এলোমেলো ভাবনার বক বকানি ।
অনেক দিন কিছু লিখি না । কিছুই না । শেষ গল্পটা বোধ হয় মাসখানেক আগে লেখা । আর কবিতা কবে লিখছি মনেই নাই । পরীক্ষা শেষ, তাই নোট লেখার ঝামেলাও নাই । গল্প যে লিখব, মাথা খালি থাকলে কি গল্প লেখা যায় । মাথা পুরা জ্যাম হয়ে আছে । গল্পের প্লট আসে তো কিভাবে সাজাবো সেটা আসে না । বিরক্তিকর একটা অবস্থা । কিছু মানুষের লেখার স্টাইল মন দিয়ে লক্ষ করি । তারা এই ব্লগেরই সবাই । কি অনায়াসে তারা সবাই লিখে যাচ্ছে । লেখা পড়ে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না ।
*
একজন লোকের নাম অনেক আগে জানতাম । তাকে দেখি নাই কখনো । লালমনিরহাটের লোক সে । উনি নিজের লিটল ম্যাগ পাঠাতেন আমাকে, আরো অনেককেই । অনার্সে ভর্তি হওয়ার আগে প্রায় দুই বছর লিখছি ওই ম্যাগাজিনে । হঠাৎ সেইদিন ধানমন্ডিতে পিচ্চিদের একটা প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে ওনার নাম শুনি । কিন্তু মুখ না চেনার জন্য কাছে যেয়ে কথা বলতে পারি নাই । তাকে আমার ধন্যবাদ জানানোর ইচ্ছা ছিল । সেই যুগের আমার চরম কাঁচা কবিতাগুলো উনি কত যত্ন করে ছাপতেন । দুই একমাস পর পরই নিজের কবিতা দেখতাম ওই লিটল ম্যাগে । নিজের ভুলগুলো ধরা পড়তো চোখে ।
একটু উঠে যেয়ে যে ওনাকে খুঁজে বের করবো, সংকোচের ঠেলায় পারলামই না । নিজের মাথার চুল ছিড়তে মন চায় । সবার মত সহজ হতে পারি না কেন?
*
বারান্দায় একটা বাটিতে কিছু চাল রেখেছিলাম । ভাবলাম, চড়ুইদের সুবিধা হবে । দূরে গিয়ে খাবার খুঁজতে হবে না । কিন্তু এখন দেখি তেনারা এমন আইলসা হইছেন যে, বারান্দার গ্রীল থেকে নড়েনই না । গ্রীল নোংরা করে । আর বারান্দার উপরে যে স্টোর রুমের মত আছে সেইখানে বিশাল কলোনি গড়েছেন । অনেক চড়ুই এক জায়গায় । সকালে শুরু হয় রাগ ভৈরবী । সারাদিন চলে বিভিন্ন রাগ । এখন এমন হইছে, মায়ার ঠেলায় বাটিটা নিয়ে আসতে পারি না । উলটা কিছু চাল নতুন যোগ করি । এরা এমন বদ, অন্নদাতার ধার ধারেন না । কাপড়ে টয়লেট সারতে খুব মজা লাগে উনাদের ।
আমাদের বাড়িতে একরকম পাখি আসে, গাঢ় সবুজ রঙ । ফল খেয়ে গাছ সাফ করে দেয় । পাখিটা টিয়ার মত দেখতে হইলেও টিয়া না । কি জানি নাম । আমার ভাই দূর থেকে ওই পাখির বর্ণনা দেয় । কিভাবে সে আব্বুর হাত থেকে একটা পাখিকে রক্ষা করেছিল । কিভাবে ওই পাখি চালাকি করে ফল খায় ।
এইবার সেই পাখিকে দেখলাম পুকুর পাড়ে আমলকি গাছের ডালে বসা । পাখিটাকে দেখে মনে হল, শয়তানি বুদ্ধিতে মাথা ঠাশা । ফলের উপরদিক থেকে খায় । আর আমরা সেটাকে আস্ত ফল ভেবে গাছ থেকে নামাই । পরে বোকা হয়ে হাসতে থাকি । খিক খিক ।
একদিন অবশ্য ভাই বলে যে, শুধু কি মানুষই খাবে গাছের ফল? কি আরাম...... না? ওদেরও সমান ভাগ আছে এইসব ফলমূলে, মনে রাইখো ।
বাগানে অনেক উচুতে দুইটা কাকতাড়ুয়া বসাইছে আব্বু । কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমার পিচকু চাচাতো ভাই তন্ময় একটারে বলে আব্বু আর একটারে কাক্কু । খিক ।
মানুষ তো আসলে কাকতাড়ুয়াই, ও জানে নাকি? সবাই সবার অর্থ আর সম্পদ থেকে ক্রমাগত অন্যকে তাড়ায় ।
*
মামাতো বোন লামিয়া আসছিল কয়দিন আগে । ওর নাচের প্রতিযোগিতা ছিল ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে । ওর পাকনু পাকনু কথায় সবাই বেশ মজা পায় । এমন পাকনা যে, নিজের মেকআপ নিজেই করে । ওর থেকে একটা থিওরী পাইলাম নর্তকি বিষয়ক ।
সে বলে, সে নাকি জীবনেও বিয়ে করবে না ।
কেন?
যারা নাচে তাদের বিয়ে হয় না ।
কেন? তাদের বিয়ে হয় না কেন?
কারণ তারা মৃত্যুর পরেও নাচ করে ।
ওহ, তাতে কি?
