এদিনে বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদকে চাপাতি দিয়ে রক্তাক্ত করা হয়
বইমেলায় আমার নিয়মিত যাতায়াত থাকলেও ২০০৪ সালে যাওয়া হয়নি । তখন আমি ছিলাম খুলনায় (একটি বহুজাতিক কোম্পানীর কর্মকর্তা হিসেবে সেখানে পোষ্টিং )। বইমেলা ও আজাদ স্যারকে মিস করতাম । ইতিমধ্যে দৈনিক ইত্তেফাকের ঈদ সংখ্যায় তার 'পাক সার জমিন' উপন্যাসটি ছাপা হয় । প্রতিক্রিয়ায় মোল্লাদের আস্ফালন দেখা যায় ।
নিরাপত্তা নিয়ে আজাদ স্যারও শঙ্কিত হন । মুক্তমনা থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয় কিন্তু তৎকালিন সরকারের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি ।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ রাতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হলেন হুমায়ুন আজাদ (দেখুন তার রক্তাক্ত ছবি )।খবরটা জেনে কেঁদেছিলাম খুব । পরদিন অফিসের কাজকর্মও করতে পারিনি । তারই কবিতা -আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে (১৯৯০) , আমাদের ছেড়ে চলেও গেছেন অন্যদের সময়ে । আচ্ছা , বর্তমান সময়টা কি আমাদের ?
কৈফিয়ত:
শিরোনামে হুমায়ুন আজাদ এর নামের আগে আমি প্রয়াত ব্যবহার করিনি, কারণ তাঁর প্রয়াণ আমি মানি না । হুমায়ুন আজাদ এর বক্তব্য -কথন-আলোচনা থেকে তাঁকে আত্ম অহংকারি ভাবার অবকাশ আছে কিন্তু তা' যে ব্যক্তি আজাদের সবচেয়ে ভুল মুল্যায়ন তার সাক্ষী এই অধম ।আমি তার ছাত্র ছিলাম না, আমি সাহিত্যের লোকও নই বস্তত বরেণ্য -বিখ্যাতদের সাথে আলাপ করতে যেসব সূত্র লাগে তার কোনটা আমার ছিল না,এখনও নেই ।তথাপি আজাদ স্যারের সাথে ঢাবি লাইব্রেরীর সামনে -হাকিম চত্বরে বা কলাভবনে আড্ডা দিতে আমাকে বেগ পেতে হয়নি , তাঁর হাঁটাচলা কথাবার্তার মধ্যে এমন এক আন্তরিকতা যেন তার সাথে কত দিনের পরিচয় । আমি বইমেলায় আগামি প্রকাশনির স্টলে যাই না কারন সেখানে এখন আজাদ স্যার বসেন না ।
কেন আসবেন ঐ মেলায় যেখান থেকে ফেরার পথে তাকে চাপাতি দিয়ে কুপানো হয় ?
হাকিম চত্বরেও তাঁকে এখন দেখিনা কিন্তু তাঁর সাথে আলাপ করার নানা পথ তিনি রেখে গেছেন তা' দিয়েই আমার পথচলা ।
আমি হুমায়ুন আজাদ স্যারের অন্ধভক্ত নই , নিন্দা ব্যবসায়ীও নই
এই যে একই সাথে গ্রহন -বাতিল করার বুদ্ধত্ব
তা' আমি লাভ করেছি
আহমদ শরীফ -আহমদ ছফা আর হুমায়ুন আজাদের কাছ থেকেই ।
দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি
এই তিনজনকেই আমরা ভুল বুঝেছি
ভুল ভাবে হাজির করেছি বা করছি ।
হুমায়ুন আজাদ নামটি দেখলেই মাথা শ্রদ্ধায় অবনত হয়। সেই দু:খজনক ঘটণার দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি কালো অধ্যায় হয়েই রইবে।
মানিক ভাই, রক্তমাখা ছবিটি দেখে কেমন যেমন লাগছে, এটি কি সরিয়ে দেয়া যায়?
সহমত
সরিয়ে দিলাম
তাঁর প্রবচনগুচ্ছ থেকেই একটা উদ্বৃতি দেই-
আমাদের এই দুর্ভাগ্যকে আমরা কবে কিভাবে জয় করতে পারবো ! কতদিনে আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হবে - এ জন্য আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে আমাদের?
জবাব জানিনা
মাকিন ভাই, থ্যাঙ্কস।
মানিক ভাই।
কিছু কিছু ঘটনা ভাবতে বাধ্য করে দেশটা একটা মগের মুল্লুক! এটা তেমনি একটা।
কোন এক প্রফেশন ভিত্তিক ক্লাবের কমন রুমের টিভিতে এই খবরটা দেখার পর বা পরদিনের পেপারে পড়ার পর (ঠিক মনে নেই) তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত কিছু মানুষের চোখে মুখে উল্লাস দেখেছিলাম,আর শুনেছিলাম "বাড়াবাড়ি করলে এমনই হয়।"
হায়রে দেশ!
কোনো মেয়ে রেপড হলেও এইসব শিক্ষিত (!) সুশীল এরম কথাই বলে থাকেন ।
অন্তর থেকে প্রিয় এ ক্ষণজন্মা মহাপুরুষটির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
আজাদ স্যারের এপিটাফ :
আমি জানি, ভালো ক'রেই জানি, কিছু অপেক্ষ ক'রে নেই আমার জন্যে;
কোনো বিস্মৃতির বিষন্ন জলধারা, কোনো প্রেতলোক, কোন পুনরুত্থান,
কোন বিচারক, কোন স্বর্গ, কোন নরক; আমি আছি, একদিন থাকবো না,
মিশে যাবো, অপরিচিত হয়ে যাবো, জানবো না আমি ছিলাম। নিরর্থক সব
পুণ্যশ্লোক, তাৎপর্যহীন সমস্ত প্রার্থনা, হাস্যকর উদ্ধত সমাধি; মৃত্যুর পর যে-
কোনো জায়গায়ই আমি প'ড়ে থাকতে পারি,-জলাভূমিতে, পথের পাশে,
পাহাড়ের চূড়োয়, নদীতে মরুভূমিতে, তুষারস্তূপে !
লেখক হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ পড়েই আমি তার ভক্ত। এ রকম কথা বলা ও চিন্তা করার মত একজন লোকও এখন বাংলাদেশে নাই। কিছু কপি করে দিলাম। চলুন পড়ি (একটু বড় লেখা/কমেন্ট হয়ে যাবে, আশা করি মনে কিছু নিবেন না) -
পর্ব ১
১। মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ করে।
২। পুঁজিবাদের আল্লার নাম টাকা, মসজিদের নাম ব্যাংক।
৩। সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষনীয়। কিন্তু ভন্ডরা বলেন উলটো কথা।
৪। হিন্দুরা মুর্তিপূজারী; মুসলমানেরা ভাবমুর্তিপূজারী। মুর্তিপূজা নির্বুদ্ধিতা; আর ভাবমুর্তিপূজা ভয়াবহ।
৫। ‘মিনিষ্টার’ শব্দের মূল অর্থ ভৃত্য। বাঙলাদেশের মন্ত্রীদের দেখে শব্দটির মূল অর্থই মনে পড়ে।
৬। আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রুপসীর একটু নগ্ন বাহু দেখে ওরা হৈ চৈ করে, কিন্তু পথে পথে ভিখিরিনির উলঙ্গ দেহ দেখে ওরা একটুও বিচলিত হয় না।
৭। শ্রদ্ধা হচ্ছে শক্তিমান কারো সাহায্যে স্বার্থোদ্ধারের বিনিময়ে পরিশোধিত পারিশ্রমিক।
৮। আগে কারো সাথে পরিচয় হ’লে জানতে ইচ্ছে হতো সে কী পাশ? এখন কারো সাথে দেখা হ’লে জানতে ইচ্ছে হয় সে কী ফেল?
