ইউজার লগইন
স্মৃতিচারণ
অবর্ণনীয় আঘাত আর ২০১২
২০১২ একটি আক্ষেপের নাম। এই বছরটিতে শুধুই হারিয়েছি।
হবেনাই বা কেন? বছরটি যে শুরু হয়েছিলো ছায়ার বটগাছটি আমার বাবাকে হারানোর মধ্যদিয়ে।
২০১২ তুমি অপয়া হয়েছিলে সেই জানুয়ারী মাসে আমায় এতিম করার মাধ্যদিয়ে। আর তাই হয়তো এখন শুনছি " বাবা কতদিন কতদিন দেখিনা তোমায়" গানটি । আসলে যখন ছিলো তখন বুঝিনি ছায়ার মর্ম। এখন কেমন যেন ফাকা ফাকা লাগে। যখন দেখি কারো বাবা পরম আবেগে তার ছেলেকে বুকে টেনে নিচ্ছে, তখন তাকে আমার অনেক ভাগ্যবান মনেহয়। আসলেই কি সে ভাগ্যবান না ?
এরপর মে মাসে আমি হারালাম আমার প্রয়ানের প্রিয়তমাকে। আর জুন মাসে সে আমায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ছেড়ে চলে গেলো। তারপর অনেক রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। বিনিদ্র নয়নে তাকে ভেবেছি, প্রতিক্ষায় থেকেছি তার ফিরে আসার। আসেনি সে , অসীম শূন্যতায় ফেলে চলে গেছে। আর তাই হয়তো শুনবো, " ভেবে ভেবে তোমার কথা আমি উদাস হয়ে যাই"।
বছরের শেষদিকে সেপ্টেম্বরে দীর্ঘ দুই বছর পর ছেড়ে দিয়েছি আমার প্রথম চাকুরীটা। অনেক খারাপ লেগেছিলো সে সময়।
স্মৃতিকথা – ৩
স্মৃতিকথা – ১
স্মৃতিকথা – ২
বছর শেষ হতে চলল কিন্তু বেড়াতে যাওয়া হল না এখনো ! মামা বাড়ি থেকে বার বার তাগাদা দিচ্ছে- তোরা কবে আসবি? ধান উঠে গেছে, তোরা এলে একসাথে পিঠা খাব। আমি বলি, মামা এখন ছুটি পাব না। অন্যদের সাথে যোগাযোগ করে ঠিক একই উত্তর পান মামা। তাই নিয়ে খুব আক্ষেপ মামার- খুব শহুরে হয়ে গেছিস, গ্রামের প্রতি তোদের আর কোন টানই নেই!
এবং অপূর্ণতা
এ রাতের নির্জন আলো-আঁধারিতে পিচঢালা সুদীর্ঘ পথ
দুপাশের গাছের ভীড়ে মিলেছে অদূরে ।
অনিয়ত গাছের ফাঁক গলে অক্লান্ত দৃষ্টি ছুটে চলে
দিগন্তে , কুয়াশায় , আকাশে , মেঘে মেঘে , বিস্তীর্ন ধানশূণ্য ক্ষেতে ।
কখনো অপ্রস্তুত দৃষ্টি থেমে যায় দুপাশের সরু খালে , কালো জলে জেগে থাকা কলমিলতার ফাঁকে ফাঁকে কালচে মেঘের উড়ে চলা থরথর প্রতিচ্ছায়ায় , দৃষ্টিজুড়ে অবলীলার নিভৃত আলিঙ্গন ।
উত্তরের শিরশিরে হাওয়ায় নিবিষ্ট হন্টক জোরেসোরে চুমো খায় বেনসনের আড়ষ্ট ঠোঁটে , প্রতিটি চুমোয় ভরে ওঠা শিল্পীর হৃদয়ের সপ্নীল ক্যানভাস যতটা পূর্ণ হয় , ঠিক ততটাই থাকে অপূর্ণতা ।
হতাশার চিঠি
প্রিয়তমা,
মেয়ে জেনে রেখো যে তোমায় দেখতে এসেই বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলো তার ভালোলাগা তোমার শারীরিক সৌন্দর্য্যের মাঝেই সীমাবদ্ধ। কপাল ভালো হলে শরীরের পরে মনের দিকে তাকালেও তাকাতে পারে, নতুবা নয়।
