শোনা কথায় বইমেলা: ফেব্রুয়ারি ৩
বইমেলা নিয়ে ফেসবুকে মানুষের উচ্ছ্বাস ভালোলাগে। কারও নতুন বই বেরুচ্ছে, কেউ বইমেলা থেকে কিনে এনেছেন গাদাগাদা বই, কেউবা শুধুই বেড়াতে গিয়েছেন- দেখা হয়ে গেছে নানান জনের সাথে। বছর দশ-পনের আগেও মানুষ কি বইমেলায় নিছক আড্ডা দিতে যেত? আমার অভিজ্ঞতা তেমনটি বলে না। তখন মানুষজন যেতেন একটু ঘুরতে, দুয়েকটা বই কিনতে, এই ফাঁকে হয়তো পরিচিত কয়েকজনের সাথে দেখা হয়ে যেত। লেখকদের কথা অবশ্য আলাদা, তারা অপর লেখকদের সাথে আড্ডা দিতে যান, অটোগ্রাফ দেবার জন্য যান; কিন্তু সাধারণ মানুষদের জন্য বইমেলা একটা আড্ডার স্থান, সামাজিকতার স্থান হিসেবে দিন দিন বইমেলাটা একটা দারুণ জায়গা হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা দারুণ লাগে, কারণ এই ধরনের আড্ডাতে বই-ই শেষ পর্যন্ত মুখ্য বিষয় হয়ে দাড়ায়। অনেকের প্রতিদিন বই কেনার সামর্থ্য থাকে না, কিন্তু বইমেলায় না গেলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে, সন্ধ্যেটা কাটতে চায় না- বইমেলা যে এই আকুতিটা তরুণপ্রাণে সৃষ্টি করে দিয়েছে- এ কি কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার!
ফেসবুকেই দেখলাম রায়হান আবীরের বই আসছে। দারুণ ব্যাপার! এর আগে তাঁর এবং অভিজিৎ রায়ের একটা বই বেরিয়েছিল- ‘অবিশ্বাসের দর্শন’। খুব সাবলীল ভঙ্গিতে অনেককিছুই বলা হয়েছে সেখানে। আশা করি, নতুন বই ‘মানুষিকতা’য়ও সেই প্রতিফলন থাকবে। প্রচ্ছদটি দারুণ হয়েছে, অন্তত আমার পছন্দ হয়েছে। বইটি খুলে দেখতে হবে, সেখানে আসলে রায়হান কী লিখেছেন!
বইমেলা নিয়ে নতুন লেখা এসেছে- নানা ব্লগে। আমরা বন্ধুতেও দেখলাম শুভ ভাই পোস্ট দিয়েছেন, রাসেল ভাই তো লিখছেন নিয়মিত। রাসেল ভাইয়ের লেখাগুলো একটু অন্যরকম হয়। আমরা যেমন বইমেলা নিয়েই ব্লগরব্লগর করতে থাকি, এর বাইরে যেতে পারি না, কিন্তু তাঁর বেলায় তেমনটি নয়। তিনি একটি বিষয়কে ধরে এর সাথে নানা বিষয়ের সংযোগ ঘটাতে পারেন- ফলে তাঁর লেখাগুলোতে বাস্তব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কিছুটা তাত্ত্বিক আলোচনা চলে আসে। এ ধরনের লেখাগুলো কে কীভাবে নেন জানি না, কিন্তু আমার কাছে দারুণ লাগে। মাঝেমাঝে তাঁর অনেক লেখায় মনে হয় কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক আলোচনাও চলে আসে, কিন্তু চাইলে প্রাসঙ্গিকতা যুক্ত করা যায়- লেখক চাইলে বিষয়টা আরেকটু ভাবতে পারেন।
