উপন্যাস : অচল পয়সার জবানবন্দি (৭)
এদের কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং জোন নাই। রাস্তার পাশেই সুন্দর ফুলের বাগানের মতো জায়গা। কিন্তু সেখানে কোনো ফুলগাছ নাই। অনেক সাইকেল পার্ক করে রাখা। সেদিকে এগুতেই সাইডওয়াকের ওপর দেখা হয়ে গেলো প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে। ফুটফুটে একটা শিশুকে নিয়ে রাতে হাঁটতে বের হয়েছে। ওকে দেখতে আকাশ থেকে নেমে আসা পরীদের মতো লাগছিলো।
হাঁটতে হাঁটতে গুলশান-বারিধারার বাসিন্দারা নিশ্চই একদিন পাগল হয়ে যাবে। বেচারাদের কোনো কাজ নেই তো। খালি সারাদিন বসে থাকে আর অর্থ উপার্জন করে। শরীরের যত্ন নেয়ার সুযোগ পায় না। শুধু নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটে। এতদিন পর প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যাওয়াতে ভালো লাগলো। এমন একটা জায়গায় কোনোদিন ওর সঙ্গে আমার দেখা হবে সেটা কখনো চিন্তা করি নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে আমাদের দু’জনের শেষ দেখা হয়েছিলো। সেদিন বেশ আচার-আয়োজন করেই শেষ দেখা করেছিলাম। তারপরে আর কেউ-কোনোদিন-কারো সঙ্গে দেখা করবো না বলে ঠিক করেছিলাম। কথার বত্যয় ঘটে নি। যদিও কেউ উদ্যোগী হয়ে দেখা করি নি, কিন্তু আজকের পুরোনো জনদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ার দিনের পূর্ণতা ঘটলো ওকে দিয়েই। দেখে অবাক হয়ে গেলাম!
আমার মনে ওই এক মূহুর্তে ঠিক কতগুলো স্মৃতি এসে ভীড় করেছিলো, তা গুণে শেষ করা সম্ভব হতো না কোনো অ্যাবাকাস যন্ত্রের পক্ষে। আসলে আমাদের দু’জনের কত স্মৃতি আছে? এক লক্ষ? একশ' লক্ষ? একশ' কোটি? একশ' বিলিয়ন? কত? জানি না। কিছু কিছু স্মৃতি জ্বলজ্বলে। কিছু কিছু নিভু নিভু। কিছু স্মৃতি কোনোদিন মনে পড়বে না। কিছু স্মৃতি প্রতিদিন একবার করে মনে পড়বে। কিছু স্মৃতি আজীবন আমাকে তাড়িয়ে বেড়াবে। কিছু স্মৃতি অপরাধবোধে ভোগাবে। কিছু স্মৃতি ওর সঙ্গে সম্পর্কচ্যূতি ঘটানোর জন্য আমাকে কুড়ে কুড়ে খাবে। কিছু স্মৃতি বলবে ঠিকই করেছিলে বৎস্য। তোমার যে আর কোনো উপায় ছিলো না।
সবার আগে মনে পড়লো জীবনের দ্বিতীয় হাজতবাসের ঘটনাটা। অনেক কারণেই প্রিয়দর্শিনীর প্রতি আমাকে আজন্ম কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। তার মধ্যে সেটা ছিলো একটা। সেদিন রাতে থানার হাজতে ঢুকিয়ে আমায় তালাবদ্ধ করে দিয়ে যাওয়ার পর- সর্বপ্রথম যে জিনিসটি খেয়াল করেছিলাম তা হচ্ছে, হাজতঘরে অন্য যারা আছে তাদের সবার সঙ্গে মিল আছে আমার মানসিক অবস্থার। কিছুটা হতাশ, কিছুটা অনিশ্চিত এবং সর্বোপরি কিছুটা বিরক্ত। এর মধ্যে আমরা দৃষ্টি বিনিময়ের পালা সারলাম। আমার কাছে একটি শলাকা ছিলো। কিন্তু সেটি বের করে ধরাতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। কোর্ট-প্যান্ট পরা ভদ্রমতো একটি লোক তার শলাকার জলন্ত অর্ধেক অংশ আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। সেটা হাত বাড়িয়ে নিলাম। যদিও নেয়ার জন্য কৃত পরিশ্রমটুকুও করতে ইচ্ছে করছিলো না। তারচেয়েও মনে হলো, কথা না বাড়ানোটা বোধহয় সবচেয়ে কম বিরক্তিকর হবে। কিন্ত আমার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হলো না। কোর্ট-প্যান্ট পরা লোকটা বকবক শুরু করলেন। তিনি আমার দিকে সিগারেট বাড়িয়ে দেয়ার সুবাদেই হোক কিংবা অন্য যেকোন কারণে, আমাকে মানসিকভাবে নিজের কাছাকাছি বলে ধরে নিয়েছিলেন এবং নিজের সমস্যার খতিয়ান বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করেছিলেন।
আমি অবশ্য কথা শুনতে শুনতে একসময় মনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম। তার বিষয়টা ছিলো মাদক কেইস। ফেন্সিডিল খাওয়ার সময় হাতে-নাতে ধরেছে ডিবি পুলিশ। বেচারার আক্ষেপটা ছিলো যৌক্তিক। প্যাচ ঘুরিয়ে বোতলের মুখটা খুলেছেন কেবল, আর পেছন থেকে খপ করে এসে ধরেছে। জিনিসটা খাওয়ার সুযোগও দেয়া হয় নি তাকে। আমি তার সঙ্গে একমত হলাম। কাজটা ভালো করে নি পুলিশ। কারণ ১০০ মিলিলিটারের একেক বোতল ফেন্সিডিলের দাম তখন ৩০০-৩৫০ টাকা। সেই জিনিস যদি না খেয়েও, খাওয়ার অপরাধে থানাহাজতে ধরে নিয়ে আসা হয় তাহলে কার না মেজার খারাপ হবে?
