প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ , কথা দিলাম আমিও আছি আপনার সাথে
৫ মার্চ ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ আমার মায়ের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে । ২১ মার্চ থেকে আমার অনার্স পরীক্ষা , কী করি , কোথায় যাই , কিভাবে চিকিৎসা করাই , টাকা কীভাবে সংগ্রহ করি সেই চিন্তায় আমি অস্থির । প্রথমে সিলেটে কয়েকজন রেডিওলজিস্টকে দেখালাম । তারা এখুনি চিকিৎসা শুরু করার জন্য পরামর্শ দিল । কিন্তু একটা কথা কিছুতেই বুঝতেই পারছিলাম না , মায়ের ক্যান্সার কী পর্যায়ে আছে ? এই কথা ডাঃ ত্রিদিবকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন - অবস্থা বেশ সুবিধার না , আপনাদের এখুনি ক্যামোথেরাপি , রেডিওথেরাপি শুরু করা দরকার ! আর যদি টাকা , পয়সা বিশেষ থাকে তো আপ্নেরা উনারে সিঙ্গাপুর নিয়ে যান ! বুঝলাম অবস্থা আসলেই খারাপ । তাড়াতাড়ি করে ঢাকায় এপোলো হসপিটালে নিয়ে গেলাম কিন্তু ওখানে গিয়ে তো পুরাই তো , ঐ হসপিটালে একজনও ক্যান্সার স্পেশালিষ্ট নাই ! পরে স্কয়ার হসপিটালে ডাঃ কামরুজ্জামানকে দেখালাম । উনি রেফার করলেন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহেল মাহমুদকে । উনি নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন ক্যান্সার গলায়ই আছে , অন্য কোথাও ছড়ায়নি । ক্যান্সার প্রাক-সেকেন্ডারি পর্যায়ে আছে । কিন্তু চিকিৎসার খরচ শুনে ঘামে-নেয়ে আমি অস্থির । এতো টাকা পামু কই ?
ঢাকায় প্রায় তিনদিন জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল , ইবনে সিনা হসপিটাল সহ প্রায় সব হসপিটালে ঘোরাঘুরি করে প্রায় হতাশ হয়ে সিলেটে চলে আসলাম । মা'র চিকিৎসা কী হবে ? ওদিকে পরীক্ষাও নাকের ডগায় , কী যে করি ! আমার বন্ধু-বান্ধব , আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকেরা নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন । অনেকেই বললেন কলকাতা নিয়ে যাও , টাকাও কম লাগবে , চিকিৎসাসেবাও ভাল পাবে । কিন্তু পরীক্ষার কী হবে ? বাবা জীবিকার তাগিদে প্রবাসে , বাবা বললেন তুই যা ভাল মনে করিস তা কর । পরীক্ষা গ্যালে পরীক্ষা পাবো , মাকে কী ফিরে পাবো ? সই মাকে নিয়ে কলকাতা যাচ্ছি । কিন্তু পাসপোর্ট তো নাই , কী হবে ? বিডিআর হামলার কারণে পাসপোর্ট দিতে মাসখানেক গরিমসি করে , অনেক দেন-দরবার করে কাগজ-পত্র দেখিয়ে তিন দিনে পাসপোর্ট পেলাম । তারপর কলকাতায় প্রবীর ঘোষের (ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের প্রতিস্থাতা) সাথে যোগাযোগ করলাম । উনি বললেন কোনো সমস্যা নাই । তোমরা আসো এখানে আমার পরিচিত ডাক্তার আছে তিনি একজন ডাক্তারের নাম ফোন নাম্বার দিলেন । অনন্তদা যে সহযোগিতা করেছেন তা আজীবন মনে থাকবে । চট্টগ্রাম থেকে ভিসা লাগালাম । নির্ধারিত দিনে কলকাতা রওয়ানা দিলেম , সাথে অনন্তদা । টানা দু'মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলাম । এখনো চেকআপের জন্য কলকাতা যেতে হয় । মা সুস্থ আছেন , তয় একদম বুড়িয়ে গ্যাছেন , শরীর-স্বাস্থ ভেঙে গেছে ।
আমার শিক্ষাজীবন থেকে একটা বছর ঝরে গেল । তবে মা আজো চোখের সামনে আছেন , হাঁটছেন এর চেয়ে সুখের আর কী আছে ! এই লেখাটা হয়তো এইভাবে লিখতাম না । ২ নভেম্বর ২০১১ প্রথম আলো পত্রিকায় হঠাৎ চোখে পড়লো প্রিয় হুমায়ূন আহমেদের বক্সাকারে 'নো ফ্রি লাঞ্চ' লেখাটা । ক্যান্সারে চিকিৎসা , খরচাপাতি মিলিয়ে একটা পরিবারকে কীভাবে তিলেতিলে ধ্বংস করে দেয় তা ভুক্ত-ভোগী ছাড়া বোঝানো সম্ভব নয় । প্রিয় হুমায়ূন সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন । হুমায়ুনের লেখার অংশ বিশেষ -
''সর্বাধুনিক , বিশ্বমানের একটি ক্যান্সার হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র কি বাংলাদেশে হওয়া সম্ভব না ? অতি বিত্তবান মানুষের অভাব তো বাংলাদেশে নেই । তাঁদের মধ্যে কেউ কেন স্লোয়ান বা কেটারিং হবেন না ? বিত্তবানদের মনে রাখা উচিত , কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যাংকে জমা রেখে তাঁদের একদিন শূন্য হাতেই চলে যেতে হবে । বাংলাদেশের কেউ তাদের নাম উচ্চারণও করবে না । অন্যদিকে আমেরিকার দুই ইঞ্জিনিয়ার স্লোয়ান ও কেটারিংয়ের নাম তাঁদের মৃত্যুর অনেক পরেও আদর-ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে সমস্ত পৃথিবীতে স্মরণ করা হয় ।
আমি কেন জানি আমেরিকায় আসার পর থেকেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি , হতদরিদ্র বাংলাদেশ হবে এশিয়ায় ক্যানসার চিকিৎসার পীঠস্থান ।
যদি বেঁচে দেশে ফিরি , আমি এই চেষ্টা শুরু করব । আমি হাত পাতবো সাধারণ মানুষের কাছে ।''
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ , কথা দিলাম আমিও আছি আপনার সাথে । আমি প্রয়োজনে দুয়ারে দুয়ারে কড়া নাড়বো , হাত-পা ধরবো , চাইতো ভিক্ষেও করবো ।
আমরাও সাথে আছি....
অবশ্যই
আসলে এই কাজটা করার জন্যে হলেও প্রিয় হুমায়ুন আহমেদের ফিরে আসাটা জরুরি।
ভালয় ভালয় ফিরে আসুন , দেশে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হসপিটাল হোক
স্ট্যান্টবাজি যেন না হয়।
স্ট্যান্টবাজি যদি হয় তয় এর চেয়ে আর দুঃখজনক কিছু বোধকরি কিছু হবে না । সেইটা হবে কথিত সুশীলতার চূড়ান্ত উদাহরণ । উনি সারাজীবন যে পরিমান আরাম-আয়েসে জীবন যাপন তা বোধকরি বাংলাদেশের অন্য কোন ঔপন্যাসিক সেরকম জীবন-যাপন করেন নি ! এতদিনের আরাম আয়েসি জীবন-যাপনের পর উনি শারীরিক অসুস্ততার কারনে উপলব্দিজাত জনকল্যাণে যে কাজটি করতে সংকল্প করেছেন তা যদি কোন কারণে স্রেফ স্ট্যান্টবাজি হয় এর চেয়ে আর কী দুঃখজনক হতে পারে ।
ধন্যবাদ লীনাপু , আপনার কমেন্টের জন্য ।
আমাদের দেশের মানুষগুলো নিজের উপরে কিছু এলেই তবে গা ঝাড়া দিয়ে কোনো কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, নচেৎ ভালো মানুষটির মতো নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। হুমায়ুন আহমেদএর সুস্থতা কামনা করছি কিন্তু কেনো উনি মিরপুরের অবহেলায় পরে থাকা ক্যান্সার হাসপাতালকে বাদ দিয়ে নতুন হাসপাতালকে নিয়ে ভাবছেন সেটা ভাবছি।
মিরপুরের ক্যানসার হসপিটাল তো পুরাই গ্যাছে , তাই মনে হয় নতুন করে কিছু করবার চায়
হুমায়ুন আহমেদের সুস্থতা কামনা করছি। উনি মিরপুরের অবহেলায় পরে থাকা ক্যান্সার হাসপাতালকে বাদ দিয়ে নতুন হাসপাতাল বানাতে চান সম্ভবত নতুন হাসপাতালটি নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করবেন বলে। আমার অনুমান ভুল হলেই খুশী হবো।
। আমিও খুশি হবো
আমার মনে হয় এটা স্টান্টবাজি নয়। তিনি একজন সামর্থ্যবান লেখক। তার লেখার ক্ষমতা প্রশ্নাতীত। আর সেজন্য নিশ্চই চলমান সমাজটাকে বিভিন্ন দিক থেকে দেখার এবং এর একটা তুলনামূলক বিচার দাঁড় করানোর ভালোরকম ক্ষমতাও তাকে ধারণ করতে হয়। তিনি নিজে রোগটি এবং এর যাবতীয় উপসর্গ-অনুষঙ্গের ভেতর দিয়ে পার হয়েছেন। এ সময় স্টান্টবাজি চালানো মানে তো নিজের সারাজীবনের অর্জনকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করার মতো একটা ব্যপার হয়ে যায়, তাই না? সেটা কেন তিনি করবেন?
আর দেশে একটা জরাজীর্ণ ক্যন্সার হাসপাতাল আছে ঠিকই। কিন্তু তারপরওতো মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে। একইভাবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ থাকার পরও মানুষ ল্যাব এইড, স্কয়ার, এ্যপোলোতে যাচ্ছে। তারমানে প্রয়োজনীয়তা নিশ্চই আছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।
তাছাড়াও একটা ক্যন্সার হাসপাতাল থাকলে আর বানানো যাবে না, এমনও তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। প্রশ্ন হতে পারে, বিদ্যমান কাঠামোটার উন্নয়ন ঘটানো যায় কিনা? আমার মনে হয়, এই প্রেক্ষাপটে সেটা বরং আরো বেশি কঠিন। ঐ কাঠামোটার সঙ্গে অনেক সৎ ও অসৎ মানুষ একটা নির্ধারিত ব্যবস্থায় জড়িয়ে আছেন। ঐটা একটা অন গোয়িং এস্টাব্লিশমেন্ট। সেটাকে ভেঙ্গে নতুন করে গড়ার চেয়ে, একটা জিনিস প্রথম থেকে গড়ার সুযোগ নেয়াটা বেশি ভালো হবে। যদি এ বিকল্পটা না থাকতো, তাহলে আমি এস্টাব্লিশমেন্ট ভাঙ্গার পক্ষে যাওয়ার কথা ভাবতাম। বরং বিদ্যমান কাঠামোটার নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ তার উন্নতি ঘটাক। হুমায়ুন আহমেদ নতুন করে আরেকটা কাঠামো দাঁড় করাক। অসুবিধার কিছু তো দেখি না।
আমি হুমায়ুন আহমেদের ইচ্ছাটাকে মূল্যায়ন করতে আগ্রহী। সেটা করতে গিয়ে আমার মনে হচ্ছে, তার এ ইচ্ছাটা একটা সাধু সংকল্প। আশা করি তিনি সেটা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন। কামনা করি সেজন্য প্রয়োজনীয় সুস্থতা তিনি অচিরেই লাভ করবেন।
একমত
থ্যংকুস্ বক্তিমাটা কেমন দিলাম কন দি।
দেশে বড় বড় হাসপাতাল হচ্ছে কিন্তু সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে সব।
সৃষ্টিকর্তা তারচেয়ে বরং সীমিত আয়ের মানুষদের এমন রোগবালাই থেকে দূরে রাখুক।
মীরের বক্তিমা শুনতে শুনতে মনে হলো মীর বড় হয়ে একজন রাজনৈতিক নেতা অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। বড়ই সৌন্দর্য মীরের বক্তিমা!
