আলোর ঝর্ণাধারা
নভেম্বরে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, সময় যায় না কেন । অপেক্ষার প্রহর এত দীর্ঘ কেন? আমি যার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তার আসার কথা ছিল জানুয়ারিতে । একটা একটা দিন পার করছিলাম, যেন এক একটা যুগ । মনে হচ্ছিল ২০১২ সালের জানুয়ারি বোধহয় আর এ ধরাধামে আসছে না ।
তার সাথে কথা বলার উপায় নেই, তাঁকে দেখার উপায় নেই । শুধু তাঁকে অনুভব করি দিনরাত । তাঁকে বলি, জলদি এসো ............... আমি বড় অধৈর্য । সে একটু আধটু নড়ে বুঝি সান্ত্বনা দেয় আমায়, আসছি আমি ............... সময় হলেই ঠিক এসে পড়ব, একটু ধৈর্য্য ধর ।
অজানা শঙ্কা, উৎকণ্ঠা, কি হবে? কেমন হবে? কত কি যে ঘটে যায় মনের ভিতর । সে যে আসলে কে, এই আধুনিক যুগে সেটা আগেভাগে জানা কোন ব্যাপার না । অনেকেই জেনে নেয় । তবে আমি জানতে পারিনি । একটা ঘৃন্য বৈষম্যমূলক আচরণের জন্যে কিছু ক্ষেত্রে আগেভাগে বলে দেয়াটা এখন অপরাধের পর্যায়ে পড়ে গেছে । এই ব্যাপারটা অনেক হাসপাতালে কঠোরভাবে মেনে চলা হয় ।
আমি তাই জানতে পারিনি , সে কে । তাই বলে আমার মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়নি । আমার জানার দরকারও ছিল না । আমি বহুবছর ধরে যার স্বপ্ন দেখতাম , যার ছবি কল্পনায় ঘুরত ফিরত সবসময় । আমি জানতাম আমার ইশ্বর তাকেই উপহার দেবেন আমায় । কেন জানি না একটা ধারণা হয়ে গিয়েছিল, যে আসবে সে আমার মতই হবে । তাই তার জন্য নাম খুঁজতে থাকি । মনে হয়, পৃথিবীর সবচে সুন্দর নামটা যেন তারই হয় । ইন্টারনেটের প্রসিদ্ধ অপ্রসিদ্ধ সব নামের ওয়েবসাইটগুলো তন্ন তন্ন করে খুঁজি একটা সুন্দর নামের জন্য । পছন্দের লিস্ট বড় হতে থাকে । একসময় মনে হয়, পৃথিবীর সব নামই সুন্দর । কারন সব নামই কোন না কোন শিশুর, কোন মানুষের ।
ও আসে না কিন্তু ওর নাম রাখা হয়ে যায় । আমি মনে মনে ওকে ডাকি, আমার অরিত্রা । কিন্তু সেটা শুধু আমিই । অন্য সবার ডাকের জন্য ওর তিন শব্দ বিশিষ্ট নাম ঠিক হয় । আমরা সব কিছু ঠিকঠাক করে ওর জন্য অপেক্ষা করি ।
অবশেষে সে আসে । জানুয়ারির ৬ তারিখে সে অনেকটা নীরবেই আসে । সে আমাকে একবিন্দুও ব্যাথা দেয় না । আমরা সবাই তার জন্য চিন্তা করি । স্বাভাবিক প্রকৃয়ায় আসার মত সুস্থ সে নয় । তাই তাঁকে আসতে হয় ডাক্তারের ছুড়ি কাচির ধার ঘেঁষে ।
কান্নাও যে মধুর হতে পারে, আগে বুঝিনি । ওর প্রথম কান্না আমার জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটা । অপারেশনের টেবিলে শুয়ে কারো ভালো লাগার কথা না । নানারকম বাজে অনুভূতিতে, শারিরীক ব্যাথায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকতে হয় । কিন্তু সেই সবকিছু ধুয়েমুছে যায় তার আগমনী বার্তায় । তার ছোট্ট লাল টুকটুকে মুখ দেখার পর পৃথিবীর সবচে শ্রেষ্ঠ জিনিসটি দেখে ফেলার অনুভূতি হয় । অক্ষর সাজিয়ে সাজিয়ে সেই অনুভূতি প্রকাশ করা সম্ভব নয় ।
সে এলো । আমি দেখলাম পুরো দৃশ্যপটটাই পালটে গেলো তার আসাতে । আমার জীবন একরকম ছিল । অনেকটা নিরব আর নির্জন । সেটা আর সেরকম থাকলো না । অপার্থিব, স্বর্গীয় কোলাহলে ভরে উঠল আমার চারিপাশ । একটা নতুন মানুষ, একটা ছোট্ট বাচ্চা এখন আমার । সম্পুর্নই আমার ।
