চোখের তারায় আয়না ধরো
অশোক কুমারের একটা অনেক পুরোনো সিনেমা আছে, সংগ্রাম। ১৯৫০ সালের হিট সিনেমা। এক পুলিশ অফিসারের কাহিনী, যে কিনা অসৎ। সে মিথ্যা বলে, জুয়া খেলে, পছন্দ হওয়ায় একটা মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে জোড় করে বিয়েও করে। নায়ক কিন্তু খারাপ-ভারতীয় সিনেমা জগতে সেই প্রথম। কেবল তাই নয়, ভারতীয় সিনেমায় হিংস্রতা আর যৌনতার প্রবেশও এই সিনেমাটির হাত ধরে। তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল।
সিনেমাটি দেখে মানুষ তখন পুলিশ দেখলেই হাসাহাসি করতো, নানা ধরণের কথা বলতো। মোরারজি দেশাই তখন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী। ১৬ সপ্তাহ ধরে তখন সিনেমাটি হাউসফুল। মুখ্যমন্ত্রী সিনেমাটি নিষিদ্ধ করলেন। ডাকলেন একদিন অশোক কুমারকে। ডেকে তিনি অশোক কুমারকে একজন ভাল পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করতে অনুরোধ করেছিলেন।
১৯৫০ সালে সিনেমায় সুদর্শন নায়কের খারাপ পুলিশের অভিনয় দেখে চিন্তিত হয়েছিল সরকার, ভাবমূর্তির টান পড়েছিল পুলিশের। আর এখন?
র্যাব নাকি ৬ কোটি টাকায় সাত খুন করেছে। আজ আবার র্যাব এ জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। হায় ভাবমূর্তি। ১৯৫০ সালে সিনেমা ব্যান হয়েছিল, এখন কি হবে?
নারায়নগঞ্জে পর পর কয়েকটি ঘটনা ঘটলো। আমাদের রিপোর্টাররা থানায় যায়। ফোন করি পুলিশি তৎপরতা জানতে। রিপোর্টার বলে কোনো তৎপরতা নেই। কারণ কি? কারণ-সবাই জানে কে করছে, কারা করছে, কেন করছে? সবাই সব কিছু জানে। তাহলে সমাধান কি? সমাধান জানতে চাইলে সবাই তাকিয়ে থাকে একদিকে, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও। ন্যায়বিচার তিনিই করবেন।
২.
তাহলে একটা ন্যায়বিচারের গল্প বলি। রাজা সোলায়মানের বিচক্ষণতা ও ন্যায়বিচারের সেই গল্প তো সবাই জানেন। সেই যে এক বাচ্চকে দুই মা ই দাবি করেছিল। পরে রাজা দুই ভাগ করার কথা বলার পর জানা গিয়েছিল প্রকৃত মা কে। এর কিছুকাল পরের কথা।
একদিন রাজা সোলায়মানের দরবারে হাজির হল দুই মহিলা। সঙ্গে এক যুবক। দুজনেরই দাবি যুবকটি তার মেয়ে জামাই। রাজা সোলায়মান পুরো ঘটনা শুনলেন। তারপর তাঁর সেই ঐতিহাসিক রায় দিলেন। সবচেয়ে ধারালো তলোয়ারটা এনে বললেন, এই তলোয়ার দিয়ে যুবকটিকে দুই ভাগ করা হবে। তারপর দুইজনকে দুই ভাগ দিয়ে দেওয়া হবে। শুনেই প্রথম মহিলা চিৎকার করে বললেন, দরকার নেই দুই ভাগ করার, বরং আরেকজনকেই দিয়ে দেওয়া হোক। আর অপর মহিলা বললেন, দুই ভাগ করে দিলে তার কোনো আপত্তি নেই।
রাজার সভাসদরা ভাবলেন, ঘটনা পরিস্কার। কারণ এরকম বিচার রাজা আগেও করেছেন। সুতরাং যিনি দুই ভাগ করতে আপত্তি করেছেন তিনিই প্রকৃত দাবীদার। কিন্ত রাজার রায় শুনে সবাই হতবাক। রাজা রায় দিলেন, যিনি দুই ভাগে রাজী, এই যুবকটি তারাই জামাতা।
সভাসদরা আপত্তি করায় রাজা মুচকি হেসে বললেন, এখানেই তো আসল মা-এর সাথে শাশুরির পার্থক্য। প্রমান হল, এই মহিলাটি প্রকৃতই যুবকটির শাশুরি।
৩.