দিনকয়েক আগে একটা বই নিয়ে ভাবতে ভাবতে হাঁটছিলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। হঠাৎ করে দেখি পুকুরপাড়ে মাঠের পাশে প্যান্ডেল বানানো হচ্ছে- দেখতে হুবহু বইমেলার মতো করে। ভাবলাম, এখানেও বইমেলা হয় হয়তো ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু না; পরে দেখি এটা অন্য উদ্দেশ্যে বানানো। মন খারাপ হলো অনেকটাই।
বইয়ের বিজ্ঞাপন নিয়ে আগের পর্বগুলোতে দুয়েকটা টুকটাক কথা বলেছিলাম। প্রথম আলো নামের দৈনিক পত্রিকাটি প্রতিদিন শেষ পৃষ্ঠায় বইমেলা নিয়ে কড়চা প্রকাশ করছে। সেখানে নানা বিষয়ে কথাবার্তা থাকে, কিন্তু তাদেরই প্রকাশনা সংস্থা প্রথমা কী বই প্রকাশ করছে, তার বিস্তারিত বিবরণ যেভাবে লিখেছে, তাতে মনে হচ্ছে, এই কলামটাকে তারা ব্যবহার করছে নিজেদের প্রকাশনার বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে। পত্রিকাটির সাথে এটা সম্ভবত যায় না। কারণ এর আগে অসমর্থিত সূত্রে জেনেছি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে পত্রিকটির সম্পাদক বা দায়িত্বশীল অন্যরা অংশগ্রহণ করলেও পত্রিকায় যখন এ-সম্পর্কিত খবর ও ছবি প্রকাশ হয়, তখন পারতপক্ষে তাঁরা তাঁদের ছবি প্রকাশ করেন না। প্রথম আলো বিভিন্ন ধরনের মতবিনিময় সভার আয়োজন করে থাকে নিয়মিত, সেখানেও দেখি আগত অতিথিদের ছবি থাকে, কিন্তু প্রথম আলোর পক্ষে যিনি সঞ্চালনা করেন, তাঁর ছবি থাকে না।
বইমেলা নিয়ে আক্ষেপ বাড়ছে- আমি ঢাকায় নেই- আর সবাই কী মজা করে বইমেলায় যাচ্ছে! একেই তো বলে হিংসা!
(লেখাটি ৩ তারিখেই লেখা, পোস্ট করতে দেরি হয়ে গেল)
বই মেলাও আপনাকে মিস করে কারন না থেকেও কি দারুন লিখছেন!
...ঢাকায় থাকলে হয়তো এই সিরিজটা লেখাই হতো না!
মানুষ তার না থাকার মাঝেই মাঝে মাঝে সবচাইতে বেশি করে থেকে যায়।
আপনার কথাটা দারুণ লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
একমত
কোন বিষয়ে?
যা বলছেন
...আপনার সব বই একটা করে ফ্রি পাবো- সেই বিষয়েও?
রাসেল্ভাইর লেখাটা দারুন, কতকিছু জানা যায় উনার লেখার মাঝে টুকটাক করে যা আসে। অনেক টপিক আনেন উনি যেটা মাঝে আমঝে রিলেটেড বিষয়েও জানার আগ্রহী হয়ে উঠি।
আর আপনার সিরিজটার ব্যাপারেও আগ্রহ আছে, কারন আপনি উপস্থিত না থেকেও মেলা নিয়ে একের পর এক ভাবনা কি দারুন করে তুলে আনেন।
টুটুল্ভাই বললেন অইদিন যে বৈদেশী যারা মেলার জন্যে হাহাকার করেন তাদের এই ২টা পোষ্টেড় লিঙ্ক ধরায়ে দেয়া উত্তম কাজ! আমি উনার সাথে সহমতের সাথে একমত পোষন করি
রাসেল ভাইয়ের অনেক বক্তব্যের সাথে দ্বিমত থাকে- কিন্তু তিনি উপস্থাপন করে যান নিজের মতো করে, রেগুলার- এই কাজটা সবাই পারে না।
আপনি বইমেলা মিস করছেন সেটা বুঝতে পারছি। ঢাকায় থেকেও এখনও বইমেলা যাইনি। এবার বাসাটা দূরে হওয়াতে যাওয়া হলো না এখনও।
মানুষকিতা বইয়ের প্রচ্ছদটা তো হেব্বি!
