ইউজার লগইন
গল্প
গ্যালাক্সি এস!
ছেলেটা বড় হয়েছে খুব আদরে। চার বোনের পর এক ভাই। বোনেরা মোটামুটী অনেক বড় বড়। তাই বোনদের ভালোবাসায় আর দুলাভাইদের আশকারাতেই তার কিশোর বেলা কাটছে। হুট করে ছেলেটার বাবার চাকরী থেকে অবসর। তল্পি তল্পা গুটিয়ে বাড়ীতে থাকা। ছেলেটা তার বোনদের বাসায় থাকার জীবন শুরু। চারবোনের ভিতরে তিনবোনই বিরক্ত তা নিয়ে। যদিও ভাগ্নে ভাগ্নিরা মামা বলতে অস্থির। থাকার জায়গার বড় অভাব। যাত্রাবাড়ীতে থেকে প্রতিদিন কমার্স কলেজের ক্লাস চলে ইন্টারমিডিয়েটের। কাক ডাকা ভোরে যায় আর রাত করে বাসায় ফিরে। দুপুরে সিংগারা খেয়েই কাটাতে হয়। আরেকবোনের বাসা নিকুঞ্জ। সেখানেও কিছুদিন আস্তানা গড়ে। কিন্তু কোথাও স্থায়ী না। সেই সময় নিকুঞ্জতে দুটা ভালো টিউশনী পেয়ে যায়। টাকা পয়সার কিছু মুখ দেখে জীবনে আনন্দ খুজে পায়। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেয় যাত্রাবাড়িতে থেকেই। পরীক্ষার শেষ হয়। বন্ধুরা তখন তারা নানান ট্যুর প্ল্যানিং নিয়ে ব্যাস্ত। সে চলে যায় বাড়িতে। বাড়ীতে থাকার কারনে পড়াশুনা কিছুই হয় না আর। বন্ধু বান্ধবের আড্ডা ছাড়া টিভিতে আর লুকিয়ে সিগারেট খাওয়াতেই তার আনন্দ। রেজাল্ট বের হয়। ফলাফল বেশী ভালো না। ঢাকায় এই ভাবে অস্থায়ী থাকাথাকির উপরে জেদ করে সে আর
...এ যেন, স্বপ্নের হাত ধরে কৃষ্ণপক্ষের রাত্রির অন্ধকারে অনন্তের পথে চলেছি আমরা
১৯৪৭-এ বিতর্কিত দ্বিজাতি তত্ত্বের আলোকে দেশ ভাগ, ’৫২ এর
স্বাধীনতার আন্দোলন, ’৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯
এর গণ অভ্যুত্থান, ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা লাভ, ’৯০ এ স্বৈরাচার
পতন--এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ, আজ কোথায়, কোন অবস্থায় আছে !
কেমন আছে আমার দেশ, দেশের মানুষ, আমার মাতৃভূমি, আমার প্রিয় জন্মভূমি,
আমার স্বাধীনতা? এ ভাষা আন্দোলনের মাসে পরাজিত রাজাকার আর তাদের বংশধররা
কার বা কাদের সহযোগিতায় ’৭১ এর মানবতাবিরোধী, কুখ্যাত রাজাকারদের মুক্তির
জন্য আন্দোলন করে, দেশ ব্যাপী হরতাল করে ? কোথা থেকে তারা এত সাহস পায়?