হুম, তারা আসলে মৃত্যুর পরে রাজাদের সামনে নাচ করে । তাই তাদের বিয়ে হয় না ।
ওহ আল্লাহ তাই নাকি? কিন্তু যারা রাজাদের সামনে নাচে তারা তো বাঈজী, তাই না ।
হায় হায় বাঈজী বলবা না, নর্তকি বলো ।
ও নর্তকি, না? স্যরি আপুনি ।
এই মেয়েটার কথার কোন শেষ নেই । ওদের নাচের অনুষ্ঠানে একটা ছেলে নাচতে আসছিল । লামিয়া তার নাম দিছে টাইট বডি ।
*
নাচ শেষে আমরা বঙ্গবন্ধু’র বাড়িতে যাই । সেখানে গেলে বুকের মধ্যেটা কেমন শূন্য হয়ে আসে । সব কিছু দেখতে দেখতে যে কেউ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়বে সন্দেহ নাই । একদিন এই বাড়ির সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলা হয় । লামিয়া চোখ বড় বড় করে দেখছিল । আপু এইটা কি? ইনি কে? বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে কখন যে চোখে পানি চলে আসছিল আচমকা । গুলির আঘাতে আহত বই, দরজা, সবকিছু সাক্ষ্য দিচ্ছিল একটা নারকীয় দিনের । মুজিবের রক্তাক্ত পাঞ্জাবী দেখে ওর সামনে দাঁড়ানো যায় না ।
মনে হচ্ছিল পুরো বাড়ি জুড়ে রক্তের ঘ্রাণ এখনো প্রেতাত্মার মত হাওয়ায় উড়ছে । আমরা বেশিক্ষন থাকি না সেইখানে । মামি দুই একটা ছবি কেনে ছোট্ট দোকান থেকে । তারপর চলে আসি । আসলে পালাই ।
মাঝে মাঝে মনে হয় , আমরা একটা নড়বড়ে জাতি । এ সোজা করে, ও বাঁকা করে । এ নাচায়, ও থামতে বলে ।
*
কালকে রাত্রিরে মনে হয় বছরের প্রথম বৃষ্টি হইছিল । আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলতেছিলাম । আম্মু বলল যে, আরে ঝড় শুরু হইছে । তোগো কি অবস্থা? আমি বললাম, আকাশ মেঘলা কিন্তু ঝড়বৃষ্টি নাই । বলে, ফোন রাখার পর পরই শুরু হইল তুমুল বাতাস । আমি আর একটু হইলেই ধাক্কা খাইতাম দেয়ালে । অল্প একটু বৃষ্টি হইছিল । তাতে গাছের পাতায় জমা ধুলার রাশ কমে নাই । আমগুলা অযথা টুপটাপ করে ঝরে পড়ল ।
একটা সিনেমা দেখলাম, ভয়ের । এক মহিলা মৃত বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর তাকে গুডবাই বলেনি । পরে সেই বাচ্চা ভূত হয়ে ফিরে আসে । অনেক পরে, সিনেমার শেষদিকে মহিলা উপলব্ধি করে, তার সন্তান চায়, মা বাবা তাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গুড বাই বলুক । মহিলা বলে । ভৌতিক কার্যকলাপ শেষ হয়ে যায় এর ফলে ।
সিনেমাটা হলিউডের উচ্চমানের সিনেমা না । কিন্তু তারপরো ওই কথাটা মনে দাগ কেটে যায়, বিদায় বলাটা জরুরী । শুভ বিদায় বলতে হয় যারা চলে যায় তাদেরকে । অন্তত ওইপার বলে যদি কিছু থাকে তো তারা সেখানে খুশি মনে চলে যায় ।
আহা লিজা মেয়েটা কি ভালো লেখেরে! পড়তে বড়ই আরাম লাগে। কত কি লিখছে কোন টা ছেড়ে কোনটা বেছে নেই? জ্বালায় ফেললো, লিজা বড্ড ভালো লেখে।
আমারও এমন এলোমেলো বহুত বকবকানি জমে আছে। সময় করে লিখতে হবে, নাইলে মাথা'র ভেতর গিজ গিজ করে
চড়ুই'দের কাহিনী'টা বেশি মজার
লিখে ফেল দোস্ত । তোর ঘটনা বর্ণনা করার দারুণ ক্ষমতা আছে ।
আমার বারান্দার ভেন্টিলেটরেও চড়ুই পাখি থাকে। এ নিয়ে একটা বিষয় লিখতেও চেয়েছিলুম। যাক আপনি লিখে দিয়েছেন। এখন আর কিছু করার নেই। লেখা চমৎকার লাগলো।
আমি লিখছি আমার প্রতিবেশী চড়ুইদের কথা, আপনি আপনারটা লেখেন ।
। আর আপনি আরো ভালো করে ওদের বর্ণনা দিতে পারবেন । প্লিজ লেখেন ।
nope
ওহ, মীর ঢং বাদ দিয়ে জলদি একটা পাখি ব্লগ লিখে ফেলেন । নাইলে মাইর (আপনে কি আমার ছোট?)
প্রতিবার দেশ থেকে আসার সময় এটা মনে হয়, কার কার কাছ থেকে চির বিদায় নিলাম
লেখা অপূর্ব হয়েছে
আমার মনে হয় যখন আব্বু আম্মুর কাছে থেকে ঢাকায় চলে আসি তখন ।
লেখাটা ভালো লেগেছে কিন্তু সবচেয়ে ভালো লেগেছে এই দুইটা লাইন।
বিদায় বলাটা আসলেই জরুরী ।
চমৎকার এই লেখাটা প্রথম পাতায় দেখছি না কেন?
আমার নিজের ভুলে
। বানান ঠিক করে প্রকাশ করুন এ ক্লিক করার সময় বক্স এর টিক উঠায় দিছিলাম 
মন্তব্য করুন