৯। ব্যর্থরাই প্রকৃত মানুষ, সফলেরা শয়তান।
১০। পরমাত্মীয়ের মৃত্যুর শোকের মধ্যেও মানুষ কিছুটা সুখ বোধ করে যে সে নিজে বেঁচে আছে।
১১। জনপ্রিয়তা হচ্ছে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি। অনেকেই আজকাল জনপ্রিয়তার পথে নেমে যাচ্ছে।
১২। উন্নতি হচ্ছে ওপরের দিকে পতন। অনেকেরেই আজকাল ওপরের দিকে পতন ঘটছে।
১৩। প্রতিটি গ্রন্থ সভ্যতাকে নতুন আলো দেয়।
১৪। বাঙলার প্রধান ও গৌণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রধানেরা পশ্চিম থেকে প্রচুর ঋণ করেন, আর গৌণরা আবর্তিত হন নিজেদের মৌলিক মূর্খতার মধ্যে।
১৫। মহামতি সলোমনের নাকি তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার উপপত্নী ছিলো। আমার মাত্র একটি পত্নী। তবু সলোমনের চরিত্র সম্পর্কে কারো কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।
১৬। বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
১৭। আধুনিক প্রচার মাধ্যমগুলো অসংখ্য শুয়োরবৎসকে মহামানবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
১৮। অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশির কৃতিত্ব, হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়।
১৯। পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও।
২০। আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে।
২১। নিজের নিকৃষ্ট কালে চিরশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্য রয়েছে বই; আর সমকালের নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্যে রয়েছে টেলিভিশন ও সংবাদপত্র।
২২। শৃঙ্খলপ্রিয় সিংহের থেকে স্বাধীন গাধা উত্তম।
২৩। প্রাক্তন বিদ্রোহীদের কবরে যখন স্মৃতিসৌধ মাথা তোলে, নতুন বিদ্রোহীরা তখন কারাগারে ঢোকে, ফাসিঁকাঠে ঝোলে।
২৪। একনায়কেরা এখন গণতন্ত্রের স্তব করে, পুজিঁপতিরা ব্যস্ত থাকে সমাজতন্ত্রের প্রশংসায়।
২৫। পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো; দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।
২৬। বেতন বাঙলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
২৭। কবিরা বাঙলায় বস্তিতে থাকে, সিনেমার সুদর্শন গর্দভেরা থাকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রাসাদে।
২৮। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।
২৯। বুদ্ধিজীবীরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে। ভন্ড, ভন্ডতর, ভন্ডতম।
৩০। শিক্ষকের জীবনের থেকে চোর, চোরাচালানি, দারোগার জীবন অনেক আকর্ষণীয়। এ সমাজ শিক্ষক চায় না, চোর-চোরাচালানি-দারোগা চায়।
৩১। শয়তানের প্রার্থনায় বৃষ্টি নামে না, ঝড় আসে; তাতে অসংখ্য সৎ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
৩২। যে বুদ্ধিজীবী নিজের সময় ও সমাজ নিয়ে সন্তুষ্ট, সে গৃহপালিত পশু।
৩৩। পা, বাঙলাদেশে, মাথার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পদোন্নতির জন্যে এখানে সবাই ব্যগ্র। কিন্তু মাথার যে অবনতি ঘটছে, তাতে কারো কোনো উদ্বেগ নেই।
৩৪। এখানকার একাডেমিগুলো সব ক্লান্ত গর্দভ; মুলো খাওয়া ছাড়া ওগুলোর পক্ষে আর কিছু অসম্ভব।
৩৫। জন্মাতরবাদ ভারতীয় উপমহাদেশের অবধারিত দর্শন। এ অঞ্চলে এক জন্মে পরীক্ষা দিতে হয়, আরেক জন্মে ফল বেরোয়, দু-জন্ম বেকার থাকতে হয়, এবং ভাগ্য প্রসন্ন হ’লে কোন এক জন্মে চাকুরি মিলতেও পারে।
৩৬। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না, কিন্তু দরকার ছিলো বাঙলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ বড়ো কবি; আর মুসলমানেরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাঙলার শ্রেষ্ঠ কবি হিশেবে।
৩৭। বাঙলাদেশে কয়েকটি নতুন শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে; এগুলো হচ্ছে স্তুতিবিজ্ঞান, স্তব সাহিত্য, সুবিধা দর্শন ও নমস্কারতত্ত্ব।
৩৮। এখানে অসতেরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত।
৩৯। টেলিভিশন, নিকৃষ্ট জিনিশের একনম্বর পৃষ্ঠপোষক, হিরোইন প্যাথেডিনের থেকেও মারাত্মক। মাদক গোপনে নষ্ট করে কিছু মানুষকে, টেলিভিশন প্রকাশ্যে নষ্ট করে কোটি কোটি মানুষকে।
৪০। পৌরানিক পুরুষেরা সামান্য অভিজ্ঞতা ভিত্তি ক‘রে অসামান্য সব সিদ্ধান্ত নিতেন। যযাতি পুত্রের কাছে থেকে যৌবন ধার ক’রে মাত্র এক সহস্র বছর সম্ভোগের পর সিদ্ধান্েত পৌছেন যে সম্ভোগে কখনো তৃপ্তি আসে না! এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্েতর জন্যে সহস্র বছর খুবই কম সময় : আজকাল কেউ এতো কম অভিজ্ঞতায় এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস করবে না।
৪১। অভিনেতারা সব সময়ই অভিনেতা; তারা যখন বিপ্লব করে তখন তারা বিপ্লবের অভিনয় করে। এটা সবাই বোঝে, শুধু তারা বোঝে না।
৪২। বাঙলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমন্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি।
৪৩। পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি নরনারী এখন মনে ক’রে তাদের জীবন ব্যর্থ; কেননা তারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হতে পারে নি।
৪৪। মৌলিকতা হচ্ছে মঞ্চ থেকে দূরে অবস্থান।
৪৫। এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশদূষন : অন্যান্য সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও।
৪৬। বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।
৪৭। একজন চাষী বা নদীর মাঝি সাংস্কৃতিকভাবে যতোটা মূল্যবান, সারা সচিবালয় ও মন্ত্রীপরিষদও ততোটা মূল্যবান নয়।
৪৮। মানুষ ও কবিতা অবিচ্ছেদ্য। মানুষ থাকলে বুঝতে হবে কবিতা আছে : কবিতা থাকলে বুঝতে হবে মানুষ আছে।
৪৯। বাঙালি আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনোকখনো সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো।
৫০। এখন পিতামাতারা গৌরব বোধ করেন যে তাঁদের পুত্রটি গুন্ডা। বাসায় একটি নিজস্ব গুন্ডা থাকায় প্রতিবেশীরা তাঁদের সালাম দেয়, মুদিদোকানদার খুশি হয়ে বাকি দেয়, বাসার মেয়েরা নির্ভয়ে একলা পথে বেরোতে পারে, এবং বাসায় একটি মন্ত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পর্ব ২
১। এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।
২। নিন্দুকেরা পুরোপুরি অসৎ হ’তে পারেন না, কিছুটা সততা তাঁদের পেশার জন্যে অপরিহার্য; কিন্তু প্রশংসাকারীদের পেশার জন্য মিথ্যাচারই যথেষ্ট।
৩। বাস্তব কাজ অনেক সহজ অবাস্তব কাজের থেকে ; আট ঘন্টা একটানা শ্রম গাধাও করতে পারে, কিন্তু একটানা এক ঘন্টা স্বপ্ন দেখা রবীন্দ্রনাথের পক্ষেও অসম্ভব।
৪। প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।
৫। তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার : বন্দুক ও কবর।
৬। প্রতিটি বিজ্ঞাপনে পণ্যটির থেকে পণ্যাটি অনেক লোভনীয়; তাই ব্যর্থ হচ্ছে বিজ্ঞাপনগুলো। দর্শকেরা পণ্যের থেকে পণ্যাটিকেই কিনতে ও ব্যবহার করতে অধিক আগ্রহ বোধ করে।
৭। কোন দেশের লাঙলের রূপ দেখেই বোঝা যায় ওই দেশের মেয়েরা কেমন নাচে, কবিরা কেমন কবিতা লেখেন, বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করেন, আর রাজনীতিকেরা কতোটা চুরি করে।
৮। যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, তারা ধার্মিকও নয়, বিজ্ঞানীও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতারিত করা হয়েছিলো, তারা তার বংশধর।
৯। যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনো শত্রু থাকে না; কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে উঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না।
১০। এদেশে সবাই শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক : দারোগার শোকসংবাদেও লেখা হয়, ‘তিনি শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন’।
১১। শিল্পকলা হচ্ছে নিরর্থক জীবনকে অর্থপূর্ণ করার ব্যর্থ প্রয়াস।
১২। কিছু বিশেষন ও বিশেষ্য পরস্পরসম্পর্কিত; বিশেষ্যটি এলে বিশেষন আসে, বিশেষন এলে বিশেষ্য আসে। তারপর একসময় একটি ব্যবহার করলেই অন্যটি বোঝায়, দুটি একসাথে ব্যবহার করতে হয় না। যেমন : ভন্ড বললেই পীর আসে, আবার পীর বলতেই ভন্ড আসে। এখন আর ‘ভন্ড পীর’ বলতে হয় না; ‘পীর’ বললেই ‘ ভন্ড পীর ’ বোঝায়।
১৩। ভক্ত শব্দের অর্থ খাদ্য। প্রতিটি ভক্ত তার গুরুর খাদ্য। তাই ভক্তরা দিনদিন জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হয়ে আবর্জনায় পরিণত হয়।
১৪। মূর্তি ভাঙতে লাগে মেরুদন্ড, মূর্তিপূজা করতে লাগে মেরুদন্ডহীনতা।
১৫। আমাদের সমাজ যাকে কোনো মূল্য দেয় না, প্রকাশ্যে তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করে, আর যাকে মূল্য দেয় প্রকাশ্যে তার নিন্দা করে। শিক্ষকের কোনো মূল্য নেই, তাই তার প্রশংসায় সমাজ পঞ্চমুখ; চোর, দারোগা, কালোবাজারি সমাজে অত্যন্ত মুল্যবান, তাই প্রকাশ্যে সবাই তাদের নিন্দা করে।
১৬। সৌন্দর্য রাজনীতির থেকে সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
১৭। ক্ষুধা ও সৌন্দর্যবোধের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে-সব দেশে অধিকাংশ মানুষ অনাহারী, সেখানে মাংসল হওয়া রূপসীর লক্ষণ; যে-সব দেশে প্রচুর খাদ্য আছে, সেখানে মেদহীন হওয়া রূপসীর লক্ষণ। এজন্যেই হিন্দি আর বাঙলা ফিল্মের নায়িকাদের দেহ থেকে মাংস চর্বি উপচে পড়ে। ক্ষুধার্ত দর্শকেরা সিনামা দেখে না, মাংস ও চর্বি দেখে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে।
১৮। বাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে বই খুলুন, অবাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে টেলিভিশন খুলুন।
১৯। স্তবস্তুতি মানুষকে নষ্ট করে। একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা শয়তান হয়ে উঠবে। একটি নেতাকে স্তুতি করুন, কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে সে একটি একনায়ক উপহার দেবে।
২০। ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দে ওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যাতে পারে না, কেননা অন্তরে কোনো বিমান যায় না।
২১। রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পুর্ণ বিপরীত বস্তু ; একটি ব্যাধি অপরটি স্বাস্থ্য।
২২। আগে প্রতিভাবানেরা বিদেশ যেতো; এখন প্রতিভাবানেরা নিয়মিত বিদেশ যায়।
২৩। বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয় ; তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী।
২৪। কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা। বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী।
২৫। কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা।
২৬। মানুষের তুলনায় আর সবই ক্ষুদ্র : আকাশ তার পায়ের নিচে, চাঁদ তার এক পদক্ষেপের দূরত্বে, মহাজগত তার নিজের বাড়ি।
২৭। পুরুষ তার পুরুষ বিধাতার হাতে লিখিয়ে নিয়েছে নিজের রচনা; বিধাতা হয়ে উঠেছে পুরুষের প্রস্তুত বিধানের শ্রুতিলিপিকর।
২৮। হিন্দু বিধানে পুরুষ দ্বারা দূষিত না হওয়া পর্যন্ত নারী পরিশুদ্ধ হয় না!
২৯। সব ধরনের অভিনয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে রাজনীতি; রাজনীতিকেরা অভিনয় করে সবচেয়ে বড় মঞ্চে ও পর্দায়।
৩০। উচ্চপদে না বসলে এদেশে কেউ মূল্য পায় না। সক্রেটিস এদেশে জন্ম নিলে তাঁকে কোনো একাডেমির মহাপরিচালক পদের জন্যে তদ্বির চালাতে হতো।
৩১। সক্রেটিস বলেছেন তিনি দশ সহস্র গর্দভ দ্বারা পরিবৃত। এখন থাকলে তিনি ওই সংখ্যার ডানে কটি শূন্য যোগ করতেন?
