ছবি চুরির মুল্লুক!
প্রতিটা শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধার বহিঃপ্রকাশই যেকোন শিল্পকে বিমূর্ত করে তোলে। ফটোগ্রাফিও এমনই এক শিল্প যা ফটোগ্রাফারের ধৈর্য্য, মননশীলতার প্রতিচ্ছবি। যেকোন বিষয়, মূহুর্তকে ছবির মাধ্যমে অতি সহজেই উপস্থাপিত করতে আলোকচিত্র মূখ্য ভূমিকা পালন করে। আর সব শিল্প-সাহিত্যের মতোই প্রতিটি ছবির উপর থাকে আলোচিত্রীর একক সত্ত্বা। সারাবিশ্বেই যেকোন কাজে ব্যবহারকৃত ছবির কৃতজ্ঞতা প্রদানের মাধম্যেই সংশ্লিষ্ট আলোকচিত্রীর স্বীকৃতি দেয়া হয়ে থাকে। একজন আলোকচিত্রী কি পরিমান শ্রম, মেধা, সময়ক্ষেপন করে সাধারন একটি মূহুর্তকে অসাধারন রুপে ফ্রেমবন্দি করে সকলের কাছে আকর্ষনীয় এক ছবি উপস্থাপন করেন, তার ছবি ব্যবহারের সময় সে মানুষটার অনুমতি নেয়া অথবা তার প্রতি সামান্যতম কৃতজ্ঞতা প্রকাশেও অনীহা অনেকেরই। চৌর্য্যবৃত্তি সব শিল্প ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তবে বর্তমানে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা যেন চৌর্য্যবৃত্তিকেই এক অনন্য শিল্পে পরিনত করেছে। ইদানিংকালে যে কারুরই আলোকচিত্র অনেকেই নিজনিজ উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করে উল্লেখ করেন, "ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহকৃত"!! এ যেন হাওয়া থেকে পাওয়া মেওয়া, আবদার করতেই গুগল মামা সামনে এনে হাজির করছে!
এই চৌর্য্যবৃত্তির কাতারে কেবল অখ্যাত সংস্থারা সামিল তা ভাবলে ভুল জানা হবে। অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানই অবলীলায় চালিয়ে যাচ্ছেন এমনতর ঘৃণ্য কাজ। এই ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করে কদাচই সুফল পাওয়া যায়। তবে নিজনিজ ক্ষেত্র থেকে ভূক্তোভোগীরা প্রতিবাদ করে চলেছেন।
বেশ কিছুদিন আগে Samsung Camera Bangladesh নিজেদের এক ফটোগ্রাফি প্রতিযোগীতার প্রচারনায় অনুমতি ছাড়াই ফায়েক তাসনিম খানের ছবিটি ব্যবহার করে। মজার ব্যাপার হলো সেই ছবিটি 'নিকন ডি ৫১০০' দিয়ে তোলা হয়েছিল।
ভিন্ন ব্রান্ডের ক্যামেরায় তোলা ছবিকে ফটোগ্রাফারের অনুমতি ব্যতিরেকে অবলীলায় ব্যবহার করে দিলেন প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবাদ করার পর ক্ষমা চেয়ে ছবিটি সরিয়ে ফেলে তারা।
অনলাইনে এমনতর কীর্তি হরহামেশাই চলছে। তবে প্রিন্ট-মিডিয়াতেও বড় বড় প্রতিষ্ঠানরা পিছিয়ে নেই এহেন জোচ্চুরিতে। সনামধন্য প্রতিষ্ঠান 'ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ' তাদের উড়োজাহাজের ছবি সংবলিত ২০১৪ সালের সুদৃশ্য এক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে যার কেবল মাত্র চারটি ছবি বাদে সবই অনুমতিবিহীনভাবে ব্যবহারকৃত ছবি! এম, আজিজুল ইসলাম, কারিব আহমেদ, ফয়সাল আকরাম ইথার - তাদের ছবি চুরির মাধ্যমেই তৈরী করা হয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এবছরের ক্যালেন্ডার। ক'দিন পর হয়তো বিলবোর্ডেই দেখা যাবে চোরাই ছবি দিয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিজ্ঞাপন!
ফয়সাল আকরাম ইথারের তোলা ছবিতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ক্যালেন্ডারের মে মাসের পাতা।
স্পটার হিসেবে সুখ্যাতি প্রাপ্ত কারিব আহমেদ, ফয়সাল আকরাম ইথার দিনের পর দিন কষ্ট করে উড়োজাহাজের দুর্দান্ত সব ছবি তুলেন। বিমানবন্দরের কাটাঁতারের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে উড়োজাহাজের ছবি তোলার সুতীব্র নেশার আনন্দে কষ্টসাধ্য কাজটা করেন তারা। এমনি কষ্টের ছবি কেবলমাত্র ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত বলেই বেনামেই যে কেউ ব্যবহার করবে!
