ইউজার লগইন

লীনা ফেরদৌস'এর ব্লগ

রাজকন্যা

IMG_3227 (Small).JPGসে ছিল দুরের এক নক্ষত্র
যেন মায়াবী এক কল্পলোক !
এক দুখিনী মা তার আটপৌরে ঘরে
রোজ রাতে বসে বসে
জোনাকির ইন্দ্রজালে দোলনা বুনতো।

তবুও মাঝে মাঝে অদ্ভুত একটা কষ্ট
স্যাঁতস্যাতে স্যাওলার মত
সেই মায়ের বুকের ভেতরটা ভিজিয়ে দিত
আঁধারের উষ্ণ অনুরাগে ফুঁপিয়ে ওঠতো সে
তার ঘর, উঠোন, বিছানা
বুকের ভেতরটায়- ছিল এক সমূদ্রের শূন্যতা ।

মাঝে মাঝে সেই শূন্যতার সমূদ্র হত উত্তাল
সাইক্লোন বা সুনামী থেকেও ভয়ংকর,
ভয়াবহ বিস্ফোরণ-
দুখিনী মা তলিয়ে যেত বেদনার অতলে
বিষাক্ত সরিশৃপেরও চেয়েও
বেশী বিষ ধারণ করেছিল সে তার মাতৃত্বে।

একদিন, মেঘ পরীরা আকাশ থেকে
ফেলে দিল এক টুকরো মেঘ
দুখিনী মায়ের ছেঁড়া আঁচলে,
মমতার চাদরে মেঘটিকে কোলে তুলে নিতেই

মাসকাবারী জোছনা

boimela 2010 205 (Small).jpgও চাঁদ তোমার মাসকাবারী জোছনা আমায় দাও
গৃহস্হলীর চাতাল ছূঁয়ে হেঁসেলখানা
দিয়াশলাই নাই উনুনখানা জ্বালিয়ে দিয়ে যাও ।

ও চাঁদ তোমার মাসকাবারী জোছনা যদি দিতে
ছড়িয়ে দিতাম আটপৌরে ফিকে চা-তে
আগুন বাজার, মাসকাবারী লিষ্টি হাতে
ভাতের হাড়ি ক্ষুধার জ্বালা
চড়ুই ছানা ঘুলঘুলিতে
বারান্দাভর আমের আচার শুকিয়ে দিয়ে যাও ।।

ও চাঁদ তোমার মাসকাবারী জোছনা বেঁচে
মাস্ত জুয়াড়ীর জুয়ার আসর মাতিয়ে দেব
মধ্যরাতে মদ্য মাতাল নিশিপদ্ম
তার আঁচলে স্বর্ণচাঁপা ফুল ফুটাব।

মাসকাবারী জোছনা নেব তোমার কাছে
আরোও নেব, আর যা আছে
রুগ্ন শিশুর দুধের বাটি ভরিয়ে দেব
আমারতো নেই কানাকড়ি, ভাঙ্গাচোরা
শেষ ট্রেনেতে তাই চেপেছি, ছন্নছাড়া
বিষন্নতার শহর ছেড়ে

সে রাত

সে রাতে চন্দ্রমল্লিকায় কোন গন্ধ ছিল না
যেন লাশ কাটা ঘরে সাদা চাদরে মোড়া নিস্তব্ধতা
জোছনার কাফনে ঢাকা চাঁদ -
লোকালয়ে লোকালয়ে লোবানের মহোৎসব
মৃত ফুলেদের সাথে ছিল ফুলশয্যা।

সে রাতে বৃষ্টির উচ্ছাসে ছিল প্রিয় গান
পেখম ছড়ানো অতীত
মেথীর মাদকতায় আতরের ঘ্রাণ
করতলে মেহেদীর ঘা
হাজারো ফাটল ধরা জীবন সিড়ি।

সে রাতে অতন্দ্র প্রহরী চোখ রেখেছিল বাঁধি
জলে ভিজে স্বপ্নেরা চুড়াচুড়
আগুনে লেলিহান দেহমন
স্মৃতি পারাপার নদী ভাটার টানে
বয়ে চলে প্রতিমা বিসর্জনে ।

সে রাতে চাঁদ ছিল, ফুল ছিল
স্বপ্ন ছিল, অশ্রু ছিল
বৃষ্টি ছিল, আগুন ছিল
লাল বেনারসির কফিনে ছিল নিথর দেহ।

বিশেষ ভাবে এই দিনটি পালন করার কি বিশেষ কোন প্রয়োজন আছে !

