স্বপ্নবিলাসী বৃষ্টিবিলাস......২
অরণ্য-রুধির স্বপ্নের সাঁকো
অতঃপর শুরু হল অরণ্য-রুধির স্বপ্নের সাঁকো তৈরির অদম্য বাসনা। একবার বৃষ্টিতে অরণ্যের সাথে হুড খোলা রিকশায় ভিজতে পেরে তার আনন্দ যেন ধরছিলই না। সেটা ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখস্মৃতি। এই কথাটা তার সাথে এক ছাদের নিচে কাটানো তিন বছরে কম করে হলেও তিনশোবার শুনতে হয়েছে অরণ্যকে।
রুধি ছিল স্বপ্নবিলাসী মেয়ে। সে কল্পনায় তার ভবিষ্যৎ জীবনের ছবি আঁকতো। আর তার সেই কল্পনার ক্যানভাসে অরণ্যের উপস্থিতি ছিল অনিবার্য। অরণ্য মাঝে মাঝে রুধিকে বলতো, “তোমার ছবিগুলো খুবই নিচুমানের...একঘেয়ে। সব ছবিতে একই চরিত্রের উপস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
রুধি তখন কপট রাগ দেখিয়ে বলতো, “হুমম...এই এক চরিত্রেই আমি খুশি...”
বিয়ের তিন বছরের মাথায় রুধি একদিন অরণ্যকে ষড়যন্ত্রের ভঙ্গিতে বলে, “এই শোনো...আমার কল্পনার ক্যানভাসে অন্য একজনকে আঁকতে শুরু করেছি...তুমি রাগ করো নি তো?”
-“রাগ করবো কি, আমি তো তোমার কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না...”
রুধি এবার দু’হাতে অরণ্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, “আজ মা এসেছিল...আমি যদি কিছুদিনের জন্য মায়ের বাসায় থাকি, তুমি কি রাগ করবে?”
রাগে অরণ্যের গা জ্বলছিল, “এটাই তাহলে তোমার উদ্দেশ্য ছিল! মায়ের বাসায় যাওয়া...ইনিয়ে বিনিয়ে এ কথা বলার জন্যই এত ছলাকলা...”
কিন্তু এর পরপরই রুধি অরণ্যকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ খুশির সংবাদটা শুনিয়েছিল। অরণ্য বাবা হতে যাচ্ছে...। সংবাদটা শোনার পর অরণ্য খুশিতে রীতিমতো পাগল হয়ে গিয়েছিল।
অনাগত সন্তানকে নিয়ে শুরু হলো রুধির জল্পনা কল্পনা। ছেলে হবে কি মেয়ে হবে? ছেলে হলে কি নাম রাখবে? মেয়ে হলে কি নাম রাখবে? দেখতে কার মতো হবে? কাকে বেশি ভালোবাসবে? বাবাকে না মাকে? এমনকি সন্তানকে নিজের পছন্দমতো বিয়ে করার অনুমতি দেবে বলেও ঠিক করে রেখেছে রুধি। রাজ্যের খেলনা কিনে ঘর ভরিয়ে ফেলেছিল। বাচ্চাদের জামা কিনতো দুই সেট করে। এক সেট ছেলের, এক সেট মেয়ের। অরণ্য রুধির এসব পাগলামি খুব উপভোগ করতো।
একসময় রুধির মা এসে রুধিকে নিয়ে গেলেন। অরণ্য প্রতিদিন অফিস শেষে রুধিকে দেখতে যেতো।
ডাক্তারের পরামর্শে ডেলিভারির এক্সপেক্টেড ডেটের আগেই রুধিকে হসপিটালে ভর্তি করানো হলো। ডাক্তার বললেন, নরমাল ডেলিভারিতে একটু রিস্ক আছে। সিজার করাতে হবে। অরণ্য রাজী ছিল, কিন্তু বাদ সাধলো রুধি। অরণ্যের কানের কাছে মুখ এনে রুধি ফিশফিশিয়ে বললো, “সিজার করলে যে পেটে একটা দাগ হয়ে যাবে! তাতে আমাকে আর তোমার আগের মতো ভালো লাগবে না...”
-“ধুর পাগলী...তোমার আর আমার সন্তানের জীবনের চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না...”
অবশেষে রুধি রাজী হয়েছিল। শুরু হল ওটি রুমের পাশে ডাক্তার আর নার্সদের পায়চারি। রুধির মা ওটি রুমের বাইরে দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন। আর অরণ্য করছিল পায়চারি। অজানা ভয়-আশঙ্খা-আনন্দ এলোমেলো করে দিচ্ছিল অরণ্যকে। হঠাৎ ওটি রুম থেকে দুজন নার্স প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে এলেন। কি একটা হাতে নিয়ে আবার দৌড়ে ভেতরে ঢুকে গেলেন। নার্সদের এই ব্যস্ততা অরণ্যের হার্টবিট আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণ পর ওটি থেকে বেরিয়ে এলেন এক ডাক্তার। তাঁকে খুব বিধ্বস্ত লাগছিল। এক প্রকার জোর করেই হেসে বললেন, “সবকিছু আল্লাহ্র হাতে...”
