ইউজার লগইন

শোনা কথায় বইমেলা: ফেব্রুয়ারি ১০

বইমেলা, বই প্রকাশ, বই বিপণন, ব্যবসায়িক সাফল্য ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে বিডিনিউজে/বাংলানিউজে রাখাল রাহা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন। বাইরের দেশের প্রকাশনা সংস্থাগুলোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থার কিছু বিচার্য বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি দেশ ও বিদেশের প্রকাশকদের অবস্থার তুলনামূলক আলোচনার পাশাপাশি এ দেশের প্রকাশকদের পূর্বের ও বর্তমান ধারার চিত্রও তুলনা করেছেন। এ আলোচনা থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিতে পারলেও অন্তত উপলব্ধি করা যায় যে, প্রকাশনা সংস্থাগুলোতে যে ধরনের পেশাদারিত্ব আমরা আশা করি, সেটা বাংলাদেশে অনুপস্থিত বললে অত্যুক্তি হবে না।

একটি প্রকাশনা সংস্থায় পেশাদারিত্ব বলতে আসলে কী বুঝায়? কিংবা লেখক বা পাঠক হিসেবেই বা আমরা পেশাদারিত্ব বলতে কী ধারণা করি? তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি- দেশের সব প্রকাশক চূড়ান্তভাবে পেশাদারিত্বের (অনেকে প্রফেশনালিজম আর কমার্শিয়াল বিষয়গুলোকে এক করে ফেলে, এই লেখায় কমার্শিয়াল বিষয়গুলো নিয়ে কোনো কথা বলা হচ্ছে না) চর্চা করছেন; কিন্তু যারা বই লিখেন, অর্থাৎ যারা লেখক তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের ছোঁয়া Wink কতোটুকু থাকে? আজকে দেশের বড় লেখকদের (বড় লেখক বলতে যাদের নামডাক আছে বুঝানো হচ্ছে) যদি বলা হয়, তাঁর বই অন্য একজন সম্পাদককে দেখানো হবে কিংবা তিনজন পর্যালোচনাকারী পর্যালোচনার পরই কেবল তাঁর বইটি প্রকাশ করা হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- সেক্ষেত্রে কয়জন বড় লেখক এই শর্তে রাজি হবেন? একেকটি প্রকাশনা সংস্থা যতোগুলো বড় লেখকের বই প্রকাশ করে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করে ‘বড় লেখক নয়’ তাদের বই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যারা ‘বড় লেখক নয়’ তাদের বই হয়তো তেমনভাবে চলে না, প্রকাশক মূলত লাভ তুলেন বড় লেখকদের বই বেশি বেশি বিক্রি করে। সুতরাং বড় লেখকরা প্রকাশকদের বই না দিলে তাদের পেট চলবে না (উল্টোভাবে বলা যায়, প্রকাশকরা না প্রকাশ করলে বড় লেখকরা কীভাবে বই প্রকাশ করবেন? সেটা অন্য প্রশ্ন, বড় লেখকদের না করার হিম্মত এদেশের প্রকাশকদের হয় নাই)। এখন লেখকরা যদি মনমানসিকতায় পেশাদারিত্বের ধার না ধারেন তাহলে প্রকাশকের কী করার আছে?

সুতরাং বই ব্যবসায় বা বই প্রকাশনায় প্রফেশনালিজম আনতে হলে লেখক ও প্রকাশক উভয়কেই কাজ করতে হবে। বই প্রকাশের পূর্বে লেখক ও প্রকাশকের মধ্যে সার্বিক বিষয় নিয়ে লিখিত চুক্তি থাকা উচিত। অবশ্য প্রকাশকের সততার বিষয়টিও মূখ্য হতে হবে। প্রতি বছর লেখকের কয়টা বই বিক্রি হলো সেই হিসাব কয়জন প্রকাশক সংশ্লিষ্ট লেখকদের জানান বা সে অনুযায়ী রয়্যারলটি দেন?

