ক্ষমতাধারীরা অন্যের সবকিছু কেরে নেয়, হত্যা খুন ধর্ষন থেকে শুরু করে এমন সব অপরাধে লিপ্ত যে মানুষ হতবাক হয়ে যায়। নির্বাচন এলে ভোটকেন্দ্রগুলো শূন্য হয়ে পড়ে।
মুজীব বলেন বা জিয়া, কেউ সমালোচনার উর্ধ্বে নয় আবার কেউই খারাপ কথার যোগ্য নয়। তাদের যোগ্যতা ছিলো বলেই ঐ আসনে অধিষ্ট হয়ে এই দেশ চালিত হয়েছিলো, এই দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিলো। তাদের খারাপ কাজের চাইতে ভালো কাজগুলো বেশীই বলা যায়। কে বেশী ভালো এটা নিয়ে তর্ক-কুতর্ক করা বাতুলতার সামিল।
ভাবা উচিত এই আমি কি তেমন কিছু করতে পারলাম ? যদি করার ইচ্ছা থাকে বা সামর্থ্য থাকে তাহলে কতটুকু করেছি? যদি সেটা না থাকে তাহলে মানুষকে কাজ করবার জন্য কতটা উদ্বুদ্ধ করেছি? ইতিহাস কখনো পাল্টায় না, ইতিহাসকে যারা পাল্টাতে চায়, বা ভিন্ন বিশেষন দিতে চায় হয় তারা প্রচন্ড জ্ঞানী অথবা সাক্ষাত মীরজাফর।
ভালো থাকুন আর সুষ্ঠ আলোচনা চলুক সর্বত্র
শতভাগ সহমত আপনার সাথে ! হওয়াতো উচিত সুষ্ঠু আলোচনা ! আলোচনায় অংশ নে'য়ার জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকুন । পরিমিত পান করুন । কামনা করছি অ্যাডিক্ট হবেননা ।
মন্তব্য করুন