ডাক্তাররা খুব প্রাকটিক্যাল হয়। তারা যখন বলবেন সবকিছুই আল্লাহ্র হাতে...বুঝতে হবে অবস্থা ক্রিটিক্যাল। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল...অরণ্য একটুও অস্থির হচ্ছিল না। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিলো। অরণ্য ধীর পায়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। যেন অরণ্যকে নিজের ভেতর থেকে কেউ বলে দিচ্ছিলো ওটি রুমে কি হচ্ছে।
অতঃপর... একাকী অরণ্য......
রুধি ওটি রুমেই মারা গিয়েছিল। বাচ্চাটাকেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অরণ্যের জীবন এখন ছন্নছাড়া। জীবিকার তাগিদেই এই চাকরিটা সে করছে। নয়তো পথে পথে ঘুরতো। যার জন্য কেউ অপেক্ষায় থাকে না...তার ঘরে ফিরে লাভ কি?
অরণ্য পেছনে তাকিয়ে দেখলো বাচ্চা ছেলেটা এখনো আছে। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে বললো, “নে...এটা তোকে দিলাম...”
ছেলেটা অবাক হয়ে অরণ্যের দিকে তাকিয়ে ছিল...তারপর মোবাইলটা নিয়ে খুশিতে দিল এক ছুট। কুকুরটাও তার পেছন পেছন ছুটলো। আবার একা হয়ে গেল অরণ্য। আকাশের দিকে তাকালো...। চোখে মুখে বৃষ্টি পড়ছে...। রুধি মারা যাওয়ার পর অরণ্য কাঁদেনি। কিন্তু আজ চোখের পানি বাঁধ মানছে না। কৌতূহলী পথিক হয়তো ভাবছে...এক পাগল বৃষ্টিবিলাসে মেতে উঠেছে। অরণ্য বুক পকেট থেকে রুধির বিয়ের আংটিটা বের করে দেখছে...। আংটিটা চিকচিক করছে আর স্বপ্নবিলাসী রুধির ভালোবাসা বৃষ্টি হয়ে ঝরছে.........
আমার সৌভাগ্য দ্বিতীয় অংশটা সবার আগে পড়তে পেরেছি । অসাধারন গল্প হয়েছে । জীবন কারো হাতে বাধা নয় । প্রতিনিয়ত এমন অনেকের ভালোবাসার মানুষ কে দূরে চলে যেতে হয় । তাই বলে অরন্যের পথ চলা থেমে থাকে না । নিয়মিত লিখবেন আশা করি ।
ইয়ো...আপনি ফার্স্ট হয়েছেন
) 
ইনশাল্লাহ লিখবো...দোয়া করবেন।
ধন্যবাদ নেন
ভালো থাকবেন
আপনে পাজি আছেন!
রুধিরে মাইরা ফেললেন,
অরন্যের আল্লায় কইরব আমনের বিচার!হুহ..
তাড়াহুড়া করে শেষ করে দিসেন মনে হল।
আর পজিটিভ ইনডিং দিলে কি দোষ হত শুনি?!
রুধি জুনিয়রের কি হপে?!
হিহিহিহি...পাজি লাবনী
>)
রুধিকে মেরে ফেললাম বলে মাফ করে দেন ভাই
রুধি জুনিয়রের ব্যাপারটা এক্ষুনি গল্পে টুকে দিচ্ছি।
এক কেজি ধইন্যাপাতা নেন বিষণ্ণ ভাই :ধইন্যাপাতা:
অতি চমৎকার। কিন্তু তাড়া ছিল নাকি কোন?
বেশি তাড়া হয়ে গেলো, আপি?


রুধির জন্য সহানুভূতি
লেখা চমৎকার হইছে...
অসংখ্য ধন্যবাদ টুটুল ভাই।
ভালো থাকবেন, সাথে থাকবেন
দুই পর্ব একসঙ্গে পড়লাম। অ-সা-ধা-র-ণ লাগলো।
জলদি আরেকটা গল্প দেন।
অ-নে-ক ধন্যবাদ মীর ভাই।
পাঠে কৃতজ্ঞতা।
ভালো থাকবেন
থ্যাংকস তানবীরাপু।
ভালো থাকবেন।
দুই পর্ব একসঙ্গে পড়লাম। অ-সা-ধা-র-ণ লাগলো।
জলদি আরেকটা গল্প দেন।
জেনে ভীষণ খুশি হলাম প্রিয় আপু।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন।
দুঃখিত মায়াবতী কন্যা
মন্তব্য করুন