হাজতঘরটা ছিলো খুবই ছোট এবং এল শেপের। সেই এল-এর নিচের টান'টাতে বসে আমরা দু’জন গল্প করছিলাম। আর ৯০ ডিগ্রী কোণে উপর দিকে চলে যাওয়া চিপা জায়গাটায় শুয়ে ছিলো আরো তিনজন মানুষ। তাদের সঙ্গে চাপাচাপি করে শুতে হবে। দেখতে পাচ্ছিলাম। তবে বিরক্ত লাগছিলো না। জানতাম বিরক্ত হয়ে আসলে লাভ নেই। বুঝতে পারছিলাম, এতো কেবল দুর্দশার শুরু। এইবেলা দিল্লী যেতে আমাকে আসলেই লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে। একপাশে একটা টয়লেট ছিলো। কিন্তু সেটায় কোনো দরজা ছিলো না। ভেতরে একেদম মাখামাখি অবস্থা। সেখান থেকে মাঝে মাঝে আবার কালো সুঁচমুখো একটা ইদুঁর মাথা বের করছে। ওটাকে কোনোভাবেই আমাদের ঘরটাতে ঢুকতে দিচ্ছিলাম না। কারণ ওটা ঘরে পা দিলেই টয়লেটের নোংরা চারিদিকে লেগে যাবে। সেটা যতক্ষণ আমি অন্তত ভেতরে আছি এবং জেগে আছি, ততক্ষণ মেনে নেয়া যায় না।
আমি এরই মধ্যে শুয়ে থাকা তিনজনের পাশে ঠেলেঠুলে জায়গা বের করে নিজের শরীরটা ঢুকিয়ে দিলাম। তারপরে তাদের কম্বলটা ধরে জোরালো একটা টান দিয়ে শরীরটা ঢেকে ফেললাম। কম্বলের আরেক মাথা ধরে ছিলো একদম উল্টোদিকের আরেকজন। সে একটু ওজর-আপত্তি করে কম্বল হালকা টানাটানি করলো। তাতে কোনো লাভ হলো না। আমি কম্বলে ছাড় দিলাম না একবিন্দুও। জুতা-টুতা পড়াই ছিলাম। তাই নিয়ে ঘুম দিলাম। ফেন্সি-কেসে অভিযুক্ত ভদ্রলোককে দেখলাম বসেই আছেন তখনো।
দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লাম এবং সকালে যখন ঘুম ভাঙলো তখন আটটার বেশি বাজে। ঘুম থেকে অতো সকালে উঠতে হওয়ায়, কারো সঙ্গে কোনো কথায় যেতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না আমার। আগের দিন এই খোপে ঢোকার আগে আমার মোবাইল ফোনটা ওরা নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নিয়েছিলো। তাই কাউকে ফোনও করতে পারছিলাম না। মেজাজটা যখন বেশি খারাপ হয়ে গেল তখন, লোহার শিকে দমাদম লাথি মারা শুরু করলাম। আমার শয্যাসঙ্গীরা একেকজন লাফ দিয়ে উঠে বসলো। দৌঁড়ে দেখতে এলো দুই সেন্ট্রি। ওদেরকে গালিগালাজের বন্যায় পুরোদস্তুর ভাসিয়ে দেয়ার মনোবৃত্তি অনেক কষ্টে চেপে বললাম, ফোন করবো। আমার আবদারটা অযৌক্তিক ছিলো, কিন্তু এ্যাপ্রোচটা মনে হয় দুর্বল ছিলো না। তারা খুবই সমব্যাথীভাবে ‘ফোন করতে দেয়ার নিয়ম নেই’ বলে আমাকে তথ্যসমৃদ্ধ করলো। একজন তার নিজের ফোন থেকে আমার জন্য দুইটা বিফল কলও দিয়ে দিলো। সে সময় বিফল কলেরও অনেক দাম ছিলো। আর সফল কলের দাম ছিলো সম্ভবত প্রতি মিনিট সাড়ে তিন টাকা। ভ্যাটসহ চার টাকা পড়ে যেতো মোটমূল্য।
ক্যম্পাসের পরিচিত এক ছোটভাই সবার আগে দেখতে আসলো। করিৎকর্মা ছেলে হওয়ায় সে যাবতীয় বন্দোবস্ত শুরু করে দিতে পারলো দিনের শুরুতেই। আমি শুধু বলে দিয়েছিলাম, বাসায় যেন কেউ কিছু না জানে। বেলা ১২টার পর আমাদেরকে প্রিজন ভ্যানে তুলে কোর্টে চালান করা হলো। মজার বিষয় হচ্ছে, এর মধ্যে দেখার মতো অনেককিছুই ঘটলো চোখের সামনে। সেসব দেখলাম বসে বসে। পাশের হাজতঘরে একটা মেয়েকে ধরে নিয়ে এসেছে হিরোইন আর গাঁজা বিক্রির অপরাধে। আমি জানতাম, পুলিশগুলো শুধু এসবের ক্রেতাকে ধরে এবং চেষ্টা করে তাদের কাছ থেকে কিছু পয়সা খসাতে। এবারে দেখলাম বিষয়টা তা নয়। তারা বিক্রেতাকেও ধরে। এটা দেখে আমার কিছুটা ভালো লাগলেও, মেয়েটির জন্য খারাপ লাগছিলো। একটা ছেলেকেও ধরে এনেছিলো বোবা। ছেলেটা বোবা হলেও আমার ধারণা সে খুবই ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ। তাকে একবার কয়েকটা পুলিশ গিয়ে বেশ পিটিয়েও এলো দেখলাম। দেখে আবারো খারাপ লাগলো। আমি মন খারাপ করে বসে ভাবার চেষ্টা করছিলাম, থানায় কি আসলে এমন কিছুই হয় না যা দেখে একটু ভালোও লাগতে পারে।
তেমন কিছু সেভাবে চোখে পড়লো না। কিছু কিছু পুলিশ এসে আসামীদেরকে ইনকোয়ারি করে যাচ্ছে। নাম কি, বাসা কই, পেশা কি এমন আরো নানান কথা। থানায় ধরে নিয়ে আসা অভিযুক্তদের অনেককে দেখে মনে হচ্ছিলো, তারা ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছে। যদিও বুঝতে পারছিলাম ওদের ভেঙ্গে পড়াটা উচিত হচ্ছে না, কারণ এরপরে আরো অনেক হ্যাপা আছে যেগুলো সামলাতে হবে; কিন্তু সে কথা ওরা বুঝতে চাচ্ছিলো না। আমার সঙ্গে ওদের যারই কথা হচ্ছিলো, সবাইকে সাহস ধরে রাখার উপদেশ দিচ্ছিলাম। বিপদে ভেঙ্গে পড়তে নেই- এ আপ্তবাক্য মনে করিয়ে দিচ্ছিলাম। এছাড়া আর কিছু অবশ্য করারও ছিলো না আমার।
