যে সিনেমা দেখতেই হয়
ভাল একটা সিনিমা দেখার মতো আনন্দ এই জীবনে খুব কমই আছে। জ্বর হওয়ায় কয়েকদিন বাসায় ছিলাম। বাসায় থাকলে সিনেমা দেখা হয়েই যায়। ভাল যে বিষয় সেটি হচ্ছে, সিনেমা দেখা হয় বেছে বেছে। ফলে ভাল ভাল সিনেমায়ই আজকাল বেশি দেখি। পাঁচ দেশের পাঁচ সিনেমা।
১. দি লেডি: অং সান সুচিকে নিয়ে সিনেমা। মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে ১৯৮৮ সালে দেশে (বার্মা) ফিরে এসেছিলেন তিনি। লন্ডনে থাকতে আগে। দুই ছেলে আলেকজান্ডার অ্যারিস ও কিম অ্যারিস। সুচির স্বামী একজন ব্রিটিশ ছিলেন, মাইকেল অ্যারিস।
অং সান সুচির সেই জীবন নিয়ে সিনেমা দি লেডি। শুরু তাঁর বাবার হত্যার মধ্য দিয়ে, ১৯৪৭ সালে। তবে এরপরই সিনেমার কাহিনী শুরু ১৯৮৮ থেকে। ছবিটিকে সুচির জীবনী বলা যায়। আবার বার্মার রাজনৈতিক ঘটনার অন্তরালে এক অসাধারণ প্রেম কাহিনীও বলা যায় দি লেডিকে। এই প্রেম সুচি ও মাইকেল অ্যারিসের।
সেই যে বার্মায় গেলেন সুচি আর ফেরেনিনি। বার্মার সঙ্গে নিজেকে জড়াতে তিনি যাননি। কিন্তু ৮-৮-৮৮ এর সেই রাজনৈতিক রক্তপাতের পর বাধ্য হয়েছিলেন বার্মার গণতন্ত্রের আন্দোলনে যোগ দিতে। বাবার পরিচয় এর মূল কারণ।
এরপরের ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছর তিনি ছিলেন বন্দী। স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে বার বার বাধা দেওয়া হয়। সেই টানাপোরেনের অসাধারণ এক চিত্র দি লেডি।
পাশাপাশি বার্মার সামরিক জান্তার নির্যাতন, হত্যা, গুম, আন্তর্জাতিক চাপ-সবই আছে। ফরাসী লুক বেসো এর পরিচালক। সুচির ভূমিকায় হংকং সিনেমা জগতের অন্যতম পরিচিত মুখ মিশেল ইয়ো।
রাজনীতির ঘটনা প্রবাহ নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তাদের ভাল লাগবে ছবিটি।
২. ভয়েস ইনোসেন্টস: এল সালভাদরের গৃহযুদ্ধ চলেছিল ১২ বছর। ১৯৭৯ তে শুরু, শেষ ১৯৯০। এর মধ্যে মারা যায় ৭৫ হাজার মানুষ। এর মধ্যে অনেক নারী আর শিশুও ছিল।
দেশটির সরকার ছিল সামরিক সরকার। বলাই বাহুল, তাদের সমর্থক ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পাঁচটি বাম গেরিলাগ্রুপ এক জোট হয়ে সামরিক সরকারের বিপক্ষে নেমেছিল। সেই সময়ে কাহিনী ভয়েস ইনোসেন্টস।
গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক ছিল শিশুদের ব্যবহার। ১২ বছর হলে ধরে নিয়ে যেতো আর্মি, হাতে তুলে দিত অস্ত্র। অসংখ্য শিশু মারা গেছে এভাবেই।
চাভার বাবা ওদের ফেলে চলে গেছে আমেরিকায়। মা, এক বোন আ আরেক ভাই নিয়ে চাভা থাকে। তার বয়স ১১ পার হয়েছে। ১২ হলেই নিযে যাবে। স্কুলে আর্মি আসে। যাদের বয়স ১২, তুলে নিয়ে যায়।
ভয়াবহ সেই যুদ্ধের অসাধারণ এক সিনেমা এটি। যুদ্ধের ভয়াবহতা, চাভার বেচে থাকা, যুদ্ধে যাওয়া, অনেক শিশুর করুণ পরিণতি চোখে পানি নিয়ে আসে।
এরকম ভয়াবহ সিনেমা খুব কমই আছে।