calendar pic -2008 042 (Small).jpg

মাধুর্য্যময়

আমার জীবনটা এখন মাধুর্য্যময় । মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভাংলো, শুনি বাচ্চার কান্না, দেখি মাধুর্য্য বিছানায় নাই। কি ব্যাপার! কোথায় সে! দেখি ওর বাবা যে দিকে শোয়, সেই পাশের মশারীতে ঝুলছে। তার বাবা কুম্ভকর্ণের মত ঘুমিয়েছে, মেয়ে যে তার গায়ের ওপর দিয়ে পড়ে গেছে সে খবর তার নাই। মেয়ের তারস্বরে কান্না শুনে সে ও ঘুম ভেঙ্গে হতভম্ভের মত বসে রইল। আমি ছুটে যেয়ে মেয়েকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলাম। খুব ভয় পেয়ে গেছে মেয়ে। একটু পর কাঁদতে কাঁদতে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। এভাবে সারারাত ঘুম আর হয় না, প্রায় জেগেই থাকি বলা যায়। ঘুমের মাঝেও সারা বিছানা তার বিচরণ। কখন আবার কি ভাবে পড়ে যায় কে জানে? এরকম উৎকন্ঠায় সারারাত ঘুম আর হয় না আর, প্রায় জেগেই থাকি বলা যায়। হয়ত একটু চোখ লেগে গেছে, হঠাৎ টের পাই আমার ঠোটের উপর সজোরে কি যেন এসে পড়ল, ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলাম। উহ!

মা

তীব্র মাঘের যন্ত্রণা তবু ভালবাসার ওম
সাদা পালক ছুঁয়ে গেছে
আমার জন্মলগ্নে? নাকি জন্ম জন্মান্তরের
সাদা বালিহাঁস ছিলে মা?

তোমার সদ্য কৈশোর পেরুনো দুহাতে
ছোট্ট এ হাত ছুঁয়ে ছিলে তুমি?
পিদিমের আলোয় কেঁপেছিলে তুমি?
মনে নেই মা
কিছূই মনে নেই। ।

সাদা মোমবাতি, সাদা তুলো, খুব সাদা ভিজে ন্যাতা
অসংবৃত রাত্রিতে প্রথম আলো-
ছোট্ট হৃদপিন্ড দেখে কেঁদেছিলে তুমি?
নারীর বন্ধন ব্যাথায় হেসেছিলে তুমি?
মনে নেই মা
কিছূই মনে নেই ।

আজ আরো একবার
তোমার আঁচলে খুঁজে পেতে চাই
সাদা পালকের ওম
তোমার পাঁজর ছুঁয়ে হতে চাই
স্রোতস্বিণী ফেনীল চিৎকার। ।।

অপার্থিব

আমাদের ছুঁয়ে থাকে রুপালী চাঁদ
আমাদের ছুঁয়ে থাকে জোছনার নিঁখুত বুনন,
আবছায়া সুখটুকু -
শুধু ছুঁয়ে থাকে আমাদের।

ছুঁয়ে থাকে লালপেড়ে অধরা বসন্ত
কুয়াশায় ভেজা ভেজা কষ্ট
অদ্ভুত এ আঁধার ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকে
ছুঁয়ে থাকে নিমিত্ত জীবন।

ছুঁয়ে যায় চমকানো মেঘ বিদ্যুৎ
ধমণী ছুঁয়ে শিরায় শিরায়
কি যেন আমাদের শুধু ছুঁয়ে যায়
ছুঁয়ে যায় আমৃত্যু হৃদয়।

আমাদের কেবলই ছুঁয়ে ছুঁয়ে থাকা
প্রাণের সাথে প্রাণ -
পার্থিব এই হাত শুধু একবার
ছুঁতে চায় অপার্থিব তোমায়।

এক একদিন

এক একদিন ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করে
প্রেম পুরাণ লিখব বলে
প্রেম পোড়ানো কালি
নিজের গায়ে মাখতে ইচ্ছে করে ।

এক একদিন তোমার কথা ভেবে
আমি রাধি না, চুল বাঁধিনা,
নাই না, খাই না
বৃষ্টিরা নেচে চলে চোখের পাতায়
জলের দ্যোতনা ছুঁয়ে ভাবি
একটুও কি আমায় ভালবাস না!

