ইউজার লগইন

ইভান, উমা আর সৃজিতের জন্য ভালোবাসা..

সেই গ্রীষ্মের সকাল গুলো তেই
পর্দা ঠেলে সরিয়ে
হাওয়া দিলো ভাসিয়ে
হাওয়া দিলো ভাসিয়ে

তখন আমার এ বিছানা ঘুম
ছাড়েনি চোখের কোন
আর হাওয়াতে লাগালো দোল
হাওয়াতে লাগালো দোল

তখন আবার এ মন জাগে
কোন অচেনা সংরাগে
তখন আবার এ মন জাগে
কোন অচেনা সংরাগে
যেন তুলো
সে যে আকাশ পথে দিতে হবে পাড়ি
তুমি আঁচল পেতে রাখো না
আমি আসছি চলে
তুমি চোখ বুজো না, বুজো না
আমি এলাম বলে
এখনো সময় অনেক বাকি.

আমার মনের এ গোপন পথে
আজো সে বাউন্ডুলে
চোখ রেখে কাটা ঘুড়িতে
হঠাৎ যায় হারিয়ে
আমার মনের গভীরতা কে
অনুভূতির আঙ্গুলে
স্পর্শ করে দেখনি
স্পর্শ করে দেখনি

তখন আবার এ মন জাগে
কোন অচেনা সংরাগে
তখন আবার এ মন জাগে
কোন অচেনা সংরাগে
যেন তুলো
সে যে আকাশ পথে দিতে হবে পাড়ি
তুমি আচল পেতে রাখো না
আমি আসছি চলে
তুমি চোখ বুজো না, বুজো না
আমি এলাম বলে
এখনো সময় অনেক বাকি.

স্পীকারে বাজতেছে বেশ কিছুক্ষণ হল, একই গান বারে বার। অবাক হবার মত কিছু নেই, মাঝে মাঝেই তো হয় এমন। তাই না? অযথাই কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে মাথার ভিতর, থেমে থেমে গুনগুন না করে আর উপায় থাকে না।

তবে কি না, এরকম শুনতে শুনতে একেবারে ডুবে যাওয়ার গানগুলো একবার ছুটিতে গেলে এমনিতে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসে না। তাকে অসময়েই ফিরিয়ে আনলো ইভান, কানাডার ওন্টারিও'র সেন্ট জর্জ শহরের সাত বছরের ইভান।

অনুপমের এই গানটা প্রথম প্রায় বছর চারেক আগে শোনা, তখন অতটা ভালো লাগেনি কেন যেন। সেই গানটাকেই অদ্ভুত একটা মায়ায় জড়িয়ে ফিরিয়ে এনেছিল সুরঙ্গনা। সুরঙ্গনাকে মনে নেই? আরে, ওই যে 'ওপেন টি বায়োস্কোপ'-এ হে সখা গাওয়া ছোট্ট মেয়েটা। "গানটা'' যখন এতটাই সুন্দর, তা যার জন্য গাওয়া সেই মুভিটাও ভালো হবে ভেবেই দেখতে বসেছিলাম 'উমা'। 'অটোগ্রাফ', 'বাইশে শ্রাবণ', 'হেমলক সোসাইটি', 'জাতিস্মর' আর 'চতুষ্কোণ' দেখে প্রিয় হয়ে যাওয়া পরিচালক সৃজিত
-এর 'উমা' - আর তাতেই পেয়ে গেলাম ইভানের খোঁজ।

খুব মন খারাপ হলেও অসাধারন একটা ভালোলাগায় মন ভরিয়ে দিয়ে গেল এই ইভান অথবা উমা, অন্ধকারে হারিয়ে ফেলা পথের মাঝে একটুখানি ভোরের আলোর মতন।

বলি তাহলে, ইভানের গল্প। সেন্ট জর্জের ইভানের গল্প।

ইভান লিভারসেজ থাকতো কানাডার ওন্টারিও'র ছোট্ট শহর সেন্ট জর্জ-এ। ওর বয়স যখন মাত্র দুই তখন তার ব্রেইনে এমন একটা ক্যান্সার ধরা পরে যেখানে কোন অপারেশনও করা সম্ভব ছিল না। যখন তার বয়স মাত্র সাতে পড়ল ২০১৫ সালে, তার ডাক্তাররা ইভানের মা-কে জানিয়ে দিলেন ইভান হয়তো বা ডিসেম্বর পর্যন্ত নাও থাকতে পারে এই পৃথিবীতে। ছোট্ট ইভানের একদম পিচ্চিকাল থেকেই ক্রিসমাস খুব পছন্দ ছিল, তাই মায়েরা যেমন হয় আর কি; ইভানের মা নিকোল ওয়েলউড ঠিক করলেন কি তার আদরের ছেলেটার জন্য ক্রিসমাসটাকেই এগিয়ে নিয়ে আসবেন। প্ল্যান হয়, এবার ক্রিসমাস হবে অক্টোবরেই! আর এই আইডিয়াটাই ছড়িয়ে পড়ে লোকেমুখে। আর কি আশ্চর্য ব্যাপার, প্রায় ৪ হাজার বাসিন্দার পুরো শহরটাই এগিয়ে আসে ইভানের সাথে ক্রিসমাস পালন করবে বলে।

