ইউজার লগইন
ছোটগল্প
ছুঁয়েছে এ গান আমার কান্নার সাত সুর
If you love something, set it free; if it comes backs it's yours, if it doesn't, it never was. রিচার্ড বাক’এর এই উক্তিটিকে মন্ত্র করে তিতলি সারাক্ষণ মনে মনে আউরাতে থাকে। নিজেকে শক্তি দিতে চেষ্টা করে। দশ বারের মধ্যে আট বার সে হেরে যায় নিজের কাছে আবার দু’বার জিতেও যায়। সে অপেক্ষা করে থাকবে সায়ানের ফিরে আসার। সায়ানতো তার নিজের অংশ, পথ ভুলে যায় না লোকে? সায়ান পথ হারিয়ে ফেলেছে, পথ খুঁজে ফিরে এসে তার সায়ান তাকে খুঁজবে তিতলি জানে। তিতলি তার সমস্ত দরজা, জানালা, ঘুলঘুলি খুলে দিয়ে সায়ানের ফেরার অপেক্ষায় রইলো। কতদিন করবে অপেক্ষা? দশ বছর? বিশ বছর? পুরো জন্ম কিংবা জন্মান্তর?
গল্প: কালবৈশাখী
পর্ব-১
পাচ্ছি না একটুও শান্তি। নীলামনিকে সেদিন স্বপ্নে দেখলাম। দেখলাম কি, সে আমাদের বাড়ির একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে। স্বপ্নে তো কতকিছুই দেখা যায়। আমি দেখলাম, এক ঘুঘু ডাকা স্তব্ধ দুপুরে ও ঘুমিয়েছে কিংবা ঘুমোনোর ভান করছে এমন সময় আমি গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছি। ধরে বিছানা ওপরে দুইটা পাক দিয়ে দিয়েছি। তারপর হুটোপুটি শুরু করেছি দু'জনে মিলে। নাকের সঙ্গে নাক ঘষছি আর দুইজনই খুব হাসছি। ও আমাকে বজ্জাত, হাড়কেলো ইত্যাদি বলে বলে রাগ দেখানোর আর কিল দেয়ার চেষ্টা করছে। আমি দুইহাতে ওর হাত দু'টিকে বালিশের দু'পাশে ঠেসে ধরে আটকে দিলাম। ওর ঠোঁট থেকে তখন আমার ঠোঁট ঠিক এক ইঞ্চি দূরে। একটা রিনরিনে হাসির শব্দ তখনও দূরে কোথাও ভাসছিলো। আমি সে সময় ওর বুকের ভেতরকার তুমুল তোলপাড় স্পষ্ট অনুভব করতে পারছিলাম।
বৃষ্টিজলে ধুঁয়ে যাওয়া অক্ষর
১))
প্রায় দশ বছর পর বাবাকে দেখলাম। শেষবার যখন দেখি, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম দোতলা বাড়ির বারান্দায় নিশ্চুপ দেয়ালের মতো। দেয়ালের কান আছে এমন কথা মাঝে মাঝে শোনা যায়, আমিও সেদিন সেই শোনা কথার আদর্শ ধরে রাখার জন্য কিছু কথা শুনে ফেলেছিলাম। নিচে দাঁড়িয়ে বাবা বলছিল, নামবি না খোকা?