৩২। বাঙালি মুসলমান জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিনত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে।
৩৩। নজরুলসাহিত্যের আলোচকেরা সমালোচক নন, তাঁরা নজরুলের মাজারের খাদেম।
৩৪। ভ্রষ্ট বাঙালিকে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপায় তার গালে শক্ত ক’রে একটি চড় কষিয়ে দেয়া।
৩৫। বাঙালির জাতিগত আলস্য ধরা পড়ে ভাষায়। বাঙালি ‘দেরি করে’, ‘চুরি করে’, এমনকি ‘বিশ্রাম করে’। বিশ্রাম ও বাঙালির কাছে কাজ।
৩৬। বাঙালি অভদ্র, তার পরিচয় রয়েছে বাঙালির ভাষায়। কেউ এলে বাঙালি জিজ্ঞেস করে, ‘কি চাই?’ বাঙালির কাছে আগন্তুক মাত্রই ভিক্ষুক। অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে বাঙালি বলে, ‘দাঁড়ান’। বসতে বলার সৌজন্যটুকুও বাঙালির নেই।
৩৭। মানুষ মরণশীল, বাঙালি অপমরণশীল।
৩৮। গণশৌচাগার দেখলেই কেনো যেনো আমার বাঙালির আত্মাটির কথা বারবার মনে পড়ে।
৩৯। বিনয়ীরা সুবিধাবাদী, সুবিধাবাদীরা বিনয়ী।
৪০। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।
৪১। মার্ক্সবাদের কথা শুনলে এখন মোল্লারা ক্ষেপে না, সমাজতন্ত্রের কথা তারা সন্েতাষের সাথেই শোনে; কিন্তু শরীরের কথা শুনলে লম্পটরাও ধর্মযুদ্ধে নামে।
৪২। এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো।
৪৩। খুব ভেবে চিনতে মানুষ আত্মসমর্পন করে, আর অনুপ্রাণিত মুহুর্তে ঘোষনা করা স্বাধীনতা।
৪৪। মানুষ যখন তার শ্রেষ্ঠ স্বপ্নটি দেখে তখনি সে বাস করে তার শ্রেষ্ঠ সময়ে।
৪৫। এ ব-দ্বীপে দালালি ছাড়া ফুল ফোটে না, মেঘও নামে না।
৪৬। আমার লেখার যে অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয়, সেটুকু বর্তমানের জন্যে; আর যে অংশ তাদের ক্ষুব্দ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্য।
৪৭। বাঙলার বিবেক খুবই সন্দেহজনক। বাঙলার চুয়াত্তরের বিবেক সাতাত্তরে পরিনত হয় সামরিক একনায়কের সেবাদাসে।
৪৮। বাঙলাদেশ অমরদের দেশ। এ-দেশের প্রতি বর্গমিটার মাটির নিচে পাঁচজন ক’রে অমর ঘুমিয়ে আছেন।
৪৯। পাকিস্থানের ইতিহাস ঘাতক আর শহীদদের ইতিহাস। বাঙলাদেশের ইতিহাস শহীদ আর ঘাতকদের ইতিহাস।
৫০। একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।
৫১। বাঙলার প্রতিটি ক্ষমতাদখলকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দুর্বৃত্তের সংঘ।
৫২। পৃথিবীতে একটি মাত্র দক্ষিনপন্থী সাম্যবাদী দল রয়েছে। সেটি আছে বাঙলাদেশে।
৫৩। আমাদের প্রায়-প্রতিটি মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকের ভেতরে একটি ক’রে মৌলবাদী বাস করে। তারা পান করাকে পাপ মনে করে, প্রেমকে গুনাহ মনে করে, কিন্তু চারখান বিবাহকে আপত্তিকর মনে করে না।
৫৪। কবিতা এখন দু-রকম; দালালি, ও গালাগালি।
৫৫। বাঙলাদেশের সাহিত্যে আধুনিকতাপর্বের পর কি আসবে আধুনিকতা-উত্তর-পর্ব? না। আসতে দেখছি গ্রাম্যতার পর্ব।
৫৬। পৃথিবী জুড়ে সমাজতন্ত্রের সাম্প্রতিক দুরবস্থার সম্ভবত গভীর ফ্রয়েডীয় কারণ আছে। সমাজতন্ত্রের মার্ক্সীয়, লেলিনীয়, স্তালিনীয় আবেদন ছিলো, কিন্তু যৌনাবেদন ছিলো না।
৫৭। স্বার্থ সিংহকে খচ্চরে আর বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিনত করে।
৫৮। অপন্যাস হচ্ছে সে-ধরনের সাহিত্য, যা বছরে লাখ টন উৎপাদিত হ’লেও সাহিত্যের কোনো উপকার হয় না; আর আধ কেজি উৎপাদিত না হ’লেও কোনো ক্ষতি হয় না।
৫৯। সৎ মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ, আর সকলের আক্রমনের লক্ষ বস্তু।
৬০। মধ্যবিত্ত পতিতাদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তারা পতিতাদের সুখ ও সতীর পূন্য দুটিই দাবি করে।
৬১। বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়। বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে।
৬২। পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড়ো ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।
৬৩। জীবনের সারকথা কবর।
৬৪। শাড়ি প’রে শুধু শুয়ে থাকা যায়; এজন্যে বাঙালি নারীদের হাঁটা হচ্ছে চলমান শোয়া।
৬৫। শ্বাশত প্রেম একজনের শরীরে ঢুকে আরেকজনের স্বপ্ন দেখা।
৬৬। প্রেম হচ্ছে নিরন্তর অনিশ্চয়তা; বিয়ে ও সংসার হচ্ছে চূড়ান্ত নিশ্চিন্তির মধ্যে আহার, নিদ্রা, সঙ্গম, সন্তান, ও শয়তানি।
৬৭। ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীর হাতে লেখা বিজিতের নামে এক রাশ কুৎসা।
৬৮। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।
৬৯। গত দু-শো বছরে গবাদিপশুর অবস্থার যতোটা উন্নতি ঘটেছে নারীর অবস্থার ততোটা উন্নতি ঘটে নি।
৭০। টাকাই অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ইন্দ্রিয়।
৭১। মৃত সিংহের থেকে জীবিত গাধাও কতো জোতির্ময় উজ্জ্বল।
৭২। মানুষ মরলে লাশ হয়, সংস্কৃতি মরলে প্রথা হয়।
৭৩। আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
৭৪। পৃথিবীর প্রধান বিশ্বাসগুলো অপবিশ্বাস মাত্র। বিশ্বাসীরা অপবিশ্বাসী।
৭৫। ঐতিহ্য বলতে এখানে লাশকেই বোঝায়। তবে লাশ জীবনকে কিছুই দিতে পারে না।
৭৬। গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না।
৭৭। আমি ঈর্ষা করি শুধু তাদের যারা আজো জন্মে নি।
৭৮। সতীচ্ছদ আরব পুরুষদের জাতীয় পতাকা।
৭৯। সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে একদিন আমরা কেউ থাকব না।
৮০। পাপ কোনো অন্যায় নয়, অপরাধ অন্যায়। পাপ ব্যক্তিগত, তাতে সমাজের বা অন্যের, এমনকি পাপীর নিজেরও কোনো ক্ষতি হয় না; কিন্তু অপরাধ সামাজিক, তাতে উপকার হয় অপরাধীর, আর ক্ষতি হয় অন্যের বা সমাজের।
৮১। ক্ষমতায় থাকার সময় যারা সত্য প্রকাশ করতে দেয় না, ক্ষমতা হারানোর পর তারা অজ্রস্য মিথ্যার প্রকাশ রোধ করতে দেয় না।
৮২। শিশু, সবুজ, তরুনীরা আছে ব’লে বেঁচে থাকা আজো আমার কাছে আপত্তিকর হয়ে উঠে নি।
৮৩। পশু আর পাখিরাই মানবিক।
৮৪। ক্ষমতায় যাওয়ার একটিই উপায়; সমস্যা সৃষ্টি করা। সমস্যা সমাধান ক’রে কেউ ক্ষমতায় যায় না, যায় সৃষ্টি করে।
৮৫। পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কি করবে?