আজ তার দুইমাস হল । কিভাবে যে এই ৬০ দিন পার করেছি, ঠিক মনে করতে পারবো না । কারন যে সময় আমার কাটছিলই না একদিন । সেই সময় এখন আলোর গতিতে পার হচ্ছে । তার সঙ্গে তাল মিলানোই মুশকিল হচ্ছে আমার । ক্লাশ, পরীক্ষা, বাজার, ঘুরতে যাওয়া সবকিছু বাতিল । এখন শুধু তার জন্য আমি । ঘরে থাকতে আগেও ভালো লাগত কিন্তু এখন ঘর থেকে বের হতেই ইচ্ছা হয় না । আমার মেয়ের বড় হবার প্রতিটা মুহূর্তের সঙ্গী হতে ইচ্ছা করে ।
জানি একদিন ও বড় হয়ে যাবে । কত ঘটনা ঘটবে আমাদের জীবনে । আমরা এতটা ঘনিষ্ঠ থাকবো না আর পরে । নতুন কত কিছু ঘটে যাবে আমাদের চারিপাশে । তবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময় হয়ে থাকবে ওই দুইমাস । ডিসেম্বর আর জানুয়ারি । গর্ভে ওর শেষ মাস আর ওর আসার পরে একমাস একটা ঘোরের মধ্যে থাকা ............এই দুইমাস । শুধু ওই নয় । এই দুইমাস বহুদিন পর মা বাবার আদরে যত্নে রাজকন্যা হয়ে থাকা । সত্যি একটা অসাধারন সময় কেটে গেলো । যেটা আর হয়তো ফিরে পাবোনা ।
গত প্রায় এক বছর আমি কোথাও যাইনা । তবে আমার কাছে আসতে কিন্তু ভুল করেনি আমার বন্ধুরা । আমার দোস্ত (নাজ), আমার বন্ধু প্লাস কাজিন তানিয়া এইদুজন যেদিন আসত আমরা প্রায় সারাদিন শুধু গল্প করতাম । এছাড়া ফেইসবুক তো আছেই । সেখানে বন্ধুরা অনলাইনে মেসেজে, ওয়ালে সবসময় কাছে থাকার চেষ্টা করতো । ওদের প্রতিটি কথা, অনুপ্রেরনা আমাকে সাহস জুগিয়েছে । এছাড়া সেই পাগলী মেয়েটা, নিশি । নার্সিংহোমের একঘেয়ে অপেক্ষার সময়টাতে সে ছিল হাসানোর ওস্তাদ । এই এক বছরে আমি আমার অজস্র আত্মীয় আর পুরনো বন্ধু যেন নতুন করে ফিরে পাই ।
আমার মেয়ে আমার জীবন রাঙিয়ে দিয়েছে । এই আমাকেই বদলে দিয়েছে সে । ও হ্যা, ওর নাম দিয়ানা নাযিয়াত দোয়া ।
প্রথম কমেন্ট
সে এসে গেছে, তাকে সুন্দর একটি পৃথিবী উপহার দেই আমরা।
অনেক শুভকামনা লিজা পরিবারের জন্য।
দোয়া মনি'টার জন্যে অনেক অনেক শুভকামনা!
লাল্টুকুকে দুষ্ট হাসির ওই ছবিটা দিও।
সিরিজটা তবে এদ্দিনে শুরু করলা,
বড় হোক বাবুনিটা আমাদের আদরে ভালোবাসায় 
ওলে বাবালে, কি কিউট ! শুভেচ্ছা।
দোয়ার জন্য অনেক অনেক দোয়া এবং আদর। আপনাদের জন্য শুভকামনা। আনন্দআলোর এই ঝর্ণাধারা বহমান হোক সবসময়।।
ওলেএএএএএ..মাশাআল্লাহ...অনেক আদর আর ভালোবাসা সোনামণির জন্য...
সব শুভ কামনা এই ছোট্ট সোনাটার জন্য।
দোয়া-র জন্য দোয়া।
আপনার বাবুটা অনেক ভাল থাকুক।
দিয়ানা নাযিয়াত দোয়ার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
ওরে গুল্লু পুচকুটা... অভিনন্দন মা কে...
সবার দোয়া কবুল হোক। আমাদের দোয়া মামনি সুস্থতায় সাচ্ছন্দে অনেক বড় হয়ে উঠুক। লিজা'পু কে অভিনন্দন।
পরীটার জন্য আদর।
============
দোস্তের গার্লফ্রেন্ডের ছবি দিয়ে নিয়মিত পোস্ট দিবেন।
ওয়াউ আপু,কংরেটস, দোয়া অনেক বড় হবে,একদিন বাবা মার সব স্বপ্ন পূরণ করবে,মানুষের মত মানুষ হবে এই দোয়া করি।
ধন্যবাদ সবাইকে
দোয়া আম্মুর জন্য অনেক অনেক দোয়া
এটা জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় উপভোগ করো লিজা ।
মা মেয়ে দুজনের জন্যেই অফুরন্ত শুভকামনা রইলো
মন্তব্য করুন