দি বোম্বের টকিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। ভারতীয় সিনেমা জগতের আজকের এই অবস্থানের বড় কৃতিত্ব এই প্রতিষ্ঠানটির। হিমাংশু রায়, রাজনারায়ন দুবে আর দেবিকা রানী-এই তিনজন ছিলেন এর মূল প্রতিষ্ঠাতা। বোম্বে টকিজ দক্ষ ও যোগ্যদের জড়ো করেছিলেন ভাল ভাল সিনেমা করার জন্য। শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় বোম্বে (এখন মুম্বাই) যান ১৯৩৮ সালে। তিনি ছিলেন বোম্বে টকিজের অন্যতম চিত্রনাট্যকার। সেখানে তাঁর যাওয়ার একটা গল্প আছে, ছাড়ারও গল্প আছে।
হিমাংশু রায় ঠিক করেছিলেন চিত্রনাট্যের জন্য তিনি বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কাউকে আনবেন। প্রথমে কথা বলা হল তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু তিনি রাজী হলেন না। কারণ তিনি কেবল সাহিত্যিকই থাকতে চান, আর তাঁর সাহিত্যের রসদ সংগ্রহের জায়গা বীরভূম, বোম্বে নয়। এরপর তিনি নাম বললেন শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা। যোগ দিলেন ব্যোমকেশের লেখক। লিখতে শুরু করলেন কঙ্গন ও আজাদের মতো বিখ্যাত হিন্দি সিনেমার চিত্রনাট্য।
আবার তাঁর বোম্বে টকিজ ছেড়ে দেওয়ার গল্পটা বলি। প্রায় ১০ বছর ছিলেন তিনি সেখানে। তাঁর বড় ছেলের নাম ছিল বেনু। সেই বেনু একদিন বড় একটি ওষুধ কোম্পানির চিফ কেমিস্টের চাকরি পেলেন। চাকরিকে স্থায়ী হওয়ার পরেরদিনই শরদিন্দু ছেলেকে ডেকে বললেন, ‘বাবা, তুমি এখন থেকে আমাকে খাওয়াতে পারবে তো?’ ছেলে অবাক হয়ে এই প্রশ্নের কারণ জানতে চাইলে শরদিন্দু বললেন, ‘এই বোম্বে টকিজের কাজের জন্য মনের মতো সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারছি না। তুমি আমাকে খাওয়াবার ভার নিলে আমি ষোলো আনা সাহিত্য সেবা করতে পারবো।’
তারপর সেইদিনই বোম্বে টকিজ ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
৪.
এখন পড়ছি নবেন্দু ঘোষের আত্মজীবনী ‘একা নৌকার যাত্রী’। ১৯৫১ সালে বোম্বে টকিজে যোগ দিতে তিন কৃতি বাঙালি ট্রেনে উঠেছিলেন। তিন জন হলেন বিমল রায়, হৃষীকেশ মুখার্জি ও নবেন্দু ঘোষ। বিমল রায় পরিচালক, হৃষীকেশ সম্পাদনার কাজে আর নবেন্দু চিত্রনাট্যকার। এই ত্রয়ী পরবর্তী জীবনে হিন্দী চলচিত্র জগতকে অতি উচ্চমানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সুজাতা, বন্দিনী, অভিমান, তিসরি কসমের মতো চিত্রনাট্য তার লেখা। জন্মেছিলেন আমাদের ঢাকায়।
পরে হৃষীকেশ মুখার্জি নিজেই বড় পরিচালক হয়েছিলেন আর বিমল রায় আরেক কৃতি বাঙালি ঋত্বিক ঘটকের চিত্রনাট্য নিয়ে করেছিলেন আরেকটি বিখ্যাত ছবি মধুমতি।
নবেন্দু ঘোষ লিখেছেন চলচিত্র জগতের অজানা অনেক কাহিনী। আÍজীবনী আমার বরাবরই প্রিয়, আর সঙ্গে সিনেমা জগত থাকলে তো কোনো কথাই নেই। শরদিন্দুর গল্পটা এই বই থেকেই নেয়া।
৫.