পৃথিবীর কোন দেশ ধর্মীয় জাতি সত্ত্বার কারণে বিভাজিত হয়নি, শুধু ভারত
ছাড়া; কোন দেশে স্বাধীনতার যুদ্ধে পরাজিতরা মাথা তোলে কোনদিন দাঁড়াতে
পারেনি; শুধু বাংলাদেশ ছাড়া।
বিজ্ঞান ও সভ্যতার চরম উন্নতির এ যুগেও কোন কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক
গোষ্ঠী বেহেস্তে যাওয়ার টিকেট বিক্রি করে। তাদের জেলে ঢুকালে বলে আল্লাহ
তাদের ঈমানের পরীক্ষা করছেন আর উকিলের মাধ্যমে জামিন বা মুক্তি পেলে
গল্প: গরুচোর কাশেমের গল্প
কাশেমের গরুর গোশত্ খুব পছন্দ। প্রতিরাতে তার গো গোশত্ চা-ই, চাই। বউরে সবসময় বলে রাখে, প্রতি রাইতে আমারে গরুর গোশত্ দিবা। বউ প্রায়ই বলে, আপনে গরু খাওন বন্ধ দেন। গরু খান আর আমার উপর অত্যাচার করেন।
কাশেম মুচকি হাসে। বউরে জড়িয়ে ধরে। গালে চুমু খায়। তারপর বলে, তুমিই তো আমার পেয়ারে গাই।
বউ আল্লাদের সুরে সুরে বলে, উউউ... আপনে আমারে গাই বলতে পারলেন?
দুজনে এরপর ভালোবাসাবাসি করা শুরু করে। দুজনের পেয়ার বেশ। জীবনের বড় সময় দুজন একসঙ্গেই পার করে দিয়েছেন। সন্তান আছে দুইজন। একজন সৌদি থাকে, আরেকজন পাকিস্তান।
দুইজনই পুত্র। মাশাল্লাহ দিলে দিনের পথেই আছে। সৌদিতে আল্লাহর দরবারে ইবাদত বন্দেগী করে। আর কাজ করে। কিসের কাজ করে তা অবশ্য কাশেম বলতে পারবে না। কিংবা এ সংক্রান্ত তথ্য জানলেও কাশেম কখনও প্রকাশ্যে কিছুই বলেনি। তাই আমরাও জানতে পারি না কাশেমের বড় পুত্র কুদ্দুস মোল্লা সৌদিতে কি করে।
সময়ের লাশ শেষ পর্ব
সন্ধ্যার পর বাবা তার ছাত্র মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহকে নিয়ে বাসায় আসলেন। মাহফুজ ভাই প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতেন। তিনি কবিতা, গল্প লিখেন পত্র-পত্রিকায়। আমি সেই বিকাল থেকে কান্নার্ত চোখে শুয়েছিলাম। বিছানা থেকে উঠে দরজায় আসতেই মাহফুজ ভাইয়ের মুখ থেকে ছাত্র হত্যার ঘটনা শুনতে পেলাম। উনি বলতে লাগলেন, “আগের দিন থেকেই একটা আশঙ্কা ছিল--আগামীকাল মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে কোন মিছিল হলে সরকার কঠিন ব্যবস্থা নিতে পারে। অবশ্য মিছিলের উপর গুলি বর্ষিত হতে পারে এমন আশঙ্কা আমার মনে ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাই ঘটলো। সংবাদ অফিসে থাকতেই শুনলাম, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের অবস্থা খুবই খারাপ। ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল শুরু হয়েছে, যে কোনো সময় মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আমি শংকিত চিত্তে আবার আজিমপুরের দিকে যাত্রা শুরু করলাম, সারা পথেই স্থানে স্থানে মানুষের জটলা। সবাই শংকিত, কি ঘটে না ঘটে। আজিমপুরে পৌঁছেই শুনলাম, মেডিকেল কলেজের মোড়ে পুলিশ ছাত্র জনতার উপর গুলি করেছে, বহু মানুষ তাতে মারা গেছে। এই খবর শুনে আমিও অন্যান্য মানুষের সঙ্গে দৌঁড়ে পলাশী ব্যারাকের মোড়ে গেলাম। তখন
২০১৩: বইমেলা!!! বইমেলা!!! বইমেলা!!!!
