চাইনা মনে অন্য কিছু গান ছাড়া.....।
গান গাইয়া আমার মনরে বুঝাই, মন থাকে পাগলপারা, চাইনা মনে অন্য কিছু গান ছাড়া.....
গানের গলা আমার খারাপ না। বিশেষ কৈরা যেখানে ভালো গায়ক নাই, বা শরমে লোকজন গান গাইতে চায় না, সেখানে আমার গলাই ভালো বৈলা প্রমান হয়। ছোটবেলা থাইকাই তাই ধুমায়া গান গাই, সিচ্যুয়েশন ব্যাপার না, মনে হৈলেই গাই। এই সিচ্যুয়েশন না বুইঝা গান গাইতে গিয়া চুল টানা খাইছি কতবার, বাপ-মায়ের সামনে "ইয়ার বিনা চেন কাহারে, পেয়ার বিনা চেন কাহারে........।" বা "পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া......।" গাইতে গিয়। আমার এক খালা জিগাইতো, তোর কি লজ্জা শরম নাই, বাপ-মা'র সামনে এইসব গান গাস? কিন্তু ঈমানে কৈ, তখন গানের অর্থ বুঝতাম না, আর বুঝলেও কিছু মিন কৈরা গাইতাম না, মনে হৈতো আর গাইতাম। কমবখত মন.....
এই গান গাওয়াটা মোটামুটি ভাবের উপরে বা স্টাইলে আসলো ইউনিভার্সিটি পড়তে গিয়া। ঐখানে বন্ধু বান্ধবের মধ্যে আমি তিন নম্বর ভালো গায়ক। ১ ও ২নং এত ভালো গায় যে স্টেজেই তাগো মানায়, ভাবের চোটে সব খানে গান গায় না। আর তার পরেই বিশাল ব্যবধানে আমি ৩নং। স্টেজে উঠার সাহস বা কন্ঠ কোনটাই নাই। তাই আমি লুকালহিরু। নদীর তীরে, হলের সামনের বেন্চে, রিকশায়..... সব খানেই আমি ফিট। সুর নাই, সব লিরিক্স মনেও থাকে না, বাট না থাইমা গায়া যাই। ঐযে গানটা আছে না, "আশা ছিলো মনে মনে, প্রেম করিবো তোমার সনে......." এই গানটা পুরা পারতাম না, নিজের মত কয়েকটা ছন্দে মিলায়া দুই প্যারা যোগ কৈরা গায়া দিতাম, বেকুব বন্ধু গুলা ধরতে পারতো না, কারও কারও সন্দেহ হৈতো, লেকিন আমার কনফিডেন্স আর ছন্দের মিল দেইখা আর বলতো না। আর ইচ্ছা মত সুরে রিমিক্স-ফিউশন চালাইতাম, যেমন রবীন্দ্র-নজরুল সংগীতের শেষে "ও ইয়া, ঝাকাঝাকা...."। ঐ সময় আনিস নামের এক বন্ধু প্রতিযোগীতায় নামছিলো ৩নং পজিশনটা নেয়ার জন্য, লেকিন যে সুচিত্রা সেনের ঠোট মেলানো গানটাও তার মত চোখ ঘুরিয়ে-মুখভংগী দিয়ে গাইতো, তার ভাগ্য ভালো হবার কথা না, বরং "হাফ লেডিজ" বিশেষনটা উপরি পেতে হয়েছিলো তাকে। সেইটাই আমার স্বর্নযুগ গান গাওয়ার।
এরপর ইচ্ছেমত গান শুনতাম, নিজেই গাইতাম, তবে দলবেধে আর না। বিয়ের পরও কিছুদিন গান নিয়ে এই ইচ্ছে-স্বাধীন ভাবটা ছিলো। ওস্তাদ রেখে রবীণ্দ্রসংগীত শিখা আমার বউকেও ছাড়িনি। কোন গান গাইতে গেলে কোথায় ভুল হচ্ছে দেখায়া দিতাম, প্রথম কয়েকমাস বউ ভাব বুঝে নি, ধৈরা নিছে আমি কঠিন ওস্তাদ এই লাইনে। কয়েকমাস পরেই টের পাইলো এইটা আসলে খালি কলসী, ইচ্ছামত শব্দ করে শুধু, ভেতরে মাল নাই। এর পরে গান গাওয়ার অধিকারটাও প্রায় হারাইতে বসছি.....। তারউপর কোন গান কেন গাইলাম সেইটারও গবেষনা চলে, এবং আমারে কৈফিয়ত দিতে হয়। আর এখন গান গাইলে মেয়েও মায়ের দিকে তাকায়া হাইসা বলে, "পাপা গান গায়!", অথবা আমাকে মানা করে গাইতে, "পাপা নো!" =((
কিন্তু যতটুকু গান গাওয়ার সুযোগ পাই সেটাও হুমকির মুখে নিজের নিয়ন্ত্রনহীন গান সিলেকশনের জন্য। উদাহরন দেই।
কোরিয়ায় নেপালী ল্যাবমেট কৃষ্ণার বউএর নাম ছিলো "কিরান"। মহিলা এমন সুন্দরীও না, কিন্তু গান বারাইলো মুখ দিয়া,"জাদু তেরি নজর, খুশবু তেরা....... তুহে মেরি কিরান......"। নাস্তাকফিরুল্লাহ........। গানটা গায়াই তথমত খায়া থামালাম, কৃষ্ণারে কৈলাম, কি মিয়া কি নাম রাখছো বউয়ের, আমার প্রিয় গানটাও গাইতে পারি না। এই কাহিনী চললো এই পার্থে আইসাও। একেকজন ভাবীরনামে ফিডব্যাক-মাইলস-শেখ ইশতিয়াকের গান আছে, প্রিয় গান, লেকিন বারায় যায়, কেলেংকারির এক শেষ। তবুও সাবধান থাকি, কারন কোরিয়ায় বউ ছিলো না, এইখানে আছে। তবুও শেষ রক্ষা মনে হয় হৈলো না। =((
সেদিন হাটতে হাটতে বউরে আনতে গেছি তার কাজ শেষে। সুপারমার্কেটের বাইরে বৈসা আছি কখন সে আসবে, এমন সময় তার সহকর্মী এক ইন্ডিয়ান পান্জাবী মেয়ে বের হয়ে আমাকে দেখে বল্লো,"ইউ মাস্ট বি পপি'জ হাসব্যান্ড?", কৈলাম "হ!"। মেয়ের নাম সোনি, নাইস টু মিট ইউ বৈলা চৈলা গেলো। একটু পর বউ আসলো, কৈলাম ঐ কথা, নরমাল একটা ব্যাপার। কিন্তু স্বভাবদোষে এই নরমাল ব্যাপারটাও তুঘলকি কান্ডে পরিনত হৈলো, কারন আমি একটু পরই গান গায়া উঠলাম, "মেরে সোনি, মেরে তামান্না, ঝুট নেহি হ্যা মেরা পেয়ার........." আর যায় কৈ.....
শালার গানের সিলেকশন! না গাইতে পারি ইচ্ছামত, আর গাইলেও এমনটা গাই যে নিজেরি নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছা করে.........
মিয়া শুকুর করেন, তবু গান গাইতে পারেন, আমার কথা শুনলে তো কাইন্দা দিবেন...
অনেক বছর আগে আমি একটা বিনোদন পত্রিকার সাবএডিটর আছিলাম। মিউজিক পাতা দেখতাম। সেখানে মিউজিক নিয়ে নানান আগডুম বাগডুম কথা কইতাম। দেশের সব প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরাই ব্যাপক খাতির করতো। সবাই ভাবতো আমি এই বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞানী। গান তো ভালোই গাইতে পারি। একবার তো এক গজল সন্ধ্যায় মঞ্চে পর্যন্ত ডাইকা বসলো, হাতে পায়ে ধইরা বাঁইচা ফিরছিলাম।
কারন সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেসুরো কণ্ঠের বিষয়ে আমি একমেবিদ্বিতীয়ম। খুব আবেগের বশে রিক্সায় ঘুরতে ঘুরতে একবার খালি ভুল কইরা এক প্রেমিকারে দুই লাইন গান শুনাইছিলাম, সে নাইমা গেছিলো।
আরেকজন বলছিলো আমি খুব ভালো গান আবৃত্তি করতে পারি
এরকম আরো কতো কতো কাহিনী, বলতে গেলে আলাদা পোস্ট লাগবো। খালি একটা কথা কই। একবার শুটিংয়ের সন্ধ্যায় বিদ্যুত গেলো চলে। সবাই মিলে বসে আছি, ভালো লাগতেছে না। একটা গান গুনগুনাইতে শুরু করলাম। পাশেই ছিলো সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি বললেন- নজরুল, তুই তো অসাধারণ গাইতে পারিস! পৃথিবীতে এই প্রথম শুনলাম, আস্ত একটা গান কেউ এক স্কেলে গাইলো...
আপনেরে ঈর্ষা করলাম
আস্ত একটা গান কেউ এক স্কেলে গাইলো...
হাহাহাহাহা......। আপনের অবস্থা তো আসলেও খারাপ.... আর আমি শিকার হৈতেছি ফ্যাসিবাদের.....
পুষ্ট পড়ে অার পুষ্টের কমেন্ট পড়ে হাসতে হাসতে শেষ।মজা পাইলাম ব্যাপক।
পুরুষ মানুষের দুঃখ-কষ্ট মহিলা জাতির জন্য সবসময়ই আনন্দের উৎস!
হ
ছুট বেলায় না বুইঝাই "আহা মিষ্টি , কি যে মিষ্টি ... এই সুন্দর... ছোট সংসার... গাইতেছিলাম...মা'র হাতের রাম থাপ্পড় খেয়ে আর কোনদিন গান বাইর হয়নাই গলা দিয়া।
আহা! কি মিষ্টী গান.......
গানের পেছনে কেন যে মানুষ অর্থ খুজে......।
মলিকিউল ভাইয়ের জন্য বিয়াফক সমবেদনা ... :( .
মহিলাদের ক্রিয়েটিভিটিতে আমি মুগ্ধ (ঝগ্রার ক্ষেত্রে)
আস্ত একটা গান কেউ এক স্কেলে গাইলো... জট্টিলস :)
সমবদনার জন্য ঠ্যান্ক্যু।
আমার মেয়ে খালি আমার গান ভালা পায়। আর কেউনা বউতো না ই। বরং অপমানজনক কথা কয়।
তাও তো ভালো, আমার মেয়েও আমারে গান গাইতে কয় না, পিসিতে গান ছাড়তে কয় মাঝে মধ্যে... :(
আমার বউ ও একি রকম। মেয়েটারে কনভিন্স করার তালে আছি।
খুব মজা লাগলো আপনার লেখা পড়ে। নজরুল ভাইয়ের মন্তব্যও খুব মজার।
আমি গানের শুধুই একজন মুগ্ধ শ্রোতা
থ্যানকু ভাই।
হালকা পাতলা গান যা গাইতাম সেইটা বাথরুমে গোসলের সময়। কোন গানই তো পুরা মনে থাকতো না, যে লাইন মনে আসতো সেইটা জোরে গাইতাম আর যেইটা মনে আসতো না সেইটা গুনগুন করে গাইতাম। এরকম শুইনা আমার বোন ছোটটা বলে, "ভাইয়া, তোমার গান এইরকম জোয়ার ভাটার মত কেন? কিছুক্ষণ জোরে গাও, আবার কিছুক্ষণ শুনা যায় না!" :(
আহ! আপনার মত কইরা যদি ইন্সট্যান্ট গানের লাইন বানাইতে পারতাম!!!!!
হাহা, বোনডিরে কৈতেন এই জোয়ার-ভাটাই গানের প্রান।
মু হা হা হা
মু হা হা হা
আপনে এই খানেও আগে আইছেন?
হ! রোগটা রক্ত পর্যন্ত পৌছায়া গেছে তো......
হা হা হা। তাইলে তো খবর খারাপ।
মলি ভাই, ইমো দিচ্ছেন ক্যামনে?
কমেন্ট বক্সের নীচে দেখেন Enable rice text লেখা আছে, ঐটারে ক্লিক করেন। এইবার যে কমেন্ট বক্স আসবে সেটার উপরে ডান কোনায় পাবেন ইমোর সাইন। ঐটারে ক্লিক করলেই ইমোর উইনডো আসবে।
শীতের ফ্রেশ ধইন্যাপাতা দিলাম এক মুঠো
মজা লাগছে পড়তে.........
থ্যান্ক্যু থ্যান্ক্যু.....
কিন্তু কখনো কাউরে গাইতে মানা করবেননা, এই অনুরোধ থাকলো।
জাষ্ট আধাঘন্টা পরে ফেচবুকে আসেন। আলাপ হবে। BD টাইম 6:30 নন-ডিজিটাল
সর্যি ভাইডি। গেছলাম বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য মিটিং এ। আস্তে দেরী হইল।
আপনার গানের সিলেকশনের সাথে আমার সিলেকশনের মিল আছে দেখি। কাহিনী আমারো আছে, কওনের জন্য হস্ত নিশপিশ করতেছে। থাউকগা আরেকদিন।
কন কি? আমার তো একেবারে কেলেংকারিয়াস গান সিলেকশন। আপনার কাহিনী শুনতে কর্ণ উদগ্রীব হৈয়া আছে।
এইখানেও দেখি গান বাজনা চলতেছে........ :)
হ!
হে হে হে হে ... কাহিনী শুরু করলে তো শ্যাষই হৈবো না
খন্ডে খন্ডে সিরিজ শুরু করেন....।
পোষ্ট , পোষ্টের কমেন্ট্স গুলান পইরা ব্যাপক মজা পাইছি। তয় কেউরে কিছু খওয়াইতারুমনা..................
মারফতি লাইন ধরেন ভাই
হায়রে মানুষ রঙীন ফানুস/ চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে..... এগুলা গান তবে খাচার ভেতর অচিন পাখি গাওয়ার আগে দেইখেন আসে পাসে পাখি আছে কিনা
এইগান গাইলেও প্রশ্নের সম্মুখীন হৈতে হ্য়,
তাইলে আর কি করা; আপ্নার জন্য এক্টাই গান: "আমি সান্ত সিষ্ট পত্নি নিষ্ঠ ভদ্র লোক......."/ আরেকটা আছে "ওগো বন্ধু সুন্দরি তুমি মধু মন্জরী....."
মন্তব্য করুন