ইউজার লগইন
ভালোবাসা
প্রতারণার গল্প
১.
সেবার মৎস্যকন্যা আর আমি পুরো দক্ষিণ উপকূলটা চষেছিলাম একসাথে। মৎস্যকন্যা আমাকে ৭ দিন পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা করে সময় দিয়েছিলো। আমরা সুন্দরবনের গহীন অরণ্যে সবচে' বেশি ঘুরেছিলাম। পানি ছেড়ে ডাঙায় উঠলে মেয়েটি দিব্যি আমাদের মতো মানুষ হয়ে যেতো। ওর পুরো শরীর রঙিন মখমলের পোশাকে ঢাকা থাকতো। আর গরম ধোঁয়া ওঠা চাএর ফ্লাস্ক মাঝে মাঝে আমাদের আনন্দ হাজার গুণ বাড়িয়ে দিতো। আমরা দু'জন অরণ্যের নিশ্ছিদ্র টুপ-টাপ শব্দের মধ্যে বসে ধূম্রশলাকা সহযোগে চা পান করতাম। ফেরার দিন অর্ধমানবী সাগরে হারিয়ে যাওয়ার আগে আমায় বলেছিলো, আবার নাকি দেখা হবে!
২.
কিন্তু মহানগরীর প্রতি প্রেম ধীরে ধীরে বাড়ছিলো আমার। কোনোদিন যদি আর মৎস্যকন্যার সঙ্গে দেখা নাও হয়, তাহলে কি হবে জানতাম না কিন্তু নিশ্চিত জানতাম যে, মহানগরীর সঙ্গে দেখা না হলে খুব-ভীষণ মন খারাপ হবে। তাই পাহাড়ের নির্লিপ্ততম কোণের নির্জন কুটির ছেড়ে ছুটে এসেছিলাম দূষিত শব্দের সাথে দূষিত পানি দিয়ে দূষিত বাতাস মেশাতে। ওই কুটিরের দিকে তর্জনী রেখে মৎস্যকন্যা জানতে চেয়েছিলো, থাকবে আমার সাথে এখানে?
৩.
জীবন ও জন্ম
শ্রাবণ, একটা আধপাগল ছেলে। কখন কি করে তার কোনো ঠিক নাই। ইচ্ছে হলে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গভীর রাতে চলেযায় রেস্টুরেন্টে খেতে। ইচ্ছে হলে ঝুম বৃষ্টিতে সুটেড বুটেড অবস্থায় ভিজতে নেমে যায়। ইচ্ছে হলে হাটে, শুধুই হাটে।
তার বন্ধুদের মতো, তারও একজন প্রেমিকা ছিলো, শ্রেয়া। তাদের প্রেম ছিলো সবার কাছে উদাহারন। সবাই হিংসা করতো তাদের ভালোবাসার সুখ দেখে।
একদিন শ্রাবণের কাঁধে মাথা রেখে শ্রেয়া বলেছিলো। বিশ্বাস করো শ্রাবণ, এই পৃথিবীতে আমার জন্ম শুধুই তোমার জন্য। হয়তো তোমার হবো বলেই আমার এ ধরনীতে আসা।
আজ শ্রেয়া, শ্রাবণের থেকে অনেক দূরে। শ্রাবণ যখন ঢাকায় প্রতিনিয়ত বাস্তবতার সাথে ঠোকর খাচ্ছে, তখন শ্রেয়া নাটোরে তার সুখের সংসারে আলো ছড়াচ্ছে। আজ সে আর শ্রাবণের প্রেমিকা নয়, অন্যকারো ঘরণী। সোজাকথায় পরস্ত্রী।
ইদানিং শ্রেয়া গল্পে গল্পে তার বান্ধবীদের বলে, জানিস আমার কেনো যেনো মনেহয় তোদের ভাইয়ার জন্যই আমার এই জন্ম!!!! ও আমাকে এত্তো ভালোবাসে। ওর ভালোবাসায় আজ আমি সম্পূর্ণ। আমার জীবনটা আজ সার্থক।
এসব শুনে শ্রাবণের খুব সাধ জাগে, ইশ যদি একটি বার জিজ্ঞাসা করতে পারতাম।
একটি উপচানো এসট্রে আর দুটি নির্ঘুম চোখ
গুমোট আবহাওয়া। কাল অফিস নেই। সবাই যার যার মতো উল্লাসে ব্যাস্ত। সুমিত বসে আছে সেই পুবের জানালাটি ধরে। ঘরের আলো নেভানো, তবে কম্পিউটার অন।
কম্পিউটারে অনবরত বেজে চলছে সেই গানটি, যে গানে সুমিতের প্রতিটি অলস দিনের সৃষ্টি হয়।
"সাচ এ লোনলি ডে,
এন্ড ইটস মাইন,
দ্যা লোনলিয়েস্ট ডে ইন মাই লাইফ।"
সুমিত আপন মনে একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছে আর মুগ্ধ হয়ে শুনে যাচ্ছে গানটি। গানটির আসলেই একটা অনন্য মাদকতা আছে, যা শ্রোতাকে ভাবনার জগতে নিয়ে যেতে পারে। এই গানের সাথে সুমিতের এমন অন্তরঙ্গ সম্পর্ক প্রায় বছর খানিকের।
সুমিত হঠাৎ করে কম্পিউটারের সামনে এসে বসলো। বসেই চালিয়ে দিলো,
"আই হ্যাভ এ প্রবলেম,
দ্যাট আই কেননট এক্সপ্লেইন......"
