উপন্যাস : অচল পয়সার জবানবন্দি (৬)
৬.
দ্রুত খান ভাইকে ধরে ফেললাম। আমাকে দেখে তিনিও বেশ অবাক! কি সমাচার জানতে চাইতেই, তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন, কই যান আপনি? বললাম গুলশানের দিকে। একটা বিশেষ কাজে।
তার প্রশ্নের পিঠে কেবলই প্রশ্ন। কাজটা কি বিশেষ জরুরি?
আমার মনে হলো তিনি বোধহয় আমাকে দেখে খুশি হয়েছেন। কিন্তু কারণটা বুঝতে পারছিলাম না। যদিও ঢাকা শহরের স্বাভাবিক নাগরিক নিয়ম হচ্ছে, রাস্তায় পরিচিত কাউকে দেখে মুখটা একটু বাড়তি গম্ভীরতার আড়ালে ঢেকে ফেলা। নাহলে আবার বিকাশমান কর্পোরেট সংস্কৃতি এবং তারও আড়ালে বিকাশমান স্বার্থবাদী মনস্তত্বের চর্চাটুকু বজায় থাকে না। মানুষে মানুষে যে একসময় সুসম্পর্ক ছিলো, তারা যে একে অপরকে দেখলে খুশি হতো; এখনকার মানুষের মেলামেশা দেখলে কে সেই কথা সত্য বলে মানবে?
কিন্তু ইনি আমাকে দেখে খুশি কেন? আমি অবশ্য তাকে দেখে আরো খুশি। আজকে যাকে দেখছি তাকে দেখেই ভালো লাগছে। এক একটা দিন হয়তো এমনই হয়, যেদিন যার সঙ্গে দেখা হয় তার সঙ্গেই খানিকটা সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। বসে আলাপ বা চা-বিড়ি ধ্বংস করতে ইচ্ছে করে। পরীবাগের মোড়ের দির্কে আঙ্গুল তাক করে দেখিয়ে বললাম, চলেন আপাতত কাজ-টাজ বাদ। চা-বিড়ি সহকারে একটা শর্ট ব্রেক নিই। তারপরে কাজ। তিনি কেমন যেন দুষ্টামীমাখা হাসি সহকারে শ্রাগ করলেন। ‘এমন সন্ধ্যার মুখে মুখে চা? এ ধরনের পরিকল্পনার বিপক্ষে আমার একভোট।’
মনে পড়ে গেলো পুরোনো ভ্রমণের কাহিনী। সে সময় নিরামিষ সঙ্গীদের পচানোর জন্য আমরা কিছু ছোট ছোট খেলা আবিস্কার করেছিলাম। ওদের কাউকে পচিয়ে কিছু বলা হলেই, তাতে আমি বা খান ভাই বা আলী ভাই এক ভোট, দুই ভোট, তিন ভোট দিয়ে দিয়ে হাঁক দিতাম। শুনতে শুনতে ওরা আরো ক্ষেপতো। আমরা মজা পেতে থাকতাম।
খান ভাইয়ের এক ভোটের জবাবে আমি বললাম, ‘এমন সন্ধ্যার মুখে মুখে চা? এ ধরনের পরিকল্পনার বিপক্ষে আমারও দুইভোট।’ এরপরে দুই জনে মিলে বেশ একচোট হেসে নিলাম, পুরোনো দিনের কথা মনে করে।
তাকেই বললাম, ‘বলেন তবে কি খেদমত করতে পারি আপনার? বান্দা হাজির!’ তিনি চট করে সাইকেলের পেছনে উঠে পড়লেন। ‘চলেন যেদিকে যাইতে বলি, আর কতক্ষণ সময় আছে হাতে সিরিয়াসলি বলেন’।
আমি কিছুই বললাম না। আমাকে কিনা জিজ্ঞেস করে, কতক্ষণ সময় আছে? আজব!
আমার হাতে সময়ই সময়। টুকটাক গল্পের মধ্য দিয়ে রাস্তার ধুলা খেতে খেতে আমরা গন্তব্যে পৌঁছুলাম। একপাশে সাইকেলটা পার্ক করে ভালোমতো চারদিকে চাইলাম। খান ভাইয়ের নির্দেশনা শেষতক আমাকে যেখানে নিয়ে এসে থামিয়েছে, সেটা একটা পানশালা। পানশালা বলা বোধহয় ঠিক হবে না। বারোয়ারী ফূর্তির আসর বলা যেতে পারে। হেন বস্তু নেই, যার উপস্থিতি টের পাচ্ছিলাম না। আর টপস-স্কার্ট পড়া ডিজুস মেয়েগুলো বেশি চোখ কেড়ে নিচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম কোনো একটা পশ ক্লাব হবে। এখানে আমি আগে কখনো যাই নি। তবে প্রচুর আমার বয়সী, আমার চেয়ে বেশি ও অল্প বয়সী ছেলেপিলেকে দেখে ভালো লাগলো। এরকম সুযোগ-সুবিধা না থাকলে কি আর জমে? যদিও আমাদের দেশে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা খুবই সীমিত। ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলামেশার কথা বলছি। এখন অবশ্য ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে নানা ধরনের ফিকিরি বন্দোবস্ত গজিয়েছে। সেগুলো আসলে কতটুকু কাজের সে ব্যপারে আমার সন্দেহ আছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, যৌনতা সম্পর্কিত জ্ঞানকে উন্মুক্ত করে দিলে আমাদের দেশে এ সংক্রান্ত নৃশসংতা কমবে। যদিও জ্ঞানের অপব্যবহার বেড়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিষয়টা যথাযথ পরিচর্যা দরকার। এসব ক্লাব-ফ্লাবে খুব বেশি কাজ হবে না, যদি না সঠিক পরিচর্যা নেয়া যায় পুরো সিস্টেমটার। পশ্চিম থেকে শিক্ষা নিতে গিয়ে আমরা সাধারণত অন্ধ অনুকরণ শুরু করি। এটা ঠিক না। অন্ধ অনুকরণগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুফলের চেয়ে কুফল ডেকে আনে বেশি করে।
খান ভাই আর আমি কাউন্টারের সামনে লাল রেক্সিনে মোড়ানো উঁচু ঘূর্ণিচেয়ারে বসে বসে রাজ্যের গল্প করছিলাম। দুইজনে দুইমগ বিয়ার হাতে নিয়ে। তার মানিকগঞ্জের বর্তমান আবাসস্থল, সেখানে কিভাবে তিনি সপ্তাহের পাঁচ ওয়ার্কিং ডে কাটান, তারপর বাকি দুই বন্যদিন কিভাবে কাটান, সেসব শুনছিলাম মনোযোগ দিয়ে। এই লোকটা আজীবন ফূর্তি করে গেলেন। আজ কি মনে করে ঘুরতে ঘুরতে আমার সাইকেলের সামনে থেমেছিলেন কে জানে!
শেষবার যখন দেখেছিলাম, তখনের চেয়ে অনেক জোয়ান হয়েছেন বলেও মনে হচ্ছিলো। ক্লাবের সব টপলাইটগুলো নিভিয়ে দেয়া হলে আমি প্রথম প্রথম একটু চোখ পিটপিট করছিলাম। কিন্তু তারপরে হৃৎপিন্ড খামচে ধরা ড্রামের বিটের সঙ্গে সঙ্গে রঙিন আলোর ঝলকানি শুরু হয়ে গেলে, সেটা বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরনের পরিবেশে লেজার শো গুলো হয়তো এমনই হয়। তীব্র আলো, মূর্হুতের স্ন্যাপ, আঁকাবাকা নরনারী, তাদের হুল্লোড়, অস্থির-উদ্বেল বিচরণ ভালোই লাগছিলো। পাশের চেয়ার থেকে খান ভাই চেঁচিয়ে বললেন, এই ডিজে ছেলেটা এখন দেশের সেরা। ও যখন বাজায় তখন ফ্লোরের চেয়ার-টেবিলও নাচতে শুরু করে।
আমি ততক্ষণে কেবল এক বোতল বিয়ার শেষ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু খান ভাই তার উপরে দুই পেগ হুইস্কিও চড়িয়েছেন। কয়েকদানা ঝলসানা ছোলা মুঠোয় তুলে নিয়ে আমাকে একটা থাম্বস আপ দেখিয়ে নাচতে নাচতে ভীড়ের মধ্যে ঢুকে গেলেন। আমি আরো কিছুক্ষণ বসে বসে আশপাশের ব্যপার-স্যপার পর্যবেক্ষণ করলাম। এটাই ভালো লাগছিলো। খেয়াল করলাম, অনেক ছেলেমেয়ের কার্যকলাপ সব ধরনের অশালীনতার সীমানা অতিক্রম করে গেছে। নাচ আর নাচ নেই। আবার অনেকে শরীর ভেঙ্গে ভেঙ্গে, সুর আর সঙ্গীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দারুণভাবে নেচে চলেছেন। তবে কারো দিকেই কারো কোনো ভ্রুপে আছে বলে মনে হলো না।
আমি আরেক মগ বিয়ার নিয়ে কাউন্টারের ব্যটাটাকে ‘কত দেবো?’ জানতে চাইলাম। আগের যাবতীয় বিল খান ভাই দিয়ে গিয়েছিলেন। এবার সে ৯০০ টাকা রাখলো। এইটা বোধহয় বাইরে ৪০০ টাকা দাম রাখে। বুঝলাম এটা এক অর্থে দ্বিতীয় ঈশ্বরের রাজত্ব। নিজেকে নিয়মিত ঈশ্বরের খপ্পড় থেকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্ত দেখতে ভালোই লাগলো। আমি মগটা নিয়ে ঘূর্ণিচেয়ার ছেড়ে নেমে পড়লাম। দেখা যাক কি আছে কপালে।
ডান্সফ্লোরটার পরে অন্ধকারের ভেতর সারি ধরে ধরে টেবিল সাজানো। সেখানে একটু বেশি বয়সীরা (বেশি মানে যারা একটু বেশিই বেশিবয়স্ক, চুল-টুল ধবধবে কিংবা টাকওয়ালা টাইপের) অল্প বয়সী ছুকড়িদের সঙ্গে বসে বসে লালসা বিনিময়ের চর্চা চালাচ্ছিলেন। এক পক্ষের লালসা শরীরের, আরেক পক্ষের লালসা টাকার। এদের মধ্যে কোনো প্রাণের স্পন্দন নেই। হয়তো প্রত্যেকেই দ্রুত লালসা মিটিয়ে নিয়মিত ঈশ্বরের রাজত্বে নিজেকে সমর্পিত করতে উদগ্রীব। দেখে মনে হলো, ওরা একটা দো-টানার ভেতর আছে। শরীর ছুটছে লালসা মেটানোর ধান্দায়, বিবেক বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে স্ত্রী-পুত্র কিংবা স্বামী-সন্তানদের কথা। দোটানার মধ্যে ঊপভোগ্য বিষয়গুলো উপভোগ করার মজাটা কেমন, সেটা আমার জানা নেই। ওদের আরামটা তাই ঠিক উপভোগ করতে পারলাম না আমি।
আরেকদিকে গিয়ে দেখলাম অপেক্ষাকৃত অল্প বয়সীদের কীর্তি-কলাপ। এটা বেশ মজার লাগলো। দেশে যে এখন কোকেন এত সুলভ, জানা ছিলো না। টেবিলে বসে হাঁক দিলেই নিয়ে এসে স্টিলের প্লেটে বিছিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। আপনাকে কিছু করাও লাগবে না। খালি একহাতে নিজের এক নাক টিপে ধরে রেখে আরেক নাক দিয়ে টেনে নেবেন। টানটা দেয়ার আগে নাক-টাক ভালোমতো পরিস্কার করে, লম্বা দম নিয়ে নেয়া ভালো। কারণ লম্বা-সাজানো মিহিদানা মাদককণাগুলো একটানে নিয়ে নিতে হবে। শিরশির করতে করতে সেটা আপনার নাকের মধ্য দিয়ে সোজা ঢুকে যাবে রন্ধ্রমূলে। সেখান থেকে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়বে মস্তিষ্কের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ছেলেমেয়েদের এদিকেই বেশি ঝোঁক বলে মনে হলো। লাল চামড়ার গদি দিয়ে মোড়ানো অর্ধচন্দ্রাকার একটা সোফার সামনে গোল মার্বেল পাথরের টেবিল ঘিরে বসেছিলো ছয়-সাত জন একই বয়সী তরুণ-তরুণী। তাদের সামনে অনেকগুলো প্লেট। কয়েকটা খালি, কয়েকটাতে আছে সাজানো কোকেনের ছোট ছোট লাইন। ওরা খুব হাসাহাসি করছিলো এবং একে অপরের গায়ে এমনভাবে ঢলে পড়ছিলো যেনো পাখির পালকের বিছানায় ঢলে পড়ছে। আমার হাতের বিয়ারের মগের দিকে একটা মেয়েকে করুণ নয়নে চেয়ে থাকতে দেখে মনে হলো; ও বোধহয় বিয়ার চায়, খানিকটা। আমি ইচ্ছে করেই গ্লাসটা লুকানোর একটা কপট ভাব ধরলাম। আর মেয়েটি ঝট করে হেলান থেকে উঠে বসলো। হাতটা এমনভাবে বাড়িয়ে দিলো, যেন বিয়ারের মগটা তখনই না পেলে সে আর বাঁচবেই না। আহারে বেচারী! দিলাম মগটা তার দিকে এগিয়ে। খুব খুশি হয়ে একটা বড় ঢোকে মগের পানীয়টুকু শেষ করে দিলো। আমার পাশে দাঁড়ানো ওয়েটার বললেন, স্যার আরও বিয়ার দেবো? আমি তার কাছে এবারে দু’পেগ ভদকার আবদার জানিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ালাম। মেয়েটির টেবিল থেকে একটা ছেলে ডেকে উঠলো, হেই ডিউড, ওয়াই ডোন্ট য়ু ট্রাই আ কোক ফ্রম আস্। ওর সখা-সঙ্গিনীরাও কলকল করে উঠলো, ডিউড ডিউড ডিউড। কোক কোক কোক। ব্যপক মজায় আছে সবগুলা। আমি হেসে হাত নেড়ে 'নো থ্যাংক্স' টাইপের একটা ভাব করলাম। করুক মজা মনখুলে।
ইয়াবাও নেয়া হচ্ছিলো অনেক টেবিলে। ঢুকেই প্রথম যে বারোয়ারি ফূর্তি'র কথাটা মাথায় এসেছিলো, সেটা মূলত একটা টেবিলে এই জিনিসের আয়োজন দেখেই। তবে সামনের দিকে অর্থাৎ ডান্সফ্লোরের দিকটায় কিছুটা সংযত ভাব বজায় রাখা হয়েছে। ওদিকে কেবল মদের কাউন্টার, সীসার টেবিল আর মানুষের চলাফেরা।
একটু ভেতরের দিকে একেবারে হংকং-সিঙ্গপুরের মুভির দৃশ্যের মতো সবকিছু। একটা ফাঁকা টেবিল পেয়ে সেখানে বসলাম। ওয়েটারটা ভদকার গ্লাস দিয়ে গেলো। তাকে আরো দু’টো ভদকা দিতে বললাম। দিস ইজ দ্য লাস্ট অর্ডার। এরপরে আর খাওয়ার ইচ্ছে নেই।
'খান ভাইটা গেলো কই?' ভাবতে ভাবতে একটা বাদাম ভেঙ্গে মুখ দিলাম। সব টেবিলে ছোট ছোট কাঁচের বাটিতে নোনতা বাদাম, শুকনো খই, বরফের ফাস্ক আর মামের বোতল সাজানো আছে। বুঝতে পারলাম এগুলো হচ্ছে কমপ্লিমেন্টারি। গলা কেটে মাল্যদানের মতো ব্যপার।
ভদকা দিতে এলে ওয়েটারটাকে এবার গোটা চারেক তেল ছাড়া পরোটা আর এক প্লেট ভুনা মাংস অর্ডার দিলাম। কি একটা কারিকুরি করে ব্যটা সেটা নিয়ে আসলো; প্লেটটা টেবিলে রেখে তার ওপরে একটু বিটলবণ ছিটিয়ে দিতেই, একটা বড়সড় আগুনের হলকা উঠে গেলো চোখের সামনে দিয়ে। আমি ভয় পেয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালাম।
খাদ্যদ্রব্যে প্লেট বোধহয় ওদের রান্নাঘরে সাজানোই থাকে। অর্ডার দিলে ওভেনে শুধু একটা শেষ ‘পুড়ান’ দিয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু ওভেনে গরম করার পরও কি কেরামতিতে প্লেটে অমন রসুই ঘরের টাটকা ঝোল ভাসছিলো, তা আমি বলতে পারবো না। কেবল অল্প সময়ে জিনিসটা চলে আসায় খুব অবাক হয়েছিলাম। পরোটাগুলোও দেখতে দারুণ ছিলো। তেল শুষে নেয়ার জন্য ওদেরকে বাড়তি তাপে ভাপ দিতে হয়েছে। যে কারণে খানিকটা ফুলে উঠেছিলো সেগুলো। প্রতিটা চার টুকরো করে কাটা ছিলো। আমি দুই হাত কয়েকবার জোরে জোরে ঘষে ওস্তাদকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের মনোযোগটা আশপাশ থেকে সরিয়ে পুরোপুরি প্লেটে সঁপে দিলাম।
