ইউজার লগইন

বিপ্লবের ভেতর-বাহির: ৪

বিপ্লবের ভেতর-বাহির ১

বিপ্লবের ভেতর-বাহির: ২

বিপ্লবের ভেতর-বাহির: ৩

হুমায়ুন কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক। তিনি কবি ছিলেন। জীবনানন্দ দাশ নিয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন। প্রথম কাব্যগ্রস্থ কুসুমিত ইস্পাত ছাপা হয়েছিল ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে।
আজকাল হুমায়ুন কবিরকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না। তবে সেই সময়ের অনেকের লেখার মধ্যেই পাওয়া যাবে হুমায়ুন কবিরকে। হেলাল হাফিজের কথা আমরা শুনতে পারি-
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে স্পষ্ট এবং সরাসরি আহ্বান জানিয়ে লেখা প্রথম এবং প্রধান কবিতাটি হচ্ছে নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়। এর আগে আর কারও লেখায় এ রকম সরাসরি যুদ্ধের আহ্বান ঘোষিত হয়নি। এবং এই একটি কবিতা আমাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে দেয়। আমি লিখতে পারছিলাম না। অস্থিরতার ভেতর দিন কাটাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ৩/৪ পৃষ্ঠা দীর্ঘ একটি কবিতা লিখে ফেললাম। কবিতাটি লেখার পর সেটি কবি হুমায়ুন কবিরকে দেখালাম। তিনি সেটা পড়ে বললেন, এডিট করতে হবে। ৩/৪ পৃষ্ঠার কবিতাটিকে তিনি বললেন ১ পৃষ্ঠায় লিখতে। দুরূহতম সেই কাজটি আমার নিজেরই করতে হবে। কুসুমিত ইস্পাত-এর কবি আমার অতিরিক্ত আবেগ বিহ্বল কবিতাটিকে এডিট করে ১ পৃষ্ঠার পরিসরে আনবার তাগিদ দিয়েছিলেন। ক্রমাগত কাটাছেড়ার ভেতর হঠাৎ করেই নামটিও এসে গেল, ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ অমানুষিক খেটে শেষ পর্যন্ত কবিতাটিকে বর্তমান অবয়বে দাঁড় করালাম।

উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।

ক্যাম্পাসে সম্পাদিত কবিতাটি পড়ে শোনালাম কবি হুমায়ুন কবির এবং লেখক আহমদ ছফাকে। শুনে দুজনেই প্রচণ্ড আবেগে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘হেলাল, জীবনে তোমার আর কোন কবিতা না লিখলেও চলবে। একটি কবিতাই তোমাকে অমরত্বের দরোজায় পৌঁছে দিয়েছে।’ পরদিন তারা দুজনে আমাকে নিয়ে কবি আহসান হাবিবের কাছে গেলেন তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান অফিসে। কবি হুমায়ুন কবির আমাকে তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ‘হেলাল, কবিতা লেখে, ও একটি কবিতা লিখেছে সেটা পড়ে দেখেন।’ আমি তাঁর হাতে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি দিলাম। তিনি পড়লেন পড়ে বললেন, ‘বাবা, তোমাকে একটা কথা বলি, তোমার এই কবিতাটি আমার এই পত্রিকায় ছাপা যাবে না, ছাপলে আমার চাকরিটা চলে যাবে।' হুমায়ুন কবিরের দিকে ফিরে তাকে বললেন, ‌'কবির তুমি তো বোঝ, ও তো নতুন ও হয়তো অভিমান করবে'। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‌'তবে একটা কথা বলে দিই, তোমার অমরত্ব নিশ্চিত হয়ে গেছে, জীবনে তোমার আর কোনও কবিতা না লিখলেও চলবে।’

