সিনথিয়ার মামার সাইকেল
সিনথিয়ার স্কুলে এক সপ্তাহের গ্রীষ্মকালীন ছুটি দিয়েছে। সিনথিয়া আগে থেকেই বাবা-মাকে বলে রেখেছে এবারের গরমের ছুটিতে সে নানু বাড়িতে বেড়াতে যাবে। নানু বাড়িতে নানা,নানু,টিয়া আন্টি আর দুই মামা আছে। আসাদ মামা আর আরফান মামা। আরফান মামার সাথে সিনথিয়ার বেশ ভাব।
সে নানু বাড়িতে গেলে আরফান মামার সাথে বিকাল বেলা মাঠে খেলতে যায়। আবার ঘুড়ি ওড়ানোর দিনে আরফান মামা ঘুড়ি ওড়ানোর সময় মাঝে মাঝে সিনথিয়ার হাতে নাটাই ধরিয়ে দেয় ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য। আবার নানা যখন কৃষক দিয়ে মাটির নিচ থেকে নতুন আলু তুলে আনে তখন আরফান মামা সিনথিয়াকে বলে, আলু তুলবি? সিনথিয়া যখন বলে তুলবে তখন আরফান মামা তাকে জমিতে নামিয়ে হাতে নিড়ানি দিয়ে দেখিয়ে দেয় কিভাবে মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে নতুন আলু তুলতে হয়।নতুন আলু তোলার এই প্রক্রিয়াটা সিনথিয়ার বেশ মজা লেগেছিল।ওর মনে হয়েছে কেউ যেন আলুগুলো মাটির নিচে লুকিয়ে রেখেছিল।
আরফান মামার অনেক মার্বেল আছে। বাড়িতে সে তার বন্ধুদের সাথে মার্বেল খেলার সময় সিনথিয়া যদি খেলতে চায় আরফান মামা সিনথিয়াকে খেলতে দেয়। সিনথিয়ার কাছে নীল, সবুজ, কালো আর কমলা রঙের বেশ কিছু মার্বেল আছে। সব আরফান মামার দেয়া।
আরফান মামা ক্লাস সিক্সে পড়ে। আর সিনথিয়া পড়ে ওয়ানে। কিন্তু দু’জনের বন্ধুত্ব এত বেশি যে সিনথিয়ার বেষ্ট ফ্রেন্ড হচ্ছে আরফান মামা।
এই যে গরমের ছুটিতে সিনথিয়া নানু বাড়িতে যাবে আরফান মামা ওর জন্য গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে আনবে। তারপর টিয়া আন্টি সে কাঁচা আম দিয়ে ভর্তা বানাবে। কাঁচা আমের ভর্তার কথা মনে করতেই সিনথিয়ার জিভে পানি চলে আসল।
সিনথিয়া আর সিনথিয়ার মা নানু বাড়িতে এসেছে। সিনথিয়ার বাবা সপ্তাহ শেষে এসে তাদেরকে নিয়ে যাবে।সিনথিয়াকে দেখে তো সিনথিয়ার নানা, নানু, টিয়া আন্টি, আসাদ মামা, আরফান মামা সবাই ভীষণ খুশি।সিনথিয়ারও ভীষণ খুশি লাগছিল সবাইকে দেখে।
আরফান মামা সকাল বেলা স্কুলে যায়। ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। তাই এবার আর আরফান মামার সাথে বিকাল বেলা আর মাঠে গিয়ে খেলা হচ্ছিল না। একদিন আরফান মামা স্কুল থেকে ফেরার পর সিনথিয়া বলল, মামা তোমার স্কুল থেকে ফিরতে এত দেরি হয় কেন?
আরফান মামা বলল, আমাদের হাই স্কুলটা বেশ দূরে তো, হেঁটে আসতে আসতে দেরি হয়ে যায়।
তুমি রিকশা করে আসতে পার না?আমি তো মার সাথে প্রতিদিন রিকশায় করে স্কুল থেকে আসি।
ওটা তো শহর। তাই ওখানে রিকশা পাওয়া যায়। এটা গ্রাম তো।তাই সব সময় রিকশা পাওয়া যায় না। আর পাওয়া গেলেও ভাড়া অনেক বেশি।
আরফান মামা পড়ার টেবিলে বই গোছাতে গোছাতে বলল, আচ্ছা সিনথি,তুই তোর বাবাকে বলে আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিতে পারবি?
সিনথিয়া বলল, সাইকেল দিয়ে কি করবে?
স্কুলে যাব। একটা সাইকেল থাকলে আর হেঁটে আসতে হবে না।সাইকেলের এক টানের সাথেই বাড়িতে পৌঁছে যাব।
সিনথিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বলল, মামা, তোমাকে সাইকেল কিনে না দিয়ে একটা রিকশা কিনে দিলে ভালো হয় না?