আমি তখন দেয়ালের মতো অনঢ়। বাবা যখন দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে গেল, তখন কিছুটা সচল হয়ে উৎসুক চোখ নিয়ে বাইরে এদিক-সেদিক তাকিয়েছিলাম।
এই দশ বছরে বাবা কত বদলে গেছে। বয়স যেন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। মাস্ক মুখে, সারা হাত-পায়ে কিসব জানি লাগানো। বাবাকে মনে হচ্ছে বৃদ্ধ কেউ। আমি পাশে গিয়ে তাকালাম কিন্তু বাবা দেখল না। পাশে মনিটরে অদ্ভুত কিছু চিহ্ন ওঠানামা করছে।
তোমার বাবা, এখন কোমায়। এজন্য আসতে বলেছিলাম।
পেছনে তাকিয়ে দেখি বয়স্ক মতো এক লোক। মলিন একটা শার্ট পড়নে। চোখে-মুখে রাজ্যের আধাঁর।
সম্পর্ক কিংবা অসম্পর্কের গল্প
১))
আমাদের প্রিয় বন্ধু সাগর একসময় ডায়েরী লিখত।
আমরা জানতে চাইতাম, তুই এত চুপচাপ কেন? বন্ধু আমাদের হেসে বলত,কই? পাতার সাথে তো কথা বলি। পাতা- যাকে আমরা দীর্ঘদিন ভেবে এসেছি রূপসী কোনো তরুণী, যার কথা ভেবে আমরা বন্ধুরা কত সময় পার করেছি উদাস থেকে উদাস হয়ে। এক অদেখা তরুণী যে আমাদের প্রিয় বন্ধুর সব কথা জানে, আমরা তার কাছের হয়েও কিছু জানি না সেই তরুণী দিন থেকে দিন আমাদের চোখের বালি হতে থাকল।
আমরা যখন আবিষ্কার করলাম, পাতা মানে কোনো নারী না, গাছের পাতা না বরং পাতা দিয়ে বানানো ডায়েরী,আমাদের মন কিঞ্চিত খারাপ হলো। সাগরকে নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু না পেয়ে আমাদের ভেতর বিরক্তি কাজ করতে শুরু করে আর ডায়েরীটি পড়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে।
ফোনালাপ
অনেক রাত। প্রায় আড়াইটা তিনটা হবে। পরিশ্রান্ত নায়ক গভীর ঘুমের রাজ্যে। উনি শুধু এই গল্পেরই নায়ক নন, উনি টিভি বা চলচ্চিত্রেরও নামকরা একজন অভিনেতা। তার বেড সাইড টেবিলে রাখা ফোন গুলোর একটা বেশ সুরেলা ভাবে গেয়ে উঠলো। রাতের শীতল নীরবতায় সুরেলা শব্দটাকে কর্কশ শোনালো। ঘুম ঘুম চোখে নায়ক ফোনটা হাতে নিলেন। কলারের নামটা দেখে নিমেষেই চোখ থেকে ঘুম ঘুম ভাবটা দূর হয়ে গেলো। শরীর ঢেকে রাখা কম্বলটা সরিয়ে তিনি সন্তর্পনে নেমে আসলেন বিছানা থেকে। পায়ের কাছে পড়ে থাকা গাউনটাকে জড়িয়ে চলে আসলেন পাশের ঘরে। আবছা আলোতে ঢেকে থাকা সোফাটাকে এড়িয়ে গেলেন বেড়ালের মত।
রিসিভ বাটনে চাপ দিতেই অপর পাশ থেকে ভেসে আসলো নায়লার অস্থির কণ্ঠ-
- হ্যালো। হ্যালো। কি হলো, কথা বলছো না কেনো? হ্যালো?
= কি হয়েছে জান? এখন কয়টা বাজে খেয়াল করেছো?
- কিজানি কয়টা বাজে, তুমি কি করছিলে? ঘুমাচ্ছিলে?
= অন্য কি করবো? তুমি কি পাশে আছো?
গল্প: মাঝে মাঝে মানুষের অক্ষমতা পুষিয়ে দিই নীরবে
১
চার ক্যান ডেডিকেটেডলী ব্রু'ড ব্যরন্স সদ্ব্যবহার করার পরও সেদিন রাতে শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছিলো। তাই চুলগুলো একটু টানিয়ে নেবার বাসনায় মহল্লার ছেলেটার ডেরায় গিয়ে উঠলাম। এত রাতে ওর খদ্দের খুব বেশি ছিলো না। সে পাকা হাতে পানি মেখে, নিপুণ কারিগরের মতো আমার চুল টেনে দিল। আরামে চোখ মুদে আসছিলো। আয়নায় দেখছিলাম চোখের কোণে লাল একটা আভা তৈরী হচ্ছে। নিজেকে ডিমওয়ালা মাছের মতো লাগছিলো। যে মাছ গভীর পানিতে থাকে। জেলেদের জালে বন্দী হওয়ার দুশ্চিন্তা যাকে ছুঁতে পারে না। অনাগত দিনের কোনো এক অদৃশ্য সুখের স্বপ্ন আমার নিমিলীত চোখে ঝিলিক দিচ্ছিলো। এই বিন্দাস মনোভাবের উৎপত্তি কোথায় ঠিক ধরতে পারছিলাম না। তবে কি ইলোরা ভাবী?
