শোনা কথায় বইমেলা: ফেব্রুয়ারি ২
স্মৃতি শুধু সাদামাটা প্রতারণাই করে না; মারাত্মকভাবেও প্রতারণা করে।
গতকালের শোনা কথায় বইমেলায় কার কার সাথে দেখা হলো, কী আলোচনা হলো তার একটি বিতং বর্ণনা দিয়েছি। কিন্তু বইমেলা থেকে চলে আসার আগে রাসেল ভাইয়ের সাথে যে দেখা হলো, তা কী করে যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। রাসেল ভাইয়ের সাথে আলাপ হলো টুকটাক, সাথে ভাবী ছিলেন। কিন্তু পুরো ঘটনাটা কী করে যেন মনেই আসেনি লেখাটি তৈরি করার সময়। মনে পড়লো আজ দুপুরে- ঘুম থেকে উঠা পর। এ সময়ে হঠাৎ করে মনে পড়ার কোনোই কারণ নেই, কিন্তু যে রহস্যজনক কারণে ভুলে গিয়েছিলাম, ঠিক সেই রহস্যজনকভাবেই আবার এটি মনে পড়ে গেল।
আজকে বইমেলা যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। রাতের ট্রেনে যাচ্ছি রাজশাহী- ভাবলাম বিকেলবেলা ঢু মারা যাবে। কিন্তু বিকেলেই চলে এলেন কয়েকজন অতিথি। ফলে যাওয়া আর হলো না। গতকাল অবশ্য শান্ত ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিল এ নিয়ে- তিনি বললেন, রাতের ভ্রমণ- ধুলাবালি খেয়ে সারারাত ভ্রমণ করার চেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নেয়া ভালো। তাঁর কথা একদিক দিয়ে ঠিক- কিন্তু বইমেলার জন্য আকুলিবিকুলিটা তার চেয়েও বড় হয়ে দেখা দেয়।
বইমেলা আসলে পত্রিকাগুলোয় বিজ্ঞাপনের পরিমাণ বেড়ে যায়। মজার মজার বিজ্ঞাপনও আসে অনেক। গতকাল পত্রিকায় নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপনগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। কেন যেন মনে হলো, নিজের বইয়ের ব্যাপারে মানুষজন অত্যাধিক ক্রেজি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃষ্টিকটুও মনে হয়। বড় বড় লেখকরা যখন হাভাতের মতো বিজ্ঞাপন দিতে থাকেন, তখন কেন যেন একটু লজ্জ্বাই লাগে! যাই হোক, যার বিজ্ঞাপন দেবার মতো টাকা আছে, তিনি তো বিজ্ঞাপন দিবেনই। একজন বিজ্ঞাপনদাতা (মানে লেখক নিজে) তার চেয়ে ভালো লেখকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। ভালো লেখকের সংজ্ঞাটা অবশ্য পরিষ্কার করেন নি, তবে ধরে নিতে পারি, সারাবছর তিনি যে পরিমাণ লিখেন, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ লেখিয়েদেরকেই তিনি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কারণ, তিনি সারাবছর ধরে লিখেন, প্রচুর লিখেন। সম্ভবত সব্যসাচী লেখক, মানে দুই হাতেই একটানা লিখতে পারেন। কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় তার কয়েকটা লেখা দেখে তিনি কেন যে লেখেন, সেটা আজও আমার কাছে পরিষ্কার হয় নি।
আজকের পত্রিকার বিজ্ঞাপনেও দেখলাম- বইমেলা উপলক্ষ্যে প্রচুর বই প্রকাশিত হচ্ছে। আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ প্রবন্ধ ও গবেষণার প্রতি। সেরকম বইয়ের বিজ্ঞাপন তুলনামূলকভাবে কম। মানুষজন দেদারসে গল্প-কবিতা-উপন্যাস লিখে যাচ্ছে। প্রবন্ধ কিংবা গবেষণার বইও প্রকাশ হচ্ছে প্রচুর- কিন্তু সে তুলনায় বিজ্ঞাপন নেই। গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বিজ্ঞাপন বেশি কেন? কোনো উত্তর বের করতে পারছি না। আপনাদের কী মনে হয়?
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে মাতামাতি হবে এ বছর- স্বাভাবিকভাবেই। বইয়ের বিজ্ঞাপনগুলোতে তাই দেখছিলাম- হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কেউ কিছু লিখেছেন কিনা। লিখলে কী লিখেছেন? হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর ভক্ত আছেন- তারা লিখেন প্রশংসাবাণী। হুমায়ূন আহমেদের প্রচুর সমালোচনাকারী আছেন- তারা লিখেন নিন্দাবাক্য। মাঝখান থেকে দাড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদকে দেখাটা কি জরুরি? নাকি মাঝখানে থেকে দেখাটা নেহায়েতই একটি নির্বোধ আইডিয়া! হয়তো এ ধরনের বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু নামটা জানা নাই। পরের শুক্রবার বইমেলায় যাওয়ার ইচ্ছে আছে, যদি সেরকম কোনো বই পাই- হয়তো কিনে ফেলবো। সমস্যা হলো, শুক্রবারে গিয়ে বই দেখা যায় না, দুএকটা লাইন পড়া যায় না, বাছবিছার করা যায় না। এতো ভিড়ের মাঝখানে দুদণ্ড শান্তিতে বইকেনার সুযোগটা শুক্র ও শনিবার ছাড়া অন্যান্য দিনে প্রবল- কিন্তু সে আমার ভাগ্যে নেই!
এসব বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতেই ভাবছিলাম- বইমেলায় কতো বই আসে? হিসাবটা কীভাবে করা হয়? বাংলা একাডেমী যদিও প্রতি বছর একটা হিসাব দেয়; কিন্তু সেটা কতোটুকু ঠিক? দেশ তো এখন ডিজিটাল হচ্ছে। মেলার তথ্যকেন্দ্র ছাড়াও প্রতিটা স্টল তাদের স্টলের এক কোণায় যদি একটা স্ক্রিন রেখে দিতে তাহলে বোধহয় ভালো হতো। সেখানে নতুন বই, কয়টা বই আসলো, বইয়ের প্রচ্ছদ, এমনকি সাহস থাকলে কত কপি ছাপা হলো আর কত কপি বিক্রি হলো সেই হিসাবটা দিতে পারে। মানুষজনের অনেক কৌতুহল মিটে তাতে, অনেক তথ্য পাওয়াও যাবে সহজে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এটুকু হয়তো আশা করাই যায়!
বইমেলায় ‘আমরা বন্ধু’র অনেক ব্লগারদের বই আসছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো পোস্ট নেই। প্রথম পাতায়ই দেখতে পাচ্ছি অপূর্ব সোহাগ, তানবীরা আপার নতুন বইয়ের খবর। ব্লগ কর্তৃপক্ষ কি পারে না একটা স্টিকি পোস্ট করতে যেখানে এই ব্লগের ব্লগারদের আসা নতুন বইয়ের নামধাম সব থাকবে? পাশাপাশি বইয়ের প্রচ্ছদগুলো যদি স্লাইডের মাধ্যমে প্রদর্শন করা যায়, তাহলে তো দারুণ হয়।
বিষয়টা ভাববেন নাকি কর্তৃপক্ষ? এখনও সময় আছে।
বইমেলায় ‘আমরা বন্ধু’র অনেক ব্লগারদের বই আসছে।
ব্লগ কর্তৃপক্ষ কি পারে না একটা স্টিকি পোস্ট করতে যেখানে এই ব্লগের ব্লগারদের আসা নতুন বইয়ের নামধাম সব থাকবে? পাশাপাশি বইয়ের প্রচ্ছদগুলো যদি স্লাইডের মাধ্যমে প্রদর্শন করা যায়, তাহলে তো দারুণ হয়।
একমত
আর সিরিজ চলুক ।
একমত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সিরিজ চলবে আশা করি।
একমত
কোন বিষয়ে? : p
সব বিষয়ে
তাইলে এই বইমেলায় যে আপনি আমাকে অন্তত তিনটি বই কিনে দিচ্ছেন, সেই ব্যাপারেও নিশ্চয়ই একমত হলেন?
ধুর মিয়া, আজকে আইলে দেখা হইতো
কী আর করা! মেহমান না এলে যাওয়া হতো!
ঠিক ঠাক মতো জার্নি হোক!
জার্নি ঠিকঠাকমতোই হয়েছে। ভয়ে ছিলাম, কেউ আবার ট্রেন থেকে ফেলেঠেলে দেয় কিনা!
আমাদের দেশে গল্প-কবিতা-উপন্যাস ক্রয় বিক্রয় মূলত এই ফেব্রুয়ারী মাস ঘিরেই আবর্তিত হয়। অপরদিকে প্রবন্ধ কিংবা গবেষণার বই যাদের প্রয়োজন তারা কিন্তু সারা বছর জুড়েই তাদের চাহিদা মত যোগাড় করে নেয়।
এজন্যই এমনটা হতে পারে।
এটা হতে পারে। ...কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা ভিন্ন কথা বলে। দেশের নানা জায়গায় বিশেষত মফস্বল শহরগুলোতে সবসময় দেখি নানা উপলক্ষ্যে সেখানে যতোটুকু বই বিক্রি হয়, তার সিংহভাগই গল্প-উপন্যাস। প্রবন্ধের বই সেখানে দেখি না। আমাদের একটা বইয়ের দোকান আছে- নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে। ওখানে কোনো প্রবন্ধের বই নেই, কারণ বিক্রি হয় না। একই অবস্থা দেখি ময়মনসিংহে- পরিচিত একজনের বইয়ের দোকানে।
আপনার মন্তব্যটা দেখার পর এই দুটো দোকানে ফোন দিয়ে আবারও জিজ্ঞাসা করলাম- তারাও একই কথা বললেন। সারা বছর প্রবন্ধের বই যতোগুলো বিক্রি হয়, সেগুলো বিশেষ উদ্দেশ্যে (যেমন- গবেষণা) ক্রেতারা কিনে থাকেন। এ ধরনের ক্রেতার সংখ্যা খুব বেশি হওয়ার কথা না। কিন্তু গল্প-উপন্যাসের চাহিদা তো থাকে সারাবছরই- সব ধরনের ক্রেতার কাছেই।
আমারও ।
কর্তৃপক্ষ আগেই জানিয়েছি ।
ধন্যবাদ মানিক ভাই।
লেখার বিষয়গুলো অনেক ধরনের ভাবনার দিকে ঠেলে দিলো। মাঝখান থেকে দাঁড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদকে দেখার কাজটি অন্ধ ভক্ত এবং অন্ধ নিন্দুক হলে হবে না। এই লেখকের দূর্ভাগ্য যে, তাঁর ভাগ্যে এ-দুটো খুব কাজ করে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে দেখার মতো লোক চাই। সহমত।
লিখেছেন, সব্যসাচী লেখক মানে দুই হাতেই একটানা লিখতে পারেন যারা, এমন কিছু। আমার বোঝায় কি ভুল আছে?
আমিতো জানি, সব্যসাচী মানে যিনি সাহিত্যের নানা মাধ্যমে লিখে থাকেন।
বইমেলায় কত বই বিক্রি হয়, বা কত অঙ্কের টাকার বই বিক্রি হয় এটি আমাদের এখানে স্বচ্ছ নয়। কিন্তু বাইরের দেশে এই হিসেব-নিকেশগুলো সহজেই মেলে।
একটি প্রবন্ধ থেকে কিছু তথ্য তুলে দেই। এটি আমার অগ্রজ মোস্তাক শরীফের লেখা। বিষয়: জাতি গঠনে মেধাবী উদ্যোক্তা, প্রেক্ষিত বাংলাদেশের প্রকাশনার জগৎ।
" ২০০৪ সালে একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেখানে ছিল ৩১৭টি, ২০১১ সালে সেটি বেড়ে ৩৮৪ এবং ২০১২তে হয়েছে ৪১৪টি। ২০০৬ সালে বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ছিল ২১০২টি, ২০১২ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৫৬০টি। পাশ্চাত্যে যেভাবে পাওয়া যায় আমাদের দেশে সেভাবে বইয়ের বাজারের আর্থিকমূল্যসহ পুস্তক প্রকাশনা ও বিপণন সংক্রান্ত নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া দুষ্কর। আমাদের দেশের বইয়ের বাজারের আর্থিক আকার সম্বন্ধে ধারণালাভের জন্য এ লেখা প্রস্তুতের সময় প্রবন্ধকার বাংলা একাডেমী ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে যোগাযোগ করেছিলেন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে কোনো তথ্যপ্রাপ্তি সম্ভব হয়নি, আর বাংলা একাডেমী থেকে মেলায় বছরওয়ারী প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সম্বন্ধে তথ্য পাওয়া গেলেও নির্ভরযোগ্য কোনো আর্থিক হিসাব পাওয়া যায়নি, তবে জানা গেছে, ২০১২-র মেলায় ২৪ কোটি টাকার মত বই বিক্রি হয়েছে। একাধিক প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলে প্রবন্ধকারের এ ধারণা হয়েছে যে, আমাদের দেশের বইয়ের বাজারের আর্থিক মূল্য অন্ততপক্ষে পাঁচ থেকে আট হাজার কোটি টাকা। অনলাইনে বই বিক্রি আমাদের দেশে একেবারেই সাম্প্রতিক একটি ঘটনা। হাতে গোনা যে দু-একটি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে বই বিক্রি করছেন তাদের কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বছরে অনলাইনে বই বিক্রি হয় কমবেশি দেড় কোটি টাকার। আমাদের দেশে ইন্টারনেট সুবিধার অপ্রতুলতা ও অনলাইনে কেনাবেচার সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করলে পরিমাণটিকে একেবারে ফেলনা বলা যাবে না।"
মাঝখানে থেকে দেখার বিষয়টাকে সহমত জানানোয় স্বস্তি পেলাম। বুঝতে পারছিলাম না- এই দলে আমি একা কিনা!
হা হা হা... এখানে সব্যসাচী অর্থাৎ দুহাতে লিখেন বলে বুঝাতে চেয়েছি যে, সারা বছর তার যতোগুলো বই প্রকাশিত হয়, সেগুলো এক হাতে লেখা সম্ভব না। অন্তত দুটো হাত দরকার। আমার ধারণা ভদ্রলোকের তিনটা হাত আছে হয়তো।
তাও একটা তথ্য পাওয়া গেল বই প্রকাশ ও বিক্রির বিষয়ে। কিন্তু আমার মতে, এটা কেবলই ধারণা। যে প্রকাশক ফেব্রুয়ারির আগেই বই প্রকাশ করেন, তিনিও বইতে প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি বলে চালিয়ে দেন। সুতরাং কোন ভিত্তিতে হিসাবনিকাশ হয়, সেটা বুঝা মুশকিল। আর্থিক হিসাবের ক্ষেত্রে তো আরও বেড়াছেড়া অবস্থা। প্রকাশকরা কতো টাকা বিক্রি হলো সেটা কাউকে বলতে চান না। একবার পরিচিত এক প্রকাশককে জিজ্ঞাসা করে (লেখালেখির জন্য) বিব্রত হয়েছিলাম। আমার ধারণা, এই বিষয়গুলো জানা থাকলে বইমেলা নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা করতে একাডেমীর জন্য আরও সহজ হতো।
বই মেলা কে ঢাকায় আটকে না রেখে প্রতি জেলা শহরে করলে কেমন হয় ?
আইডিয়াটা দারুণ! কিন্তু বাস্তবায়ন হবে না- জানা কথা!
বিষয়টা ভাইবা দ্যাখেন কর্তৃপক্ষ। নাইলে কিন্তুক খপর আচে
...আর ভাবছে!
প্রবন্ধ ও গবেষণার বই প্রকাশকরা বের করতে চান না। আমার পুরনো লেখা নিয়ে একটি বই বের করতে গিয়ে গতবার আবার প্রকাশক মত বদলে ফেললেন বললেন আপা গল্প-উপন্যাস দেন
(
আমার অভিজ্ঞতা আবার উল্টো। এক প্রকাশককে বললাম, ভাই, আমার কিছু গল্প আছে। ছাপাবেন? তিনি বললেন, আপনার না শিক্ষা নিয়া কয়েকটা লেখা আছে! ওগুলা দেন!
মন্তব্য করুন