আরফান মামা বলল, কিভাবে ভাল হয়?
এই যদি তুমি রিকশা চালিয়ে স্কুলে যাও, আর যাওয়ার সময় যদি কিছু প্যাসেঞ্জার নিয়ে যাও,তাহলে তো তুমি ভাড়াও পাবে। তখন তোমার অনেক টাকা হবে। আমরা অনেক কিছু কিনতে পারব।
সিনথিয়া কিছু বুঝে উঠার আগেই আরফান মামা একটা হুংকার দিয়ে উঠল।চুপ,ফাজিল কোথাকার!! কি বললি তুই? আমি রিকশাওয়ালা?যা ভাগ এখান থেকে ।
আরফান মামার ধমক খেয়ে সিনথিয়ার চোখে পানি চলে আসল। সে বুঝতেই পারল না সে কি ভুল বলেছে।
মন খারাপ ভাব নিয়ে সে তার মাকে গিয়ে আরফান মামার কথাগুলো বলে জিজ্ঞেস করল, মা ,আরফান মামা কেন রাগ করেছে? আমি কি পঁচা কথা বলেছি?
সিনথিয়ার মা হেসে বলল, তা একটু পঁচা তো বলেছই। মামাকে রিকশাওয়ালা হতে বলেছ, মামা রাগ করবে না?
সিনথিয়া মার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে কিভাবে মামার মন ভালো করে দেয়া যায়।
পরদিন সিনথিয়ার বাবা ,সিনথিয়াদেরকে নিয়ে সিনথিয়ার নানু বাড়িতে আসে। বাবাকে পেয়ে তো সিনথিয়ার প্রাণে খুশি আর ধরে না।রাতে বাবার সাথে শুয়ে শুয়ে সিনথিয়া বলে, বাবা, তুমি কি আরফান মামাকে একটা সাইকেল কিনে দিবে?
বাবা বলে,তুমি কি বলো? কিনে দিব?
সিনথিয়া হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে বলে,হ্যাঁ, কিনে দাও।
বাবা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। কালকে তোমার মামা স্কুল থেকে আসার আগেই সাইকেল কিনে আনব, ঠিক আছে?
সিনিথিয়া বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, হ্যাঁ বাবা ,ঠিক আছে।
এর পর দিন আরফান মামা স্কুল থেকে ফিরে আসার পর সিনথিয়া গিয়ে বলল, মামা,চোখ বন্ধ করো তো।
আরফান মামা বলল, কেন?
আহা!করো না।
আরফান মামা চোখ বন্ধ করলে সিনথিয়া বলে,এবার তোমার হাতটা দাও।
আরফান মামা হাত বাড়িয়ে দিলে সিনথিয়া সেখানে একটা চাবির রিং রাখে।
আরফান মামা চোখ খুলে বলে,এগুলো কিসে চাবি?
সিনথিয়া সারামুখে হাসি ছড়িয়ে বলে,সারপ্রাইজ। তারপর তাদের দখিনের বারান্দা্র দরজার সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,দেখো তো মামা এখানে কি আছে।
আরফান মামা বারান্দার দরজা খুলে দেখে,একটা নতুন সাইকেল রাখা আছে।
আরফান মামা অবাক হয়ে বলল, আমার জন্য? তুই তো অনেক ভালো রে সিনথি।
এরপর আরফান মামা,সিনথিয়াকে সাইকেলে পেছনে বসিয়ে তাদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে মাঠ পর্যন্ত ঘুরিয়ে নিয়ে গেছে।আরফান মামার সাইকেলে চড়ে সিনথিয়ার খুব ভালো লাগছিল। সাইকেলের পেছনে বসে সিনথিয়া আরফান মামাকে বলল, মামা তুমি কি আমার সাথে রাগ করেছ?
আরফান মামা হাসতে হাসতে বলল, সেদিন রাগ করেছিলাম।পরে আবার রাগ চলে গেছে। তুই তো ছোট মানুষ, তোর সাথে রাগ করলে তোর মন খারাপ হবে না? কিন্তু তুই অনেক ভালো রে সিনথি। তুই আমার ছোট মা। আমি বড় হয়ে তোকে একটা সাইকেল কিনে দিব।তখন তুইও নিজে নিজে সাইকেল চালাবি,ঠিক আছে।
সিনথিয়া বলল, ঠিক আছে।
সিনথিয়ার বাবা,মা, নানা, নানু, টিয়া আন্টি,আসাদ মামা সবাই বেশ খুশি হয়ে আরফান মামার উচ্ছ্বাস দেখছিল।
আরফান মামার খুশি দেখতে সিনথিয়ারও খুব ভালো লাগছিল।
পার্ফেক্ট!!!
মন্তব্য করুন