ইউজার লগইন

আমার জোহা চাচা

আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বেড়ে ওঠা মানুষ তাদের নিয়ে এই এক সমস্যা, নিজেরা যত ক্ষুদ্রই হই না কেন বড় মাপের মানুষদের নিয়মিত সান্নিধ্য পেয়ে, তাঁদের সাহচর্যে থেকে তাঁদেরও নামিয়ে আনি সাধারণ মানুষের স্তরে। তাঁরা হয়ে যান আমাদের পারিবারিক সদস্যের মতই। আমদের হাসান চাচা (প্রখ্যাত কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক) বা সনৎ কাকুর (বিশিষ্ট সাহিত্যিক সনৎ কুমার সাহা) চাইতে এই সত্য আর বেশি কেই বা জানেন? আর সেভাবেই ইতিহাসের নির্মাতা, শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন, গোটা বাংলাদেশেরই গর্ব ও অহংকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষক ড মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা আমার কাছে সারাজীবন জোহা চাচাই রয়ে গেছেন। তিনি আমার পিতৃবন্ধু, প্রতিবেশী, চির সুহৃদ, আমার ছোটবেলার খেলার সাথীর পিতা এই পরিচয়গুলোর আবর্তেই ঘুরপাক খেয়েছি বেশি। সাধ্য কী তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম, আর সর্বোপরি তাঁর আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করি? না সে পথে আমি হাঁটব না।

প্রথমেই জোহা চাচার একটি সংক্ষিপ্ত জীবন পরিচিতি দিয়ে নেই। তাঁর জন্ম ১৯৩৪ সনে পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়ায়। সেখানেই তাঁর শিক্ষাজীবনের হাতে খড়ি। বাঁকুড়া জেলা স্কুল থেকেই ১৯৪৮ সনে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৫০ সনে বাঁকুড়া খ্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুব করুণ এবং অনেকটা ভাগ্যান্বেশনেই তাঁরা ১৯৫০ সনে পশ্চিম বঙ্গ ত্যাগ করে পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। জোহা চাচা ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মুক্তমনা, স্বাধীনচেতা, প্রতিবাদী, আধুনিক একজন মানুষ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম (সলিমুল্লাহ মুসলিম) হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অব্যবহিত পরেই ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের যে ক’টি দুর্লভ আলোকচিত্র এখনো সংরক্ষিত আছে তার একটিতে দেখা যায় ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটি মিছিলের পুরোভাগে আছেন জোহা চাচা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যতটা না ভাল ছাত্র বলে পরিচিত ছিলেন, তার থেকে অনেক বেশি পরিচিত ছিলেন একজন ক্রিকেটার হিসেবে। তাঁর অনুজপ্রতিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর অজয় রায় লিখেছেন যে ১৯৫৩ সালে খেলার মাঠেই তাঁর সাথে জোহা চাচার পরিচয় ঘটে। তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেটে একজন নামী অলরাউন্ডার বলে খ্যাত। ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর পরিচিতি ব্যাপক থাকলেও দারুন কার্যকরী মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। তিনি হলের ফুটবল দলেরও নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। এছাড়া এথলেটিক্সের অন্যান বিভাগেও তিনি ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি হকি দলেরও নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। জোহা চাচা ছিলেন দারুন আড্ডাবাজ একজন মানুষ। তিনি ছিলেন সদাহাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ… সবসময় মেতে থাকতেন হাসি আনন্দে। কঠোর দারিদ্রের মধ্যে তাঁর জীবন অতিবাহিত হলেও কাউকেই তিনি তা বুঝতে দিতেন না।