এই হুমায়ুন কবির নির্মনভাবে খুন হন ১৯৭২ সালের ৬ জুন। তাঁর স্ত্রী সুলতানা রেবুর স্মৃতিচারণ শুনুন-
হুমায়ুন ওর প্রথম কবিআর বইটি (কুসুমিত ইস্পাত) প্রকাশিত হবার আগে যতরকম শ্রম দেয়া দরকার তার সবটুকু দিয়েছিলে। বইটি ছাপা হবার জন্য সব প্রস্তুতিই ছিল সম্পন্ন। ঐদিন সে কথা জানাতে গেলে ওর শেষ দেখা হয়েছিল সেলিম আল দীন ও আহমদ ছফার সঙ্গে। প্রচন্ড গরমে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত অবস্থায় হুমায়ুন বাড়ি ফিরে এলে সন্ধ্যা নাগাদ আমরা খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত সাড়ে দশটায় আমি যখন আমার বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীদের সাহায্য নিয়ে গুলিবিদ্ধ হুমায়ুনকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাই, তার কিছু পরেই খবর পেয়ে হাসপাতালে অনেকে এসেছিলেন-যাঁদের মধ্যে আমি কেবল আহমদ শরীফ স্যারের কথা মনে করতে পারি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে হুমায়ুন চিরনিদ্রায় শায়িত আছে। কে জানত, একসময়ের প্রিয় আড্ডার জায়গাটিই হবে তার শেষ শয্যা!

