মৃত্যু এবং তারপর...
মুঠোফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। যথারীতি আপাদমস্তক কম্বলের নীচে আমি, পুরা মরা মানুষের মত। কোন মতে এক হাত বের করে সাইড টেবিল থেকে মুঠোফোনটা টেনে নিলাম কম্বলের নীচে। হ্যালো বলতেই বন্ধু-কলিগের বাবার মৃত্যু-সংবাদ। সত্তর পেরোনো, নানা রোগে ভুগে স্বাভাবিক মৃত্যু। যে দেশে বাস করি, সেখানে স্বাভাবিক মৃত্যুও যে কারও জন্য আজকাল একটা বিশেষ অর্জন!
আমার অধিকাংশ “সত্যায়িত” ছবি, সার্টিফিকেট, চারিত্রিক সনদ এনার মাধ্যমেই করা। খুব জটিল একটা স্বাক্ষর করতেন, তাছাড়া অতি সহজ, সরল এই মানুষটিতে আর কোন জটিলতা দেখিনি। সেজন্যই জীবনে তেমন কিছুই করা সম্ভব হয়নি তার। এই ধরনের মানুষদের এই সমাজে কিছু করতে পারার কথা না।
কিন্তু আমাকে নিদারুণ বাস্তবে চলতে হয়। কম্বলের ভিতর মাথা রেখেই মুঠোফোনে ড্রাইভারকে আসতে বলি। তারপর একটু চোখ বন্ধ করে থাকার চেষ্টা। সাথে মাথার ভিতর চলতে থাকে নানা হিসাব-নিকাশ। সদ্যমৃত ব্যক্তির চিন্তা পাশ কাটিয়ে ভাবনায় আসে পরশু কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ টেন্ডার, বন্ধু-কলিগ ওই গুলি নিয়ে কাজ করছিলো। যদি সে কবর দিতে গ্রামের বাড়ি যায় তাহলে তো...
মৃত্যু বেশ মজার জিনিষ। যেখানে যেকোনো সময় মারা গেলাম তো বেশ, সব দায়-দায়িত্ব শেষ, আর কোন জাগতিক জবাবদিহিতা নাই। মা-বউ রে ফোন করে বলতে হয় না আমি মারা গেছি তাই বাসায় আসতে পারতেছি না। বস রে বলতে হয় না অনিবার্য কারণে আমার মৃত্যু হওয়ায় আমি আর অফিসে আসতে পারবো না। মইরা গেছি তো এক্কেবারে ফুলস্টপ, এখন আশে পাশে তোমরা যারা আছো তারা ঠেলা সামলাও। একটু পরে আমার দেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে, মাছি রোগ-জীবাণু ছড়াবে, তাই আশে পাশের মানুষ নিজ দায়িত্বে হয় মাটি চাপা দিবে, না হয় পোড়াবে।
যাহোক শেষ পর্যন্ত ঢাকাতেই কবর দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সকালে একবার দেখা করে অফিসে আসি, তারপরে একটু হাতের কাজ একটু গুছিয়ে লাঞ্চের পর বের হই বাদ-আছর জানাজার জন্য। রাস্তায় খুব বেশি হলে তিরিশ-চল্লিশ মিনিট লাগা উচিত, কিন্তু জ্যাম চাটতে চাটতে যখন পৌঁছলাম ততক্ষণে সবাই জানাজা শেষে বের হয়ে আসছে। তারপর কবরস্থানে গেলাম। দেশের বিভিন্নস্থানে এমনকি ঢাকার বিভিন্ন কবরস্থানে কবর দেয়ার পদ্ধতি আলাদা। কবরে এক মুঠো মাটি দিয়ে হাতে লেগে থাকা মাটি ছাড়াতে হাত ঝাড়লাম। যে মাটি একদিন আমাকে গ্রাস করবে, সে মাটিকেই কত অস্পৃশ্য মনে করি, আজব! পুরনো পরিচিত অনেকের সাথে দেখা হল দশ-পনেরো বছর পরে, স্কুল-কলেজ-পাড়া কাঁপানো সবার উপরই বয়সটা বেশ ভর করেছে। এমনিতে আয়নায় নিজেকে দেখার সময় না পেলেও এদের চেহারাতেই নিজের বিবর্ণ প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।
একেকটা মৃত্যু আমাকে ভাবায়, নিজের মৃত্যুর ধরণ বাছার সুযোগ থাকলে কি ধরণের মৃত্যু আমি বাছবো! চাইনা মৃত্যুর পরে কারো জন্যে ঝামেলা হতে। চাইনা জীবিতরা ব্যস্ত জীবন ফেলে আমার মরদেহ দেখতে আসুক। কেউ তাড়া দিয়ে বলুক, আসলে ধর্মে আছে তাড়াতাড়ি কবর দেয়া ভাল। কেউ বা আড়চোখে ঘড়ি দেখুক আর ভাবুক, ঈশ দেরী হয়ে যাচ্ছে। তাই, আক্ষরিক অর্থেই আমি চাঁদে গিয়ে মরতে চাই! চাঁদে নাকি শীঘ্রই বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হবে, আমি ওইখানে গিয়ে ঘুরে-টুরে তার পরে মরে গেলাম। কিংবা, চাঁদে ঘুরে-টুরে ফেরার সময় নভোযানটা অজ্ঞাত যান্ত্রিক ত্রুটিতে কক্ষপথে ভেঙ্গে পড়লো আর আমার দেহ ভাসতে থাকলো অনন্তকাল। চাঁদে যেতে না পারলে বিমানে মরতে চাই, আটলান্টিক কিংবা প্রশান্ত মহাসাগরের উপর, আমার দেহ কেউ খুঁজে পাবে না, হয়তো হয়ে যাবো মাছেদের খাদ্য...
~
ঠিক এমটাই হচ্ছে আজকাল
টুটুল ভাই fb তে শেয়ার করেছে দেখে পোষ্টটা পড়তে আসলাম এবং পোষ্ট পড়ার পরে মন্তব্য না করে যেতে পারলাম না।
আপনার মারা যাবার প্লান টা জট্টিল কিন্তু ঐখানে মরলে সমস্যা আছে কারন তখন নভোযানটা অজ্ঞাত যান্ত্রিক ত্রুটিতে কক্ষপথে ভেঙ্গে পড়লো কেনো তা জ্ঞাত করতে সব ঘাটা ঘাটি শুরু করবে। এমনও হতে পারে আপনার ভেসে বেড়ানো দেহ খুজতে শুরু করে দিয়েছে আর যদি মাছের খাবার হন তারপরে যদি মাছ মারা যেতে শুরু করে সেইটাও একটা চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়াবে ।
সত্য কথাটা কেমন জানি মজার লাগলো আমার কাছে আপনার এই পোষ্টে। ভালো পুষ্ট !
তা ঠিক।
মৃত্যুরে এতো লাক্সারী ভাবতে পারি না আমি। আমার মৃত্যুর আগে মানে আগামী মাস খানেকের মধ্যেই নিজের দেহদান করার খায়েশ আছে। তাতে মৃত্যুর পর দাফন-কাফনের ঝুট-ঝামেলা থেইকা মুক্তি মিলবো পরিবার আর সামাজিক আত্মীয়-স্বজনদের।
আপনার খায়েশ পূরণ হোক
আপনার লেখাটা বেশ নাড়া দিয়েছে আমাকে ভাই। ধন্যবাদ এমন একটা লেখা দেয়ার জন্য।
ধন্যবাদ ... এবি পরিবারে স্বাগতম
~
মারা যাওয়া নিয়ে লিখেন কেন ?
এইটা ভুলে থাকাই ভালো।
এত বিষাদ কেন?
মৃত্যু নিয়ে এতো তাড়াতাড়ি ভাবতে চাই না। ভাবনার বহুত জিনিস আছে। আর এর মধ্যে মৃত্যু আসলে আসুক, কি আর করার আছে!
মৃত্যু দেখলে ভাবনা আসে ..তারপর আবার জীবন দৌড়ায় নিজের গতিতে...
~
কালকে থেকেই আপনার পোস্টে ঘুরে যাইতেছি। কিন্তু কি বলবো বুইঝা পাইতেছি না...
হাহা... তাইলে আবার ঘুরে আইসেন
~
এতো দ্বায়িত্বহিনভাবে মরতে চান কেন? মরবেন বলে জানাইয়া শুনাইয়া মরবেন না!!! মাইনষেরে বিপদে ফালাইয়া মরবেন নাকি!!!!
সেক্ষেত্রে বিধাতা রেজিস্টার্ড চিঠি পাঠাতে পারতেন, আজ থেকে ঠিক তিন মাস তোমার মৃত্যু হবে, তুমি যাবতীয় ইহলৌকিক কার্যক্রম শেষ করে প্রস্তুত হও!
~
" মৃত্যু বেশ মজার জিনিষ। "-
মন্তব্য করুন