১৯৫৩ সালে জোহা চাচা রসায়নে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক সম্মান পাশ করেন। মাস্টার্সে তিনি সেই সময়ের প্রথিতযশা শিক্ষক প্রফেসর এম এইচ খন্দকারের ল্যাবে ফিজিও-ইনঅরগানিক কেমিস্ট্রি বিষয়ে গবেষণা করেন এবং ১৯৫৪ সালে কৃতিত্বের সাথে মাস্টার্স পাশ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছিল তাঁর আজন্ম লালিত স্বপ্ন, কিন্তু পারিবারিক অস্বচ্ছ্বলতার কথা বিবেচনা করে তাঁকে প্রথম জীবনে অন্য পেশা গ্রহণ করতে হয়। ১৯৬১ সনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন এবং সেই বছরেই রসায়ন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ’৬২ এর প্রথমেই তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজে যান এবং ১৯৬৪ সনে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করে রাজশাহী ফিরে আসেন। ১৯৬৬ সনে তিনি রীডার পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

সদালাপী, সদা হাস্যোজ্জ্বল জোহা চাচা ছাত্রছাত্রীদের ছিলেন নয়নমণি। নিলুফার চাচীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল কখন তা আমার ঠিক জানা নেই, তবে তাঁদের একমাত্র কন্যা ডালিয়া ছিল বয়সে আমার থেকে কিছুটা ছোট। জোহা চাচা যেমন সুদর্শন ছিলেন, নিলুফার চাচীও ছিলেন তেমন সুন্দরী, আর তাঁদের কন্যা ডালিয়াও ছিল তার নামের মতই সুন্দর। তখন ক্যাম্পাসে সুন্দর আর সুখী পরিবারের আইকন হিসেবে এক কথায় জোহা পরিবারের কথাই উঠে আসত।

’৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশের মতই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তখন নিযুক্ত ছিলেন সুচতুর প্রফেসর আব্দুল বারী। তিনি ছাত্রদের মাঝে জোহা চাচার এই আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র আন্দোলন দমনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। জোহা চাচা যেহেতু ছাত্র-অন্ত প্রাণ তাঁর এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ছাত্রদের কল্যাণে নতুন অনেক কিছু করা হবে এমন আশ্বাস দিয়ে তিনি জোহা চাচাকে ১৯৬৮ সনের ১ লা মে প্রক্টর পদে নিয়োগ দেন। উপাচার্য বারীর শঠতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকায় বাবা বার বার তাঁকে এই পদ গ্রহণ না করতে পরামর্শ দেন। কিন্তু ছাত্রদের কল্যাণে যেখানে আত্মনিয়োগের সুযোগ তা ড জোহা ছাড়বেন কিভাবে? তখন কে জানত যে এই আত্মনিয়োগ অচিরেই আত্মোৎসর্গে পরিণত হতে চলেছে?

প্রক্টরের দায়িত্ব পালনে সদা ব্যস্ত থাকলেও গবেষণাতেও প্রচুর সময় দিতেন জোহা চাচা। তাঁর খেলোয়াড় পরিচয় ছাপিয়ে গবেষক পরিচয় বড় হয়ে উঠতে থাকে। অথচ বিকেলে ঠিক হাজির হতেন খেলার মাঠে… একদম নিয়মিত। যে কোন আড্ডার মধ্যমণি তিনি। প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকলেও দেশের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য কখনো বিস্মৃত হননি তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল স্বচ্ছ ও স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে প্রফেসর অজয় রায় যেমন লিখেছেন

“একবার ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় তিনি আমাকে বললেন, দেখ অজয়, পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। লড়াই করেই আমাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে। প্রথম চেষ্টা হবে একটা দূর্বল ফেডারেল কাঠামোর মাধ্যমে (যেমনটি বর্ণিত ছিল ৬ দফায়) আমাদের অধিকার আদায় করার চেষ্টা করা, তবে আমার মনে হয় না সেটা সম্ভব হবে। আর এটা না হলে আমাদের সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার না করে কখনো স্বাধীনতা অর্জন করা যায় না।“

প্রফেসর রায় জোহা চাচার এই স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য তাঁকে সতর্কও করেছেন, কিন্তু তিনি তাঁর সেই বিখ্যাত হাসির আড়ালে উড়িয়ে দিয়েছেন সব কিছু। প্রফেসর রায় তাঁকে বলেছেন

“যে পাকিস্তানী শাসকচক্র আমাদের স্বায়ত্বশাসনের দাবিকেই এমন সহিংসভাবে দমন করছে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা গুড়িয়ে দিতে তারা না জানি আরো কত ভয়ংকর হয়ে উঠবে।“