এক একদিন খুব ভালবাসতে ইচ্ছে হয়
শঙ্খ ডানায় রোদ হয়ে ভাসতে ইচ্ছে হয়
রোদ এসে ছুঁয়ে গেলে
আমি মেঘ হয়ে যাই
মেঘ-রোদ সন্তরণে
মেঘ লীনা হতে ইচ্ছে হয়।

এক একদিন খুব মরতে ইচ্ছে করে
শ্মশান চিতায় জ্বলতে ইচ্ছে করে
ময়ূখী মন পেখম পোড়ায়
আগুনের ফাগে হোলীর পরব
অনেক সুখে তোমাকে পোড়াতে ইচ্ছে করে।

বিষন্ন বিবমিষা

একটি অবসন্ন সন্ধ্যার আবাসান এই ঘরে
হেলায় ফেলায় পড়ে থাকে কবিতার খাতা, বইপত্র
পোড়া সিগারেট, ছাই, দিয়াশলাই কাঠি যত্রতত্র
কলের টিপ টিপ জলে, রূপোলী রেকাবে
জানালার কার্ণিশে বিষন্ন বিবমিষা ।

হঠাৎ ঘর ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করে
ভীষন পালাতে ইচ্ছে করে
খসে যাওয়া পালকের মত
বসন্তের মত
বড় পালাতে ইচ্ছে করে।

পথে নেমে দেখি
মসৃণ রাজপথে বিষাদের লালা,
সবুজ বনভূমির শেকড়ে শেকড়ে নীল নীল নৈরাশ্য
উদাত্ত নদীর বিবর্ণ ছেঁড়া পালে
কোথাও কোনো লাল-হলুদ ফুলে
বেগুনী-বিষন্ন রেনু।

ভোরের সোনালী রোদের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে হতাশা
মেঘের সাথে মেঘের বিষাদের শিৎকার
উঠোনে ছড়ানো ছিটানো নৈরাশ্যের জ্যোৎস্না
ঈগলের খয়েরী ডানায়
পূর্ণতায় কিম্বা অপূর্ণতায়
চেনা চেনা চোখের তারায়
স্বপ্নের মত বিষন্নতা।

চেনা শহর ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করে
ভীষন পালাতে ইচ্ছে করে
বিষাদে ছেয়েছে আকাশ, পুড়েছে মাটি

টিপটিপ বৃষ্টির গল্প

গেট থেকে বের হয়ে ঘড়ি দেখল টিপটিপ, এমা ! প্রায় সোয়া নটা বাজে, ক্লাশ দশটায়! এই অফিস আওয়ারে রাস্তায় যা জ্যাম, নির্ঘাত আজ ক্লাশে ঢুকতে পারবে না। নিশাত জামান ম্যাডাম যে কড়া, চোখের দিকে তাকালেই ভয়ে গলা বুজে আসে আর কিছু বলার সাহস থাকেনা, কি জানি ক্লাশে ঢুকতে পারবে কি না, এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ছুটে গলি থেকে বের হবার সময় গলির মাঝখানে গিয়ে স্যান্ডেলটা ছিঁড়ে গেল টিপটিপের।

আজ মেঘলীনা মাধূর্য্যর প্রথম জ়ন্মদিন !

madhurjo May 2010 052 (Small).jpg

মেঘলীনা মেঘলীনা
মেঘের দেশের কন্যা
এক বছরের মেঘ আমার
ছড়ায় খুশীর বন্যা।

উড়ুউড়ু মেঘের সাথে
মেঘলীনার খেলা
মেঘের ফেনা গায়ে মেখে
কাটে সারা বেলা।

মেঘের গায়ে আঁকে ছবি
কী তার রং আর তুলি
মাঝে মাঝে তাই যে দেখি
রঙিন মেঘগুলি।

মেঘলীনা মেঘলীনা
মেঘবতী কন্যা
সবার ভালবাসা পেয়ে
মায়াবতী ধন্যা।

আজ মাধূর্য্যর প্রথম জ়ন্মদিন, দেখতে দেখতে আমার মেয়েটার এক বছর হয়ে গেল। সবাই ওকে অনেক অনেক দোয়া করবেন যেন সে খুব ভাল একজন মানুষ হতে পারে।

মনের গল্প

nababarsho 1418 265 (Small).jpg

আমার দেহ আমার এ মন
একলা আমি ওরা দুজন !