ফয়সাল আকরাম ইথার জানিয়েছেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করার পরও এই নিয়ে কোনরুপ প্রতিক্রিয়াই ছিল না তাদের, ক্ষমা প্রার্থনা তো দূরের কথা উলটো উড়োজাহাজের স্পটে গিয়ে ছবি তুলতে দেয়ার অনুমতি বন্ধ করে দেবার হুমকি পেতে হয়। ছবি চুরি নিয়ে বেশি মনোযোগি তারা, ছবি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সময় কই! এর আগেও অনুমতি ব্যাতিরেকে ইথারের ছবি ব্যবহার করে রিপোর্ট করেছিল বাংলানিউজ২৪, তাদের এডিটরকে জানানোর পর উত্তর আসে, "আমরা গুগল থেকে ছবিটি সংগ্রহ করেছি"! কি নিদারুন হাস্যকর যুক্তি! পরে প্রতিবাদের মুখে কেবল মাত্র ছবিটি সরিয়ে নিয়েছিল তারা ২/৩দিন পর।
গুনীর কদর করতে যারা ব্যর্থ হয় দিনে দিনে ভাল কাজ পাওয়া যোগ্যতাও হারায় তারা। এমনি একের পর এক নির্বিবাদে ঘটতে থাকা ছবি চুরির ঘটনা আলোকচিত্রীদের হতাশায় ফেলে ভাল কাজ করা থেকে বিমুখ করে তুলতেই পারে। আমাদের দেশে ছবি চুরি রোধকল্পে এ সংক্রান্ত কোন আইন কি বলবত করা সম্ভব নয়? এই সমস্ত ছবি চোরদের হাত থেকে আলোকচিত্রীদের কাজকে রক্ষার্থে কি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নেই? কাউকে তার কাজের প্রাপ্য সম্মান জানালে তো এক অর্থে নিজেকেই সম্মানিত করা হয়। এই সামান্য বিষয়টা বুঝতে তথাকথিত সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কতটা সময় লাগবে এটাই এখন দেখার বিষয়।
চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা, সব চোরই ধরা খায়!
সবরকমেরই চুরি এক না একসময়ে ধরা পড়েই, কেউ মনের দুঃখে, কেউ হতাশায় চুপ করে যায়, প্রতিবাদ করে চুরি ঠেকানো যায় না। কারুর মনে কষ্ট দিয়ে সাময়িক মজা পাওয়া গেলেও শান্তি যে পাওয়া যায় না এইটা অস্বীকার করা যায় না।
চুরির বিষয়ে কথা বললে অনেক কিছুই অবশ্য বলা যায়। সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের শতভাগ নেট থেকে গান, বই বা মুভি ডাউনলোড করে বিনা পয়সায়। তুমি বা আমিও কি চুরির দায় থেকে মুক্ত? ইন্টারনেটে যে যা কিছু করছে তার প্রায় সবকিছুই কোন না কোনভাবে চুরি হচ্ছে। চুরি ঠেকাতে সবার সচেতনতার পাশাপাশি নেটে কেনা বেচারও সুব্যবস্থা করা উচিৎ। নইলে সবাই চুরি করবে, সবারটা চুরি হবে।
কেনাবেচার সুব্যবস্থা কি করে হবে?
চোরেরা যদি সামান্য নাম দিয়ে কৃতজ্ঞতাই প্রকাশে আগ্রহী না হয়, কেনার বিষয় তাদের মনে আসা তো বহুদূরের বিষয়
আমার ল্যাপটপে ১৭ হাজার গান আছে যার ৯৫% চুরি করে নামানো
তুমি কি কোন প্রতিষ্ঠান, গানগুলা কি ব্যবসার কাজে ব্যবহার করতেছে সেগুলা? নাকি চুরি করে আর্থিক লাভবান হইতেছে?
কোনটাই না,
আর যারা চুরি দিয়াই প্রতিষ্ঠান চালায় তারা কি জাতের সেবাদানকারী হবে?
এটা জেনেও লোকে চুরি করে
"গুণীর কদর করতে যারা ব্যর্থ হয় দিনে দিনে ভাল কাজ পাওয়ার যোগ্যতাও হারায় তারা"
___একেবারে সত্য কথা বলছেন৷
মন্তব্য করুন