জোহা চাচা বলেছেন, “এই আন্দোলন গড়ে উঠবে রাজনৈতিক শক্তির নেতৃত্বে- ধীরে ধীরে – ধাপে ধাপে। বুদ্ধিজীবীরা এই আন্দোলনে তাদের নৈতিক সমর্থন জোগাবে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতার মাধ্যমে অবদান রাখবে সহযোগী শক্তি হিসেবে।“

আর ঘটলও ঠিক তাই, ড জোহা কেবলমাত্র তাঁর ভূমিকা নৈতিক সমর্থনের মাঝেই সীমিত রাখলেন না, সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের মধ্য দিয়ে হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ।

উত্তাল উনসত্তর! আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন দাবানলে রুপ নিচ্ছে। ২০ জানুয়ারী পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হলেন ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান খান আসাদ। এই অনলে ঘৃতাহুতি দিল ১৫ ই ফেব্রুয়ারী ‘৬৯ ঢাকা সেনানিবাসে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা এই মামলার তথাকথিত আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হকের হত্যাকান্ড। আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও। প্রতিবাদী ছাত্রেরা নেমে এল রাজপথে। স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হল, অবরোধ বসানো হল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে যা তখনো নাটোর রোড নামেই পরিচিত। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ সারা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করল। কিন্তু এই বাধা কি দমাতে পারে মুক্তি পাগল ছাত্রজনতাকে? শতশত ছাত্র সমবেত হল রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থল সাহেব বাজারে। তাদের সাথে যোগ দিল রাজশাহী কলেজ, সিটি কলেজ, কলেজিয়েট স্কুল, লোকনাথ স্কুলের শত শত ছাত্র। মিছিল রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনের কাছে পৌঁছতেই শুরু হয় পুলিশের নির্বিচার তান্ডব। আহত হয়ে লুটিয়ে পড়ে অনেক ছাত্র। খবর পেয়েই জোহা চাচা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে ছুটলেন শহরের দিকে, গাড়ি নিয়ে ছুটে এলেন বাংলা বিভাগের প্রধান প্রফেসর মাযহারুল ইসলাম (পরবর্তীতে রা বি উপাচার্য)। আহত ছাত্রদের দ্রুত নেয়া হল রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। আহত ছাত্রদের কোলে নিয়ে ছুটছেন জোহা চাচা। রক্তে ভিজে গেছে তাঁর শার্ট।

ছাত্রদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেই তিনি দ্রুত ফিরে এসেছেন ক্যাম্পাসে। সেদিন বিকেলেই রাবি’র ‘একুশ উদযাপন কমিটির’ বৈঠক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথারীতি সরকারে দালালি করতে শুরু করেছে। জোহা চাচাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু ততক্ষণে খুন চড়ে গেছে তাঁর মাথায়। রক্তভেজা জামা পর্যন্ত পাল্টানোর সময় জোটেনি তাঁর, হাজির হয়েছেন ‘একুশ উদযাপন কমিটির’ বৈঠকে। প্রফেসর মাযহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই বৈঠক তখন রুপ নিয়েছে প্রতিবাদ সভায়। হাজার হাজার ক্ষুব্ধ এবং ক্রুদ্ধ ছাত্র এসে জমায়েত হয়েছে সেখানে। এই সভাতেই এক আবেগময় বক্তৃতা দেন গণিত বিভাগের প্রফেসর হবিবর রহমান (মুক্তিযুদ্ধের সূচনা পর্বেই যাঁকে হত্যা করে পাক বাহিনী)।ক্ষোভে ক্রোধে ফেটে পড়েন জোহা চাচা। সেই উত্তাল জনসভায় তিনি এক আবেগপূর্ণ বক্তৃতায় তিনি বলেন,

“আমার শার্টে লেগে থাকা আমার প্রিয় ছাত্রদের এই রক্ত ছুঁয়ে আমি বলছি, আজ আমি অভিভূত, আজ আমি অনেক বেশি আশান্বিত। আজ থেকে আর কেবলমাত্র ছাত্রদের রক্ত ঝরবে না, প্রয়োজনে আমরা সবাই রক্ত দেব। আর যদি গুলি ছোড়া হয় তাহলে আমি কথা দিচ্ছি কোন ছাত্রের গায়ে একটিও গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে।“

