তাকে ভালবাসতে আমার কোন দিবস লাগে না
মেলা বছর আমরা দুই ভাই এক সাথে ছিলাম। আমার জন্মের প্রায় তিন বছর পর যখন আমার ভাই জন্মাইল, মায়ের কোল আমি হইতে বিচ্ছিন্ন হইলাম। রাতে মায়ের পিঠ ধইরা ঘুমানোর সময় বিরাট হিংসা বুকে নিয়া ঘুমাইতাম। তারপর কিভাবে জানি হিংসা ভালবাসা হইয়া গেল। ভাই হইল খেলার সাথি। আমাদের মেলা উদ্ভট উদ্ভট খেলা ছিল। একটা খেলা ছিল ইয়ো মামা অনুকরণে। আমাদের দুইজনের মা একই ব্যক্তি হওয়ায় ময়েরে টানতামনা বটে তবে সুরে সুরে পরস্পরকে হিউমিলিয়েট করার চেষ্টা চালাইতাম। আরেকটা খেলা ছিল, খেলার নাম স্পেল বাইন্ডার। এই খেলায় আমরা পরস্পরের দিকে বড় বড় ইট ছুঁড়ে মারতাম। এইছাড়া রেসলিং, কিক বক্সিং এগুলানতো ছিলই। আমাদের মায়ের সারাদিন দৌড়ের উপর থাকতে হইত আমাদের খেলা থামাইতে। উনি কিছুতেই বুঝতে চাইতেন না এইটাই আমগো খেলা, মারপিট না।
এরপর ক্যমনে জানি আমাগো দুই ভাইয়ের দূরত্ব বাড়তে লাগল। আমি হাই ইস্কুলে উঠলাম, ভাই প্রাইমারীতে রইয়া গেল। নতুন বন্ধু, নতুন সার্কেল নিয়া এতটাই বিজি হইয়া পড়লাম যে ভাইয়েরে আর আগের মতো সময় দিতাম না। ভাইটাও কি জানি অভিমানেই কিনা দূরে সইরা গেল। সেই সব ইয়ো মামা, কিক বক্সিং আর হয় না, বড় বেশী উষ্ণ সম্পর্ক, দূরত্ব ক্রমশ বাড়তেই থাকে। ঠিক এ সময় জন্মাইলো আমার বোন। জন্মের পরপর গায়ের চামড়া একদম টিকটিকির মতো ছিল, আমার মোটেও ভাল লাগে নাই। আম্মা কষ্ট পাইবে জন্যে কিছু বলি নাই। তারপর কি আশ্চর্য দুই দিন ঘুরতে না ঘুরতেই সে কেমন পরীর মতো হইয়া গেল। কেমন জুল জুল চোখে তাকায়, আদর করলে হসে, ধমক দিলে ঠোঁট উল্টায়। দেখলে বুকের মধ্যে কোথায় জানি রক্ত ক্ষরণ হয়; ব্যথায় না, ভালবাসায়। হঠাৎ খিয়াল করলাম আমার পৃথিবীর অনেকখানি সে কখন দখল কইরা নিছে।
এইসব দিন যাপনের কলে কত দিবস আসে। ভালবাসা দিবস, নারী দিবস। লোকজন নাটক সেমিনার করে, ভাল ভাল কথা বলে। আমি শুধুই হাসি।
তাকে ভালবাসতে আমার কোন দিবস লাগে না।
....ওয়াও....ভালোবাসার জন্য দিবস লাগেনা, ঠিক...
লাগে না।
আবার জিগায়...কথা ডা হাছা...ভালই লাগল...প্রিওতেও নিলাম
ইশশ , আমার ভাই গুলোও নিশ্চই এভাবে ভাবে !!!
আসলেই তাই
সহমত ।
ভালোবাসতে কোন দিন লাগে না ।
যাপিত জীবনের সাধারণ ঘটনা -- ভাই ভাই/ ভাই বোন এর মধ্যে দূরে সরে যাবার ব্যাপার । আমার আপুর আর আমারো এমন হয়েছিল , আমার আর আমার ছোট বোনের বেলায় ও সেইম । ব্যস্ততা ...
ভালোবাসার দিবস কি?ভালোবাসা ত সবসময়ের। এমন মায়া, ভালোবাসা সবসময় থাকুক।
ভালোবাসতে কোন দিন লাগে না
হুমম...
একটা ছোট বোন থাকলে ভাল হইতো...বড় বোনটারে ভালু লাগে না খালি ঝাড়ির উপ্রে রাখে
মেলা বছর আমরা দুই ভাইও এক সাথে ছিলাম। আমার জন্মের দশ বছর পর যখন আমার তিন নম্বর ভাই আকিফের জন্ম হইলো, তখনই হয়তো আমি আর আসিফের যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হইল এবং সেই মিলমিশের পক্তি "আরিফ আসিফ দুই ভাই, মিলে মিশে গান গাই" আর উচ্চারিত হইলো না। ছোট্ট ভাইটার প্রায় বছর দুয়েক পর আমার এক বোনের জন্ম হইলো।
প্রকৃতির কোন এক রহস্যজনক কারণে ছোট্টকাল হইতে নারীজাতির প্রতি আমার এক অজানা (বা হয়তো জানা) ক্ষোভ ছিল। বোনের দুনিয়াতে আগমন সেই ক্ষোভে যেন তেলে আগুন বেগুন হয়ে জ্বলে উঠলো, আমি সারাদিন একা একা নিভৃতে চোক্ষের জল ফেললাম আর ফরিয়াদ করলাম "আল্লাহ তুমি আমারে আরও ১০০টা ভাই দাও কিন্তু আমি কোনও বোন চাই না! (???) খোদা সেই অবুঝ কিশোরের কথায় কি মনে করলো জানি না, তবে জন্মের পরের দিন বিকাল বেলা আমার বোনটি নিউমোনিয়ায় মারা গেল। সেই রাতেই আমি তাকে কবর দিয়ে আসলাম বাড়ীর পাশের কবর স্থানে।
এর পর অনেকটা দিন কেটে গেল। আম্মা মাঝে মধ্যেই বোনটির কথা মনে করে চোখের জল ফেলতেন। আর আমি চরম অপরাধবোধ নিয়ে বোবা হয়ে থাকতাম।
-----------------------------
বিয়ের এক বছর পর আমার ঘর আলো করে আমার মেয়ের জন্ম হলো। তার জন্মের আগে আমি আমার প্রবাসের চাকরী হারানোর ভয় তুচ্ছ করে দেশে ছুটে গেলাম। তার জন্মের পর তার নানা'র বাড়ী আর দাদার বাড়ীর লোকজনের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল মেয়ের বাবাকে নিয়ে। তাদের কথা আমি নাকি আমার মেয়েকে নিয়ে অতিরিক্ত আহ্বলাদীপনা করছি। মেয়ের মা, মেয়ের দাদী (আমার মা) কে উঠতে বসতে শুধু সতর্কের উপর সর্তক করছি... "আহা, ওকে ওভাবে কেন নিচ্ছ, নিশ্চই ও হয়তো ব্যাথা পাচ্ছে, আনইজি ফিল করছে", আচ্ছা ওর বোধ হয় ঠান্ডা লাগছে!, আহা ও এভাবে কাঁদছে কেন?!!! নিশ্চই ওর কোন সমস্যা হচ্ছে, আম্মা ওভাবে না, ওকে এভাবে কোলে নাও, এভাবে ও কমফোর্ট ফিল করে (!!!)। আমার এমন হাজারটা কথার জ্বালায় আমার বাড়ী আর আমার শশুর বাড়ীর লোকজন অতিষ্ঠ। আমার একবন্ধুতো বলেই বসলো “"দোস্ত বিয়া আমরাও করছি, বাচ্চা আমাদেরও হইছে, কিন্তু তুমারটা তো দেখি রেকর্ড!!!"
তারা কি এটা কোনদিনও জানবে যে, আমার মেয়ে আমাকে সেই অপরাধ বোধ থেকে মুক্তি দিয়েছে। আমার মেয়েকে কোলে নিয়ে আমার মা’র হাস্সোজ্জল মুখটার দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে বলি … মা, আমাকে ক্ষমা কোরো, এই নাও তোমার মেয়ে তোমাকে আমি ফেরত দিলাম।
-------------------------
এ ভালবাসা নারী দিবসে জেগে উঠার মতো সস্তা আবেগ নয়। এ ভালবাসাতো প্রতিদিনকার, প্রতিটা ক্ষণের।
তাকে ভালবাসতে আমারও কোন দিবস লাগে না।
---------------------
মানু, তোমাকে ধন্যবাদ, তোমার কারনে এই না বলা কথাগুলো আজ বলে ফেললাম।
-----------------
লেখাটায় গুরুচন্ডালীকা দোষ আছে, আলস্যের কারনে সংশোধণ করিলাম না।
-------------
লেখাটি পোষ্ট আকারে আসিতেছে...
ভালোবাসতে দিবস না লাগলেও পোস্ট লিখার ক্ষেত্রে এসব দিবস ধণাত্মক প্রভাবক হিসেবেই কাজ করে:
ভালো লাগলো আপনার লিখাটা
অনেক ভাল লাগলো......
ভালো লাগছে।
ভালো লাগলো ।
হ
যারা পড়ছেন তাদের ধন্যবাদ। পইড়া যারা কমেন্ট করছেন তাদের ডবল ধন্যবাদ। যারা রেটিং দিছেন তাদের ট্রিপল ধন্যবাদ এবং বকলম ভাইরে বিশেষ ধন্যবাদ
পইড়া যারা কমেন্ট করছেন তাদের ডবল ধন্যবাদ।
আর, যারা না পইড়া মন্তব্য করলো, তাদের??
তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না
এই না হইলে মানু'র লেখা... ভাল্লাগছে অনেক
আমারে ট্রিপল ধইন্যবাদ দিয়া দেও... পাওনা পাইয়া যাইগা...
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ
হ ভাই বোন কিংবা আপণ লোকদের ভালোবাসতে দিবসের দরকার নাই।
বোনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশটা ভাল্লাগছে।
থ্যাংকু
ভাল লাগছে
দারুন লেখা ... আমারো ছোট বোনটার জন্য একই অনুভূতি হয়
টেষ্ট [img]http://l.yimg.com/a/i/us/msg/emoticons/pirate_2.gif[/img]
মানুষের মতো লেখাই বটে
কারোর এমনই ভালবাসার বোন যদি কোন এক সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখে আর কোন এক ভাই যদি জানুয়ারির ২৮ তারিখে (প্রায় ৪৩ বছরের ব্যবধানে ) তাকে ছেড়ে চিরদিনের মত চলে যায় তবুও কি তাকে ভালবাসতে হবে ?
এই লেখাটা যতবার পড়ি
ততবার একই সাথে মন ভালো আর খারাপ হযে যায়। অদ্ভুত!
মন্তব্য করুন