আর এই সমস্যার সাথেই সুমিতের দৈনন্দিন পথচলা। রোবটিক জীবন জাপন চলতে থাকে কোনো এক অজানাকে উদ্দেশ্য করে।
হয়তো কোনো এক শুভ্র সকালে কোনো এক অপরিচিতা সামনে এসে দাঁড়াবে।
ঘোর
স্পর্শঘোর...
তোমাকে কখনো শাড়িতে দেখিনি আমি, শুধু ছবি ছাড়া। কতোবার ভেবেছি বলব একদিন শাড়ি পরতে, বুকের দুরুদুরু ছন্দ ছাপিয়ে ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছুতে পারেনি শব্দ গুলো। একদিন আসইনা ... পেয়াজখসী আঁচল জড়ানো তোমাকে দেখি প্রাণ ভরে। হয়তো সেদিন ভুলকরে ছুঁয়ে দেবো তোমার হাত কিংবা শাড়ির আঁচল। স্পর্শঘোর জমা হবে স্মৃতির একান্ত সিন্দুকে...
শব্দঘোর...
তোমার আঁচলে আঁকা স্পর্শঘোর ছবি হয়ে গেলে, বসে থাকি নীরবে। ছবিটায় শব্দ ছোঁয়ালেই হয়ে উঠবে কবিতা, আর তুমি কবিতাটা একবার পড়লেই হয়ে যাবে গান। কিছু কিছু গান, কেন জানি বসে যায় বুকের ভেতর। রোদ গলে পড়া দুপুরে সেই গান শুনলেই বৃষ্টি নামে মনের নিকোনো উঠোনে। ঝিলিমিলি সেই উঠোনে তোমার উচ্চারিত শব্দগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরে। শব্দঘোরে ডুবে যায় চরাচর...
সময়ঘোর...
তোমার জন্য কথকতা..
এই চিঠিটা তোমার, হ্যাঁ সত্যিই তোমার জন্য।
তুমি অসাধারণ সব চিঠি লিখতে পারো।
স্রষ্টা অতটা ভালো লেখার ক্ষমতা যাকে তাকে দেন না, জানো?
একটা সাদা কাগজে লেখা কিছু কথা যে কারও
জীবনটাকে দেখার চোখটাই পাল্টে দিতে পারে,
তা কয়জনই বা জানে!
আমিই বা কি ছাই জানতাম তোমায় জানার আগে?!
অনেকেই বলে থাকে,
কাউকে নাকি তার নিজের চাইতে বেশি আর কেউ বুঝতে পারে না।
আমার মাঝে মাঝেই মনে হয়,
মনে হয় না আমি নিজেকে অতটা বুঝতে পারি - যতটা তুমি বোঝো!
যাই হোক,
সেই সে-ই-ই-ই থেকেই শখ ছিল আমার,
একটা চিঠি লেখার..শুধুই তোমার জন্য।
হাজার হোক, দুইদিনের দুনিয়া!
এখনও কত্ত কথা বলার বাকি,
হুট করে একদিন মরে টরে গেলে বড় ঝামেলা,
ভূত টুত হয়ে ফিরে এসে তোমাকে জ্বালানোটা একটা যন্ত্রণাই হয়ে যাপে!