আর ঠিক তাই ঘটল পরদিন সকালে, ১৮ ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯ এ।

১৭ ফেব্রুয়ারী সারা রাত থর থর উত্তেজনায় কাঁপতে লাগল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সন্ধ্যার পরপরই খবর এল পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নাটোর রোডে অবস্থান নিয়েছে। নাটোর রোড সংলগ্ন ছাত্র হলটি হল জিন্নাহ (বর্তমানে শের-ই-বাংলা ফজলুল হক) হল। ছাত্রদের সাথে পুলিশ আর সেনাবাহিনীর খন্ড যুদ্ধ চলতে লাগল। ছাত্ররা চোরাগোপ্তা হামলা করে পালিয়ে আসে হলে। জোহা চাচার আশঙ্কা হল যে সেই রাতেই সেনাবাহিনী হামলা চালাতে পারে হলে। তিনি ছাত্রনেতা সাইদুর রহমান খান (পরবর্তীতে রাবি উপাচার্য) সহ অন্য ছাত্রনেতাদের সাথে ঘন ঘন বৈঠক করলেন। তাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তাঁর ভয় কাটছে না, পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস কি? রাতেই যদি তারা হামলা চালায়। প্রায় বিনিদ্র এক রাত কাটালেন জোহা চাচা। বাসায় যাচ্ছেন, আবার ফিরে আসছেন হলে… বারবার… এভাবেই পার হল এক শ্বাসরুদ্ধকর রাত…

পরদিন ভোরের আলো ফুটতেই দলে দলে ছাত্ররা বেরিয়ে এসেছে পথে। তারা সমবেত হয়েছে নাটোর রোড সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে। উদ্দেশ্য ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে নাটোর রোড অবরোধ করা। সেনাবাহিনীর মূল দলটি অবস্থান নিয়েছে মুল ফটকের উল্টোদিকে বেতারের ট্রান্সমিশন সেন্টারের সামনের মাঠে। ততক্ষণে কিছু ছাত্র মূল ফটক পেরিয়ে নেমে এসেছে মহাসড়কে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার মাইকে সতর্ক করা হচ্ছে, আর এক পা এগুলেই গুলি ছোঁড়া হবে। রীতিমত যুদ্ধংদেহী অবস্থা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকঃ প্রফেসর মাযহারুল ইসলাম, প্রফেসর এম আর সরকার (পরবর্তীতে রাবি উপাচার্য), প্রফেসর হবিবর রহমান (শহীদ), ড কাজী আব্দুল মান্নান, ড কসিমউদ্দিন মোল্লা, অধ্যাপক আব্দুল খালেক (পরবর্তীতে রাবি উপাচার্য), অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক (অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী), অধ্যাপক আবু সাঈদ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী) এবং আরও অনেকে। আর বলাই বাহুল্য, আছেন জোহা চাচা। তাঁদের মাথায় তখন একটাই চিন্তা… ছাত্রদের নিরাপত্তা।