আর যে ছেলে তিনটি বছর তোমার পানে চেয়েছিলো সে আর যাই হোক তোমার শরীরকে ভালোবাসেনি। যদি তাই হোত তাহলে এত্ত সহজে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে না । আর যদি সে তোমায় তোমার বাবার সম্পদের জন্য ভালোবাসতো তাহলে তোমার আগে তোমার বাবার সাথে সু সম্পর্ক করতো।
আসলে ভালোবাসা পাবার অধিকারও সবার থাকেনা।
যাই হোক তোমার অনাগত জীবনের স্মৃদ্ধি কামনা করছি। ভালো থেকো, আর ভালো রেখো। অন্তত এইবার প্রতিজ্ঞা রাখার চেষ্টা কোরো।
- একজন তৃতীয় পক্ষ ।
`ঝরা পাতার গান ' শেষ পর্ব
সারাদিন হাঁটতে হাঁটতে আর কাঁদতে কাঁদতে উত্তরের বালুপথ আর নদীর তীর ধরে পদ্মা নদীর তীরে এসে বসলাম। গোদারা ঘাটের মাঝিরা আমার বাবাকে, আমাকে চেনে। তিন পুরুষের যাতায়াত এ নদী দিয়ে। পদ্মা বিধৌত উর্বর মাটির সন্তান আমি এবং আমার পূর্ব পুরুষ। এ নদীকে কেন্দ্র করে এর কাছাকাছি শরীয়তপুর, চাঁদপুর ও বিক্রমপুর-এ হাজার বছর ধরে আমাদের পিতৃগণ ও মাতৃগণের বসবাস। আমার জন্মস্থান বিক্রমপুরের লৌহজং-এ। নদী পার হয়ে দিঘলী বাজারে এসে কিছু চিড়া-মুড়ি খেয়ে কদম বাবার মেলায় চলে এলাম। কদম বাবার মেলা শীত প্রকৃতির আরেক অকৃত্রিম রূপ। নানা জাতের মাঘের পাগল এখানে এসে মাস খানিক ভীড় করে গান করে। ব্যবসায়ীরা আর ভক্তরা খুশী থাকলে এ মেলা সাত থেকে দশ দিন পর্যন্ত চলে। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে বসে দোকানীরা। নানা স্বাদের মুড়ী, চিড়া, খইয়ের মোয়া, সন্দেশ, নাড়ু, বাতাসা, কদমা, মিষ্টি খই, চিনি মাখানো ছোট ছোট গোল মিষ্টি, নিমকী, গজা কত না স্বাদের, গন্ধের খাবার। মাঘ মাসের শীতের মেলায় মানুষের ভীড়ে একটুও শীত লাগে না। ছোট্ট বেলায় তাই আগুন না জ্বালিয়ে উষ্ণতার জন্য মেলায় চলে যেতাম।
`ঝরা পাতার গান ' পর্ব-৩
এই বন পথে প্রতিদিন সূর্যের উদয় দেখি, দেখি দূরের টিলা, জঙ্গল; আবার সন্ধায় বন ঝাউ, দীর্ঘ ঘাস (বাঁশ) তথা বনশীর্ষ লাল আভায় মাখিয়ে সূর্য ঘুমিয়ে যায়। ফিরে আসি কিছু কাচা টাকা হাতে নিয়ে। আবার ছুটে চলি লাউয়া ছড়ায়, চিম্বুক পাহাড়ে, ভাওয়াল বনে অথবা অন্য কোথাও। রাতের চর বন আর ভাওয়াল বন একই রূপ ধারন করে। নিঃশব্ধ অরন্যভূমি, নিস্তব্ধ জনহীন নিশীথ রাত্রি, চকচকে সাদা বালু, কোথাও দো-আঁশমাটি মিশানো বন, দিনের রৌদ্রে কাচা শুকনা কাঁশবনে জোৎসার আলো পড়ে অপার্থিব সৌন্দর্যের অপূর্ব মহিমায় ভরে দেয় আমার দৃষ্টির দিগন্ত। জল ডোবায় সাদা-বেগুনি কলমী ফুলের সমারোহ আর এই ভিজা বালু-দো-আঁশ মাটিতে সাদা সাদা (কেউ বলে এর নাম দুধলি ফুল) ফুল--বড় মিষ্টি সুগন্ধ ছড়ায় আশেপাশে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে হঠাৎ করে। এ সময় বৃষ্টি! অবাক হলাম, এটা কি মাস? কখনো কখনো পৌষ মাসে কিছু কিছু বৃষ্টি পড়ে। মাঘ মাসে বৃষ্টি নাই। সবাই বন পথে সাপের ভয়ে গান গেয়ে অথবা হাততালি দিয়ে পথ চলে। আমি সবাইকে ‘শীতনিদ্রা’ সম্পর্কে বললাম--দেহের তাপমাত্রা শীতের সাথে উঠা-নামার কারনে সাপ-ব্যাঙ এখন দেখা যাবে না।
ঝরা পাতার গান পর্ব-2
মনে পড়ে, কাজের সন্ধানে কয়েকবার যেতে হয়েছে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ। বর্ষায় দিগন্তবিহীন হাওর--কূল নাই, কিনারা নাই--এযেন, সাগর। শীতের আগমনে ছোট ছোট নদী-নালা-খাল-বিল হাওর থেকে যেন, জেগে উঠে ফসলের মাঠ। নদী-নালা-খাল-বিল-পুকুর-ডোবা মিলেই এ সুবিশাল হাওর। শীতকালে হাওরের সীমানায় দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য চোখে আমি তাকিয়ে থাকি। ভাবি, হাওরের পানি কোথায় চলে যায়। দেখি, চারদিকে মাছ ধরার মেলা; কোন কোন নৌকার খোলা, মাছে পরিপূর্ণ। কোথাও হাঁটু পানি; গরু-মহিষ সেই পানি পেরিয়ে যাচেছ সবুজ তৃণভুমিতে। বিল-ঝিল হাওরের অতি আপন বৃক্ষ হল হিজল গাছ; মাসের পর মাস পানিতেই কেটে যায় এদের জীবন। শকুন, ভূবন চিল মাছ শিকারের ফাঁকে এ গাছের ডালে ডালে বিশ্রাম করে। ঝাঁকে ঝাঁকে পানকৌড়ি, বক, শালিক ইত্যাদি জানা-অজানা বিদেশী পরিযায়ী পাখিরা ভীড় করে হিজল গাছে, জেগে উঠা জলাশয়ে খুঁজে খাবার। কাজের অবসরে আনমনে ভাবতে থাকি--বর্ষাকালের জলডুবা হাওর আর শীতকালে সেই হাওরে ঢেউ খেলানো সবুজ ফসলের মাঠ--প্রকৃতির কি বিচিত্র খেলা!
এ বাংলার, শাশ্বত শীত প্রকৃতির গল্প ঃ `ঝরা পাতার গান ' পর্ব-১
কুয়াশার অন্ধকারে হাজার বছর ধরে শীত কন্যা আসে ষড়ঋতুর লীলা বৈচিত্রের হেমন্তের ফসলে আঁকা মেঠো পথ ধরে। স্থান, কাল ভেদে এ শীত কন্যায় রূপ নানা অঞ্চলের দেব-দেবীর মত নানা সজ্জায় সজ্জিত হয়। হেমন্তের মাড়াই করা ধান বড় বড় কড়াওয়ালা মাটির হাড়িতে রাখতেই শীত রূপসী শীতের নানা উপকরণ কুয়াশার চাদরে ঢেকে এনে রাখে গৃহস্তের আঙ্গিনায়; কড়াওয়ালা মাটির হাড়িতে টোকা দিয়ে বলে, ‘এই গৃহস্ত আমি এসেছি ; চল, পিঠা-পুলি-পায়েস বানাই।’
কথোপকথন
ও আমায় অনেক বোঝে,
কতটা বোঝে ?
ততটা যতটা তুমি বুঝতে;
তাহলে তো তার সাথে আমার পার্থক্য নেই ?
কে বলেছে নেই, আছে অনেক আছে ।
কি কি ?
ও আমার কেয়ার করে,
আমার মতো ?
না, তার চেয়েও বেশি ।
তাই নাকি ? সব সময় হাসায় বুঝি ?
না, তা না। তবে তোমার মত কাঁদায় না ।
ও আচ্ছা । আমি কি শুধুই কাঁদাতাম ?
হ্যাঁ ।
তাহলে আমার সাথে ৩ বছর থাকলে কেন ?
আমার ইচ্ছা ।
তাহলে সবই কি তোমার ইচ্ছা মতই হবে ?
হ্যাঁ ।
তার মানে তুমি ভালো আছো তার সাথে ?