বাঙালির প্রাণের মাস ফেব্রুয়ারি... ভাষার মাস ফেব্রুয়ারী... সেই ভাষাকে সম্মানিত করতে এই মাসে গোড়াপত্তন ঘটে বই মেলার... কালের বিবর্তনে এই বইমেলা ঢাকাবাসীকে ছাড়িয়ে সারা বিশ্বের বাঙালির প্রাণে দোলা দেয়ার একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। প্রতি বছর এই বই মেলাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি করে আমাদের মনে। ছাপার অক্ষরে প্রকাশ পায় হয় হাজার হাজার বই এবং ব্লগারদের বই্ও। শুধু মাত্র এই এক মাসে যে পরিমাণ বই ছাপা হয় তার অর্ধেক বইও বাকি ১১ মাসে ছাপা হয় না।
যাক সেসব কথা। বই মেলাকে ঘিরে আমাদের ব্লগারদের কি কি বই প্রকাশ হয়েছে তার একটি ছোট্ট তালিকা তৈরি করতে চাই যাতে আমাদের ক্রয় তালিকায় থাকা প্রিয় মানুষদের বইয়ের কথা যেন ভুলে না যাই। সকল ব্লগারদেরও অনুরোধ জানাই যেন মন্তব্যের ঘরে প্রিয় ব্লগারদের বইয়ের বিস্তারিত জানিয়ে যান। সকল ব্লগারদের প্রকাশিত বইয়ের তালিকা আপনার হাতের মুঠোয় থাক।
সময়ের লাশ ৪ র্থ পর্ব
মনে পড়ে, আর একদিনের কথা। সেদিন পুকুরে এক ঘটি জল আনতে গিয়েছিলাম লক্ষ্মী পূজাটা সম্পন্ন করার জন্য। অনেকটা ইচ্ছে করেই গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ও স্নান করছে। পায়ের কাপড়টুকু উঠিয়ে যেই ঘটিটা পানিতে ডুবিয়েছি অমনি সে বলতে আরম্ভ করল, আমি যাকে ভালোবাসি তার পা আমি কোনদিন দেখিনি। তার বুকে হেঁটেছি, শুয়েছি। একদিন হয়তো তার কোলে ঘুমিয়ে যেতে হবে। আমি বেশ লজ্জা পেয়েছিলাম। কোন কথা না বলেই সেদিনও চলে এলাম। ঘাটের সিঁড়ির চারটি ধাপ পার হতেই ও আমাকে পানি ছিটিয়ে দিল। বলল, ‘তুমি সুন্দর, আমার সেই প্রেমিকার মত--ঠিক প্রেমিকার মত!’ কে ওর প্রেমিকা? সেদিন বুঝতে পারিনি। অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। আরেকদিন কোন এক কথা প্রসঙ্গে বাবাকে বলেছিল, ‘জানেন স্যার, এই বাংলার সবাইকে আমার বড় আপন মনে হয়। আমার তো মা-বাবা কেউ নেই। তাই এ দেশ, এই মাটিই আমার মা-বাবা।’ ওর সাথে কখনও কথা বলিনি। কেন? লজ্জা হয়? না, অন্য কিছু--আমি জানি না। আমাদের ব্যাপারটা মা-বাবা-রাম সবাই জেনে গেছে। তাই আমাকে প্রায়ই মায়ের বকা শুনতে হয়। সুমাদকেও একবার বকা শুনতে হয়েছে। একদিন দূর থেকে ওকে দেখেছিলাম। ও কাঁদছে। কেন কাঁদছে? কেন?
সময়ের লাশ 3য় পর্ব
দু’জনেই চলে গেল। বাবা অবশ্য আদর করে বলেছিল, ‘এগুলো কিছু না, মা। কালই আমি সুমাদকে নিয়ে আসব।’ স্বপ্নের কথা বললেও চিঠির কথা গোপন রেখেছিলাম। আবার ঘুমিয়ে ভাবতে লাগলাম আর মনে মনে বলতে লাগলাম--আমি কে?--না, আমি দিলীপ দাসের মেয়ে কল্যাণী। আমার বয়স চৌদ্দ। বাবা-মা আমার জন্য বর দেখছে। আমি শিক্ষিতা, সুন্দরী (সবাই বলে)--আমার হবু স্বামী নিশ্চয়ই খুব সচ্ছল হবে। তবে সুমাদ একি বলছে, আমি একটা মানচিত্র! রাত তিনটা বাজে। আমি আবার চিঠি পড়তে শুরু করলাম। ‘তোমার সারা দেহের লোমে লোমে ছড়িয়ে আছে আ- ই- ক- ম...। ওরা তোমাকে দলিত মথিত করে তোমার লোমগুলি একটি একটি করে তুলে নকল উর্দু অক্ষরযুক্ত লোম লাগিয়ে দেবে। তুমি অপসংস্কৃতি আর পরাধীনতার শৃংখলে আটকে যাবে। তোমার ভাষা হবে দেহের সাথে সম্পর্কহীন। তোমার কথা এত মধুর শুনাবে না। বুঝতে পারনি?
গল্প : শেষ বিকেলের সোনালি আলো মিলেছে যখন চোখের কোণায়
অচেনা বন্ধুকে আমি সুন্দরী মনে করতাম। কিন্তু দেখা হওয়ার পর বুঝতে পারি, ধারণাটায় কি মারাত্মক রকমের ভুল ছিলো!
গল্প : ২০ কাপ চা আর ২০ টার বেশি সিগারেট খাওয়া দিনগুলো
১.
আমাদের অফিসের রানা ভাই তার নামের বানান লিখেন Shuhel Rana. তাকে যতই বলি এটা সোহেল রানা হয় নাই, এটা হইসে সুহেল রানা- তিনি ততই উদাসী হাসি দেন। বলেন; ভাইজান, বাপ-মায়ে আকিকা কইরা নাম রাখসে সোহেল রানা, বানান রাখসে Shuhel Rana. আমি কি করুম কন?
আমি তার যুক্তি শুনে হাসি। জানতে চাই, বাপ-মায়ে এই বানান রাখসে নাকি মেট্রিকের ফর্ম ফিলাপের সময় কোনো ইংরেজি মাস্টার এই কাহিনী করছে? রানা ভাই বলেন, নারে ভাই। আমার ঘটনা বাপ-মায়েই ঘটাইসে। আর কেউ এর মধ্যে নাক গলানোর সাহস পায় নাই।
শান্ত, নিরীহ, নিরামিশাষী এই ভদ্রলোকের সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি সবার প্রক্সি দিয়ে দেন। তার আর আমার ডিপার্টমেন্ট এক না। তাই আমাকে কখনো তার প্রক্সি নিতে হয় না। কিন্তু তার ডিপার্টমেন্টের কতজনের প্রক্সি যে তাকে আমি দিতে দেখি!
’৫২ সালের সময়ের উপর ভিত্তি করে ধারাবাহিক গল্পঃ সময়ের লাশ ১ম পর্ব
স্বপ্নের হাত ধরে কৃষ্ণপক্ষের রাত্রির অন্ধকারে অনন্তের পথে ছুটে চলা স্মৃতিগুলো প্রত্যেক মানুষের জীবনে জোনাকীর মত জ্বলে আর নিভে। ‘সময়ের লাশ’--গল্পে বৃদ্ধ বয়সে উত্তম পুরুষের বাচন শৈলীতে নায়িকা নায়কের সাথে তার প্রেমের কাহিনী এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভুমির কিয়দংশ বর্ণনা করেছেন। এখানে নায়ক ’৫২ সালের সময়ের ধারক, নায়িকা মাতৃভূমির ধারক অর্থাৎ গল্পটি যেন, ’৫২ এর সময়ের সাথে লাজুক মাতৃভূমির ভালোবাসা-লুকোচুরি-মিছিল-আন্দোলন-যুদ্ধ-মৃত্যুর খেলা।