সেনাবাহিনী অস্ত্র তাক করে বসে আছে, ছাত্ররাও অনমনীয়, কেউই তাদের অবস্থান থেকে সরবে না। জোহা চাচা নিজেই এগিয়ে এলেন। সেনা কর্তাদের বললেন আমি ছাত্রদের বুঝিয়ে নাটোর রোড থেকে মূল ফটকের ভেতরে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তোমরাও সেনাদের বল তারা যেন রাস্তা থেকে সরে যায়। মনে হল একটা সমাধানসূত্র বের হল। জোহা চাচা সেনাদের সাথে কথা বলে ফিরে আসছেন ছাত্রদের কাছে… কয়েক পা এগোতেই পেছন থেকে গুলি… খুব কাছ থেকেই… লুটিয়ে পড়লেন জোহা চাচা… রাস্তায় অবস্থান নেয়া সেনারা তখন বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়ছে। প্রাণভয়ে শিক্ষকসহ অনেকে তখন রাস্তার পাশের খাদে যেখানে খড় গাদা করা ছিল সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন… অনেকেই গুলিবিদ্ধ। আহতদের জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ করতে খড়ের গাদায় আগুন দেয় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। জোহা চাচা পড়েছিলেন নাটোর রোডের ঠিক পাশেই, বেতার অফিসের গেটের সামনেই। তাঁর গুলির আঘাত কতটুকু মারাত্মক ছিল তা জানা যায় নি, তিনি বেঁচেই ছিলেন, কিন্তু হায়েনারা তাঁকে বাঁচতে দেবে না। ওই গুলিবিদ্ধ শরীরে তারা উপর্যুপরি বেয়নেট চার্জ করে। তাঁর ফুসফুস, যকৃত, পাকস্থলী ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। জোহা চাচা তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। না, প্রশাসনের কেউ আসেনি তাঁকে উদ্ধার করতে। যে ড জোহা নিজ গাড়িতে করে বহুবার অসুস্থ মানুষজনকে পৌঁছে দিয়েছেন হাসপাতালে, নাটোর রোডে তাঁর দেহ পড়ে থাকে আধাঘন্টা, কেউ আসেনি। তারপর খুনিরাই তার দেহ নিয়ে আসে- ফেলে রাখে মিউনিসিপ্যালিটির একটি কক্ষে। আহত হবার আড়াই ঘন্টা পর তাঁকে নেয়া হয় হাসপাতালে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তখনও তিনি জীবিত। ছিন্নভিন্ন দেহ নিয়ে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেছেন অদম্য এই যোদ্ধা। কিন্তু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ আর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাঁকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায় না ফেরার দেশে। অবসান হয় প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা এক মুল্যবান জীবনের। সৃষ্টি হয় নতুন এক ইতিহাসের।

কে জোহা চাচার হত্যাকারী? এক কথায় আইয়ুবশাহী আর তার আজ্ঞাবহ কোন এক সেনা কর্তা। কিন্তু কেন এই অন্ধ আক্রোশে তাঁকে হত্যা করা? তিনি তো ছাত্রদের ফিরিয়েই আনছিলেন। তাহলে কেন এই হত্যাকান্ড? অনেকের ধারণা তিনি যেভাবে সেনা কর্তাদের সাথে কথা বলছিলেন সেটা তাদের মনঃপুত হয়নি। একজন মাস্টারের এত সাহস তাদের সাথে তর্ক করে! কিন্তু একটা গুলিই যথেষ্ট ছিল, তবে কেন আবার বেয়নেট চার্জ করা? প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে গুলি ছোঁড়া আর বেয়নেট চার্জ করা ব্যক্তি একই। প্রফেসর আব্দুল খালেক তাঁর বিভিন্ন বক্তৃতায় হত্যাকারীর নাম ‘সম্ভবত ক্যাপ্টেন হাদী’ বলে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পাওয়া যায় সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাক এক বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তা লে কর্নেল এস এম আলীর লেখা থেকে। কর্নেল আলী এই হত্যাকারী অফিসারের নাম উল্লেখ করেছেন লে খাদেম শাহ হিসেবে। হত্যাকারী যেই হোক না কেন, তাতে কীই বা যায় আসে? আমরা তো হারিয়ে ফেললাম আমাদের এক সোনার মানুষকে।