ঠিক তাই ! প্রকৃতির মত ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া আমার এ অবুঝ মন, কখন যে তার কি হয় বোঝা মুশকিল। কখন যে তার বয়স বাড়ে আর কখন যে কমে তা আমি একদমই বুঝতে পারিনা। তার সাথে তাল মেলাতে যেয়ে আমি মাঝে মাঝে বেতাল হয়ে যাই।

এইতো ধর সেদিন পরিবারের এক গাদা পিচ্চি নিয়ে গেলাম ফ্যান্টাসী কিংডম। টিকেট কেটে চড়ে বসলাম রাইডগুলিতে, পিচ্চিগুলির সাথে মনটাও আমার পিচ্চি হয়ে গেল। আমার এই দেহটা কি আর সব সময় সে ধাক্কা সামলাতে পারে। সারাদিন মাস্তি করে গায়ে হল ভিষণ ব্যাথা, কিন্ত মন ! সে তো ওই পিচ্চিদের মত নির্মল আর সতেজ থাকল!

নিজের সম্পর্কে লিখুন - ১

আমরা বন্ধু ব্লগের ব্লগাররা তাদের নিজেদের সম্পর্কে কি বলেছেন আসুন দেখি, আর তাদের সম্পর্কে পড়ে পাবলিকের মনে তৎক্ষনাত কি প্রতিক্রিয়া হয় - আসেন সেটাও দেখি ;

Laughing out loud
ভাস্কর- মনে প্রাণে আমিও হয়েছি ইকারুস, সূর্য তপ্ত দিনে গলে যায় আমার হৃদয় -
ভাই এদ্দিনে বুঝলাম আপ্নে কেন দিনের বেলা ঘুমাইয়া কাটান ( জনগণের কাছে থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা জানি যে আপনি সারাদিন ঘুমিয়ে কাটান) : গলা হৃদয় গলে যাওয়া আইস ক্রিমের মতই আকাইম্মা, কেউ নিতে চায় না। আপ্নের দিনের বেলা বাইর হওয়া ঠিক না। ( এদ্ভাইস- ভাইজান হৃদয়্টা দিনের বেলা ফ্রিজে রেখে দিলেও পারেন )।

Laughing out loud
সামছা আকিদা জাহান-যতবার আলো জ্বালাতে চাই নিভে যায় বারেবারে,
আমার জীবনে তোমার আসন গভীর আন্ধকারে।

আপা তাইলে হুদাহুদি ম্যাচ বাত্তি পুরান কেন? তয় আফনে একবার না পারিলে দেখ শত বারের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

Laughing out loud

বৃষ্টির গন্ধ

উৎসর্গঃ আহমাদ মোস্তফা কামাল ভাইকে, যার “বৃষ্টি, বৃষ্টি বিলাস, বৃষ্টি কোলাজ” লেখাটা পড়ে আমারো লিখতে ইচ্ছে হল

আমার তখন ১৬ বছর বয়স, কিন্তু তখনো শিশুর মতই রাগ করতাম। একদিন বাবার সাথে রাগ করে ভাত খাইনি, শুতেও যাইনি, আমার ঘরের লাগোয়া বারান্দায় বসে ছিলাম। হঠাৎ রাতে মুষল ধারে বৃষ্টি এল, সে যে কি বৃষ্টি ! কি আর বলব ! একদম আকাশ ফাটা বৃষ্টি ! মনে হচ্ছিল গোটা দুনিয়াটা তলিয়ে যাবে আজকের বৃষ্টিতে। আমি ভিজে যাচ্ছিলাম কিন্তু তবুও ঠাঁয় বসে রইলাম, মনে মনে ভাবলাম ভিজলে ভিজব, তবুও আজ রাতে শোব না, সারারাত এভাবে ভিজে ভিজে যদি জ্বর হয় তবে খুব ভাল হবে, আমার বাপের উচিত শাস্তি হবে ইত্যদী ইত্যাদী।

অবাঞ্চিতের অশ্রুগাঁথা

উৎসর্গঃ মেসবাহ য়াযাদ ভাইকে রক্ত দিয়ে যিনি মানুষের পাশে থাকেন।

চাকরী সুত্রে আমাকে কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ করতে হয় আমাদের পাওয়ার প্লান্টের আশে পাশের গ্রামগুলিতে, অবশ্য আমি নিজেও এই কাজে অনেক আনন্দ পাই। গ্রামের এই অসহায় মানুষের মুখে একটু হাসি ফোটাতে পারলে আমার ভাল লাগে। মাঝে মাঝে ভাবি কাজ করেতো সবাই বেতন পায়, সম্মান পায় আর তার সাথে আমি একটা বাড়তি কিছু পাই তা হল -অসহায় মানুষের মুখের একটু হাসি।