কবি হুমায়ুন কবিরকে হত্যা করেছিল পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি। ১৯৭২ সালের ৬ জুন। এর আগে ৩ জুন খতম করা হয়েছিল সেলিম শাহনেওয়াজ বা ফজলুকে। ফজলুকে হত্যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে হুমায়ুন কবিরের মৃত্যুর ঘটনাটি। ফজলুর বিদ্রোহের বড় কারণ ছিল তাঁর প্রেমিকাকে দলের মেনে না নেওয়া। নিশ্চই মনে আছে, ফজলুর প্রেমিকা-স্ত্রীর নাম ছিল মিনু। মিনুকেও বহিস্কার করা হয়েছিল দল থেকে। মিনু ছিল হুমায়ুন কবিরের বোন। বোনকে আশ্রয় ও সমর্থন দিয়েছিলেন তিনি। এটাই ছিল হুমায়ুন কবিরের সম্ভবত একমাত্র অপরাধ। কেবল বোনকে সমর্থন দেওয়ার কারণেই প্রতিভাবান এই মানুষটিকে খতম করা হয়েছিল।
আরও একটি অভিযোগ আনা হয়েছিল হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে। হুমায়ুন কবিরের আরেক ভাই ফিরোজ কবিরও ছিল পার্টির একজন সক্রিয় কর্মী। ১৯৭১ সালে দল গঠনের পর পেয়ারা বাগানে এই ফিরোজ কবিরের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়েছিল সিরাজ সিকদারের সঙ্গে। তখন ফিরোজ কবিরকে বহিস্কার করা হয়। অভিযোগ করা হয় যে, এই বহিস্কারের সিদ্ধান্তও মেনে নেননি হুমায়ুন কবির।
হুমায়ুন কবিরকে খতম করার পর পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে একটি বিশেষ বক্তব্য প্রচার করা হয়েছিল ১৯৭২ এর ১০ জুন। সেখানে কেন হুমায়ুন কবিরকে খতম করা হয়েছে তার যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিল।
সেখানে বলা আছে, ‘সাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ, নাম-যশ করার পুরোপুরি বুর্জোয়া দৃষ্টিকোন সম্পন্ন হওয়ায় স্বভাবতই হুমায়ুন কবিরের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্য ছিল। তাঁর ইচ্ছা ছিল আর.এস.পি-এর নির্মল সেন ও প্রফেসর সিদ্দিকের মতো চাকুরী ও বুর্জোয়া জীবনযাপন করে সর্বহারা পার্টির নেতা হওয়া এবং লেখক হিসাবে নিজেকে জাহির করা। তার এই মনোভাব এবং তার ভাই ফিরোজ কবির সংক্রান্ত পার্টির সিদ্ধান্ত তাকে প্ররোচিত করে ফজলু-সুলতান চক্রের সঙ্গে যুক্ত হতে।’
আবার পরে আরও বলা হয়েছে, 'এক দিকে সে এ ধরণের কথা বলেছে আর অন্যদিকে ফজলু চক্র ও নিজের বোনকে আশ্রয় দিয়েছে। পার্টি ও নেতৃত্ব বিরোধী অপপ্রচার ও জঘন্য ব্যক্তিগত কৃৎসা সম্বলিত দলিলাদি লিখেছে, ছাপিয়েছে এবং বিতরণ করেছে, চক্রের প্রধান প্রতিক্রিয়াশীল বৃদ্ধিজীবী হিসাবে কাজ করেছে। তার উদ্দেশ্য ছিলচক্রান্তকারীদের চর হিসাবে গোপনে পার্টির মাঝে অবস্থান করা যাতে ফজলু চক্রের পতন হলেও সে পার্টির মাঝে লুকিয়ে থাকতে পারে এবং পার্টির বিরাটাকার ক্ষতিসাধন করতে পারে।'
বিবৃতির সবশেষে ছোট্ট একটা নোট দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, 'প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা চালাতে যেয়ে হুমায়ুনি কবির পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির গেরিলাদের হাতে খতম হয়। হুমায়ুন কবিরের মৃত্যুর পর বাংলাদেশ সরকার যে সকল পদক্ষেপ নিয়েছে তা পাক ফ্যাসিস্টদের হাতে নিহত কোনো বুদ্ধিজীবীদের ক্ষেত্রে নেয়নি। তার প্রতি সরকারের বিশেষ প্রীতি কি প্রমান করে না যে, সে সরকারের উঁচুদরের গোপন তাবেদার ছিল?'
ফজলু ও হুমায়ুন কবিরকে খতম করেছিল খসরু। এই খসরু আবার কাজী জাফরের গ্রুপের ক্যাডার ছিল বলে একটি প্রচারণা রয়েছে। তবে খসরুও বাঁচতে পারেনি। ১৯৭৪ সালে কালকীনি উপজেলায় রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্প দখল করতে গিয়ে নিহত হয়েছিল খসরু।
প্রথমে খতমে অংশ নেওয়া গেরিলাদের পুরস্কৃত করা হলেও সর্বহারা পার্টি পরবর্তীতে হুমায়ুন কবিরকে খতম করা ভুল ছিল বলে স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু‘ পার্টি আগে মনে রাখেনি তাদের মূল নেতা মাও সেতুঙ এর একটি কথা। সেটি হচ্ছে, ‘মানুষের মাথা পেঁয়াজের কোষ নয় যে, একবার কেটে ফেললে তা আবার গজাবে’। ফলে ভুল স্বীকার করলেও হুমায়ুন কবিরকে সর্বহারা পার্টি তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দিতে পারেনি।
পার্টির এক সময়ে সম্পাদক রইসউদ্দিন আরিফ লিখেছেন, ‘বিপ্লবী পার্টিতে মতবিরোধ থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মতবিরোধকে কেন্দ্র করে পার্টি কমরেডদেরকে জলেস্থলে-অন্তরীক্ষে যেখানে পাওয়া যায় সেখানেই ধরে জবাই করার উদ্ভট লাইন সর্বহারা পার্টিতে যেভাবে শেকড় গেড়ে বসেছিলো পৃথিবীর আর কোন বিপ্লবী পার্টির ইতিহাসে তার কোনো নজির খুঁজে পাওয়া দুস্কর।’

সিনেমায়-গল্পে টুইস্ট বলতে একটা কথা আছে। এবারে এই লেখার টুইস্ট। হুমায়ুন কবিরের বন্ধু ছিলেন ফরহাদ মজহার। হুমায়ুন কবিরের খুন হওয়ার পর
ফরহাদ মজহার কবিতায় লিখেছিলেন, "আমি তোকে ডেকে বলতে পারতুম হুমায়ূন অতো দ্রুত নয়, আরো আস্তে যা।" অর্থাৎ তার এই বদলে যাওয়াটা মজহারের পছন্দ হয় নি।
বলে রাখি, পুলিশ সে সময়ে ফরহাদ মজহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল বলে শোনা যায়। এরপরই তিনি আমেরিকা চলে যান।