জোহা চাচার এই আত্মত্যাগ বৃথা যায় নি। তাঁর এই শহীদ হবার ঘটনা বিদ্যুদ্বেগে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। যে সরকার একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যা করতে পারে, না তাদের সাথে আর নয়। রাজধানী ঢাকাসহ গ্রামে গঞ্জে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সারাদেশে ১৪৪ ধারা নয়, কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু অমিত শক্তি নিয়ে জেগে ওঠা মানুষকে নিবৃত্ত করার মত নৈতিক শক্তি ওই দুর্বৃত্তদের থাকার কথা নয়, ছিলও না। ১৯ ফেব্রুয়ারীতেই দেখা গেল বিক্ষুব্ধ মানুষের সামনে পিছু হটছে পুলিশ, ইপিআর, সেনাবাহিনীর নির্দেশ অমান্য করছে তারা অস্বীকৃতি জানাচ্ছে স্বজনদের বুকে গুলি চালাতে। ১৯ তারিখ দুপুরে ক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় আগরতলা মামলার বিচারকের বাসায়, প্রাণভয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে পলায়ন করেন। জনতা অগ্রসর হতে থাকে ঢাকা সেনানিবাসের দিকে। অবস্থা বেগতিক দেখে ফেব্রুয়ারীর ২০ তারিখে সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। মুক্তি পান শেখ মুজিবুর রহমান সহ অন্য সব বন্দি। জোহা চাচার মৃত্যুর মাত্র ২ দিনের মাথায় রচিত হয় আরেক ইতিহাস।

আমি জানি এতক্ষণে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। তবুও দুয়েকটি কথা না বললেই নয়। জোহা চাচার কোন স্মৃতি আমার কাছে নেই। বাবার কাছে শুনেছি আমাকে খুব আদর করতেন তিনি। ছোটবেলায় আমি খুব দুরন্ত ছিলাম (এখনি বা কম কিসে?)। বিকেল হলেই আমার মাঠে যাওয়া চাই… আর সেখানে অবশ্যই থাকবেন জোহা চাচা। আমাকে দেখলেই ঘাড়ে তুলে নিতেন
“এই যে মোল্লার ব্যাটা এদিকে আয়” বলে। বাবাকে বলতেন এই ছেলে আপনাদের ঘরে মানায় না, ও আমার বাসায় আসতে যেয়ে ভুল করে আপনাদের বাসায় চলে গেছে। আমাদের এলবামে জোহা চাচার দুটি ছবি ছিল। একটি বাবার সাথে জুবেরি ভবনের মাঠে পা ছড়িয়ে বসে থাকা। আর আরেকটি ছবিতে তিনি ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে। পরনে টেস্ট ক্রিকেটের সাদা পোশাক। হাতের ব্যাটটা মাটিতে ঠেকানো, পা দুটি আড়াআড়ি ভাঁজ করা, যেন ব্যাট দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করছেন নিজের। এর কারণ তাঁর ঘাড়ে বাঁদর ঝোলা হয়ে ঝুলছি আমি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ক্যাম্পাসের বাসা থেকে সর্বস্ব লুট হয়ে যায়, ঘটি বাটি সব… বুঝলাম সেগুলো কারো কোন কাজে এসেছে, কিন্তু তাই বলে ছবির এলবাম??? মুক্তিযুদ্ধে আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি, তার তুলনায় একটা ছবি এমন কিছু নয়… কিন্তু এটা যে আমার জোহা চাচার ছবি… আমার কিংবদন্তীর নায়কের ছবি!!!

জোহা চাচা আর বাবা একবছরেই জন্ম নিয়েছিলেন। পরিচয় অনেক পরে এসে, রাজশাহীতে… কিন্তু ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার এই নিবিড় সম্পর্ক কেমন করে গড়ে উঠেছিল তা আমিও জানি না, হয়তো জানতেন না তাঁরাও। আমরা ১৮ ই ফেব্রুয়ারী এলে তাঁর মাজার যাই, তাঁকে স্মরণ করি… আবার অনেকেই করি না… কিন্তু আমি জ্ঞান হবার পর থেকে দেখে এসেছি বাবা নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণের মাঝে জোহা চাচার কবর জেয়ারত করছেন। দোয়া পড়ছেন, তাঁর চোখ অশ্রুতে ভিজে উঠছে। যখন তিনি অসুস্থ, নিয়মিত বের হতে পারেন না, তখনও অন্তত জুমার নামজে যাবার আর আসার পথে জোহা চাচার জন্য দোয়া করতে করতে যেতেন। সেই ছেলেবেলা থেকেই যতবার তাঁর কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেছি মনের অজান্তেই বলে ফেলেছি, “আসসালামু আলাইকা ইয়া আহালুল কুবুর।”