৮৬। ঋষি রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখলে বাল্যকাল থেকেই তাঁর জন্মাব্দ ১৮৬১র আগে দুটি বর্ণ যোগ করতে ইচ্ছে হয়। বর্ণ দুটি হচ্ছে খ্রিপূ।
৮৭। এখানে সাংবাদিকতা হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট-বলপয়েন্ট-মিথ্যার পাচঁন।
৮৮। ফুলের জীবন বড়োই করুণ। অধিকাংশ ফুল অগোচরেই ঝ’রে যায়, আর বাকিগুলো ঝোলে শয়তানের গলায়।
৮৯। টেলিভিশনে জাহাজমার্কা আলকাতরার বিজ্ঞাপনটি আকর্ষনীয়, তাৎপর্যপূর্ণ; তবে অসম্পুর্ন। বিজ্ঞাপনটিতে জালে, জাহাজে, টিনের চালে আলকাতরা লাগানোর উপকারিতার কথা বলা হয়; কিন্তু বলা উচিত ছিলো যে জাহাজ মার্কা আলকাতরা লাগানোর উৎকৃষ্টতম স্থান হচ্ছে টেলিভিশনের পর্দা।, বিশেষ ক’রে যখন বাঙলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা যায়।
৯০। আমাদের অধিকাংশের চরিত্র এতো নির্মল যে তার নিরপেক্ষ বর্ণনা দিলেও মনে হয় অশ্লীল গালাগাল করা হচ্ছে।
৯১। মোল্লারা পবিত্র ধর্মকেই নষ্ট ক’রে ফেলেছে; ওরা হাতে রাষ্ট্র পেলে তাকে জাহান্নাম ক’রে তুলবে ।
৯২। বিধাতা মৌলবাদী নয়। কে প্রার্থনা করলো, কে করলো না; কে কোন তরুনীর গ্রীবার দিকে তাকালো, কোন রূপসী তার রূপের কতো অংশ দেখালো, এসব তাকে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন করে না। কিন্তু বিধাতার পক্ষে এতে ভীষন উদ্বিগ্ন বোধ করে ভন্ডরা।
৯৩। মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা, মন্দির ভাঙে ধার্মিকেরা, তারপরও তারা দাবি করে তারা ধার্মিক, আর যারা ভাঙাভাঙিতে নেই তারা অধার্মিক বা নাস্তিক।
৯৪। মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায় আসে না; যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
৯৫। মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি। কিন্তু ওরা তাকে চালায় ধর্মের নামে।
৯৬। মসজিদ ও মন্দির ভাঙার সময় একটি সত্য দীপ্ত হয়ে উঠে যে আল্লা ও ভগবান কতো নিõিয়, কতো অনুপস্থিত।
৯৭। ধার্মিক কখনোই সম্পুর্ন মানুষ নয়, অনেক সময় মানুষই নয়।
৯৮। ধর্মের কাজ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা; তাই এক ধার্মিকের রক্তে সব সময়ই গোপনে শানানো হ’তে থাকে অন্য ধার্মিককে জবাই করার ছুরিকা।
৯৯। একটি ধর্মান্ধের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় আল্লা অমন লোককে পছন্দ করতে পারে না।
১০০। মৌলবাদ হচ্ছে আল্লার নামে শয়তানবাদ।
১০১। শয়তানই আজকাল আল্লা আর ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে প্রাণ ভ’রে। আদিম শয়তান আর যাই হোক রাজনীতিবিদ ছিলো না, কিন্তু শয়তান এখন রাজনীতি শিখেছে; আল্লা আর ঈশ্বর আর জেসাসের নামে দিনরাত শ্লোগান দিচ্ছে।
১০২। মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি তত্ত্ব রয়েছে : অবৈজ্ঞানিকটি অধঃপতনতত্ত্ব, বৈজ্ঞানিকটি বিবর্তনতত্ত্ব। অধঃপতনতত্ত্বের সার কথা মানুষ স্বর্গ থেকে অধঃপতিত। বিবর্তনতত্ত্বের সারকথা মানুষ বিবির্তনের উৎকর্ষের ফল। অধঃপতনবাদীরা অধঃপতনতত্ত্বে বিশ্বাস করে; আমি যেহেতু মানুষের উৎকর্ষে বিশ্বাস করি, তাই বিশ্বাস করি বিবর্তনতত্ত্বে। অধঃপতন থেকে উৎকর্ষ সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
১০৩। মসলামানের মুক্তি ঘটে নি, কারণ তারা অতীত ও তাদের মহাপুরুষদের সম্পর্কে কোনো সত্যনিষ্ঠ আলোচনা করতে দেয় না।
১০৪। ভাবাদর্শগত জীবন হচ্ছে বন্দি জীবন। মানুষ জীবন যাপনের জন্যে জন্মেছে, ভাবাদর্শ যাপনের জন্যে জন্মে নি।
১০৫। গান্ধি দাবি করেন যে তিনি একই সাথে হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, বৌদ্ধ, ইহুদি, কনফুসীয় ইত্যাদি। একে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা মহৎ ব্যাপার ব’লে মনে করেছেন। কিন্তু এটা প্রতারণা, ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার,-তিনি নিজেকে ক’রে তুলেছেন সব ধরনের খারাপের সমষ্টি। এমন প্রতারণা থেকেই উৎপত্তি হয়েছে বাবরি মসজিদ উপাখ্যানের। তিনি যদি বলতেন, আমি হিন্দু নই, মুসলমান নই, বৌদ্ধ নই, ইহুদি নই, কনফুসীয় নই; আমি মানুষ, তাহলে বাবরি মসজিদ উপখ্যানের সম্ভাবনা অনেক কমতো।
১০৬। ভারতীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের আধুনিক উৎস মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধী।
১০৭। একটি আমলা আর মন্ত্রীর সাথে পাঁচ মিনিট কাটানোর পর জীবনের প্রতি ঘেন্না ধ’রে গেলো; তারপর একটি চড়ুইয়ের সাথে দু-মুহুর্ত কাটিয়ে জীবনকে আবার ভালবাসলাম।
১০৮। শরীরই শ্রেষ্ঠতম সুখের আকর। গোলাপের পাপড়ির উপর লক্ষ বছর শুয়ে থেকে, মধুরতম দ্রাক্ষার সুরা কোটি বছর পান ক’রে, শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত সহস্র বছর উপভোগ ক’রে যতোখানি সুখ পাওয়া যায়, তার চেয়ে অর্বুদগুন বেশি সুখ মেলে কয়েক মুহুর্ত শরীর মন্থন ক’রে।
১০৯। বিভূতিভূষনের পথের পাঁচালীর পাশে সত্যজিতের চলচিত্রটি খুবই শোচনীয় বস্তু, ওটি তৈরি না হ’লেও ক্ষতি ছিলো না; কিন্তু বিভূতিভূষন যদি পথের পাঁচালী না লিখতেন, তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার।
১১০। সত্যজিত যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষন বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন; কিন্তু অসভ্য প্রচারের যুগে মহৎ বিভূতিভূষণকে পৃথিবী কেনো ভারত চেনে না, চেনে গৌণ সত্যজিৎকে।
১১১। কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়েছিলো এক খরগোশকে, সে গল্পে কয়েক হাজার ধ’রে মানুষ মুখর। তারপর খরগোশ কতো সহস্রবার হারিয়েছে কাছিমকে, সে-কথা কেউ বলে না।
১১২। সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য ব’লে মনে হয়।
১১৩। শোনা যায় পুরোনো কালে ঘটতো নানা অলৌকিক ঘটনা, তবে পুরোনো কালের অলৌকিক ঘটনাগুলো বানানো বা ভোজবাজি। প্রকৃত অলৌকিক ঘটনার কাল হচ্ছে বিশশতক। পুরোনো কালের কোনো মোজেজ লাঠিকে সাপ বানাতে, বা সমুদ্রের উপর সড়ক তৈরি করতে পারতেন-ক্ষণিকের জন্যে। ওগুলো নিম্নমানের যাদু। সত্য স্থায়ী অলৌকিকতা সৃষ্টি করতে পেরেছে শুধু বিশশতকের বিজ্ঞান। বিদুৎ, বিমান, টেলিভিশন, কম্পিউটার, নভোযান, এমনকি সামান্য শেলাইকলটিও অতীতের যে কোন অলৌকিক ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি অলৌকিক। বিজ্ঞান অলৌকিকতাকে সত্যে পরিণত করেছে ব’লে গাধাও তাতে বিষ্মিত হয় না, কিন্তু পুরোনো তুচ্ছ অলৌকিকতার কথায় সবাই বিহ্বল হয়ে উঠে।
১১৪। পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে ক’রে পুজো করতো। আজো সেই পুজো চলতো।
১১৫। আজকালকার আধিকাংশ পি এইচ ডি অভিসন্দর্ভই আশার আলো জ্বালায়; মনে হয় এখানেই নিহিত আমাদের শিক্ষাসমস্যা সমাধানের বীজ। প্রথম বর্ষ অনার্স শ্রেনীতেই এখন পি এইচ ডি কোর্স চালু করা সম্ভব, এতে ছাত্ররা আড়াই বছরে একটি ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে পারে। এখানকার অধিকাংশ ডক্টরেটই øাতক পূর্ব ডক্টরেট; অদূর ভবিষ্যতে উচ্চমাধ্যমিক ডক্টরেটও পাওয়া যাবে।
১১৬। পৃথিবীতে যতোদিন অন্তত একজনও প্রথাবিরোধী মানুষ থাকবে, ততোদিন পৃথিবী মানুষের।
লেখক হুমায়ুন আজাদের প্রবচনের মত করে ভাবতে পারে বর্তমান বংলাদেশে এমন একজন লেখকও নেই। প্রবচন পড়েই আমি তার কঠিন ভক্ত। চলুন তার প্রবচন গুলো পড়ি।
পর্ব ১
১। মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ করে।
২। পুঁজিবাদের আল্লার নাম টাকা, মসজিদের নাম ব্যাংক।
৩। সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষনীয়। কিন্তু ভন্ডরা বলেন উলটো কথা।
৪। হিন্দুরা মুর্তিপূজারী; মুসলমানেরা ভাবমুর্তিপূজারী। মুর্তিপূজা নির্বুদ্ধিতা; আর ভাবমুর্তিপূজা ভয়াবহ।
৫। ‘মিনিষ্টার’ শব্দের মূল অর্থ ভৃত্য। বাঙলাদেশের মন্ত্রীদের দেখে শব্দটির মূল অর্থই মনে পড়ে।
৬। আমাদের অঞ্চলে সৌন্দর্য অশ্লীল, অসৌন্দর্য শ্লীল। রুপসীর একটু নগ্ন বাহু দেখে ওরা হৈ চৈ করে, কিন্তু পথে পথে ভিখিরিনির উলঙ্গ দেহ দেখে ওরা একটুও বিচলিত হয় না।
৭। শ্রদ্ধা হচ্ছে শক্তিমান কারো সাহায্যে স্বার্থোদ্ধারের বিনিময়ে পরিশোধিত পারিশ্রমিক।
৮। আগে কারো সাথে পরিচয় হ’লে জানতে ইচ্ছে হতো সে কী পাশ? এখন কারো সাথে দেখা হ’লে জানতে ইচ্ছে হয় সে কী ফেল?