ইংরেজি সিনেমাগুলো দেখে দেখে একটা বাজে ধারণা আমার মনে তৈরি হয়ে গেছে যে, বারে-ক্লাবে গেলেই বুঝি মেয়েরা এসে পাশের চেয়ারে বসে কিংবা ছেলেরা গিয়ে একটা ড্রিংক বাই করতে চায় কোনো সুবেশী-সুকেশীনির জন্য। বিশেষ করে 'লস্ট ইন ট্রান্সলেশন'টা দেখলে এ ধরনের ফ্যন্টাসী মাথায় ঘুরবেই। তবে আমি সারা সন্ধ্যায় সেরকম কাউকে পাশে এসে বসতে দেখি নি। নিজেও কারো ধারে-কাছে ঘেঁষার সাহস করে উঠতে পারি নি।
অবশ্য একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছিলো, ওই ক্লাবটায় যারা সে রাতে উপস্থিত ছিলো তারা সবাই যে আগে থেকে একে অপরের সঙ্গে খুব গভীর বা অগভীরভাবে পরিচিত তা নয়। অধিকাংশ জোড়া বা দলই হয়তো সেদিন ক্লাবে ঢুকে পরিচিত হয়েছে নিজেদের সঙ্গে। হয়তো আগামীকাল এরাই পরিচিত হবে নতুন কারো সঙ্গে। কিংবা এরা আসবে না, আসবে অন্য কেউ। এরা ভুলে যাবে আজকের দিনটির কথা। কেউ কেউ মনে রাখলেও রাখতে পারে। এই যে; কেবল ফূর্তি করার উদ্দেশ্যে একটা ক্লাবে চলে আসা, এসে নির্ভার সময় কাটানো, নিশ্চিন্তে অপরিচিত একটা ছেলের গায়ে ঢলে পড়া, এ ধরনের পশ্চিমা মানসিকতা গ্রহণ করার জন্য আমাদের সমাজ কি প্রস্তুত আদৌ? এই কথা ভাবতে ভাবতে খাওয়া যখন প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে, তখন পাশে ধপাস করে এসে বসলেন খান ভাই। ‘কি অবস্থা ব্রাদার? কেমন চলছে?’ আমি ছোট করে উত্তর করলাম, ‘ফ্যাবুলাস!’
আর কিইবা বলা যেতে পারে। তিনি অবশ্য আমার দেখাদেখি ভুনা মাংস আর তেল ছাড়া পরোটা অর্ডার করলেন। দুই ভাই পেটপূজোটা ভালোমতো সেরে ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখি জম্পেশ ঠান্ডা পড়েছে। খান ভাই বেরুনোর সময়ই ব্যস্ত হয়ে ফোন-টোন করা শুরু করেছিলেন। বাইরে দন্ডায়মান প্রাডো’টা দেখে সেই ফোনের মাজেজা বুঝতে পারলাম। তার বিদায়ী ভাষণটা ছিলো বেশ ভারিক্কি ধরনের। আমি খানিকটা মদ্যপ অবস্থায় শুনেছিলাম বলে, খুব বেশি কিছু এখন আর মনে নেই। ভাষণ শেষে তিনি আমার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন।
আমি যথারীতি আবারও, রাস্তার ধারে পার্ক করে রাখা সাইকেলটার দিকে এগিয়ে গেলাম।
(চলবে)
---
পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
একটানে পড়লাম... ধারাবাহিকতা রাখতে কষ্ট হচ্ছে, মীর কি দ্রুত বাকী পর্বগুলো পোষ্ট করে দেবেন?
উপন্যাসে সবই তো আছে দেখছি, চলুক
ভবিষ্যতে বই আকারে বেরুনোর পরে এ উপন্যাসের পাঠক কারা হবেন, সেটাই ভাবতেছি
এরকম একটা জায়গায় যেতে মন চায়, ও মীর ভাই
এখন দেখে যাচ্ছি! আগামী বই মেলায় বই কিনে পড়ব। আশা করতে দোষ কি!
মীর ভাইয়া, পরেরটা পড়ার অপেক্ষায় আছি।
নানা রকমরে খাওন দাওনে ভরপুর দেখি। ভুনা মাংস আর তেল ছাড়া পরোটা খাইতে ইচ্ছা করতেছে।
এত ধীরে ধীরে দেন কেন পর্বগুলা?
মন্তব্য করুন