সবশেষে তাদের আরেক বন্ধু, আহমদ ছফার ডায়েরি থেকে উদ্ধৃতি দেই-
"ভাত খেলাম। কাপড় ধুয়ে দিলাম। ঘুমোলাম। মনওয়ার এবং মসি এসে জাগালো। মসি ছেলেটাকে আমি ভয়ঙ্কর অপছন্দ করি। মনে হয় ছেলেটা কি একটা মতলবে ঘুরছে। আমার ধারণা হুমায়ুনের মৃত্যুরহস্যটা সে জানে। দিনে দিনে এ ধারণাটা আমার মনে পরিষ্কার রূপ লাভ করছে। কেমন জানি মনে হয়, ছেলেটার হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। এ ধরনের ছেলেদের কি করে এড়িয়ে চলবো সেটা একটা সমস্যা। রেবুদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে সম্ভবত। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করতে পারিনি। আশা করছি এরই মধ্যে নতুন কোনো তথ্য জেনে যাবো। ফরহাদ মজহারের আমেরিকা পলায়ন, সালেহার সঙ্গে স্বামীর পুনর্মিলন এসবের সঙ্গে বোধ হয় হুমায়ুনের মৃত্যুর একটা সম্পর্ক জড়িত রয়েছে।''

টুইস্ট শেষ। আবার মূল প্রসঙ্গ। আবার সিরাজ সিকদার। তাঁর মৃত্যু নিয়েও অনেক মিথ রয়েছে। এখানেও কি প্রেম-ভালবাসা জাতীয় ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজ করেছিল? আগামি পর্বে এই আলোচনাই

পোস্টটি ২৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


মন খারাপ লাগতেছে এই পর্ব পড়ে।

পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
ভাল থাকুন।

শওকত মাসুম's picture


মন খারাপ করারই কথা। কোনো কারণ ছাড়াই খুন করা হয়েছিল প্রতিভাবান এই মানুষটিকে

আরাফাত শান্ত's picture


দারুন হচ্ছে ভাইয়া।

শওকত মাসুম's picture


ধন্যবাদ পড়ার জন্য শান্ত

Ashfaqul Taposh's picture


মসি কে?

ভাল লাগল।

শওকত মাসুম's picture


জানতে পারলে জানাবো

জ্যোতি's picture


একটানে পড়ার মত লেখা । পর্বগুলো আরো বড় হলে দারুণ সময় কাটতো পড়ে । এই পর্বের লেখা সমন্ধে তেমন কিছুই জানতাম না তবে যতটুকু শুনেছি তাতে জানার আগ্রহ ছিলো ব্যপক । অনেক ধন্যবাদ মাসুম ভাই । ধইন্যা পাতা
চলতে থাকুক অসাধারণ সিরিজটা ।

শওকত মাসুম's picture


আরও বড় করার মতো সময় নেই। আরেক পর্ব হবে সম্ভবত।

আলো আনন্দ's picture


৫ পর্ব কোনদিন আসবে?

১০

শওকত মাসুম's picture


Smile

১১

লীনা দিলরুবা's picture


ভালো একটা সিরিজ হচ্ছে এইটা।
হুমায়ুন কবির-এর বিপ্লবী দলের সাথে জড়িত হবার ঘটনাটা তেমন একটা জানি না।

ছফার ডায়েরিটা দারুণ। ছোট্ট একটা গ্রন্থ কিন্তু কত মূল্যবান সব তথ্যে ভরা...! আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর "ভালোবাসার সাম্পান" বইতে হুমায়ুন কবির সম্পর্কে অনেক আলোচনা আছে।

১২

শওকত মাসুম's picture


ভালবাসার সাম্পানটা পড়া হয় নাই। এখনও কত কিছু পড়া বাকি

১৩

বাংলার মাও 's picture


অসাধারণ ...পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম

১৪

নুরুজ্জামান মানিক's picture


হুমায়ুন কবিরের বন্ধু ছিলেন ফরহাদ মজহার। হুমায়ুন কবিরের খুন হওয়ার পর ফরহাদ মজহার কবিতায় লিখেছিলেন, "আমি তোকে ডেকে বলতে পারতুম হুমায়ূন অতো দ্রুত নয়, আরো আস্তে যা।" অর্থাৎ তার এই বদলে যাওয়াটা মজহারের পছন্দ হয় নি। বলে রাখি, পুলিশ সে সময়ে ফরহাদ মজহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল বলে শোনা যায়।