৯। ব্যর্থরাই প্রকৃত মানুষ, সফলেরা শয়তান।
১০। পরমাত্মীয়ের মৃত্যুর শোকের মধ্যেও মানুষ কিছুটা সুখ বোধ করে যে সে নিজে বেঁচে আছে।
১১। জনপ্রিয়তা হচ্ছে নেমে যাওয়ার সিঁড়ি। অনেকেই আজকাল জনপ্রিয়তার পথে নেমে যাচ্ছে।
১২। উন্নতি হচ্ছে ওপরের দিকে পতন। অনেকেরেই আজকাল ওপরের দিকে পতন ঘটছে।
১৩। প্রতিটি দ© গ্রন্থ সভ্যতাকে নতুন আলো দেয়।
১৪। বাঙলার প্রধান ও গৌণ লেখকদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রধানেরা পশ্চিম থেকে প্রচুর ঋণ করেন, আর গৌণরা আবর্তিত হন নিজেদের মৌলিক মূর্খতার মধ্যে।
১৫। মহামতি সলোমনের নাকি তিন শো পত্নী, আর সাত হাজার উপপত্নী ছিলো। আমার মাত্র একটি পত্নী। তবু সলোমনের চরিত্র সম্পর্কে কারো কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু আমার চরিত্র নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন।
১৬। বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে।
১৭। আধুনিক প্রচার মাধ্যমগুলো অসংখ্য শুয়োরবৎসকে মহামানবরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
১৮। অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশির কৃতিত্ব, হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়।
১৯। পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও।
২০। আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে।
২১। নিজের নিকৃষ্ট কালে চিরশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্য রয়েছে বই; আর সমকালের নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গ পাওয়ার জন্যে রয়েছে টেলিভিশন ও সংবাদপত্র।
২২। শৃঙ্খলপ্রিয় সিংহের থেকে স্বাধীন গাধা উত্তম।
২৩। প্রাক্তন বিদ্রোহীদের কবরে যখন স্মৃতিসৌধ মাথা তোলে, নতুন বিদ্রোহীরা তখন কারাগারে ঢোকে, ফাসিঁকাঠে ঝোলে।
২৪। একনায়কেরা এখন গণতন্ত্রের স্তব করে, পুজিঁপতিরা ব্যস্ত থাকে সমাজতন্ত্রের প্রশংসায়।
২৫। পুরস্কার অনেকটা প্রেমের মতো; দু-একবার পাওয়া খুবই দরকার, এর বেশি পাওয়া লাম্পট্য।
২৬। বেতন বাঙলাদেশে এক রাষ্ট্রীয় প্রতারণা। এক মাস খাটিয়ে এখানে পাঁচ দিনের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।
২৭। কবিরা বাঙলায় বস্তিতে থাকে, সিনেমার সুদর্শন গর্দভেরা থাকে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত প্রাসাদে।
২৮। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক।
২৯। বুদ্ধিজীবীরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে। ভন্ড, ভন্ডতর, ভন্ডতম।
৩০। শিক্ষকের জীবনের থেকে চোর, চোরাচালানি, দারোগার জীবন অনেক আকর্ষণীয়। এ সমাজ শিক্ষক চায় না, চোর-চোরাচালানি-দারোগা চায়।
৩১। শয়তানের প্রার্থনায় বৃষ্টি নামে না, ঝড় আসে; তাতে অসংখ্য সৎ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
৩২। যে বুদ্ধিজীবী নিজের সময় ও সমাজ নিয়ে সন্তুষ্ট, সে গৃহপালিত পশু।
৩৩। পা, বাঙলাদেশে, মাথার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পদোন্নতির জন্যে এখানে সবাই ব্যগ্র। কিন্তু মাথার যে অবনতি ঘটছে, তাতে কারো কোনো উদ্বেগ নেই।
৩৪। এখানকার একাডেমিগুলো সব ক্লান্ত গর্দভ; মুলো খাওয়া ছাড়া ওগুলোর পক্ষে আর কিছু অসম্ভব।
৩৫। জন্মাতরবাদ ভারতীয় উপমহাদেশের অবধারিত দর্শন। এ অঞ্চলে এক জন্মে পরীক্ষা দিতে হয়, আরেক জন্মে ফল বেরোয়, দু-জন্ম বেকার থাকতে হয়, এবং ভাগ্য প্রসন্ন হ’লে কোন এক জন্মে চাকুরি মিলতেও পারে।
৩৬। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দরকার ছিলো না, কিন্তু দরকার ছিলো বাঙলা সাহিত্যের। পুরস্কার না পেলে হিন্দুরা বুঝতো না যে রবীন্দ্রনাথ বড়ো কবি; আর মুসলমানেরা রহিম, করিমকে দাবি করতো বাঙলার শ্রেষ্ঠ কবি হিশেবে।
৩৭। বাঙলাদেশে কয়েকটি নতুন শাস্ত্রের উদ্ভব ঘটেছে; এগুলো হচ্ছে স্তুতিবিজ্ঞান, স্তব সাহিত্য, সুবিধা দর্শন ও নমস্কারতত্ত্ব।
৩৮। এখানে অসতেরা জনপ্রিয়, সৎ মানুষেরা আক্রান্ত।
৩৯। টেলিভিশন, নিকৃষ্ট জিনিশের একনম্বর পৃষ্ঠপোষক, হিরোইন প্যাথেডিনের থেকেও মারাত্মক। মাদক গোপনে নষ্ট করে কিছু মানুষকে, টেলিভিশন প্রকাশ্যে নষ্ট করে কোটি কোটি মানুষকে।
৪০। পৌরানিক পুরুষেরা সামান্য অভিজ্ঞতা ভিত্তি ক‘রে অসামান্য সব সিদ্ধান্ত নিতেন। যযাতি পুত্রের কাছে থেকে যৌবন ধার ক’রে মাত্র এক সহস্র বছর সম্ভোগের পর সিদ্ধান্েত পৌছেন যে সম্ভোগে কখনো তৃপ্তি আসে না! এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্েতর জন্যে সহস্র বছর খুবই কম সময় : আজকাল কেউ এতো কম অভিজ্ঞতায় এতো বড়ো একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সাহস করবে না।
৪১। অভিনেতারা সব সময়ই অভিনেতা; তারা যখন বিপ্লব করে তখন তারা বিপ্লবের অভিনয় করে। এটা সবাই বোঝে, শুধু তারা বোঝে না।
৪২। বাঙলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমন্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি।
৪৩। পৃথিবী জুড়ে প্রতিটি নরনারী এখন মনে ক’রে তাদের জীবন ব্যর্থ; কেননা তারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হতে পারে নি।
৪৪। মৌলিকতা হচ্ছে মঞ্চ থেকে দূরে অবস্থান।
৪৫। এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশদূষন : অন্যান্য সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও।
৪৬। বাঙালি একশো ভাগ সৎ হবে, এমন আশা করা অন্যায়। পঞ্চাশ ভাগ সৎ হ’লেই বাঙালিকে পুরস্কার দেয়া উচিত।
৪৭। একজন চাষী বা নদীর মাঝি সাংস্কৃতিকভাবে যতোটা মূল্যবান, সারা সচিবালয় ও মন্ত্রীপরিষদও ততোটা মূল্যবান নয়।
৪৮। মানুষ ও কবিতা অবিচ্ছেদ্য। মানুষ থাকলে বুঝতে হবে কবিতা আছে : কবিতা থাকলে বুঝতে হবে মানুষ আছে।
৪৯। বাঙালি আন্দোলন করে, সাধারণত ব্যর্থ হয়, কখনোকখনো সফল হয়; এবং সফল হওয়ার পর মনে থাকে না কেনো তারা আন্দোলন করেছিলো।
৫০। এখন পিতামাতারা গৌরব বোধ করেন যে তাঁদের পুত্রটি গুন্ডা। বাসায় একটি নিজস্ব গুন্ডা থাকায় প্রতিবেশীরা তাঁদের সালাম দেয়, মুদিদোকানদার খুশি হয়ে বাকি দেয়, বাসার মেয়েরা নির্ভয়ে একলা পথে বেরোতে পারে, এবং বাসায় একটি মন্ত্রী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পর্ব ২
১। এদেশের মুসলমান এক সময় মুসলমান বাঙালি, তারপর বাঙালি মুসলামান, তারপর বাঙালি হয়েছিলো; এখন আবার তারা বাঙালি থেকে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি মুসলমান থেকে মুসলমান বাঙালি, এবং মুসলমান বাঙালি থেকে মুসলমান হচ্ছে। পৌত্রের ঔরষে জন্ম নিচ্ছে পিতামহ।
২। নিন্দুকেরা পুরোপুরি অসৎ হ’তে পারেন না, কিছুটা সততা তাঁদের পেশার জন্যে অপরিহার্য; কিন্তু প্রশংসাকারীদের পেশার জন্য মিথ্যাচারই যথেষ্ট।
৩। বাস্তব কাজ অনেক সহজ অবাস্তব কাজের থেকে ; আট ঘন্টা একটানা শ্রম গাধাও করতে পারে, কিন্তু একটানা এক ঘন্টা স্বপ্ন দেখা রবীন্দ্রনাথের পক্ষেও অসম্ভব।
৪। প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বলতে বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে।
৫। তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার : বন্দুক ও কবর।
৬। প্রতিটি বিজ্ঞাপনে পণ্যটির থেকে পণ্যাটি অনেক লোভনীয়; তাই ব্যর্থ হচ্ছে বিজ্ঞাপনগুলো। দর্শকেরা পণ্যের থেকে পণ্যাটিকেই কিনতে ও ব্যবহার করতে অধিক আগ্রহ বোধ করে।
৭। কোন দেশের লাঙলের রূপ দেখেই বোঝা যায় ওই দেশের মেয়েরা কেমন নাচে, কবিরা কেমন কবিতা লেখেন, বিজ্ঞানীরা কি আবিষ্কার করেন, আর রাজনীতিকেরা কতোটা চুরি করে।
৮। যারা ধর্মের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়, তারা ধার্মিকও নয়, বিজ্ঞানীও নয়। শুরুতেই স্বর্গ থেকে যাকে বিতারিত করা হয়েছিলো, তারা তার বংশধর।
৯। যতোদিন মানুষ অসৎ থাকে, ততোদিন তার কোনো শত্রু থাকে না; কিন্তু যেই সে সৎ হয়ে উঠে, তার শত্রুর অভাব থাকে না।
১০। এদেশে সবাই শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক : দারোগার শোকসংবাদেও লেখা হয়, ‘তিনি শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক ছিলেন’।
১১। শিল্পকলা হচ্ছে নিরর্থক জীবনকে অর্থপূর্ণ করার ব্যর্থ প্রয়াস।
১২। কিছু বিশেষন ও বিশেষ্য পরস্পরসম্পর্কিত; বিশেষ্যটি এলে বিশেষন আসে, বিশেষন এলে বিশেষ্য আসে। তারপর একসময় একটি ব্যবহার করলেই অন্যটি বোঝায়, দুটি একসাথে ব্যবহার করতে হয় না। যেমন : ভন্ড বললেই পীর আসে, আবার পীর বলতেই ভন্ড আসে। এখন আর ‘ভন্ড পীর’ বলতে হয় না; ‘পীর’ বললেই ‘ ভন্ড পীর ’ বোঝায়।
১৩। ভক্ত শব্দের অর্থ খাদ্য। প্রতিটি ভক্ত তার গুরুর খাদ্য। তাই ভক্তরা দিনদিন জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হয়ে আবর্জনায় পরিণত হয়।
১৪। মূর্তি ভাঙতে লাগে মেরুদন্ড, মূর্তিপূজা করতে লাগে মেরুদন্ডহীনতা।
১৫। আমাদের সমাজ যাকে কোনো মূল্য দেয় না, প্রকাশ্যে তার অকুণ্ঠ প্রশংসা করে, আর যাকে মূল্য দেয় প্রকাশ্যে তার নিন্দা করে। শিক্ষকের কোনো মূল্য নেই, তাই তার প্রশংসায় সমাজ পঞ্চমুখ; চোর, দারোগা, কালোবাজারি সমাজে অত্যন্ত মুল্যবান, তাই প্রকাশ্যে সবাই তাদের নিন্দা করে।
১৬। সৌন্দর্য রাজনীতির থেকে সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
১৭। ক্ষুধা ও সৌন্দর্যবোধের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে-সব দেশে অধিকাংশ মানুষ অনাহারী, সেখানে মাংসল হওয়া রূপসীর লক্ষণ; যে-সব দেশে প্রচুর খাদ্য আছে, সেখানে মেদহীন হওয়া রূপসীর লক্ষণ। এজন্যেই হিন্দি আর বাঙলা ফিল্মের নায়িকাদের দেহ থেকে মাংস চর্বি উপচে পড়ে। ক্ষুধার্ত দর্শকেরা সিনামা দেখে না, মাংস ও চর্বি দেখে ক্ষুধা নিবৃত্ত করে।
১৮। বাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে বই খুলুন, অবাঞ্ছিতদের সাথে সময় কাটাতে চাইলে টেলিভিশন খুলুন।
১৯। স্তবস্তুতি মানুষকে নষ্ট করে। একটি শিশুকে বেশি স্তুতি করুন, সে কয়েকদিনে পাক্কা শয়তান হয়ে উঠবে। একটি নেতাকে স্তুতি করুন, কয়েকদিনের মধ্যে দেশকে সে একটি একনায়ক উপহার দেবে।
২০। ধনীরা যে মানুষ হয় না, তার কারণ ওরা কখনো নিজের অন্তরে যায় না। দুঃখ পেলে ওরা ব্যাংকক যায়, আনন্দে ওরা আমেরিকা যায়। কখনো ওরা নিজের অন্তরে যাতে পারে না, কেননা অন্তরে কোনো বিমান যায় না।
২১। রাজনীতি ও সংস্কৃতি সম্পুর্ণ বিপরীত বস্তু ; একটি ব্যাধি অপরটি স্বাস্থ্য।
২২। আগে প্রতিভাবানেরা বিদেশ যেতো; এখন প্রতিভাবানেরা নিয়মিত বিদেশ যায়।
২৩। বিশ্বের নারী নেতারা নারীদের প্রতিনিধি নয় ; তারা সবাই রুগ্ন পিতৃতন্ত্রের প্রিয় সেবাদাসী।
২৪। কোন বাঙালি আজ পর্যন্ত আত্মজীবনী লেখে নি, কেননা আত্মজীবনী লেখার জন্যে দরকার সততা। বাঙালির আত্মজীবনী হচ্ছে শয়তানের লেখা ফেরেশতার আত্মজীবনী।
২৫। কারো প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার উপায় হচ্ছে তার সাথে কখনো সাক্ষাৎ না করা।
২৬। মানুষের তুলনায় আর সবই ক্ষুদ্র : আকাশ তার পায়ের নিচে, চাঁদ তার এক পদক্ষেপের দূরত্বে, মহাজগত তার নিজের বাড়ি।
২৭। পুরুষ তার পুরুষ বিধাতার হাতে লিখিয়ে নিয়েছে নিজের রচনা; বিধাতা হয়ে উঠেছে পুরুষের প্রস্তুত বিধানের শ্রুতিলিপিকর।
২৮। হিন্দু বিধানে পুরুষ দ্বারা দূষিত না হওয়া পর্যন্ত নারী পরিশুদ্ধ হয় না!
২৯। সব ধরনের অভিনয়ের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে রাজনীতি; রাজনীতিকেরা অভিনয় করে সবচেয়ে বড় মঞ্চে ও পর্দায়।
৩০। উচ্চপদে না বসলে এদেশে কেউ মূল্য পায় না। সক্রেটিস এদেশে জন্ম নিলে তাঁকে কোনো একাডেমির মহাপরিচালক পদের জন্যে তদ্বির চালাতে হতো।
৩১। সক্রেটিস বলেছেন তিনি দশ সহস্র গর্দভ দ্বারা পরিবৃত। এখন থাকলে তিনি ওই সংখ্যার ডানে কটি শূন্য যোগ করতেন?
৩২। বাঙালি মুসলমান জীবিত প্রতিভাকে লাশে পরিনত করে, আর মৃত প্রতিভার কবরে আগরবাতি জ্বালে।
৩৩। নজরুলসাহিত্যের আলোচকেরা সমালোচক নন, তাঁরা নজরুলের মাজারের খাদেম।
৩৪। ভ্রষ্ট বাঙালিকে ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপায় তার গালে শক্ত ক’রে একটি চড় কষিয়ে দেয়া।
৩৫। বাঙালির জাতিগত আলস্য ধরা পড়ে ভাষায়। বাঙালি ‘দেরি করে’, ‘চুরি করে’, এমনকি ‘বিশ্রাম করে’। বিশ্রাম ও বাঙালির কাছে কাজ।
৩৬। বাঙালি অভদ্র, তার পরিচয় রয়েছে বাঙালির ভাষায়। কেউ এলে বাঙালি জিজ্ঞেস করে, ‘কি চাই?’ বাঙালির কাছে আগন্তুক মাত্রই ভিক্ষুক। অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়ে বাঙালি বলে, ‘দাঁড়ান’। বসতে বলার সৌজন্যটুকুও বাঙালির নেই।
৩৭। মানুষ মরণশীল, বাঙালি অপমরণশীল।
৩৮। গণশৌচাগার দেখলেই কেনো যেনো আমার বাঙালির আত্মাটির কথা বারবার মনে পড়ে।
৩৯। বিনয়ীরা সুবিধাবাদী, সুবিধাবাদীরা বিনয়ী।
৪০। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন প্রতিটি প্রেমই প্রথম প্রেম।
৪১। মার্ক্সবাদের কথা শুনলে এখন মোল্লারা ক্ষেপে না, সমাজতন্ত্রের কথা তারা সন্েতাষের সাথেই শোনে; কিন্তু শরীরের কথা শুনলে লম্পটরাও ধর্মযুদ্ধে নামে।
৪২। এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো।
৪৩। খুব ভেবে চিনতে মানুষ আত্মসমর্পন করে, আর অনুপ্রাণিত মুহুর্তে ঘোষনা করা স্বাধীনতা।
৪৪। মানুষ যখন তার শ্রেষ্ঠ স্বপ্নটি দেখে তখনি সে বাস করে তার শ্রেষ্ঠ সময়ে।
৪৫। এ ব-দ্বীপে দালালি ছাড়া ফুল ফোটে না, মেঘও নামে না।
৪৬। আমার লেখার যে অংশ পাঠককে তৃপ্তি দেয়, সেটুকু বর্তমানের জন্যে; আর যে অংশ তাদের ক্ষুব্দ করে সেটুকু ভবিষ্যতের জন্য।
৪৭। বাঙলার বিবেক খুবই সন্দেহজনক। বাঙলার চুয়াত্তরের বিবেক সাতাত্তরে পরিনত হয় সামরিক একনায়কের সেবাদাসে।
৪৮। বাঙলাদেশ অমরদের দেশ। এ-দেশের প্রতি বর্গমিটার মাটির নিচে পাঁচজন ক’রে অমর ঘুমিয়ে আছেন।
৪৯। পাকিস্থানের ইতিহাস ঘাতক আর শহীদদের ইতিহাস। বাঙলাদেশের ইতিহাস শহীদ আর ঘাতকদের ইতিহাস।
৫০। একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়।
৫১। বাঙলার প্রতিটি ক্ষমতাদখলকারী দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দুর্বৃত্তের সংঘ।
৫২। পৃথিবীতে একটি মাত্র দক্ষিনপন্থী সাম্যবাদী দল রয়েছে। সেটি আছে বাঙলাদেশে।
৫৩। আমাদের প্রায়-প্রতিটি মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকের ভেতরে একটি ক’রে মৌলবাদী বাস করে। তারা পান করাকে পাপ মনে করে, প্রেমকে গুনাহ মনে করে, কিন্তু চারখান বিবাহকে আপত্তিকর মনে করে না।
৫৪। কবিতা এখন দু-রকম; দালালি, ও গালাগালি।
৫৫। বাঙলাদেশের সাহিত্যে আধুনিকতাপর্বের পর কি আসবে আধুনিকতা-উত্তর-পর্ব? না। আসতে দেখছি গ্রাম্যতার পর্ব।
৫৬। পৃথিবী জুড়ে সমাজতন্ত্রের সাম্প্রতিক দুরবস্থার সম্ভবত গভীর ফ্রয়েডীয় কারণ আছে। সমাজতন্ত্রের মার্ক্সীয়, লেলিনীয়, স্তালিনীয় আবেদন ছিলো, কিন্তু যৌনাবেদন ছিলো না।
৫৭। স্বার্থ সিংহকে খচ্চরে আর বিপ্লবীকে ক্লীবে পরিনত করে।
৫৮। অপন্যাস হচ্ছে সে-ধরনের সাহিত্য, যা বছরে লাখ টন উৎপাদিত হ’লেও সাহিত্যের কোনো উপকার হয় না; আর আধ কেজি উৎপাদিত না হ’লেও কোনো ক্ষতি হয় না।
৫৯। সৎ মানুষ মাত্রই নিঃসঙ্গ, আর সকলের আক্রমনের লক্ষ বস্তু।
৬০। মধ্যবিত্ত পতিতাদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তারা পতিতাদের সুখ ও সতীর পূন্য দুটিই দাবি করে।
৬১। বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়। বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে।
৬২। পুঁজিবাদী পর্বের সবচেয়ে বড়ো ও জনপ্রিয় কুসংস্কারের নাম প্রেম।
৬৩। জীবনের সারকথা কবর।
৬৪। শাড়ি প’রে শুধু শুয়ে থাকা যায়; এজন্যে বাঙালি নারীদের হাঁটা হচ্ছে চলমান শোয়া।
৬৫। শ্বাশত প্রেম একজনের শরীরে ঢুকে আরেকজনের স্বপ্ন দেখা।
৬৬। প্রেম হচ্ছে নিরন্তর অনিশ্চয়তা; বিয়ে ও সংসার হচ্ছে চূড়ান্ত নিশ্চিন্তির মধ্যে আহার, নিদ্রা, সঙ্গম, সন্তান, ও শয়তানি।
৬৭। ইতিহাস হচ্ছে বিজয়ীর হাতে লেখা বিজিতের নামে এক রাশ কুৎসা।
৬৮। পুরুষতান্ত্রিক সভ্যতার শ্রেষ্ঠ শহীদের নাম মা।
৬৯। গত দু-শো বছরে গবাদিপশুর অবস্থার যতোটা উন্নতি ঘটেছে নারীর অবস্থার ততোটা উন্নতি ঘটে নি।
৭০। টাকাই অধিকাংশ মানুষের একমাত্র ইন্দ্রিয়।
৭১। মৃত সিংহের থেকে জীবিত গাধাও কতো জোতির্ময় উজ্জ্বল।
৭২। মানুষ মরলে লাশ হয়, সংস্কৃতি মরলে প্রথা হয়।
৭৩। আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে।
৭৪। পৃথিবীর প্রধান বিশ্বাসগুলো অপবিশ্বাস মাত্র। বিশ্বাসীরা অপবিশ্বাসী।
৭৫। ঐতিহ্য বলতে এখানে লাশকেই বোঝায়। তবে লাশ জীবনকে কিছুই দিতে পারে না।
৭৬। গাধা একশো বছর বাঁচলেও সিংহ হয় না।
৭৭। আমি ঈর্ষা করি শুধু তাদের যারা আজো জন্মে নি।
৭৮। সতীচ্ছদ আরব পুরুষদের জাতীয় পতাকা।
৭৯। সবচেয়ে হাস্যকর কথা হচ্ছে একদিন আমরা কেউ থাকব না।
৮০। পাপ কোনো অন্যায় নয়, অপরাধ অন্যায়। পাপ ব্যক্তিগত, তাতে সমাজের বা অন্যের, এমনকি পাপীর নিজেরও কোনো ক্ষতি হয় না; কিন্তু অপরাধ সামাজিক, তাতে উপকার হয় অপরাধীর, আর ক্ষতি হয় অন্যের বা সমাজের।
৮১। ক্ষমতায় থাকার সময় যারা সত্য প্রকাশ করতে দেয় না, ক্ষমতা হারানোর পর তারা অজ্রস্য মিথ্যার প্রকাশ রোধ করতে দেয় না।
৮২। শিশু, সবুজ, তরুনীরা আছে ব’লে বেঁচে থাকা আজো আমার কাছে আপত্তিকর হয়ে উঠে নি।
৮৩। পশু আর পাখিরাই মানবিক।
৮৪। ক্ষমতায় যাওয়ার একটিই উপায়; সমস্যা সৃষ্টি করা। সমস্যা সমাধান ক’রে কেউ ক্ষমতায় যায় না, যায় সৃষ্টি করে।
৮৫। পৃথিবীতে রাজনীতি থাকবেই। নইলে ওই অপদার্থ অসৎ লোভী দুষ্ট লোকগুলো কি করবে?