মীরের বক্তিমা শুনতে শুনতে মনে হলো মীর বড় হয়ে একজন রাজনৈতিক নেতা অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবে। বড়ই সৌন্দর্য মীরের বক্তিমা!
ওনার সম্পর্কে ধারণা আছে বলেই মনে হচ্ছে স্ট্যান্টবাজি। করতে পারলেতো ভালই। কতকিছুইতো শুভ হওয়া উচিত, হয়তো কিছুক্ষেত্রে হচ্ছেও। উনারই আপন ভাই, মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই একই কথা বললে বলতাম, স্যার পাশে আছি। উনার উপরে আস্থা নাই।
লীনা আপু, আমার উনার সম্পর্কে ধারণা সীমিত। তবে একটা জিনিস বলতে পারি, যদি উনি লোক দেখানোতেও ইচ্ছুক হন; তাহলেও কাজটা করে ফেলাই হবে সবচেয়ে বড় স্টান্ট। মানুষ সেটা দেখার জন্যই অপেক্ষায় আছে। মানুষের কাছে সেটার সফলতার প্রয়োজনও আছে। প্রাপ্তির কিংবা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য হাসিলের সুযোগটা তাহলে কোথায় বেশি?
হুমায়ুন আহমেদ একটা কাজ করবেন বলে ইচ্ছাপোষণ করলেন। সমাজের অন্যান্য মানুষের মাঝে সেটা নিয়ে আগ্রহ তৈরি হলো। তারপরে তিনি সেটা আর করলেন না। তাহলে তিনি প্রথমে ইচ্ছাপোষণের বোকামীটা কেন করেছিলেন? কারণ খুঁজে পাই না তো।
উনাকে নিয়ে কথা বলতে অনেক রিস্ক। আর উনি বর্তমানে যে শারীরিক অবস্থায় আছেন আমি উনার দীর্ঘায়ূ আর সুস্থতা কামনা করি।
রাইট। আপাতত আমরা উনার দীর্ঘায়ু আর সুস্থতা কামনা করি।
আপনাদের আলোচনা দেইখা তো আমি নিজেও কনফিউশনে আছি
হুম সেই সন্দেহ যে একেবারে আমি উড়াইয়া দিতাছি , তা নয় । তয় এইবার মনে হয় সত্যি সত্যি কিছু করবে
হুমায়ুন আহমেদ সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক, বেঁচে থাকুক অ-নে-ক-দি-ন।
হুমায়ুন আহমেদের খুব ভক্ত ছিলাম একসময় আমি। পরে তার কিছু কাজকর্ম তাকে অপছন্দ করতে বাধ্য করসে। হয়তো অনেক প্রিয় ছিলেন বলেই তার কাজকর্ম এতো অপ্রিয় হইসে। মানুষকে পছন্দ করাও সমস্যা। সবসময় একটা এক্সপেকটেশান কাজ করে। তাতে খাড়া উতড়াইতে না পারলেই বিপদ। তবে আমিও চাই তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক।
হুমায়ুন আহমেদের খুব ভক্ত ছিলাম একসময় আমি। পরে তার কিছু কাজকর্ম তাকে অপছন্দ করতে বাধ্য করসে।
আমারও সেরম কিন্তু আমার কাছে শঙ্খনীল কারাগার , যে রাতে ডুবেছিল পূর্ণিমার চাঁদ ও পোকা ছাড়া ওঁর বাকেগুলারে স্রেফ আবর্জনা ছাড়া কিছু মনে হয় না ! এই আলোচনা আমি অন্যত্র করমু
নন্দিত নরকে, আকাশ জোড়া মেঘ আর নিরন্তর ও আমার বেশ ভালো লেগেছে
মন্তব্য করুন