সবশেষে তাদের আরেক বন্ধু, আহমদ ছফার ডায়েরি থেকে উদ্ধৃতি দেই-
"ভাত খেলাম। কাপড় ধুয়ে দিলাম। ঘুমোলাম। মনওয়ার এবং মসি এসে জাগালো। মসি ছেলেটাকে আমি ভয়ঙ্কর অপছন্দ করি। মনে হয় ছেলেটা কি একটা মতলবে ঘুরছে। আমার ধারণা হুমায়ুনের মৃত্যুরহস্যটা সে জানে। দিনে দিনে এ ধারণাটা আমার মনে পরিষ্কার রূপ লাভ করছে। কেমন জানি মনে হয়, ছেলেটার হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। এ ধরনের ছেলেদের কি করে এড়িয়ে চলবো সেটা একটা সমস্যা। রেবুদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে সম্ভবত। এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত করতে পারিনি। আশা করছি এরই মধ্যে নতুন কোনো তথ্য জেনে যাবো। ফরহাদ মজহারের আমেরিকা পলায়ন, সালেহার সঙ্গে স্বামীর পুনর্মিলন এসবের সঙ্গে বোধ হয় হুমায়ুনের মৃত্যুর একটা সম্পর্ক জড়িত রয়েছে।''

৩ বছর আগে কুলদার নোটে যে কমেন্ট করেছিলাম প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় সেটা আবারও তুলে দিচ্ছি:
কবি-বিপ্লবী হুমায়ুন কবীর হত্যাকান্ড নিয়ে বিশদ জানতে চাই । যতদুর জানি, সিরাজ সিকদারের নির্দেশে কাজী জাফর গ্রুপের কিলার খসরু খুন করেন কবীরকে । হুমায়ুন কবির হ্ত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে সিআইডি জেরা করে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফরহাদ মাজহারকে !(সূত্রঃ অমি রহমান পিয়াল )

এই নোটে কবীর হত্যায় ফরহাদের নাম নেয়ার বেলায় ছফার রেফারেন্স এবং ফরহাদ সম্পর্কে ছফার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই অধমের কিছু নোট -

১। ফরহাদ ও ছফা দুজন'ই ছিলেন কবীরের বন্ধু । এই ত্রিবেনিই লেখক শিবিরের উদ্যোক্তা । (সূত্রঃ শাহরিয়ার কবীর )

২। কবীর হত্যায় জড়িত সন্দেহে স্বয়ং ছফাকেও দুইমাস পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরে নিয়মিত হাজিরা দিতে হয়েছিল (দেখুন, ছফার "অর্ধেক নারী অর্ধেক ইশ্বরী )

৩। ২০০১ সালে ছফার প্রয়ান পর্যন্ত তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন ফরহাদ মজহার । ফরহাদের বেলায়ও একই কথা । ছফার তারই মতানুযায়ী একজন সন্দেহজনক ব্যক্তির সাথে চল্লিশ বছরের বেশি সময় বন্ধুত্ব বজায় রাখার মাজেজা কি ?

১৫

শওকত মাসুম's picture


আমার ব্যক্তিগত ধারণা হুমায়ুন কবিরের মৃত্যুর সঙ্গে এরা কেউ জড়িত ছিলেন না। তবে সম্ভবত, সে সময়ে অনেক তরুণ বুদ্ধিজীবীই সর্বহারা দলের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত ছিলেন।

১৬

নুরুজ্জামান মানিক's picture


সে সময়ে অনেক তরুণ বুদ্ধিজীবীই সর্বহারা দলের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত ছিলেন।

জাসদের সাথেও ।

১৭

শওকত মাসুম's picture


জাসদে অনেক স্বাধীনতা বিরোধীরাও ঢুকে পড়েছিল

১৮

অদিতি's picture


পড়লাম। আম্মার সাথে কথা হল। ফুপুকে কল করেছিলাম, নেটওয়ার্ক ঝামেলা করছে তাই কথা হয় নি।