২
অণুগল্প: মেয়েটি
১.
কনিংবেল চাপ দিলাম।
একটি মেয়ে হেঁটে এসে বিল্ডিং-এর কলাপসেবল গেট খুলে দেয়।
সেই প্রথম দেখি।
কি মিষ্টি চেহারা।
সেই বাসাতেই আমরা বাসাটা ভাড়া নেই।
আমাদের পাশের ইউনিটেই থাকে।
ধীরে আমরা বন্ধু হয়ে উঠি।
আমরা ঘুরি। রিক্সা দিয়ে। আইসক্রিম খাই।
সারারাত ফোনে কথা বলি।
এপার-ওপার বরান্দায় দাড়িয়ে কথা বলি।
একদিন বুঝতে পারি আমি তার প্রেমে পড়েছি।
নানান ভাবে তাকে বোঝাই।
সে বোঝে।
কিংবা বোঝে না।
একদিন সাহস করে জড়িয়ে ধরি।
ভাবছিলাম- মেয়েটির হ্নদয়ে ভালোবাসা আছে।
কিংবা ভাবছিলাম, হয়তো একটা চড় খাবো।
জড়িয়ে ধরে বললাম- আমাকে ছেড়ে তুমি যেয়ো না।
বলতে বলতে- ঠোটে চুমু খেয়ে বসলাম।
মেয়েটির চোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে আসলো।
আমি কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
মেয়েটির মাথা আমার কাঁধে ছিল।
ভালোবাসি শব্দটা শুনতেই সে চমকে উঠে।
বর্শায় গাঁথা জাহানারা বেগমের আঁচল
সরু গলিটার শেষ মাথা থেকে ছোট ছোট পা ফেলে জাহানারা বড় গলিটায় এসে একটু জিরিয়ে নেবে কিনা ভাবছে। তাকে আরো ৪০০ মিটারের মত হাঁটতে হবে। প্রাচীন শরীর সব সময় কথা শুনতে চায় না। জাহানারা বেগমের বয়স যতটা না তাকে দেখলে তারচেয়েও বয়স্ক লাগে। নিঃসন্তান বিধবা তিনি, নিকটাত্মীয় বলতে দুটো ভাই, তারাও থাকে অনেক দুর। একই শহরে থেকেও যে অনেক দুরে চলে যাওয়া যায় এই মহাব্যস্ত হরিয়ে যাওয়ার শহরে সেটা জাহানারা খুব ভালোই জানে।
নিঃসন্তান হওয়ায় স্বামীর সাথে তার দাম্পত্য জীবন খুব একটা সুখকর ছিলো না কোন কালেই, স্বামী মারা যাবার পর জাহানারার চট্টগ্রামে তার বাপের বাড়িতে চলে আসে, দুই ভাইয়ের কেউ এ বাড়িতে আর থাকে না, ভাড়া দিয়ে নিজেরা আলাদা আলাদা সংসার পেতেছে শহরের অভিজাত এলাকায়। বাড়িটির নোনা ধরা দুটো রুম জাহানারার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়, ভায়েরা মাস শেষে কিছু টাকাও লোক মারফত প্রতিমাসে পাঠায়, সেটা দিয়েই তাঁর ভালোভাবেই দিন চলে যায়।
গল্প: রাতজাগা তারারা দেখে নি দিনের আলোয় পাখির উড়ে যাওয়া
মুনিয়া পাখিটা তার নরম তুলতুলে শরীর নিয়ে আমার হাতে উঠে আসছিলো। সেটার টুকটুকে ছোট্ট পা, নখের মিষ্টি খোঁচা- আমাকে আনন্দময় সুড়সুড়ির অনুভূতি দিচ্ছিলো। নির্নিমেষ চোখে দেখছিলাম, পাখিটাকে আমি চিনি। এটা প্রিয়’দের বাসা থেকে এসেছে। ওর সবচে’ ছোট্ট বোনটা মুনিয়া পাখি পুষে। আমি গেলেই সে পাখিগুলোর খাঁচার কাছে আমাকে নিয়ে যায়। আমি পাখিগুলোকে নিজ হাতে দানা খাওয়াই। পাখিরা যখন হাতের তালু খুটে খুটে দানা খায়, তখন আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু অবুঝ পাখিটার তো তা বোঝার কথা নয়। তাহলে সেটা পথ চিনে চিনে আমার বাসায় উড়ে এসেছে কিসের টানে?
জেলবন্দী মানুষ কিংবা দেয়ালবন্দী আমি
১))
প্রায় চৌদ্দ বছর পর জেল থেকে মুক্তি পেয়ে হাঁফ ছেড়ে নিঃশ্বাস নিতে গিয়ে খেয়াল করলাম, উজ্জ্বল আলোতে চোখ জ্বালা করছে। হাঁফ ছাড়ার কথা ভুলে গিয়ে, আমি চোখের দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ি। অথচ প্রথমেই আমার ছেলের কথা মনে হওয়া উচিত ছিল কিংবা আমার বৃদ্ধ মা কিভাবে সংসারের ঘানি টানছে সেই বিষয়ে উদগ্রীব হয়ে বাসায় ছুটে যাওয়া উচিত ছিল। ছেলের কথা মনে হলো, অনেক পড়ে। এর মাঝে মুক্ত বাতাসে,মুক্ত মানুষ হয়ে চা খেলাম আয়েশ করে।
তখন খেয়াল হলো- আমার জন্য জেলগেটের বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে নেই। দাঁড়ানোর কথা ছিল না,আমি প্রত্যাশাও করি নি। মা ছাড়া গত চৌদ্দ বছরে কেউ যোগাযোগ করে নি খুব একটা। তাই ফুলের মালা নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে থাকবে এটা ভাবার মতো বোকা আমি না। তবু হয়ত অবচেতন মন কিছু একটা চাইছিল।
পুরোন ঢাকার ঘিঞ্জি রাস্তাগুলো যে আরো ঘিঞ্জি হয়েছে সেটা বুঝতে না বুঝতেই পেছন থেকে শুনতে পেলাম-
আব্বা, বাসায় চলেন। অনেক রোদ উঠছে আজকে।
মুক্তগদ্যঃ- বৃষ্টি ও চিঠি বিষয়ক
*
আমি এখন আর কারো কাছে থেকে চিঠি পাই না। সেই অর্থে কারো চিঠির জন্য যে উদগ্র প্রতীক্ষা, সেরকম কেউ আসলে কোনদিনই ছিলোনা। পাতাবাহারের সবুজে ছড়ানো ছিটোনো বিবিধ রঙের মত আনন্দ নিয়ে আসা বর্নিল চিঠি বন্ধ হ'য়ে গিয়েছে এক যুগ আগেই। তবু, বৃষ্টি যখনই নামে; হোক সে মাঝ দুপুরে, হোক ভোর সকালে কিংবা নিওন সন্ধ্যায় নাহয় নিশুতি রাতে। আমার খালি মনে হয় একজন পোস্টম্যান, তার বুড়োটে সাইকেলে চেপে ভিজতে ভিজতে আমার জন্য একটা চিঠি বয়ে আনছে। সারাটা বৃষ্টিক্ষণ আমি অপেক্ষায় থাকি কলবেল বেজে ওঠার...