আর আজ কিভাবে আমরা পালন করছি জোহা দিবস? এটি একটি ছুটির দিন, তাকে কি বাজে খরচের মাঝে ফেলা যায়? অনেক বিভাগের ছেলে মেয়েদের দেখি এদিন পিকনিকে যেতে। সাথে কিছু কুলাঙ্গার মাস্টারও আছে। এদের গালি দিতেও আমার রুচিতে বাধে। তাঁর স্মরণে যখনই কোন আলোচনা সভা হত, নতুন নতুন অনেক তথ্য বেরিয়ে আসত। আমাদের দুর্ভাগ্য হলেও এটাতো সত্যি যে সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা কালের অমোঘ নিয়মে আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন। আমি শিক্ষক সমিতির সভায় বারবার একটি দাবিই করে এসেছি যে ড জোহা সম্পর্কে যে যতটুকু যা জানেন, বিয়োগান্ত সেই দিনটির কথা যতটুকু যার মনে আছে দয়া করে সঙ্কলিত করে যান আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। কিন্তু আমাদের সময় কোথায়? আমরা তো ব্যস্ত আছি নিয়োগ বাণিজ্য আর এর ওর পশ্চাদ্দেশে পা চালানোর জন্য। হাল আমলে এটাও লক্ষ করেছি আমাদের কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী জোহা চাচাকে ‘মোল্লা গ্রুপের’ শিক্ষক বানিয়ে তাঁর চরিত্রে কালিমা লেপনের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীদের মত ঈর্ষাকাতর প্রাণী আমি জীবনে খুব কম দেখেছি। কিন্তু তাঁরা ভুলে যান যে শহীদ ড শামসুজ্জোহা শুধু ইতিহাসের অংশই নন, তিনি ইতিহাসের স্রষ্টা। তাঁকে তাঁর জায়গা থেকে এক ইঞ্চিও নড়ানো যাবে না, বরং ষড়যন্ত্রকারীরাই নিক্ষিপ্ত হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।

আজ ১৮ ই ফেব্রুয়ারী। ড. জোহা দিবস... রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'শিক্ষক দিবস'। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহার শাহাদত বার্ষিকী। ছাত্র-অন্ত প্রাণ এই মহান শিক্ষক '৬৯ এর সেই উত্তাল দিনগুলোতে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করতেন... ছাত্রদের নিরাপত্তাই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। মৃত্যুর ঠিক আগেরদিন বলেছিলেন, "কোন ছাত্রের গায়ে একটিও গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে"। তিনি তাঁর কথা রেখেছিলেন... কিন্তু আমরা কি পেরেছি তাঁকে যথোপযুক্ত সম্মান দেখাতে? যাঁর আত্মত্যাগ '৬৯ এর গণান্দোলনকে দাবানলে পরিণত করল, ত্বরাণ্বিত করল দেশের স্বাধীনতা... তিনি কেন বৃত্তাবদ্ধ হয়ে রইবেন কেবলমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে??? কেন 'শিক্ষক দিবস' যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে না সারা দেশ জুড়ে??? আর কতকাল এই এক দাবি নিয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে, মাথা কুটতে হবে ক্ষমতাসীনদের দরবারে??? শিক্ষক দিবস অমর হোক!!! জোহা চাচার বিদেহী আত্মা চিরশান্তি লাভ করুক!!!

পোস্টটি ২০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মেসবাহ য়াযাদ's picture


খুবই তথ্যবহুল প্রয়োজনীয় একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
লেখাটা বোধ করি দুবার চলে এসেছে একই সাথে। এডিট অপশনে গিয়ে দ্বিতীয় অংশটুকু সিলেকশন করে ডিলেট করে ফেলুন। তারপর আবার পোস্ট করুন...