৮৬। ঋষি রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখলে বাল্যকাল থেকেই তাঁর জন্মাব্দ ১৮৬১র আগে দুটি বর্ণ যোগ করতে ইচ্ছে হয়। বর্ণ দুটি হচ্ছে খ্রিপূ।
৮৭। এখানে সাংবাদিকতা হচ্ছে নিউজপ্রিন্ট-বলপয়েন্ট-মিথ্যার পাচঁন।
৮৮। ফুলের জীবন বড়োই করুণ। অধিকাংশ ফুল অগোচরেই ঝ’রে যায়, আর বাকিগুলো ঝোলে শয়তানের গলায়।
৮৯। টেলিভিশনে জাহাজমার্কা আলকাতরার বিজ্ঞাপনটি আকর্ষনীয়, তাৎপর্যপূর্ণ; তবে অসম্পুর্ন। বিজ্ঞাপনটিতে জালে, জাহাজে, টিনের চালে আলকাতরা লাগানোর উপকারিতার কথা বলা হয়; কিন্তু বলা উচিত ছিলো যে জাহাজ মার্কা আলকাতরা লাগানোর উৎকৃষ্টতম স্থান হচ্ছে টেলিভিশনের পর্দা।, বিশেষ ক’রে যখন বাঙলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখা যায়।
৯০। আমাদের অধিকাংশের চরিত্র এতো নির্মল যে তার নিরপেক্ষ বর্ণনা দিলেও মনে হয় অশ্লীল গালাগাল করা হচ্ছে।
৯১। মোল্লারা পবিত্র ধর্মকেই নষ্ট ক’রে ফেলেছে; ওরা হাতে রাষ্ট্র পেলে তাকে জাহান্নাম ক’রে তুলবে।
৯২। বিধাতা মৌলবাদী নয়। কে প্রার্থনা করলো, কে করলো না; কে কোন তরুনীর গ্রীবার দিকে তাকালো, কোন রূপসী তার রূপের কতো অংশ দেখালো, এসব তাকে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন করে না। কিন্তু বিধাতার পক্ষে এতে ভীষন উদ্বিগ্ন বোধ করে ভন্ডরা।
৯৩। মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা, মন্দির ভাঙে ধার্মিকেরা, তারপরও তারা দাবি করে তারা ধার্মিক, আর যারা ভাঙাভাঙিতে নেই তারা অধার্মিক বা নাস্তিক।
৯৪। মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায় আসে না; যায় আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
৯৫। মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি। কিন্তু ওরা তাকে চালায় ধর্মের নামে।
৯৬। মসজিদ ও মন্দির ভাঙার সময় একটি সত্য দীপ্ত হয়ে উঠে যে আল্লা ও ভগবান কতো নিõিয়, কতো অনুপস্থিত।
৯৭। ধার্মিক কখনোই সম্পুর্ন মানুষ নয়, অনেক সময় মানুষই নয়।
৯৮। ধর্মের কাজ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা; তাই এক ধার্মিকের রক্তে সব সময়ই গোপনে শানানো হ’তে থাকে অন্য ধার্মিককে জবাই করার ছুরিকা।
৯৯। একটি ধর্মান্ধের মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় আল্লা অমন লোককে পছন্দ করতে পারে না।
১০০। মৌলবাদ হচ্ছে আল্লার নামে শয়তানবাদ।
১০১। শয়তানই আজকাল আল্লা আর ঈশ্বরের নাম নিচ্ছে প্রাণ ভ’রে। আদিম শয়তান আর যাই হোক রাজনীতিবিদ ছিলো না, কিন্তু শয়তান এখন রাজনীতি শিখেছে; আল্লা আর ঈশ্বর আর জেসাসের নামে দিনরাত শ্লোগান দিচ্ছে।
১০২। মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে দুটি তত্ত্ব রয়েছে : অবৈজ্ঞানিকটি অধঃপতনতত্ত্ব, বৈজ্ঞানিকটি বিবর্তনতত্ত্ব। অধঃপতনতত্ত্বের সার কথা মানুষ স্বর্গ থেকে অধঃপতিত। বিবর্তনতত্ত্বের সারকথা মানুষ বিবির্তনের উৎকর্ষের ফল। অধঃপতনবাদীরা অধঃপতনতত্ত্বে বিশ্বাস করে; আমি যেহেতু মানুষের উৎকর্ষে বিশ্বাস করি, তাই বিশ্বাস করি বিবর্তনতত্ত্বে। অধঃপতন থেকে উৎকর্ষ সব সময়ই উৎকৃষ্ট।
১০৩। মসলামানের মুক্তি ঘটে নি, কারণ তারা অতীত ও তাদের মহাপুরুষদের সম্পর্কে কোনো সত্যনিষ্ঠ আলোচনা করতে দেয় না।
১০৪। ভাবাদর্শগত জীবন হচ্ছে বন্দি জীবন। মানুষ জীবন যাপনের জন্যে জন্মেছে, ভাবাদর্শ যাপনের জন্যে জন্মে নি।
১০৫। গান্ধি দাবি করেন যে তিনি একই সাথে হিন্দু, খ্রিষ্টান, মুসলমান, বৌদ্ধ, ইহুদি, কনফুসীয় ইত্যাদি। একে তিনি ও তাঁর অনুসারীরা মহৎ ব্যাপার ব’লে মনে করেছেন। কিন্তু এটা প্রতারণা, ও ভয়ঙ্কর ব্যাপার,-তিনি নিজেকে ক’রে তুলেছেন সব ধরনের খারাপের সমষ্টি। এমন প্রতারণা থেকেই উৎপত্তি হয়েছে বাবরি মসজিদ উপাখ্যানের। তিনি যদি বলতেন, আমি হিন্দু নই, মুসলমান নই, বৌদ্ধ নই, ইহুদি নই, কনফুসীয় নই; আমি মানুষ, তাহলে বাবরি মসজিদ উপখ্যানের সম্ভাবনা অনেক কমতো।
১০৬। ভারতীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের আধুনিক উৎস মোহনচাঁদ করমচাঁদ গান্ধী।
১০৭। একটি আমলা আর মন্ত্রীর সাথে পাঁচ মিনিট কাটানোর পর জীবনের প্রতি ঘেন্না ধ’রে গেলো; তারপর একটি চড়ুইয়ের সাথে দু-মুহুর্ত কাটিয়ে জীবনকে আবার ভালবাসলাম।
১০৮। শরীরই শ্রেষ্ঠতম সুখের আকর। গোলাপের পাপড়ির উপর লক্ষ বছর শুয়ে থেকে, মধুরতম দ্রাক্ষার সুরা কোটি বছর পান ক’রে, শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীত সহস্র বছর উপভোগ ক’রে যতোখানি সুখ পাওয়া যায়, তার চেয়ে অর্বুদগুন বেশি সুখ মেলে কয়েক মুহুর্ত শরীর মন্থন ক’রে।
১০৯। বিভূতিভূষনের পথের পাঁচালীর পাশে সত্যজিতের চলচিত্রটি খুবই শোচনীয় বস্তু, ওটি তৈরি না হ’লেও ক্ষতি ছিলো না; কিন্তু বিভূতিভূষন যদি পথের পাঁচালী না লিখতেন, তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার।
১১০। সত্যজিত যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষন বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন; কিন্তু অসভ্য প্রচারের যুগে মহৎ বিভূতিভূষণকে পৃথিবী কেনো ভারত চেনে না, চেনে গৌণ সত্যজিৎকে।
১১১। কোন কালে এক কদর্য কাছিম দৌড়ে হারিয়েছিলো এক খরগোশকে, সে গল্পে কয়েক হাজার ধ’রে মানুষ মুখর। তারপর খরগোশ কতো সহস্রবার হারিয়েছে কাছিমকে, সে-কথা কেউ বলে না।
১১২। সত্য একবার বলতে হয়; সত্য বারবার বললে মিথ্যার মতো শোনায়। মিথ্যা বারবার বলতে হয়; মিথ্যা বারবার বললে সত্য ব’লে মনে হয়।
১১৩। শোনা যায় পুরোনো কালে ঘটতো নানা অলৌকিক ঘটনা, তবে পুরোনো কালের অলৌকিক ঘটনাগুলো বানানো বা ভোজবাজি। প্রকৃত অলৌকিক ঘটনার কাল হচ্ছে বিশশতক। পুরোনো কালের কোনো মোজেজ লাঠিকে সাপ বানাতে, বা সমুদ্রের উপর সড়ক তৈরি করতে পারতেন-ক্ষণিকের জন্যে। ওগুলো নিম্নমানের যাদু। সত্য স্থায়ী অলৌকিকতা সৃষ্টি করতে পেরেছে শুধু বিশশতকের বিজ্ঞান। বিদুৎ, বিমান, টেলিভিশন, কম্পিউটার, নভোযান, এমনকি সামান্য শেলাইকলটিও অতীতের যে কোন অলৌকিক ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি অলৌকিক। বিজ্ঞান অলৌকিকতাকে সত্যে পরিণত করেছে ব’লে গাধাও তাতে বিষ্মিত হয় না, কিন্তু পুরোনো তুচ্ছ অলৌকিকতার কথায় সবাই বিহ্বল হয়ে উঠে।
১১৪। পুরোনো কালের মানুষ যদি দৈবাৎ একটি টেলিভিশনের সামনে এসে পড়তো, তাহলে তাকে দেবতা মনে ক’রে পুজো করতো। আজো সেই পুজো চলতো।
১১৫। আজকালকার আধিকাংশ পি এইচ ডি অভিসন্দর্ভই আশার আলো জ্বালায়; মনে হয় এখানেই নিহিত আমাদের শিক্ষাসমস্যা সমাধানের বীজ। প্রথম বর্ষ অনার্স শ্রেনীতেই এখন পি এইচ ডি কোর্স চালু করা সম্ভব, এতে ছাত্ররা আড়াই বছরে একটি ডক্টরেট ডিগ্রি পেতে পারে। এখানকার অধিকাংশ ডক্টরেটই øাতক পূর্ব ডক্টরেট; অদূর ভবিষ্যতে উচ্চমাধ্যমিক ডক্টরেটও পাওয়া যাবে।
১১৬। পৃথিবীতে যতোদিন অন্তত একজনও প্রথাবিরোধী মানুষ থাকবে, ততোদিন পৃথিবী মানুষের।
থ্যাঙ্কস ।
বিনম্র শ্রদ্ধা...