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাটিও এখানে উল্লেখ করা যায়। বাবার সাথে পরিচয়ের সুবাদে বছর কয়েক আগে একটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে কিছু বই অনুবাদের প্রস্তাবনা পাই। সময় ছিল না বলে সেখান থেকে একটি বই বেছে নিই এবং ভারতীয় ওই ইংরেজি বইটি পড়ার পর মনে হয় যে, এই বইটির চেয়ে আরও ভালোভাবে একটি নতুন বই তৈরি করা সম্ভব। বইয়ের বিষয়বস্তু আমার কাজ ও পড়ালেখার সাথেও অনেকটা মিলে যায়। প্রকাশকের সাথে কথা বলে মূল বইটির থেকে আইডিয়া নিয়ে একেবারে নতুন করে আরেকটি বই তৈরি করে পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে দিই। প্রকাশক পাণ্ডুলিপি নেয়ার পর থেকে কোনোদিন আমাকে বইয়ের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান নি; যতোটুকু জেনেছি নিজ থেকে ফোন করে বা সরাসরি প্রকাশনা সংস্থার অফিসে উপস্থিত হয়ে। কিছু কিছু ব্যাপারে বিরক্ত হলেও বাবার সাথে প্রকাশকের সম্পর্কের সুবাদে কিছু বলতে পারছিলাম না। এর মধ্যে বইমেলা চলে এলো এবং সেবারের বইমেলায় আমার লেখা ওই বইটি প্রকাশকের স্টলে, যতোদূর শুনেছি, ভালোই বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু বইটি হাতে নিয়ে আমি পুরোপুরি স্তম্ভিত। প্রথমত, প্রচ্ছদটা বইয়ের সাথে মানানসই হয় নি। গুগলে কিছু একটা সার্চ করে একটি ওয়েব সাইট থেকে ছবি মেরে সেটাকে দিয়ে প্রচ্ছদ করা হয়েছে। প্রচ্ছদ করেছেন দেশের অন্যতম খ্যাতনামা একজন প্রচ্ছদশিল্পী। বইটি হাতে নিয়ে বিহ্বল হয়ে গেলাম। যেভাবে লেখাগুলো সাজানোর কথা, সেভাবে সাজানো হয় নাই। প্রিন্টার্স লাইন দেখে আরও চমকে গেলাম। আমার ধারণা ছিল এ ধরনের মৌলিক বইয়ের স্বত্ব থাকে লেখকের- কিন্তু সেখানে স্বত্ব হিসেবে প্রকাশনা সংস্থার নাম দেয়া। ফোন করে বাবাকে বিষয়টি জানালাম, কিন্তু তিনি কী বুঝলেন কে জানে! পরে বইমেলাতেই ওই প্রকাশককে ধরলাম বিষয়গুলো নিয়ে। তিনি মুখের উপর বলে দিলেন- এ ধরনের অনুবাদ বইতে স্বত্ব থাকে প্রকাশকের। আর তাঁর সাথে যেহেতু আমার ওইরকম কোনো চুক্তি নাই, সুতরাং তিনি আমার নামে স্বত্ব দিতে পারবেন না। আর টাকাপয়সার কথা না হয়, না-ই বললাম।

তখনও প্রকাশনার নানা ব্যাপার নিয়ে বুঝতাম না, কিংবা বলা ভালো- ভেবেছিলাম, কিছু কিছু জিনিস স্বাভাবিক ভদ্রতা। টাকাপয়সা নিয়ে কথা বলতে একদমই অস্বস্তি অনুভব করি- কিন্তু দিনশেষে দেখা যাচ্ছে প্রকাশক পেশাদার না হলে তার সাথেও পেশাদার আচরণ করে লাভ নেই। তার মানে দেখা যাচ্ছে, পেশাদার আচরণের বিষয়টি আমরা শুধু একটা পক্ষ থেকে আশা করতে পারি না, দুটো পক্ষই যদি পেশাদার না হয়- তাহলে বই প্রকাশনা এদেশে শিল্প হয়ে উঠতে পারবে না কখনও।

সুখের বিষয়, বাংলাদেশে নতুন কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা উঠে আসছে যারা এখনও পুরোপুরি পেশাদার আচরণ না করতে পারলেও আস্তে আস্তে সেদিকেই এগুচ্ছে। এখন শুধু দরকার গতিটা বাড়ানো।

পোস্টটি ১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


কালকেই রাখাল রাহার লেখাটা পড়লাম। সব খানেই নৈরাজ্য বাংলাদেশের মুক্তি নাই!

গৌতম's picture


আরে নিরাশ হয়েন না!

লীনা দিলরুবা's picture


রাখাল রাহার লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ।

গৌতম's picture


আসলেই গুরুত্বপূর্ণ।

শওকত মাসুম's picture


গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পেশাদারিত্ব প্রয়োজন সবারই।

গৌতম's picture


সেটাই।

তানবীরা's picture


এখনও পুরোপুরি পেশাদার আচরণ না করতে পারলেও আস্তে আস্তে সেদিকেই এগুচ্ছে। এখন শুধু দরকার গতিটা বাড়ানো।

(Y)

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


আমরা চিরকালের আশাবাদী, চিন্তা নাই - টাইমে সবই হবে।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

গৌতম's picture

নিজের সম্পর্কে

অনিশ্চয়তার মধ্যে আমার বসবাস। পৃথিবীর কোনো কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এমনকি যা লিখি, যা পড়ি, যা বলি, সেগুলো সম্পর্কেও নয়।
সমাজতন্ত্র সম্পর্কে মোহ আছে, তবে সমাজের তান্ত্রিকদের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই।

আমার লেখার সব লাইসেন্স ক্রিয়েটিভ কমন্সের by-nc-nd-এর আওতায় রক্ষিত। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে।

শিক্ষাবিষয়ক একটি ওয়েব সাইট নিয়ে কাজ করছি কিছুদিন ধরে - www.bdeduarticle.com