আইরিন সুলতানা'এর ব্লগ
চলে এসো ... এক বরষায়
মাজেদা খালা দু’তিন ধরে ক্রমাগত ফোন দিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কেঁদে চলেছেন। প্রতিবার ফোনে ঝাড়া দুই মিনিট কান্নার মাঝে ৩০ সেকেন্ড পর পর একটু বিরতি দিয়ে হিমুকে বলছেন, তুই ভাল আছিস তো? হিমুর মনে হচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলো টক টাইম নয়, ক্রাইং টাইমের উপর কলরেট অফার করছে। দিনের যে কোন সময় কল করে ২ মিনিট কাঁদলে কলরেট সর্বনিম্ন। শুধু মাজেদা খালাই নয়, খালাতো ভাই বাদলও ফোন দিয়ে চুপচাপ ধরে থাকল। তারপর বলল, আজ হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছি। বলেই ফোনটা টুস করে কেটে দিল। হিমুর মনে হল বাদল ফোন কেটে দিয়ে কাঁদছে। তাহলে কি বাদল অন্য কোন কলরেট অফার নিয়েছে!
কোন প্যাকেজে টকটাইম কী হিসেবে সেটা জানা হয়নি হিমুর। এখন পর্যন্ত রূপাই তার মোবাইলের ব্যালান্স ভরে দিয়েছে। হিমু দেখেছে ব্যালান্স থাকতে থাকতে কোনবারই তার রূপাকে কল করা হয় না। আর যখন রূপাকে কল করে, কল করা মাত্রই ব্যালান্স শেষ হয়ে যায়। রূপা কলব্যাক করে না তবে মোবাইলে ব্যাল্যান্স ভরে দেয়ার কাজটা রূপা নিজেই করে দেয়। রূপা অবশ্য জানে ব্যাল্যান্স শেষ না হওয়া অব্দি হিমুর কল আসবে না।
- হ্যালো...রূপা।
- এবার তোমার ফোনের ব্যাল্যান্স বেশ চলল তাহলে!
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নাগরিক সেবা কেন্দ্র থেকে বলছি। বলুন, আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি...?
এ্যাই, পল্টু! সিটিজেন সার্ভিস সেন্টারের নম্বরটা কত রে? ঘরে পা দিয়েই বিল্টু মামার হাঁকডাক।
আমি কাসুন্দি মাখা পেয়ারা কচকচ করে চাবাতে চাবাতে বলি, সেটা আবার কী?
ওই যে, তোরা কী যেন বলিস, কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার না কী! বলতে বলতে মামা বেসিনের কল ছাড়লেন।
ও! তাই বল। তা কোন অপারেটরের নম্বর লাগবে?
আমি মামার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মামা বেসিনের কলের দিকে। কল থেকে পানির বদলে ছর ছর আওয়াজ বার হচ্ছে। মামা কলের নব আরো ঘোরাতে পানি পড়ল। আঁজলা ভরে পানি নিতে গিয়ে ছ্যাঁ ছ্যাঁ করে উঠলেন তিনি।
এ কি রে ! এতো কাদাপানি মনে হচ্ছে। কেমন ঘোলাটে। লাল লাল! কি রে পল্টু? মামা এমন ভাবে আমার দিকে ফিরে কৈফিয়ত চাইলেন যেন আমি পানিসম্পদ মন্ত্রী!
আজ সকাল থেকেই এমন পানি আসছে এলাকায়। সাপ্লাই পানির লাইনে কোথাও কোন ফুটো হয়েছে মনে হয়। গত সপ্তাহ ধরে দেখছোনা রাস্তা খোঁড়া চলছে।
ফুউ!
১| [১৭ জানুয়ারি ২০১১]
চারমিনারটা জ্বলে জ্বলে নি:শেষ হয়ে এলে,
বারুদে মোড়া শলাকা ধরাই সময় পোড়াবো বলে!
২| [৮ আগস্ট ২০১১/১৫ আগস্ট ২০১১]
ছাইদানীতে দুঃখ ঝরিয়ে সুখটান মারি আয়েশে
স্বপ্নের কুণ্ডলিরা পাক খেয়ে খেয়ে ভাসে
স্বপ্নেরা ভাসমান
স্বপ্নেরা অধরা
বুকের পাঁজরে কতক্ষণ আর বন্দী থাকবে ওরা!