২ মে ছিল সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন। রেডিফ ডট কমে দেখলাম পুত্র সন্দীপ রায় তাঁর বাবার করা সেরা পাঁচ সিনেমার একটা তালিকা করেছেন। দেখে ভাল লাগল। কারণ প্রথমটা আমার সাথে মিলেছে।
১. কাঞ্চনজঙ্ঘা
২. চারুলতা
৩. গুপি গাইন বাঘা বাইন
৪. অরণের দিনরাত্রি
৫. জনঅরন্য
এবার আমার পছন্দ বলি
১. কাঞ্চনজঙ্ঘা
২. অপুর সংসার
৩. অরণ্যের দিনরাত্রি
৪. নায়ক
৫. কাপুরুষ
৬.
এবার একটা স্বর্গীয় গল্প বলি।
স্বর্গে একজন দ্বাররক্ষী আছে। তাঁর কাজ হচ্ছে পরীক্ষা নিয়ে স্বর্গের দরজা খুলে দেওয়া। আসলো তিন বন্ধু। দ্বাররক্ষী বললো, তিনটি প্রশ্ন করা হবে। সঠিক উত্তর দিতে পারলেই স্বর্গের দরজা খুলবে।
প্রথম বন্ধুকে প্রশ্ন করা হল, দুনিয়ার প্রথম পুরুষ কে? সহজ প্রশ্ন। আদম। স্বর্গে গেল প্রথমজন।
দ্বিতীয় জনকে প্রশ্ন-প্রথম নারী কে? আবার সহজ প্রশ্ন। ইভ। আবার স্বর্গের দ্বার খুললো।
তৃতীয় বন্ধুকে প্রশ্ন করার আগে দ্বাররক্ষী বলল, দেখো তোমার জন্য মনে হয় প্রশ্নটা শক্ত হয়ে গেল তাও করি-আচ্ছ বলেতো আদমকে বলা ইভের প্রথম কথাটি কি ছিল?
তৃতীয় বন্ধু মাথা চুলকে বললো, ‘হুমম, (প্রশ্নটা) অনেক শক্ত’। সাথে সাথে খুলে গেল স্বর্গের দরজা, প্রশ্নের উত্তর সঠিক।
৭.
এমন অনেক দিন গেছে
আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থেকেছি,
হেমন্তে পাতা-ঝরার শব্দ শুনবো ব’লে
নিঃশব্দে অপেক্ষা করেছি বনভূমিতে-
কোনো বন্ধুর জন্যে
কিংবা অন্য অনেকের জন্যে
হয়তো বা ভবিষ্যতেও অপেক্ষা করবো…
এমন অনেক দিনই তো গেছে
কারো অপেক্ষায় বাড়ি ব’সে আছি-
হয়তো কেউ বলেছিলো, “অপেক্ষা ক’রো
একসঙ্গে বেরুবো।”
এক শনিবার রাতে খুব ক্যাজুয়ালি
কোনো বন্ধু ঘোরের মধ্যে গোঙানির মতো
উচ্চারণ করেছিলো, “বাড়ি থেকো
ভোরবেলা তোমাকে তুলে নেবো।”
হয়তো বা ওর মনের মধ্যে ছিলো
চুনিয়া অথবা শ্রীপুর ফরেস্ট বাংলো;
-আমি অপেক্ষায় থেকেছি।
যুদ্ধের অনেক আগে
একবার আমার প্রিয়বন্ধু অলোক মিত্র
ঠাট্টা ক’রে বলেছিলো,
“জীবনে তো কিছুই দেখলি না
ন্যুব্জপীঠ পানশালা ছাড়া। চল, তোকে
দিনাজপুরে নিয়ে যাবো
কান্তজীর মন্দির ও রামসাগর দেখবি,
বিরাট গোলাকার চাঁদ মস্ত খোলা আকাশ দেখবি,
পলা ও আধিয়ারদের জীবন দেখবি,
গল্প-টল্প লেখার ব্যাপারে কিছু উপাদান
পেয়ে যেতেও পারিস,
তৈরী থাকিস- আমি আসবো”
-আমি অপেক্ষায় থেকেছি;
আমি বন্ধু, পরিচিত-জন, এমনকি- শত্রুর জন্যেও
অপেক্ষায় থেকেছি,
বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
অপেক্ষায় থেকেছি-
রফিক আজাদের কবিতা, প্রতীক্ষা। সম্পূর্ণ কবিতাটি দিলাম না। প্রেমিক হৃদয় যাদের, তারা খুঁজে নিয়ে পড়তে পারেন। আমার প্রশ্ন হলো- বন্ধুর হাসি নাকি শত্রুর ছুরি?