আর কাউকে যেন এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয়
ছুম্মা আমিন ।
২০০৪ সালের এই দিনে আমি আর দিশা বইমেলাতে ছিলাম, উনাকে দেখেছিও কয়েক বার কয়েক জায়গায়। সাথে ভক্ত আর পরিচিতদের ভীড়। আমরা বাসায় ফিরি রাত ন'টার দিকে, আর রাত এগারোটায় দুঃসংবাদটা পাই। এক সময় প্রায় সকালে উনাকে দেখতাম ফুলার রোড থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত হেঁটে যেতে। আমি বিখ্যাত ব্যক্তিদের সচেতনভাবে এড়িয়ে চলি তাই কখনো কোনদিন উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করিনি। কথা বলার চেষ্টা করলে আমার অভিজ্ঞতাটিও হয়তো মানিকের মতো হতো। আজকে সে কথা বলে কী লাভ।
সময়ের প্রচণ্ড বাতাসে ধুলো আর খড়-কুটো উড়ে যাবে। যে মহীরুহ সে ঠিকই মাথা উঁচু করে টিকে থাকবে। বালখিল্যদের আস্ফালনে তার কিছুই হবেনা।
আমি নিজেও এটা করি ।আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে একটা কথা বলি-কারো লেখা পড়ে বা গান শুনে বা নাটক-সিনেমায় অভিনয়ের ভিত্তিতে কাউকে নিয়ে আমরা যে ধারণা তৈরি করি তার সাথে বাস্তবের মিল প্রায়শ হয় না ।
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি।আজ অবিনাশি হুমায়ুন আজাদ দিবস।২০০৪ সালের এই দিনে মেলা থেকে ফেরার পথে ইসলামী জঙ্গিরা এই বহুমাত্রিক লেখকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল!এই দিন সারা বাংলাদেশ কেঁদে উঠেছিল, কেঁপে উঠেছিল।আজ সেই দিন।গভীর বেদনায় তাকে স্মরণ করি।
অনন্য আজাদ
অনেক অনেক শ্রদ্ধা জানাই
এবারের বইমেলায় পোষ্টারটি দেখেছি

................
বিনম্র শ্রদ্ধা...
আর কাউকে যেন এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয়
আমি হয়তো খুব ছোট কিছুর জন্য মারা যাব, স্যারের লেখা এ কবিতাটার কথা খুব মনে হয় তার মৃত্যুর কথা মনে হলে।
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো
ছোট ঘাসফুলের জন্যে
একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে
উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে
একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
দোয়েলের শিসের জন্যে
শিশুর গালের একটি টোলের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো চোখের মণিতে
গেঁথে থাকা একবিন্দু অশ্রুর জন্যে
একফোঁটা রৌদ্রের জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
এক কণা জ্যোৎস্নার জন্যে
এক টুকরো মেঘের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো টাওয়ারের একুশ তলায়
হারিয়ে যাওয়া একটি প্রজাপতির জন্যে
এক ফোঁটা সবুজের জন্যে
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্যে মারা যাবো
খুব ছোট একটি স্বপ্নের জন্যে
খুব ছোট দুঃখের জন্যে
আমি হয়তো মারা যাবো কারো ঘুমের ভেতরে
একটি ছোটো দীর্ঘশ্বাসের জন্যে
একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্যে।
ড. হুমায়ুন আজাদের নিচের কথাগুলো আমার খুব মনে পড়ে।
* সব ধর্মের নৈতিকতার ভিত্তি ভয়। বহু ধর্মে বিধাতা ক্রদ্ধ ও হিংস্র; ক্রদ্ধ ও হিংস্র হয়ে থাকা ছাড়া তাঁর আর কোনো কাজ নেই; অবিশ্বাসীকে শাস্তি দেয়ার জন্যে তিনি ব্যগ্র, এবং বিশ্বাসীকেও সব সময় রাখেন সে ভীতির মধ্যে।
* ধর্মের নৈতিকতার সাথে মানবিক নৈতিকতার তুলনা করলে ধরা পড়ে যে ধর্মীয় নৈতিকতার মূলে নৈতিকতা নেই, রয়েছে সেচ্ছাচারী নির্দেশ; আর মানবিক নৈতিকতার ভিত্তি হচ্ছে কল্যাণ।
* নাস্তিক চায় মানুষের চেতনাকে বদলে দিতে, মানুষকে বিকশিত করতে; আর ধার্মিক চায় মানুষের চেতনাকে নষ্ট করতে, মানুষকে রুদ্ধ করতে। ধার্মিকদের নৈতিকতাবোধ খুবই শোচনীয়।
* যে-কোনো নির্বোধের পক্ষে ধার্মিক হওয়া সহজ, কিন্তু শুধু জ্ঞানী ও মানবিক ব্যক্তিই হ’তে পারে নাস্তিক। নাস্তিক হত্যা আর ধ্বংস করে না; কিন্তু ধার্মিক সব সময় হত্যা ও ধ্বংসের জন্যে ব্যগ্র থাকে; তারা ইতিহাসের পাতাকে যুগে যুগে রক্তাক্ত করেছে। প্রত্যেক ধর্মে রয়েছে অসংখ্য সন্ত, যারা মস্তিষ্কের হত্যাকারী।
* মৃত্যুর পর মানুষের পরিণতি বর্ণনা ধর্মের এক প্রিয় বিষয়; এ এলাকায় ধর্মগুলো মানুষকে লোভের পর লোভ আর ভয়ের পর ভয় দেখায়। মৃত্যুর পর মানুষের পরিণতি সম্পর্কে ধর্মগুলো যা বলে, তা হাস্যকর, যাতে বিশ্বাস করতে পারে শুধু লোভী ও ভীত মানুষ।
* মৃত্যু হচ্ছে জীবনপ্রক্রিয়ার উল্টোনো অসম্ভব পরিসমাপ্তি। আর ফেরা নেই, আর অগ্রগতি নেই; চিরকালের জন্য থেমে যাওয়া। যে ছিলো সে আর সেই; আর সে নিশ্বাস নেয় না, তার শিরা আর কাঁপে না, আলো তাকে আর চকিত করে না, আঘাত তাকে আর ব্যথা দেয় না। আমি জানি, ভালো করেই জানি, কিছু অপেক্ষা করে নেই আমার জন্যে; কোনো বিস্মৃতির বিষণ্ন জলধারা, কোনো প্রেতলোক, কোনো পুনরুত্থান, কোনো বিচারক, কোনো স্বর্গ, কোনো নরক; আমি আছি, একদিন থাকবো না, মিশে যাবো, অপরিচিত হয়ে যাবো, জানবো না আমি ছিলাম। নিরর্থক সব পুণ্যশ্লোক, তাৎপর্যহীন প্রার্থনা, হাস্যকর উদ্ধত সমাধি; মৃত্যুর পর যে-কোনো জায়গাই আমি পড়ে থাকতে পারি,- জঙ্গলে, জলাভূমিতে, পথের পাশে, পাহাড়ের চূড়োয়, নদীতে।
বিনম্র শ্রদ্ধা...
প্রিয় স্যার, প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষ --বিনম্র শ্রদ্ধা
অনেক টা এই কথা গুলোর মতই চলে গেলেন তি্নি।আমরা জেনেছি, কিন্তু কিছু করতে পারিনি আ্জ পর্যন্ত। আর কখনো আমরা কিছু করতে পারবো, তাও মনে হয় না এই দেশে। কারন যে দেশে ধর্মের নৈতিকতার সাথে মানবিক নৈতিকতার তুলনা করলে ধরা পড়ে যে ধর্মীয় নৈতিকতার মূলে নৈতিকতা নেই, রয়েছে সেচ্ছাচারী নির্দেশ; সেখানে কিছু আশা করা এখন ভুল মনে হয়।আমরা পাকিস্তানিদের কে অনেক ঘৃনা করি। ৭১ এ পাকিস্তানিরা মেরেছে আমাদের বুদ্ধিজীবি, আর আজ আমরা ধর্মিয় মূল্যবোধ বা ধর্মের নামে মানুষ মারি ।কিন্তু ধর্মে কি সত্যি এমন কিছু লিখা আছে ? আমি বংশগত ভাবে মুসলিম ।ধর্ম খুব একটা পালন করি না ।কিন্তু এর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে। কারন আমি তেমন কিছু পাইনি ধর্মে, হানা-হানি, মারা মারি বা হত্যার ,মত জঘন্য কাজ, জানি আমার জানার পরিধিও অতি নগন্য। কিন্তু যারা ধর্মের নামে এই কাজ গুলো করে, তারা সত্যি কি ধর্ম জেনে শুনে কাজ গুলো করে ? তাহলে সেই পাকিস্তানিদের মধ্যে আর এদের মধ্যে পার্থক্য কত টুকু।যারা এই ঘৃন্য কাজ করলো।
স্যারের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। আর যেন আমাদের কাওকে এমন নির্মম মৃত্যুর শিকার হতে না হয়।
মানিক ভাই কেও অসংখ্য ধন্যবা্দ। এই রকম একটা পোষ্ট দেয়ার জন্য।
সকল ধর্মই অধর্মের বর্ম। এটা কড়া মাদক দ্রব্য সমতুল্য। আসক্ত করে তোলা সহজ, আর যে কোন মাদকাসক্তির মতই এর দ্বারা আক্রান্তদের আচরণ।
মন্তব্য করুন