যতক্ষণ জলন্ত শিখা ততক্ষণ সাধ
ততক্ষণ বেঁচে থাকার সুতীব্র আহলাদ
ততক্ষণে পুড়ে পুড়ে যায় সুখ
হাড়ে হাড়ে হাড় ততক্ষণে ক্ষয় হয়েছে খুব
হাওয়ার পিঠে সওয়ার ধোঁয়ার বাহন
আঙ্গুলের খাঁজে শেষাংশের অটুট এখনো বন্ধন
বৃত্ত মাঝে পুরে নেই শেষ দহন
আর একবার
এই শেষবার
তারপর•••
ফুউ•••!
বিকালের নাস্তা: সিজলিং লাচ্ছা
সন্ধ্যা বেলা কী খাই ? কী খাই? দেখলাম আধ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই আছে। তাহলে এটাই রান্না করা যায়। আপনি ভাবছেন যে, এইটা যদি রেসিপি পোস্ট হয়, তাহলে নিশ্চয়ই আমি লাচ্ছা সেমাই রান্নার গৎবাঁধা ফর্মুলা দিতে যাচ্ছি । আরে না! মানে রেসিপিই দিচ্ছি। তবে ওই যে সব ঈদে কারো বাড়ি গেলেই এক বাটি ঘন দুধে থল থলে লাচছা সেমাই অথবা পানি পানি দুধে ভাসা ভাসা লাচ্ছা সেমাই রেসিপি না। এইটা বেশ সোজা রেসিপি। ম্যাগি নুডুলস এর মত কয়েক মিনিটে রান্না করতে পারবেন। আসেন, কথা কম, রান্নার বন্দোবস্ত বেশি!
উপকরণ:
ভূমিকা
রান্নাঘর
চুলা
আগুন
একটা ফ্রাইং প্যান, অথবা কড়াই
একটা ছোট পাতিল
পর্ব -১
লাচ্ছা সেমাই - হাফ প্যাকেট (মানে আমার কাছে এইটুকুই ছিল!)
তেল
পর্ব -২
পানি
তেজপাতা - ১টা
দারুচিনির দ্বীপ ...থুক্কু খালি দারুচিনি
এলাচ - ২টা
লং - ২/৩টা
চিনি
এই সব দিন-রাত্রি
***
কয়েকদিন আগের কথা। আসলে কয়েক সপ্তাহ আগের। রিকশায়। রিকশাওয়ালার কথার ভীষণ আঞ্চলিক টানে নাড়িতে টান পড়ল।
- দিনাজপুর না ঠাকুরগাঁও?
- ঠাকুরগা। বিগলিত হাসিতে রিকশা চালাতে চালাতে রিকশাওয়ালার উত্তর।
- নতুন নাকি ঢাকায়?
- এক মাস হয় আসছি।
কথায় কিছুক্ষণ বিরতি । যাত্রী আর চালক যে যার ভূমিকায়। তারপর রিকশাওয়ালাই কথা পাড়লো।
-১০ হাজার টাকা জমা করার জন্য আইশছিলাম। তে ৮ হাজার টাকা হইসে। ১০ হইলে বাড়ি যাম।
- আর আসবেন না?
- পনের দিন থাকিম ওইঠে।
- ১০ হাজার তো অনেক টাকা। এতো টাকা দিয়ে কী করবেন?
- তে সংসার চালাইতে কম টাকা লাগেহ!
- টাকা তো জমেছে। ওইটা বাড়ান এখন। গ্রামে ব্যবসা করেন। দোকান দেন।
- হ্যাএএ! কিছু একটা তো করবা হোবে।
আর খুব বেশি কিছু কথা হয়নি। ভাড়া মিটিয়ে আসার সময় চালক আর যাত্রীর মাঝে অবশ্য শুভ কামনা বিনিময় ঘটেছিল- ভাল থাকেন তাইলে!