বইমেলার সামনের রাস্তায় দেখলাম শুধু প্রথমা থেকে প্রকাশিত নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন।
ঢাকায় থেকে এখনও বইমেলায় যান নি! কী বলেন?
বইমেলার সামনের রাস্তায় প্রথমা থেকে প্রকাশিত নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপনের কনসেপ্টটা প্রথমার দিক থেকে চিন্তা করলে হয়তো ঠিক আছে, কিন্তু আমার দিক থেকে বিষয়টা ভালো লাগে নি। মেলায় প্রবেশ করার আগে তাদের বিজ্ঞাপনগুলো হাভাতের মতো লাগে। ভালো হতো, কর্তৃপক্ষ যদি অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসে এই জায়গাটাকে বিজ্ঞাপন-মুক্ত করতে পারতেন।
ভাইরে, ব্যবসা করতে চায় সব জায়গায়। আর তখন মাথায় অন্য ভাবনা রাখে না, আমাদের খারাপ লাগলেও তাদের লাগে না।
তা অবশ্য ঠিক বলেছেন।
আপনি তো তাও বইমেলার ধূলো পায়ে নিয়ে এসেছেন--আমারতো মনেই পড়ে না শেষ কবে বইমেলায় গিয়েছি। বছর দশেক তো হবেই।।। পরের বইমেলায় আপনার বই বের হলে মোড়ক উন্মোচনে চলে আসবো, কোনো মিস নাই!
মামুন ভাই কেমন আছেন? আপনাকে বহুদিন পর দেখলাম। পিচ্চিদের খবরাখবর কি?
এই বইমেলায় আমার একটা বই বের হওয়ার কথা, মামুন ভাই। কিন্তু মোড়ক উন্মোচন জাতীয় কোনো কর্মকাণ্ডে আমার আগ্রহ নাই। তাই বলে কি আপনাকে মিস করেই যাবো? অন্তত একটা বার আমাদের সাথে আড্ডা দিতে আসেন না হয়!
বইমেলাকে ঘিরে সবার আনন্দ-আবেগের প্রকাশ দেখে বেশ লাগছে ! আপনার বই-তো অনেক আগেই আলোর মুখ দেখার কথা ছিল। পরিচিতদের, বন্ধুদের বই আসবে মেলায়, সব হয়তো সংগ্রহও করা হবে না। কিন্তু একঝাঁক লেখকের জ্বলে ওঠাকে সাধুবাদ জানাবোই।
রায়হান আবীর-এর লেখার সাথে পরিচিত নই। আপনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন দেখে আগ্রহ জাগলো। ইনি ব্লগার নাকী? আর রাসেল-এর লেখার কথা কি বলবো! মুগ্ধতা প্রকাশ ছাড়া? শঙ্খ ঘোষের গদ্য যেভাবে আবেশ ছড়িয়ে দেয়, রাসেল-এর লেখাও তাই।
"প্রথমা"র গ্রন্থগুলো নিয়ে 'প্রথম আলো'র প্রচার-প্রচারণার এই বিষয়টি আমার কাছেও ভালো লাগে না। কিন্তু, চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে "ব্যবসা" এই কথাটিই টিকে যায় !
আমার বই কবে আসবে বুঝতে পারছি না। হয়তো যখন আসবে, তখন আমি আর দেখার সুযোগ পাবো না।
রায়হান আবীরের বইগুলো যুক্তি দিয়ে লেখা- সে কারণেই আমার ভালো লাগে। পড়ে দেখতে পারেন।
চূড়ান্ত লক্ষ্য ব্যবসা ঠিকই আছে- কিন্তু দৃষ্টিকটুভাবে উপস্থাপনটা দৃষ্টিকটুই লাগে। এই আর কী!
পড়লাম
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন