ইউজার লগইন

বিশ্বকাপ শর্টনোট (২)

জাপানীরা জার্মানদের সম্পর্কে একটা টার্ম ব্যবহার করা হয়, "গেরমান-দামাশি", যেটার অর্থ ইংরেজীতে দাঁড়ায় জার্মান-হার্ট বা জার্মান-সোল; বাংলায় বলা যায়, জার্মান-বুকের-পাটা। এই জার্মান-দামাশির যে বৈশিষ্ট্যটায় জাপানীরা মুগ্ধ সেটা হলো, "কোন অবস্থাতেই হাল না ছাড়া।" অবশ্য গতকালের ম্যাচে হাল ছাড়া বা না ছাড়ার কোন পরিস্থিতি হয়নি। তারপরও প্রসঙ্গটা টানি, বিশ্বকাপে সবচাইতে দৃঢ় এ্যাটিচিউড নিয়ে খেলে জার্মানী। সেটার প্রতিফলন গতকালের ম্যাচে কিছুটা হলেও টের পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া দলটি একেবারে খারাপ না, প্রথম লেগে অঘটন ঘটালে জার্মানীর সাথে অস্ট্রেলিয়াই ঘটাতে পারে, ভেবেছিলাম। কোথায় কি? একেবারে উড়িয়ে দিলো, জার্মান স্ট্রাইকাররা যেন নিজেদের ঝালিয়ে নিলো একে একে।

আলজেরিয়া অসাধারণ খেলছিলো, শুধু ফিনিশিংটা ভালো হচ্ছিলোনা স্লোভেনিয়ার দেয়ালের মতো ডিফেন্সের জন্য। তারপরও আমি বলবো, গেজালী লাল কার্ড পাওয়ার আগ পর্যন্ত খেলার চাবি আলজেরিয়ার হাতে ছিলো। গেজালীর লাল কার্ডটাই তাদের খেলাটিকে নষ্ট করে ফেলে, তারপর জাবুলানির আশীর্বাদে স্লোভেনিয়া জয়ও পেয়ে গেলো। হয়তো লালকার্ডটা আলজেরীয় দলকে এবং বাকি সব খেলোয়াড়কে এই পরিস্কার মেসেজটা দেবে যে খেলাকে হালকা চালে নেয়ার কিছু নেই, বিশেষ করে একটা হলুদ কার্ড গিলে ফেলার পর তো অবশ্যই। তবে রিবেরীর মতো একেবারে চিমসে গেলে সেটাও বিরক্তিকর। আর ঘানা জিতেছে যোগ্যতর দল হিসেবেই। অন্ততঃ তিনটা গোল তাদের পাওনা ছিলো। ম্যাচের একেবারে শেষদিকে তো আসামোয়াহ জ্ঞ্যান গোলে বল পুশ করে উল্লাসও শুরু করে দিয়েছিলেন, যদিও বল বারে লেগে বাইরে চলে যায়। আসামোয়াহ জ্ঞ্যান আর ১৩ নং জার্সির খেলোয়াড় (নামটা ইয়েও টাইপের কিছু হবে) অসাধারণ খেলেছে। ঘানা দলটা নিয়ে আশা বেড়েছে।

এখন পর্যন্ত আফ্রিকান দলগুলো সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল খেলছে, এই ডিফেন্সিভ ফুটবলের যুগেও গ্রুপ লীগের প্রথম ম্যাচেই ছোট পাসের ছন্দময় খেলা, অধিকাংশ সময় ধরে অর্ধেকের বেশী খেলোয়াড়কে উপরে রেখে আক্রমণ চালানো -- এসবের সাহস তারা দেখিয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ গতকালের ঘানা আর আগের দিনের দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয়ার্ধের খেলা মন কেড়েছে। এবার রেফারিং খুব কড়া মনে হচ্ছে, টিম কেহিলের লাল কার্ড পাওয়াটা সমর্থন করতে পারলামনা। সার্বিয়ারও যে ডিফেন্ডারকে লাল কার্ড দেয়া হয়েছে তাঁর দ্বিতীয় ফাউলটিতে হলুদ কার্ড না দিলেও চলতো। বিশেষ করে যখন সে একটা হলুদ পেয়ে বসে আছে তখন। আমার মতে এই নিয়মটা রাখা উচিত, একটা হলুদ কার্ড পেলে পরের হলুদকার্ডের সময় রেফারী খানিকটা কনসিডারেশন নিতে পারবেন, যেমন কার্ড দেখানোর আগে চেক করা এই খেলোয়াড় আগে হলুদ কার্ড পেয়েছে কিনা।

ওয়ার্ল্ড কাপে গোলের সংখ্যা নিয়ে এখনও হতাশ নই, এটা ধীরে ধীরে বাড়বে। গ্রুপলীগের প্রথম ম্যাচে সবাই "না হারার" ব্যাপারে বেশী সতর্ক থাকে। ধীরে ধীরে "না জিতলেই নয়" -- এমন সিচুয়েশন তৈরী হতে থাকবে অনেক দলের জন্য, গোলের সংখ্যাও তাতে বাড়বে, দুইদিকেই। তাছাড়া অফিশিয়াল বল জাবুলানি মশাইও সেরকমই চাচ্ছে, গোলের ভেতরে ঢোকার বড়ই খায়েশ তার। বলটি বাউন্স করছে খুব উঁচুতে, এবং লম্বা গড়ানো শটেও মাটিতে পড়ার পর এর গতি বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিকভাবে। অলরেডী ইংলিশ আর আলজেরীয় গোলকীপারকে কাঁদিয়েছে, আরো অনেককেই কাঁদাতে পারে। বিশেষ করে এবার মনে হচ্ছে যত বেশী মাটি ঘেঁষা লংশট নেয়া যাবে, তত বেশী আচমকা গোলেরও স্বাদ পাওয়া যাবে।

পোস্টটি ৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নুশেরা's picture


খেলা দেখার ইচ্ছা এখনও হয়নি এবার তবে আপনার নোটস দারুণ উপভোগ করছি

নড়বড়ে's picture


কন কি! আমি দেশে চলে আসলাম খেলা দেখার জন্য আর আপনে দেশে থাইকা একটা খেলাও দেখেন না ... Shock

জ্বিনের বাদশা's picture


আপনে বিশ্বকাপ দেখতে দেশে চলে গেছেন!

নড়বড়ে's picture


হা হা ... তা না আসলে ... ছুটিতে দেশে আসছি, বিশ্বকাপের টাইমটা ব্যাটেবলে মিলে গেছে আরকি Party

জ্বিনের বাদশা's picture


সত্যি বলতে কি, বিশ্বকাপ আসার আগে যতটা উচ্ছাস নিয়ে কয়েকদিন কাটাইছি, শুরু হওয়ার পর টের পেলাম সেই বয়েসটা আর নাই। Sad ... সেইজন্য পোস্ট-টোস্ট দিয়া একটু জমানোর চেষ্টা আর কি Wink
তাছাড়া আবহও নাই, গিন্নীরও খেলা দেখায় উৎসাহ নাই (খালি আর্জেন্টিনারটা দেখছে Wink)। চার বছর আগেও বয়েস খুব একটা কম ছিলোনা, তাও ইউনিভার্সিটি ডর্মে অন্ততঃ ৫০টা দেশের শ'দুয়েক মানুষ একসাথে হৈ-হুল্লোড় করে খেলা দেখতাম।

তানবীরা's picture


আমি খেলা দেখি ব্লগে Big smile

ভাস্কর's picture


গতোকাল জর্ম্মনরা মনে হয় এখন পর্যন্ত সেরা খেলাটা খেলছে। এতো সুন্দর পরিকণ্পিত ফুটবল (যেইটারে দেখলে যন্ত্রমানুষের ফুটবল মনে হয় না এক্কেরেই) আর্জেন্টাইন ঈশ্বরের দলও খেলতে পারে নাই। ডি বক্সের সামনে ঝাকি দিয়া দুইজনরে ফালাইয়া দিয়া নেট ওপেন করার ফুটবলতো লাতিনরা নিজেগো মালিকানায় নিয়া নিছিলো রীতিমতো।

আলজেরিয়ার খেলা ভালো লাগছে, তয় আফ্রিকান প্রবলেমটা আছে। মাঝমাঠ থেইকাই গোল করতে চায় থ্রু পাসগুলিতে পরিকল্পণা নাই বইলা ওয়ার্ক আইট করে নাই। সেই তুলনায় ঘানা জোশ! তারা প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ঢুকনের চেষ্টা করে...lol। সার্বরাও খারাপ দল এইটা কওন যাইবো না অবশ্য।

জ্বিনের বাদশা's picture


জার্মানী টিমে শোয়েইনেস্টাইগার আর পোডলস্কি উড়াধুড়া কিছু করে ফেলার সামর্থ্য রাখে ... আলজেরিয়ানদের খেলা দেইখা ভার্সিটি লাইফের নর্থ-আফ্রিকান মাথাগরম আরব-বন্ধুগুলার কথা মনে পইড়া গেছিলো ... স্কিল ভালো, কিন্তু মেজাজ নাই

নড়বড়ে's picture


বিশ্বকাপের সময় দেশে আসার এইটাই মজা, আরাম করে খেলা দেখতেছি (বিদ্যুৎ থাকলে আরকি!)। Smile

আমি ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগ পর্যন্ত জার্মানির ঘোর বিরোধী ছিলাম, কোন কারণ ছাড়াই - যেহেতু আর্জেন্টিনার সাপোর্টার তাই জার্মানি বিরোধী-এইরকম ব্যাপার আরকি। ২০০৬ এ জার্মানির গতিময় খেলা দেখে সত্যি সত্যি মুগ্ধ হইছি। জার্মানি ভাল করলে খুশিই হব। কালকে তো ৪ গোলে জিতল, তা-ও অনেক সুযোগ মিস করছে।

১০

জ্বিনের বাদশা's picture


আমি টোকিওতে বসেও মোটামুটি সব খেলা দেখতে পারতেছি ... তবে, দেশে অবশ্য যে আমেজটা চারদিকে পাওয়া যায়, সেইটা তো এই বেরসিক দেশে নাই! Sad

১১

দুরের পাখি's picture


টার্মটা দোইৎসু-দামাশি হবে না ?

১২

জ্বিনের বাদশা's picture


তাইতো, জার্মান না ... আসলে টার্মটা অরিজিনালি "গেরমান-দামাশি" (অবশ্য দোইৎসু-জিন দামাশিও অনেকে বোঝার সুবিধার জন্য ব্যবহার করে) ... ভাবতাছি গেরমান-দামাশিরে কি বুইঝা জার্মান লিখছিলাম! (বয়স হইছে Sad)

১৩

রাফি's picture


বিশ্লেষন ভালো লাগছে। ব্রাজিলের খেলার জন্য ওয়েটে আছি.....।

১৪

জ্বিনের বাদশা's picture


আমিও ওয়েটে আছি ... তয় প্রথমটা স্কিপ করা লাগবো ... রাত সাড়ে তিনটা :'(

১৫

আহমেদ রাকিব's picture


বিশ্লেষন ভালো লাগলছে। Smile

১৬

জ্বিনের বাদশা's picture


শুকরিয়া
(শর্টনোট আসলে লম্বা হয়া গেছে Wink)

১৭

টুটুল's picture


এই পোস্টে কোন বাড়ির কাজ নাই Sad ... সহমত জানাইতে আইসা ফিরা গেলাম Sad
ব্রাজিলের জন্য অপেক্ষায় আছি

১৮

জ্বিনের বাদশা's picture


সহমত জানাইয়া রাখলাম Wink

১৯

মীর's picture


টিম কাহিলের লাল কার্ড নিয়ে কথা আছে। দুই গোল খেয়ে অস্ট্রেলিয়া যা শুরু করেছিলো সেটা আর যাই হোক আমার কাছে ফুটবল খেলা মনে হচ্ছিলো না। লাফ মেরে হাটু দিয়ে পিঠে চড়ে বসা, পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে পজিশন পাল্টানোর নামে কনুইয়ের খোঁচা মারা এইগুলা বন্ধের জন্য ওইটা দরকার ছিলো। টিম কাহিল যা করেছিলো তাতে পা ভেঙ্গে যেতে পারতো, ভাঙ্গেনি এটা তাদের দুইজনের সৌভাগ্যের ব্যপার। জার্মানরা অস্ট্রেলিয়দের চেয়ে গায়ে-গতরে কম না, বরং একটু বেশী-ই। তবুও ওরা কিন্তু মারের বদলে মার, নীতিতে চলে নি। জার্মানীর খেলা দেখে ভালো লেগেছে।

২০

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


আমার মতে এই নিয়মটা রাখা উচিত, একটা হলুদ কার্ড পেলে পরের হলুদকার্ডের সময় রেফারী খানিকটা কনসিডারেশন নিতে পারবেন, যেমন কার্ড দেখানোর আগে চেক করা এই খেলোয়াড় আগে হলুদ কার্ড পেয়েছে কিনা

হলুদ কার্ডটাই কিন্তু একটা ওয়ার্নিং, যে খেলোয়াড় কার্ড পাওয়ার পরেও আরেকটা কার্ড পাবার মতো ফাউল করে, তারে আসলে খেলতে দেয়া উচিৎ না। আমি টীম কাহিলেরটা একটু মিস করছি, তবে সার্বিয়ার কার্ডটা যৌক্তিক ছিল। কিছু নির্দিষ্ট প্যাটার্ণের ফাউল আছে, যেগুলা হলুদ কার্ডের যোগ্য। সেক্ষেত্রে আগে পাইছে কিনা বিবেচনা করা রেফারির দায় না, খেলোয়াড়ের দায়।

২১

নীড় সন্ধানী's picture


আরো শর্ট নোটসের অপেক্ষায়..... Smile

২২

নজরুল ইসলাম's picture


ডেসার অত্যাচারে কোনো খেলাই ঠিকমতো দেখতে পারতেছি না। মেজাজ খ্রাপ।
এই মাত্র জাপান জিতলো ১-০ তে। অভিনন্দন জাপানকে।
তবে ক্যামেরুনের জন্য সুক্ষ্ম একটা বেদনাও রয়ে গেলো।

আপনার এই নোটস উপভোগ করছি দারুণ। প্রতিদিন চাই। মিস করলে খবরাছে

২৩

আশফাকুর র's picture


Star Star Star Star

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.