দুরদুরান্ত থেকে আসতে থাকে নানা উপহার। কানাডিয়ান পপ স্টার জাস্টিন বিবারের পরিবার থেকে আসে 'স্পঞ্জবব স্কয়ারপ্যান্ট এর রেকর্ডিং' আর 'ব্যাট্ম্যান হ্যাট'! শহরের বাসা আর দোকানগুলোও সেজে উঠে একদম ক্রিসমাসের মতই। তারপর ২৪ অক্টোবর সেন্ট জর্জ আর আশেপাশের শহরগুলো থেকে আসা অনেক অনেক অনেক গুলা অসাধারন সুন্দর মনের মানুষদের সাথে ক্রিসমাস প্যারেড, তাও আবার সান্টা ক্লজের সাথে বসে। ইভানের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে অনেক কিছু হবার, তার প্রিয় শহর তাকে দেয় সম্মানজনক প্যারামেডিক, পুলিশ আর ফায়ারফাইটারের খেতাব - এ নিয়ে তার গর্বের সীমা ছিল না। আর স্নো মেশিনের তুষারে ঢাকা সেন্ট জর্জে সত্যিই মনে হচ্ছিল আগাম নেমে এসেছে ক্রিসমাস!

PAY-Evan-Leversage.jpg

Evan-Leversage.jpg
সেই আশ্চর্য ক্রিসমাসের দেড় মাস পর ডিসেম্বরের ৬ তারিখ প্রিয় বাবা মা, দুই ভাই আর তার ছোট্ট শহর ছেড়ে ইভান পাড়ি জমায় অনন্ত নক্ষত্রবীথির ঠিকানায়,
সুপ্রিয় যত ভালোবাসার মানুষজনের মনের গভীরে কোঁকড়া চুলের গালটুস ছোট্ট রাজপুত্র হয়েই থেকে যাবে বলে।

সেই ইভানের গল্প বলতেই 'উমা'র জন্ম হয় সৃজিতের হাত ধরে, এই উমাকে দেখতে কলকাতায় ঘুরে যান ইভানের মা; সঙ্গে করে নিয়েও যান উমাকে ইভানের শহরবাসীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।

সবকিছুই একদিন গল্প হয়ে যায়, তবুও যখন এর এমন কিছু রেশ রয়ে যায় - কি সুন্দরই না মনে হয় এইসব পথচলা! আমরাও এইসব দেখতে পারি, চাইলেই মনে রেখে দিতে পারি - এই বা কম কি?! ওই ছোট্ট শহরটার সুবিশাল মনের মানুষ গুলোর মতন একদিন আমাদের ইট কাঠের খাঁচায় বন্দি পাখি মন গুলোও একদিন উড়তে শিখবে - এভাবে ভালোবাসতে শিখবে - এটুকুই আসলে এই গল্পের চাওয়া। যদি তার শুরুটাও এ জীবনে দেখে যেতে পারি, সেটুকুই আসলে এই পথচলার পরম পাওয়া!

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


আমার ভারতের সিনেমা দেখতে ভাল লাগে না। সরলীকৃত ভাবনা যদিও, কিন্তু মোটের ওপর ওই দেশের বিভিন্ন এলাকার ফিল্ম-ইন্ডাস্ট্রির সিংহভাগ পণ্য আমার কাছে অতিমাত্রায় নাটকীয়তা ভরপুর, যেটা কল্পনার সব সীমানাকে হার মানায়- ধরনের লাগে। আমি 'অটোগ্রাফ', 'বাইশে শ্রাবণ', 'হেমলক সোসাইটি', গান্ডু'সহ আরও কয়েকটি নাম কামানো এবং সিনেমা বোঝা মানুষদের প্রশংসা কুড়ানো ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখেছি। সবগুলোই অতিরিক্ত "ড্রামাটিক" লেগেছে। 'মনের মানুষ' সিনেমাটাকে তুলনামূলক কম পঁচা মনে হয়েছিল, লালনের গানের সাথে আমার মানসিক যোগাযোগের কারণে। তবে সিনেমা পণ্য হিসেবে ওটাকেও খুব আহামরি কিছু মনে হয় নি। স্যরি।

আমার বরং তোমার লেখা ভাল লাগে। আরও বেশি সিনেমা দেখ এবং রিভিউ লেখ প্লীজ। যেকোন দেশের সিনেমা। পাঠকের কোন ধরনের সিনেমা ভাল লাগে আর কোন সিনেমা ভাল লাগে না- সেটা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। আমার কাছে ভাল না লাগলেও, কারও না কারও কাছে নিশ্চই ভাল লাগবে। আর যখন আমার ভাললাগার বিষয়গুলো আসবে- তখন তো কথাই নেই। আমার জন্য সোনায় সোহাগা। থ্যাংক ইউ Smile

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


টিপ সই

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture

নিজের সম্পর্কে

i love being my bro's bro..!

কী আর বলব..?

বলতে গেলে লাইফের তিন ভাগের এক ভাগ শেষ অথচ এখনো নিজের কাছেই নিজেকে অচেনা লাগে..!!

মাঝে মাঝে নিজেকে দুঃখবিলাসী মনে হয় আবার অকারন স্বপ্ন দেখতে-ও ভুল হয়না..নিজে হাসিখুশি থেকে অন্যদের হাসিখুশি রাখতে পছন্দ করি..ভাবি বড় হয়ে গেছি আবার কাজে কর্মে ছোট ছোট ভাব টা এখনো ঝেড়ে ফেলতে পারিনা..বেশ অভিমানী আর জিদ্দি but i love havin fun in anythin..লাইফে এক্সামগুলোর দরকার টা কী ভেবে পাইনা..ভালোবাসি গল্পের বই পড়তে,গান শুনে সময় কাটাতে আর কিছু কিছু সময় নিজের মত থাকতে..

আর কি বলব..?!

...here i am!!