**
রোদ ঝলমল দুপুরের একটা উদাসী মাদকতা আছে। তার সাথে যদি যোগ দেয় মফস্বলের একাকী রাস্তা আর রাস্তায় এলোমেলো ছড়ানো ছায়ারা... সেই দুপুরের উদাসী মাদকতায় আমি মরতে পারি।
এমনই এক দুপুরে, সাইকেলে টুনটুন ঘণ্টি বাজিয়ে খাকি জামার পোস্টম্যান একটা চিঠি এনেছিলো আমার জন্য।
***
চোখ
আমাকে একটা চোখ ধার দিবে? আমার চোখ দিয়ে কেবল রক্ত পড়ে। লাল লাল তাজা মানুষের রক্ত। আমার হাত এখন জীর্ণ-শীর্ণ আর বৃদ্ধ। আমি রক্ত মুছতে পারি না। রক্ত গাল বেয়ে বেয়ে পড়ে আমাকে ভিজিয়ে দেয়, আমার গাল,ঠোঁট,গলা এখন রক্তস্নাত। এমনকি তোমার দেয়া শার্টগুলো ভিজে ভিজে যখন শক্ত হয়ে যায়,আমি কেবল ব্যথিত চোখে দেখি তাদের নীরব মৃত্যু। আসলে দেখি না। যখন দেখতে যাই,শক্ত হয়ে যাওয়া শার্ট আবার ভিজতে শুরু করে।
আমাকে নতুন কিছু শার্ট দিবে? তোমার দেয়া শার্ট ছাড়া আমি কিছু পড়তে পারি না। পুরোনো হয়ে যাওয়া শার্টগুলো কত জায়গায় ছিড়ে গেছে,ধুতে ধুতে হয়ে গেছে ঘর মোছার কাপড়ের মতো। একদিন তো ভুল করে কাজের ছেলেটা একটি শার্ট দিয়ে ঘর মুছতে শুরু করল। আমি নীরবে শুধু চেয়ে দেখি, শার্টগুলোর অপমৃত্যু। আসলে চেয়ে দেখতে পারি না। আমার চোখ দিয়ে কেবল রক্ত পড়ে।
পূর্ণিমা রাত ও লুসিফার
একটি অন্যরকম রাতের সূচনালগ্নে দাঁড়িয়ে আছি।
বাইরের প্রকৃতি অন্যান্য সব রাতের মতো। ভেতরের চেতনা একটু অস্থির। অস্থির না হলে সেটা হতো অস্বাভাবিক। এই রাতের জন্য অপেক্ষায় আছি দেখে বিয়ে করলাম না- অথচ আমি চিরকাল নারী ভক্ত ছিলাম।চাইলে ব্যবসা করতে পারতাম- ফুলে থাকা পৈত্রিক সম্পত্তি বাড়াতে পারতাম চক্রবৃদ্ধি হারে। খুলতে পারতাম একটি পাঁচতারা হোটেল- যে হোটেলের বারে বসে মাতাল হতে পারতাম ফ্রি’তে।
শুধু ধ্যান করেছি আমি। শয়তান হিসেবে যাদের আমরা চিনি,জানি কিংবা অনুভব করি তাদের দেবতা লুসিফারের সাথে দেখা করার জন্য প্রতি পূর্ণিমা রাতে রক্তস্নান করেছি।
আজ আবার পূর্ণিমা। আমি একশ’তম হত্যাকান্ডটি সম্পন্ন করে চুপচাপ বসে আছি। মিনিটে মিনিটে অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। লুসিফারের দেখা পাওয়া সহজ কথা নয়। স্বপ্নপ্রাপ্ত এক গোপন সূত্রের পথ ধরে এতদূর আগাতে পেরেছি।
ভালোবাসার অনুগল্প
মাঝে মাঝে শিশিরের ফোঁটার মত কিছু ঘটনা জমে থাকে আমাদের চারিপাশে । টুপটাপ যখন ঝরে তখন কেবল শব্দ পাওয়া যায়, সকালেই আবার উবে যাওয়ার মতই সে ঘটনাগুলো মিলিয়ে যায় । আর কখনো শোনা যায়না । সে রকমই একটা ঘটনা ঘটল এই শান্তিপুরে । মানুষের কান অব্দি পৌছানোর আগেই যদিও তা আবার গায়েব হয়ে গিয়েছে ।
নামটা প্রশান্তিময় হলেও এই ক্ষুদে শহরের মানুষদের শান্তশিষ্ট ঠিক বলা যাবেনা । আবার তারা যে খুব খারাপ তাও না । এরা অল্পতেই উত্তেজিত হয়, অল্পতেই অবাক হয় আর হঠাত রেগে গিয়ে তুমুল ঝগড়া বাধিয়ে দেয় ।
মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাবো
মাঝে মাঝে তিতলি আর সায়ানের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়ে যায়। পরে ঝগড়ার কারণ দুজনের একজনও খুঁজে পায় না। কখনো খুঁজে পেলেও অবাক লাগে এটা কী এতো তীব্র অভিমানের কোন ব্যাপার ছিল?