সময়ের লাশ
--শাশ্বত স্বপন
’৫২ সালের সময়ের উপর ভিত্তি করে ধারাবাহিক গল্পঃ সময়ের লাশ
স্বপ্নের হাত ধরে কৃষ্ণপক্ষের রাত্রির অন্ধকারে অনন্তের পথে ছুটে চলা স্মৃতিগুলো প্রত্যেক মানুষের জীবনে জোনাকীর মত জ্বলে আর নিভে। ‘সময়ের লাশ’--গল্পে বৃদ্ধ বয়সে উত্তম পুরুষের বাচন শৈলীতে নায়িকা নায়কের সাথে তার প্রেমের কাহিনী এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভুমির কিয়দংশ বর্ণনা করেছেন। এখানে নায়ক ’৫২ সালের সময়ের ধারক, নায়িকা মাতৃভূমির ধারক অর্থাৎ গল্পটি যেন, ’৫২ এর সময়ের সাথে লাজুক মাতৃভূমির ভালোবাসার লুকোচুরি-মিছিল-আন্দোলন-যুদ্ধ-মৃত্যুর খেলা।
সময়ের লাশ
--শাশ্বত স্বপন
`ঝরা পাতার গান ' শেষ পর্ব
সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে আর কাঁদতে কাঁদতে উত্তরের বালুপথ আর নদীর তীর ধরে পদ্মা নদীর তীরে এসে বসলাম। গোদারা ঘাটের মাঝিরা আমার বাবাকে, আমাকে চেনে। তিন পুরুষের যাতায়াত এ নদী দিয়ে। পদ্মা বিধৌত উর্বর মাটির সন্তান আমি এবং আমার পূর্ব পুরুষ। এ নদীকে কেন্দ্র করে এর কাছাকাছি শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও বিক্রমপুর-এ হাজার বছর ধরে আমাদের পিতৃগণ ও মাতৃগণের বসবাস। আমার জন্মস্থান বিক্রমপুরের লৌহজং-এ। নদী পার হয়ে দিঘলী বাজারে এসে কিছু চিড়া-মুড়ি খেয়ে কদম বাবার মেলায় চলে এলাম। কদম বাবার মেলা শীত প্রকৃতির আরেক অকৃত্রিম রূপ। নানা জাতের মাঘের পাগল এখানে এসে মাস খানিক ভীড় করে গান করে। ব্যবসায়ীরা আর ভক্তরা খুশী থাকলে এ মেলা সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত চলে। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। নানা স্বাদের মুড়ী, চিড়া, খইয়ের মোয়া, সন্দেশ, নাড়ু, বাতাসা, কদমা, মিষ্টি খই, চিনি মাখানো ছোট ছোট গোল মিষ্টি, নিমকী, গজা কত না স্বাদের, গন্ধের খাবার। মাঘ মাসের শীতের মেলায় মানুষের ভীড়ে একটুও শীত লাগে না। ছোট্ট বেলায় তাই আগুন না জ্বালিয়ে উষ্ণতার জন্য মেলায় চলে যেতাম।
`ঝরা পাতার গান ' পর্ব-৩
এই বন পথে প্রতিদিন সূর্যের উদয় দেখি, দেখি দূরের টিলা, জঙ্গল; আবার সন্ধায় বন ঝাউ, দীর্ঘ ঘাস (বাঁশ) তথা বনশীর্ষ লাল আভায় মাখিয়ে সূর্য ঘুমিয়ে যায়। ফিরে আসি কিছু কাচা টাকা হাতে নিয়ে। আবার ছুটে চলি লাউয়া ছড়ায়, চিম্বুক পাহাড়ে, ভাওয়াল বনে অথবা অন্য কোথাও। রাতের চর বন আর ভাওয়াল বন একই রূপ ধারন করে। নিঃশব্ধ অরন্যভূমি, নিস্তব্ধ জনহীন নিশীথ রাত্রি, চকচকে সাদা বালু, কোথাও দো-আঁশমাটি মিশানো বন, দিনের রৌদ্রে কাচা শুকনা কাঁশবনে জোৎসার আলো পড়ে অপার্থিব সৌন্দর্যের অপূর্ব মহিমায় ভরে দেয় আমার দৃষ্টির দিগন্ত। জল ডোবায় সাদা-বেগুনি কলমী ফুলের সমারোহ আর এই ভিজা বালু-দো-আঁশ মাটিতে সাদা সাদা (কেউ বলে এর নাম দুধলি ফুল) ফুল--বড় মিষ্টি সুগন্ধ ছড়ায় আশেপাশে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে হঠাৎ করে। এ সময় বৃষ্টি! অবাক হলাম, এটা কি মাস? কখনো কখনো পৌষ মাসে কিছু কিছু বৃষ্টি পড়ে। মাঘ মাসে বৃষ্টি নাই। সবাই বন পথে সাপের ভয়ে গান গেয়ে অথবা হাততালি দিয়ে পথ চলে। আমি সবাইকে ‘শীতনিদ্রা’ সম্পর্কে বললাম--দেহের তাপমাত্রা শীতের সাথে উঠা-নামার কারনে সাপ-ব্যাঙ এখন দেখা যাবে না।
ঝরা পাতার গান পর্ব-2
মনে পড়ে, কাজের সন্ধানে কয়েকবার যেতে হয়েছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ। বর্ষায় দিগন্তবিহীন হাওর--কূল নাই, কিনারা নাই--এযেন, সাগর। শীতের আগমনে ছোট ছোট নদী-নালা-খাল-বিল হাওর থেকে যেন, জেগে উঠে ফসলের মাঠ। নদী-নালা-খাল-বিল-পুকুর-ডোবা মিলেই এ সুবিশাল হাওর। শীতকালে হাওরের সীমানায় দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য চোখে আমি তাকিয়ে থাকি। ভাবি, হাওরের পানি কোথায় চলে যায়। দেখি, চারদিকে মাছ ধরার মেলা; কোন কোন নৌকার খোলা, মাছে পরিপূর্ণ। কোথাও হাঁটু পানি; গরু-মহিষ সেই পানি পেরিয়ে যাচেছ সবুজ তৃণভুমিতে। বিল-ঝিল হাওরের অতি আপন বৃক্ষ হল হিজল গাছ; মাসের পর মাস পানিতেই কেটে যায় এদের জীবন। শকুন, ভূবন চিল মাছ শিকারের ফাঁকে এ গাছের ডালে ডালে বিশ্রাম করে। ঝাঁকে ঝাঁকে পানকৌড়ি, বক, শালিক ইত্যাদি জানা-অজানা বিদেশী পরিযায়ী পাখিরা ভীড় করে হিজল গাছে, জেগে উঠা জলাশয়ে খুঁজে খাবার। কাজের অবসরে আনমনে ভাবতে থাকি--বর্ষাকালের জলডুবা হাওর আর শীতকালে সেই হাওরে ঢেউ খেলানো সবুজ ফসলের মাঠ--প্রকৃতির কি বিচিত্র খেলা!
এ বাংলার, শাশ্বত শীত প্রকৃতির গল্প ঃ `ঝরা পাতার গান ' পর্ব-১
কুয়াশার অন্ধকারে হাজার বছর ধরে শীত কন্যা আসে ষড়ঋতুর লীলা বৈচিত্রের হেমন্তের ফসলে আঁকা মেঠো পথ ধরে। স্থান, কাল ভেদে এ শীত কন্যায় রূপ নানা অঞ্চলের দেব-দেবীর মত নানা সজ্জায় সজ্জিত হয়। হেমন্তের মাড়াই করা ধান বড় বড় কড়াওয়ালা মাটির হাড়িতে রাখতেই শীত রূপসী শীতের নানা উপকরণ কুয়াশার চাদরে ঢেকে এনে রাখে গৃহস্তের আঙ্গিনায়; কড়াওয়ালা মাটির হাড়িতে টোকা দিয়ে বলে, ‘এই গৃহস্ত আমি এসেছি ; চল, পিঠা-পুলি-পায়েস বানাই।’