৩. রাইনো সিজন: সাহিল একজন কবি, ইরানের। সাহিলের স্ত্রী, মিনা একজন কর্ণেলের মেয়ে। তাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হয় ইরানের বিপ্লবের পর। ক্ষমতা দখল করে খোমেনি। কবিতা লেখার দায়ে জেলে যেতে হয় সাহিলকে। তাঁর ৩০ বছরের জেল হয়। মিনার হয় ১০ বছর।
৩০ বছর পর ছাড়া পেয়ে স্ত্রীকে খুঁজতে থাকে সাহিল। মিনা এর মধ্যে চলে গেছে তুরস্কে। স্ত্রীর জন্য সাহিল যায় ইস্তাম্বুলে। পথে পরিচয় হয় এক পতিতা মেয়ের সঙ্গে।
গল্পে আছে আরেকজন। সে ছিল এক সময়ে মিনাদের বাসার ড্রাইভার। কিন্তু পছন্দ করে মনিবের মেয়েকে। ঘটনাক্রমে সরকার বদল হলে সেই ড্রাইভার হয়ে যায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন। নানা ধরণের ঘটনা ঘটে।
মিনার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনিক বেলুচ্চি। ছবিটা বিশাল এক ধাক্কা দেয়। সুতরাং যারা দেখবেন তারা সই মানসিকতা নিয়েই দেখবেন। ছবিটায় এডাল্ট কনটেন্ট আছে।
৪. নো: চিলির ছবি। ক্যু করে চিলির ক্ষমতায় আছেন জেনারেল অগাস্টে পিনোসে। একনায়কতন্ত্র চালাচ্ছেন। ঘোষণা দিলেন ভোটের। সামরিক শাসকদের পছন্দের 'হ্যা' 'না' ভোট।
সবাই জানেন যে ভাবেই হোক ভোট যাবে পিনোসের পক্ষে। তবু্ও একটা বার্তা দেয়া প্রয়োজন। এ জন্য বামপন্থীরা একটা অ্যাড ফার্মের একজন অ্যাড নির্মাতাকে দায়িত্ব দিলেন 'না' এর পক্ষে ক্যামপেইন তৈরি করতে।
পশ্চিমে বিজ্ঞাপন জগতের রমরমা অবস্থার শুরু কখন। সেই সুযোগটি নিতে চাইলেন তারা।
চিলির এই সিনেমাটি ২০১২ সালের। খুবই আলোচিত ছবি। সমালোচকরা ব্যাপক পছন্দ করেছেন। ভিন্নধর্মী সিনেমা যারা পছন্দ করেন তাদের ভাল লাগবে।
৫. এ হিস্টরি অব ভায়োলেন্স: এই ছবিটা পুরোনো, ২০০৫ সালের। দেখবো দেখবো করেও দেখা হচ্ছিল না। অবশেষে দেখে মুগ্ধ।
ডেভিড ক্রোনেনবার্গ-এর ইষ্টার্ণ প্রমিস দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এটা তারও আগের সিনেমা। টম স্টল একটা রেস্তোয় চালায়। নিরীহ মানুষ। সুখি সংসার। একদিন তার রেস্টুরেন্টে ডাকাত পড়ে। দুইজনকেই আত্মরক্ষায় দক্ষ হাতে খুন করে টম। এরপরই ঘটনা ঘটতে থাকে। খুঁজে খুঁজে হাজের হয় অনেকে। বলা হয় টমের অতীত আসলে অন্যরকম। সংসারে দেখা দেয় টানাপোরেণ।
উইলিয়াম হার্ট অল্প সময়ের জন্য অভিনয় করেছেন ছবিটিতে। কিন্তু অসাধারণ। যেমন এড হ্যারিস। ভায়োলেন্স নির্ভর ছবি। কিন্তু ভিষণ অন্যরকম এক ছবি।
একটআও দেখি নাই। খালি ইস্টারন প্রমিজেস তা দেখছিলাম!
দেখে ফেলেন শান্ত, ভাল লাগবে
চমৎকার পোষ্ট।
বেশ কয়েকদিন ধরেই ভাবতেসিলাম মাসুম ভাই কে বলি মুভি পোস্ট দেয়ার জন্য! চিন্তা করতে করতেই পেয়ে গেলাম পোস্ট! একটাও দেখা হয়নাই, আজকেই ডালো দিবো
কেমন লাগলো দেখে বইলেন রন
একটাও দেখিনাই।
দেখেন
তাহলেতো দেখতেই হয়
প্রিয়তে রাখলাম, ডাউনলোডের কাজে লাগবে
দেখে ফেলো বাজি
৩, ৪, ৫ দেখছি।
বাকি দুইটাও দেখো বিমা
মন্তব্য করুন