একজন অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেয়ার কথা বলে ঘন্টাখানেক আটকে রেখে আবার সেলে পৌঁছিয়ে দেয়া হলো। সে পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফিরে এলো। বেচারা বারবার তার শিশুসন্তানের কথা বলছিলো। সে নাকি রাতে স্বপ্ন দেখেছে একটা শিশু ক্রমাগত তার থুতনিতে লাথি মারছে। এটা দেখে তার মনে প্রশ্ন এসেছে, শিশুরা তো ফেরেশতা হয়। সে কি এমন দোষ করলো যে শিশুর লাখি খাওয়া দেখতে হলো। তার শঙ্কা ছিলো, সামনে নিশ্চই ভয়ংকর কোনো বিপদ আছে। যে কারণে সে রাতে অমন স্বপ্ন দেখেছে। বেচারা হাউমাউ করে কাঁদছিলো। অনাগত দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে।
আমি তাকে বোঝালাম, নিজের ঔরসজাত শিশুকে নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা করলে এমনটা হতেই পারে। কারণ সে এখন শিশুটির সঙ্গে নেই। শিশুরা সাধারণত সবসময় বাবা-মা’কে নিজের আশপাশে দেখতে চায়। অবুঝ শিশুদেরকে দেখা যায়, বাবা বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরলে তার দিকে খুশি হয়ে এগিয়ে যায়। মা অফিস সেরে বাড়ি ফিরতে দেরী করলে তাকে বারবার ফোন করে তাগাদা দিতে থাকে। তাই শিশুটির পাশে না থাকার অপরাধ তার ভেতরে কাজ করছে। সেই অপরাধবোধই তার মাথায় নিজে থেকে একটা শাস্তির দৃশ্যকল্প চিন্তা করে নিয়েছে। স্বপ্নের বিষয়টা এছাড়া আর কিছু না। আমি তাকে এও বললাম, স্বাভাবিক অবস্থায় এমন স্বপ্ন দেখলে সেটার অন্য ব্যাখ্যা থাকতে পারতো এবং সেই ব্যাখ্যার সঙ্গে নিজের কৃত অপরাধের শাস্তির বিষয়টি মিলিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু এখন তেমনটি হওয়ার সুযোগ নেই মোটেও। এটা শুনে সে কিছুটা আশ্বস্ত হলো।
হারিছ মিস্ত্রি নামে আরেক অভিযুক্ত বারবার দেখাচ্ছিলো তাকে রিমান্ডে নিয়ে শরীরের কোথায় কিভাবে বাড়ি দেয়া হয়েছে। আমি মনোযোগ দিয়ে সেটা দেখলেও বেশি কিছু বললাম না। তার ব্যাথাটা অনুভব করতে পারছিলাম আমি নিজেও।
প্রিজন ভ্যানের অভিজ্ঞতাটা দারুণ ছিলো। ভেতরে গোটা দশেক লোক ছিলো। যাদের মধ্যে আমার আগের রাত্রের দুই শয্যাসঙ্গীও অন্তর্ভূক্ত। প্রথম দর্শনে যে লোকটাকে বদ্ধ পাগল মনে হয়েছিলো, সে ভ্যানের উপরের দিকের গ্রিল দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বারবার চিৎকার করে বলছিলো; বিএনপি জিন্দাবাদ, আওয়ামী লীগ মুর্দাবাদ। আমি তারে গিয়ে বললাম, সবাই-ই মুর্দাবাদ। কে আবার জিন্দাবাদ? সে আমার বক্তব্য খুব বেশি গুরুত্বসহকারে নিলো না। বরং দ্বিগুণ উৎসাহে রাস্তা দিয়ে যেই যাচ্ছে, তাকে ওই একটা কথাই বলে যাচ্ছিলো। আমাদের বঙ্গবাজারের সামনে দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আনন্দবাজারের সামনে এক জায়গায় গাড়ি ঘুরিয়ে নিতে হলো। নিয়ে চানখাঁর পুল দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। পথে এক পিচ্চি দোকানদার পাগলকে দেখে কি জানি বলতেই দেখলাম, ব্যটা ক্ষেপে একদম বোম্ হয়ে গেলো পুরাপুরি। চিল্লানো শুরু করলো, ‘চোখ তুইলা লামু কৈলাম, একদম অক্ষুণি তর চোখ তুইলা লামু তুই আমারে চিনস না।’
যাক প্রিজন ভ্যানটায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। এরকম পরিস্থিতিতে শরীর অবশ্য সুযোগ পেলেই বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি সেটাকে কখনোই খুব বেশি পাত্তা দিই না। এরকম পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাবার অভিজ্ঞতা তো আর কম নেই। সেখান থেকে জানি, শরীরকে সবসময় খুব বেশি লাই দিতে নেই। আর আমার ধারণা ছিলো, সামনে আমাকে কতটা ঝক্কিবহুল পথ পাড়ি দিতে হবে সে ব্যপারে। তাই ক্লান্তি এড়িয়ে চেষ্টা করছিলাম একটা রাইট ক্লিক করার। পুরো শরীর-মনের রিফ্রেশমেন্টের জন্য। শরীর-যন্ত্রের মাউসটা একটু ডিস্টার্ব দিচ্ছিলো। তাই রিফ্রেশিংটা খুব ভালোভাবে করতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে পুরান ঢাকার পুরান জজ কোর্ট ভবনটার ভেতরে আমাদের বাহনটা পৌঁছে গেল। সেটা ছিলো সিএমএম কোর্ট। ভেতর থেকে থানাওয়ারী লাইন ধরে নামলাম সবাই। সিএমএম কোর্টে যেখানটায় কয়েদী রাখা হয়, সেই হাজতঘরের চেয়ে খতরনাক জায়গা আমি বাংলাদেশে খুব কমই দেখেছি।
একটা ২০ বাই ২০ বা আরেকটু বড় আকারের রুম হতে পারে সেটা। হিসু দেয়ার জায়গা আছে একদিকে। সামান্য উঁচু দেয়াল তোলা। কেউ বসে বসে কাজটা করলে বাইরে থেকে দেখা যাবে না। কিন্তু দাঁড়িয়ে করতে গেলেই মান-ইজ্জত ফাঁস হয়ে যাবে একেবারে- এমন। একটা পানির কল আছে তার পাশে। ব্যস্ পুরো ঘরে আর কিছু নেই। শুধু শীতল একটা মেঝে চারিদিকে। এরমধ্যে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলো একদম খালি পায়ে। আমার ওদেরকে দেখেই আরো বেশি ঠান্ডা লাগছিলো। খেয়াল করে দেখলাম রুমটায় অন্তত ৫০-৬০ জন কয়েদী রাখা আছে। সবাই মিলে গাদাগাদি ও হইচই করছে। মানুষের শরীরের দুর্গন্ধ, ভ্যপসা পরিবেশ- একদম যাকে বলে পার্ফেক্ট নরক গুলজার। এই হাজতে ঢোকা লোকেরা আসলে কয়েদী’ই। কারণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মামলার পর্যায়ে চলে গেছে। সো এখন আর ‘অভিযুক্ত’ শব্দটা খাটে না। মামলার রায় পাওয়া যাওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েদী এবং তারপরে হয় দোষী নাহয় নির্দোষ।
সবাইকে লাইন ধরে নাম ডেকে ডেকে হাজতের ভেতরে ঢোকানো হয়েছিলো। ভেতরেও একটু পরে পরে চলছিলো নাম ডাকাডাকির মহড়া। নানাকারণে। একবার ওকালতনামা সই করার জন্য। একবার উকিলের সঙ্গে পরামর্শের জন্য। একবার বের হওয়ার জন্য। সারাক্ষণই কানে আসতে থাকে ‘অ্যাই মতিউর রহমান, পিতা আতিয়ার রহমান’ কিংবা ‘রাশেদ মিরপুর’, ‘রকি গেন্ডারিয়া’ ইত্যাদি নানাপদের হাঁক।
এরই মধ্যে ভ্যানের ওই পাগলের সঙ্গেও দেখা হয়ে গেল। দেখা হওয়াতে অবশ্য বেশ ভালো লাগলো। বিড়ি খাওয়ার লোক পাচ্ছিলাম না। ক্যম্পাসের ওই ছোটভাইয়ের কল্যাণে এখানে আমি আসতে আসতেই, সুহৃদেরা খবর পেয়ে গিয়েছিলো। তারই সুফল ভোগ করা শুরু করেছিলাম ধীরে ধীরে। পকেটে বিড়ি এসে পড়েছিলো এক প্যাকেট। এবার ভাগ-বাটোয়ারা করে খাওয়ার সঙ্গীও পেয়ে গেলাম।
পাগলের নাম রুনা। তার দাবি অনুযায়ী সে জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় ফেঁসে যাওয়া একজন নিরীহ নাগরিক। যদিও গালের বিরাট চিকন কাটা দাগটা সে কথাকে মানতে নিষেধ করে। এ ধরনের দাগ ছেলেবেলা থেকে রেষারেষির সঙ্গে জড়িত না থাকলে অর্জন করা সহজ না। ছেলেবেলায় মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে এরকম মুখে দাগ বসিয়ে দেয়। যাতে সেটা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
রুনার সঙ্গে আমার দীর্ঘবিস্তৃত আলাপ হলো। সিএমএম কোর্টের হাজতখানায় আসলে বসার জায়গাও নাই। মানুষ দেয়াল ঘেঁষে ঘেঁষে পেপার পেতে বসে থাকছে এরপরও। কেউ উঠে গেলে তার জায়গায় আরেকজন এসে বসছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যপার, আগের জন ফিরে এসে তার জায়গা বেদখল হয়ে যেতে দেখলেও কিছু বলছে না। যেন ভেবেই নিয়েছে যে, তাদের সঙ্গে ভাগ্য এমন প্রতারণাই করবে চিরকাল। এ ধরনের সহনশীলতা মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র সেই পরিস্থিতিতেই দেখা যায়, যখন আশপাশে বন্দিত্ব বা মুক্তির সম্ভাবনা ছাড়া আর কিছু থাকে না।