আমি লেখা নিয়ে মন্তব্য করব না। আমার ফুপু অর্থাৎ হুমায়ুন কবিরের (বানান কবির, কবীর নয়) বোনের নাম ছবি। ফিরোজ কবির মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, ঐ পেয়ারাবাগান থেকে বেরোবার সময়েই তিনি পাকিস্তানিদের হাতে ধরা পড়েন। ১৮ অগাস্ট ১৯৭১ তাঁকে ব্যপ্টিস্ট মিশন সংলগ্ন খালপাড়ে অনেকের সাথে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়। কাকা তাঁর শেষ চিঠিটা লিখেছিলেন আম্মাকে।

মসি হলেন জার্মানি প্রবাসী মশিউর রহমান। তাকে যতখানি দেখেছি, আমার বাবার হত্যা রহস্য জানা তার পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না।

মাসুম ভাই, আপনি যদি আমার আম্মার সাথে কথা বলতে চান, বলতে পারেন। আমার ফোন নাম্বার পাবেন টুটুল'দার কাছে।

ভাল থাকুন।

১৯

শওকত মাসুম's picture


আমি কোথাও আপনার ফুফুর নাম সরাসরি পাইনি। কয়েক জায়গায় মিনু নামের একজনের কথা বলা আছে। একটি লেখায় পেলাম আলতামাস বেগম। আমার সন্দেহ হ্ওয়ায় তা লিখিনি। আশা করছি আরও অনেক নতুন নতুন তথ্য জানবো

২০

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


প্রতিটা পর্বেই নতুন স্বাদ পাচ্ছি, নতুন অনেক কিছুই জানতে পারছি। ভাল লাগছে সিরিজ।

২১

শওকত মাসুম's picture


ধন্যবাদ পড়ার জন্য

২২

নরাধম's picture


হুমায়ুন কবীর "দ্যা স্যান্ডস অফ ডি" কবিতাটা অনুবাদ করেছিলেন, মেঘনা সর্বনাশী না কি জানি নাম ছিল। উনি মনে হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিলেন?

যারা নিজেদের মানুষকেই সামান্য বনিবনা না হওয়াতে এভাবে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলতে পারে, তারা ক্ষমতা যদি কোনদিন পেত, কি করত?

মাসুমভাই, লেখাটা চলুক, সব পর্বই পড়েছি, যদিও হাজিরা দিই নি।

২৩

এ টি এম কাদের's picture


@ নরাধম,

আপনার কথিত " সেন্ডস অফ ডি " র অনুবাধক হুমায়ুন কবির আর ঢা বি 'র শিক্ষক বিপ্লবী কবি হুমায়ুন কবির এক ব্যক্তি নন । ১ম জন ছিলেন ভারতের বিখ্যাত শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিক যিনি অতূলনীয় মেধার জন্য পূরো ভারতে পরিচিত ছিলেন । ধন্যবাদ ।

২৪

নুরুজ্জামান মানিক's picture


২৫

শওকত মাসুম's picture


যারা নিজেদের মানুষকেই সামান্য বনিবনা না হওয়াতে এভাবে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলতে পারে, তারা ক্ষমতা যদি কোনদিন পেত, কি করত?

একমত। হাজিরা দিলে ভাল লাগে

২৬

Khairul Islam's picture


আবরার ভাই এ সবের কিছুটা জানেন।

২৭

অদিতি's picture


Humayun-Kabir-Final.jpg

২৮

জ্যোতি's picture


এখন এক মেয়ের চোখে তার হারিয়ে যাওয়া বাবাকে দেখছি । যে বাবা ইতিহাসের অংশ । শ্রদ্ধা এই বাবাকে, এই পরিবারের সবাইকে ।

২৯

অদিতি's picture


অশেষ ধন্যবাদ জয়ী। আমি প্রতি মুহূর্তে আম্মার কথা ভাবি। কি তুমুল যুদ্ধ করতে হয়েছে তাকে।

৩০

জ্যোতি's picture


আন্টির যুদ্ধ করার ধৈর্য্য, ক্ষমতা নিয়ে কথা বলার সাহস আমার নেই । উনার জন্য শ্রদ্ধা বুকের ভেতর ।তোমাদের সব ভেবেই মন কেমন করে । ভালো থেকো অদিতি সবসময় ।

৩১

আরাফাত শান্ত's picture


শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা নাই আসলে। স্যালুট আপনাদের পুরো ফ্যামিলীকেই!