***
রোদ-নাট্যম
আজ রোদের বুকে ঝাঁপ দেব
নিজেই নিজেকে শাপ দেব
পুড়ে যাক যাক
খাক হয়ে যাক
মাটির দেহে চৌচির চির
ইঞ্চি ইঞ্চি মাপ নেব
হাপর শ্বাসে দমে দমে
পোড়া মাটির ভাপ নেব
ধূসর চোখে ঠুলি মেরে
খুলির ভেতর ধূলি ঝড়ে
আলগা বাতাস হলকা হলে
মগ্ন ধ্যানে তাপ নেব
রোদের সাথে যুক্তি করে
কারাগারে মুক্তি পুড়ে
ভাগাভাগি পাপ নেব
খান্নাসের বিলোপ হলে
সন্তাপ আর বিলাপ ফেলে
নিংড়ে নিয়ে সূর্য ছটা
সূর্য স্নানের আলাপ হব
রোদের ভেতর ঝাঁপ দেব
রোদের বুকেই ঝাঁপ দেব
***
২৪শে এপ্রিল ২০১১/২৫শে এপ্রিল ২০১১
একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি
আমি নেই।
আমাকে পাওয়া যাচ্ছে না কিছুতেই।
শেষবার যখন দেখা গিয়েছিল তখন আমার হাতে ছিল নীল প্রজাপতি
পায়ে চাপ চাপ কাদা, মেঠো পথের
বয়স হরিণ চপল
গায়ে রংধনু বর্ণ
তারপর উবে গেছি
গুম হয়ে গেছি
বলা নেই কওয়া নেই।
আমি নেই
আমাকে যাচ্ছে না পাওয়া কিছুতেই।
খোঁজকেরা দেখে নেয় পেঁজা মেঘ সরিয়ে
যদি ছেলেখেলা করে আড়ালে থাকি লুকিয়ে!
আমাকে গেল না পাওয়া ঘাসের গোড়াতেও
কৃষ্ণচূড়ার ডালে,
সাম্পানের পালে,
ঝিনুকের খোলে,
আমি নেই!
আমাকে পাওয়া যাচ্ছে না কিছুতেই।
আর কোথায় কিভাবে হারায় কেউ?
জানে না ওরা।
অভয় ঘোষনায় জোর প্রলোভন চলে। বলে,
পৃথিবী কে মুড়ে শব্দ খাতার মলাট করে দেবে সত্যি সত্যি ···
আমি ফিরি না তবু ।
আমি বামপন্থী আলাপে নেই
ডানপন্থী মেজাজে নেই
ওরা আমাকে পেল না খুঁজে কোনভাবেই।
অবশেষে,
খোঁজ থেমে আসে।
স্বজনের অশ্রু মুছে গেছে ওই গণ্ডদেশে।
”তোমার ব্লগ এতো হিট কেন?”
আমি বলছি না চুপচাপ ব্লগ পড়ে গেলেই চলবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার পোস্টে মন্তব্য দিক
শুধু পোস্টের হিট বাড়াবার জন্য
বার বার রিফ্রেশ করতে করতে মাউস প্যাডটা নষ্ট
আমি বলছি না কেবল মন্তব্য দিলেই হবে, আমি চাই
কেউ একটা প্লাস দিক। আমি সিঙ্গেল নিকে
কাউকে মন্তব্য করার জন্য বলছি না।
আমি জানি এই ইন্টারনেটের যুগ
ব্লগারদের মুক্তি দিয়েছে মাত্র একটি নিকে ব্লগানোর দায় থেকে
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক, আমার কাউকে ’ট্যাগিং’ করা লাগবে কিনা
ক্যাচাল পোস্টকে উস্কে দিতে আরো একটা
রিভার্স গেম লাগবে কিনা
ছোটখাট খোঁচাখুঁচি, লাল বাটনে টিপ আমি নিজেও করে নিতে পারি
আমি বলছি না আমাকেই লগইন করতে হবে, আমি চাই
কেউ একজন কমন নিকের পাসওয়ার্ড দিয়ে ব্লগে
লগইন করুক, কেউ আমাকে তাদের ’মালটি নিক’ -টাও দিক
আস্তিক-নাস্তিক সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক, ”তোমার ব্লগ এত হিট কেন?”