হ্যাঁ আছিতো অনেক ভালো আছি ।
আচ্ছা সে কি তোমার জন্য বর্ষায় হাঁটু পানি পার হয়ে দেখা করতে আসে ?
আসেনি তবে আসবে ।
তাহলে নিশ্চয়ই সারারাত নির্ঘুম থেকে সকালে ১৪টা গোলাপ নিয়ে আসে তোমার রাগ ভাঙ্গাতে ?
না, একদিন ঠিকই আসবে ।
ও, তাহলে নিশ্চয়ই সারা ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে তোমাকে ভালোবাসি লেখে ?
না, ওইটাও করবে একদিন ।
সবকিছুই যদি পরে করে, তাহলে এখন কি করলো ?
যা তুমি করতে পারো নি!!!
পারিনি নাকি তুমি করতে দেওনি?
আমি তো তাকেও দেই নি?
কিন্তু তাকে মানাও তো করনি, তাইনা?
ধুরছাই তোমার সাথে কথা বলা অসম্ভব।
কেনো জিততে পারছো না তাই ?
শুভমিতার চিঠি-৮
প্রিয় শুভমিতা,
মুক্তিযুদ্ধ এবং অতপরঃ
ঝিক্-ঝিক্...ঝিক্-ঝিক্...করে ট্রেন চলছে দৃশ্যমান গতিতে, আর আমার জীবন চলছে অদৃশ্যমান গতিতে। যে গতির গতিময়তা কখনো আমি উপলব্ধি করি না--করতে পারি না। ট্রেনের কামড়ায় বসে আধবোজা চোখে অনুপম সেনের ‘কল্পনা’ উপন্যাসের নায়কের নিজের মতামত পড়ছি। লেখকের প্রতিটি কথা সমুদ্রের ঢেউ এর মতো আন্দোলিত করে আমার মনে। জীবনের অনেক মিল রয়েছে স্বকল্প আর আমার ব্যর্থময় জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে। ছত্রিশ বছরের জীবনে আজো বিয়ে করিনি। নীড়হারা পাখি সব হারিয়ে ক্লান্ত মনে যেমন করে ভাবে, তেমনি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শরীরটা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো। ট্রেন থামছে কোন এক অচেনা ষ্টেশনে। জায়গাটির নাম মনে নেই। ট্রেন থামার সাথে সাথেই আরো তিন জন মানুষ একই কামড়ায় উঠল। তিন জনের মধ্যে একজন ৪০/৪৫ বছর বয়স্ক পুরুষ, এক জন ৩০/৩২ বছর বয়স্ক স্ত্রীলোক, আরেক জন ১০/১১ বছরের বালিকা।
তৃষ্ণা
তৃষ্ণা আরো প্রবল হয়ে ওঠে ,
পানের পর পান চলতে থাকে ,
পানের পর পান অবিরত,
কাপের পর কাপ ,
উষ্ণ হাহাকার ,
গলবিল বেয়ে পাকস্থলি ,
সব ছারখার করে ,
শীতল হয় হৃতপিন্ড ।
তবু আবার ,
প্রাণের তৃষ্ণা জাগে ,
প্রাণের তৃষ্ণা প্রবল হয় ,
প্রবল থেকে প্রবলতর হয় ,
জেগে ওঠে রক্তের মোচড় ,
বাড়তে থাকে হৃদস্পন্দন ,
নীলাভ হতাশা নির্বিঘ্নে বেয়ে চলে ,
রক্তের সাথে মিলে মিশে চলে ,
ধমনী থেকে ধমনীতে ,
হৃদয় থেকে হৃদয়ে ,
হৃতপিন্ড উষ্ণ হয়ে ওঠে ,
উষ্ণতা বাড়তে থাকে ,
বাড়তে থাকে অদৃশ্য ক্ষত ,
হৃদয়ের ক্ষত ।
পানের বস্তু সুপেয় না হতে পারে ,
তবু তৃষ্ণা জাগে ,
পানের তৃষ্ণা ,
তৃষ্ণা আরো প্রবল হয়ে ওঠে ,
পানের পর পান চলতে থাকে ।
কিন্তু প্রাণের তৃষ্ণা
প্রবল থেকে প্রবলতম হয় ,
প্রাণের তৃষ্ণা মেটেনা কোনো কালে ।
অবিশ্লেষ্য জীবনধারা
হৃদয়ের একলা প্রান্তরে স্বপ্নের চিবুক ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি মহাকালের পথে । হয়তো পৌছুতে পৌছুতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে । নি:স্তব্ধ আকাশের একমাত্র ধ্রুবতারাটি হয়তো আক্ষেপের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে করুনা করবে ।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক হয়ে পথ চলছিলো শ্রাবণ । হঠাত একটি দামি গাড়ি প্রচন্ড শব্দে থামলো, ঠিক শ্রাবণের পায়ের কাছে। ঘটনার আকস্মিকতায় হুশ ফিরলো শ্রাবণের । তাকিয়ে দেখলো গাড়ীর জানালা দিয়ে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে দুটি চোখ। আর ঠিক তখনই চোখের ঠিক নীচ থেকে কর্কশ শব্দের আস্ফালন ওই মিয়া দেইখা চলতে পারেন না ? চোখের মাথা খাইছেন নাকি ?
সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে শ্রাবণ রাস্তা পারহয়ে মেট্রোতে ঢুকলো , এক্সেলেটর বেয়ে সোজা চারতলায়। গন্তব্য একদম কোনার টেবিল , যেখানে অপেক্ষা করছে ওর প্রানের প্রিয়তমা ।
দেশ-দেশান্তর (দুর্যোগ, উৎসব)
ঝড়
৩১ শে অক্টোবর। আজ সকাল সাড়ে সাতটায় ঘর থেকে বেড় হয়ে দেখি শোঁ শোঁ বাতাশ, মুষল বৃস্টি, মধ্য রাতের অন্ধকার। স্যান্ডি তার ঝড়ের মেজাজ নিয়েই আছে, ধার কিছুটা কমেছে এই যা। হেডলাইট জ্বালিয়ে গাড়ির লাইন, মানুষ প্রকৃতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নিজেদের কাজে বেরিয়েছ। গতকাল সাড়াদিন আবহাওয়া চ্যানেলে তাকিয়ে ছিলাম, মেজ কন্যার জন্য দোয়ায় ছিলাম, তারা থাকে ম্যানহাটনে, স্যান্ডির তান্দব্ লীলার ঠিক মধ্যখানে। সকালে জানলাম না তাদের খুব বেশি কিছু হয়নি, তারা ভালোই আছে। আজ সকালে টিভিতে দেখছি নিউ ইয়র্কে ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের ঢেউ এর মাঝে সার্ফিং করছে বেপরোওয়া কজনা!! লন্ডভন্ড পথঘাট, ভাঙ্গাচোড়া গাছপালা, ঝিমিয়ে পড়া ম্যানহাটন থেকে উন্মত্ত ফনাতোলা পাহাড়সম ঢেউএর সাথে পাঞ্জালড়া মানুষগুলো আমাদের মুগ্ধ করলো।
দিন যায় কথা থাকে
নিয়মমতো অক্টোবরের শেষ রোববারে ঘড়ির কাটা ঘুরে গেলো। অফিসিয়ালি এখন হেমন্ত আর এখানে শীতকালীন সময়সীমা শুরু হয়ে গেলো। উত্তর গোলার্ধের খুব কাছের দেশগুলোতে নভেম্বর থেকে শুরু করে তারপর পুরো টানা প্রায় ছয় মাস অন্ধকারে লোকজন বাড়ি থেকে বেরোবে আবার অন্ধকারে বাড়িতে ঢুকবে। সূর্য্যি মামা শীতনিদ্রায় যাবেন। যদিও বিশেষ দিনক্ষন দেখে সূর্য মামা কখনো কখনো এখানে উঁকি দিবেন তবে সেটাও বয়ে আনবে দুঃসংবাদ। বেশির ভাগ সময় দেখা যায় এরপরই বরফ পড়তে শুরু করে। সেই বরফে পড়ে যেয়ে কারো কারো হাত পা ভাঙ্গবে, আর প্যাচপ্যাচে কাঁদাতো আছেই। নিকষ কালো অন্ধকারের ভার সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ ডাক্তারের শরনাপন্ন হবেন, এন্টিডিপ্রেসন মেডিসিনের জন্যে। হিম হিম ঠান্ডা পড়ছে, তাপমাত্রা দুই অঙ্ক থেকে এক অঙ্কে নামা শুরু করেছে, মাঝে মাঝে রাতে শুণ্যের নীচেও নামছে।