আমারও মাঝে মাঝে নিজেকে সহনশীল মনে হয়। তবে অতো বেশি মাত্রার সহনশীলতা আমার ভিতরে নাই। আমি একটা ফেলে দেয়া লেক্সাসের প্যাকেট এক কোণা থেকে কুড়িয়ে আনলাম। এনে সেটা ছিঁড়ে-খুড়ে বসার মতো বড় বানালাম। বানিয়ে তার উপর বসলাম। পানির বোতল, বিড়ির প্যাকেট আর আলাপের সঙ্গী থাকায় তখন বেশ ভালোই লাগছিলো। এরইমধ্যে একবার ডাকাডাকির জায়গাটা থেকে আমার নাম উচ্চস্বরে উচ্চারিত হলো। উঠে একটা নীল রঙ-এর কাগজে সই দিয়ে আসলাম। এসে দেখি আমার জায়গাটা আর খালি নেই। কোনো ধরনের পারিপার্শ্বিক সহনশীলতা দেখানোর মধ্যে না গিয়ে, বসে থাকা কয়েদীটাকে সটকে পড়তে বললাম। সে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে খালি হাসে। সরে না। রুনা বসেছিলো সামনে। সে আমাকে বললো, পাশে বইসা পড়েন। ভাইয়ে বইছে, উইঠ্যা কই যাইবো কন? আমি বললাম, সেটা তো আমার জাননের কাম নাই। আমি এই কাগজ আনছিলাম, আমিই এইটার উপ্রে বসুম। আর কাউরে বইতে দিমু না। সেই লোকটা তার নিচ থেকে কাগজটা বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু গ্রাউন্ড ছাড়লো না। আমি বুঝলাম; এই কয়েদখানায় শুধু যে সহনশীলতাই চলে তা না, নিস্পৃহতাও খুব ভালোমতো চলে।
আসলে কিন্তু আমি মনে মনে খুশি হচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা বুঝতে দিচ্ছিলাম না কাউকে। নিস্পৃহতা আমার সবচাইতে প্রিয় জিনিস। আমি জায়গা দখল করে নেয়া কয়েদীটার পাশেই, ঠেলেঠুলে কাগজ পেতে বসে পড়লাম। প্যাকেট থেকে তিনটা সিগারেট বের করে তার দিকে আর রুনার দিকে দুইটা এগিয়ে দিলাম। তিনজনে তিনটা সিগারেট ধরিয়ে উপর দিকে ধোঁয়া ছাড়তে লাগলাম। কারো ভেতরেই আসন্ন দুর্যোগ সম্পর্কে কোনো অনুভূতি নেই। বিকালের মধ্যে যদি জামিন না হয়, তাহলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কেন্দ্রীয় জেলখানায় বন্দী করে রাখা হবে। জানি সবই। কিন্তু সেসব নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা ছিলো না। সিগারেটের দিকে তাকায় তাকায় সেটাতে টান দিতে ভালো লাগছিলো।
এই নতুন লোকটা একটু দমে ছিলো কেন- কে জানে! বেচারা হয়তো থানা-কোর্টের পুরো বিষয়টা নিয়ে খুব আপসেট হয়ে থাকতে পারে। যদিও সেটা সে বলছিলো না। আমরা শহরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টুকটাক আলাপ করছিলাম। যে ধরনের আলাপ চলতে পারে কোনো পার্কে বসে। এরমধ্যে আশপাশের বিভিন্ন ঘটনায় যথেষ্ট মজাই পাচ্ছিলাম। একটা লোক বিচিত্রভাবে কয়েদের গেটে পা আটকিয়ে নিজের শরীরটা বাইরের দিকে ঠেসে রাখার প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছিলো। সে কোনোভাবেই এই কয়েদখানার ভেতরে ঢুকবে না। আর তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলো তিনজন পুলিশ। ওরা তাকে ভেতরে ঢুকিয়েই ছাড়বে।
আমি নিজে এর ভেতর ঢোকার সময় দেখেছি, কোর্ট চত্বরে নামার পর থেকেই মনের মধ্যে কেমন একটা ছমছমে অনুভূতি কাজ করা শুরু করে। এদের রয়েছে খুবই কার্যকর মনোবল ভাঙার সিস্টেম। লম্বা করিডরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় লাইন ধরে। এ সময়ে হাজতের ভেতরের দৃশ্য অল্প অল্প চোখে পড়ে। ভেতরে গিজগিজে মানুষ। ভেসে আসছে নোংরা দুর্গন্ধ। কেউ হাউমাউ করে কাঁদছে আবার কেউ নিশ্চল চোখে গারদের ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। একটু পর পেছন বা পাশ থেকে ধাক্কা দেয় পুলিশ। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। এই ধাক্কার প্রত্যেকটা একেকবার মানুষকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিয়ে যায়।
এসব দেখেই বোধহয় লোকটা ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলো। তাই তার প্রবল আকুতি আমাদের কানে আসছিলো- ‘আমি ভিতরে যামু না। আমার কোনো দুষ নাই। আমি ভিতরে যামু না।’ দেখে আমাদের ভেতরেও ভয়ের একটা ঠান্ডা শিহরণ বয়ে গেলো। জায়গাটাকে হঠাৎ করে অনেক বেশি ভয়ংকর বলে মনে হতে থাকলো। একসময় তিন-চারটা পুলিশ ওই লোকটার পায়ের পেশীতে মোটা রুল দিয়ে দমাদম বাড়ি দেয়া শুরু করলো। আর সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটা চিল্লাচিল্লি বাদ দিয়ে ঢুকে পড়লো আমাদের ঘরটায়।
এ হাজতঘরটায় কোনো জানালা নেই। মাথার অন্তত ১০-১২ ফুট উপরে আছে কয়েকটা বেঢপ আকৃতির ভেন্টিলেটর। কোনোভাবে সে পর্যন্ত পৌঁছুলেও যে সেটা দিয়ে গলে বের হওয়া যাবে না এবং সে ধৃষ্টতাও যে কেউ কখনো দেখায় নি, তা ভেন্টিলেটরের কাঠ-বরগাগুলোর গায়ে জমে থাকা দীর্ঘদিনের চিটচিটে কালো ঝুল খুব দম্ভভরে ঘোষণা দিচ্ছিলো। ওগুলো শুধুমাত্র বাতাস চলাচলের জন্য সামান্য আড়াআড়ি ফাঁক রেখে বানানো হয়েছে। এবং যতটুকু ফাঁক রয়েছে, তারচেয়ে এক সুতো বেশি ফাঁকও করা সম্ভব না। গুণে দেখলাম তিন-দুই-দুই করে মোট পাঁচখানা এমন ভেন্টিলেটর রয়েছে হাজতঘরটিতে। এ ঘরের বরফঠান্ডা মেঝেতে খালি পায়ে দাঁড়ালে মনে হয় দক্ষ গোয়েন্দাও তার পেটের সব কথা উগলে দেবে। অথচ অনেকেই এর মধ্যে খালি পায়ে দাঁড়িয়েছিলো।
আমি অবশ্য জুতা-প্যান্ট-সোয়েটার-জ্যাকেট এঁটে প্যাকেট হয়ে বসেছিলাম। এ অবস্থায় কাল রাত থেকেই ছিলাম। এরই মধ্যে কি কারণে যেন, একবার সবাই উঠে দাঁড়ালাম। তখন চারদিকে নাম ধরে ডাকাডাকি হচ্ছিলো খুব। ঘরটার ভেতর ঠেলাঠেলি করে একটা পুরো চক্কর দিয়ে ফিরে এসে আর আগের জায়গাটা খালি পেলাম না। শুরু হলো জনারণ্যে দাঁড়িয়ে থাকা। এত অপরিচিত মানুষ, এত স্বল্প পরিসরে, এত প্রতিকূল পরিবেশে- এর আগে কখনো চোখে পড়ে নি আমার। তাই কিছুটা অবাকও লাগছিলো। এরইমধ্যে আমার ডাক এসে গেলো। কোর্টে উঠতে হবে মনে হয়।
সকাল থেকে আমাকে অনেকে দেখতে এসেছে। তারা অবশ্য সবাই আমার সত্যিকারের হিতাকাঙ্খী। এসেছিলো কেবলই আমার কাজে লাগার জন্য। জানি না কে কতটুকু কাজে লাগতে পেরেছে। একটা অনিশ্চয়তা আবার গ্রাস করলো। যদি জামিন না হয়? যদি আবারো ফিরে যেতে হয় চৌদ্দশিকের পেছনের সেই খুপড়িটাতে? কিংবা অন্য কোথাও? থানাহাজতের চৌদ্দশিকটাকে রাতের শুরুতে খুব বেশি মন্দ লাগে না। রাত গভীর হলে আস্তে আস্তে বাড়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে আলাপ-চারিতার মজা। অনেকের কাছ থেকে অনেক কিছু বের হওয়া শুরু হয়। কারো কাছ থেকে সিগারেট, কারো কাছ থেকে ম্যাচ, কারো কাছ থেকে গাঁজা, কারো কাছ থেকে গল্প। কিন্তু কয়েদী হিসেবে জেলহাজতে গেলে রাতটা কেমন কাটে- সেটা আমার জানা নেই।
আর এসব পরিবেশে সাধারণত রাতের ঘুমটা হয় খুব ছাড়াছাড়া। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে আমার আজীবনের লিখিত আপত্তি আছে। জেলহাজতে থাকলে আবার আমি নিশ্চই সকালে ঘুম থেকে উঠে লোহার গারদে লাথি মারা শুরু করবো। আর এরকম করলে যে সবসময়ই সবাই প্রত্যূত্তরে ভালো ব্যবহার করবে- সে ব্যপারেও আমি নিশ্চিত নই। হয়তো দুর্ব্যবহারও করতে পারে। হয়তো দু’চারটে অনাকাঙ্খিত বাড়িও এসে পড়তে পারে শরীরে। তাই উচ্চকণ্ঠে দ্বিতীয়বার আমার নাম ধ্বনিত হতে শুনে আমি ভয় পাই। অনিশ্চয়তা আমাকে গ্রাস করে।
বের হয়ে এসে দেখলাম, একজন হিতাকাঙ্খী আমার জামিনের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। সিএমএম কোর্টের গেটের কাছে রাজ্যের কাগজ-পত্তর নিয়ে বসে থাকা কয়েকজন লোক আমার কিছু স্বাক্ষর নিয়ে ছেড়ে দিলো। দু’জন উকিলের সঙ্গে আমি বের হয়ে আসলাম। হাঁটতে হাঁটতে এক উকিলের চেম্বারে ঢুকলাম। ঢুকে দেখলাম প্রিয়দর্শিনী বসে আছে।
তার মলিন মুখ দেখে প্রথমেই যেটা মনে হয়েছিলো, উচিত হয় নি একদম। কাউকে দিনভর এবং তার আগে রাতভর এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে পার করানোটা আসলেই উচিত হয় নি।
কিন্তু বিষয়বস্তু তো আর সবসময় মানুষের আয়ত্ত্বের মধ্যে থাকে না। তাই তার উদ্দেশ্যে একটা উজ্জল হাসি উপহার দিলাম। যদি সেটা দেখে অন্তত বেচারীর একটু ভালো লাগে। আমার নিজস্ব একটা থিওরী হচ্ছে, কারো সঙ্গে আপনার দেখা হচ্ছে? তার উদ্দেশ্যে একটি উজ্জল হাসি দিন। দেখবেন অনেককিছু সহজ হয়ে গেছে। এটা সব পরিস্থিতিতে কাজ করে।
সেদিন প্রিয়দর্শিনী একা সব কিছু সামলে নিয়েছিলো। কাউকে কিচ্ছুটি টের পেতে দেয় নি। করিৎকর্মা মেয়েরা সাধারণত হৃদয়ঘটিত ব্যপারে অনেক বেশি আবেগহীন হয়ে থাকে। কিন্তু এই মেয়েটি ছিলো চূড়ান্ত ব্যতিক্রম। ওখান থেকে বের হয়ে আমরা জগন্নাথ কলেজ পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে একটা রিকশা নিলাম। রিকশায় উঠে সেই যে মেয়েটি আমার হাত আঁকড়ে ধরলো, সেটা ছেড়েছিলো প্রায় তিন বা চার ঘন্টা পরে।
এইসব পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতেই সেদিন রাতে প্রায় আট বছর পর দেখা হওয়া মেয়েটির কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, এই পিচ্চিটা কার?