শাপলা's picture


আমার বাবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তার মুখেই শুনেছি প্রথম ডঃ জোহার গল্প, তার বীরত্বের গল্প।

তবে একটা স্ম্বতি আমাকে খুব পীড়া দেয়, সেটি ডঃ জোহারা বোধ করি ৮ ভাই বোন এবং দু ভাইবোন সম্ভবতঃ অন্ধ। ওর একটা বোন যিনি ভাইবোনকে মানুষ করার জন্য আর কখনই বিয়ে করেননি। তিনি সম্ভবতঃ একটা কলেজে পড়াতেন।
মীরপুরের একটা বাড়িতে থাকতেন।
আমি যতদূর জানি, মানে নব্বই দশকের শেষের দিকে, ডঃ জোহার ভাইবোন খুব মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

প্লীজ আপনি কে ওদের পারিবারিক আরেকটু বিস্তারিত জানাবেন? কেমন আছেন ডঃ জোহার পরিবার?

আপনার লেখা এবং ডঃ জোহার প্রতি আপনার প্রক্বত শ্রদ্ধা দেখে সত্যি আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লাম।
পাশাপাশি আপনার বাবার জন্যও রইল শ্রদ্ধা।

স্বপ্নের ফেরীওয়ালা's picture


প্রত্যেক বছর শুনে আসছি... আজ ডঃ দোহা দিবস, ১৯৬৯ সালের এই দিনে...... । কিন্তু ওনার সম্মন্ধে জানার সুযোগ হয় নাই। ধন্যবাদ লেখাটার জন্য...এটা ছড়িয়ে পরুক সব দিকে...

পরবর্তী আমরাবন্ধু সংকলনে এই লেখাটা অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ রইলো

আর, লেখাটা পর পর দুইবার পেষ্ট হয়েছে মনে হয় ...সংশোধন করা হোক

~

নুরুজ্জামান মানিক's picture


candle.gif

জেবীন's picture


পড়তে পড়তে গায়ে কাটাঁ দিয়ে উঠছিলো। অনেক তথ্যবহুল একটা লেখার আপনাকে ধন্যবাদ, কিছই জানা ছিলো না এইসবের, কেবল নামটাই শুনেছিলাম ওনার।

ভাস্কর's picture


লেখাটা শুধু তথ্যবহুল না...গায়ে কাটার অনুভূতি দেয়। শামসুজ্জোহা স্যারের নামটার সাথে হয়তো আগেই পরিচয় ছিলো...কিন্তু প্রথম তারে নিয়া গল্প করতে শুনি আমা এইচএসসি পরীক্ষার প্র্যাক্টিকালের এক্সটার্নালের মুখে। সেইদিন ঢা.বিতে ছাত্রদল আর ছাত্রলীগের মাস্তানি চলতেছে। গোলাগুলি। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। সেইসময় উনি আমার ভাইবার সময় শুনাইলেন তার নিজের '৬৯ সালে জোহা স্যারের সাথে সেই মিছিলে থাকার অভিজ্ঞতার কথা...

এরপর আমি জোহাস স্যারের আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সাথে পরিচিত হইছি...তাদের সবার চোখে আমি একইরকম জ্বলজ্বলে ইতিহাস দেখতে পাই, একইরকম আবেগে তারা উদ্বেলিত হয়। কিন্তু এইসব মানুষ আমাদের আধাখ্যাচরা জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে প্রান্তিক হইয়া থাকে কেবল...

প্রদীপ্ত's picture


আমি শুধু শহীদ ডঃ জোহা সম্পর্কে এই অংশটুকু জানতাম- “আমি কথা দিচ্ছি কোন ছাত্রের গায়ে একটিও গুলি লাগার আগে সে গুলি আমার বুকে লাগবে” এতটুকুই উনার মনের তেজ দায়িত্ববোধ বোঝার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই শব্দগুলো মনে হতেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হত। আজ এই লেখা পড়ে সেই কিংবদন্তি মানুষটার ছবি আরো ভাল করে মনের মধ্যে একে রাখতে অনেক সুবিধে হল।

লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

লীনা দিলরুবা's picture


চমৎকার তথ্যবহুল লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।

রায়েহাত শুভ's picture


খুবই তথ্যবহুল একটা লেখা। পড়তে পড়তে সেই উত্তাল দিনগুলা চোখের সামনে দেখতে পাইতেছিলাম...
অনেক অনেক ধন্যবাদ...

১০

তানবীরা's picture


খুবই তথ্যবহুল প্রয়োজনীয় একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.