শোনা কথায় বইমেলা: ফেব্রুয়ারি ৬
কিছু কিছু সময় আসে যখন স্বাভাবিক নিয়মের ধারা বাদ দিয়ে উত্তুঙ্গ বিষয়টিকে আঁকড়ে ধরতে হয়। সেই সময়টাই চলছে এখন। যদিও এ ধরনের সময়ের কিছু দুর্বলতা থাকে- মানুষের একদিকের মনোযোগের ফাঁকে অন্য অনেক বড় বড় কাজ বা কুকাজ করে ফেলা যায়- সেরকমটা হচ্ছে কিনা কে জানে! এই মুহূর্তের মনোযোগের বিষয় সবটুকু কেড়ে নিয়েছে শাহবাগ- মানুষজন যেখানে দিনের পর দিন মিছিল দিয়ে স্লোগান দিয়ে আন্দোলন করে দিনাতিপাত করছে- সেখানে বইমেলা নিয়ে সিরিজ লেখা এবং তা পড়া এবং তা নিয়ে কমেন্ট করা বিসদৃশ লাগার কথা। ভেবেছিলাম বন্ধ করে দিবো- কিন্তু মনে পড়লো ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখের লেখাটির কথা। সেখানে স্পষ্টভাবেই বলেছিলাম- শাহবাগের একেকটি মানুষ একেকটি বই। শাহবাগের একেকটি মানুষ একেকটি বইমেলা। সেদিনের পর থেকে শাহবাগে ‘ছাপানো নয় কিন্তু জীবন্ত’ এরকম বইয়ের পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ। এরকম নতুন নতুন বই এসেছে অভাবিত পরিমাণে। সেদিনের পর থেকে শাহবাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিটা মিনিটের বইমেলা। সুতরাং তাদেরকে নিয়ে লিখলেও আদতে বইমেলা নিয়েই লেখা হয়।
বাংলা একাডেমীর বইমেলা থেকে শাহবাগের দূরত্ব বেশি নয়। আসলে দূরত্ব বেশি নয় বলাটা ভুল হবে- শাহবাগের সাথে একুশে বইমেলা মিশে গেছে। যে জনারণ্য শাহবাগে থাকে, সেই জনারণ্যই একটু পর চলে যাচ্ছে বইমেলা; আবার সেখান থেকে পুনরায় মিশে যাচ্ছে শাহবাগে। সুতরাং এই মুহূর্তে বইমেলা আর শাহবাগ- দুটোকে আলাদা করার উপায় নেই।
ফেব্রুয়ারি চেতনার বহিঃপ্রকাশ বইমেলা। বইমেলাই আবার ফেব্রুয়ারিকে আরও গভীর আবেগে উদ্দীপ্ত করে মানুষকে। ঠিক একইভাবে ফেব্রুয়ারির চেতনা হিসেবেই দেখা যাবে শাহবাগকে। যে বাংলা, যে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে বায়ান্ন থেকে, একাত্তর থেকে- সেই বাংলা, সেই বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি ও একাত্তর কোনো অবস্থাতেই বিচ্ছিন্ন নয়- দুটোই পরস্পরের। সুতরাং আমরা যখন ফেব্রুয়ারি নিয়ে কথা বলি, তখন বলি একাত্তর নিয়েও। আমরা যখন একাত্তর নিয়ে কথা বলি, তখন কথা বলি ফেব্রুয়ারি নিয়েও। দেশের নাম আর ভাষার নাম যখন একাত্ম হয়, তখন সেখানে দুটোকে আলাদা করে দেখার উপায় নেই। ঠিক সেই কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে জাগরণ দেখা যায় শাহবাগে, সেটি স্বাভাবিকভাবেই উদ্দীপ্ত হয় ফেব্রুয়ারির বইমেলার চেতনার দ্বারা।
সন্দেহ নেই, একদল তরুণের দারুণ সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অনেকে হয়তো প্রথমবারের মতো শাহবাগে এসেছে, যেমনটি এসেছে প্রথমবারের মতো বইমেলায়। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কোনো তরুণ হয়তো ভবিষ্যতে লিখবেন তার প্রথম বইটি। কেউ কেউ হয়তো তার নানা লেখার মাঝে মিশিয়ে দিবেন এই অভিজ্ঞতাটুকু। আজকের দিনগুলোর এই অভিজ্ঞতা, আমি নিশ্চিত, প্রচুর মানুষের লিখিত জীবনীতে ঠাঁই পাবে- আংশিক বা পূর্ণভাবে। আজকের দিনগুলোর আয়োজকও সেই সমস্ত মানুষ- যারা ব্লগে লিখেন। লিখেন ফেসবুকে- স্ট্যাটাস বা নোট। ব্লগ কিংবা ফেসবুকের সে সমস্ত লেখার অবয়ব ও কলরব প্রকৃতপক্ষে ছাপার বইকে ছাড়িয়ে যায় অনেকাংশে। সেগুলো জোড়া লাগিয়ে তৈরি করে ফেলা যায় বড় বড় বই। এ সমস্ত ব্লগ ও ফেসবুকের লেখার পাঠক অগুনতি- তাঁরা এসব লেখা পড়েন, এসব লেখায় মন্তব্য করেন। সুতরাং এই আন্দোলনে মূলত তারাই আছেন- যারা বইয়ের লেখক, বইয়ের পাঠক। দিনমান পত্রিকায়, ব্লগে, অনলাইন সংবাদমাধ্যম, টেলিভিশন বা বেতারে তাঁদের কথাই শুনছি। শোনা কথায় বইমেলা তাই নানা অর্থে বহুমাত্রিক এই দিনগুলোতে।
ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যারা এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন, তাঁদেরকে বইয়ের মতো পড়ালেখা করলেও অনেক পূণ্য হয়। এর চেয়ে বড় পূণ্য আর কী আছে!
কথাগুলো চমত্কার লিখেছেন, গৌতমদা।
আপনি আসছেন কবে?
আমি এখন ঢাকাতে।
পোষ্টে একমত!
তবে আপনার দুর্ভাগ্য থাকতে পারতেছেন না!
হ, সেটাই।
গৌতমদা, অনেক আবেগ দিয়ে লিখলেন । যারা শাহবাগে না আসতে পেরেও লিখে, ছবি শেয়ার করে জানাচ্ছেন চারপাশের মানুষকে, অনুপ্রাণিত করছেন তারা তো সেই জনতারই একজন ।
তবে, টিভিতে দেখে, পত্রিকায় পড়ে সত্যিকার অবস্থাটা বুঝা যায় না যেন । একেকটা স্লোগান, গান যেন রক্ত গরম করে দেয়, গায়ে কাটা দিয়ে উঠে যেন ।
আপনি দূরে থেকে মিস করছেন বলে খারাপ লাগছে।
দাবী আদায় হোক ।
ধন্যবাদ জ্যোতি আপা আমার আবেগটাকে উপলব্ধি করার জন্য।
এ জাতি এমন সময় পায়নাই। কেমন যেনো লাগছে! কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানার নেই, কোনো নেতা নেই কিন্তু জনতা জেগে উঠেছে ! অভুতপূর্ব।
সেটাই। এ এক দারুণ সময়!
দাবী আদায় হোক ।
দাবী আদায় হোক।
মন্তব্য করুন