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
---
আগে প র থ ম কমেন্ট দেই .. পরে পড়তেছি
~
পড়ার আগে প্রথম
নিয়া যায়েন।
মীর, গল্প পড়লাম। এবার পরপর কিছু কথা জানাই...
এক. অনেকদিন বিরতির পর ধন্যবাদ আপনাকে, উপন্যাসটা হাজির করার জন্য।
দুই. শেষ লাইনটা অদ্ভুত সুন্দর।
তিন. হাজত এবং কোর্ট এই দুটি স্থান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কেমন তার ধারণা পেতে এই গল্প সবাইকে সাহায্য করবে।
চার. কামুর আউটসাইডারের নায়ক ঠিক এমন কিছু বিবরণ দিয়েছিলো। কোর্টে, সেলে তার দিনগুলো ক্লান্তিকর, দীর্ঘ ছিলো। কোর্টে তার রোদ লাগতো, গরম লাগতো। সেল থেকে সে যখন দর্শনার্থীর সাথে মানে তার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যেতো তখন দেখা যেতো সবাই কথা বলছে, কেউ কারো কথা শুনতে পারছে না। সত্যি বলছি, কাম্যুর মতো লাগলো আপনার কলমের দক্ষতা।
পাঁচ. দারুণ পর্ব এটি।
অত্যধিক লজ্জায় কোনো উত্তর করতে পারলাম না। আপনি প্রশংসা কমায় করেন। কারণ এসব কোনো কিছুরই যোগ্য না আমি।
এখন আপনে একটা লেখা দেন
হ
কোর্ট এবং জেল দুটোই আমি কাছ থেকে দেখেছি। অবর্ণনীয় কষ্টের জায়গা। আর ওগুলোর পরিবেশ গা-গোলানো অনুভূতি দেয় বলে এসব নিয়ে এভাবে গল্প লেখার দক্ষতা আমার শূন্য। শেষ পর্ব তাড়াতড়ি পোস্ট কইরেন, কারণ, তাতে পাঠকের পঠনের ধারাবহিকতা থাকে।
শেষ পর্বটা এখনো প্রক্রিয়াধীন। শেষ হ'লেই পেয়ে যাবেন @ লীনা আপু
কখন আবার বিদ্যু্র চলে যায়! আগেই বলে যাই একটানে পড়লাম পর্বটা। আমার ঘাড়ে ঝুলে দুই ভাগ্নীও পড়লো আমারে পাগল বানিয়ে। পরের পর্ব শীঘ্রই দেন। একসাথে পড়ব আবার।
আমার ভাবলেই মনে হয় জেলে থাকা জীবনের মত কষ্ট আর কিছুতেই নেই।
পিচ্চি-পাচ্চাদেরকে এইসব অকথা-কুকথা পড়ানোর জন্য আপনারে মাইনাস।
লেখা কেমন হইসে সেইটা বলেন নাই ক্যান?
Ektane porlam mane purata e mugdhota.khub valo legeche.apnar lekhar hat osadharon.ekdin onek boro lekhok hoben.amra buk vore bolbo...amader priyo mir.
I do not want to be so. Just, will feel honored if I could be all of your mate. Nothing much I want u know?
ভালো থাকেন। এমনই থাকেন সবসময় সবার ভালোলাগায়, ভালোবাসায়।
উপন্যাস এর শেষ এর প্রতিক্ষায় রইলাম। মানুষের কষ্টের অংশ আর ভাল লাগে না। এত মানবেতর সমাজ আমাদের।
মানবেতর শব্দটা দিয়ে এখন আর পুরোটা প্রকাশ হয় না। এমন অবস্থায় পৌঁছেছি আমরা। ধন্যবাদ রুনা আপু, কমেন্টের জন্য।
দীর্ঘ বিরতির পর উপন্যাস ফিরিয়ে আনার জন্য ধন্যবাদ।
এই পর্বের প্রশংসা করবার মতো কোনো ভাষা পাচ্ছিনা।
পরের পর্বের প্রতীক্ষায় রইলাম।
হ্যাঁ, আপনের কমেন্টের প্রতীক্ষায় ছিলাম নেয়ামত ভাই। প্রথম থেকে সঙ্গে থাকার জন্য এবং আমার খামখেয়ালিপনাটাকে বন্ধুসুলভ দৃষ্টিতে দেখার জন্য ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ।
বাহ! বাহ!