মাঝেই মাঝেই তুমি একটা দুইটা কথায় মন খুব ভালো করে দাও,
মাঝে মাঝে আবার কিছু না বলেই। হয়তো একটু অন্যরকম করে তাকানোয়।
কিছুই বলার থাকে না আমার, কিচ্ছুটি না। একটুকরো হাসি দিয়েই খালাস!
আমারও ইচ্ছে করে খুব, একেকটা দিন তোমার মন খুব খুব ভালো করে দিতে।
অতটা হয়তো পারি না, আসলে সবাইকে দিয়ে সবকিছু করা হয়েই উঠে না।
এই নষ্ট শহরে নাম না জানা যেকোন মাস্তান
১.
রাজধানীর রাস্তাগুলো অসাধারণ। আর সংখ্যাতেও অনেক। একবার কোনো একটা রাস্তায় হারিয়ে যেতে পারলেই কেল্লা ফতে। হাজারো গলি আর লক্ষ অলিতে নিজেকে নিয়ে মিশে যাওয়াটা কঠিন নয় মোটেও।
দুপুরের কড়া রোদে যখন মানুষের সাথে সাথে মহল্লার দোকানী, দোকানের চাএর স্টোভ, উত্তরের বড় মোড়, মোড়ের বিলবোর্ড- সবাই এক তালে ঝিমায়; তখন আমার ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে ইচ্ছে করে। চারপাশে ঝিমুতে থাকা প্রতিটি অনুষঙ্গকে দেখতে ইচ্ছে করে। হঠাৎ কোনো ব্যস্ততায় একা রাস্তাটায় ঝিমুনির জগৎ থেকে বের হয়ে আসা, অপরিচিত এক চোখ টানা সুন্দরীর প্রতি আকৃষ্ট হতে ইচ্ছে করে। তার ইস্ত্রি করা সোজা চুল, রুজ ঘষে লাল করা গাল, কমলা রঙয়ের লিপস্টিকে আঁকা ঠোঁট, শরীর আঁকড়ে থাকা কামিজ, হাঁটুর পর থেকেই শেষ হয়ে যাবার হুমকি দিতে থাকা সালোয়ার বা গানের চরিত্র থেকে উঠে আসা নূপুর পড়া একটি পা- সবাই আমাকে আকর্ষণ করে। আমার কাছে এদের সবাইকে একেকটা আলাদা চরিত্র মনে হয়। সবার অভিনয়ে একটি সুন্দর সিনেমা দাঁড়িয়েছে বলে ধারণা জন্মায়। অথচ সেই মেয়েটিই কিনা আমায় একদিন বিশাল মিথ্যে একটি কথা বলেছিলো!
ডুবে যেতে থাকা স্বপ্নেরা
লেখালেখির সাথে প্রায় আড়িই হয়ে গেছে ইদানীং, কেন জানিনা। তারপরেও হঠাত হঠাত মাথার পোকাগুলো নড়েচড়ে ওঠে। একটা দু'টো শব্দ একটা দু'টো লাইন মাথার ভিতর খেলা করে।
এরকমই কিছু লাইন সাজিয়ে ফেললাম অনেক অনেক দিন পর। সেটাকে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শালিকের চোখের কাজল মরে এলে;
পাখিগুলো সব ফুল হয়ে যায়।
কোমল শরীর নিয়ে ফুটে ওঠে অদ্ভুত সন্ধ্যায়,
বৃষ্টির ঘ্রাণ আর ভেজা ঠোঁটের ঘ্রাণ একাকার হয়ে যায়।
হাতের তালুতে আঁকা ভাগ্যরেখায় কাটাকুটি খেলার সাথী হয় অব্যক্ত যন্ত্রণা,
ডাইলিউটেড চোখের মণিতে ডুবে যেতে যেতে স্বপ্নেরা দপ করে জ্বলে ওঠে,
খুঁজে ফেরে খড়কুটো আর একটি নিশ্চিন্ত কাঁধ,
যেখানে অশ্রুরা নদী হয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে নামা ঝর্ণার ছায়া মেখে...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
চলে এসো ... এক বরষায়
মাজেদা খালা দু’তিন ধরে ক্রমাগত ফোন দিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে চলেছেন। প্রতিবার ফোনে ঝাড়া দুই মিনিট কান্নার মাঝে ৩০ সেকেন্ড পর পর একটু বিরতি দিয়ে হিমুকে বলছেন, তুই ভাল আছিস তো? হিমুর মনে হচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলো টক টাইম নয়, ক্রাইং টাইমের উপর কলরেট অফার করছে। দিনের যে কোন সময় কল করে ২ মিনিট কাঁদলে কলরেট সর্বনিম্ন। শুধু মাজেদা খালাই নয়, খালাতো ভাই বাদলও ফোন দিয়ে চুপচাপ ধরে থাকল। তারপর বলল, আজ হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছি। বলেই ফোনটা টুস করে কেটে দিল। হিমুর মনে হল বাদল ফোন কেটে দিয়ে কাঁদছে। তাহলে কি বাদল অন্য কোন কলরেট অফার নিয়েছে!
কোন প্যাকেজে টকটাইম কী হিসেবে সেটা জানা হয়নি হিমুর। এখন পর্যন্ত রূপাই তার মোবাইলের ব্যালান্স ভরে দিয়েছে। হিমু দেখেছে ব্যালান্স থাকতে থাকতে কোনবারই তার রূপাকে কল করা হয় না। আর যখন রূপাকে কল করে, কল করা মাত্রই ব্যালান্স শেষ হয়ে যায়। রূপা কলব্যাক করে না তবে মোবাইলে ব্যাল্যান্স ভরে দেয়ার কাজটা রূপা নিজেই করে দেয়। রূপা অবশ্য জানে ব্যাল্যান্স শেষ না হওয়া অব্দি হিমুর কল আসবে না।
- হ্যালো...রূপা।
- এবার তোমার ফোনের ব্যাল্যান্স বেশ চলল তাহলে!
ঢাকা আমার প্রেম
দুই যুগ ধরে প্রবাসে কাটাচ্ছি। ঘুরে দেখেছি পৃথিবীর অনেক বড় আর বিখ্যাত শহর আর শহরতলী। দেখেছি অনেক সুন্দর প্ল্যান করে বানানো দালান কোঠা আর রাস্তা ঘাট। সব কিছুই ঠিক যেন সিনেমার পর্দার মত। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না আমার প্রানপ্রিয় ঢাকা শহরের তুলনা।
আমার কাছে ঢাকা যেন কিশোর বালকের প্রথম প্রেমের উপলব্দি যা কোন দিন ভোলা যায় না জীবনে। যার সাথে পৃথিবীর আর কোন সুন্দরী নারীর তুলনা হয়না। ঐযে কথায় বলে যার যেথা ঘর। ঢাকা আমার কাছে প্রেম, ভালবাসা, ঘর, মোহ, আবেগ, বেড়ে উঠার সব মধুর স্মৃতি বিজড়িত এক মহা তীর্থস্থান।
কিশোর বালকের বেড়ে উঠার সময়ের মধুর স্মৃতি চিঽ হয়ত আর খুজে পাওয়া যায়না আগের মত। পুরনো শহর আর তার সেই ছোট খাট পুরনো দালান আর তেমন অবশিষ্ট নাই কিন্তু তবুও খুজে পাই সেই হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি যেন ঢাকায় গেলেই বাতাস সেটা উড়ে উড়ে মনে করিয়ে দেয়।
আমার সময়ের ঢাকায় এত মানুষ , গাড়িঘোড়া আর উঁচু দালান কোঠা ছিল না। মানুষ হয়ত এত কৃতিম ছিল না। দেশের রাজনীতি এত বিষাক্ত ছিল না। খাবার জিনিসে এত ভেজাল ছিল না । মানুষও এত পরিমানে ভন্ড আর মিথ্যাচার করতো না।
হিমুর শোকে লক্ষ হিমু কাঁদে
হলদে রঙের পাঞ্জাবিটা গায়ে
ভর দুপুরে হাটে খালি পায়ে,
পার্কে বসে কাটে সারাবেলা-
হিমুটা না দারুন আত্মভোলা!
সবকিছুতে বেদম রসিকতা-
খেলার ছলে বলে গভীর কথা,
দাড়ির ফাঁকে হাসে মিটিমিটি-
চাঁদনী রাতে পড়ে রূপার চিঠি।
রাস্তা ঘাটে ঘোরে মহাপুরুষ
হৃদয় পটে আঁকে কাতর মানুষ!
বাসে ভালো জোস্না এবং কাক-
থাক সে কথা, গল্প হয়েই থাক।
হিমুর এখন মেঘের ওপর বাড়ি,
জোস্না ধোয়া চাঁদের সাথে আড়ি;
হিমু কি ঐ ধুসর জগত থেকে
এই নগরের খাঁ খাঁ দুপুর দ্যাখে!
কত্তো মানুষ এই শহরে থাকে-
হিমুর স্মৃতি কেইবা মনে রাখে!
কেউ কি জানে হলদে সোনা রোদে
হিমুর শোকে লক্ষ হিমু কাঁদে!
ফাদারহুড
মাসুম, মধ্যবয়সী একজন মানুষ। বিয়ে করেছিলেন মাস ছয়েক। বিয়ের আগের অগোছালো একজন মানুষ। জীবনজাপনে কোনো জীবনবোধ ছিলো না। প্রতিটি রাতের শুরু হতো নেশা দিয়ে। মদ, গাজা আর সিগারেটে কেটে যেতো প্রতিটি একাকিত্বের রাত।
একটি কাঠের চেয়ার; ঠায় দাড়িয়ে আছে অপরিষ্কার বারান্দায়। ধুলো জমে যার রং ই পাল্টে গিয়েছে। মাসুম ইফতার শেষে বারান্দায় দাড়িয়ে বিড়ি ফুকছে। কিছুটা অন্যমনস্ক ভংগিতে তাকিয়ে আছে ধুলোপরা ওই চেয়ারের দিকে। হঠাৎ ক্রিংক্রিং শব্দে মোবাইল বেজে উঠলো। বউ কল দিয়েছে বোধহয়!!!
পারেও মেয়েটা। অসীম ধৈর্য নিয়ে সর্বদা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিয়ের পরে এই মেয়েটা জীবনবোধই পাল্টিয়ে দিয়েছে।আজ বিকালে তো তার ডাক্তারের কাছে যাবার কথা। এই কলটা কি সেই আপডেট জানাবার জন্য নাকি গতানুগতিক? এই ভাবতে ভাবতে কলটি রিসিভ করলো মাসুম।
অস্ফুট স্বরে বললোঃ হ্যালো।
ওপাশ থেকে হাসির রিনিরিন শব্দে বললোঃ আসবা কবে?
কেন?
নাহ, এমনি। তোমার সাথে কথা আছে।
বলো।
না, মানে ডাক্তার বলছে সুখবর আছে।
প্রচন্ড মুডি মানুষটি হো হো করে হেসে বললোঃ তাই তো বলি বউ এত্তো লজ্জা পায় কেন?
দেয়াল ঘেরা পাথর
আমার কান্নার অবশিষ্ট গুলো জল হয়ে আস্তে আস্তে তোমার কংক্রিটের মনের দেয়ালে আঘাত করে। সেই আঘাতে ক্রমেই নরম হয়ে যায় দেয়ালের পলেস্তারাগুলো, ক্রমেই ছুটে যেতে চায় দেয়াল থেকে, ক্রমেই দূরত্ব বাড়তে থাকে মনের সাথে। এই ছুটে যাওয়া, দূরত্ব বাড়তে থাকার নাম-ই হয়তো বিচ্ছেদ...
বিচ্ছেদ সইতে পারেনা কেউ কোনোদিন। তা আমি বুঝি...তাই তো মনের দেয়াল জুড়ে জমে থাকা পলেস্তারাগুলো আজকাল বড্ড শব্দ করে কাঁদে। সেই কান্না আমার চোখ বেয়ে মিশে যায় তোমার বুকের সমতলে।
কখনও কখনও সেই কান্না বয়ে বেড়ায় সময়। কিন্তু সময় সময়ের নিয়ম ভাঙ্গেনা। সময়ের পরিবর্তনে বিমূঢ় হয় স্থবিরতা, আর চঞ্চলতার শেষ ঠাঁই হয় প্রয়াণে, নয়তো মহাকালের অ্যালবামে।
আমি বিশ্বাস করি, তুমি তোমার মনটারে কংক্রিট দিয়ে বানাওনি। বানিয়েছে এই সময়, সমাজ, বাস্তবতা... এই মনটা এক সময় অবুঝ ছিলো, খুউব অবুঝ। সেই অবুঝতাই কাল হয়েছে কালের বিবর্তনে, সমাজ আর বাস্তবতার রুক্ষতায়। একজন মানুষ নামের প্রাণীর কারণে।
তাই তো বুঝ না তুমি আমাকে... আমার গুমট কান্নাকে...আমার ভালবাসা কে।
শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়…
বেশ কিছুদিন ধরেই মেয়েটার শরীর ভাল যাচ্ছিল না, তাই মনটাও বেশ খারাপ থাকতো। দিন দিন মেয়েটা কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছিল, ওয়েট লুজ করছিল বেশ। অনেক চিন্তা হচ্ছিল, কারণ প্রতিদিনই পায়খানার সাথে রক্ত যেত। কয়েকজন ডাক্তার দেখানোর পর বোঝা গেল ছোট একটা অপারেশন লাগবে, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। যাক, অনেকদিন পর আশ্বস্ত হওয়া গেল যে মেয়েটা সুস্থ হয়ে যাবে। মন থেকে একটা দুশ্চিন্তা দূর হয়ে গেল। ওর মা চিন্তিত হয়ে পড়লে তাকে অভয় দিলাম এটা নিয়ে চিন্তার কি আছে! এটা তো অনেকটা ফোঁড়া কাটার মত, কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ও সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরবে, ভয়ের কিছুই নেই। তবুও মেয়েদের মন বলে কথা, অতি অল্পতেই কাতর হয়ে যায়!
যে কথা বলা হয়নি
আড্ডাবাজ আর ভবঘুরে ছেলেটির হটাত নাজনিনকে দেখেই ভাল লেগে গেলো, যা কিনা তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের বিপরিত।
বাংলা ডিপার্টমেন্টের মেয়ে নাজনিন আর দশটা মেয়ের চেয়ে ভিন্ন । ছিপ ছিপে লম্বা, সব সময় চুড়িদার সালোয়ার কামিজ আর পাতলা চটি স্যান্ডাল পায়ে, কাঁদে চটের ঝোলা ব্যাগ, সামান্য প্রসাধন আর লম্বা বিনুনি সব মিলিয়ে অদ্ভুত সুন্দর যা দেখলেই মন ভাল হয়ে যায় এমন কিছু।চরম আড্ডাবাজ,নিজের সম্পর্কে উদাসিন যুবক তার দৈনন্দিন জীবনের রুটিন ভুলে যখন তখন বাংলা বিভাগের বারান্দায় ঘোরাঘুরি শুরু করে, অপেক্ষায় থাকে কখন নাজনিন পাশ কাটিয়ে যাবে। ছেলেটির তখন আর কিছুই ভাল লাগেনা, শুধুই নাজনিন কে দেখতে ইচ্ছা করে, দেখলেই বুকের ভিতর ধুক পুক আওয়াজ শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সাহস করে আর বলা হয়ে উঠেনা নাজনিন কে নিজের পছন্দের কথা।
আবোল তাবোল - ১৬
# আমি, তুমি ও আমাদের কথকতা #
মাঝেই মাঝেই আমার খুব ইচ্ছা করে নিয়মিত একটা কিছু লিখতে,
শান্ত ভাই এর মত অত ভালো না লিখতে পারি -
নতুন আরও কিছু বন্ধুর মত লিখতে পারলেও একটা কিছু করা হতো।
তাও পারিনা। ভালোই লাগে না।
প্রিয় ব্লগ টাকে এভাবে ঘুমাতে দেখলে কারই বা ভালো লাগে!
মাসুম ভাই তাও মাঝে মাঝে আসেন, লেখেন - কমেন্টের উত্তরও দেন। রাসেল ভাই, নিভৃতদাও উঁকি দিয়ে যান মাঝে মাঝে।
শাপলা আপু সেই কবে একটা লেখা দিয়েই উধাও,
জোনাকি আপুর তো কোন আওয়াজ নাই।
জ্যোতি আপুকে কিছু বলবো না, অভিমান করলাম!
জেবিন আপু ছবি তুলতে তুলতে হারায়া যাইতাছে,
তাও একটা ছবিব্লগ দেয় না। এমনই পোস্টের কথা বাদই দিলাম!
আজ শুরুর মাসটাতেই প্রিয় মায়াবতী আপুর লাইফের খুব স্পেশাল কিছু সময় রয়েছে অপেক্ষায়, এই সময়টায় তার অনুভূতি জানাতে যে একটু আসবে তাও না! একটা বার দেখা পর্যন্ত দিতে আসে না আজকাল।
আর তানবীরা আপু এখন দেশে। কত্ত কত্ত মজা না জানি হচ্ছে সিসিমপুরে, তা যদি আমাদের সাথেও একটু আধটু শেয়ার কর হয় কি এমন ক্ষতি হয় তাতে?!
সাঈদ ভাই এর 'বিলাসী' সেই কবে শেষ,
আর নতুন কিছু দিতে আসে না! কিপ্টা হইয়া গেছে!