৩২

শওকত মাসুম's picture


স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বুদ্ধিজীবী হত্যা। কিন্তু কোনো বিচার হল না।

৩৩

অদিতি's picture


alamtaj-begum-sobi.jpg

৩৪

শওকত মাসুম's picture


অনেক ধন্যবাদ অদিতি, ছবি দুটি দেয়ার জন্য। সবার মনে থাকুক ছবিগুলো।

৩৫

অদিতি's picture


উপরে আমার বাবা হুমায়ুন কবির আর নিচের ছবিতে আমার ছোট ফুপু আলমতাজ বেগম ছবি।

৩৬

শওকত মাসুম's picture


অনেক ধন্যবাদ অদিতি। বিপ্লব নিয়ে অনেকের কাছে রোমান্টিক এক ধারণা আছে। কিন্তু বিপ্লবের অন্দরমহলে কত কিছুনা ঘটেছে, কত অন্যায় অবিচার হয়েছে, কত মানুষের প্রাণ গেছে, নিজেরা নিজেদের মেরেছে, সে খবর খুবই কম রাখা হয় আজকাল।

৩৭

অদিতি's picture


ঠিক। আপনার পোস্টে সর্বহারা পার্টির হত্যার কৈফিয়তটা আম্মা এই প্রথম দেখল। এর আগে (আহমেদ) ছফা কাকা আম্মাকে দেখিয়েছিল ওটা কিন্তু পড়তে দেয় নি।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩৮

শওকত মাসুম's picture


দুই পৃষ্ঠার একটা বিবৃতি। আমি অল্প কিছু ব্যবহার করেছি। আরও কিছু কথা আছে, যা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য আরও কম লেগেছে।

৩৯

জেবীন's picture


কতকি জানা নাই আমাদের । আবার অনেককিছুই যেন ভুল কিবা রহস্য দিয়ে ঢাকা । এইযে অদিতি না জানালে ওর কাকার যুদ্ধের সময়েই নিহত হবার বিষয়টা পরিষ্কারই হতো না।

বইপড়ুয়ায় উনার কবিতার বইয়ের আলোচনায় জেনেছি হুমায়ূন কবির সম্পর্কে । পরে অদিতির কাছ থেকে আরো জানতে চেয়েছিলাম ।

মাসুমভাই। দারুন করে এনেছেন কাহিনী । এই সম্পর্কে আরো জানাবেন আশা করি Smile

৪০

তানবীরা's picture


যারা নিজেদের মানুষকেই সামান্য বনিবনা না হওয়াতে এভাবে নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলতে পারে, তারা ক্ষমতা যদি কোনদিন পেত, কি করত?

একদম

চোখে পানি আসলো অদিতির কথা ভেবে।

বিপ্লব নিয়ে অনেকের কাছে রোমান্টিক এক ধারণা আছে। কিন্তু বিপ্লবের অন্দরমহলে কত কিছুনা ঘটেছে, কত অন্যায় অবিচার হয়েছে, কত মানুষের প্রাণ গেছে, নিজেরা নিজেদের মেরেছে, সে খবর খুবই কম রাখা হয় আজকাল।

এই লোকগুলোরতো পরিবার ছিলো। মেয়ে ছিলো ছেলে ছিলো

৪১

সোহান's picture


হোয়াট দ্য ফাক, শুধু মাত্র সমর্থন জানানো'র জন্য খুন করে ফেলতে হবে? এতোটা লেইম কি করে হতে পারে সেই বিদ্রোহীরা!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

শওকত মাসুম's picture

নিজের সম্পর্কে

লেখালেখি ছাড়া এই জীবনে আর কিছুই শিখি নাই।