আমার কমেন্টের প্রতীক্ষায়!!!
নিজেরেতো ধইন্য মনে হইতাছে।
মজা লিয়েন না মিয়া। বহুত নিছেন। এইবেলা নতুন একটা লেখা দ্যান।
আপনার হাবিজাবিগুলো হয়তো কারো কাছে ভালো লাগে, যেটা আপনি জানেন না।
টুটুল ভাই; মন্তব্যের ঘরে, আপনার আবেগ চিত্রিকার সুচারু ব্যবহার আমাকে গ্রীক দার্শনিক জেনো'র কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, এছাড়াও আবেগ চিত্রিকা ব্যবহারের পরম্পরায় বারবার দেখতে পাচ্ছি ডাচ দার্শনিক সোরেন কিয়র্কেগার্ডের ছায়া।
আবেগ চিত্রিকা ব্যবহারে আপনার হেজেমোনিক কোনো অবস্থান চোখে পড়ছে না, বরং আপনার আবেগ নিসঃরিত গ্রান্ড ন্যরেটিভটিই চিত্রিত হচ্ছে।
তবে যে আবেগ চিত্রিকার সুচারু ব্যবহার মানব মনে লালন করে চলা প্রাগৈতিহাসিক শিকারী মনঃবৃত্তির প্রকাশ করছে তেমন শৈল্পিক প্রকাশ আমরা কেবল গুহাচিত্রেই খুঁজে পাই।
নোয়াম চমস্কি হয়তো এ প্রসঙ্গে ভাষিক দৈন্যতার বিষয়টি উল্লেখ করবেন। এক্ষেত্রে তাঁর সাথে দ্বিমত তৈরী হবার প্রচুর অবকাশ রয়েছে। কারণ আমরা সবক্ষেত্রে লেখ্য ভাষার মাধ্যমে কথ্য ধ্বনিকে উপস্থাপন করতে পারি না।
এছাড়াও উক্ত বিশেষ আবেগ চিত্রিকার প্রয়োগের সাথে আমরা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর তুলনামুলক বিচারে উপনীত হ'লে নিশ্চিত ভাবেই বার্ট্রান্ড রাসেল কিংবা ফ্রেডরিখ নিটশের কোনো না কোনো উক্তি হাজির করতে পারবো।
দারুন লিখেছেন বস, সেটা অবশ্য আপনি সবসময়ই লেখেন।
তবে এ পর্বটি একটু অন্যরকম ভালো লাগলো।
মাঝে- মধ্যে ভাবি, এরকম অবস্থায় পড়লে কী করবো ?
দোষী বা নির্দোষি প্রমাণের আগে যে অভিজ্ঞতা হবে- তাতেই যন্ত্রণায় একাকার হয়ে যাব।
এত বছরে কেনো যে এমন জেল-হাজত-থানার অভিজ্ঞতা হয়নি- সেটা ভেবেই অবাক হই।
সব সম্ভবের দেশ এটা। কখন কী হবে- আগে থেকে কিসস্যু বলা যাবেনা।
এও এক জীবন।
এরকম জীবন্ত, অমানবিক জীবন-যাপনের সচিত্র বর্ণনা দেবার জন্য আপনেরে নমস্ব বস...
ইয়াপ
তবু বাংলাদেশকে ভালবাসি, বাংলাদেশে থাকতে চাই
আপনার কমেন্ট খুবই ভাল্লাগছে মেসবাহ ভাই। বেশি কিছু বলার নাই। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছিলো, তাই লিখতে অসুবিধা হয় নাই। সাধারণ বর্ণনামূলক লেখা। এটা এত ভালো লাগার পেছনে মূল কারণ স্বজনপ্রীতি, আর কিছু না
ওয়ে ম্যান। আপ্নে শেষতক এইটা শেষ করনের লাইগা হাত লাগাইছেন দেইখা ভালো লাগলো...
থ্যাংকু ব্রো, টোস্ট
শেষপর্ব ছাড়েন দ্রুত। ব্যাপক হইসে এটা!
ওকে দ্রুত ছাড়বো। ব্যাপক হইসে কমেন্টও!
কমেন্ট আবার ব্যাপক হয় কেমনে? তাও আবার আমার কমেন্ট, রায়েহাত শুভ হইলেও একটা কথা ছিলও।
আমি আবার কি দুষ কর্লাম

আয়হায় দুষ কেডাই কইলো। আমি তো কইলাম আপনার কমেন ভালা পাই।
হাজতখানা আর কোর্টের অংশটুকু অনেক বাস্তব হয়েছে,
সবগুলো পর্বই পড়ছি, মাঝে সাজে মনে হয় লেখার সময় আপনি বেশ তাড়াহুড়ো করেন !
আগেও অনেকবার বলেছি - আপনার লেখার হাত অসাধারণ। দেখবার চোখ, বলবার ভাষা, অনুপঙ্খু বর্ণনার ভঙ্গি - সবই আছে আপনার। হাজতবাসের যে বর্ণনা আপনি দিলেন, তা এক কথায় অসাধারণ। উপন্যাসটি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিযে দাঁড়ায়, দেখার আগ্রহ রইলো আমারও।
উপন্যাসের নামটা খুব ভালো । " অচল পয়সার জবানবন্দি " বেশ নাম । জেলখানার বর্ননা অনেক বাস্তবসম্মত হইছে ।
শেষের অপেক্ষায়
মন্তব্য করুন