৮.
তিনি আমাকে বললেন, আপনারা লোক খারাপ। খালি মানুষের দোষ ধরেন।
আমি বললাম কি করেছি?
তিনি বললেন, ডাক্তাররা যদি প্রাইভেট প্রাকটিস করতে পারে, প্রকৌশলীরা পারে, তাহলে র্যাব পারবে না কেন?
৯.
একদল রাজনীতিবিদ গেলেন শহরের বাইরে। ফেরার সময় দূর্ঘটনা ঘটল বহনকারী বাসের। খবর পেয়ে দৌঁড়ালো পুলিশ। গেল অ্যাম্বুলেন্স। গিয়ে দেখে গ্রামবাসী সবাইকে কবর দিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ জানতে চাইলো-একজনও বেঁচে নেই?
গ্রামবাসী-মনে হয় না
পুলিশ-কবর দেওয়ার সময় কেউ কিছু বলেনি?
গ্রামবাসী-কেউ কেউ বলেছিল যে বেঁচে আছে, কিন্তু রাজনীতিবিদেরা কে কবে সত্য কথা বলেছে। তাই বিশ্বাস করিনি।
মনোযোগ দিয়ে এখন প্রতি রাতে টেলিভিশনে শামিম ওসমানের টক শো দেখি
দারুন চনমনে পোষ্ট!
চনমনে হইলাম
নিরবে জাতিস্বরের গল্প বলা তোমার ধরন।
এ তুমি কেমন তুমি
লাস্ট লাইনটা এপিক।
রোজ রাতে আপনার মনোযোগ এখন শামীম ওসমানের দিকে!!!!! এমন মাসুম ভাই কি আমারা চেয়েছিলাম!!!!!!!!!!!
১, ২...ন্যায়বিচার কি আর এই দেশে আছে? এমন দেশ আমরা কেউই চাইনি। আমাদের ভালোবাসার এই দেশে মানুষের নিরাপত্তা নেই। আর নিরাপত্তা যাদের কাছে চাওয়া যেতে পারতো তারাই সবচেয়ে অনিরাড়দ এখন জনগনের জন্য। টিভির স্ক্রলিংয়ে শুধুই দেখতে হয় অপহরণ হয়েছে, খুন হয়েছে দেশে প্রশাসন যদি সজাগ থাকতো, জনগনকে নিয়ে ভাবতো তাহলে এমন আতংকে আমাদের থাকতে হতো না। আমজনতার মতো আমিও ভাবি প্রশাসন সব জানে, তারা জেনেশুনেই নিশ্চুপ, তাদের জনগনকে নিয়ে ভাবনা নেই। তারা আসলে কি চায়?
৫। সবগুলো সিনেমাই দেখেছি।
৬। এইটা আবার কি?
৭। কঠিন প্রশ্ন। উত্তর জানলে জানায়েন।
৮। তাইতো! আপনারা আসলেই লোক খারাপ।
৯। এইটা জট্টিল।
দুর্দান্ত পোষ্ট
এইটা আবার কি মানে কি? কি বোঝো নাই?
না কিছু না। সবই বুঝছি।
কি বুঝছো?
যা লিখছেন, যা বুঝি নাই, তাই বুঝলাম
মাসুম ভাই ইজ ব্যাক।
অনেকদিন পর সেরকম একটা পোষ্ট পড়লাম। স্যালুট
ধইন্যা বাজি
অনেকদিন পরে বস। বরাবরের মত। তা সাংবাদিক হিসেবে আপনি কি প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন ?
আরে না, টকশো যাওয়া বন্ধ তো
মন্তব্য করুন